বইশোনা: ইনফিডেল - অ্যায়ান হারশি আলী - পর্ব ১/২

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০২/২০১১ - ১০:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(পাঠক নিজ দায়িত্বে লেখার শিরোনাম পড়বেন। 'বইশোনা'কে 'বইসো না' কিংবা 'বই সোনা' পড়লে লেখকের কোনোই দায় নাই। খাইছে )

বইটা খানিকটা আগ্রহ খানিকটা অনাগ্রহের অবস্থান থেকে শোনা শুরু করেছিলাম। বইটার শিরোনাম ইনফিডেল বা বিশ্বাসহীন হলেও সাব টাইটেলে 'আমার জীবন' কথাটা দেখে বুঝেছিলাম যে লেখিকার আত্মজীবনীমূলক বই হবে এটা। দীর্ঘ এই বইটা শুনতে আমার প্রায় ২০ ঘন্টার ড্রাইভিং-সময় ব্যবহার করতে হয়েছে।

বইটা নিয়ে আলোচনার আগে লেখিকার ব্যাপারে খানিকটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। লেখিকা একজন সোমালিয়ান বংশদ্ভুত মুসলিম নারী। তিনি জীবনের একভাগে নেদারল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং ক্রমে নেদারল্যান্ডের পিপল'স পার্টির ব্যানারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সোমালিয়ার সাধারণ একটি পরিবার থেকে তিনি কিভাবে এই অবস্থানে পৌছুলেন? কঠিন ইসলামিক ধ্যানধারণা ভেঙ্গে কিভাবে ধর্মহীন হলেন? এটা কিভাবে তার জীবনকে প্রভাবিত করেছে? তিনি পৃথিবীকে কিভাবে প্রভাবিত করেছেন? এইসব নিয়ে বইটি লেখা।

আইয়ান বইটি ছায়ালেখকদের দ্বারা লিখেয়েছেন প্রথমে ডাচ ভাষায়। বইটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে পরে ইংরেজী ভাষায় ছায়ালেখকদের দ্বারাই অনুদিত হয়। তবে অডিও বইটি লেখিকা নিজেই পড়ে শোনান।

সারসংক্ষেপ
লেখিকা আইয়ান হারসি মাগান জন্মগ্রহণ করেন সোমালিয়ার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ছোটোবেলা থেকেই নানীর তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি, তার ছোটোবোন হাওয়েয়া এবং বড় ভাই মাহাদ। তাদের বাবা ছোটো বেলা থেকেই তাদের ছেড়ে সোমালিয়ার রাজনৈতিক বিবাদে দেশ ছাড়া ছিলেন। এক সময় তারা মায়ের সাথে সৌদী আরবে গিয়ে ওঠেন এবং সেখানে কয়েক বছর থাকেন।

রাজনৈতিক কারণে তাদের সৌদী আরব থেকে বের করে দেয়া হলে তারা গিয়ে ওঠেন কেনিয়ায়। কেনিয়া মূলতঃ খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হলেও আইয়ান পুরোপুরি ইসলামিক স্কুলে পড়ে হেজাবী তরুনী হয়ে ওঠেন। এরপর এক সময় সোমালিয়ায় ফিরে যান এবং আরা ফিরেও আসেন কেনিয়ায়।

কেনিয়ায় ফিরে আসার পর আইয়ানের বাবা তাকে জোর করে একজন কানাডা প্রবাসী সোমালিয়ান লোকের সাথে বিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। সেই বিয়ে মনোঃপুত না হওয়াও কানাডা যাবার পথে পালিয়ে চলে যান নেদারল্যান্ডে। একসময় নেদারল্যান্ডের নাগরিকও হয়ে যান তিনি। তারপর সেখানে রীতিমত যুদ্ধ করে লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে তার শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

শিক্ষা শেষে বামপন্থী রাজনৈতিক দলের একটি গবেষণা কেন্দ্রে চাকুরী শুরু করেন আইয়ান। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর ঘটনা তার মনে এমনই দাগ কাটে যে তিনি ক্রমে ধর্মহীনতার দিকে চলতে থাকেন। এই সময় তিনি লেখা লেখি শুরু করেন এবং মুসলিম সমাজের ভুল ত্রুটি, বিশেষ করে নারী হিসেবে তিনি যে সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো নিয়ে লিখতে থাকেন। একসময় তার বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচারিত হয় এবং তিনি জীবন নিয়ে হুমকির মুখে পড়েন।

এসময় হলান্ডে মুসলমানদের আলাদা স্কুল, আলাদা সুযোগ সুবিধা দিয়ে যে তাদের বৃহত্তর সমাজের সাথে মিশতে দেয়া হচ্ছে না সেটা আলোকপাত করেন। নারীদের সুযোগ বঞ্চনার কথা নিয়ে লেখা লেখি করেন। তারপর একসময় ডান পন্থী পিপলস পার্টির সাথে করে সংসদে আসেন তিনি।

এসময় চলচ্চিত্র নির্মাতা থিও ভ্যান গগের সাথে সাবমিশন ১ নামের একটি শর্ট ফিল্ম তৈরী করেন তিনি। প্রথম চলচ্চিত্রটিতে একটি নারীর শরীরে কোরানে বর্নিত নারীবিরোধী কিছু আয়াত তুলে দেয়া হয়। তারপর এক নারীর মুখে তার অসহায়ত্বের গল্প তুলে এর অসারতা তুলে ধরার চেষ্টা হয়। ইউটিউব থেকে মুভিটির লিংক নীচে দেয়া হোলো। নিজ দায়িত্বে দেখবেন।

এই ছবি প্রকাশের পর আইয়ানকে হত্যার জন্য ফতোয়া জারী হয়। সেসময় মরোকান বংশদ্ভুত ডাচ নাগরিক মোহাম্মদ বাউয়েরি ফতোয়াটি নিয়ে ছবির পরিচালক থিও ভ্যান গগকে খুবই নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে।

এরপর থেকে আইয়ানকে দীর্ঘ সময় লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। সেসময় তার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে অসন্তোষ দেখা দিতে থাকে। একসময় মিথ্যা কথা বলে নেদারল্যান্ডে রিফিউজি স্ট্যাটাস নেয়ার কারণে তার নাগরিকত্ব এবং সংসদের পোস্ট ছিনিয়ে নেয়া হয়। তারপর থেকে তিনি আমেরিকায় বসবাস করতে শুরু করেন।

আইয়ানের কিছু ইন্টারভিউ
এখানে আইয়ানের দুটি ইন্টারভিউ দেয়া হোলো। এতে করে লেখিকা সর্ম্পকে আরো ভালোভাবে জানতে পারবেন।

আইয়ান থিও ভ্যান গগের মৃত্যুর পর সাবমিশন ২ নামে ইসলামে গে মানুষের অবস্থান নিয়ে একটি চিত্রনাট্য তৈরী করেন। এর সর্বশেষ আপডেট আমার জানা নেই।

(পরবর্তী পর্বে থাকছে আইয়ানের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং ইসলামে নারীর অবস্থান নিয়ে তার দৃষ্টি ভঙ্গী। সবশেষে বইটির উপর আমার একটি সমালোচনাও থাকবে।)

পাদটীকা


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

'বইশোনা'কে 'বইসো না' কিংবা 'বই সোনা' পড়লে লেখকের কোনোই দায় নাই।

রিভিউ পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ জাগলো। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, ,মাহবুব ভাই।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

কৌস্তুভ এর ছবি

এনার সম্বন্ধে পড়েছি। সাহসী মহিলা। তবে বইটা পড়া হয়নি। আপনার আলোচনা আকর্ষক হয়েছে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সাহসী না সুযোগসন্ধানী? দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার সময় বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

কৌস্তুভ এর ছবি

সুযোগসন্ধানী খানিকটা তো বটেই। তবে যে পরিবেশে এনার জন্ম, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবাটাই সাহসের কাজ। হ্যাঁ, পরের পর্বগুলোর আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সোমালিয়া এবং সোমালিয়ার মানুষের সম্পর্কে আমার অনেক আগ্রহ। সময় এবং সুযোগ পেলে বইটা পড়তে হবে। আপনাকে ধন্যবাদ বিষয়টা জানানোর জন্যে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সোমালিয়া, কেনিয়া এবং নেদারল্যান্ড সর্ম্পকে অনেক কিছু জেনেছি বইটি পড়ে। কিছু বিষয় পরের পর্বে আলোকপাত করব।

অতিথি লেখক এর ছবি

'বইশোনা'কে 'বইসো না' কিংবা 'বই সোনা' পড়লে লেখকের কোনোই দায় নাই।

. হো হো হো হো হো হো হো হো হো .
---------------------------------------------------------------------
Sad Songs

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সাবমিশন আগে দেখেছিলাম, ইন্টার্ভিউগুলো দেখা হয়নি। অ্যায়ান হারশি আলী সম্পর্কে কিছু জানতাম না। এখনো বেশি কিছু জানিনা তাই আলীকে নিয়ে কোন মন্তব্য করা উচিত হবে না। মহিলা অনেক চরাই উতরাই পার হয়ে এসেছেন, খুব কম মানুষই সেটা পারে। তারপরেও তার কাজ/কথার উপর খুব একটা ভক্তি আসেনি। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
-রু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।