অসহায় কাঁদে চট্টগ্রাম সাথে কাঁদি আমি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বুধ, ১৩/০৬/২০০৭ - ৩:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
(কল্পিত) ।১। জমিলা সারাটাদিন মানুষের বাসায় কাজ করে বাচ্চা দুটোর মুখে ভাত জোগাতে পারে না। চেয়ে চিন্তে কোন রকমে চলে। বড়টা চার বছর বয়স। ছোটটা এক। চার বছরের বাচ্চাটার কাঁধে ছোটটার দায়িত্ব চাপিয়ে সকালে, দুপুরে আর সন্ধ্যায় তিন জায়গায় কাজ করে। সেদিন সন্ধ্যায় ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ভাত আনতে পারেনি জমিলা। শুকিয়ে যাওয়া স্তন মুখে দিয়ে ছোট বাচ্চাটা অনেকক্ষন ধরে কাঁদছিল। রাত বাড়লে ক্ষিদের যন্ত্রনায় সেই সাথে যোগদিল বড়টাও। কাঁদতে কাঁদতে জমিলা তাই বলছিল, 'মরস না কেন তরা?' বাচ্চাদুটোকে যখন আর্মির লোকেরা তুলে আনল তখন বিলাপ করতে করতে করতে জমিলা বলছিল, 'বাচ্চা দুইটার আল্লাহ খালি পেটে নিয়া গ্যালা! আল্লাহ এই তোমার বিচার!! ও আল্লা আল্লা গো!!!' ।২। মাটিকাটার কাজ করা করিমের পাঁচ সন্তান, মা আর বউ নিয়ে চলতে হিমসিম খেতে হয়। বড় মেয়েটার বয়স দশ। আশেপাশের ছেলেমেয়েদের দেখে মেয়েটা স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু করিম কিছুতেই রাজি হতে চায় না। বরং কাজে পাঠালে কিছু আয় হবে। এমনিতে সারাদিন কাজ করতে পারেনি দূর্যোগে, তার উপর সন্ধ্যায় ঘ্যানর ঘ্যানর করায় বাচ্চাগুলোকে ধরে দিয়েছে বেধড়ক। করিমের মা বাঁচাতে এসেছিল বাচ্চাগুলোকে। ধাক্কা দিতে গিয়ে মাও পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যাথা পেল। পরদিন তাই শোকাহত করিম মিয়া। খালি বুকের ভিতরটা মুচড়ে মুচড়ে উঠছে বারে বার। মা, সন্তানের কথা ভাবে আর কিছু ক্ষন পর আহাহা করে উঠে। চোখের পানি কাদার সাথে মিলেমিশে একাকার। মাটির দিকে চেয়ে বলে, 'মাটিরে তুইই আমার সব নিলিরে, সব নিলি'। ।৩। দূর্যোগ এসেছে। সাহায্য সংগ্রহ চলছে। সে মিছিলে আমি-আমরা সবাই আছি। অথচ মরেছে কিন্তু দরিদ্ররাই। আবার দুদিন পরে আমরা এসব ভুলে যাব। যে যার পথে চলতে থাকব - একদল আরেক দলের দিকে কাদা ছুঁড়ে বলব, তুই শালা নোংরা। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী এইরকমই থেকে যাবে - দরিদ্রসীমার দুই আঙ্গুল নীচে, যে কোন দূর্যোগে অপ্রস্তুত, গন হারে লাশ হয়ে যাওয়া অচ্ছ্যুত একদল। কান্না কাটি শেষে কেউ কেউ ক্লোজড ফোরামে বলে বসবে, ভালই হয়েছে জনসংখ্যা একটু কমেছে। আসলেই এরা ভিক্ষারই উপযুক্ত। কি দরকার এদের জন্য আরেকটু নির্ভরযোগ্য আবহাওয়া পূর্বাভাসের ব্যাবস্থা করা? কি দরকার আরেকটু নিরাপদ বাসস্থান সুনিশ্চিত করা? আমরা কিছুদিন পরেই এগুলো ভুলে গিয়ে ধ্বসে পাহাড়ের চুড়ায় গড়ে তুলব আমাদের সুরম্য বাগান বাড়ি। মেয়র সাহেব পকেট ভারি করে বলবেন, 'উন্নয়নের দেকেছেন কি? উন্নয়নের জোয়ারে তো সব ভাসিয়ে দিলাম'। আমরা প্রবাসে দামী বিএমডাব্লিউ হাঁকিয়ে বলব, 'স্টিংকি দেশটা আমাদের মুখটা আর রাখল না'। শুধু ভিক্ষা আর ত্রানেই ঘুরপাক খেতে থাকব আমরা সারাজীবন।

মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি
পাহাড় কাটার সাথে কারা কারা জড়িত তার তদন্ত হতে হবে। ....................................... ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
ভাস্কর এর ছবি
সহমত @ সুমন... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
শুধু তাই না, কেন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে করা হল না তার তদন্তও দরকার।
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
সত্যবচন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরিফ জেবতিক এর ছবি
কিছু বলার নেই।
শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
অসাধারণ অনুভব ও লেখা। কিন্তু সুমন চৌধুরী, দু:খজনক হলেও সত্যি যে শেষ পর্যন্ত দায় ও দোষটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার। ধনিক ও শোষক শ্রেণীর। পাহাড় ধসের পর আমরা ত্রাণ দেব, ঠিক আছে। তবে একে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলবো, পরিবেশ বিপর্যয় বলবো, এ হচ্ছে মূলে না যাওয়া। অনেক পুরনো কথা। তবু সেটাই সত্যি। নিরাপদ জায়গাগুলো, বসবাসের উপযুক্ত জায়গাগুলো তো ধনবানদের দখলে। প্রান্তিক জনগণ থাকে, প্রকৃতির রোষের নাগালে; নদীর পাড়ে, সমুদ্রের কোল ঘেঁষে, পাহাড়ের বিপদ্জনক বাঁকে। ধনবানরা নিজেদের স্বার্থে সেই পাহাড়, মাটি কেটে একে আরো মারাত্মক করে তোলে। প্রকৃতি নয়, পরিবেশ নয়, এইসব গালভরা সব টার্মিওনলজির আড়ালে মূল সমস্যা সেই গোড়াতেই। অর্থনৈতিক শোষণ। মাহবুব মুর্শেদকে ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নিঘাত তিথি এর ছবি
অসাধারণ লেখা। লেখার বাইরের অনুভবটুকু নিয়ে কি-ই বা বলব? --তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

নিঘাত তিথি এর ছবি
কিন্তু ছবিটা যে সহ্য হয় না... এটা ছাড়া দিব্যি পড়া যায় তো লেখাটা! এটা বাদ দেয়া যায় না? --তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লেখা পড়ে কষ্ট। ছবিতে আরো। তিথির সঙ্গে একমত।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।