ছবি ১: শার্লে শ্যারড
শার্লে শ্যারড মার্কিন সরকারের কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ ভদ্রমহিলা এবং 'বর্ণময় মানুষের উন্নতির জন্য জাতীয় সংস্থা' [National Association for the Advancement of Colored People (NAACP)] নামক একটি মানবতাবাদী সংগঠনের সাথে জড়িত। ২৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে শার্লে গত মার্চ ২০১০ এ অনুষ্ঠিত NAACPর সভায় একটি বক্তব্য রেখেছিলেন। সেখানে তিনি বর্ণনা করেন কি করে প্রথমে একটা সাদা লোকের প্রতি সদয় না হলেও পরে মানবতার খাতিরে তিনি সেই সাদা লোকটির জন্য যে পরিমান আইনি সহায়তা দেন, সেটা অনেক সাদাও দিতে রাজি হয়নি।[১] তারপর অনেকগুলো বছর চলে গেছে।
অতি সম্প্রতি এন্ড্রু ব্রেইটবার্ট নামের একজন রক্ষণশীল ঘরানার ব্লগার শার্লের সেই বক্তব্যের ভিডিও তুলে এনেছেন। তিনি তার ব্লগে ভিডিওর ক্লিপ থেকে এমন একটি অংশ তুলে ধরেন যেখানে শার্লের কথার প্রথম অংশটুকু আছে - অর্থাৎ শার্লে সাদা লোককে সাহায্য করতে দ্বিধা করেছেন সেই অংশটুকু আছে। এটা প্রকাশ করে এন্ড্রু এটা প্রমান করতে চান যে আমেরিকায় "বিপরীত বর্ণবাদ" আছে। "বিপরীত বর্ণবাদ" হল কালোদের প্রকাশ করা সাদাদের প্রতি বিদ্বেষ।
ছবি ২: এ্যান্ড্রু ব্রেইটবার্ট
এই ঘটনার পর আমেরিকার টিভি চ্যানেলে গুলোতে রীতিমত ঝড় বয়ে যায়। ক্রমাগত খবরটি প্রচারিত হতে থাকে এবং সমালোচনার পর সমালোচনা হতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে কৃষিবিভাগের প্রধান শার্লেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
পরবর্তীতে যখন NAACPর পক্ষ থেকে পুরো ভিডিওটি প্রকাশিত হয় তখন আসল ঘটনা বোঝা যায়। এরপর প্রেসিডেন্ট ওবামা শার্লে কে ফোন করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নতুন একটি চাকুরীর প্রস্তাব জানান। কিন্তু শার্লে এখন এন্ড্রুর বিরুদ্ধে আইনী সহায়তা খুঁজবেন বলে জানান।
এ সংক্রান্ত ভিডিও এবং খবরগুলোর লিংক পরিশিষ্টে দেয়া হল।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক
ঘটনাটির বর্ণবাদী দিকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে স্পষ্টতঃ আমেরিকার বর্ণবাদী চেহারাটা ফুটে উঠল। লক্ষণীয় যে, কালো ভদ্রমহিলাকে হেয় করতে গিয়ে সাদা ব্লগার নিজের বর্ণবাদী চেহারাটাকেই ফুটিয়ে তুললেন।
কিন্তু আমাদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঘটনাটি প্রকাশের মাধ্যম - ব্লগ। ব্লগ ক্রমাগত কতখানি শক্তিশালী হয়ে উঠছে সেটা এখান থেকে প্রতীয়মান হয়। প্রশ্ন হল ইন্টারনেটে যে কেউ যা ইচ্ছা প্রকাশের ক্ষমতা রাখে বলে কি কোন জবাবদিহীতা থাকতে নেই? একজন ব্লগারের ক্ষেত্রে তথ্য প্রকাশের আগে যাচাই প্রয়োজন কতটুকু? এখন এই ব্লগারকে যে আইনী লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে সেখানে কি তিনি সাংবাদিকের প্রোটেকশন পাবেন, নাকি সাধারণ নাগরিকের?
এই যে আমরা ব্লগ লিখি আমাদের নিজেদেরও ভেবে দেখার সময় এসেছে যা কিছু লিখি তার প্রতি আমরা কতটা সৎ? কিংবা আমরা যা কিছু পড়ি সবই কি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেয়া যায়? বাংলাদেশে ব্লগ এখনও অতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ব্লগের এই উত্থান অবশ্যম্ভাবী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এরকমটা হলে কি হবে?
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে কিছুদিন বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে ডঃ জাফর ইকবালের ভিডিওর ভগ্নাংশ এমনভাবে প্রকাশিত হয়েছিল যাতে করে তাকে কালিমালিপ্ত করা যায়। বিষয়টি মূল মিডিয়ায় প্রকাশের আগেই ব্লগাররা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করেন।
তৃতীয় আরেকটি বিষয় হল সংবাদ মাধ্যমের হায়েনা চরিত্র। আমেরিকায় সংবাদের পর্যায়কাল এখন ছয় ঘন্টার কিংবা তারও কম। প্রতি ছয় ঘন্টায় তাদের নতুন খবর চাই। তাই ছোট খাট ঘটনা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পৃথিবীবাসীরা জেনে যায়। সামান্য মুখরোচক কিছু থাকলেই সত্য মিথ্যা যাচাই না করে প্রকাশ করতে লেগে যায় সংবাদ মাধ্যম। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলে আধিক্য আমাদের ক্রমাগত এই পথেই নিয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে যদি টিভি চ্যানেলগুলো জবাবদিহীতা বৃদ্ধি না করা যায় তাহলে একসময় বাংলাদেশেরও একই অবস্থা হবে এটা ধরে নিতে কষ্ট করতে হয় না।
পরিশিষ্ট
১। শার্লে শ্যারডের পুরো ভিডিও আলোচনা
৪। সি এন এন এর সাক্ষাৎকার
৫। ডঃ জাফর ইকবালের ভিডিও
মন্তব্য
বইসা বইসা টিভিতে এইসব দেখতেছিলাম। হালকা গুগ্লাতে গুগ্লাতে সচলে ঢুকে দেখি পোস্ট এসে গেছে।
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গুগলের টপ নিউজ এটা। এভয়েড করার কোনো উপায়ই নেই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হায়েনা
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বহু বছর আগে শার্লে NAACPর সভায় একটি বক্তব্য রেখেছিলেন।
বক্তব্য রেখেছিলেন আসলে এ বছরের মার্চ মাসে। যদিও যে ঘটনার বর্ণনা করেছিলেন তা ঘটেছিল ২৪ বছর আগে ১৯৮৬ সালে।
ধন্যবাদ! ঠিক করেছি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ধন্যবাদ মুশের্দ ভাই এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসার জন্য।
আমার মনে হয় আমাদের দেশেও আমরা সেই রকম সময়ের সামনে পড়তে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভির জ্যাম লেগে গেছে। আরো আসছে দশ বারোটি! তো সবাই চাইছে টেক্কা দিতে। তাই ইঁদুর দৌড় চলছে। তার অনিবার্য প্রভাব পড়ছে নিউজ ট্রিটমেন্টে। পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা চিন্তার দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছি। যে কোনো হেজিপেঁজি সংবাদকেও আমাদের চ্যানেলগুলো প্রচার করছে ব্রেকিং নিউজ বলে। সেটা শোনা খবর হলেও! ব্রেকিং নিউজের ঠেলা সামলানোই দায়। তখনই অপসাংবাদিকতার ব্যাপারটি চলে আসে।
হয়তো ব্লগ এখনো ততটা শক্তিশালী নয় বাংলাদেশে তবে হতে কতক্ষণ? সবাইকে সর্তক থাকতে হবে আরো অনেক।
জহিরুল ইসলাম নাদিম
মুর্শেদ
জাফর ইকবাল স্যারের ভিডিও দেয়া কি জরুরি?
এই সুযোগে হয়তো আবার ত্রিভুজ গং কিছু বলে বসবে স্যারকে নিয়ে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আপনার কনর্সানটি আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে একটু ভিন্ন। আমি মনে করি যে বিষয়টি ভুল সেটা যত বেশী ঠিক করা হবে তত ভালো। আমি তো ডঃ জাফর ইকবালের বিষয়টি সত্যতাই পুনুরাবৃত্ত করছি কেবল। আর সেটা খুবই প্রাসঙ্গিক কারনে - দেশে দেশে, যুগে যুগে গোঁড়া মানসিকতার লোকেরা কিভাবে সত্যকে বাঁকা করে সেটা দেখাতে। তাছাড়া আমি ভিডিওটি প্রকাশ এবং বিতরন করিনি - জাস্ট আঙ্গুল তুলে দেখিয়েছি কোথায় আছে। (প্রকাশ করেছে ইউটিউবের একজন ইউজার এবং বিতরন করছে ইউটিউব - আমি লিংক করেছি শুধুমাত্র)
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
পোস্টটা খুব-ই জরুরি। আজকের প্রেক্ষাপটে মিডিয়ার উন্মুক্ততার সুযোগ নিয়ে যে কারো মন্তব্য, লেখা, ভিডিও থেকে ডেলিবারেটলি কিছু অংশ বেছে নিয়ে এমন কিছু উপস্থাপন করা যায়, যা আসলে ভিক্টিমের মূল বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি কন্ট্রাডিক্ট করে। বিবর্তনবিরোধী হারুন ইয়াহিয়া যেমন ডকিন্সের বক্তব্য কেটে উল্টো-সিধে বুঝিয়ে দেন, তেমনি বাংলার জোকার খ্যাত বিবর্তন নিয়ে হয়রান ব্যক্তিরাও এখন একই কাজ করেন।
সত্য ভাল, মিথ্যা খারাপ আর অর্ধসত্য ভয়ংকর।
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারকে এর মধ্যে না টেনে আনলেই ভাল হত। আমি ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সবকিছু অন্ধভাবে নেমে নেওয়ার পক্ষপাতী নই । আমি নিজেও উনার লেখার কিছু অংশের দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনা করে ব্লগ লিখেছি। কিন্তু উনার ভিডিও নিয়ে ছাগুগং যেভাবে নেচে উঠেছিল দেখে আমি চরম বিরক্ত হয়েছিলাম। আসলে এই পোস্টে ওই ভিডিওটা না থাকলেই মনে হয় ভাল হত। আলোচনাটা মূল বিষয় থেকে দূরে সরে যেতে পারে মনে হয়। কয়েকদিন আগে প্রাইভেট ভার্সিটির ভ্যাট নিয়ে একটা পোস্টে যেমন হল আর কি!
পথিক রহমান
মানুষের যাত্রা যদি টিকে থাকার দিকে হয়, তাহলে ম্যানিপুলেশনের পারমুটেশন কম্বিনেশন শেষে 'সত্য'ই টিকে থাকবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বাংলাদেশেও শিঘ্রই ব্লগ মূল ধারার মিডিয়া হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই অনেক লিটল ম্যাগ বা সাহিত্যপত্রিকার চেয়ে ব্লগের ওসব বিষয়ে ব্লগের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর বেশি হয়ে গেছে। কোনো ধরণের জাতীয় বিপর্যয়েও বা বড় কোনো ঘটনাতেও কিন্তু আমরা ব্লগে চোখ রাখি। কদিন পরে আরো অনেকেই রাখবে।
তাই 'সাংবাদিক' এর মত করে 'ব্লগার' ও আলাদা একটা ক্যাটাগরি হিসেবে নিতে হবে আইনি বিবেচনায়। শিঘ্রই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কি মাঝি, ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন