শিকাগোতে এতো গরম পড়তে পারে ধারনা ছিলো না। ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট (৩৬.৬৭ ডি সি) তাপমাত্রা এখন। ফিলস লাইক ১০২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। ১১০-১২০ ডিগ্রীর তাপমাত্রা অ্যারিজোনাতেই পেয়েছি। শুষ্ক তাপমাত্রা বলে গায়ে লাগেনি অতটা। কিন্তু এখন তাপামাত্রা পাশাপাশি হিউমিডিটি যুক্ত হয়ে খুব ভ্যাপসা গরম পড়েছে এখানে। ইনফ্যাক্ট পুরো নর্থ আমেরিকাতেই হিট ডোম নামের এই গরমের হলকা বইছে ক'দিন ধরে। আজ দুপুরে লেকের দিকে যেতে গিয়েও মাঝ পথে ফিরে এলাম গরমে।
সেদিন যুধিষ্ঠিরের বাসায় দাওয়াত ছিলো। ভাবীর হাতের মজার মজার খাবার গুলো খেয়ে আবার হৈচৈ করে গান বাজনা করে ভালোই বিরক্ত করে এলাম। যুধিষ্ঠিরের গল মন্দ না। প্র্যাকটিস করলে হয়তো ভালো করবেন।
এই গরমের মাঝে শিকাগোর আউটডোর এট্রাকশনগুলো ঘুরে নেবার প্ল্যান করেছি। প্ল্যান অনুযায়ী একদিন গেলাম নেভি পিয়ারে। ছোট্ট বাচ্চাটাকে নিয়েই আমরা একটা স্পিড বোট ট্রিপে উঠলাম প্রথমে। দূরন্ত গতিতে বোট চলার সময় পানি ছিটকে গায়ে পড়ছিলো। মজাই লেগেছে।
এরপরে নেভি পিয়ারের রাইডগুলোত চড়ে, সোয়া দশটা নাগাদ আতশবাজি দেখে, রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরলাম। ছোটলু তখন ঘুম।
ফেরার পথে রাস্তায় টোল দিতে গিয়ে এক ঘটনা ঘটল। লম্বা লাইনে প্রায় বিশ মিনিট দাঁড়িয়ে যখন প্রায় টোল বুথের কাছে পৌঁছে গেছি তখন এক হ্যাট সানগ্লাস পরা লোক এরে লাইন ভেঙ্গে ঢুকতে চাইছে আমার সামনে। এর আগে বেশ কয়েকটা লাইন ভাঙ্গা গাড়িকে সুযোগ দিয়ে মেজাজ চড়ে আছে। একে জায়গা দিলাম না। টোল বুথ পার হয়ে দেখি এই লোক আমার পিছু নিয়েছে। খানিক পরে আমার সামনে এসে তার গতি কমিয়ে আমাকে গতি কমাতে বাধ্য করছে। আমি লেইন বদলালে সে আবার ওই লেন এ চলে আসছে। আমি শেষমেষ সর্বডানের লেইন ধরে আগাতে থাকি। আমার এক্সিট যেটা নেবার কথা সেটা না নিয়ে, ব্রেক না চেপে গতি কমাতে থাকি। একেবার শেষ মুর্হুতে ফুড়ুৎ করে এক্সিট নিয়ে বেরিয়ে যাই। ওই বেটা তখন এক্সিট ছাড়িয়ে খানিকটা এগিয়ে গেছে। সে হুড়মুড় করে ব্রেক চাপলেও আমার পিছু নিয়ে বেরোবার সুযোগ পায়নি। একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আল কাপোনের দেশ বলে কথা।
পরের উইকএন্ডে গেলাম মিলেনিয়াম পার্কে। সেখানে বিখ্যাত ক্লাউড গেইট বা লোকাল নাম দ্যা বিন নামের স্থ্যাপত্যটি আছে। একটি একটা বিশাল চকচকে সীমের বিচীর মতো একটা বস্তু। শহরের দালানগুলোর ছায়া পড়ে দেখতে ভালোই লাগে। তাছাড়া ক্রাউন ফাউনটেইন বলে একটা জায়গা আছে যেখানে দুটো চর্তুভুজাকৃতির দালানে ভিডিও দেখা যায় এবং সেখানে প্রদর্শিত মানুষের মুখ থেকে পানি পড়ে কিছুক্ষণ পর পর। এই পার্কে একটা ওপেন স্টেজ আছে যেখান প্রতি সামারের প্রতি উইকএন্ড মিউজিক শো হয়।
তারপর লেইকশোর ড্রাইভ ধরে লেকের মনোরম সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে ডেভন স্ট্রিটের জে কে কাবাবে গিয়ে ডিনার করলাম। এরপর বাড়ি।
পরের দিন ডেভন স্ট্রিটে গিয়ে বাজার সদাই করার ফাঁকে শাড়ীর দোকান গুলোতে একটু ঢুঁ মারলাম। একবারে গলাকাটা দাম দেখে আরেকটু হলে বিষম খেতাম আমি। ৩০০ থেকে ৭৫০ ডলার পর্যন্ত চায় শাড়ীর দাম। তবে একজন জানালেন দেশের মতো এখানে দামাদামী করা যায় ইচ্ছা মতো। পরের ভিজিটে এটা মাথায় রাখতে হবে।
ফেইসবুকে ছবি গুলো দেবার পর কেউ কেউ খুব আফসোস করলেন। খুব সুখে আছি এধরনের একটা ইমপ্লিকেশন দেখে মনে হোলো মানুষেরা আসলে কেবল সুখের ছবি তোলে। দুখের ছবি তোলে না। তাই কারো ছবির অ্যালবাম ঘাঁটলে মনে হবে আহা পৃথিবীর বুকে মানুষেরা খালি জীবন ভর আনন্দই করে যাই।
তবে শিকাগো এক্সপ্লোরেশনটা খারাপ হচ্ছে না। শীত আসার আগে আরো কয়েকটা জায়গা ঘুরে ফেললে মন্দ হবে না। দেখা যাক সামনের দিনগুলোতে কোথায় যাওয়া যায়।
মন্তব্য
ছবিগুলান বেশ লাগলো।
অট: ম্যারিলিন এর স্কাল্পচার ফটুক কই গেলো
love the life you live. live the life you love.
"ম্যারিলিন এর স্কাল্পচার" কোনটা?
এইটা
love the life you live. live the life you love.
দারুণ ছবি তো!
ধন্যবাদ। মিলেনিয়াম পার্কে যাওনি?
তেমনভাবে ঘোরার সুযোগ হয়নি। দুয়েকটা জিনিস ঝট করে দেখে বেরিয়ে যাওয়া...
আমেরিকার হিট ডোমের কথা ইয়াহুতে আজ রাতেই পড়লাম।
ছবিগুলোর সাইজ আরেকটু ছোট করে দিতেন...ঢাউস লাগতেছে বড়।
বেশী বড় লাগতেছে?
ঠিকই লাগছে আমার... পোস্টের মূল কনটেন্ট তো ওগুলোই।
আমার কাছে ঠিকই লাগছে ভাইয়া। আমিও এই রকম বড় করেই দেই কিনা।
আসলে ছোট ছবি দেখে আরাম পাই না।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লাফাং লাফাং লাফাং___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে ছোটলু নাম আপনাদের বাবুটার? এত গরমে কষ্ট হচ্ছে না বাবুর? ওর একটা ছবি দেখেছিলাম আপনার একটা পোষ্টে...এত মজার! ভ্রু কুঁচকে কী নিয়ে যেন ভীষণ রকম ভাবনায় পড়ে গেছে।
মনভরে বেড়ান ভাইয়া
বাবুর নাম জীয়ন। ধন্যবাদ আপনাকে।
ছবিগুলো দারুন লাগলো, সাথে বর্ণনাও।
পড়াচোর
ধন্যবাদ।
বাহ......
ধন্যবাদ।
সুন্দর ছবি
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
উনার স্টাডি রুমে ঢুকে দেখি একটা গিটার। ব্যাস বের করে বসলাম। উনি তখন উনার ভোমা সাইজের গানের খাতা নিয়ে আসলেন। তারপর ঘন্টা দেড়েক ফাটা গলায় গান।
জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি এখন ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত।
ধর্ম্মপুত্র পার্টি সিঙ্গার হিসাবে সব সময়ই জনপ্রিয় ছিলেন। স্টেজ সিঙ্গার হবার চেষ্টা কোনোদিন করেছেন বলে শুনিনি। আর এখন তিনি যেই নেশাতে পড়েছেন তাতে গান বা অন্য কিছু বহু দূরের ব্যাপার হতে চলেছে। যাকগে, তার সাথে আবার কথা হলে জিজ্ঞেস করবেন কবে নাগাদ সচলে তার পোস্ট আর কমেন্ট দেখা যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আহাহা, এভাবে বলছেন কেন! আমি তো নেশা সবসময় করি না। শুধু বছরে দু'দিন! যেদিন বৃষ্টি পড়ে, আর যেদিন পড়ে না!
এই মন্তব্যের উত্তর উপরে চলে গেছে। কপি পেস্ট:
উনার স্টাডি রুমে ঢুকে দেখি একটা গিটার। ব্যাস বের করে বসলাম। উনি তখন উনার ভোমা সাইজের গানের খাতা নিয়ে আসলেন। তারপর ঘন্টা দেড়েক ফাটা গলায় গান।
জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি এখন ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত।
বর্ণনার বৈশিষ্টতায় মনে হল আপনার সহযাত্রী হিসাবে আমিও ছিলাম। ছবিগুলো এত জীবন্ত, যেন বাস্তব থেকেও আরো বাস্তব।
ধন্যবাদ।
ছবি ও বর্ণনা মিলিয়ে দুর্ধর্ষ এক পোস্ট!
ছবিগুলো দারুণ এসেছে!
ধন্যবাদ।
আম্রিকা যাইতে হইব একবার দেখি। এইসব জায়গাগুলা গুছায়ে রাইখেন!
... আম্রিকার ভিসা পাইছে কিনা কিছু বলতে পারেন?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
একদম গুছায়া রাখুম। ভিসা পাওয়া মনে হয় এখন তুলনামূলকভাবে সহজ।
চমৎকার ছবি ও বর্ণনা।
ধন্যবাদ।
আম্নেরে কে কইছে ভিসা পাওয়া সহজ। গত ১০ মাস ধইরা বইয়া আছি কোন খবর নাই, প্রতি তিন মাস পর পর কয় পাবলিকেশন লিস্ট দেন অরিজিনাল বার্থ সার্টিফিকেট দেন এইসব
আহেন আম্নের লগে পাসপোর্ট বদলাবদলি করি, আপনে ২ মাস সুইজারল্যান্ড আমি দুই মাস আম্রিকা, তাইলে দুই জনের দুই দেশ দেকা হইয়া যাইব
মাহমুদ
ছবিগুলো দুর্দান্ত হয়েছে
দারুণ ছবিগুলো মুর্শেদ ভাই.......... ...........ঘোরাঘুরি জারি থাকুক আর সেই সাথে আমাদের সাথে শেয়ারিংটাও...............
সব ছবি কেমন যেন একটু ঝাপসা বা মলিন এসেছে। কারণ কি? অমন রোদ ঝকঝকে দিনের ছবি তো আরও ঝকঝকে হবার কথা ছিলো, বিশেষ করে 7D তে, তাই না?
ছবিতো ঝকঝকেই! রাতের গুলো ব্লারি খানিকটা। হাতে ধরে রেখে বাল্ব মোডে (যতক্ষণ শাটার টেপা থাকবে ততক্ষণ এক্সপোজড) তোলা। লাইটরুম থেকে ফেইসবুক, সেখান থেকে আবার এখানে। একারনে মনে হয় কোয়ালিটি পড়ে গিয়ে থাকবে।
ভাইয়া, ফেইসবুকে ছবির কোয়ালিটি অনেক কম্প্রেস করা হয়। এই ছবিগুলো কন্ট্রাস্ট হারিয়ে ফ্ল্যাট দেখাচ্ছে। তবে ভ্রমণের স্বাদটুকু ঠিকই পাওয়ায়া যায়।
আপনি কি ক্যানন 7D ব্যবহার করেন? উরেব্বাস!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ক্যা...ক্ক্যানন 7D???? মুর্শেদ ভাইয়ের বাসায় গেলে একবার ক্যামেরার ধূলো নিয়ে আসতে হবে
আমি আপানর আগের পোস্টে (মিশি ০০১) কমেন্ট করেছিলাম (নং ৬৩ ও ৬৭)।
গতরাতে (৬ তারিখ) গিয়েছিলাম আল আমিনে। গিয়ে আমি হতাশ হয়েছি, বাংলাদেশি স্টোর হবার জন্য কয়েক
প্যাকেট রাঁধুনি গুড়া মসলা রেখেই তারা ক্ষান্ত দিয়েছে। আর শেলফে কিছু আচার দেখলাম (যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১০ এর ডিসেম্বর) তাও ভাগ্য ভালো যে হাঁটাহাঁটি করে ফিশ কর্নার খুঁজে পেয়েছিলাম। ওখানে তাও কিছু পাওয়া যায়।
যাওয়ার পথে I-55 এ একটা গাড়ি আর একটা পোর্শে পেছন থেকে এসে আমার ৪ ইঞ্চি সামনে দিয়ে লেন চেঞ্জ করল। সামনের গাড়িগুলোকেও এভাবে ওভারটেক করল। রেস করছিল ওরা, আমার তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার যোগাড়। এরা মাঝে মাঝে কেন যে এমন করে
২৩ তারিখেও গিয়েছিলাম শিকাগোতে, গাড়ি থেকে নামতে পারি নি, নেভি পিয়ারের পাশ দিয়ে গিয়েছিলাম; শহর আর বড় বড় দালান দেখেই ফিরে এসেছিলাম সেবার।
ভাল থাকবেন।
হুম ফিশ কর্ণার ভালই লেগেছে। শিকাগোর ড্রাইভারদের কথা আর কি বলবো... তবে নদীতে বাস করতে হলে কুমিরের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে আমাদের ড্রাইভিংও খারাপ হয়ে গিয়েছে। ৫৫ স্পিডের রাস্তায় ৭০ এ চালাতে হয় প্রায়ই। :-|
সেই লোকের সাথে পাল্লাপাল্লিটা বেশ রোমাঞ্চ এসে দিয়েছিল মনে, আর শাড়ির দাম শুনে বিষম খেলাম!
facebook
বাহ! মেটালিক বিনটাতো দারুণ!!
ছবির মান আসলেই একটু ক্ষুণ্ণ লাগছে, ফেসবুক থেকে দিয়েন না আর... কিন্তু ফায়ারওয়ার্কের ছবিগুলো দারুণ! আমার খুব ইচ্ছা আতশবাজি দেখার... দেখেছি, কিন্তু ঠিক সেভাবে অনেকক্ষণ ধরে না... আর দেখার শখ একা একা না, খুব কাছের মানুষদের সাথে কোন লেকের পাড়, বা পাহাড়ের উপর বা এইরকম কোথাও দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখার ইচ্ছা... আচ্ছা, প্রতিদিনই আতশবাজি হয়, নাকি সামার উইকএন্ড বলে? আর শিকাগোর স্কাইলাইন দেখে মুগ্ধ হচ্ছি আসলেই!
জীয়ন বাবুকে একটা চিপা দিয়েন তো আমার তরফ থেকে...
এন্ড ইউ গাইজ ড্রাইভ সেইফ!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন