পর্ব ১
২
সানগ্লাসটা পেয়ে অন্তুর দিশেহারা হবার জোগাড়! এতো নেশা ধরানো কেন সানগ্লাসটা! সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে বুক টান টান করে দাঁড়ালে নিজেরে হিরু হিরু লাগে। মনে হয় হাত উঁচু করে উড়েই যেতে পারবে। আর সমস্ত পৃথিবীটা অসম্ভব মায়াবী মনে হয়। মানুষ গুলোকে কি অসাধারন সুন্দর লাগে!! তাই ঘুমোতে যাবার সময় ছাড়া সব সময়ই অন্তু সানগ্লাস পরে থাকে।
অন্তু পিএইচডি করছে অ্যারিজোনার এক ইউনিভার্সিটিতে। অ্যারিজোনা স্টেইটটা পুরোটাই মরুভুমি। রৌদ্রের প্রচন্ড দাপট। সুতরাং সারাক্ষণ চশমা পরে থাকায় কেউ কেউ অবাক হলেও, বিষয়টা বেমানান হয়নি।
চশমা কিনে আনার কিছুদিন পরের একটা বিকেল। অন্তু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল শহরের একটা কৃত্রিম লেকের পাড়ে। মরুভুমি মাঝে শহর বলে লেকটাকেও বানাতে হয়েছে কৃত্রিম ভাবে। তখনি অন্তুর মোবাইলটা বেজে ওঠে।
"হ্যালো পলিন ভাই? কি অবস্থা?", মোবাইলে নামটা উঠতে দেখে ফোন ধরতে ধরতেই কুশল জিজ্ঞেস করে অন্তু।
"এইতো। তোমার কি অবস্থা? তুমি শুনলাম সানগ্লাস চোখের সাথে সুপার গ্লু দিয়ে আটকায় রাখছ? হা হা হা..." পলিন হল বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়ার। ছাত্রদের যে সংগঠন আছে ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রিক তার প্রেসিডেন্ট।
"হে হে হে পলিন ভাই কি যে বলেন না। একটা সানগ্লাস কিনছি অবশ্য। খুব পছন্দ হইছে তো, তাই খুব পরতেছি।"
"আচ্ছা শোনো একটা ছাত্রী আসছে এই শনিবার রাতে। আগামী সেমিস্টার থেকে মাস্টার্স শুরু করবে। কিন্তু শনিবার রাতে আমাকে ল্যাবে থাকতে হবে। সোমবার একটা পেপারের ডেডলাইন। তাই মেয়েটাকে আনতে এয়ারপোর্ট যেতে পারব না। তুমি যদি কষ্ট করে নিয়ে আসতে যেতে পারো তাহলে খুব ভালো হয়।" পলিন এবার আসল প্রসঙ্গটা তোলে। পলিন প্রেসিডেন্ট বলে বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী এলে তার সাথেই আগে যোগাযোগ হয়।
"কোনো অসুবিধা নাই বস। আপনি আমারে কখন কোন ফ্লাইটে আসবে বলে দেন। আমি আর বুনো গিয়ে নিয়ে আসব। উঠবে কোথায় ঠিক করছেন?" অন্তু জিজ্ঞাসা করে। তারপর পলিনের কাছ থেকে সব তথ্য নিয়ে ফোন রেখে দেয়।
শনিবার বিকেলে ফ্লাইট আসার কথা। অন্তু বুনোকে নিয়ে গিয়েছে মালপত্র টানতে সুবিধা হবে ভেবে। কিন্তু পৌছাতে পৌছাতে দেরী হয়ে গেল তাদের। হাঁফাতে হাঁফাতে যখন নির্ধারিত টার্মিনালে পৌছালো ততক্ষণে ফ্লাইট থেকে সবাই বেরিয়ে গেছে।
দিশেহারার মত অন্তু আর বুনো যখন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তখন একটা মেয়েকে দেখা গেল এয়ারপোর্টের এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলছে হাত নেড়ে নেড়ে। আর ভীত সন্ত্রস্ত ভঙ্গীতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বুনো বলল, "ঐ যে, ঐটাই ঐশী হইব"।
ঐশী মেয়েটা লম্বায় মাঝারী। গড়ন একটু মোটার দিকে। মোটা লেন্সের চশমা পরে। মুখে ব্রণের দাগ। ঢাকার একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে আন্ডারগ্রাজুয়েট করে মার্স্টাস করতে এসেছে অ্যারিজোনাতে।
প্লেন থেকে নেমে ঐশী আশা করছিল একজন তার নামের প্ল্যাকার্ড হাতে তার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু প্রায় আঠারো ঘন্টা বিমান জার্নির পর, সস্তা বিমানের অনিয়ন্ত্রিত বায়ুচাপের কারনে কানে কটকটে ব্যাথা নিয়ে, বাংলাদেশ ছাত্র এসোশিয়েশনের কাউকে দেখতে না পেয়ে খুব অসহায় বোধ করছিল সে। এক এয়ারপোর্ট কর্মকর্তাকে ধরে তাকে হড়বড় করে জিজ্ঞেস করছিল কিভাবে সে নিজের ঠিকানায় যাবে। কিন্তু কর্মকর্তা তার কথা কিছুই বুঝছিল না।
কথা বলতে বলতে সে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে দুটো বাঙ্গালী চেহারার ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। একটার চোখে আবার সানগ্লাস। এই উল্লুকটা এয়াপোর্টের ভিতরে সানগ্লাস পরে আছে কেন!!
"আপনি ঐশী?" অন্তু আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে।
"হ্যাঁ হ্যাঁ। আপনি পলিন?", জীবন ফিরে পায় যেন ঐশী।
"না না আমি অন্তু। আর এ বুনো। পলিন ভাই ব্যস্ত বলে আমাদের পাঠিয়েছেন। চলেন আপনার ব্যাগ গুলো তুলি ব্যাগেজ ক্লেইম থেকে।"
তারপর মেয়েটার ব্যাগ জোগাড়ের পর তাকে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত বাসায় তুলে দেয়া সেরে বুনোকে তার বাসায় নামাতে যায় অন্তু। পথে মেয়েটার সাথে অহেতুক কথা বলা, ফ্লার্ট করার চেষ্টা করা বুনোর চোখ এড়ায়নি। বুনো ভাবছিলো, কি পেলো অন্তু এই মেয়েটার মধ্যে!
"মেয়েটা ভীষণ কিউট না?", বুনোর ভাবনা যেন বুঝতে পারে অন্তু।
"তোর কাছে কিউট মনে হইছে?" বুনো অবাক হয়!
"বলিস কি? ফ্যাবুলাস!!"
"তোর মাথাই গেসে! খোল তোর সানগ্লাস। সানগ্লাস খুইল্যা দুনিয়াটা দেখ। নাইলে সব কিছুই রঙ্গীন মনে হইব", বুনো এমন ভাবে খ্যাঁক করে ওঠে যেন সানগ্লাসটারই সব দোষ।
সানগ্লাস পরা চোখে বুনোর দিকে তাকিয়ে ঠাঠা করে হেসে ওঠে অন্তু। আর সানগ্লাসটাও মনে হয় একটু ঝিকমিকিয়ে ওঠে রাস্তার আলো পড়ে।
(চলবে...)
মন্তব্য
আগেরটাও পড়তে হবে মনে হচ্ছে।
দারুন চলছে------
ভালো লাগতাছে। পরের টা কবে দিবেন ভাইয়া? অপেক্ষায় থাকলাম আরেকটা সুন্দর পর্বের জন্য।
ধন্যবাদ।
দলছুট।
জমতেছে, জমুক!
আগের পর্বের টান-টান ভাবটা একটু ঢিলা হয়ে গেল এপর্বে......
পরের পর্বের অপেক্ষায়
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
টান টান রহস্য আরো ঘনিভূত হচ্ছে,
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
হ, মুর্শেদ ভাই- রেনেট ভাই ঠিক কইসে। আগের পর্ব পইড়া মনে হইসিলো একটা আধিভৌতিক কাহিনী হইবো- এইবার দেহি অন্যদিকে ঘুইরা গেলো...। পরেরটাও দেন; আশায় আছি ভিন্ন রকম চমক দেখার।
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
বেশ ভালো লাগলো।
জমে উঠছে বেশ! চলুক!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
গল্পটা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তাই ভাবছি........
আগামী পর্বের অপেক্ষায়..........
আসলে এটা ইনস্ট্যান্ট আইডিয়া নিয়ে ইনস্ট্যান্ট গল্প। লিখতে লিখতেই পরের অংশটুকু ভাবছি। শুরুতে অন্তুকে বিবাহিত দেখালে চট করে রহস্যের অংশে চলে যাওয়া যেত। এখন অন্তুকে বিয়ে দেয়ার জন্য এই পর্বসহ আরেকটা পর্ব করতে হবে।
কষ্ট করে সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
পরের পর্বের অপেক্ষায়!!!
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
চলুক ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আমি কিন্তু এই পর্বটা পড়েই বেশি মজা পেলাম।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আপনি খুব ভালু লুক।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ইন্টারেস্টিং......
খুব জমবে মনে হচ্ছে।
নতুন মন্তব্য করুন