খালিদ হোসাইনির দ্যা কাইট রানার

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: শুক্র, ১৬/১১/২০১২ - ১২:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বইটা নাকি বেস্ট সেলার। তা এখনকার প্রায় সব বইই নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট লিস্টে থাকে মনে হয়। লাইব্রেরীর পুরোনো বইয়ের তাকে লেখকের নাম দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। মোবাইলে অ্যামাজনের অ্যাপপ দিয়ে রেটিং দেখে চমকে গেলাম। তিন হাজার লোকে এটাকে গড়ে সাড়ে চারের মতো রেটিং দিয়েছে। দ্বিধা না করে হোসাইনির দ্যা কাইট রানার আর আ থাউজ‌্যান্ড স্পেলন্ডিড সানস কিনে ফেললাম।

তারপর অনেক দিন ফেলে রেখে সেদিন পড়া শুরু করলাম। বই পড়তে পড়তে বোরিং লাগলে আমি বইটা নামিয়ে রেখে আরেকটা শুরু করি। পরে ফিরে এসে আবার বোরিং বইটা পড়ি। রিচার্ড ডকিন্সের দ্যা অ্যন্সেসটরস টেইল পড়তে পড়তে ধরলাম গেট আ ফিনানসিয়াল লাইফ। তারপর খালিদ হোসাইনির দ্যা কাইট রানার

প্রথম প্রথম বোরিং লাগছিল। কিছু বিচ্ছিন্ন সুত্র, ছোটবেলার কিছু গোল গোল স্মৃতি। প্রায় ধরেই নিয়েছিলাম কি ঘটবে। বোর হয়ে বইটা উল্টে রেখে দিবার আগেই প্রথম চমক - গল্পের নায়ক আমিরের বন্ধু বা ঘরের কাজের ছেলে রেইপ হলো। তারপর রাশানরা আক্রমণ করলো তাদের। আমার চোখের সামনে ছিমছাম আফগানিস্থান ভেঙ্গে ছারখার হতে থাকলো। আর আমি চোখ কচলে বুঁদ হয়ে গেলাম বইটায়।

উপন্যাস পড়তে পড়তে আমি প্রেডিকশন গেইম খেলি। আচ্ছা তাহলে এটা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবার প্রেডিকশন ফাঁকি দিয়ে চমক দিতে থাকেন লেখক। আমিও গোগ্রাসে গিলতে থাকি নিদারুন কষ্টের হৃদয় ছোঁয়া বর্ণনা। আর হিন্দী ছবি দেখে কাঁদতে থাকা দর্শকদের মতো আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে।

সবমিলিয়ে বইটা বেশ উপভোগ্য। আফগানি শব্দের অতিপ্রয়োগ বিরক্তির জন্ম দিতে পারে মনে হয়েছে। তাছাড়া কিছু ফ্রেইজ অতি ব্যবহারে ক্লিশে মনে হতে পারে। মূল গল্পের পাশাপাশি একজন সাধারণ আফগানের দৃষ্টিতে রাশান ইনভেশন এবং তালেবানদের আক্রমণটা চোখ খুলে দিয়েছে আমার। এক পর্যায়ে গল্পের ভিলেনের ফিরে আশা এবং একজন চরিত্রের আত্মহত্যা করার চেষ্টা অতিরিক্ত ড্রামাটিক মনে হয়েছে।

যত খুঁতই বের করি না কেনো এক কথায় খুব উপভোগ্য বইটি পড়ে দেখতে পারেন। অথবা একই নামের একটি ছবি তৈরী হয়েছে, নেটফ্লিক্সে যার রেটিং পাঁচের কাছাকাছি, সেটা চেষ্টা করতে পারেন। বই আর ছবি কোনোটাই শিশুদের উপযোগী নয়।


মন্তব্য

জি.এম.তানিম এর ছবি

পাঠাভ্যাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার। এক বন্ধুর কথা শুনে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। লেখক বিষাদের বর্ণনায় পারঙ্গম। পুরো বইটা জুড়েই মন বিষাদে ভরে ছিলো। শেষের ড্রামার আধিক্যের সাথে একমত। পেছনের ঘটনার সাথে সমান্তরালে বর্তমানের ঘটনাগুলোর বর্ণনা ভালো লেগেছে অনেক। দারুণ উপভোগ্য!

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতিথি লেখক এর ছবি

উপন্যাস পড়তে পড়তে আমি প্রেডিকশন গেইম খেলি। আচ্ছা তাহলে এটা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবার প্রেডিকশন ফাঁকি দিয়ে চমক দিতে থাকেন লেখক। আমিও গোগ্রাসে গিলতে থাকি নিদারুন কষ্টের হৃদয় ছোঁয়া বর্ণনা। আর হিন্দী ছবি দেখে কাঁদতে থাকা দর্শকদের মতো আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে।

#ভাল লেখকের একটি লেখা এবং ভাল মনযোগী পাঠকের কম্বিনেশন হলে যা হয় তাই বোধহয় ঘটেছে আপনার বেলায়, অল্পটুকুতে খুব দারুনভাবে তুলে ধরেছেন আপনার লেখা, একদম বলা যায় ক্রৌঞ্চমিথুনের কথোপকথন হাসি

#ভাল থাকুন হাসি

আশরাফুল কবীর

অতিথি লেখক এর ছবি

কিনমু কিনা বুঝতাছিলাম না! ট্যাকাডা পানিতে পড়বো না তো! আপনার রিভিউ কনফিউশান বাড়াইয়া দিলো। বলেন দেখি, এমন কিছু কি আছে ওইহানে, যে পড়তেই হইবো? থাকলে কিনমু।
(স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এমন কিছু নাই যার জন্য নতুন বইটা কিনতে হবে। সস্তায় পুরোনো বই পেলে নিতে পারেন। আমি ১ ডলার দিয়ে কিনেছিলাম, লাইব্রেরীর ব্যবহৃত বই বিক্রির সময়।

শিশিরকণা এর ছবি

খুব প্রিয় বলবো না, কিন্তু পছন্দের একটা বই। বইটা যে নাড়া দিয়ে যায়, সেটা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না। সিনেমাটা সেদিন দেখলাম। বই-ই সব সময় বেশি উপভোগ্য সে আগে পড়েন বা পরে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সুমাদ্রী এর ছবি

ছবিটা দেখেছি। মন্দ লাগেনি তেমন। ছবি দেখে ফেললে বই আর পড়তে ইচ্ছে হয় না।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ইসলামাবাদের একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের দোকান থেকে টাইম ট্রাভেলারস ওয়াইফ আর এ্টা, এই বইদুটো কিনেছিলাম। আসলেই অসাধারণ একটা বই। ছবিটা অবশ্য দেখে উঠতে পারিনি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সাবেকা  এর ছবি

নাম জানি কিন্তু বই ছবি কোন্টাই পড়া বা দেখা হয় নি, আপনার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে পড়তে হবে ছবিটাও দেখে ফেলব ভাবছি ।

আরেকটা বই গত বছর পড়ে আমার বেশ ভাল লেগেছিল, বইটি নিয়ে মিরা নায়ার ছবিও বানাচ্ছেন বলে জানি। মহসিন হামিদের লেখা বই The Reluctant Fundamentalists

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চমৎকার একটা বই। তবে অনেক অংশকে বাড়তি মেদ মনে হয়েছিল। হতে পারে, বই পড়তে পড়তে ম্যুভিটা দেখে ফেলেছিলাম পাশাপাশি। এজন্য এমন অনুভূতি।।।।

তারেক অণু এর ছবি

সিনেমাটা দেখেছিলাম, বইয়ের অনেক কিছুই বাদ গেছে বলে শুনেছি।

আ থাউজ‌্যান্ড স্পেলন্ডিড সানস পড়ে ভাল লেগেছে, অনেক ডিটেইল, কিন্তু মাস্টারপিস মনে হয় নি, হয়ত শুনে লেখা কাহিনী বলেই, অথবা উনার ভাষাটা আরও ঘষামাজা করা দরকার মনে হয়েছিল। আশা করি লেখক আরও কাহিনী শোনাবেন আফগানিস্তানের

অতিথি লেখক এর ছবি

বই পড়া হয়নি তবে মুভিটা দেখেছি। বেশ ভালো লেগেছে।

অমি_বন্যা

নীলম এর ছবি

ভাষাটা খুব একটা আকর্ষণীয় না। তবে আমারও বইটা শুরুতে অল্প কিছুক্ষণ বোরিং লাগলেও তারপরে খুব ভালো লেগেছে। হাসি

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক

বইটা ঘরেই ছিল। কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর ব্যাস্ত হয়ে গেলে পরে ভুলে গেসিলাম। সে প্রায় দুবছর আগের কথা। তখন আমার ঘরে ছিলনা কেরসিন, সে এক বিরাআআট ইতিহাস। দেখি আবার যোগাড় করতে হবে।

Abu Sufian Shakil এর ছবি

বই পড়িনি। মুভিটা দেখেছি।খুবি ভালো লেগেছে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

মুভিটা আমার বেশ ভাল লেগেছিল। বইটা পড়া হয়নি।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আসমা খান

aaynamoti এর ছবি

আমিই একমাত্র মানুষ, যার বইটাও পড়া নেই, মুভিটাও দেখা হয়নি মন খারাপ
অল্প কথায় সুন্দর রিভিউ লিখে বই আর মুভির প্রতি আগ্রহ উস্কে দেবার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
একটা ভানাম ভুল ধরছি কিন্তু খাইছে

ভিলেনের ফিরে আশা> আসা

আয়নামতি এর ছবি

দ্যা কাইট রানার' দেখে ফেললাম ভাইয়া! বইটা পেলে পড়ার আগ্রহটা বেড়ে গেল খালিদ হোসাইনির লেকচার শুনে এবং তাকে দেখে চোখ টিপি ধন্যবাদ আপনকে।

সাবেকা  এর ছবি

আমিও দেখে ফেললাম কাল রাতে 'দ্যা কাইট রানার'খালিদ হোসাইনির লেকচার শুনেও খুব ভাল লাগল, লেকচার শুনে আমি তো এক মুহুর্ত্যও নড়াচড়া করিনি,যে আমি দশটা মিনিট এক জায়গায় বসে থাকতে পারি না হাসি

পৃথ্বী এর ছবি

আফগান ইতিহাস ও জীবনযাপন নিয়ে the bookseller of kabul পড়ছি, আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমণের সময় একটি আফগান পরিবারে বসবাস করা এক নরওয়েজিয়ান সাংবাদিকের ফার্স্ট-হ্যান্ড অভিজ্ঞতা। যেহেতু চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাকে উপন্যাসের আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে, ভাল না লাগার কোন কারণ নাই হাসি

নিলয় নন্দী এর ছবি

বইটা পড়া হয় নি।
যেহেতু আমার বাংলা উপন্যাস পড়ার গতি ইংরেজি উপন্যাসের দ্বিগুন তাই অনুবাদটা পড়ব ভাবছি।
যতদূর জানি সন্দেশ থেকে বেরিয়েছে।
ছবিটাও দেখা হয় নি। মন খারাপ

মণিকা রশিদ এর ছবি

'দি কাইট রানার' আমার খুব ভালো লেগেছে আসলে। লাইব্রেরী থেকে নিয়ে পড়ার পরে কিনেছিলাম সংগ্রহে রাখার জন্যে। যুদ্ধপূর্ব আফগানিস্তানের বর্ণনা এবং সমাজব্যবস্থা, মানুষের মূল্যোবোধের জায়গাটা লেখক খুবই বিশস্ততার সাথে দিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। বইয়ের শেষের দিকটা অতি ড্রামাটিক, একমত। কারণ, সম্ভবত বইটি লেখার সময় লেখক পোস্ট ওয়ার আফগানিস্তান কখনোই যাননি।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার এখনো পড়া হয়নি বইটি

কী কমু এর ছবি

আপনার মতই এক ডলারে থ্রিফট স্টোর থেকে কিনে পড়েছিলাম এই ঘরানার আরেকটি বই, ইয়াসমিনা খাদরার (ছদ্মনাম, আলজেরিয়ান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ক্যাপ্টেন থেকে ফ্রান্সপ্রবাসী লেখক) লেখা ' দ্য অ্যাটাক' উপন্যাসটি। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের জটিল সামাজিক সম্পর্কের ওপর গভীর আলো নিক্ষেপ করা অসাধারণ উপন্যাস। সাহিত্যের আগ্রহী পাঠকের কাছে লেখাটি পড়তে গিয়ে অবশ্যম্ভাবীভাবে আলবেয়ার কাম্যুর কথা মনে পড়বে। (আলজেরিয়ান সাহিত্যিকেরা এখনও কাম্যুর প্রভাব কাটাতে পারলেন না!)।

পড়ে দেখতে পারেন, ভাল লাগবে এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আফগান ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সৈয়দ মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে' ছাড়া আর কোন বই পড়া হয়নি। রিভিউটা পড়ে আগ্রহ বোধ করছি। দেখি, সিনেমাটা দেখার ব্যবস্থা করা যায় না কী।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।