আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষার ইচ্ছে বাংলাদেশের উঠতি বয়সী অনেক ছেলেমেয়ের থাকে। কিন্তু সঠিক দিক নির্দশনার অভাবে ঠিক সময় ঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে না অনেকে। আমার এই লেখাটি এই প্রসেসকে আরেকটু সহজ করার লক্ষ্যে তৈরী।
পুরো লেখাটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত
১। কেন আমেরিকার শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ?
২। কিভাবে বিষয় বাছাই করতে হয়?
৩। কিভাবে ইউনিভার্সিটি বাছাই করতে হয়?
৪। ইউনিভার্সিটি আপনার কাছে কি চায়?
৫। ফান্ডিং কিভাবে জোগাড় করতে হয়?
১। কেন আমেরিকার শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ?
একসময় শিক্ষা দীক্ষায় চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য ছিল মানুষের লক্ষ্য। ধীরে ধীরে সেরা শিক্ষাক্ষেত্রের মুকুটটা যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা দীক্ষায় প্রতিযোগিতা কম চলছে না। তাই কোন দেশের শিক্ষাকেই আমি ছোট করি না। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রীর দিকে অনেক ঝোক মানুষের। সবাই এখানে পড়তে আসতে চায়। কেন? কিভাবে?
কারন হিসেবে আমি যেগুলো চিহ্নিত করেছি সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে ভাল চাকুরী চট করে পেয়ে যাবার নিশ্চয়তা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বছর প্রতি ৫০-৬০ হাজার ডলারের চাকুরী পেয়ে গেলে জীবনে আর কি চাইবার থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও বেশ ভালো অবস্থা। বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল আর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ আরো ভাল বেতন। তবে তুলনা মূলক ভাবে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিযোগিতা অনেক বেশী। চাকুরীর বাজার হিসেবে পড়াশোনার অন্যান্য ক্ষেত্রও কিন্তু খুব ভালো। তবে আর্টস বা কর্মাসে পড়তে আসলে কিন্তু ইংরেজী কমিউনিকেশনটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তবে যে বিষয়েই পড়ার চিন্তা করুন না কেন, বাজার যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন চাকুরীর ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বাইরে পড়তে চাইলে আরেকটা টেনশন থাকে সেটা হলো টিউশন পে করা যাবে কিভাবে? আমেরিকায় এ ব্যাপারে সুযোগের অভাব নেই। ইউনিভার্সিটিগুলোতে টিচিং , রিসার্চ, গ্রাজুয়েট এসিসটেন্টশীপ মেলা তেমন দুষ্কর নয়। তার উপর আছে ঘন্টাচুক্তিতে চাকুরী, বাইরে বিভিন্ন দোকানে চাকুরী। আর প্রোগ্রামীং বা ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ জানা থাকলে তো 'লারে লাপপা'। টিচিং এসিসটেন্টদেরকে বিভিন্ন কোর্সের খাতা দেখা, ছাত্রদের সাহায্য করার কাজ করতে হয়। রিসার্চ এসিসটেন্টদেরকে কোন প্রফেসরের আওতায় কোন গবেষনা কাজে সাহায্য করতে হয়। এই দুইধরনের কাজে ইউনিভার্সিটি থেকে টিউশন পুরোটা দিয়ে দেয়, আর থাকা খাওয়ার জন্য মাসে বারশ থেকে পনেরশ ডলার বেতন। তবে বিভিন্ন দোকানে চাকুরীটা সত্যিই খুব কষ্টকর এবং আমাদের বাঙ্গালী মানসিকতার উপর বড় ধকল।
আরেকটা ব্যাপার হলো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়তে আসলে কিন্তু এইসব চাকুরী মেলা প্রায় অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে বেশীরভাগকে বাইরে ঘন্টা চুক্তির কাজ করতে হয়। কিন্তু মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসলে এসব ফান্ডিং পাওয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। তাই যত বড় ডিগ্রীতে এনরোল করবেন তত সুযোগ বেশী।এরপরে আসে শিক্ষাদীক্ষা। আমেরিকার শিক্ষা পদ্ধতি সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত। তাই এখান থেকে একটা ডিগ্রী বাগাতে পারলে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় সেটার স্বীকৃতি থাকবে বলাই বাহুল্য। গবেষনা, বা সাধারন পড়াশোনা এত বাস্তব কাজের সাথে সম্পৃক্ত যে চাকুরীর ক্ষেত্রে কোন অসুবিধাই হয়না। যে সমস্ত বিষয়ের বাস্তব এপ্লিকেশন নেই সেসব জিনিস এরা সিলেবাস থেকে কবেই বের করে দিয়েছে! এব্যাপারে আমার প্রফেসরের একটা কথা মনে পড়ল। তিনি বলছিলেন, 'আমরা এখানে শিক্ষা প্রদান করি না, শিক্ষা বিক্রী করি। তাই যারা শিক্ষা কিনছে তারা যেন না ঠকে সেটা আমাদের দেখতে হয়।
'তাছাড়া আরো একটা কিছু কিছু কারন আছে। তার মধ্যে একটা হল এখানকার সমাজ ব্যবস্থা। অরূপ সেদিন যেমনটা বলল, মানুষের ব্যবহার এখানে এত ভাল! সকাল বেলা দেখা হলে চেনে না জানে না এমন লোকও কি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলে গুড মনিং। বিদায়ের সময় কি সুন্দর করে বলে হ্যাভ অ্যা নাইস ডে। এই সমস্ত সোশ্যাল এলিমেন্ট সত্যিই অতুলনীয়।
তাছাড়া জীবন যাপনে, ভাল এবং সেরা চিকিৎসার নিশ্চয়তা, খাবার দাবার শতকরা ভাগ ভাল হবার নিশ্চয়তা, পৃথিবীর সেরা যে কোন পন্য বা সেবা পাবার নিশ্চয়তা এসব তো আছেই। আর আপনি আপনার ধর্ম কর্ম নিয়ে আপনার মতো করে বাঁচুন আপনাকে কেউ ঘাঁটাবে না, বরং আপনাকে সাহায্যই করবে। আগে আমেরিকান সমাজকে মিশ্র সমাজ ব্যবস্থা বলা হত। কিন্তু সব জাতির লোক এখানে তাদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে থাকতে পারে বলে এখন এটাকে 'সালাদ সোসাইটি' বলা হয়।
এই সমস্ত বিষয় ইউরোপের বা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয় বলে আমেরিকা সত্যিই উচ্চতর শিক্ষার জন্য একটি ভাল পছন্দ।
প্রসঙ্গতঃ কিছু মন্তব্য তুলে দিলাম।
২০০৬-১০-২৩ ০৯:১৮:৪৭মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিএইচডি পর্যায়ের পড়াশোনা অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশ অন্যরকম। যেমন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, (সম্ভবতঃ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যত্রও) - এসব দেশের পিএইচডি পর্যায়ের পড়াশোনাতে কোনো কোর্স রিকয়ারমেন্ট নাই। কিন্তু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিশাল সংখ্যক কোর্স নিতে হয়। যেমন, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা শ্যাম্পেইন, যেখানে আমি পিএইচডি করছি, সেখানে আমার মোট ৪৮ক্রেডিট কোর্স নিতে হবে, যার মধ্যে অন্ততঃ ২৪ ক্রেডিট হতে হবে ডিপার্টমেন্টের অ্যাডভান্সড কোর্সওয়ার্ক।
এটার একটা বিশাল সুফল আছে। যেসব দেশে পিএইচডি পুরাপুরি গবেষণানির্ভর, সেখানে হয়তো ৩ বছরে পিএইচডি করা সম্ভব, কিন্তু জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো, এবং নানা বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করাটা সম্ভব হয়না। আমি জাপান হতে পিএইচডি করে আসা অনেককে শুধু নিজের বিষয়ে জ্ঞানী, অন্য সব বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ - এরকম দেখেছি (ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, কিন্তু আমার দেখা অধিকাংশ জাপানি পিএইচডির এই দশা)।
যাই হোক, সুমন যা লিখেছে, তা ঠিক, অর্থাৎ পিএইচডি পর্যায়ের পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলনা হয় না। গবেষণা করার জন্য টাকা পয়সা দিতে এরা হা করে বসে আছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বছর ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ছাত্র খুঁজে বেড়ানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রফেসররা হা পিত্যেস করতে থাকে, সেমিস্টারের মাঝখানে আরএ পাওয়ার জন্য। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফী তো দিতে হয় না, সেটা এক বিশাল সুবিধা। (কানাডাতে সম্ভবতঃ স্কলারশীপ যা দেয়, তা থেকে টিউশন ফীটা কেটে রাখে)।
২০০৬-১০-২৩ ১২:০৬:০৮শিক্ষা নয় বরং বাজার চলতি বিষয়ের দামটা ইউএসএতে বেশি এতে সন্দেহ নেই। ইন্ডাস্ট্রির সাথে সরাসরি যোগসাজশে তৈরি হয় সিলেবাস আর গবেষণার টপিক। এতে চাকুরির নিশ্চয়তা তৈরি হয় কিন্তু সমাজ-ব্যবস্থা বেনিয়াদের হাতে বন্দী হতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে বলার কেউ থাকে না।
ইউরোপে রাষ্ট্রগুলো এখনও শিক্ষা-ব্যবস্থায় এখনও অর্থ ঢালে। সেটা মানবতার জন্য। সেকারণে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি সংস্কৃত ও পালি বিষয়ে পিএইচডি গবেষণা করতে পারবেন, যা হয়তো ইউএসএ-তে করা অসম্ভব হয়ে যাবে।
আয়ুর্বেদ বা ইউনানী ওষুধ নিয়ে যদি কেউ গবেষণা করতে চায় সে কোথায় যাবে? অথবা বাংলাদেশের নৌকা নিয়ে?
ওষুধ কোম্পানিগুলো বৃত্তি দেয়। বৃত্তি দেয় সফটওয়্যার ও ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানিগুলো। জাপানে বৃত্তি দিতে এগিয়ে আসে গাড়ি প্রস্তুতকারক আর মোবাইল কোম্পানিরা। তার বিনিময়ে তারা নিজেদের সুবিধা দেখবে তাই স্বাভাবিক। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বা এরকম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পছন্দমাফিক বিষয় ও ইসু্যতে বৃত্তি দেয়। এসব কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণা কিছু মাফিয়াচক্রের হাতে বন্দী হয়ে যাচ্ছে।
আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তারা গবেষণার ইথিক্যাল বিষয়ে খুবই কঠোর। তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি অনুমোদন করে সেসব প্রতিষ্ঠানকে আগেই শর্ত দেয়া থাকে যে ফলাফলের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না, তা ফলাফল তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে যাক। অবশ্য সরকার ছাড়া খুব কম ক্ষেত্র থেকে বৃত্তি নেয় তারা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক টাইপের প্রতিষ্ঠান থেকে কখনও নয়।
ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এভাবে সচেতনভাবে অর্থ-প্রভাবের বাইরে থেকে জ্ঞানের চর্চা করছে বলে মনে হয়। এখানে যেসব বিষয়ে মানুষজন পড়ালেখা করে সেসব বিষয় সম্ভবত: ইউএসএ-তে বছর বিশেক আগে উঠে গেছে।
আরেকটা বিষয় ল্যাটিন ভাষা ও ইতিহাসে মাস্টার্স করে ব্রিটেনে এখনও লোকে ব্যাংকে চাকরি পায়। সমস্যা হয় না।
সুতরাং জ্ঞানের চর্চা করতে চাইলে ইউরোপ আসুন। ছালাদিয়া ল্যাট্রিনের উপরও গবেষণা করতে পারবেন। নিজের পছন্দের বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন। আর বড় অংকের চাকরি চাইলে ইউএসএ বা জাপান।
শুভেচ্ছা।
২০০৬-১০-২৩ ২০:৪৩:২১ঘটনা সত্য।
চাকরীর জোয়ারে ভেসে যায় লেবাননের শিশু। যুক্তরাষ্ট্রে মোটামুটি ভাবে ২৫%-৩০% ট্যাক্স বেশীর ভাগ ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরীর বেতন অনুসারে। এই ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ইরাকে সৈন্যদের খরচ, লেবাননে ফেলা ক্লাস্টার বম্বের খরচ ইত্যাদি আসে, যেগুলো নিয়ে ব্লগে মহা গ্যাঞ্জাম করেছেন অনেকে কিছুদিন আগে। তো জেনেশুনে এসব কাজে সাহায্য করাকে (অতিশয় আগ্রহ নিয়ে) আমরা কিভাবে দেখি। ব্যপারটা আমার কাছে প্যারাডক্স মনে হয়। অনেকটা ড. ইউনুস আর হারাম সুদ ব্যাবসার প্যারাডক্সের মতো। কিংবা রাশিচক্র এবং ইসলামের সম্পর্ক।
২। কিভাবে বিষয় বাছাই করতে হয়?
বিষয় বাছাই করা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে একটি সঠিক বা ভুল সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে দেখা যায় না বেশী। একেক সময় একেক বিষয়ের প্রতি ক্রেজ ওঠে আর সবাই দল বেঁধে সেই বিষয়ে পড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্ডারগ্রাজুয়েট শেষে সেই বিষয়ের কোন চাকুরী পাওয়া যাবে কিনা, ১০/১৫ বছর পর সে ধরনের চাকুরী থাকবে কিনা, বিষয়টি ছাত্রটির জন্য উপযুক্ত কিনা, ভবিষ্যতে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য উপযুক্ত কিনা এসব কিছু চিন্তা না করেই বাতাসে ভেসে বেড়ানো ক্রেজের উপর অভিভাবক এবং ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। মজার ব্যপার হচ্ছে আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম নই।
আমার লেখার ফোকাস হচ্ছে আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষা। তাই বিষয়টাকে আমি বাংলাদেশের পারস্পেকটিভে বা আন্ডারগ্রাজু্যয়েট পার্সস্পেটিভে আপাতত আলোচনা করব না। উচ্চতর শিক্ষা বলতে আমি মাস্টর্াস বা পিএইচডি বুঝাচ্ছি এখানে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শেষে কেন মানুষ উচ্চতর শিক্ষার কথা ভাবে? এক. জ্ঞান বাড়ানোর জন্য। আমার বুনো আন্দাজ হচ্ছে বড়জোড় ২-৩% ভাগ ছাত্র এই ক্যাটাগরীতে পড়বে। দুই. ভাল বেতনের, নির্ভরযোগ্য চাকুরীর জন্য। অধিকাংশ ছাত্র এই ক্যাটাগরীতে পড়বে। তিন. 'বেকার হয়ে তো বসেই আছি, মার্স্টাসটা করেই ফেলি'। একটা বড় অংশের ছাত্র এই ক্যাটাগরীতে পড়বে। আমার লেখার টার্গেট এই শেষ দুই ক্যাটাগরীর ছাত্র। তবে আমি নিজেই এখন ছাত্র, আমার পদ্ধতির বেশীরভাগই এক্সপেরিমেন্টাল। এর কতটা সত্যি সত্যি কারে কাজে লাগবে সেটা নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। তবুও আমার ধারনা গুলো কারো কাজে আসতে পারে ভেবে লিখে ফেলা।
চলতি হাওয়ার সাথে তাল মেলানো একটা ভাল পদ্ধতি হতে পারে। অর্থাৎ যে ক্রেজের নিন্দা আমি শুরুতেই করছিলাম সেটাই একটা ভাল পদ্ধতিও হতে পারে। বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের আড্ডায়, বা শিক্ষিত লোকের গল্প গুজবের সময় বিভিন্ন ফ্যাকচুয়াল ব্যাপার আলোচিত হয়। অনেকে অনেক পত্রিকা বা ব্লগ পড়ে থাকেন সেগুলো শেয়ার করেন। আর এভাবেই আস্তে আস্তে গুঞ্জন উঠতে পারে কোন একটা বিষয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে পাওয়া তথ্যকে অনেকাংশে নির্ভরযোগ্য মনে করা যেতে পারে। আমি এই পদ্ধতির কয়েকটা উদাহরন দিই।
মনে করুন আমার কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা কেউ জানতে চাইল কোন বিষয়ে মার্স্টাস বা পিএইচডি করতে আসা উচিত? 'আমেরিকাতে এখন বায়োইঞ্জিনিয়ারিং খুব ভালো চলছে' আমি এই উত্তরটা দিলাম। কিন্তু আমার এই ধারনাটা কিভাবে তৈরী হল? প্রথমত এখানে এসেই দেখলাম চোখের সামনে ঝকঝকে তকতকে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট গড়ে উঠল। বেশ কয়েকজন ইন্ডিয়ান প্রতিবেশী দেখলাম পোস্টডক করছে এই বিষয়ে এবং তারা ওয়েল পেইড। তদুপরী বিভিন্ন আড্ডায় কিছু সাকশেস স্টোরী শুনে দৃঢ় বিশ্বাস হল যে এই বিষয়ের রমরমা অবস্থা। এক ইলেক্ট্রিক্যালের ভাইয়া বললেন তার প্রফেসর ইলেক্ট্রিক্যাল-বায়ো বিষয়ক গবেষনার জন্য প্রস্তাব করেছিল কোন এক জাতীয় গবেষনা কেন্দ্রের কাছে। সেই প্রফেসর যে পরিমান ফান্ডিং আশা করেছিল তারও দ্বিগুন পয়সা পেয়েছেন।এই চলতি বিষয় কোনটা জেনে নেয়াটা একটা ভাল শুরু হিসেবে ধরা যেতে পারে। সুতরাং প্রথম পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত বন্ধু বান্ধব, মেন্টর এদের সাথে আলাপ করে জেনে নিন কোন কোন বিষয়ের পালে হাওয়া লেগেছে। কাগজে একটা তালিকা করে ফেলুন।
এরপরে যাচাই করে দেখুন ঐ বিষয়ের চাকুরীর বাজার কেমন। আমেরিকার জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যারা চাকুরীর জন্য সাহায্য করে থাকে। এরকম কয়েকটি ওয়েবসাইট হচ্ছে: মনস্টার, ক্যারিয়ার বিলডার, ইয়াহু জবস ইত্যাদি। এছাড়া গবেষনা ভিত্তিক চাকুরীর জন্য পিএইচডিস ওয়েবসাইট, বা বিষয়ের সাথে সর্ম্পকযুক্ত কোন ফোরাম আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
এসমস্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে রীতিমত সত্যিকারের চাকুরী প্রার্থী হিসেবে গবেষনা করে বের করুন, গড় পড়তা বেতন কত পেতে পারেন, বেতনের ধরন কিরকম (অর্থাৎ শুরুতে কিরকম বেতন, পরে সেটা কততে দাঁড়াবে), অন্যান্য কি কি সুবিধা দেয়, আপনার মার্স্টাস বা পিএইচডির মূল্য পাবেন কিনা (অর্থাৎ তুলনামূলক ভাবে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট যা আয় করে আর পিএইচডি করলে পরে যা আয় করে তার পার্থক্য কতটা), ভবিষ্যতে এই চাকুরী থাকবে কিনা, পদোন্নতি জনিত ব্যাপারটা কতটা ইফেক্টিভ, এইসব। অনেক সময় এই সমস্ত তথ্য সামারাইজ করে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আর্টিকেল প্রকাশ করে। গুগল করে সেগুলোও পড়ে নিতে পারেন। তাতে অনেকটা সময় বাঁচবে। তবে এই সমস্ত রির্সাচ করা থাকলে ভবিষ্যতে চাকুরীর ক্ষেত্রে কোথায় কি করতে হবে সে ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি পরিচ্ছন্ন থাকবে।
কোন একটি বিষয় পড়ার পর ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেটা আন্দাজ করা খুব শক্ত। যেমন ধরুন পাঁচ/দশ বছর আগেও মাইক্রো-ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম নামে একটা বেশ প্রমিজিং বিষয় ছিল উচ্চতর শিক্ষার জন্য। তখন অনেক রিসার্চার এই বিষয়ে সুইচ করেন। এখন হঠাৎ করে বাজার পড়ে যাওয়ায় সেই বিষয়ের ছাত্রদের অবস্থা বেশ নাজুক। তেমনি হঠাৎ করে লক্ষ্য করা গেছে যে ইন্টেলে আর লোক নিচ্ছে না। তো যারা এ বিষয়গুলোতে পড়াশোনা করছে তাদের কাছে বিষয়টা চিন্তার বইকি। এব্যাপারে সর্বোত্তম যেটা করা যেতে পারে সেটা হচ্ছে বিভিন্ন খবরা খবর, ফোরামে আলোচনা, ব্লগ এগুলো ঘেঁটে দেখা। এতে করে হয়ত একটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। উদাহরন স্বরূপ পিএইচডিস ওয়েবসাইটের আর্টিকেল গুলো পড়ে দেখতে পারেন।
এরপর আপনার পছন্দের বিষয়ের ব্যপার থাকে। সমস্ত কিছু বিবেচনা করার পর আপনার মনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন যে বিষয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থা বলে মনে হচ্ছে সেটা আপনার মনপুত: হচ্ছে কিনা। কেননা শেষ পর্যন্ত আপনাকেই ঘানি টানতে হবে। তখন যদি আপনার সন্দেহ বা দোনোমনা থেকে থাকে সেটা মোটেই সুখকর হবে না।
এই পর্যায়ে এসে পুরো প্রসেসটার একটা আউটলাইন দাঁড় করানো যাক।
১। মেন্টর বা বন্ধু, সিনিয়র কেউ - এদের সাথে আলোচনা করে চলতি বিষয়গুলোর একটা তালিকা করুন।
২। জবের অবস্থা কেমন সেটা যাচাই করুন বিভিন্ন জবওয়েবসাইট ঘেঁটে।
৩। ভবিষ্যত কিরকম হতে পারে সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করুন।
৪। সবশেষে আপনার পছন্দের সাথে মিলিয়ে বিষয়গুলোকে প্রয়োরিটি দিন। অর্থাৎ ১০০ মধ্যে প্রতিটা বিষয়ের কোনটা কত পেল সেটা ঠিক করুন।
অনেক দেশ, যেমন ইন্ডিয়ায় বিভিন্ন ক্যারিয়ার কাউনেসলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে জিনিস সম্প্রতি তৈরী হতে যাচ্ছে। হয়ত কেউ কোথাও কোথাও এই ব্যাপারটা দেখেও থাকবেন। এরা এই সমস্ত জিনিস সম্বন্ধে ভালো জানে, তদুপরী আপনার অন্যান্য তথ্য জেনে আপনাকে ভাল পরামর্শও হয়ত দিতে পারবে। আধুনিক সব ক্যারিয়ার মেট্রিক্স তৈরী হয়েছে যেখানে একসেট প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে যাচাই করা যেতে পারে আপনার জন্য সেরা বিষয় কোনটা হতে পারে। সুতরাং একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন এই পদ্ধতিতে।
এভাবে আগালে হয়ত আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে আগানো অনেক সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য। অন্তত: আমার জন্য সহজ হয়েছিল যখন আমি মার্স্টাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
৩। কিভাবে ইউনিভার্সিটি বাছাই করতে হয়?
আপনি আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষা নিতে আসবেন কিনা আর আসলেও কোন বিষয়ে পড়তে আসবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার পর আসে ইউনিভার্সিটি বাছাইয়ের ব্যাপারটি।
কোন ইউনিভার্সিটি বেছে নেবেন? কেন বেছে নেবেন?এ ব্যাপারে কখন কিভাবে আগাবেন? ব্যাপারগুলো খুব কনফিউজিং বলে মনে হতে পারে। কিন্তু একটু পরিচিত হয়ে গেলে সেটা সহজ হয়ে আসবে আপনার জন্য।
কোন ইউনিভার্সিটি সেরা এটা একটা খুব সাধারন জিজ্ঞাসা। আর এই জিজ্ঞাসাকে সামনে রেখে ইউএসনিউজ প্রতিবছর একটা র্যাঙ্ক লিস্ট প্রকাশ করে। এই র্যাঙ্ক লিস্টকে মোটামুটি সবাই বেশ ভাল বলেই মেনে নেয়। এই র্যাঙ্কিং করার সময় ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকের কোয়ালিটি, তাদের মোট প্রকাশ করা পেপার, সেই পেপারগুলোর মান, ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের দেয়া আর্থিক সাহায্য এই সবকিছুকে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটিতে পার্কিং সুবিধার মত অদরকারী বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হয়, সেজন্য অনেকে এই র্যাকিং প্রথার বিরুদ্ধে মতামত দিয়ে থাকেন। এই র্যাংক লিস্টটা দেখতে হলে পয়সা দিতে হয়। তাই কেবল উপরের দিকের কয়েকটা ইউনিভার্সিটির নাম দেখা ছাড়া আর কিছুই করা যায় না এ দিয়ে।
এছাড়া ইউনিভার্সিটিগুলোর র্যাঙ্কিং করার জন্য পিএইচডিস অর্গ ওয়েবসাইটাও দেখতে পারেন। সেখানে আপনার পছন্দের সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া বাছাই করে ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্ক করতে পারেন। জিনিসটা খুব কাজের।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করা র্যাঙ্ক লিস্টের একটা রিভিউ ধরনের তৈরী করেছে ইলিনয় ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরী। সেখানে গিয়েও দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোন একটি ইউনিভার্সিটিকে কিভাবে র্যাঙ্ক করছে।
সুতরাং প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আপনি ইউনিভার্সিটি গুলোর ধরন ধারন, আপনার বিষয়ের কোয়ালিটি এইসব জেনে নিলেন। এরপর আপনার নিজের কোয়ালিটির সর্ম্পকে একটু নজর দিতে হবে। যদি আপনি ইউনিভার্সিটি মাঝামাঝি ধরনের ছাত্র হন তাহলে মাঝারী ধরনের ইউনিভার্সিটির দিকে নজর দেয়া ভাল। আর সেই সাথে একটা একটু ভাল ধরনের, আর একটা একটু নীচু র্যাঙ্কিংয়ের ইউনিভার্সিটির দিকে নজর দেয়া উচিত। এভাবে র্যাঙ্ক লিস্ট থেকে ১০-২০টা ইউনিভার্সিটিকে টার্গেট করে ফেলুন।এরপর টার্গেট করা ইউনিভার্সিটি গুলোর ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখুন আপনি যে বিষয়ে পড়তে চাচ্ছেন সে সব বিষয়ে সেই ইউনিভার্সিটিতে কোন প্রফেসর কাজ করেন কিনা। করলে কি ধরনের কাজ করে থাকেন। প্রফেসর বা সেখানে কাজ করছে এরকম কোন ছাত্রকে সরাসরি ইমেইল করে আলাপ করুন কাজের ধরন সর্ম্পকে। দেখুন সেটা আপনার মনপুত: হচ্ছে কিনা। যেসব ইউনিভার্সিটির কাজ আপনার মন:পুত হচ্ছে না সেগুলোকে বাদ দিয়ে দিন আপনার লিস্ট থেকে।
আরও দেখুন যে প্রফেসরকে পছন্দ হয়েছে তার সাথে কতজন কাজ করে। সেমস্ত ছাত্রের কোয়ালিটি কেমন। সেই প্রফেসরের কোয়ালিটিই বা কেমন। লোকটা মানুষ হিসেবে কেমন। তার সাথের ছাত্ররা কেমন আর্থিক সাহায্য পায় এইসবও দেখুন।
প্রতিটা ইউনিভার্সিটির পড়ালেখার খরচ কত সেটাও দেখুন। প্রতিটা ইউনিভার্সিটির ওয়েব পেইজে সার্চ করার অপশন থাকে সেটা ব্যবহার করুন। এ পর্যায়ে সে সমস্ত তথ্য আপনার টুকে রাখা দরকার সেগুলো হল:
১। ইউনিভার্সিটি কোথায় অবস্থিত
২। আপনার পছন্দের বিষয়ে কোন কোন প্রফেসের কাজ করছে, তাদরে বৃত্তান্ত
৩। ইউনিভার্সিটির খরচাপাতি কেমন
৪। ভর্তির জন্য কি চাই?
ক. ডেডলাইন কবে
খ. টোফেল কত চায়
গ. জিআরই কত চায়
ঘ. এপ্লিকেশন ফি কত
৫। ইউনিভার্সিটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার জীবন যাত্রার মান কেমন
৬। ইউনিভার্সিটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার আবহাওয়া কেমন?
এই সমস্ত তথ্য যোগাড় হয়ে গেলে পরে আপনার ইউনিভার্সিটি গুলো সর্ম্পকে মোটামুটি একটা ধারনা চলে আসবে। কোনটাতে এপ্লাই করা যায় কোনটাতে যায় না তখন সে ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন। ইউনিভার্সিটির ওয়েবপেইজে বাংলাদেশ সার্চ করে দুই একটা বাঙ্গালী যোগাড় করে নিন। তাদের যোগাযোগ করে জেনে নিন অন্যান্য তথ্য।
এ পর্যায়ে আপনার লিস্টটা ধরে ইউনিভার্সিটিগুলোতে এপ্লাই করার প্রস্তুতি নিতে পারেন।
প্রাসঙ্গিক মন্তব্যগুলো তুলে দিলাম:
২০০৬-১০-২৭ ১০:২১:৪০বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একেক জায়গায় জীবনযাত্রার ব্যয় একেক রকম। সাধারণতঃ ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে খরচ খুবই বেশি। চলাফেরার জন্য গাড়ি থাকাটা প্রায় বাধ্যতামূলক। আর খুপরি মার্কা বাড়ির ভাড়াও সাতশো হতে হাজার ডলার পর্যন্ত।
অন্যান্য জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয় কম, তার বড় উদাহরণ হলো মিডওয়েস্ট (ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা ইত্যাদি)। তবে শিকাগো শহর বাদে। আমার বন্ধু শিকাগো আইআইটিতে পড়ে, ওখানে এক বেডরুমের একটা অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়াই গুনছিলো সাতশো ডলার। সেই তুলনায় বড় শহরের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়িভাড়া অনেক কম হয়। আমি থাকি ইলিনয় শ্যাম্পেইন-আর্বানা জমজ-শহরে। এখানে দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে ফ্রি ইন্টারনেট আর কেবল টিভি সহ ভাড়া দিচ্ছি মাত্র পাঁচশো ডলার। এই ভাড়ায় ক্যালিফোর্নিয়া বা নিউইয়র্কের আশে পাশে বাথরুমও জুটবে নাকি সন্দেহ।
আমার এক প্রাক্তন ছাত্র (বুয়েটের) কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল, মাস্টার্স, তাই নিজেরই খরচ দিতে হচ্ছিল। ১ সেমিস্টার পরেই খরচের ঠেলায় কেটে পড়তে হয়েছে।
বড় শহরের আরেক সমস্যা যাতায়াত। শ্যাম্পেইন-আর্বানার সুবিধা হলো, এখানকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খুবই ভালো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেমিস্টার পিছু মাত্র ৩৫ ডলার দিয়ে সারা বছর শহরের যেকোনো জায়গায় বাসে করে (আইডি দেখিয়ে) ঘুরতে পারে। বড় শহরে গাড়ি থাকতে হবে , আর তার জন্য ইন্সুরেন্স থেকে শুরু করে পার্কিং সহ অনেক কিছুই গুনতে হবে। ক্যালিফোর্নিয়াতে যেমন ইন্সুরেন্সের হার খুবই বেশি। ইলিনয়ে আবার এটা কম, খুব বেশি হলে বছরে ৪০০ ডলার দিতে হয়।
মাস্টার্স/পিএইচডি পর্যায়ে বেতন দিবে ১৫০০ হতে ২০০০ ডলারের মতো। তাই আসার আগে অবশ্যই যেখানে যাবেন, সেখানকার জীবনযাত্রার ব্যয়টা চিন্তা করে দেখবেন।
৪। ইউনিভার্সিটি আপনার কাছে কি চায়?
ভর্তির জন্য ইউনিভার্সিটি কি চায়? আপনার কোন কোন যোগ্যতা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য?
ভর্তির জন্য আপনার যে সমস্ত যোগ্যতা দেখবে সেগুলো একটা তালিকা আকারে দেয়া যাক প্রথমে:
১। আপনার ইংরেজীতে কমিউনিকেশনের ক্ষমতা
২। আপনার বুদ্ধিমত্তা - গানিতিক, যৌক্তিক, (ইংরেজী) ভাষাগত দক্ষতা
৩। নিজেকে প্রকাশ করবার বা বিক্রি করবার ক্ষমতা
৪। শিক্ষা এবং কাজের ব্যাপারে আপনার দক্ষতা
৫। আপনার শিক্ষা এবং তার মান
৬। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোন ইউনিভার্সিটি আপনার টিউশন ফি দেবার মত অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আছে কিনা সেটাও দেখে থাকে
আপনার ইংরেজী কমিউনিকেশনের যোগ্যতা পরিমাপের পদ্ধতির জন্য ইউনিভার্সিটিগুলো নির্ভর করে টোফেলের উপর। টোফেল একটি পরীক্ষা যেখানে আপনার ইংরেজী শোনা (কতগুলো কথা হেডফোনের মাধ্যমে শুনে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে), ইংরেজী পড়া (কতগুলো প্রশ্ন পড়ে উত্তর করতে হবে), ইংরেজী লেখা (দুটো রচনা লিখতে হবে) এইসব যাচাই করা হয়। শুনেছিলাম বর্তমান টোফেলে ইংরেজী বলা নামক একটা অংশ থাকবে। কম্পিউটার ভিত্তিক টেস্টিং এ টোফেলে ৩০০র মধ্যে ২৪০ থাকলে বেশীরভাগ ইউনিভার্সিটিতে গ্রহনযোগ্যতা পাওয়া যায়। তবে আপনার পছন্দ করা ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে এব্যাপারে আরো জানতে পারবেন।
ইদানীং ইন্টারনেট বেজড টেস্টিং বলে একটা নতুন ধরনের পদ্ধতি বের করেছে টোফেল অথরিটি। ব্যাপারটা সর্ম্পকে আমার ধারনা নেই। এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে।
আপনার বুদ্ধিমত্তার যাচাই করবার জন্য ইউনিভার্সিটি গুলো নির্ভর করে থাকে জিএরই নামের টেস্টের উপর। এতে তিনটি সেকশন থাকে - গানিতিক সমস্যা সম্বলিত সেকশন (মোট নাম্বার ৮০০), ইংরেজী ভাষার দখল সর্ম্পকিত একটি সেকশন (মোট নাম্বার ৮০০), আর যুক্তিভিত্তিক রচনা লেখবার সেকশন (মোট নাম্বার ৬)। মোট কত নম্বর পেতে হবে সে ব্যাপারে সাধারনত ধরা বাঁধা নিয়ম থাকেনা। তবু ইউনিভার্সিটির ওয়েব পেইজ ঘেঁটে দেখতে ভুলবেন না। বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসুন এখান থেকে।
অনেক সময় বিষয় ভিত্তিক জিআরই বা কর্মাসের পড়ার জন্য জিম্যাট পরীক্ষা চাইতে পারে কোন কোন ইউনিভার্সিটি। এ ব্যাপারে আপনার পছন্দের ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করতে পারেন।
নিজেকে কতটা তুলে ধরতে পারেন অন্যের কাছে বা নিজেকে কিভাবে বিক্রি করতে পারেন সেটা যাচাই করা হয় আপনার স্টেটমেন্ট অফ পারপাস বা ইনটেন্ট নামের একটা রচনার মাধ্যমে। এখানে আপনাকে এক বা দুপৃষ্টার মধ্যে কি কারনে আপনি এই বিষয়ে পড়া শুরু করেছিলেন, কি কারনে আপনি উচ্চতর শিক্ষা নিবেন, নেবার পরে কি করবেন এই সব বিষয় নিয়ে লিখতে হয়। এ ব্যাপারে জানতে ক্লিক করুন এখানে।
শিক্ষা বা আপনার কাজের যোগ্যতার ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি গুলো নির্ভর করে রেকমেন্ডেশন লেটারের উপর। আপনার প্রাক্তন ইউনিভার্সিটি বা কাজের যায়গায় আপনার যে বস ছিল তার চোখে আপনি কেমন মানুষ সেটাই জানাতে হয় এখানে। মোট তিনটা রেকমেন্ডশন লাগে অনেক জায়গায়। নিদির্ষ্ট ফরমও থাকে এর জন্য। আপনাকে এই ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট নিয়ে কারও কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার লিখিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখতে পারেন।
আপনার পূর্বের বিভিন্ন পরীক্ষার সার্টিফিকেট তাতে প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি এসবের উপর ভিত্তি করে ঠিক করা হয় আপনার শিক্ষাগত যোগত্যা কতটা। এব্যাপার গুলো সাধারণত পূর্ব নির্ধারিত বলে তেমন কিছু করা থাকেনা।
অর্থনৈতিক সচ্ছলতা জানার জন্য ইউনিভার্সিটির কাছে ব্যাঙ্ক ব্যালেনস প্রদর্শন পূর্বক বিভিন্ন ডকুমেন্ট পাঠাতে হয়।
এই সমস্ত জিনিস ছাড়াও অনেক ইউনিভার্সিটি স্পেশাল জিনিস পত্র চাইতে পারে। যেমন অনেকের আপনার ইউনিভার্সিটির নম্বরের আর্ন্তজাতিক ইক্যুইভ্যালেন্ট নম্বর চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে ডাব্লিউ-ই-এস বলে একটি সার্ভিসের শরনাপন্ন হতে হবে। তাদের কাছে আপনার রেজালটের এক কপি পাঠালে তারা আপনার ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে আরো এক কপি চাইবে। এই দুই কপিকে যাচাই করে ইউএস ইকুইভ্যালেন্ট নাম্বার পাঠাবে আপনার পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে।
ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করতে মূলত এই ব্যাপার গুলিই টেক কেয়ার করতে হয়।
৫। ফান্ডিং কিভাবে জোগাড় করতে হয়?
প্রথমেই সর্তকতা: এখানে বলা সবগুলো পদ্ধতি একদম নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। অন্য কেউ যাচাই করেনি। তাই এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে সফলতা বা বিফলতা দুটোই আসতে পারে। সুতরাং অনুগ্রহ করে যা করবেন সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে করবেন, হিতে বিপরীত হলে আমাকে দুষবেননা।
আমি আগের একটি লেখায় উল্লেখ করেছি যে এখানে ছাত্ররা মূলত চারভাবে টিউশন এবং থাকা খাওয়ার খরচ জোগাড় করে থাকে।
১। টিচিং এসিসট্যান্টশীপ,
২। রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ,
৩। ইউনিভার্সিটিতে ঘন্টাভিত্তিক কাজ,
৪। ইউনিভার্সিটির বাইরে ঘন্টাভিত্তিক কাজ।
প্রতিটি পদ্ধতির ভাল-মন্দ দিক আর কিভাবে যোগাড় করতে হয় সেটা আলোচনা করব এবারে।
টিচিং এসিসট্যান্টশীপ ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনি যে বিষয়ে পড়তে যাবেন সেটার বিভাগীয় প্রধান এবং ভর্তি নির্বাচকের উপর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটাকে ব্যবহার করে ভাল ছাত্র যোগাড় করার টোপ হিসেবে। ধরেন আইআইটির কোন ছেলে একটা মধ্যম ধরনের ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেছে। সেই ইউনিভার্সিটি তখন তাকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে লোভনীয় অফার পাঠাবে। যাতে সে এখানে পড়তে আসে। তাই এখাতে প্রথমেই আর্থিক সাহায্য আশা করে লাভ নেই। তবে প্রথম সেমিষ্টারে ভালো রেজালট করলে তখন টিচিং এসিসট্যান্ট হিসেবে কিছু আশা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কোন প্রফেসরের নেক নজরে থাকলেও অনেক কাজ হয়। কিভাবে এই নেক নজর লাভ করা যায় সেটা পরে আলোচনা করব।
টিচিং এসিসট্যান্ট হিসেবে যে কাজগুলো করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো খাতা দেখা। বিভিন্ন কোসে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের হোমওর্য়া দেয়া হয়। সেগুলোর খাতাগুলো দেখে দিতে হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে প্রফেসরের অনুপস্থিতে ক্লাস নিতে হতে পারে, তাই সাধারনত টিএসই (টেস্ট অফ স্পোকেন ইংলিশ) নামের একটা পরীক্ষা দিতে হয় অনেক সময়। তাছাড়া ল্যাব ভিত্তিক কোর্সের টি এ হলে ল্যাবে সাহায্য করতে হতে পারে অনেক সময়।
রিসার্চ এসিসট্যান্টদের কাজ প্রফেসরদের বিভিন্ন গবেষনায় সাহায্য করা। সেইসাথে যে বিষয়ের উপর গবেষনা করছে সেটা তার নিজের গবেষনা পত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাই কাজটা মন্দ নয়। তবে রিসার্চের ব্যাপারটাই খটোমটো। উপরন্তু প্রফেসরদের আচার আচরনের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। অনেকের জন্য তাই এই কাজটা অতটা পছন্দের নয়।তবে রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ নির্ভর করে সম্পূর্ণ একজন প্রফেসরের উপর। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ করবার প্রপোজাল বা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে সে গবেষনা গ্রহন যোগ্য মনে হলে তারা সেই প্রফেসরকে কিছু অর্থ যোগান দেন। সেই অর্থ থেকে কিছু ছাত্রকে রিসার্চ এসিসট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাই সেই সমস্ত ছাত্রদেরও সবসময় দৌড়ের উপর থাকতে হয়।
রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ পাওয়ার মূল ব্যাপার তাই হচ্ছে কোন প্রফেসরের নেক নজরে থাকা। কিভাবে এই নেকনজরে আসা সম্ভব? প্রথমত ভর্তির আগে থেকেই এব্যাপারে চেষ্টা শুরু করতে হবে। উদাহরন স্বরূপ আমি একটি বিষয় বেছে নিই: মনে করুন আপনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান। তবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রোবোটিক্স বিষয়ে আপনার সবচেয়ে আগ্রহ বেশী। সুতরাং আপনার কাঙ্খিত ইউনিভার্সিটিতে যে প্রফেসর এ বিষয়ে কাজ করছে তাকে খুঁজে বার করলেন ইউনিভার্সিটির ওয়েব পেইজ থেকে। তারপর তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি তার বর্তমান রির্সাচ গুলো ঘাঁটাঘাটি করলেন। তারপর তাকে ইমেইল করুন তার রিসার্চের ব্যাপার জানতে চেয়ে। এব্যাপারে সাবধান - প্রথম ইমেইলে তাকে কোনভাবেই ফান্ডিংয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আপনার মূল লক্ষ্যা থাকবে রিসার্চের ব্যাপারে আলোচনা করা।
এভাবে প্রাথমিক যোগাযোগ শেষ হলে পরে সুযোগ খুঁজুন আপনার ব্যাপার জানানোর জন্য। অনেকে মুখের উপর না করে দিবে। কিন্তু আপনার কাছে দরকার মনে হলে পরে লেগে থাকতে ভুলবেন না। লেগে থাকা মানে রিসার্চের ব্যাপারে কাজ করে যাওয়া বিশ্বাস স্থাপন করা এসব। অনেক সময় দেশে থেকেই ফোন করে আলাপ করুন। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যদি ক্লাস শুরু করে ফেলেন (অবশ্যই প্রথম সেমিস্টারের টাকা পরিশোধ করে) তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। তার সাথে সেমস্ত ছাত্ররা কাজ করছে তাদের সাথে কথা বলুন। অন্যান্য ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন যোগাযোগ এই ক্ষেত্রে খুবই ইফেক্টিভ।
ইউনিভার্সিটিতে ঘন্টা ভিত্তিক কাজ খুব সুলভ না হলেও মোটামুটি পেতে খুব সমস্যা হয় না। লাইব্রেরীতে বই আদান-প্রদানের কাজ, বিভিন্ন অফিসে টুকটাক সহায়ক কারীর কাজ এধরনের বিভিন্ন কাজ করতে হতে পারে এক্ষেত্রে। সমস্যা এখানে দুটো:
১। থাকা-খাওয়ার খরচটা উঠে আসলেও টিউশনটা আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে
২। ঘন্টা চুক্তিতে কাজ বলে ঘড়ি ধরে আপনাকে বসে থাকতে হবে অফিসে। তবে কাজ চলে যায় এরকম একটা কাজ পেলেও।
ঘন্টা ভিত্তিক ইউনিভার্সিটির কাজ গুলো অনেক সময় ইউনিভার্সিটির ওয়েবাসইটে পাওয়া যায়, অনেক সময় বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে জানা যায়, আবার অনেক সময় প্রফেসররাও জানাতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রোগ্রামীং বা ওয়েব ডেভলপমেন্ট জানা থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
তবে আসল পেইন হল বাইরে কাজ করতে যাওয়া। এই কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন পেট্রল পাম্পগুলোতে কাজ করা, বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করা। এই বাইরের কাজ নিয়ম বর্হিভুত হওয়ায় খুব অল্প দরে কাজ করতে হয়। আর রক্তচোষা মালিক ছিবড়ে ফেলে একবারে। তবুও নিতান্তই দরকার পড়লে এধরনের কাজ পেতে দেশী লোকদের নেটওর্য়াক ব্যবহার করতে পারেন।
প্রথমবার ফান্ডিং জোগাড় করাটাই খুব কষ্টকর। নুতন দেশ, নতুন পড়াশোনার পদ্ধতি, নিজেকে প্রমানের প্রথম সুযোগ, সব কাজ নিজে করবার যন্ত্রনা, বাড়ির পিছুটান সব মিলিয়ে বড় নড়বড়ে অবস্থা। অনেককেই মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় এসময়। তবে একবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে জীবনটা অনেকখানি সহজ হয়ে যায়।সবার জীবনে সুন্দর সময়গুলোর প্রত্যাশা রইল।
আমেরিকায় উচ্চতর পড়াশুনার সিরিজ এখানেই শেষ। তবে ছোটখাট কোন বিষয় থাকলে পরে আলোচনা করা যেতে পারে। কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে ভুলবেন না।
মন্তব্য
বিশাল লেখা ফরম্যাটিং করতে করতে দম শ্যাষ। রেফারেন্স হিসেবে তুলে দিলাম।
ইদানীং সচলায়তনকে সচল করতে করতে আর অন্য কিছু করাই হচ্ছে না!
====
মানুষ চেনা দায়!
চমৎকার প্রয়াস। আমেরিকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অন্যরাও কমেন্টের ঘরে তাদের সাজেশন/মতামত শেয়ার করতে পারেন।
আমি একটু হাফ ছাড়ার সময় পেলে ইউরোপ নিয়ে লিখবো। কয়েকটি বিষয়ে ইউরোপে সুযোগ অনেক ভালো। তার মধ্যে আছে, টিউশন ফি-এর ক্যাচাল বিহীন (অলমোস্ট) পড়াশোনা, ইউনিভার্সিটির র্যাংকিং নিয়ে বিপদে পড়তে হয় না, যে কোনো ইউনি থেকে ডিগ্রি থাকলেই চলে।
অর্থনৈতিক দিকটাও ভালো। পিইচডির ফান্ডিং আমেরিকার চাইতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক বেশি (৪০ হাজার ইউরোর/৫৩০০০ ডলারের মত বিফোর ট্যাক্স)। পিএইচডি স্টুডেন্টদের অধিকাংশেরই সুযোগ থাকে একটা টীমে কাজ করার এবং ইইউ -এর সুবাদে টীমটা প্রায়ঃশই বহুজাতিক। জব সিক্যুরিটি ভালো এবং আমার জানামতে বছর খানেকের এক্সপেরিয়েন্স নিয়েই পাবলিক ৭০/৭৫ হাজার ইউরো স্যালারি পাচ্ছে।
তবে মাস্টার লেভেল স্কলারশীপের সংখ্যা কম; অনেক স্কলারশীপই শুধুমাত্র ইইউ সিটিজেনদের জন্য। আর ইন্ডাস্ট্রিয়ালি ডেভেলাপড সিটি না হলে স্টুডেন্টদের কাজ করার স্কোপও অনেক সীমিত।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইয়ের সাথে মোটামুটি কিংবা পুরাপুরি একমত।
সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বলতে পারি ইউরোপ নি:সন্দেহে উন্নততর পেডাগগী অনুসরণ করে।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
কাজে আসবে লেখাটা, দু'বছর পরে হয়তো। ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
কি দারুন লেখা! টানে পড়ে ফেললাম। পাঁচ!
নতুন মন্তব্য করুন