কজালিটি, কজেশন, (causality, causation) কর্মফল বা কার্মা (कर्म) বেশ পুরোনো এবং প্রায়শ ব্যবহৃত একটি লজিকাল রিজনিং। কর্মফল হচ্ছে কর্ম এবং তার ফলের মধ্যে সর্ম্পকটি। কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে:
১) "বৃষ্টি হলেই ব্যাঙ ডাকে। সুতরাং বৃষ্টি হচ্ছে ব্যাঙ ডাকার কারণ।"
২) "এই বেটা নিয়ামকটি ছাড়া রাসায়নিক বিক্রিয়াটি খুব দূর্বল। সুতরাং বেটা নিয়ামকটির কারণেই বিক্রিয়াটি দ্রুত গতিতে ঘটে।"
৩) "সুপারম্যান যেখানে থাকে সেখানেই সুপার দুষ্ট লোকেরা যায়। সুতরাং সুপারম্যানের কারনেই সুপার বিপদ ঘটে।"
এসব রিজনিংকে এভাবে ডায়াগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে:
কর্ম ---> ফল
বা
কারণ ---> ফল
১) বৃষ্টি ---> ব্যাঙ
২) বেটা নিয়ামক ---> দ্রুত বিক্রিয়া
৩) সুপারম্যান ---> সুপার বিপদ
কিভাবে বুঝবেন কজাল রিজনিং ব্যবহার করা হচ্ছে?
বাংলা ভাষায় "কারণ", "জন্য", "থেকে", "দায়ী", "সুত্রপাত", "ফলাফল", "কর্মফল" ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার করে কজাল রিজনিং তৈরী করা হতে পারে। উপরন্তু লক্ষ্য করবেন যে দুইটি ঘটনার একটি আরেকটি আগে ঘটেছে কিংবা একসাথে ঘটেছে এরকম অবস্থার সুচনা হলে তার পরপরই অনেক সময় কজাল রিজনিং ব্যবহার করে দুটিকে যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ বলা হয় আগের ঘটনাটি পরের ঘটনাটির জন্য দায়ী।
কজাল রিজনিংয়ের প্রায়শ ব্যবহৃত দূর্বলতা?
১) এক সারি ঘটনা একের পর এক ঘটছে দেখে ধরে নেয়া তারা পরস্পর সর্ম্পকযুক্ত।
যেমন:
"প্রথমে তুই নামাজ পড়া বন্ধ করছস। তারপরই তুই করলি পরীক্ষায় ফেইল। এরপরই তোর বাবা মারা গেলো। এই নামাজ বন্ধ করার কারণেই তোর উপর গজব পড়ছে।"
২) দুটি ঘটনার মধ্যে সর্ম্পক থাকলেই একটা ব্যাপারকে আরেকটা ব্যাপারের কারণ হিসেবে ধরে নেয়া।
যেমন:
"বৃষ্টি হলেই ব্যাঙ ডাকে। সুতরাং বৃষ্টি হচ্ছে ব্যাঙ ডাকার কারণ।"
কিন্তু হয়ত বৃষ্টির সময় তৃতীয় কোনো ব্যাপার ঘটে যার কারণে ব্যাঙ ডাকে।
৩) ফলটি একটি তৃতীয় কারণে ঘটতে পারে কিংবা কর্ম এবং ফল দুটো ঘটনার পেছনে একটি তৃতীয় কারণ থাকতে পারে সেটা অগ্রাহ্য করা।
যেমন:
"সার্ভে থেকে দেখে গেছে যখন আইসক্রিম খাওয়া বেড়ে যায় তখনই অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। সুতরাং আইসক্রিম নিশ্চয়ই অপরাধের প্রবনতা বৃদ্ধি করে।"
কিন্তু এক্ষেত্রে তৃতীয় কারণ হয়ত উপরের দুটি ঘটনার জন্য দায়ী। তৃতীয় কারণটি হল গ্রীষ্মকাল। আমেরিকায় গ্রীষ্মকাল আসলে আইসক্রিম খাওয়া এবং অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়।
৪) কর্ম এবং ফল পুরোপুরি উল্টো হতে পারে। অর্থাৎ ফলের কারণেই হয়ত কর্মটি ঘটছে।
যেমন:
"সুপারম্যান যেখানে থাকে সেখানেই সুপার দুষ্ট লোকেরা যায়। সুতরাং সুপারম্যানের কারনেই সুপার বিপদ ঘটে।"
হয়ত সুপার বিপদ সামাল দেবার কারণেই সুপারম্যানের জন্ম হয়েছে।
কজাল রিজনিংয়ের দূর্বলতা বের করবেন কিভাবে?
উপরে যেকয়টি প্রায়শ ব্যবহৃত দূর্বলতা বর্ণনা করা হয়েছে সেটা একে একে নীচের মতো করে খুঁজে বের করুন।
১) প্রথমেই দেখুন ফলাফলটির জন্য অন্য একটি কারণ দায়ী কিনা।
যেমন:
"এই বেটা নিয়ামকটি ছাড়া রাসায়নিক বিক্রিয়াটি খুব দূর্বল। সুতরাং বেটা নিয়ামকটির কারণেই বিক্রিয়াটি দ্রুত গতিতে ঘটে।"
এটিকে দূর্বল করতে দেখুন অন্য কোনো কারণে রাসায়নিক বিক্রিয়া গতি বাড়তে পারে কিনা। যেমন, বেটা নিয়ামকটি রাসায়নিক দ্রব্যের সাথে মেশাতে বেশ জোরে ঘুরাতে হয়। হয়ত সেই ঘোরানোর কারণেই বিক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়।
ডায়াগ্রামের মাধ্যমে:
কর্ম ---> ফল
↑
কর্ম ২ ---/
অথবা
কর্ম ২ ---> কর্ম ---> ফল
২) দ্বিতীয়ত দেখুন যে কারণটি ঘটলেও ফলাফল ঘটেনি
যেমন:
"এই বেটা নিয়ামকটি ছাড়া রাসায়নিক বিক্রিয়াটি খুব দূর্বল। সুতরাং বেটা নিয়ামকটির কারণেই বিক্রিয়াটি দ্রুত গতিতে ঘটে।"
দ্বিতীয় একটি দল এই বেটা নিয়ামটি ব্যবহার করেও দ্রুতভাবে বিক্রিয়া ঘটাতে পারেনি।
ডায়াগ্রামের মাধ্যমে:
কর্ম ---> XXX
৩) তৃতীয়ত দেখুন যে কারণটির উপস্থিত না থাকলেও ফলাফলটি ঘটতে পারত কিনা।
যেমন:
"প্রথমে তুই নামাজ পড়া বন্ধ করছস। তারপরই তুই করলি পরীক্ষায় ফেইল। এরপরই তোর বাবা মারা গেলো। এই নামাজ বন্ধ করার কারণেই তোর উপর গজব পড়ছে।"
দেখুন যে, নামাজ যারা পড়েছে তাদের অনেকের একই রকম বিপদ এসেছে।
ডায়াগ্রামের মাধ্যমে:
XXX ---> ফল
৪) চতুর্থত দেখুন যে কর্ম ফলের সর্ম্পকটি পুরো উল্টো।
যেমন:
"দেখা যাচ্ছে যখনই মানুষ দ্রুত হারে চাকরী হারায় তখন একটি দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে। সুতরাং চাকরী হারানোই অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার কারণ।"
অথচ আসলে অর্থানীতি ভেঙ্গে পড়ার কারণেই চাকরী হারায় একটি দেশ।
ডায়াগ্রামের মাধ্যমে:
ফল ---> কর্ম
৫) দেখুন যে ব্যবহৃত তথ্য কোনো পরিসংখ্যান জনিত সমস্যা আছে কিনা।
ডায়াগ্রামের মাধ্যমে:
পরিসংখ্যান ---> কর্ম ---> ফল
^
|
সমস্যা
এখন নীচের আর্গুমেন্ট কি কি ভুল আছে বের করুন। নীচের আর্গুমেন্টটি নেয়া হয়েছে এখান থেকে:
বাজেটের ঘাটতি নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক। অতীতেও বাজেটে পাঁচ ভাগ ঘাটতি ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট প্রণয়নের আগে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। অতীতে কোনো সরকার তা করেনি। বাজেট নিয়ে কিছু মানুষ অখুশি হতে পারে। বিরোধী দল লুটপাট, দুর্নীতি করতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই তারা অখুশি। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি অর্জনে আওয়ামী লীগের অবদান আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই মানুষ কিছু পায়।
মন্তব্য
কজালিটি আর কোরিলেশন গুলিয়ে ফেলা মনে হয় একটা কমন প্র্যাকটিস, আমরা সবাই কমবেশি করি।
হুঁ। ইরেজীতে একটা প্রচলিত কথা আছে:
Correlation does not imply causation.
বাংলায় এরকম একটা কথা চালু করা দরকার:
সর্ম্পক থাকলেই কার্যকারণ নির্ধারিত হয়ে যায় না।
আমি তো বলি, correlation doesn't imply causation শুধু নয়, correlation doesn't even imply relation! ওই আমেরিকায় আইসক্রিম আর মারপিট যেমন।
সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন। প্রথম থেকেই পড়ছি সিরিজটা। কতটা বুঝতাছি নিজে, শুধু সেইটা বুঝতাছি না; তবু পড়তে আর বুঝার চেষ্টা করতে ভালো লাগতেছে।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
এটা একটু শক্ত হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।
ঠিক কথা। আপনি শেষে যে কাজটা দিলেন সেটা উদাহরণ হিসাবে গোটা লেখায় ব্যবহৃত হলে প্রাঞ্জল হত মনে হয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমার বরং উদাহরণটাই সুবিধার লাগে নি। বাংলাদেশের পলিটক্স-স্পেসিফিক কিনা। "বিরোধী দল লুটপাট, দুর্নীতি করতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই তারা অখুশি।" এটা ছাড়া তো কজাল স্টেটমেন্ট কিছু দেখলাম না, বাকিগুলো ছাড়া-ছাড়া কতগুলো বাক্য।
সমাধানের জন্য দেয়া সমস্যাটায় কজাল এরর হয়েছে এখানে:
বাজেটে পাঁচ ভাগ ঘাটতি গ্রহণযোগ্য যেহেতু অতীতেও এটা ছিলো।
অতীতেও ঘাটতি ---> বর্তমান ঘাটতি
এখানে মূল কারণ না দেখিয়ে একটা ডামি কারণ দেখানো হচ্ছে। দূর্বল করতে পয়েন্ট ১ অনুসারে একটা অল্টারনেট কারণ বের করতে হবে। যেমন - অতীতের এবং বর্তমানের ঘাটতি হচ্ছে যথেষ্ট পরিমান অর্থনৈতিক সাহায্য না পাওয়া। কিংবা প্রতিবারের মতো এবারেও চুরি ধারী করা হচ্ছে। ইত্যাদি।
এইটা তো কজাল এরর নয়!
যদি ওনার বক্তব্য হত যে আগেও পাঁচ ভাগ ঘাটতি ছিল বলেই এবারো পাঁচ ভাগ ঘাটতি হয়েছে, তাহলে সেটা কজাল বক্তব্য হল।
বাজেটে পাঁচ ভাগ ঘাটতি গ্রহণযোগ্য যেহেতু অতীতেও এটা ছিলো, এটা তো অন্য একটা বক্তব্য। সেটাকে সেটার মত করে সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু ওটা আলোচনায় যেভাবে কজাল এরর দেখানো হয়েছে সেটা নয়।
হুমম। আমার ইন্টারপ্রেটেশন ভুল হয়েছে দেখছি।
আরেকটা সমস্যা হলো:
অর্থাৎ
বিরোধী দল দূর্নীতি করতে পারছে না --- > অখুশি
এক্ষেত্রে অখুশি থাকার অন্যান্য আরো কারণ থাকতে পারে।
ফালুর হাসি আগের মতোই অমলিন।
আহা আমি তো বললামই যে কজাল স্টেটমেন্ট ওই একখানাই দেখলাম। ওটা ঠিক না ভুল সেটা তো পরের ব্যাপার।
বাহ, আমার তো সহজই লাগল।
২-এর শুরুর ডায়াগ্রামটা একটু চলকে গেছে।
আমার কাছে সম্পর্ক মানে কর্ম->ফল এবং নো কর্ম->নো ফল, দুটোই একসাথে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কজেশন এইভাবে কাজ করেঃ (A => B) == (!B => !A) কিন্তু (A => B) == (!A => !B) এভাবে না।
যেমন বৃষ্টি হলে রাস্তা ভিজে যায়, এটা কিন্তু কজেশন (বৃষ্টি => রাস্তা ভেজা)। কিন্তু এই কজেশন সত্য হওয়ার জন্য যদি আপনি দাবী করেন (বৃষ্টি নেই => রাস্তা শুকনা) তাহলে কিন্তু হলো না, পৌরসভার গাড়ী পানি ঢেলেও রাস্তা ভিজিয়ে দিতে পারে। এখানে (বৃষ্টি -> রাস্তা ভেজা) এবং (রাস্তা শুকনা -> বৃষ্টি না) এই দুইটা সত্য হলে বলা যাবে বৃষ্টি রাস্তা ভেজার 'কজ'।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ঠিক। এটা কন্ডিশাল রিজনিং। দিগন্ত যেটা করেছেন সেটা হলো মিসটেকেন নিগেশন।
সেটাই তো, ভাবার সময় খেয়াল থাকে না
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এইখানে ওগো বধূ সুন্দরী'র গানটা হবে, "শুধু তুমি নয় অবলাকান্ত, অনেকেরই বলার সময় খেয়াল থাকে না"
ওটাই বলার চেষ্টা করছিলাম আরকি
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বাহ! জিআরই এর রাইটিং সেকশনে এইরকম কজাল রিলেশন নিয়ে ঘাটতে হয়। বাউন্ডেড সময়ের মাঝে ব্যাপারটা বেশ বেশ টানটান উত্তেজনার ব্যাপার।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ভাল লাগছে আলোচনা
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হ, ঈভ হারামজাদী আপেলটা না খাইলেই এই গিয়ানজামের ভেতর পড়া লাগতো না।
এতে বুঝানো হচ্ছে--
১। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে=> মানুষ কিছু পাচ্ছে। কজ=> ফল
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসাই মানুষের কিছু পাওয়ার কারণ।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় নেই=>মানুষ কিছু পায় না। কজ নাই=> ফল নাই
২। ধরা যাক এমন পরিস্থিতি যে মানুষ কিছু পাচ্ছে না। কাজেই এই যুক্তি অনুসারে বলা যাবে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় নেই।
অর্থাৎ মানুষ কিছু পাচ্ছে না=> আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় নেই। ফল নাই=> কজ নাই
কেমনে কি? আওয়ামীলীগ না থাকলে মানুষ কিসুমিসু পায়না?
--------------------
পথিক পরাণ
'অমুককে আমার ভালো লাগে না, সুতরাং অমুকের লেখা আমার ভালো লাগে না।'
'অমুকের লেখা ভালো লাগে না, সুতরাং অমুককে ভালো লাগার কোনো কারণই নাই।'
- যুক্তি ঠিক আছে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
পোষ্ট ভালো লেগেছে।
তবে মাঝে মধ্যে একটু মাতাহ্র ওপর দিয়ে চলে যেতে চায়। এই আর কি।
ভালো করে বার-দুয়েক পড়ে তবে বুঝলাম।
পড়ছি। সব কিছু বুঝছি, তা বলবোনা। বরং বলি, বোঝার চেষ্টা করছি।
নতুন মন্তব্য করুন