ন্যাভিস্টার একটি ট্রাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বাজারে মূলধণ সাড়ে তের বিলিয়ন, কর্মী সংখ্যা প্রায় একুশ হাজার (সুত্র)। প্রতিষ্ঠানটি গত প্রায় দশ বছর ভালোই করছিলো। কিন্তু কপালে সুখ বেশী দিন সহ্য হলো না।
আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সী (ইপিএ) একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিবেশ প্রতিরক্ষার মান বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ধীরে ধীরে ট্রাক বা যে কোনো গাড়ীর প্রতিবেশিক প্রভাব কমানো সম্ভব হয় বা পরিবেশ বান্ধব হয়।
২০০১ এ ইপিএ একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করে যেটা ২০০৭ থেকে কার্যকর হবে। নতুন নিয়মটি বেশ শক্ত ছিলো। ডিজেল ইঞ্জিন থেকে নক্স (NOx) আর পার্টিকুলেট নিঃসরণ কমাতে হবে। এইসময় সব ট্রাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ভলভো, ম্যাক, ফ্রেটলাইনার, প্যাকার, কামিনস, সহজে প্রস্তুত করা যায় এবং সহজে ইপিএর লক্ষ্যে পৌছানো যায় এরকম একটি পদ্ধতি বেছে নেয়। পদ্ধতিটি হলো গাড়ী থেকে নিসঃরিত গ্যাসটাকে ইউরিয়ার মধ্যে দিয়ে চালনা করা, যার ভালো নাম সিলেক্টিভ ক্যাটালাইটিক রিডাকশন বা SCR।
SCR পদ্ধতিতে ইঞ্জিন থেকে বের হতে থাকা ধোঁয়াটাতে ইউরিয়া স্প্রে করা হয়। এতে করে ইউরিয়ার সাথে নক্সের বিক্রিয়ায় নাইট্রোজেন আর পানির বাষ্প তৈরী হয় যার দুটোই পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু সমস্যা হলো ট্রাকগুলোতে এখন থেকে দুটো "জ্বালানী" বহন করতে হবে। একটা হলো ডিজেল আর আরেকটা হলো ইউরিয়া। তাছাড়া এই অতিরিক্ত ইউরিয়া বহন করার জন্য ট্রাকের জ্বালানী খরচও বাড়বে।
ন্যাভিস্টার প্রতিযোগীদের প্রচলিত এবং সহজ পদ্ধতিতে গেলো না। SCR ছাড়াও আরেকটি পদ্ধতিতে একই ধরণের ধুম্র শোধন করা সম্ভব। একে বলে এক্সজস্ট গ্যাস রিসারক্যুলেশন, EGR। এপদ্ধতিতে নিসঃরিত গ্যাসটাকে ঘুরিয়ে দ্বিতীয়বার ইঞ্জিনে পাঠানো হয়। দুবার পুড়ে যাবার কারনে পার্টিকুলেট কমে যায়। সমস্যা হলো এই পদ্ধতিটি তখনো শিশু অবস্থায় ছিলো। তাছাড়া এটার কারণে ইঞ্জিন সহ পুরো গাড়ীর অভ্যন্তরীন প্রযুক্তি উন্নত করতে হবে। এখানে একটি SCR আর EGR এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা আছে।
নীচের ভিডিওতে একটি তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে, যদিও ভিডিওটি করা হয়েছিল SCR কে পঁচিয়ে।
যদি ন্যাভিস্টার EGR পদ্ধতি কার্যকরী করতে পারে তাহলে তারা প্রতিযোগীদের থেকে অনেক এগিয়ে যাবে। আর যদি না পারে?
ন্যাভিস্টারের সিইও ড্যান উস্টিয়ান শিকাগোর ডিপ'ল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রসাশন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭২ সালে। ন্যাভিস্টারে যোগদানের পর খুব দ্রুত উপরের দিকে উঠতে থাকে সে। ১৯৯৯ সালে ডিজেল ইঞ্জিন শাখার প্রধাণ, ২০০২ এ সিইও এবং ২০০৪ চেয়ারম্যান হয় উস্টিয়ান।
উস্টিয়ানের পরিচিত জনেরা বলেন তিনি খুব "গাটসি" লোক। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেবার সময় সে "গাট ফিলিং" বা "আমার মনে হচ্ছে এটা ঠিক" এইরকম একটা অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত নেন। একারণে তাকে প্রায়ই বিপদজনক সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। উস্টিয়ানের ক্ষেত্রে সবসময় এই পদ্ধতি তাকে সাহায্যই করেছে। এবারেও তাই তিনি বিপদজনক এবং অপরীক্ষিত সিদ্ধান্তই নিলেন। তিনি EGR পদ্ধতিতে এগুবার চিন্তা করলেন।
কিন্তু ২০০৭ এ যখন ইপিএ এর নতুন নীতিমালা জারি হলো তখনও এই EGR সফলভাবে ব্যবহার করতে পারেনি ন্যাভিস্টার। আগের বছরগুলোতে ইপিএর নীতিমালার চেয়েও পরিবেশ বান্ধব ইঞ্জিন তৈরী করতে পেরেছিলো তারা। তখন ইপিএ তাদের প্রচুর "ক্রেডিট" দিয়েছিল। এই "ক্রেডিট" গুলোর বিনিময়ে ন্যাভিস্টার আগের ইঞ্জিনগুলোই ব্যবহার করতে থাকে এবং EGR এর উপর কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।
ধীরে ধীরে ২০০৮, ২০০৯ ও পার হয়ে যেতে থাকে। ইঞ্জিনিয়াররা বুঝতে পারছিলো তারা ভুল পথে এসেছে। এই সিদ্ধান্ত একটা বেটাম্যাক্স বনাম VHS ফরমেট যুদ্ধের মতোই রূপ নিচ্ছে। কিন্তু উস্টিয়ানের একটাই কথা "EGR কেই ঠিকঠাক করো"। ইঞ্জিনিয়াররা বলছিলো আমরা চেষ্টা করতে পারি কিন্তু আমরা জানিনা আদৌ এটা করা সম্ভব হবে কিনা। বিশেষ করে উস্টিয়ানের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে কথা বলে যখন চাকরী পর্যন্ত যেতে পারে তখন বাকীরা চুপ থাকার সিদ্ধান্তই নিলো।
নতুন নিয়ন্ত্রন নীতিমালা জারি হবার পর আড়াই বছর পার হয়ে যাবার পর যখন ন্যাভিস্টারের আগের "ক্রেডিট" গুলো শেষ হলে গ্যালো এবং EGR নিয়ে কিছু করা সম্ভব হলো না তখন ইপিএ ন্যাভিস্টারকে ট্রাক প্রতি প্রায় দুহাজার ডলারের বিনিময়ে আগের মডেলের ট্রাকগুলোর বিক্রি চালিয়ে যাবার অনুমতি দেয়। এরপরও উস্টিয়ান EGR নিয়েই গোঁ ধরে রইল। একটা স্বীকৃত নিশ্চিত পক্ষপাত বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের একটি উদাহরণ।
এর মাঝে অন্যান্য ট্রাক প্রতিষ্ঠানগুলো ইপিএ এর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে বসল। "আমাদের বেলা ঠিকই নিয়ম চাপিয়েছো আর ন্যাভিস্টারের বেলায় সহজেই ছাড় দিয়ে যাচ্ছো!" এইরকম একটা অবস্থান থেকে মামলা করল অন্যান্য কোম্পানী। আর গতমাসে (জুলাই ২০১২) যখন মামলার ফলাফল ন্যাভিস্টারের বিপরীতে গেল তখন উস্টিয়ান এতদিন যার বিরোধীতা করে এসেছে সেই SCR পদ্ধতিই মেনে নেবার সিদ্ধান্ত নিলো।
কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এই গ্যাঞ্জামে পড়ে ২০১২ এর শুরু থেকেই ট্রাক বিক্রি প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। ২০১২র প্রথম ছয়মাসে তারা লোকসান করে প্রায় আধা বিলিয়ন ডলার! মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আগের ইঞ্জিনগুলোর সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। তাই তাদের পুরোনো ইঞ্জিন মেরামত বাবদ রাখতে হচ্ছে ২২৭ হাজার ডলারের। কফিনের শেষ পেরেক ঠুকতে ভবিষ্যত ট্রাকের চাহিদা কমে গেছে ৪০ শতাংশ। আর এই সব ডামাডোলে তাদের শেয়ারে নেমেছে ধ্বস। প্রায় সত্তর ডলারের শেয়ার এখন প্রায় একুশ ডলার - ২০১১ তে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ট্রাক বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের এখনকার বাজার মূলধণ মাত্র দেড় বিলিয়ন।
আরও অন্যান্য টুকটাক সমস্যা মিলিয়ে ন্যাভিস্টারের অবস্থা খুব নাজুক। তারা তাদের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে থেকে ২০% লোক ছাটাই করবার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাতেও ছাটাই হবে বোঝা যাচ্ছে। এছাড়া ১ বিলিয়ন ডলার ধার নিয়ে আগামী বছরের মাঝ নাগাদ কামিনসের কাছ থেকে SCR প্রযুক্তি কিনে সেটা কাজে লাগাতে চায় তারা।
এটা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা পাবেন এখানে। আমি মূলত এই লেখাটিকেই অনুসরণ করে লিখেছি।
পরে কি হবে, কোম্পানী বাঁচবে না ব্যাঙ্করাপ্সির দিকে মোড় নিবে সেটা সময় আসলেই বোঝা যাবে। কিন্তু এই ঘটনা থেকে যেটা শিক্ষণীয় সেটা খুব জরুরী এবং আমি নিশ্চিত বিভিন্ন এমবিএ ক্লাসে এটা নিয়ে তুমুল আলোচনা হবে।
আমি যে শিক্ষনীয় বিষয়গুলো আইডেন্টিফাই করেছি:
১) নিজের "গাট" অনুভূতির চেয়ে যুক্তি অনেক বেশী নির্ভারশীল।
২) প্রতিযোগীকে সম্মান করতে শেখো এবং পুরো দুনিয়া যেদিকে চলছে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থেকোনা। অন্ত্যতঃ তারা সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত কেনো নিলো সেটা চিন্তা করো।
৩) সবসময়ে একটা পরিকল্পনা দুই রাখবে। দরকার হলে একটা গবেষণা শাখা বসিয়ে রাখে যারা বিপদের সময় দ্বিতীয় পদ্ধতিটি যোগান দিতে পারবে।
৪) নিজের ভুল বোঝার মতো মানসিকতা রাখতে হবে। "আমি ঠিক এবং কেউ আমার বিরুদ্ধে কথা বলতে আসলে তাকে ছাটাই করে দিতে হবে" এই মানসিকতা ক্ষতিকর। প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
পাঠক আপনার অনুভুতি কি? নিজেকে এই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মীর যায়গায় বসিয়ে চিন্তা করুন আপনি কি করতেন?
কিংবা নিজেকে এই সিইওর যায়গায় বসিয়েই বা কি সিদ্ধান্ত নিতেন? ২০০১ এ যখন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ২০০৭ এ যখন লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, ২০১০ এর মাঝামাঝি যখন তাদের ইপিএ "ক্রেডিট" শেষ হয়ে গেলো, ২০১১ তে যখন অন্যান্য কোম্পানী ইপিএ কে ছাড় দেবার দায়ে মামলা দায়ের করল কিংবা ২০১২ তে যখন তরী ডুবল?
এরকম একটা প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতেন?
মন্তব্য
ও মা, শেষ লাইনে এসে দেখি পরীক্ষার প্রশ্ন!
অসাধারন লেখা এবং মাহবুবকে ধন্যবাদ।
আপনি যে পয়েন্টগুলো আইডেন্টিফাই করেছেন, অবশ্যই আমি ওই জায়গায় হলে সেগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতাম। এরকম কোম্পানী যেমন রাতারাতি ডোবেনা তেমনই একবার ডুবলে একে রাতারাতি বাঁচানোও সম্ভব নয়। কোম্পানীর প্রসপারিটির জন্যে কন্টিনিউয়াস গবেষনা চালাতে হয় এবং গবেষনার ফলাফল বা অগ্রগতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করতে হয়। পাশাপাশি প্রতিযোগীদের অগ্রগতিও আমলে নিতে হয়। সমজাতীয় ব্যবসাগুলোর সাফল্য ও ব্যার্থতার কারনগুলো খুঁজে বের করে সেই জায়গায় নিজেকে বসিয়ে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ এবং ফোরকাস্ট করা জরুরী। আমি হলে সেটা করতাম।
প্রথমত, আমি এমন কোনও ধরনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইতাম না যার কোনও ঐতিহাসিক সাফল্য গাঁথা নেই। আর যদি আমি এমন কিছু একটা ইনহেরিট করতাম, আমি ক্রমশ পরিকল্পনাটিকে বাস্তবতার নিরিখে টিউনিং করতাম। এটা ক্ষুদ্র কোনও উদ্যোগ নয়, বিলিয়ন ডলার প্রজেক্ট যেখানে ২১,০০০ কর্মীর জীবন-জীবিকা-ভবিষ্যত ঝুলে আছে এবং অগণিত শেয়ারহোল্ডারের প্রশ্ন জড়িত।
দ্বিতীয়ত, বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে গেলে আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু গ্রোথ রেট ভালো এমন একটা প্রতিযোগীর সাথে মার্জারের চিন্তাভাবনা করতাম। এরকম মার্জার বেশ কাজে আসে। এতে করে ছোট প্রতিষ্ঠানের কারিগরী উন্নতি এবং আমার প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস এবং বিশাল বাজার, এই দুটোর সন্মিলন ঘটানো সম্ভব হতো।
তৃতীয়ত, নতুন পরিকল্পনার গবেষনা এবং বাস্তবায়ন শুরু করার আগেই আমি এর ফেজ-আউট প্ল্যান তৈরী করে তবে কাজে নামতাম। কাজে সাফল্য আসতে শুরু করলে যেমন প্রয়োজন হতো এর বিস্তারের জন্যে বিজনেস প্ল্যান। ঠিক তেমনই কাজে ধরা খাওয়ার পরিস্থিতি আসলে সেটাকে গোটানের জন্যে ফেজ-আউট প্ল্যান এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যে একটা কনটিনজেন্সি বা প্ল্যান-বি রাখতাম।
চতুর্থত, আমি শুরু থেকেই একটা স্পেশালাইজড প্রোডাক্ট নিয়ে চিন্তা ভাবনার পাশাপাশি কিছু সাইড বিজনেস শুরুর চিন্তা করতাম। এক্ষেত্রে আমি চিন্তা করতাম ট্রান্স কন্টিনেন্টাল শিপমেন্টে ব্যবসার কথা যেখানে নিজেদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করার সুযোগ আছে। এটা হয়তো প্রতিষ্ঠানের দুর্দিনে ট্রানজিশনাল সাপোর্ট দিতে পারতো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এদের সাইড বিজনেস আছে। ছোট আকারের ট্রাক এবং আর্মির ট্রাক বানায় এরা। কিন্তু বড় ট্রাকের সমস্যার কারনে সেদিকটাতেও নড়বড়ে অবস্থা।
তবে আরেকটু ডাইভার্সিফাই করতে পারতো এরা। আই গেস।
কর্পোরেশনগুলোতে মগের মুল্লুক চলে। এই ভুল পথ থেকে সরে আসার জন্য প্রচুর সময় তারা পেয়েছে। উস্টিয়ানের চাকরি আছে নাকি বিরাট রিটারমেন্ট প্যাকেজ নিয়ে সে সরে পড়েছে?
আমার নিজের কোম্পানির কথা বলি। গত দশ বছর ধরে ম্যানেজমেন্ট চেইনে যাদের উপরে তোলা হচ্ছে তাদের মধ্যে কমন ফিচারগুলো হচ্ছে - ডার্টি কাজ করতে এদের জুড়ি নেই, মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা আশ্বাস তারা অনায়াসে দিতে পারে। স্বল্প বুদ্ধিতে বুঝতে পারি এইলোকগুলো কোম্পানির আর বাকি এক লক্ষ লোকের স্বার্থ দেখবে না, এদের কাছে চাকুরি ছাঁটাই একটা নম্বর মাত্র, খরচ কমানোর একটা টুল। এতে একটা মানুষের জীবন আর পরিবারের কি ক্ষতি হতে পারে সেই গুলো বিবেচ্য নয়। লিডারশিপে বিবেক ও বোধহীন লোক থাকলে কোম্পানির পরিণতি এই রকমই হয়। মনুষ্যত্বটা এমবিএ কোর্সে শেখানো যায় না।
উস্টিয়ানের কিছু হবে না এতে, এখান থেকে বিদায় নিলেও ক্ষতি নেই তার। অন্য আরেকটা কোম্পানির সিইও চাকরি প্রায় গ্যারান্টিড।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
উস্টিয়ানের এখনও চাকরী আছে। তবে কি হবে বলা যায় না।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এ ব্যাটা কিন্তু এমবিএ করে নাই।
মাঝপথে মোড় ঘুরাইতে হবে, ব্যবসা করতে নামছে, ঐশী সাধনা করতে নামে নাই্। তবে চিপা দিয়া 'পছন্দের' গবেষণাতেও টেকাটুকা ঢালতে পারত। লাস্টে গিয়া তো টেকায় আটকায় নাই, আটাকাইছে টাইমে। এই প্রসঙ্গে লালন বলছেন, সময় গেলে সাধন হবে না, দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না, কেন জানলে না
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কর্পোরেট গভর্নেন্সে পেস্ট এনালিসিস বলে একটা টেকনিক আছে। পেস্টের অন্তর্ভুক্ত চারটি এনালিসিস, যথাঃ (১) পলিটিকাল/লিগাল এনালিসিস, (২)ইকোনোমিক এনালিসিস, (৩) সোসিও-কালচারাল এনালিসিস এবং (৪) টেকনোলজিকাল এনালিসিস। উস্টিয়ান পলিটিকাল এনালিসিস (এনভায়রেনমেন্ট প্রটেকশান লজ যার একটি অনুষঙ্গ) এবং টেকনোলজিকাল এনালিসিস (টেকনোলজিকাল প্রচেষ্টা এবং রূপান্তর গতিময়তা) - এ দুটোতে মারাত্মক অদক্ষতা দেখিয়েছেন। তবে যারা চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খোলেননি, তারাও সঠিক কর্পোরেট গভর্নেন্স অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, দেখুন, তাদের আচরণ দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্যই ক্ষতি ডেকে এনেছে, কারণ ফার্মের ভবিষ্যতের উপর তাদের ভবিষ্যৎ এবং বিক্রি-যোগ্যতা নির্ভর করে।
অসাধারণ একটা পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ, মুর্শেদ ভাই!
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
আমার মনে হয় একটা সম্ভাব্য শিক্ষনীয় বিষয় বাদ পড়েছে (যেটা রিপাবলিকান মহলে বেশ জনপ্রিয় হবে) -
৫) "ইপিএ কে বন্ধ করে দেওয়া হোক / রেগুলেশন তুলে নেওয়া হোক" এই আর্গুমেন্টের পক্ষে এখন থেকে ন্যাভিস্টার আরেকটা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ম্যানেজমেন্ট এর ভুল সিদ্ধান্ত আর গোঁয়ার্তুমির কারনেই কোম্পানির পতন ঘটলেও দোষ হবে "জব কিলিং রেগুলেশন" এর। বলা হবে ইপিএ এর রেগুলেশন না থাকলে কোম্পানিটা আজও বহাল তবিয়তেই থাকতো, মানুষের কর্মসংস্থানেরও কোনো সমস্যা হতো না।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
হ...
এই রোল প্লেয়িং গেমগুলি ভালু পাই। ডেমোক্রেসি বলে একটা পিসি গেম খেলতাম, ওইখানে কয়েকটা বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট করে বসায় দিত। একেক দেশের একেক সমস্যা। সময় পাঁচ বছর, এর মধ্যে দেশের স্ট্যাট উন্নত করতে হবে।
আপ্নের প্রশ্নে আসি। আমি এই মুহুর্তে ন্যাভিস্টার পেলে কম্পিটিশন ফার্মের ইঞ্জিনিয়ার যারা SCR টেকনোলজির উপর কাজ করেছে গত কয় বছর তাদের দুই একজনকে ২৫% - ৫০% বেশি বেতনে ভাগিয়ে আনতাম। ঐ টেকনোলজির উপর পড়াশুনা করা নতুন গ্রাজুয়েট নিতাম স্বাভাবিক স্যালারিতে, তাদের যুক্ত করতাম আমার বর্তমান টীমের সাথে আর SCR টেকনোলজি লঞ্চ করে দিতাম। শর্ট টার্ম।
লং টার্ম, একটা রিসার্চ চালাতাম যে EGR টেকনোলজি SCR টেকনোলজি থেকে খরচায় কম পড়ে কিনা। যদি পয়সা খরচ করে EGR টেকনোলজিকে স্টেবল করা যায় আর অতিরিক্ত ইউরিয়া বহনের খরচ বাদ দেয়া যায়,দারুন। কস্ট ছাড়াও অতিরিক্ত জ্বালানী বহনের জায়গা বেঁচে যায়। না হইলে, SCR টেকনোলজিই এডোপ্ট করা যাক।
..................................................................
#Banshibir.
১। ভদ্রলোক অনেকটা জুয়া খেলেছেন। জিতে গেলে বাজিমাৎ, হারলে শেষ!
২। কর্পোরেট লাইফে টপ-ম্যানেজমেন্ট বলে একটা জিনিস থাকে, একা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তো থাকার কথা না! ভদ্রলোকের এতো ক্ষমতা ছিল যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তিনি একা নিতেন? টপ ম্যানেজমেন্ট তাহলে কী করতো? নাকি ভদ্রলোকের সবাইকে বুঝানোর ক্ষমতা এতোটাই ছিল যে তাঁর এই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত টপ ম্যানেজমেন্টকে সহজেই প্রভাবিত করতে পারতো?
৩। প্ল্যান বি থাকাটা সত্যিই দরকার ছিল। যতোদূর বুঝা যাচ্ছে, টাকাপয়সার ঘাটতি তাদের ছিল না, কেন যে একটা বিকল্প প্ল্যান রাখলো না- সেটাই আশ্চর্যের!
৪। শেয়ার মার্কেটে ঘুরে দাড়ানোর জন্য কোম্পানির উচিৎ হবে ভদ্রলোককে ছাটাইয়ের ঘোষণা দেয়া।
৫। আমার এমবিএ করা নাই- সাধারণ সেন্স থেকে কথাগুলো বললাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
একটা অদৃশ্য শব্দ মাথায় এল - নোকিয়া!!
আপনার লেখাটা গাটসি হয়েছে কারণ আপনি নির্বিচারে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেছেন। বাংলা তর্জমাকরণের ভয়ে আমার অনেক লেখার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কিছু কিছু ইংরেজী শব্দের যুতসই বাংলা পাইনি। যেমন: গাটসি।
কিছু কিছু শব্দের বাংলা ঐ মুর্হুতে মনে পড়েনি। যেমন: বিজনেস। এটার বাংলা সম্ভবতঃ ব্যবসায় প্রশাসন।
গাটসি=বেপরোয়া?
* প্যারালাল প্রসেসিং এখন সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো একটা রিসার্চ এই জোর না দিয়ে এরকম পরিস্থিতিতে অবশ্যই একটা অল্টারনেটিভ রিসার্চ প্রজেক্ট চালানো দরকার ছিলো।
* যদি অন্য কোম্পানিগুলোর অনুসরণ করা প্রযুক্তি মেনে না নিয়ে অন্য কিছু নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিলো তাহলে একটা স্পেশালিস্ট টিম দরকার ছিলো যারা ইঞ্জিন এর এরকম কোনো নতুন ডিজাইন বা সিস্টেম উদ্ভাবন করার ক্ষেত্রে কাজ এগিয়ে নিত।
* ক্রেডিট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও যখন কোনো সিদ্ধান্তে আসা গেলো না তখন সামগ্রিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য SCR টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পারতো। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে আরএন্ডডি এর টিম ওয়ার্ক চালিয়ে যেতে পারতো।
* যতদুর জানি এসব কোম্পানির সিইও এবং অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উচ্চ হারে বেতন ও সুবিধা পান। কিন্তু ডাউনসাইজে লোয়ার লেবেল এমপ্লয়ীদের বাঁশ দিলেও নিজেদের কোনো ঘাটতি তারা করেন না। এরকম না করে হায়ার লেভেল অফিসারদের বেতন এবং সিইওদের বেতন কমিয়ে ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে লোয়ার লেভেল এমপ্লয়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করা যেতো।
*অন্য কোনো ছোট কিন্তু সফল কোম্পানির সাথে একটা মার্জার হয়তো করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বার্থরক্ষা হতে পারে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
খুব ভালো লাগলো পোস্টের শেষে পাঠকের জন্য চিন্তার খোরাক দেয়া মন্তব্যগুলিও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি । আমি হলে শুধুমাত্র ১টা নীতির উপরে এতবড় কোম্পানীর ভাগ্য নির্ধারনের সুযোগ রাখতামনা । পরীক্ষিত নীতি গ্রহনের পাশাপাশি গবেষণার কাজটি চালাতাম । আমার পরিচিত সবচে কর্মঠ মানুষগুলোকে দেখেছি সবসময় একটা প্ল্যান বি রাখতে । কখনো কখনো প্ল্যান সি
এক - "আপনার লেখাটা গাটসি হয়েছে কারণ আপনি নির্বিচারে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেছেন।" (উপরের মন্তব্যের কপি পেস্ট, ইচ্ছে করেই )
দুই - Hindsight is always 20/20. তাই সব কিছু পরে বলে দেয়া সহজ সিইও ভুল করেছে কি না। কিন্তু বাজিতে জিতলে আজকে সবাই তাকে মাথায় নিয়েই নাচতো - এরকম অনেক অনেক উদাহরণ আছে আশেপাশেই।
তিন -
অথচ দেখবেন যে যে সব নেতা দীর্ঘমেয়াদে ভালো করেছেন (ভালো মানে গড়পরতা ভালো না, অন্যদের চেয়ে ভাবনায় বা অর্জনে কয়েকধাপ এগিয়েছেন) তারা প্রায় সবাই নিজের স্বতপ্রবৃত্তি (গাট-ফিল এর বাংলা?) দিয়েই বড় বড় অর্জন করেছেন। স্টিভ জবস একদম নিজের সিদ্ধান্তে আইওএস-এ ফ্ল্যাশ সাপোর্ট না রেখে শেষমেশ ফ্ল্যাশ প্ল্যাটফর্মেরই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। ভাবুন তো সেটা না হলে আজকে সবাই কি বলতো? এমবিএ ক্লাসগুলোতে যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা শেখালেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু অসাধারণ কিছু করার জন্য নিয়ম ভাঙ্গার বা out-of-the-box চিন্তা ভাবনাকেই উৎসাহ দেয়।
চার -
এই পয়েণ্টটিকেই আমার কাছে সিইও-র সবচেয়ে বড় ভুল মনে হয়। বিকল্প পরিকল্পনা না রাখার মত বোকামি আজকাল কোন কর্পোরেট নেতা করে না।
এক লোকের মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম সিইও ১৮ মিলিয়ন ডলারে তার ভাগের শেয়ার বিক্রি করেছে গত বছর। তখন শেয়ার প্রতি দাম ছিলো প্রায় সত্তর টাকা। এখনও কি তাকে সৎ মনে হচ্ছে?
আমি কিন্তু "সৎ" দাবি করি নি তাকে। এটাই বলতে চাইছি যে সিইওরা এমনই, এবং কর্পোরেট আমেরিকা এমন ব্যবহারকেই উৎসাহিত করে। তাছাড়া, সিইও আর সৎ শব্দগুলো কি এক বাক্যে কখনও ব্যবহার করা যায়!
শেয়ার বিক্রির যে খবরটা শুনছেন, সেটি সত্যি সে করে থাকলে কিন্তু সেটা বেআইনী, এবং এসইসি কখনোই তাকে এ ব্যাপারে ছেড়ে দেবে না। ইনসাইডার ট্রেইডিং-এর জন্য এর মধ্যেই অনেক সিইও গত ক'বছরে জেল খেটেছেন বা খাটছেন।
এসসিআরে ইউরিয়ার বদলে সরাসরি অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? শোধন বিক্রিয়ার জন্যে যে কার্বন ডায়োক্সাইড দরকার (আদৌ কি দরকার?) সেটা তো এগজস্ট গ্যাসেই আছে। ইউরিয়া ব্যবহার করলে এগজস্ট গ্যাসের শোধন স্টেজের পর অতিরিক্ত কার্বন ডায়োক্সাইড থাকবে, নক্স আর পারটিকুলেট কমলেও কার্বন ফুটপ্রিন্ট বেড়ে যাবে। অ্যামোনিয়া হাই প্রেশারে ট্যাঙ্কে রেখে প্রেশার রিডিউসার বসিয়ে ব্যবহার করা যাবে না? শুধু অ্যামোনিয়া ব্যবহার করলে পেলোড রিডাকশনও কমবে (ইউরিয়ার মোলার ম্যাস ৬০ গ্রাম পার মোল, অ্যামোনিয়ার ১৭ গ্রাম পার মোল)।
এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা নেই। তবে ইউরিয়ার দামের কারণে হতে পারে। যদিও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পেলাম না তারপরও নীচের দুটো লিংকে ইউরিয়া প্রতি মেট্রিক টনে ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার এবং অ্যামোনিয়া ৪৭৫ থেকে ৫০০ ডলার।
http://energy.a-invest.com.ua/en/fertilizer/dynamics_of_price_on_urea_and_ammonia.html
http://www.icispricing.com/il_shared/Samples/SubPage149.asp
অ্যামোনিয়া সরাসরি ব্যবহার করলে হয়ত ইঞ্জিনের ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ার বেশি হবে। অ্যামোনিয়া বেশ কোরোসিভ জিনিস। আমার ধারনা, নিশ্চিত নই এটাই কারন কিনা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
না বস, অ্যামোনিয়া তো এনজিনের ভেতরে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এগজস্ট স্টেজের পর একটা ওয়াশ স্টেজে ব্যবহৃত হবে এটা। এনজিনের ভেতরে এটা ঢোকারও সুযোগ থাকবে না, কারণ এগজস্ট প্রেশার অনেক বেশি থাকে। আর অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি এনজিনের এগজস্টের সাথে টিউন করে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকবে নিশ্চয়ই (ইউরিয়ার ক্ষেত্রেও)।
আমার ধারণা অ্যামোনিয়া ব্যবহারে কিছু রেস্ট্রিকশন আছে। যতদূর মনে পড়ে কিছু অবৈধ নেশাদ্রব্য তৈরিতে অ্যামোনিয়া কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
সেই অ্যামোনিয়া তো ইউরিয়া থেকেও পাওয়া যাবে।
এই রকম কিছু পদ্ধতি আছে দেখলাম।
http://en.wikipedia.org/wiki/Selective_non-catalytic_reduction
সার্ভিস
http://www.omnitekcorp.com/scr.htm
পেপারও আছে কিছু
http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0021951785710251
উত্তরটা এখানে পাবেন।
Reductants অংশটা পড়লে দেখবেন। মূলতঃ সংরক্ষন আর পরিবহনের সুবিধার জন্যই ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উল্টাটা করা গেলে ভালো হতো কিন্তু। এগজস্টের কার্বন ডায়োক্সাইড অ্যামোনিয়া দিয়ে শুষে ইউরিয়া বানিয়ে ফেলা হবে। প্রত্যেক বাস ট্রাকই এক একটা চলন্ত সার কারখানা।
সেই ইউরিয়া রাখবো কোথায়? কঠিন (ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শের কারণে) ইউরিয়া নড়াচড়া করব কীভাবে?
কেন? বাসস্ট্যান্ডের পাশেই ইউরিয়ার হাট।
অ্যামোনিয়া পরিবহনে ঝুঁকি আছে, বিশেষ করে হাই প্রেসারে। অ্যামোনিয়া পরিবহন করতে গেলে আলাদা অনুমতি নিতে হতে পারে। অ্যামোনিয়া লিক করলে সেটা মারাত্মক।
এসসিআর অনেকটা হাইড্রোজেন টেকনোলজির মতো, একটা বড় সরবরাহ অবকাঠামো দাবি করে। গ্যাস স্টেশনগুলোকে এখন ইউরিয়া স্টোরেজের ব্যবস্থা করতে হবে। হাফ টন পেলোড কমে গেলে বছরে ট্রিপ হিসাব করলে বিরাট অঙ্কের একটা লসের টাকা পণ্যের দামের গায়ে যোগ হবে। আমার মনে হয় এসসিআর একবার চালু হয়ে গেলে কিছুদিন পর লোকে কমপ্লেইন করা শুরু করবে। বাংলাদেশে যেমন ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা নিয়ে হাউকাউ হয়েছিলো। ইপিএকে চাবিস্কুট খাইয়ে আরো কয়েক বছর সময় চেয়ে নেয়া দরকার ছিলো। উস্টিয়ান এই ইস্যুতে অন্তত আরো দুই তিনটা কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে ইনজুরি টাইমে খেলতে পারলে হয়তো গোল হতো।
মাস্টার্সে এ নিয়ে কিঞ্চিত কাজ করেছিলাম। ইজিআর ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য নক্স নির্গমন কমানো। পার্টিকুলেট নির্গমন কমাটা অনেকটা বাই-প্রোডাক্ট।
মূল সমস্যা হচ্ছে, ইজিআর ব্যবহার করলে পার্টিকুলেট নির্গমন কমে ঠিকই, কিন্তু অন্য দিকে সেই প্রভাবটা পড়ে ইঞ্জিনের পারফর্মেন্সে (সোজা বাংলায় ইঞ্জিনকে ধোয়া খাওয়ালে সে শ্বাসকষ্টে ভোগা শুরু করে)। তো এই দুইয়ের মধ্যে একটা সাম্য আনাটাই মূল কাজ। সেই কাজটা আবার সহজ নয়।
ডিজেল ইঞ্জিনে দহন প্রক্রিয়া অনেক অদক্ষ। এই কারনে, সেখানে পার্টিকুলেট আর নক্স নিয়ে ঝামেলা গুলিও বেশি। এতো বেশি ঝামেলার কারনেই বর্তমানে এগুলি নিয়ে গবেষণা যা হচ্ছে, সবই স্টপ-গ্যাপ। মূল চিন্তাটা আস্তে আস্তে অন্য ধরনের কোন ইঞ্জিনে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে সরিয়ে নেয়া
আমার অল্পশিক্ষিত ধারণা, খুব বেশি ফুয়েল এফিশিয়েন্ট এনজিন ডেভেলপ করার বিরুদ্ধে তেল ইন্ডাস্ট্রির সক্রিয় নজরদারি আছে। আর তাছাড়া এনজিনের মূল ব্যবসা পার্টস আর আনুষঙ্গিক অ্যাডিটিভে। ফুয়েল এফিশিয়েন্সি বাড়লে থার্মাল/মেকানিক্যাল দুই রকমের স্ট্রেসই কমবে, এনজিনের ক্ষয়-লয় কম হবে, আসল ব্যবসায় টান পড়বে। এ কারণে এগজস্টের গোড়ায় হাত না দিয়ে আগায় চিরুনি দেয়া হচ্ছে। অনেকটা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণের কেস।
তবে কেউ যদি শেয়ার কেনার কথা ভেবে থাকেন তাহলে এটা একটা ভালো সুযোগ হতে পারে। ২০ ডলারে কিনে রাখেন দুই বছর পর ৭০ ডলারে বিক্রী। এক হাজার শেয়ারে ৫০ হাজার ডলার লাভ। এই কারনে এই কোম্পানী "পয়জন পিল" নামের একটা ব্যবস্থা নিয়েছে। কেই এখন ১৫% এর বেশী শেয়ার কিনতে পারবে না।
যারা ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের কথা বলেছেন তাদের ধন্যবাদ। অনেকগুলো শব্দ বদলে দিয়েছি।
উপরের মন্তব্যের সঙ্গে সহমত, কোম্পানি যখন ধ্বসতে আরম্ভ করে তখনও কোম্পানির হর্তাকর্তারা ঠিকই বোনাস নিতে থাকে, আমেরিকার রিসেশনের পরে এটা বারবারই দেখা গেছে। ওই সিইও'র কান ধরে তার থেকে ওই টাকাগুলো আদায় করা উচিত ছিল।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে ইজিয়ার নিয়ে এই গ্যাম্বলিংটা অন্য ট্রাক কোম্পানিগুলো কেন করে নাই? সবারই গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ থাকে, যে কোনো নতুন টেকনোলজি শুরুতেই বড় আকারে ব্যবহারের আইডিয়াটা গোয়ার্তুমি।
এখন আর কি করা, ইয়াহুর মত ভলভো কিংবা ম্যাক থেকে দক্ষ লোক এনে সিইও হিসেবে বসিয়ে দেখতে পারে ন্যাভিস্টার।
খুবই ইন্টারেস্টিং!
লেখা এবং মন্তব্যগুলো। আমি কিছু বলবো ভেবেছিলাম, দেখলাম সব মন্তব্যেই চলে এসেছে!
"আপ্নের প্রশ্নে আসি। আমি এই মুহুর্তে ন্যাভিস্টার পেলে কম্পিটিশন ফার্মের ইঞ্জিনিয়ার যারা SCR টেকনোলজির উপর কাজ করেছে গত কয় বছর তাদের দুই একজনকে ২৫% - ৫০% বেশি বেতনে ভাগিয়ে আনতাম। ঐ টেকনোলজির উপর পড়াশুনা করা নতুন গ্রাজুয়েট নিতাম স্বাভাবিক স্যালারিতে, তাদের যুক্ত করতাম আমার বর্তমান টীমের সাথে আর SCR টেকনোলজি লঞ্চ করে দিতাম। শর্ট টার্ম।"
"বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে গেলে আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু গ্রোথ রেট ভালো এমন একটা প্রতিযোগীর সাথে মার্জারের চিন্তাভাবনা করতাম। এরকম মার্জার বেশ কাজে আসে। এতে করে ছোট প্রতিষ্ঠানের কারিগরী উন্নতি এবং আমার প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস এবং বিশাল বাজার, এই দুটোর সন্মিলন ঘটানো সম্ভব হতো।"
আমার উপরোক্ত দুটি প্রস্তাব দারুণ লেগেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি ভালো অবস্থায় নেই। প্রতিষ্ঠানের সবার মোটিভেশন লেভেলকে উপরমুখী করবার জন্যেও এদুটি পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে স্বল্পবুদ্ধিতে বোধ হচ্ছে।
এই প্রতিষ্ঠানে industrial manner-এ সমস্যা স্পষ্ট, যৌক্তিক কথা বলতেও সমস্যা বোধ করে কর্মকর্তারা। দীর্ঘমেয়াদে এটা থেকে বেরিয়ে আসবার জন্যে TQM এর মতো ব্যবস্থাপনা দর্শন বাস্তবায়ন শুরু করবার ক্ষেত্রে এটি মোক্ষম সময় হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে।
আদর্শ নেতৃত্বের গুণাবলীগুলো দারুণভাবে ফুটে উঠেছে লেখা ও মন্তব্যে। তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে নিয়ম ভাঙ্গার বা out-of-the-box চিন্তা ভাবনা একজন নেতার থেকে আসতে পারে এটাই কাম্য। এটার ফলাফল বোধ করি খারাপও হয়না যদি তার মনুষ্যত্ব থাকে, যৌক্তিক চিন্তাভাবনা থাকে।
চমৎকার একটা লেখার জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সৌরভ কবীর
ঘটনা কি আসলে ইঞ্জিনে নাকি ওদের বানিজ্যনকশায়।
২০০১ সালে ট্রাক্টর কোম্পানি থেকে টেরাক কোম্পানি হিসাবে যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালেই কিন্তু ন্যাভিস্ট্যারের নাভিশ্বাস ওঠে। এন ওয়াই এস ই আর এস এন্ড পি ৫০০ থেকেও এদের কানে ধরে বের করে দেয়া হয়। সেসময়ে ডেলয়ট-উস্টাইন আর তাদের সিএফও এর মধ্যকার কিছু লেনদেনের কথা মিডিয়ায় আসে। উস্টাইন নিজের শেয়ার অপশান ফেরতও দেয়। এর বদলে তারা ইরাকি ও আফগানি সরকারের কাছে বেশকিছু ট্রাক্টর থুক্কু টেরাক বিক্রি করে।
তেনারা ট্রাক্টর আর স্কুলবাসের কারিগরিতে বানানো আদ্দিকালের 'টেরাক' পাবলিককে গছানোর চেষ্টা করেছিল। এই জমানায় ন্যাভিস্টারের সামগ্রীর মান ও নকশা নিয়ে বাজারে টিকে ছিল আমেরিকার প্রশাসন আর সেনাবাহিনীতে বড় খামারিদের দাপটে। এর সাথে যোগ হয় ডটকম আর প্রাক রিসেশন বাইক্কা পয়সার বন্যা।
উস্টিয়ানের কৃতিত্ব হল এত্তবড় ফুটা ওয়ালা একতা নৌকাকে সে এতদিন ভাসমান রাখতে পেরেছে।
মি. সিইও তাঁর পূর্বতন অবস্থান নিয়ে কী বলছেন জানতে আগ্রহ হচ্ছে । ভিন্ন স্রোতে রোমান্স আর ঝুঁকি নেয়ার জন্য না নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নে নিজেদের অগ্রপথিক দেখার জন্য না তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবেই তাই একটা পথ বেছে নেয়া আর কী? কোন টা তাঁর অবস্থান ছিল? না সবগুলো পথই খোলা রেখেছিলেন সময়মত ঝেড়ে দেবেন বলে । তবে তিনি একা নন, পুরো টপ লেভেল ম্যানেজমেন্ট এর জন্য দায়ী । একা কোন একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দশটা বছর খুঁটে গেড়ে বসে থাকা সম্ভব না । আর প্রতিষ্ঠান যখন এত বড় ।
*কোন বিকল্প পরিকল্পনা না রাখা এই পর্যায়ে অবিশ্বাস্য
*এত বড় প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ দল ছিল কিনা আর তাদের দক্ষতা কতটুকু ছিল তা বিবেচ্য
*একটি শিশু পদ্ধতিকে(ইজিআর)কে ডেভেলপ করতে ন্যাভিস্টার কী একাই কাজ করতো না আরও কোন গবেষণা সংস্থা এর জন্য কাজ করছিল, এর জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান ন্যাভিস্টার কতটুক ছিল, আউটসোর্সিং করা যেত কিনা গেলে এর প্রতি সিদ্ধান্ত গ্রহীতাগণের সিদ্ধান্ত কী ছিল
*প্রায়োগিক বিভাগ ভুল পথে এসেছে বলে সতর্ক করার পরও গোঁয়ার ধারণা নিয়ে বসে থাকা এবং নিজ সিদ্ধান্তে অটল-অবিচল থাকায় নিজের স্বার্থ কোথায় যেখানে তাঁর উপর নির্ভর করছে অধস্তন ২১০০০ কর্মী
*প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোন খানেই-কোনভাবেই ইগনোর করা যায় না, যে করে সে কী
*কর্মীদের বিকল্প চাকরীর সন্ধান রাখা তো ফরজ এসব ক্ষেত্রে
*কোন এক জায়গায় পড়েছিলাম, কোকাকোলা কখনো ডুববে না কারণ এটা কোকাকোলা । দেউলিয়া হলেও ব্যাংকগুলো মুখিয়ে থাকবে ঋণ দেয়ার জন্য, এর পেছনে সুনাম । কিন্তু এই আকালে এটা আসলেই কতটা বাস্তবিক ধারণা বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন । ন্যাভিস্টার একেই আঁকরে ধরতে পারে(যদি থাকে) ।
দারুণ পোস্ট...
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেনেছি যে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে SEC (সিকিউরিটি এবং এক্সচেইঞ্জ কমিশন) এর একটা চিঠি পেয়েছে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অভ্যন্তরীণ ফাইল পত্র দেখবে। কোনো ফাউল প্লে করলে পরে ঘ্যাচাং।
ব্ল্যাকবেরি নির্মাতা রিম (RIM) এর এই স্টোরীটি দেখুন। কিংবা নোকিয়ার মাইক্রোসফটের সাথে জুড়ে দেবার এই রেস্কিউ প্ল্যানটি দেখুন। কিংবা হিউলে প্যাকার্ডের মৃত টাচ প্যাডের ঘটনাটি লক্ষ্য করুন।
কোনো প্যার্টান দেখতে পান?
অন্যদের থেকে আলাদা হবার চেষ্টাটা অবশ্যই ভালো। উপরন্তু অনেক সময় ক্যালকুলেটিভ সিদ্ধান্ত নিলে অনেক ইনোভেশন এর আর জন্ম হতো না।
কিন্তু এদের কারো প্ল্যান বি আছে কি? আমার তো মনে হয় নেই। আর এখানটাতেই জয় পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
উস্টিয়ান সাহেব কেটে পড়ছেন
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন