ছবি: হোমিও-টোটকা [সুত্র]
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির একটা ভালো কদর আছে। দেশে একটা হোমিওপ্যাথি শিক্ষার জন্য কলেজও রয়েছে। সস্তা এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা হিসেবে জীবনের কোনো না কোনো সময় দেশে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের দ্বারগ্রস্ত হন। কেউ বলেন প্রতিক্রিয়া বিহীনভাবে রোগ সারাতে হোমিওপ্যাথি ঔষধের তুলনা নেই। কেউ বলেন যে ঔষধের ক্রিয়া নেই, সেই ঔষধের প্রতিক্রিয়াও নেই; হোমিওপ্যাথি নিতান্তই ভুয়া একটি চিকিৎসা।
আমাকে ছোটোবেলা থেকে হোমিওপ্যাথি ঔষধ খেতে হয়েছে। আমার সর্দি কাশির সমস্যা ছিলো, পরে যোগ হয়েছিলো অ্যাজমা। সর্দি কাশির জন্য পরিচিত এক “আঙ্কেল” এর কাছ থেকে ঔষধ খেয়েছি। তিনি “ঘোষনা” দিয়েছিলেন আমার পলিপাস আছে বলেই আমার সর্দি কাশি হয়। অ্যাজমার জন্য বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একজন এমবিবিএস, ফার্মাকোলজিস্ট হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছ থেকে দীর্ঘদিন, প্রায় চার বছরের মতো, নিয়মিত ঔষধ খেয়েছি। বলাবাহুল্য কোন লাভ হয়নি দুটো ক্ষেত্রেই।
পড়াশুনা শেষ করে চাকরীতে ঢোকার পর একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ ক্যাট স্ক্যান করে জানালেন আমাদের আসলে পলিপাস নেই। আরেকজন অ্যালার্জিস্ট অ্যালার্জি পরীক্ষার মাধ্যমে জানালেন আমার আসলে গাছের কিঞ্জল বা ট্রি পোলেন এবং ধুলার কীট অর্থাৎ ডাস্ট মাইট এ সংবেদনশীলতা আছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমি হতাশ হব জেনেও আমাকে জানালেন আমার অ্যাজমা আসলে জীবনেও সারবে না, কিন্তু নিয়মিত ঔষধে নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে।
অতি সম্প্রতি আমার বাবার কিছু অসুখ হওয়ায় হোমিওপ্যাথির প্রসঙ্গটি আবার সামনে চলে আসে। হোমিওপ্যাথি নিয়ে খানিকটা ঘাঁটাঘাটি করে আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম এটি একটি সিউডো সায়েন্স, বাংলায় যাকে বলা যায় আপাতবিজ্ঞান বা গাঁজাবিজ্ঞান। অথচ আমার বাবা তার অসুখটির জন্য একটি প্রথমে ছোট সার্জারীর ব্যাপারে সম্মত থাকলেও কারো কাছ থেকে মগজ ধোলাই হয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে হোমিওপ্যাথি তার রোগ সারাতে পারবে। ছুরি কাঁচির নীচে না গিয়ে আগে তাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার দারস্থ হওয়া উচিৎ।
আমি তাকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারিনি যে হোমিওপ্যাথি একটি গাঁজাবিজ্ঞান। সেই মুর্হুতে অনুভব করতে পারি এই অপবিজ্ঞানটি বাংলাদেশে কি ভীষণভাবে প্রোথিত হয়েছে। আমার আজকের এই লেখাটি সেই গোঁড়ামিটিকে অপসারনের একটি প্রচেষ্টা মাত্র।
শুরুতে এই ব্যক্তিগত অংশটি আলোচনা করবার উদ্দেশ্য হলো পাঠকের সাথে একটি যোগসুত্র স্থাপন। অনেকের একই রকম অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে অনেকে হয়ত যাচাই করে দেখেননি হোমিও চিকিৎসাটুকু কতটা কার্যকরী ছিলো। পাঠক আমার এই ব্যক্তিগত আলোচনাটুকু প্রয়োজনীয়তা বুঝবেন আশা করি।
আমার লেখাটি মুলত এই লেখাটি থেকে পরিমার্জিত/অনুদিত করা হয়েছে। তাছাড়া এবিষয়ে রিচার্ড ডকিন্সের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
একজন জার্মান ডাক্তার স্যামুয়েল হানেম্যান ১৭০০ সালের শেষের দিকে হোমিওপ্যাথির মূলনীতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেসময়ে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির কয়েকটি ছিলো রক্ত বের করে ফেলা, রক্তচোষা, অঙ্গহানি ইত্যদি। এপদ্ধতি গুলো কাজের চেয়ে ক্ষতি বেশী করতো বলে হানেম্যান এই পদ্ধতিগুলোর উপর যুক্তিযুক্ত কারনেই বিরক্ত ছিলেন। সেসময়কার প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিকে হিউমারিজম বলা হয়। হিউমারিজম “দাবী” করে যে শরীরের সমস্ত রোগ শরীরের চার প্রকার তরল: কালো, হলুদ, রক্ত এবং কফ, এর তারতম্যের কারনে ঘটে। বলাবাহুল্য, এই নীতিটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং বর্জনীয়।
ছবি: হ্যানেম্যান [সুত্র]
হিউমারিজম যেমন দাবী করে যে শরীরের চার প্রকার তরলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য উল্টোটা করতে হয়, যেমন কফ বেড়ে গেলে কমাতে হয়, তেমনি করে হানেম্যান তৈরী করলেন “একই ধরণের পদার্থের সুত্র”। এই সুত্রের মুলনীতি হলো যে, যে পদার্থের উপস্থিতিতে একটি রোগের সুত্রপাত হয়েছে, সেই পদার্থের খুব অল্প পরিমান সেই রোগটিকে সারিয়ে তুলবে। অর্থাৎ হিউমারিজম পদ্ধতি যেখানে কফ বেড়ে গেলে কফ কমানোর ব্যবস্থা করবে, হানেম্যানের এই সুত্র অনুযায়ী উল্টোটা, অর্থাৎ যে কারণে কফ হয়েছে সেটাকে রোগীকে সেবন করতে হবে। হ্যানেম্যান এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম দিলেন হোমিও প্যাথি, গ্রীক শব্দ বন্ধটির অর্থ হোমিওস (একই বা মতো) এবং প্যাথোস (রোগ)। হোমিওপ্যাথির বাংলা করলে তাহলে দাঁড়ায় ‘রোগের-মতো’।
হ্যানেম্যান এবং তার প্রথম দিককার অনুসারীরা কিছু নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তারা বিভিন্ন লতা-গুল্ম, খনিজ দ্রব্য এবং অন্যান্য পদার্থ সুস্থ মানুষ এবং নিজেদের উপর প্রয়োগ করেছিলেন। এই পদার্থের প্রতিক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্যাদি তারা সংগ্রহ করেন এবং পরে “ম্যাটেরিয়া মেডিকা” নামে একটি বই হিসেবে প্রকাশ করেন। এই বইটি সাধারণত ব্যবহার করা হয় কোন রোগ হলে কোন ঔষধ দিতে হবে সেটা বের করার জন্য। এই বইটা কিভাবে ব্যবহার করা হয় সেটা বোঝার জন্য “ধরা যাক” খনিজ লবন খেলে জ্বর হয়। তাহলে জ্বর হলে দিতে হবে খুব অল্প পরিমান খনিজ লবন।
হ্যানেম্যান দাবী করলেন যে, শরীর নিজে থেকেই সারাতে পারে যদি না রোগ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এবং খুব অল্প পরিমান প্রভাবক শরীরের রোগ সারানোর প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারে। তিনি আরো দাবী করলেন যে, দীর্ঘমেয়াদী রোগ হলো একধরণের দমিয়ে রাখা চুলকানী বা psora, যেটা একপ্রকার মায়াজমা, miasma বা দুষ্ট আত্মা। শুরুর দিকে তিনি তার টোটকাগুলো অল্প পরিমানে ব্যবহার করলেও পরে নিয়ম করেন যে, ঔষধের মাত্রা যত কম হবে তার প্রভাব তত বেশী হবে। এই নিয়মটিকে সাধারণতঃ “লঘুকরণের সুত্র” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অথচ ফার্মাকোলজিস্টরা পরে প্রমান করেছেন প্রকৃতপক্ষে ঠিক এর উল্টোটা ঘটে। যেমন, একটা প্যারাসিটামল খেয়ে জ্বর না কমলে পরেরবার দুটো খেতে হয়।
হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ায় তালিকাভুক্ত করার জন্য পদার্থগুলোকে কোনো বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না, বরং ১৮০০-১৯০০ সালের নিরীক্ষার, যাকে “প্রোভিং” বা “উপপাদন” বলা হয়, উপর ভিত্তি করেই তালিকাভুক্ত করা হয়। বইটির সর্বশেষ নবম সংস্করণে প্রায় হাজারখানেক পদার্থকে হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহারের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ কোন রোগ বা কোন অসুখের জন্য কোন পদার্থ ব্যবহার করতে হবে বইটিতে সেব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক পদার্থ প্রস্তুতকারক বা সেবাপ্রদানকারী ব্যক্তির সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ায় তালিকাভুক্ত পদার্থগুলো আমেরিকায় আইনগতভাবে “ঔষধ” হিসেবে বিবেচনা করা হয় মানেই এই নয় যে আইনগতভাবে কিংবা আমেরিকার ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিবেচনায় সেগুলো রোগ সারাতে সক্ষম।
ঊনবিংশ শতকের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় কম বিপদজনক হওয়ায় অনেক চিকিৎসাবিদ হোমিওপ্যাথি অনুশীলন শুরু করেন। বিংশশতকের শুরুতে আমেরিকায় প্রায় ১৪ হাজার হোমিওপ্যাথি অনুশীলনকারী এবং ২২ টি হোমিওপ্যাথি বিদ্যালয় ছিলো। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের এবং শাস্ত্রের অগ্রগতির সাথে সাথে খুব দ্রুত হোমিওপাথির পতন ঘটে। আমেরিকার হোমিওপ্যাথি বিদ্যালয়গুলো হয় বন্ধ হয়ে গেছে নতুবা আধুনিক চিকিৎসায় পরিবর্তিত হয়েছে। সর্বশেষ হোমিওপ্যাথি বিদ্যালয় বন্ধ হয় ১৯২০ সালে।
ছবি: হোমিওপ্যাথির মূলসুত্র [সুত্র]
অনেক হোমিওপ্যাথ মনে করেন যে কিছু কিছু মানুষের সাথে কিছু কিছু পদার্থের সংযোগ রয়েছে। কতিপয় পদার্থ এই ধরণের মানুষের জন্য “গঠনগত ঔষধ” এবং এদের ক্ষেত্রে অনেক রোগ এই কতিপয় টোটকাতেই সেরে যাবে।এই টোটকাগুলো মানুষের “গঠনগত ধরণের” উপর ভিত্তি করে সেবন করতে বলা হয়। “গঠনগত ধরণ” গুলো জ্যোতিঃশাস্ত্রের মতো করে নামকরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইগনাশিয়া ধরণের মানুষ খুব অস্থির এবং প্রায়ই কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়; তামাক সেবন পছন্দ করে না। পালসাটিলা ধরনের মানুষ হচ্ছে সোনালী বা হাল্কা বাদামী চুলের, নীল চোখ এবং উজ্জ্বল রংয়ের যুবতী, যে ভদ্র, ভীত, রোমান্টিক, আবেগপ্রবণ এবং বন্ধুভাবাপন্ন কিন্তু লাজুক। নাক্স ভোমিকা ধরণের মানুষ, আগ্রাসী, ঘাড় ত্যাড়া, উচ্চাভিলাষী এবং অতিরিক্ত উত্তেজিত। সালফার ধরণের মানুষ মুক্ত বা অনপেক্ষ থাকতে পছন্দ করে। মানুষের চেহারা দেখে ঔষধ দেবার এই পদ্ধতিকে যুক্তিযুক্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত মনে হয় আপনার?
প্লাসিবো শব্দটির অর্থ বলা যায় সৌখিন বা নকল ঔষধ। ঔষধের অনুকরণে প্রস্তুত করা এই নকল ঔষধগুলো ব্যবহার করা হয় রোগীকে আসল ঔষধ দেয়া হচ্ছে এই ভরসা দিতে। অনেকক্ষেত্রে রোগীর নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। সৌখিন ঔষধের ভরসা পেয়ে রোগী তখন নিজে থেকেই সেরে উঠতে পারে। হোমিওপ্যাথি আসলে নকল বা সৌখিন ঔষধ ছাড়া আর কিছু নয়।
হোমিওপ্যাথিক পদার্থগুলো তৈরী করা হয় সাধারণতঃ খনিজ, ভেষজ কিংবা অন্যান্য উৎস থেকে। যদি মাদার টিংকচার বা মূল পদার্থটি পানিতে দ্রবীভূত হয় তাহলে এক ভাগ পদার্থ নয় বা নিরাব্বই ভাগ পানি অথবা অ্যালকোহলের সাথে মিশ্রিত করে প্রবলভাবে ঝাঁকানো হয়। এই ঝাঁকানোকে সাধারণত succussion বলা হয়। মূল পদার্থটি পানিতে দ্রবীভূত না হলে মিহি করে গুড়া করে গুঁড়া দুধ বা মিল্ক সুগার নামে পরিচিত গুঁড়ার সাথে আগের অনুপাতে মেশানো হয়। এই মিশ্রন, জলীয় বা পাউডার, কে ক্রমাগত আরো পাতলা করা হয় যতক্ষন না পর্যন্ত কাঙ্খিত ঘনত্ব পাওয়া যায়।
ছবি: লঘুকরণ প্রক্রিয়া [সুত্র]
১ ভাগের সাথে ১০ পানির বা পাউডারের লঘূকরণকে রোমান সংখ্যা X দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এভাবে ১X হচ্ছে ১/১০ ঘনত্ব, ৩X হচ্ছে ১/১০^৩ বা ১/১০০০ ঘনত্ব, ইত্যাদি। একইভাবে ১০০ ভাগ লঘূকরণকে রোমান সংখ্যা C দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ ১C হচ্ছে ১/১০০ ঘনত্ব, ৩C হচ্ছে ১/১০০^৩ বা ১/১০০০,০০০ ঘনত্ব, ইত্যাদি। বর্তমানে বাজারে পাওয়া হোমিও-টোটকাগুলো ৬X থেকে ৩০X মাত্রায় পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০C মাত্রার হোমিও-টোটকাও বাজারে বিক্রী হয়।
৩০X লঘূকরণের মানে হচ্ছে একভাগ মূল পদার্থকে ১০^৩০ অর্থাৎ ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ ভাগ লঘূকরণ করা হয়েছে। এক কিউবিক সেন্টিমিটার, বা একটি ছক্কার কাছাকাছি আকারের মধ্যে ১৫ ফোঁটা পানি ধরে এই হিসেবে এক ড্রপ হোমিওপ্যাথিক পদার্থকে মেশাতে পৃথিবীর ৫০গুণ আকারের পানিতে সেটাকে মেশাতে হবে।পৃথিবীর পঞ্চাশগুণ আকারের একটি পানিভরা পাত্র কল্পনা করুন। তারপর তাতে একফোঁটা লাল রং ছেড়ে এমনভাবে গোলান যাতে সেটা পানিতে সমভাবে মিশে যায়। হোমিওপ্যাথির “লঘুকরণের সুত্র” অনুযায়ী এরকম একটি বিশাল পাত্র থেকে এক ফোঁটা রং মিশ্রনের পর যদি একফোঁটা পানি নেয়া হয় তাহলে তাতে লাল রংটির "নির্যাস" পাওয়া যাবে। অথচ ব্যাপারটি অসম্ভব।
রবার্ট এল. পার্ক, পিএইচডি একজন গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদ এবং আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞান সোসাইটির নিবার্হী পরিচালক। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে একটি দ্রবনে দ্রাব্য পদার্থের ন্যুনতম একটি অনু বিদ্যমান থাকলেই কেবল পদার্থটি সেই দ্রবনে উপস্থিত সে দাবী করা যায়। এক অনু পদার্থ থাকতে তাই দরকার ১০^১৯ অনু পানির। হিসেব করে দেখা গেছে যে, মূল পদার্থের এক অনু পেতে চাইলে ৩০X মাত্রার হোমিও টোটকার দুই বিলিয়ন ল্যাকটোজ সুগারের দানা খেতে হবে। এই এক অনু মূল পদার্থের সাথে আপনার শরীরে যাচ্ছে প্রায় এক হাজার টন ল্যাকটোজ এবং তার মধ্যে থাকা ভেজাল ময়লাগুলো।
ছবি: তুমি কি কেবলি চিনি…? [সুত্র]
Oscillococcinum হচ্ছে একটি ২০০C হোমিও-টোটকা যেটা ঠান্ডা এবং বার্ড-ফ্লুর মত লক্ষণ প্রশমনে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে লঘুকরণ আরো অনেক অনেক অনেক বেশী। এই টোটকা প্রস্তুত করর জন্য প্রথমে অল্প একটু হাঁসের যকৃত্ চল্লিশ দিন ধরে হালকা গরমে রেখে দেয়া হয়। এরপরে এই গলে যাওয়া দ্রবণটিকে ফ্রিজে রেখে শুকানো হয়, পুনরায় দ্রবনে পরিনত করা হয়, ক্রমাগত লঘুকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেবার পর চিনির দলার মধ্যে মেশানো হয়। হাঁসের যকৃতের এক অনুও যদি এই টোটকায় উপস্থিত থাকতে হয় তাহলে ঘনত্ব হতে হবে এক ভাগের সাথে ১০,০২০০ ভাগ। অথচ টোটকাতে প্রস্তুত করা হয়েছে এক ভাগে ১০০^২০০ ভাগ পানির দ্রবনে। স্যংখ্যাটি মহাবিশ্বের মোট অনুর সংখ্যার (এক গুগল: এক এর পর একশতটি শূণ্য) চেয়ে বড়। ইউএস নিউজ ফেব্রুয়ারী ১৯, ১৯৯৭ তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে Oscillococcinum নামের এই হোমিও-টোটকাটি প্রস্তুত করতে বছরে একটি মাত্র হাঁসের প্রয়োজন পড়ে এবং ঔষধটি বিক্রয় করে ২০ মিলিয়ন ডলার আয় করে হোমিওপ্যাথি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। পত্রিকাটি হাঁসটিকে ঠাট্টা করে ২০ মিলিয়ন ডলারের হাঁস নামে অভিহিত করেছিলো।
ছবি: হোমিওপ্যাথিক কার্টুন [সুত্র]
মজার ব্যাপার হচ্ছে, রসায়নের সুত্র মতে লঘুকরণের একটি সীমা আছে, যার বেশী লঘুকরণ করা হলে দ্রবনে আসল পদার্থটি আর পাওয়া যাবে না। এই সীমাটি অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত এবং ১২C বা ২৪X (১০^২৪ ভাগের এক ভাগ) হোমিওপ্যাথি মাত্রার সমতুল্য। হানেম্যান নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এ ধরণের চরম লঘুকরণের কবলে পড়ে দ্রবনে মূল পদার্থের ছিঁটেফোঁটা থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু তিনি “বিশ্বাস” করতেন যে প্রতি ধাপ লঘুকরণের সময় প্রবল ঝাঁকানি বা চূর্ণ প্রক্রিয়ায় ফলে দ্রবনে মূল পদার্থটির “আত্মার-মত” এক ধরণের নির্যাস থেকে যায়, যেটা যদিও “আর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়”, তবু শরীরের “জীবনী শক্তি”কে পুর্নজাগরিত করে রোগ দূর করে।
ছবি: পানি শুধু পানি [সুত্র]
আধুনিক প্রবক্তারা বলেন যে যদিও মূল পদার্থের সর্বশেষ অনুটিও দ্রবন থেকে চলে গিয়ে থাকে, পদার্থটির একটি “স্মৃতি” দ্রবনে থেকে যায়। এই ধারণার পক্ষে কোনো প্রমান নেই। উপরন্তু পানির যদি “স্মৃতি” বলে কিছু থেকেই থাকে তাহলে এযাবৎকালে পানির সংস্পর্শে যা কিছু এসেছে তার সবকিছু “স্মৃতি” পানিতে বিদ্যমান। সেক্ষেত্রে সে সমস্ত পদার্থের “নির্যাসের” সংমিশ্রনের কারণে সাধারণ পানি খেলেই ভীষণ শক্তিশালী এবং অজানা কোনো কিছু ঘটে যেতে পারতো। একই ভাবে যে বাতাসে যে পরিমান জীবানু আছে, চরম সর্তকতা সত্ত্বেও তার কিছুনা কিছু দ্রবনে মিশতে বাধ্য। আবার ল্যাবে হোমিওপ্যাথিক-টোটকা বানানোর যন্ত্রপাতিতে থেকেও পানি এই “স্মৃতি” ধারণ করতে পারে। হোমিও-টোটকা তাহলে কিভাবে বুঝবে যে কোন রোগের ক্ষেত্রে ঠিক কোন “স্মৃতি” ব্যবহার করতে হবে?
অনেক প্রবক্তারা দাবী করেন যে, হোমিও-টোটকা ভ্যাকসিন বা টিকার মত একটি ব্যাপার, কেননা দুটো ক্ষেত্রেই অল্প একটু অনুপ্রাণনা দেয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি নিজেই রোগ সারাতে পারে। এই তুলনা গ্রহণযোগ্য নয়। টিকায় কার্যকরী উপাদানের পরিমান অনেকগুন বেশী এবং হিসেব করে দেয়া হয়। উপরন্তু, টিকা শরীরে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরী করে, রক্তে যার পরিমান হিসাব করে বের করা যায়। কিন্তু চরম লঘুকৃত হোমিওপ্যাথি টোটকা শরীরে হিসেব করার মতো কোনো রকম ক্রিয়া করে না। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, টিকা ব্যবহার করা হয় রোগ ঠেকাতে, রোগ সারাতে নয়।
ছবি: নিয়মভঙ্গ [সুত্র]
“প্রোভিং” বা “উপপাদন”, যার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথ নির্ণয় করেন কোন পদার্থ কোন উপসর্গের সূচনা করে, পদ্ধতিটি এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। উপপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পদার্থ সেবন করে তার প্রতিক্রিয়া, চুলকানি, হাঁচি, কাশি বা ব্যথা হচ্ছে কিনা সেটা লিপিবদ্ধ করা হয়। হোমিওপ্যাথ ধরেই নেন যে উপসর্গটি ঐ পদার্থ সেবনের কারণে হচ্ছে। নিরীক্ষায় সময়টাতে তারা অন্যকোন কারনে অসুস্থ হতে পারেন না। আর কোনো প্রমান ছাড়াই, এও ধরে নেন ঐ পদার্থের চরম লঘুকৃত দ্রবণের কয়েকফোঁটা খেলেই রোগ সেরে যাবে।
যেহেতু বেশীরভাগ হোমিওপ্যাথিক টোটকাতে কার্যকরী উপাদানের কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে, তাই টোটকাগুলো যা করছে বলে দাবী করছে সেটা পরীক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। একটি ঔষধ কার্যকরী কিনা সেটা সাধারণ পরীক্ষা করা হয় ডাবল-ব্লাইন্ড বা দ্বৈত-অন্ধ পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে রোগীদের দু’টি দলে ভাগ করা হয়। এক দলকে নকল ঔষধ বা প্লাসিবো দেয়া হয়, আরেক দলকে দেয়া হয় পরীক্ষার অধীনে থাকা ঔষধটি। এক্ষেত্রে রোগী এবং ঔষধ প্রদানকারী ডাক্তার কেউই জানেনা কোনটি নকল ঔষধ বা প্লাসিবো আর কোনটি পরীক্ষাধীন ঔষধ। ডাক্তার যাতে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে পরীক্ষাধীন ঔষধটি না দিয়ে ফেলেন এজন্য এই সর্তকতা। পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রন করেন গুটি কয়েক গবেষক, যারা ঔষধটি কাকে দেয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না। এই দ্বৈত-অন্ধ পরীক্ষা যখন হোমিও-টোটকা গুলোর ক্ষেত্রে পরিচালনা করা হয়েছে তখন টোটকাগুলো অকার্যকর প্রমানিত হয়েছে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, বেশীর ভাগ হোমিও টোটকার উপর কখনও কোনো পরীক্ষাই করা হয়নি। হোমিও প্রবক্তারা কেবল মাত্র “প্রোভিং” বা “উপপাদন” এর উপর নির্ভর করে রায় দিয়ে দেন কোন রোগের ক্ষেত্রে কোনটা কাজ করবে।
১৯৯০ সালে রিভিউ অফ এপিডেমিওলজি নামের একটি গবেষণা জার্নালে চল্লিশটি দৈবচয়িত পরীক্ষার সাথে একটি প্রচলিত ঔষধ এবং প্লাসিবোর সাথে তুলনা করে একটি গবেষনা পত্রের ফলাফল নিয়ে আলোচনা প্রকাশিত হয়। চল্লিশটি পরীক্ষার তিনটি ছাড়া বাকি সবগুলোর পরীক্ষা পদ্ধতিতে বড় রকমের ভুল ছিলো। যে তিনটি পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে তাদের মাত্র একটির ফলাফল হোমিওপ্যাথির পক্ষে গিয়েছে। উপসংহারে লেখকেরা বলেন যে, এই পরীক্ষাগুলোর ভিত্তিতে এটাই প্রমানিত হয় যে, হোমিওপ্যাথির উপকারিতা নকল ঔষধ বা প্লাসিবোর চেয়ে বেশী নয়। ১
ছবি: মইরা গেলাম রে… ০.০০০০০০০০০০০০০০০০১% [সুত্র]
১৯৯৪ সালে পিডিয়াট্রিকস জার্নালে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়, যেখানে দাবী করা হয় যে নিকারাগুয়ার শিশুদের মধ্যে পরিচালিত একটি পরীক্ষায় মৃদু মাত্রার ডায়ারিয়ার ঔষধ হিসেবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কার্যকারি ভূমিকা রেখেছে২। এই দাবীটি করার ভিত্তি হলো কোনো কোনো দিন “হোমিক-টোটকা সেবী” দল প্লাসিবো সেবী দল থেকে কম পাতলা পায়খানা করেছে। কিন্তু স্যাম্পসন এবং লন্ডন লক্ষ্য করেন যে, ১) পরীক্ষাটিতে অনির্ভরযোগ্য এবং অপ্রমানিত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, ২) রোগীরা পাশাপাশি অন্য কোনো ঔষধ সেবন করেছে কিনা সে ব্যাপারে কোনো সর্তকতা অবলম্বন করা হয়নি, ৩) চিকিৎসা বাছাইয়ের পদ্ধতি দৈবচয়িত, ৪) তথ্য অনির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে একত্র করা হয়েছে এবং তথ্যে ভুল এবং অসংলগ্নতা রয়েছে, ৫) ফলাফল ভীষণভাবে প্রশ্ন সাপেক্ষ, এবং ৬) জনস্বাস্থ্যে এটি কোনো ভূমিকাই রাখবে না, কেননা মৃদু মাত্রার ডায়ারিয়া সারাতে প্রচুর পরিমান পানি খেয়ে ডিহাইড্রেশন রোধই রোগ সারনোর জন্য যথেষ্ট।৩
১৯৯৫ সালে একটি লিটারেচার রিভিউ প্রকাশ করে প্রেসক্রাইয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটা ফ্রেঞ্চ জার্নাল, যেটা নানারকম ফার্মাসিউটিকাল ঔষধ পরীক্ষা করে সেসব বিষয়ে লেখা প্রকাশ করে। রিভিউটির উপসংহার ছিলো: যেহেতু হোমিওপ্যাথি সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয় এমনসব রোগের ক্ষেত্রে যার ফলাফল পরিবর্তনশীল, রোগমুক্তি অনিয়মিত বা অনায়াসলব্ধ। তাই এগুলো প্লাসিবোর চেয়ে বেশী কিছু নয়। এই চিকিৎসাগুলো কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কাজ করে বলে প্রচলিত থাকলেও এ যাবৎকালে পরিচালিত বিশাল সংখ্যক তুলনামূলক পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে হোমিওপ্যাথি যে প্লাসিবো বা নকল ঔষধের চেয়ে বেশী কার্যকরী তার প্রমান পাওয়া যায় নি।
ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর উদ্যোগে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গবেষণা দল (Homoeopathic Medicine Research Group, HMRG) গঠন করা হয়। এই বিশেষজ্ঞ দলটি হোমিওপ্যাথির উপর লম্বা একটি দীর্ঘ রিপোর্ট প্রকাশ করে। দলটিতে ছিলেন হোমিওপ্যাথি চর্চাকারী ডাক্তার-গবেষক এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যেমন, চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষক, ঔষধ বিজ্ঞান গবেষক, জীব পরিসংখ্যানবিদ এবং রোগ বিস্তার বিষয়ে গবেষক। লক্ষ্য ছিল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উপর প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো যাচাই করা। ১৮৪টি পরীক্ষার ফলাফল যাচাই শেষে HMRG দলটি উপসংহার দেন: ১৮৪এর মধ্যে মাত্র ১৭টি পরীক্ষা গ্রহনযোগ্য পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হলেও, তার মাত্র কয়েকটি পরীক্ষায় হোমিওপ্যাথি প্লাসিবোর চেয়ে ভালো ফলাফল এসে থাকতে পারে। কিন্তু এই ১৭টি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রোগী সংখ্যায় এতো অল্প ছিলো যে তার ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।৪
সহজ কথায় বলতে গেলে বেশীর ভাগ হোমিওপ্যাথি গবেষনা কোনো কাজের নয় এবং কোনো হোমিও-টোটকাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রমানিত হয়নি। আমেরিকার ‘স্বাস্থ্য প্রতারনার বিরুদ্ধে জাতির পরিষদ’ নামের সংস্থা সর্তক করেছে এই বলে যে, “শুধু বাছাই করা কিছু লোকের ক্ষেত্রে কাজ করে বলে হোমিওপ্যাথি গবেষকদের বিশ্বস্ততা গুরুতরভাবে প্রশ্ন বিদ্ধ”।৫
১৯৯৭ সালে, লন্ডনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নেয় যে যেহেতু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার পক্ষে যথেষ্ট পরিমান প্রমান নেই, তাই তারা এই চিকিৎসা ব্যায়ভার বহন করতে নারাজ। ল্যামবেথ, সাউথওয়ার্ক এবং লিউশ্যাম স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রতিবছর প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থিত রয়াল হোমিওপ্যাথিক হাসাপাতালে পাঠাতো। সরকারী চিকিৎসক প্রকাশিত সব গবেষণা পত্র পড়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়। চিকিৎসদের এই দলটি জানায় যে, হোমিওপ্যাথির পক্ষে প্রকাশিত পরীক্ষার পদ্ধতি গুলো সমস্যাজনক এবং সে সময়ে প্রকাশিত রয়াল হোমিওপ্যাথিক হাসাপাতালের প্রমানগুলো তেমন জোরালো নয়।৬
২০০৭ এ আরেকদল গবেষক বলেন যে হোমিওপ্যাথির “প্রোভিং” বা “উপপাদন” এতো দূর্বলভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যে এই তথ্যাদি বিশ্বাসযোগ্য নয়।৭
হোমিওপ্যাথির ভক্তকুল অল্প কিছু পরীক্ষায় হোমিওপ্যাথির পক্ষে ফলাফল এলেই সেটা দেখিয়ে প্রমান করতে চায় হোমিওপ্যাথি কাজ করে। ক্রমাগত পরীক্ষায় একই ফলাফলের জন্ম দেবার সম্ভাবনা খুব কম। ক্রমাগত একই ফলাফল এলেও, শুধু প্রমান হয় যে, পরীক্ষাধীন হোমিও-টোটকাটি শুধু সেই রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী। এটা কোনোভাবেই প্রমান করে না যে, সাধারণভাবে হোমিওপ্যাথি মূলনীতি সঠিক বা অন্যান্য রোগের জন্য হোমিও-টোটকা কার্যকরী হবে।
প্লাসিবো বা নকল ঔষধ কিন্তু বেশী শক্তিশালী হতে পারে। তবে নকল ঔষধ খেয়ে রোগ সারবার সম্ভবনাটার তুলনায় রোগটা না সারবার এবং বিশাল ক্ষতি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সেই সাথে রয়েছে আর্থিক ক্ষতি এবং সময় অপচয়। বিশেষ করে ক্যান্সারের মতো রোগ কিন্তু হঠাৎ করে জটিল হয়ে যেতে পারে, সময়মত ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না নিলে। যারা হোমিওপ্যাথি খেয়ে উপকারের কথা বলেন, তারা সেটা না খেয়েও সুস্থ হয়ে যেতেন এমনটা হবার সম্ভাবনাই বেশী।
হোমিওপ্যাথ চর্চাকারী দাবী করে যে হোমিওপ্যাথি নিরাপদ, মৃদু মাত্রার, "প্রাকৃতিক", প্রচলিত মূলধারার চিকিৎসা থেকে সস্তা এবং রোগ সারানোর চেয়ে রোগ প্রতিরোধে বেশী কার্যকরী। হোমিওপ্যাথি যদি কাজ না করে তাহলে নিরাপদ, মৃদু মাত্রার বা "প্রাকৃতিক" হলেও বা লাভ কি? তাছাড়া যেটার মধ্যে ঔষধ বলতে কিছুই নেই, মূলত শুধুই পানি, সেটা নিরাপদ এবং মৃদু তো হবেই, সেই সাথে সস্তাও হবে। উপরন্তু হোমিওপ্যাথির কোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির সূচনা হয়েছে ১৮০০ শতকেই এমনটা কয়েকটা ওয়েবসাইটে লেখা পাওয়া যায়। হামদর্দ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করে। বাংলাদেশে কতজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আছে সেটা সঠিক ভাবে ইন্টারনেটে পাওয়া না গেলেও, সুত্রাল্লেখ ছাড়াই একটি ওয়েবসাইট এক লক্ষ এবং আরেকটি ওয়েবসাইট বাংলাদেশের ৪০% ডাক্তারই হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার বলে দাবী করে। এছাড়া নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেও একটা কথা বোধহয় অস্বীকার করার জো নেই যে, বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথ চর্চাকারীর সংখ্যা অনেক। উপরন্তু ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামে সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ৫ বছর মেয়াদী 'ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি' বিএইচএমএস (BHMS) ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া বাংলাদেশে একটি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড এবং ৪৬টি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ আছে৮। যে দেশে আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে মাত্র ৪৫টি৯, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সব মিলিয়ে ২০টির কম১০, সে দেশে ৪৬টি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ রীতিমত লজ্জার বিষয়।
যে চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো কাজের নয় বাংলাদেশে সেটার এই ব্যাপক বিস্তৃতি কিভাবে হলো? হোমিওপ্যাথি কি আমাদের কোনো লাভ করছে নাকি ক্ষতি করছে?
প্রথম যে কারণটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেটি হলো আধুনিক চিকিৎসার অপ্রতুলতা। এই কিছুদিন আগেও আমাদের গ্রামগুলোতে চিকিৎসক বিরল ছিলো। আর হাসপাতাল তো রীতিমত বিলাশের বিষয় ছিলো। দ্বিতীয় কারণটি হলো খরচ। দরিদ্র বাংলাদেশে চিকিৎসার খরচ বহন করা বেশীরভাগ মানুষের জন্য কষ্টকর। তাছাড়া খুব অল্প পড়াশুনা করে "চিকিৎসক" দাবী করা যায় বলে হোমিও চিকিৎসকও গজিয়ে ওঠে রাতারাতি।
এই তিনটে কারন ছাড়া আমার আরেকটি কারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। সেটি হলো আমাদের কোনো কিছু সহজে "বিশ্বাস" করবার প্রবনতা। আমরা সহজেই রাজনীতিকদের বিশ্বাস করি। সহজেই মেনে নেই পীর ফকিরের কেরামতী, কবিরাজ আর হোমিওপ্যাথি। বিশেষ করে হোমিও-টোটকা গুলো যখন আমেরিকা থেকে প্রস্তুত হয়ে আসে তখন এই বিশ্বাস গিয়ে ঠেকে আকাশে। আমরা আমেরিকার কাছ থেকে বাকস্বাধীনতা, প্রযুক্তি এই ভালো বিষয়গুলো শিখতে পারিনা, কিন্তু হোমিওপ্যাথি, ধর্মীয় গোড়ামির মত বিষয়গুলো গ্রহন করতে বাঁধে না। শিক্ষা এবং প্রশ্ন করতে শেখা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে এ ব্যাপারে।
তদুপরি, সরকারীভাবে দেশের মানুষের আয়করের টাকায় কলেজ স্থাপন করে, এবং জাতীয় হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠন করে যখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয় তখন আর সাধারণ মানুষকে দোষ দেবার কিছু থাকে না।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চললে ক্ষতি কি? ছোটো খাটো রোগের জন্য, যেটা এমনিতে সেরে যেতে পারে সেক্ষেত্রে টাকা খরচ ছাড়া তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো হোমিওপ্যাথি দাবী করে অনেক জটিল এবং কঠিন রোগের চিকিৎসাও হোমিওপ্যাথি করতে পারে। ১৯৮২ সালে আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পরিসংখ্যান নিয়ে দেখতে পায় বাজারে হৃদরোগ, কিডনী রোগ, এমনকি ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি-টোটকা বিক্রি হচ্ছে। টারানটুলা নামের এক বিষাক্ত মাকড়সার নির্যাস দিয়ে নাকি মাল্টিপল স্কোলেরোসিস নামের এক মস্তিষ্ক এবং শিড়দাঁড়ার রোগ সারানো যায়, কোবরার বিষ দিয়ে ক্যান্সার। বাংলাদেশের প্রতিদিনকার পত্রিকা খুললেই এই ধরণের বিজ্ঞাপন দেখা যাবে ভুরি ভুরি। ইন্টারনেট ঘেঁটে পেলাম বাংলাদেশে অটিজমের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির প্রচার করছে একটি সংগঠন।১১
ক্যান্সার রোগটির কথাই বিবেচনা করি। ক্যান্সার রোগটি ভয়াবহতার দিক দিয়ে এখন বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতি একটি রোগ। ক্যান্সার যত আগে ভাগে ধরা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায় ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা তত বাড়ে। ওহাইয়ো স্টেইট ইউনিভার্সিটির এক গবেষনায় দেখা গেছে জটিল ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার দুমাসের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা শতকরা ৮৫ ভাগ।১২ অ্যাপেল কোম্পানীর সিইও স্টিভ জবস জড়িবুটি এবং ব্যতিক্রমধর্মী ঔষধের সেবন করে তার রোগ সারাতে চেয়েছিলেন। নয়মাস এসব টোটকা সেবনের পর তার ক্যান্সার ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। জবসের শেষ পরিণতি তো আমাদের জানাই।
অটিজম সমস্যাটিও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সামাজিক ব্যবহারগত, ভাষাগত এবং অন্যান্য বিষয়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে অটিটিস্টিক শিশুদের সমস্যাগুলো সারতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে কিংবা সারার সম্ভাবনা চিরতরে দূরীভুত হয়। এইসব ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির মত টোটকা ব্যবহার করে শিশুটিকে সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা নষ্ট করে ফেলা রীতিমত অপরাধ।
“হোমিওপ্যাথির কোনো সাইড এফেক্ট নেই”
এই লেখাটির গ) টোটকাগুলো বড়জোড় “প্লাসিবো” অংশে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে যে হোমিওপ্যাথি টোটকাগুলো প্লাসিবো বা নকল ঔষধ। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই টোটকাগুলো কোনো রোগ সারায় না। সুতরাং যার কোনো এফেক্ট নেই তার সাইড এফেক্ট না থাকাই স্বাভাবিক।
“ভেষজ বা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী”
কিছু কিছু হোমিও টোটকা ভেষজ উপদান থেকে প্রস্তুত ঠিকই। কিন্তু Oscillococcinum নামের একটি টোটকা তৈরী হয় হাঁসের যকৃত থেকে, এক বিষাক্ত মাকড়সার নির্যাস দিয়ে প্রস্তুত করা হয় মাল্টিপল স্কোলেরোসিস নামের এক মস্তিষ্ক এবং শিড়দাঁড়ার রোগের টোটকা, কোবরার বিষ দিয়ে প্রস্তুত করা হয় ক্যান্সারের টোটকা। প্রাকৃতিক উপাদানের নাম যদি এগুলো সেবন করতে হয় তাহলে আপনি প্রস্তুত তো? হোমিওপ্যাথির তেমন কোনো সর্বজনগৃহীত স্ট্যান্ডার্ড নেই, এটা কোনো মান নিয়ন্ত্রন পদ্ধিতের মধ্যে দিয়েও যেতে হয় না। তাই ভেষজ আর প্রাকৃতিক উপাদানের নামে আসলে কি দেয়া হচ্ছে আপনারে সেটা জেনে রাখাই ভালো।
“অমূকের রোগ সেরে গেছে বা আমার ক্ষেত্রে কাজ করেছে”
প্লাসিবো বা নকল ঔষধের ধর্মটাই এরকম। মানুষের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী। তাই অনেক ক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেই রোগ সারিয়ে নিতে পারে। নকল ঔষধ শুধু ভরসাটুকু দেয়। কিন্তু ক্রমাগত পরীক্ষার পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে আসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যতটুক রোগ সারায় হোমিওপ্যাথি তার চেয়ে ভালো কিছু ফলাফল তৈরী করতে পারেনি। এ বিষয়ে লেখার ঘ) দূর্বল “গবেষণা” অংশটি দ্রষ্টব্য।
ছবি: বকবকাষুধ [সুত্র]
“কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না! বা কিছুদিন চেষ্টা করেই দেখি...”
ক্ষতির কারণগুলো আমি লেখার ঙ) বাঙ্গালীর ঘাড়ে হোমিওপ্যাথির ভুত চেপে বসা অংশে তুলে ধরেছি। ক্যান্সার, অটিজম, মাল্টিপল স্কোলেরিসিস ইত্যাদি রোগ গুলোর জন্য সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হোমিওপ্যাথির উপর নির্ভর করে কালক্ষেপন কেবল বিপদ বয়ে নিয়ে আসবে। তাছাড়া টাকা পয়সা খরচের ব্যাপার তো আছেই।
“আমেরিকা থেকে ঔষধ তৈরী হয়, তারা তো ঠিকই এটা ব্যবহার করে”
খোদ আমেরিকাতেই ভীষণ বাঁধার মুখে আছে হোমিওপ্যাথি। কিছু লোকের বিশাল ব্যবসা বন্ধ হবে বলে তারা জিইয়ে রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। আর আমেরিকার ভালো বিষয়গুলো গ্রহণ না করে আমাদের কেনো এই খারাপ জিনিসটি গ্রহণ করতে হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়।
এত বছর ধরে শিকড় গেঁড়ে বসা হোমিওপ্যাথি বাংলাদেশ থেকে রাতারাতি চলে যাবে না। বাংলাদেশ সরকার বা হোমিওপ্যাথি বোর্ড প্রথমে গবেষণা মূলক পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করতে পারে। সর্বজন স্বীকৃত অনপেক্ষ গবেষকদের মাধ্যমে সরকার যাচাই করতে পারে আসলেই হোমিওপ্যাথি কাজ করে কিনা। অথবা ইতিমধ্যে প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলো যাচাই করেও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
এরপর প্রথমে সরকারী হোমিও কলেজটিকে আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষায় রুপান্তরিত করতে হবে। পাশাপাশি জনগনকে এ বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। একই সাথে প্রাইভেট হোমিও চিকিৎসা শিক্ষা কেন্দ্র এবং হোমিওপ্যাথি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রন শুরু করতে হবে। সবশেষে ধীরে ধীরে সবগুলো হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্রকে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিনত করতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়ে আসতে হবে।
১৭০০ শতকের হিসেবে হ্যানেম্যানের উদ্দেশ্য মহৎ থাকলেও ২০০০ শতকে এসে আধুনিক বিজ্ঞান এবং চিকিৎসার সামনে হোমিওপ্যাথি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই মৃত এবং অকার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে যতদ্রুত আমরা নিজেদের মুক্ত করতে পারবো তত দ্রুত আমরা উন্নতর এবং স্বাস্থ্যকর জীবন শুরু করতে পারব। সুতরাং দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে হোমিওপ্যাথিকে এখনই না বলুন।
সুস্থ থাকুন।
১৭০০ শতকের যাদু টোনা এবং প্রচলিত কুচিকিৎসার বিরুদ্ধে হোমিওপ্যাথির উদ্ভব হলেও এর মূলনীতি তৈরী হয়েছে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া। হোমিওপ্যাথির দুটো মূলনীতি হচ্ছে একই ধরণের পদার্থের সুত্র এবং লঘুকরণের সুত্র। একই ধরণের পদার্থের সুত্র অনুযায়ী, যে পদার্থের উপস্থিতিতে একটি রোগের সুত্রপাত হয়েছে, সেই পদার্থের খুব অল্প পরিমান সেবনে সেই রোগটিকে সেরে যাবে। লঘুকরণের সুত্র অনুযায়ী, ঔষধের মাত্রা যত কম হবে তার প্রভাব তত বেশী হবে। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়েছে যে ঔষধের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে তার প্রভাব বাড়বে। প্রথম সুত্রটিরও বিজ্ঞান সম্মত কোনো প্রমান নেই।
টোটকা বানাবার জন্য হোমিওপ্যাথেরা প্রথমে বিভিন্ন ধরণের পদার্থ সেবন করেন। একটি পদার্থ যে উপসর্গের জন্ম দেয়, সেই উপসর্গের রোগ সারাতে হোমিওপ্যাথির নিয়ম অনুযায়ী পদার্থটির লঘুকৃত দ্রবণ সেবন করতে হবে। লঘুকরণের সুত্র অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক টোটকাগুলোকে অস্বাভাবিক রকমের পাতলা করা হয়। ৩০X টোটকা তৈরী করতে এক ফোঁটা মূল উপাদান ৫০ পৃথিবীর সমান পরিমান পানিতে গোলানোর সমতুল্য পরিমানে লঘু করা হয়। অথচ রসায়নের সুত্র অনুযায়ী এতে মূল পদার্থটির একটি অনুও থাকার কথা নয়।
উপরন্তু বিভিন্ন গবেষনায় বার বার প্রমানিত হয়েছে যে হোমিওপ্যাথি কোনো রোগ সারায় না। তারপরও আধুনিক চিকিৎসার অপ্রতুলতা, স্বল্প খরচ এবং নিয়ন্ত্রনের অভাবে বাংলাদেশের মত গরীব দেশে হোমিওপ্যাথি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। এর ফলাফল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর রোগের অপচিকিৎসা হচ্ছে এবং হোমিওপ্যাথির পিছনে লোকে অযথা খরচ করছে।
বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা হোমিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিয়ন্ত্রন করা এবং প্রথম সুযোগে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষায় পরিণত করা।
মন্তব্য
সেই রকম হৈছে লেখাটা। ধন্যবাদ।
থ্যাঙ্কিউ! কিন্তু এতো দ্রুত পড়লেন কিভাবে? নাকি...
সুপার রিডার !! ! ৭ মিনিটে এই লেখা পড়া শেষ???!!!!
ক্যামনে?!!!
আপনার বাবার চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আপনি রীতিমত হ্যানিম্যানের আবিস্কারের উপর পি এইচ ডি করে ফেলেছেন মনে হচ্ছে।হ্যানিম্যান মানুষের পীড়ার কষ্ট দুর করার জন্যে সমস্ত জীবন গবেষনা করে ব্যায় করেছেন। অভাব অনাটনে দিনাতিপাত করেছেন তবুও পিছপা হননি।আর আপনি দুই দিনে তার উপর দুইপাতা পড়ে তার সারা জীবনের গবেষনাকে মিথ্যা প্রমান করতে চাইছেন? যা ৩০০ বছর টিকে আছে।
আমাদের দেশে কিছু একটা লিখলেই বাহবা পাওয়া যায় কারন এটা নিয়ে কেউ ভাবেনা,লইক দিয়ে দেয়।
যাহোক বেশী কথা লিখবোনা বা সে সময়ও আমার হাতে নেই শুধু একটি বিষয় বলবো হ্যানিম্যান তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে নতুন একটি পদ্ধতি আবিস্কার করেছিলেন যাকে বাংলায় বলা হয় [পন্চাশ সহছ্রতম পদ্ধতি]এখানে পন্চাশ হাজার থেকে ঔষধের শক্তি শুরু হবে অর্থাৎএই ওষুধের মধ্যে মূল পদার্থের কোন অস্তিত্ব থাকবেনা থাকবে শুধু তার শক্তি।এই পদ্ধতি চালু হওয়াই হলো হোমিওপ্যাথির কাল,ঔষধ নির্মাতারা চিন্তা করলেন কোন গাছের পাতার এক ফোটা রস দ্বারা তৈরী ঔষধ লক্ষ গুন শক্তিশালী করে যদি হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা সম্ভব হয় তাহলে তো ঔষধ শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে,তাদের ব্যাবসা লাটে উঠবে।অতএব নিরুৎসাহিত করো অথবা ঠেকাও।সেকারনে হ্যানিম্যানের মৃত্যুর পর বিচ্ছিন্ন কিছু গবেষনা ছাড়া বিষেশ কিছুই হয়নি।আর হোমিওপ্যাথিরও মৃত্যু হবে এ্যান্টিবায়টিক বিষের ছোবলে।যতদুর জানা যায় যে আধুনিক গুটি বসন্তের টিকা হোমিওপ্যাথির সুত্র অনুযায়ী আবিস্কৃত।আমি সাধারনত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিইনা কারন ভালো চিকিৎসক নেই অ- মেধাবীদের হতে হোমিওপ্যাথি এখন বন্দী।তবে একবার আমার বুকের উপর একটি টিউমার হওয়ায় এবং দুই দুই বার একজন বড় ডাক্তার দ্বারা[এফ সি পি এস]অপারেশন করিয়েও যখন সমাধান হলোনা তখন একজন চিকিৎসক[যিনি মুলতঃ একজন এম বি বি এস একটি শিশু হাসপাতালে রোগী দেখতেন এবং বিকালে নিজস্ব চেম্বারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দিতেন কারন তিনি হোমিওপ্যাথিতে এম ডি ডিগ্রীধারী আমেরিকা থেকে]সেই হোমিও চিকিৎসায় আমি সেরে উঠেছি ৪ বছর আগে এবং বুকের ঠিক কোথায় টিউমারটি ছিলো এখন আর খুজে পাওয়া যায়না,সম্পূ্র্ন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।আপনাদের কাছে অনুরোধ এই পৃথিবীতে যারা মানুষের কল্যানে ব্যাক্তিগত সুখ সাচ্ছন্দ বিসর্যন দিয়ে কাজ করে গেছে তাদেরকে হেয় করবেন না তাদের একটি গুন থাকলেও ধন্যবাদ দিন এবং প্রচার করুন।ধন্যবাদ।
মিথ্যা হাজার বছর প্রচলিত থাকলেই কি? ☺ মিথ্যা সেটা মিথ্যাই,হ্যানিম্যানের হোমিওপ্যাথি নিয়ে পজেটিভ কিছু পরলেই..পাওয়া যায় ইহা চমৎকার ফলপ্রদ.. কিন্তু কেমন চমতকার তা আপনিও জানেন.. মিথ্যা যত দিন ই চাপা থাকুক.. ☺☺ উঠে আসবেই একদিন
জনাব,আপনি আপনার ধরণা বা অভিজ্ঞতা থেকে হোমিওপ্যাথি পছন্দ করেন না। বেশ ভা। তাতে দোষের কিছু নেই। আমার অভিজ্ঞতায় হোমিও ঔষধের দ্বারা অনেক কঠিন বিমারকে নিরাময় হতে দেখেছি। এতো অহমিকা ভালো নয় ভাই। আপনারটা নিয়ে আপনি থাকুন আর ওদেরকে ওদের মতো চলতে দিন না কেন? এ্যালোপ্যাথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চাকচিক্য। হোমিও অবহেলি। বর্তমান সময়ে এ্যালপ্যাথ বিপদজনক। এটা আপাততঃ প্রমাণিত হচ্ছে।
হাবীব ভাই আপনাকে অনুরোধ করবো হোমিওপ্যাথির উপর বিশ্বখ্যাত জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্সের এই তথ্যচিত্রটি দেখতে। আমার মনে হয় এই "চিকিৎসা"- পদ্ধতির মূলনীতি এবং অসারতা সম্পর্কে আপনার ধারনা আরো পরিস্কার হবে -
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
অহমিকা কোথায় দেখলেন? অনুগ্রহ করে ব্যক্তি আক্রমন না করে বরং যুক্তি সহকারে একটা লেখা প্রকাশ করুন সচলায়তনে।
হাপায়ে গেছি পড়তে পড়তে। বিশাল লেখা। কিন্তু দারুণ তথ্যবহুল। দরকার আছে চিকিৎসার নামে এইসব ফাত্রামি বন্ধ করার।
পড়তে পড়তে হাপায়ে গেলে ঝাপায়ে পইড়ে কয়েক ফোঁটা আর্নিকা ঘাপায়ে দেন। মনে পাবেন ফুর্তি, শইল্যে পাইবেন ষাঁড়ের ন্যায় শক্তি। তারপর কথা নয় মুখে মুখে, কথা হবে কোপে কোপে
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
হা হা হা...
facebook
এক গ্লাস ঠান্ডা ফানি দিলাম। ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
ভালো বিশ্লেষণ।সবার জানা দরকার।শেয়ার দিলাম।
লেখার ভেতরে সংখ্যায় দেয়া লিঙ্কগুলো ক্লিক করলে এই লেখা-ই ফেরত আসছে।লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
-রিয়াজ
সংখ্যাগুলো লেখার ফুটনোটে দ্রষ্টব্য। আইডিয়ালী সংখ্যায় ক্লিক করলে ফুটনোট নিয়ে আসার কথা। এমনটা না হলে জানাবেন।
দারুণ পোস্ট!
হ্যানেম্যানের লঘুকরণ নিয়ে অদ্ভুত বিশ্বাসের কারণটা কল্পনা করা সম্ভব। সেই ১৭০০ সালে পদার্থের “অণু-পরমাণু” তত্বটা তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ছোটবেলায় "পলিপাস" এর ক্ষপ্পরে পড়ে আমিও অনেক হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়েছি। দেশে হোমিওপ্যাথির বিস্তারের সঙ্গে ধর্মীয়গোড়ামিরও কীভাবে যেন যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। "অ্যালোপ্যাথিক" ওষুধকে অনেকেই বেদাত জ্ঞান করে। যদিও চিনি ছাড়া বাকি যে উপাদানটির রেশ হোমিওপ্যাথিক ওষুধে পাওয়া যায় তার সাথে কেরু কোম্পানির বিশেষ যোগসূত্র আছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্ন না করতে চর্চা করানো হয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। চিন্তা ভাবনা কোরোনা, প্রশ্ন কোরোনা। শুধু মুখস্ত করো আর শিক্ষক যা বলছে বিনা প্রশ্নে মেনে নাও। এই করে করে আমাদের এই দুর্গতি।
লেখার শুরুতে যে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, আমিও অনুরূপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ছাত্রজীবনে যখন দেব-দ্বিজে প্রবল ভক্তি, তখন হোমিওপ্যাথিতেও তীব্র ভক্তিমান ছিলাম। (বাড়ি থেকে সমস্ত মূল ধারার ওষুধ বিদায় করে দিয়েছিলাম। এখনো জননী হাসাহাসি করেন তাই নিয়ে।) বড় হতে হতে সেই দশা-টা কেটে যায়। কিন্তু নিজের সন্তানের জন্য যখন কোন চিকিৎসাই কাজ করছিল না, তখন হোমিওপ্যাথির আশ্রয় নিয়েছি। কাজ হয় নি, আবার মূল ধারার চিকিৎসায় ফিরে গেছি। একসময় সে মূল ধারার চিকিৎসাতেই সেরে উঠেছে। ধীরে, ধীরে যুক্তি-গ্রাহ্য না হলে সেই পথে হাঁটা নেই - যত এই চলন-এ লেগে থাকতে শিখেছি, হোমিওপ্যাথি থেকে তত দূরে সরেছি। নিজের জন্য বহুকাল-ই এই প্যাথি আমি মান্য করি না। মুস্কিল হয়ে যায় প্রিয়জনেরা যখন এর প্রভাবে (আমার যুক্তিতে প্লাসিবো প্রভাবে) নিজেরা ভালো আছেন, ভালো হচ্ছেন বলে দাবী করতে থাকেন, তখন অনেক সময়-ই বহু বোঝানোর পর-ও অসহায় দর্শক হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে মূল ধারার চিকিৎসার খরচ। দেশ-এ থাকা আত্মজনেরা যখন সেই কারণে হোমিওপ্যাথির উপর নির্ভর করেন, সেই কারণেও খানিকটা জোরাজুরীর পর একসময় চুপ করে যেতে হয়। এক অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা হবার কারণে যে জোর নিয়ে নিজে চলতে পারি, তাদের সেটার শরিক করে তুলতে পারি না। যেন এক নি:স্ব বিষণ্ণতায় মন আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
প্রিয়জনের অসুখের সময় যুক্তিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে সবরকম চেষ্টা মানুষ কেনো করে সেটা আমি বুঝি। এর উর্ধ্বে আমিও বোধহয় উঠতে পারবো না। তবে সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি যদি সেবন করেও থাকেন, মূল ধারার ঔষধ ছেড়ে দিয়েন না।
আপনাকেও ধইন্যা।
দারুণ পোস্ট। জেমস র্যান্ডির একটা ভিডিও ইউটিউবে আছে হোমিওপ্যাথ সম্পর্কে। ২৩x পাওয়ারের ওষুধে পুরো বোতলে ১টা অণু থাকে, বাকিটা পানি। ২৪x পাওয়ার মানে ১০টা প্যাকেট কিনলে একটা ওষুধের অণু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যত বেশি পানি, ওষুধ তত বেশি শক্তিশালি ।
আমি তো জানতাম ২৪এক্সে এক অনু।
অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ, মাহবুব ভাই কে
এটা এখন হু হু করে বাড়ছে। কোনধরনের পড়াশোনা না করেই এই ডিগ্রীর সহজলভ্যতা কর্মহীন মানুষদের এই পেশায় টেনে আনছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে সু-শিক্ষাই পারে এই অন্ধবিশ্বাস থেকে আমাদের উত্তরণ।
পাশাপাশি প্রয়োজন হবে সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি করা।
- ছায়াবৃত্ত
একমত। পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
দারুন লেখা। খুব অভাব বোধ করছিলাম এইটার।
এখন তো অনেক হোমিও ডাঃ দেখি স্টেথোস্কোপ আর অন্যান্য বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বসেন। অনেকে রক্ত পরীক্ষাও করতে দেন। ব্যাপারটা অনেকটা জগাখিচুরি মার্কা ডাক্তারীর পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আমার ধারনা শুধু হোমিওপ্যাথ-রা যতটা না ক্ষতি করছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে এলোপেথিক ঔষধের যতেচ্ছ ব্যবহার। প্রতিটা ঔষধের দোকানদারই একেক জন ডাক্তার, নির্দিধায় এন্টিবায়োটিক, ব্যাথার ঔষধ দেদারসে দিয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ।
এইখানে আলোচনা হচ্ছে একটা বিষয় বিজ্ঞানভিত্তিক কিনা সেটার ওপরে। কোথায় কে এটা আশ্রয় করে কী করলো সেটার ওপর নয়। আর আপনি খুব সহজে বলে দিলেন হোমিওপ্যাথির চেয়ে এ্যালোপ্যাথিতে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। এই ক্যালকুলেশন করার সময় এ্যালোপ্যাথি কয়টা মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে সেটা হিসেবে নিয়েছেন?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই,
"আমার ধারনা শুধু হোমিওপ্যাথ-রা যতটা না ক্ষতি করছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে এলোপেথিক ঔষধের যথেচ্ছ ব্যবহার"(এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলেছিলাম) এটা এই অর্থে বলিনাই যে
"হোমিওপ্যাথির চেয়ে এ্যালোপ্যাথিতে ক্ষতি বেশি হচ্ছে"। দুইটা লাইন একি কিনা বুঝতে পারছিনা।
আজই একটা রিপোর্ট দেখুন "প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রির উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সঙ্গে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে, ৮৭% ঔষধ বিক্রি হয় প্রেসক্রিপশন ছাড়া।" [url=বাংলানিউজ লিংক]http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=7d4b116c9ae63f1a2633cc4397b40aaf&nttl=13092013223851[/url]
আমি কিন্তু হোমিওপ্যাথিকে জাস্টিফাই করার জন্য বলিনাই কথাটা। তবে মনে হচ্ছে একটা বিষয়ে আলোচনার বিপরীতে আরেকটা বিষয়ের অবতারণা করেই ভুলটা করেছি।
লেখাটির পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মূল ধারাঔষধের যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য ঔষধটি দায়ী নয়, দায়ী মানুষ। এই প্রসঙ্গটির সাথে এই মন্তব্যটির কোনো যোগসুত্র নেই।
মজার ব্যাপার হলো জার্মানিতে হোমিওপ্যাথি বহাল তবিয়তে টিকে আছে। এসব জায়গায় পানিপড়া, গোলগোল লজেন্স ছাড়াও আয়ুর্বেদিক জিনিসপত্র বিক্রয় হয়। এখানে আয়ুর্বেদিক ঔষধকেও হোমিওপ্যাথির মধ্যে ফেলে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এটা কিন্তু খুব স্বল্প খরচে বিপুল পরিমান আয়ের একটি উৎস। বিকল্প ধারার আরো কিছু চিকিৎসা আছে। অ্যাকুপাংচার, কাইরোপ্র্যাকটিক, আমেরিকার ন্যাটিভ ইন্ডিয়ান সওনা ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু। মানুষ একটা বয়সের পর গিয়ে কেয়ার চায়, নিজের বুড়িয়ে যাওয়া নিয়ে মনোকষ্টে ভুগতে থাকে। বিকল্প ধারার ভুয়া চিকিৎসা তাই চিরকাল টিকে থাকবে হয়ত।
চমৎকার লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞতা।
অটঃ স্যুডোসাইয়েন্স কে ছদ্মবিজ্ঞান পরিভাষা করা হয় মনে হয়।
অনেক ধন্যবাদ। আপনার পরিভাষাটি সঠিক। গাঁজা বিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেছি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি মনে রাখার মত শব্দ হিসেবে। অপবিজ্ঞানও বলেছি শব্দটাকে। তবে সেটাকে ছদ্মবিজ্ঞান বললে যুৎসই হতো। শুধরে নিবো।
হ্যাটস অফ। অসাধারণ লেখা। অনেক বিশাল হলেও পড়া উচিৎ সবারই।
"Drugs are nothing but poison with some good side effect !!!" (বক্তার নাম ভুলে গেছি) যে দেশের মানুষ তার পরও টেকাটুকা খরচ করে হলেও কিছু হলেই ঔষধ খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়, তারা "সাইড এফেক্ট নাই " এমন ঔষধ খাবে না কেন?!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার কোট করা অংশটি একটু বেশী জেনেরিক হয়ে গেলো মনে হয়। আধুনক ড্রাগ গুলো কি পরিমান ইফেক্টিভ সেটা জানলে কোট করা অংশটি ভুল মনে হবে।
নিঃসন্দেহে ড্রাগ অনেক প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। ইন ফ্যাক্ট আমি নিজেও হাসপাতালে পেশেন্টদের ড্রাগ দেই,তবে চেষ্টা করি যত কম দেয়া যায়। হ্যা,এখন অনেক স্পেসিফিক এফেক্ট এর ড্রাগ আছে। তারপরও যখন দেখি মেকানিক্যাল পেইনের কারণেও ড্রাগ এর যথেচ্ছা ব্যাবহার,তখন অসহায় লাগে,কারণ মাঝে মাঝে ঔষধ সাজেস্ট না করলে পেশেন্ট অখুশি হয়।(ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা)
তবে এটাও সত্য যে অনেক ক্ষেত্রেই ড্রাগ ইউজের বিকল্প নেই।
হোমিওপ্যাথির জন্ম, ইতিহাস ও 'কর্মপদ্ধতি' নিয়ে খুব অসাধারণ ও উইটি একটা ভিডিও।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভিডিওটি দেখছি। অনেকদিন তোমার লেখা পাইনা।
দারুন লেখা!
হোমিওপ্যাথি নিয়ে একটা অসুবিধায় পড়তে হয় আমাকে মাঝে মধ্যে। গুরুজনস্থানীয় কিছু আত্নীয়-পরিচিত আছেন যারা কোন অসুখবিসুখ হলেই আমাকে "হোমিওপ্যাথি" দেখানোর পরামর্শ দিয়ে এমন নাছোড়বান্দার মত আমড়াগাছি করেন যে বড়ই অসুবিধা হয়। তাদের মুখের উপর হোমিও যে কত রাবিশ সেকথা ঠোঁট-কাটার মত বলে তাদের মনে আঘাত দেওয়া আমার জন্য কঠিন, অথচ মিনমিন করে 'বিশ্বাস করি না' বললেও বিপদ। তখন তারা আমাকে 'বিশ্বাস করানোর' জন্য এলোপ্যাথি ছেড়ে হোমিওপ্যাথিতে তাদের চেনা কত লোক সেরে গেছে সেইসব শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়া বিজ্ঞানবিবর্জিত কাহিনির উদাহরণ নিয়ে বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন। এইসব ক্ষেত্রেও পালটা যুক্তি দিয়ে তর্ক করে পরিবেশ তিক্ত করতে ইচ্ছা করে না, কারন ততক্ষণে পরিষ্কার হয়ে যায় যে এখানে আসলে যুক্তিবুদ্ধির চেয়ে অনেক সময় ধর্মীয় আবেগ বা গোঁড়ামির মত কিছু একটা কাজ করছে। তাই মুখ বুঁজে স্রেফ ভদ্রতাসূচক হাসি দিতে দিতে প্রসঙ্গ শেষ হওয়ার জন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয় মনে হয়। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এইসব অপবৈজ্ঞানিক মাদক-বিভ্রান্তি শুধু দরিদ্র বা স্বল্প-শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না - সমাজের অনেক 'অত্যুচ্চ' শিক্ষিত, এমনকি বিজ্ঞানের কোন ডিসিপ্লিনে শিক্ষিত, মানুষজনের মধ্যেও এটা আছে। আমার এরকম পরিচিতদের মধ্যে দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির অতি সিনিয়র অধ্যাপক থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার, আমলা অনেকেই আছেন।
---------------------------------------
'হামদর্দ' বোধহয় মূলত 'ইউনানী' ঔষধ প্রস্তুতকারক, 'হোমিওপ্যাথিক' না। তবে ব্যাবসা বাড়ানোর জন্য এখন হোমিওপ্যাথিকও ধরেছে কিনা নিশ্চিত না।
****************************************
মুখের উপর কথা বলি বলে আমি অনেক অনেক বন্ধু হারিয়েছি। এখনও হারাই। কথা বলাই বন্ধ করে দিবো ভাবছি।
ধরা খাওয়ায় দিলেন। হোমিওপ্যাথি নিলে লেখার আয়োজন কর্তেছিলাম। হোমিওপ্যাথি পূর্ববর্তী একটা লেখা প্রায় শেষ করে ফেলছিলাম। আপনে লিখ্যা ফালাইলেন। আপনে দুষ্টু
কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে হোমিপ্যাথির অপবিজ্ঞান বন্ধ হওয়া উচিত। দ্রুত। পৃথিবীব্যপী।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এ বিষয়ে একাধিক লেখায় প্রয়োজন রয়েছে। কিছুদিন বাদে তোমার লেখা দিও। কিছু মানুষের ভুল ভাঙ্গলেও অনেক লাভ।
হোমিওপ্যাথেটিক কার্টুনটা অসাধারন।
যাই হোক-
পানি পড়া, তেল পড়া, ডিম পড়া, গুড় পড়া
হাত চালান, বাটি চালান, চটি চালান, ক্ষুর চালান
তাবিজ, কবচ, তাগা, মাদুলি
ঝাড়ফুক, দোয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি
এই সকল মহা কার্যকরী পদ্ধতিরও সরকারি স্বীকৃতি অতীব জরুরী!
অনেক আগে ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ডের কাছে কিছু সাইনবোর্ড দেখা যেত " এইখানে এলেম দ্বারা চোর ধরা হয়"। উপযুক্ত স্বীকৃতি এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই এলেমদার ব্যাক্তিদের এখন আর দেখা যায় না।
আসলেই বাটি চালান, পানি পড়া আমেরিকায় আমদানী করলে ভালো পয়সা আয় করা যেতো।
অত্যন্ত চমৎকার আর কাজের একটি লেখা। মন্তব্যে একজন বললেন, বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি এখন আসলে হোমিও আর এলোপ্যাথি একটা জগাখিচুড়ি---এটা আমার কাছেও মনে হয়েছে।
অট: পোলেন এর বাংলা কিঞ্জল নাকি? বাহ!
হুঁ পোলেন হচ্ছে কিঞ্জল। হোমিওপ্যাথি যদি আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার করতে চায় তাহলে সেটা তাদের নীতিগত দিক দিয়ে হাস্যকর হলেও, রোগীদের কথা বিবেচনা করলে সেটা ভালো। হোমিওপ্যাথি চর্চাকারী যখন তাদের সমস্যা বুঝতে পেরে হোমিওপ্যাথির নৌকা থেকে একপা মূল ধারার চিকিৎসা দিয়েছেন, তখন তাকে উদ্বুদ্ধ করতে পুরো পুরি প্রচলিত ধারার চিকিৎসা চর্চা করতে।
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির প্রাদুর্ভাব নিয়ে যে কারণগুলি লিখেছেন, তার সঙ্গে আর একটা কারণ যোগ করা যায় বলে মনে হয়, মোর্শেদ ভাই। বাংলাদেশে আমাদের আগের জেনারেশনে প্রায় ঘরে ঘরে হোমিওপ্যাথি প্রাকটিসের ঝোঁক দেখা যেত। একজন চাকুরীজীবী মনে করতেন, অবসর সময়টা তো হোমিওপ্যাথির প্র্যাকটিস করে কাটানো যায়, অতিরিক্ত আয়ও হয়, সঙ্গে মানব কল্যাণ রয়েছে, যা করে সৃষ্টিকর্তাকেও খুশী করা যায়।
এমনকি গৃহিণীদের মধ্যেও এমন ঝোঁক দেখা যেত, এখনও যায়। কোন বিএ পাস করা শিক্ষিত গৃহিনী হয়ত মনে করছেন, কিছুই তো করা হল না এই জীবনে ঘরের চার-দেয়ালে কাটিয়ে দেয়া ছাড়া; তো শিক্ষাকে কাজে লাগানোর জন্য তখন তারা হয় আইন, না হয় হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিসের দিকে ঝুঁকে পড়েন। একটি এলাকায় দেখেছি, হোমিওপ্যাথির চেম্বার চালাচ্ছেন একজন মহিলা ডাক্তার, এবং তার সাফল্য এতটাই ছিল যে, ঠিক তার উল্টো দিকে আর একজন মহিলাও চেম্বার খুলে মনের সুখে হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করছেন!
হোমিওপ্যাথির ভুত সহজে যাবে না, বিশ্বাস এমন চরমে পৌঁছেছে যে, এলোপ্যাথি রোগকে জটিল করে, সারাতে পারে না, বরং হোমিওপ্যাথির মত একটি প্রাকৃতিক (এবং ঈশ্বর আশির্বাদপুস্ট বটে!) দাওয়াইয়ের শরণাপন্ন না হওয়াটা চরম বোকামি!!!
হোমিওপ্যাথির মিথ দূর করতে মোর্শেদ ভাই, আপনাদের এই লেখাগুলো খুব কাজে দেবে।
ঠিক। আপনার কারনটি আমার মাথায় আসেনি। অনেক ধন্যবাদ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য।
দারুণ লেখা, পাওয়ারের ভণ্ডামি টুকু ছাড়া কিছুই জানতাম না।
মুর্শেদ ভাই, মফঃস্বলে ডিগ্রীধারী মানুষের হাতে সময় থাকলেই হয় ইভনিং ল কলেজে আইন পড়ে উকিল সাজে, নয়ত ৪৬ কলেজের একটাতে ভর্তি হয়ে ডাক্তার সাজে। পাড়া-মহল্লায় এত বেশি হোমিওপ্যাথ পাবেন যে এদের উচ্ছেদ করা দুরহ। অর্থনৈতিক কারনেই এদের হাতি দিয়ে ঠেলেও সরানো যাবে না। একটা বিশাল অংশের মানুষ (রোগী হিসেবে) প্রায় ধর্মবিশ্বাসের মত এই বিদ্যা গ্রহন করেছে। এদের হটানো হেফাজত জটিলতার মত ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।
তবে আস্তে হোক আর জোরে হোক, কাজটা করতেই হবে... কিভাবে জানিনা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একমত। জন সচেতনতা বাড়াতে হবে। লোকজনকে জানাবেন আপনার সাধ্যমত। এ বিষয়ে কথা বার্তা বললেন। প্রশ্ন করতে শেখাবেন মানুষকে।
অনেক কিছু জানলাম! লঘুকরন সূত্র পড়ে তো ব্যপক মজা পাইছি
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি তিনটে বিজ্ঞানের নাম বলতে পারি, যেগুলো প্রমান করা যায়না কিন্তু সর্বদাই সত্য। হোমিওপ্যাথি, জ্যোতিষবিদ্যা আর মার্কসবাদ।
এখনকার সামাজিক বিজ্ঞানের অনেকগুলো ধারণাই সরাসরি মার্ক্সের কাজের ওপর নির্ভরশীল। আরেকটু পড়ালেখা করেন। পড়ালেখায় লস নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মার্কসবাদ নিয়ে আমার জ্ঞান নেই। তবে যতটুকু মনে হয় মার্কসবাদ বিজ্ঞানের কোনো বিষয় নয় যে এসপার ওসপার সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। আমার সামান্য জ্ঞানে এতে কিছু ভালো বিষয় আছে মনে হয়েছে।
@অজয় রাউত
কিভাবে???
চমৎকার লেখা। বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষদের মধ্যে হোমিওপ্যাথি ব্যবহারের আর একটি অন্যতম কারন হল এটা নাকি সস্তা। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারের অভাব আর একটা কারন। আমার নিজের এক আত্নীয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি "হোমিওপ্যাথি সস্তা" এই কথাটা স্রেফ মিথ। ক্যান্সারের মত অসুখের চিকিৎসার কথা বলে আক্ষরিক অর্থেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতে দেখেছি সেই আত্নীয়ের কাছে থেকে।
হোমিওপ্যাথির অসাড়তা নিয়ে আগ্রহীরা বিবিসি হরাইজনের Homeopathy: The Test নামের এই ডকুমেন্টারীটা দেখতে পারেন।
আরো একটা বিষয় হল, গ্রামে-গঞ্জে-মফস্বলে কাঠমোল্লারা একটা কথা বলে বেড়ায় যে হ্যানিম্যান নাকি মুসলমান হয়েছিল, সেই কারনে ইহুদি-নাসারারা তার হোমিওপ্যাথিকে জাতে উঠতে দেয় না!
--সাদাচোখ
sad_1971এটymailডটcom
হানেম্যান মুসলমান হয়েছিলো? বাহ হেফাজতে হোমিওপ্যাথি!
হুম্ম, মোহাম্মদ ইস্মাইল হানিমান আল মাগেয়ার।
ছোটবেলায় আরেকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরত, যে রোগ নিয়েই লোকে যাক না কেন, একই চিনির গুঁড়া দেয় কেন? অত ছোট বয়সে খেয়াল করিনি যে ঐ গুঁড়ার উপর কয়েকফোঁটা পানি (!) দেয়া হত ছোট শিশি থেকে।
দুই একবার জিভের উপর সরাসরি দুই-এক ফোঁটা ঔষধও দেয়া হত।
শিশুবেলা থেকেই হোমিওর প্রতি আমার ব্যপক আগ্রহ। এলোপ্যাথ এর তিতকুটে ঔষধের বিপরিতে এইটাতো অমৃত। আমার পরিচিত এক ভাই ছিলেন হোমিও ডাক্তার। রোজ স্কুলে যাবার সময় এক শিশি ভর্তি মিস্টি দানা দিতেন তিনি। পরেরদিন বোতল ফেরত দিলেই হতো।
বড় হবার পর অনেকের মতোই আমারো হোমিও ভালোবাসা কমে যায়। কিন্তু বার বার এর কাছে ফিরে যেতে হয়েছে। আমার একমাত্র ভাই নিরাময় অযোগ্য মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন একবার। তখন গিয়েছি। সেইসময় অবশ্য হেনো কোন চিকিৎসা নেই যা নেয়া হয়নি। টোটকা-তাবিজ পর্যন্ত নিয়েছি। এটা ছিলো ডুবে যাবার সময় খড়কুটো আকড়ে ধরার মতো। যে কোন ভাবে উদ্ধার পেতে চাই। সবকিছুই করা হচ্ছিল। সাথে এলোপ্যাথি বা মূল চিকিৎসা চালানো হয়। তিনি শেষপর্যন্ত সুস্থ হন। কেমন করে সুস্থ হলেন সেটা জানি না। কারণ ডাক্তারও বলতে পারেননি ঘটনাটা কেমন করে ঘটলো। দেশের নামকরা একজন চিকিৎসক, উনার নাম আব্দুল খালিক। ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। বুড়ো। তিনি সর্বশেষ চিকিৎসা দিয়েছিলেন। সুস্থ্য হবার পর তিনি নিজেই অবাক। কারণ তিনি আশা করেননি এই রোগ সারবে অথবা রোগী বাঁচবে!!! তাই বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইনি।
বাবাইর জন্মের পর, বাচ্চাদের যেমনটা হয়, ওরও হতে থাকলো। ঠান্ডা লাগার বাতিক ওর। অল্পতেই টনসিল সমস্যা হতো। আম্মা-আব্বা চাইতেন হোমিও দিতে। আমি সেদিকে যাইনি। কিন্তু আমার দুই ভাতিজা ১০০ ভাগ হোমিওপ্যাথ নির্ভর।
আব্বার হঠাৎ করে অসুখে ধরলো। শেষ ৬/৭ মাস আসলে উনি অসুস্থ ছিলেন। তখন আমাদের রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ, যিনি সপ্তাহে ৫ দিন রোগী দেখেন, তার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি ওষুধ দিলেন। মূল ঔষধের সাথে হোমিও চললো।
বলতে গেলে আসলে শেষ হবে না। দেশে প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি গ্রামে, বাজারে হোমিও ডাক্তার, ফার্মেসী পাওয়া যায়। সেখানে লাইন ধরে মানুষ চিকিৎসা নেয়। টোটকা হোক আর অপবিজ্ঞানই হোক, মানুষ এর উপর নির্ভর করছে। কিছুটা নিশ্চয় ফল লাভ করছে। তাই জোর গলায় এর বিপক্ষে কিছু বলতেও পারি না। পরিচিতদের সাথে এলোপ্যাথ চালিয়ে যাবার পরামর্শ দিতে পারি শুধু। এই যেমন আজকে আমি নিজেই এটা করলাম। গতকাল বিছনাকান্দি অতি রূপবান এক যায়গায় ছিলাম। পাথকে পা ফসকে পড়ে গেলাম একবার। ডানদিকের পাজড় বিরাট ঝাকুনি খেলো। দমবন্ধ হয়ে কয়েক মিনিট পড়ে ছিলাম। পরিচিত ডাক্তার পেইনকিলার দিয়েছিলেন, রাতে সেটা খেয়ে ঘুম দিলাম। আমার এক বন্ধু ঘটনা শুনেই এক শিশি আর্নিকা নিয়ে হাজির। দুই ফুটা গিলে খুপড়িতে বসে বসে সচল পড়ি, আর ফেসবুক গুতাই। বিকাল ৫ টায় এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারে যাবো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার লেখাটা হালকার উপরে ঝাঁপসা পড়লাম। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলো বুঝে নাকি না বুঝে করা হয়েছিলো সেটার প্রশ্ন রয়েই যায়। -- একটা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে তারপর সেটার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করলে সুক্ষ্ণ খুঁটিনাটি ভুলগুলো এড়ানো যায়। বেশ কিছুদিন আগে একজন প্লাসিবো এবং আরো একই ধরণের বিষয় নিয়ে এরকম একটা লেখা দিয়েছিলো। সেটার উত্তরটা এখানে পুরাপুরি খাপে খাপ না হলেও কাছাকাছি -- ওটাই কপি পেস্ট করে দিলাম
সকলের বডি কেমিস্ট্রি এক না হওয়া সত্বেও সকলকেই ছোটকালে টিকা নিতে হয় কেন? এটা সারা পৃথিবীব্যাপী একটা বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। ধরুন, আপনি নিশ্চিত হলেন তামার যে রেডিয়েশন বা ওয়েভ লেন্থ সেটার প্রভাবে বাঁতের ব্যাথা ভাল হয় (যেভাবে অন্য মেটালের প্রভাবে অসুখ হয় এটা সেই একই পদ্ধতি)। কিন্তু এই সংক্রান্ত গবেষণা কি পুঁজিবাদী বিশ্বে কখনো কোথাও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। তামার তারেই যদি কিছু ব্যাথা ভাল হয় তাহলে মাল্টি মিলিয়ন ডলারের কিছু ঔষধ মুখ থুবড়ে পড়বে না? সেটা কি হতে দেয়া যায়?
আমার বাবার পাইলস ভাল হয়ে যেত যদি মুক্তা বসানো রূপার আংটি পরতো। পরীক্ষিত। কিন্তু এটা সকলের বডিতে একই উপায়ে কাজ করবে এটা নিশ্চয়ই বিজ্ঞানসম্মত না -- কারণ বডিতে আরও অনেক ভেরিয়েবল আছে। আমার বাবা বারডেমের রিসার্চ পেশেন্ট ছিলেন। ওনার মূত্রগ্রন্থির সমস্যার কারণে স্বাভাবিক টেস্টের বাইরে আরো ১০ গুন টেস্ট করতে দিত -- তবে সেগুলো সাবসিডাইজড (রিসার্চ ফান্ড থেকে)। ফলে একই খরচে বেশি পরীক্ষা নীরিক্ষা হত। তো বাবা একবার রোগের কষ্ট সইতে না পেরে গেলেন সেই অপবিদ্যা হামদর্দে। সেখানে কী জানি একটা জোলাপ দিয়েছিলো। খাওয়ার পর সমস্ত রোগ কমে গেল। এরপর বারডেমের রিসার্চের পরীক্ষার ফলাফলেও ইমপ্রুভমেন্ট দেখে ওনার খাদ্যাভাস সহ জীবনযাত্রার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে গবেষকগণ খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলো (বলাই বাহুল্য হামদর্দের জোলাপ খাওয়ার বিষয়টা আব্বা চেপে গিয়েছিলেন )।
যা হোক আরেকটা আগের লেখা যোগ করে দেই:
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শামীম ভাই,
শুধু একটা কথাই বলি, গ্রামে গঞ্জে এখন অনেক মানুষ হুজুরের পানিপড়া, তাবিজ কবচ আর ঝাড়-ফুকেই কিন্তু সুস্থ হয়ে যায়। এটা সেই পানিপড়া, তাবিজ কবচ আর ঝাড়-ফুকের গুণ না, এটা অজ্ঞতার ফল।
বিষয়টা ঠিক বুঝি নাই। তামার রেডিয়েশন বা ওয়েভ লেন্থ জিনিশটা কি? এই বিষয়ে কি কোন গ্রহনযোগ্য রেফারেন্স দিতে পারেন?
--সাদা চোখ
sad_1971এটymailডটcom
নাহ্ কোনো গ্রহণযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য রেফারেন্স দিতে পারবো না। তবে কেমিস্ট্রিতে পড়েছিলাম যে তামার তামাটে রং হওয়ার পেছনে দায়ী এর পরমানুর এক শেল থেকে আরেক শেলে লাফিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রন থেকে যে টুকু এনার্জি রিলিজ হয় সেটার ওয়েভলেন্থের কারণে। তামা, নিকেল এগুলোতে হাফ শেল ফুল শেলের ভেজাল ছিলো। তামাতে 3d9, 4S2 এর বদলে 3d10, 4S1 ডিস্ট্রিবিউশন হয়।
প্রতিটা বস্তু থেকেই এরকম কিছু তরঙ্গ বের হয় (রেফারেন্স নাই -- সাধারণ আইডিয়া; কঠিন খোঁজাখুজি করলে রেফারেন্স বের হতেও পারে!)। শরীরের একটা নিজস্ব ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বৈশিষ্ট আছে --- সেটার সাথে সেই নির্দিষ্ট ধাতুর চারপাশের ফিল্ড প্রভাব বিস্তার করতেই পারে। ধরেন https://apps.who.int/inf-fs/en/fact182.html এই লিংকে কথাবার্তাগুলো হোমিওপ্যাথি তথা গাঁজাবিজ্ঞান না বলেই মনে হল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
পরমানু এনার্জি রিলিজের সাথে কিভাবে "তামার রেডিয়েশন" জড়িত বুঝিয়ে বলেন কাইন্ডলি। এবিষয়ে আপনার সব জ্ঞানই দেখছি "হালকার উপর ঝাপসা"! আমি রেডিয়েশন আর ন্যাচারালি অকারিং রেডিও অ্যাকটিভ ম্যাটেরিয়ালের তালিকা ঘেটে বের করতে পারলাম না যে তামার রেডিয়েশন আছে। অনুগ্রহ করে ভালো করে পড়ে জবাব দেবেন, "হালকার উপর ঝাপসা" না।
শামীম ভাই আপনি যে লিংকটা দিয়েছেন সেটা পড়ে দেখেছেন? লেখাটি মানুষের শরীরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইফেক্ট কিরকম প্রভাব ফেলে তার উপর লেখা। আমার বাসার কাছ দিয়ে ~৩১২ কিলো ভোল্টের বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন গেছে। তাই এটার প্রভাব কিরকম হতে পারে বাসা কেনার আগে সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছি। একটা ইএমএফ মিটার কিনে রিডিং নিয়ে দেখেছি। একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে ইএমফ ক্যান্সার তৈরী করতে পারে। আপনার লিংকটি সে বিষয়ে আলাপ করে। শেষ লাইনটি দেখুন।
যে তামার কথা বললেন তাতে যদি ইলেক্ট্রিসিট বা ম্যাগনেটিক প্রোপার্টি না থাকে থাকে তাহলে সেটা থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিভ প্রতিক্রিয়া কিভাবে আসবে?
সব কিছুকেই লিটারেলি নিচ্ছেন! তামা যে রেডিও অ্যাকটিভ মেটাল না সেটা ঐ তালিকার লিংক প্রদানের আগে থেকে আমিও জানি - এ বিষয়ে (=আমি জানি) নিশ্চয়ই আপনারও সন্দেহ নাই। আমার যদি বুঝতে ভুল না হয়, তাহলে ভিজিবল লাইটকেও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বলা হয়। আপনার দেয়া লিংকেই এসব বলা আছে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Electromagnetic_spectrum
তামা থেকে তামাটে রং প্রতিফলিত হয়। কেন কিভাবে সাদা লাইট পড়লে বাকী ওয়েভলেন্থগুলো শোষিত হয়ে খালি একটা পার্টিকুলার রঙ প্রতিফলিত হয় সেগুলো না হয় আমার "হালকার উপর ঝাঁপসা" জানার বাইরেই থাকলো। কিন্তু সেই প্রতিফলিত তরঙ্গটাও কিন্তু ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের সংজ্ঞার ভেতরেই আছে
আপনি যেই লাইনটা কোট করেছেন ঠিক তার আগের লাইনেই বলা আছে:
শেষের একটা অংশ বোল্ড করে দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।
পসিবিলিটিগুলোকে এক্সপ্লোর করার আগেই বন্ধ করে দেয়াটাও মনে হয় খুব একটা ভাল জিনিষ না। এটা রেডিয়েশনের পসিবিলিটির কথা বলছি না। বিভিন্ন পদার্থের উপস্থিতিতে সেটা কেমিকেল বিক্রিয়া হোক বা ক্যাটালাইসিস হোক শরীরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া কিভাবে হয় সেটা কিন্তু অনেক এক্সপ্লোরেশনের সুযোগ আছে।
তবে তামার তারে ব্যাথা সারা -- এটাকে সত্য হিসেবে ধরে (=হাইপোথেসিস) নিয়ে সেইরকম বড় পরিসরে গবেষণা করার সুযোগ নাই --- কারণ পূঁজিবাদ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
পুঁজিবাদের কবলে পড়ে টাকার অভাবে কত যে গবেষণা দিনের আলোর মুখ দেখলো না! এই যেমন, কমোড ফ্লাশ করার মাধ্যমে ফ্রী ইন্টারনেট সার্ভিস (TiSP) - আহা!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ চমৎকার উদাহরণের জন্য। গুগলের ঐ এপ্রিলফুল জোকটা বেশ ভাল ছিল - আরো ভালো ছিল ইত্তেফাকের রিপোর্ট।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শামীম ভাই,
আপনি একজন বিজ্ঞানের মানুষ। সেই আপনি আপনার যুক্তি বুদ্ধি একটা বাক্সে তালা বন্ধ করে রেখে গোঁজামিল দিয়ে তামার রেডিয়েশনে বাঁতের ব্যাথা সেরে যায় সেটা প্রমান করতে চাচ্ছেন।
আপনাকে বার বার বলছি বড় পরিসরে গবেষণার দরকার নেই। আপনি কপারের রং করে লোহার চুরি পরিয়ে দেখুন তাতে কাজ হয় কিনা।
আর যদি এতই কনফিডেন্স থাকে তাহলে আপনি বড় পরিসরে গবেষণা করে কোটি কোটি টাকা কামাবার সুযোগ হাতছাড়া করছেন কেনো?
বাঁতের ব্যাথা সারে বলে অনেক বুড়া বুড়ি তামার তার পরে দেশে। এটা ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি না হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। আমি এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছি না --- শুধু বলতে চাচ্ছি, সব ধরণের সম্ভাবনার দিকে মনটা খোলা রাখাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি --- সঠিক হলে কোন হাইপোথেসিস ধরে প্রথমে আগাতে হবে সেটাও ঠিক করা দরকার .... ...., মন খোলা না হলে তো পুরাতন তত্ব, সূত্র ভেঙ্গে আর নতুন সূত্র আসতো না (যেখানে দেখিবে ছাই ....)।
আপনি ছোট পরিসরে যেই গবেষণার কথা বলেছেন --- এক্সাক্টলি এই পয়েন্টাতেই আমি পৌঁছুনোর জন্য এ্যাত ফ্যাকড়া করলাম। মৌলিক গবেষণা ছাড়া কোনো কিছু হয় না। এখন হোমিও'র ব্যাপারে আপনি যেই এক্সপেরিমেন্টের বর্ণনা দিয়েছেন -- আমার নিজেরও সেরকম এক্সপেরিমেন্ট আছে, গিনিপিগ নিজের শরীরটাই: নিজের শরীরের পরিবর্তন যথেষ্ট ভালভাবে টের পাওয়া যায়; -- রিপিটেটিভ টেস্ট হয়েছে; তবে সীমিত পরিসর বলে সেগুলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।
এছাড়া আমি নিজেও ঐ এক্সপেরিমেন্টের মত টেস্ট করে একই ফলাফল পেয়েছি। প্রতিবার জ্বর আসলেই একটা ঔষধ খেয়েছি -- কোনো উনিশ বিশ হয়নি, সারিনি। পরে যখন ডাক্তারকে ফোন করে বলেছি -- তখন দেখা গেল অন্য একটা ঔষধ দিলো -- ওটা খেয়ে এক ঘন্টার মধ্যে সুস্থ ফিল করেছি। এখন তর্কের খাতিরে বলে দিতে পারেন যে, এটা মানসিক প্রক্রিয়া -- যেহেতু ঐ ডাক্তারকে আমি বিশ্বাস করি তাই এটা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়; এটা বলছি এই কারণে যে, অন্য কারো সেইম লক্ষণে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে ঔষধ খাইয়ে একই রকম ইফেক্ট দেখেছি। প্রথমে অবশ্য নিজে মাতব্বরি করে জ্বরের যতগুলো ওসুধের নাম জানি তার থেকে একটা দিয়েছি। পরে যখন বলে সারেনি, তখন আড়ালে ফোন করে তারপর আরেকটা ঔষধ দিয়েছি --- যাকে দিয়েছি সে এসব কিচ্ছুই জানেনা। কিন্তু ঔষধ দেয়াতে একই রকম দ্রুততায় সেরেছে। জিনিষটা ভূয়া হলে এই রকম ঘটনা দুই তিনবার ঘটতে পারে, কিন্তু ২৫-৩০ বার ঘটতে পারে না।
জানি এরপর বলবেন, তাহলে একটা পেপার লিখে ফেলুন। কিন্তু পেপার লেখা কী হ্যাপা সেটা আপনি আর আমি দুজনেই জানি। সর্বোপরী তখন রিপিটেটিভ টেস্টের কথা আসবে -- ঐ ডাক্তার আর ঐ রোগী কোথায় পাব। সমস্যা হল একই লক্ষণে (অন্তত আমার কাছে একই লক্ষণ মনে হল যেটা) ডাক্তার আরেক রোগীকে হয়তো অন্য ঔষধ দেবে।
হোমিওর মুশকিলটা ঐখানেই। এটার মূলনীতি আমি খুব ভালভাবে জানিনা। ঔষধ কিভাবে কাজ করে ডাক্তারও হয়তো জানে না (এটাই অবৈজ্ঞানিক দাবীর পক্ষে সবচেয়ে বড় পয়েন্ট)। তবে প্রয়োগটা কিভাবে জানি সঠিকভাবে করছে। (যেই ব্যাটা দড়ির উপরে ব্যালান্স ঠিক রেখে হাঁটতে পারে সে হয়তো নিজেও ঐ ভরকেন্দ্রের সূত্র জানে না, স্থিতিবিদ্যা, গতিবিদ্যা পড়েনি; কিন্তু তার ব্রেইন সেটা বুঝে ফেলেছে -- এরকম কোনো ঘটনা হতে পারে।) মনের মধ্যে বুঝাটা কিভাবে জানি গেঁথে গিয়েছে তাদের। আমাকে একজন ডাক্তার বলেছিলো, চোখ ওঠার একজন রোগীর লক্ষণ দেখে তার অন্য একটা ঔষধ মনে হয়েছিলো -- যেটা কোনক্রমেই চোখওঠার ঔষধ না। কিন্তু তিনি সেটাই প্রয়োগ করে, আধাঘন্টার মধ্যে চোখ ওঠা ভাল হয়ে রোগী স্বাভাবিক হয়েছে। --- এই ক্লেইমটা চাপা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এটা আমিও বুঝতে পারছি; কিন্তু বিজ্ঞানমনষ্ক হলে ৫০-৫০ চান্স ধরতে হবে: কিভাবে হল বুঝতে হবে। মুশকিল হল কিভাবে হয় সেটা বুঝার জন্য স্টাডি করার যথেষ্ট ধৈর্য আর প্রয়োজনীয়তা কোনটাই ভেতরে নাই।
শেষ একটা উদাহরণ দেই। আমার বাবার একবার carbuncle টাইপের ভয়ংকর ফোঁড়া হয়েছিলো। পিঠে বিষফোড়া। একটা জ্বালামুখ কিন্তু চামড়ার নিচে অনেকদুর ছড়ানো। চিকিৎসা চলছিলো। এর মধ্য সারা পিঠ জুড়ে আরো ৪/৫টা জ্বালামুখ দেখা দিল, চামড়ার উপরে কালচে হয়ে গেল। চিকিৎসাকালে প্রায় ৪০ দিন বিছানায় পড়ে ছিলেন তিনি - অফিস থেকে ছুটি নিতে হয়েছিলো। সেবার অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাতেই ভাল হয়েছিলেন। পরের বছর ওনার একই জিনিষ হয়েছিলো, সেবার একটা হোমিও ঔষধের নাম জানা ছিলো। সেটা খাওয়ানোতে সেরে উঠে ৩য় দিন তিনি অফিসে গিয়েছিলেন (২ দিন অফিস কামাই)। এর বিপক্ষে যুক্তি আসতে পারে, তাঁর একবার ঐ রোগ হওয়াতে শরীরে এন্টিবডি তৈরী হয়েছিলো যা পরেরবার কাজ করেছে -- হয়তো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাতেও ঐ ২/৩ দিনই সময় লাগতো। কিন্তু এই বিপক্ষ যুক্তি কিন্তু পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু তিনি ঔষধ খাওয়ার একদিন পরই (শুরু থেকে তিনদিনের দিন) অফিস করেছিলেন সেটার সাক্ষী আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন।
যা হোক, আমি হোমিও এবং অ্যালোপ্যাথি দুই ধরণের ঔষধই সেবন করি। বাচ্চা অসুস্থ হলে প্রথমে চাইল্ড স্পেশালিস্টের কাছেই নিয়েছি - প্রতিবার। এর মূল কারণ কিন্তু হোমিওতে কাজ হবে কি হবেনা এরকম কোনো দ্বিধা নয়; এর মূল কারণ আমার পারিবারিক ডাক্তার তিনশ কিলোমিটার দুরে থাকেন। একেই তো উনি রোগী না দেখে ঔষধ দিতে রাজি হন না (সব ডাক্তারই তাই -- অ্যালোপথি হউক, কবিরাজি হউক), তার উপর তাঁকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতেও মন চায় না সবসময়। ইদানিং বেশি ডিস্টার্ব করি উনাকে -- এর কারণ ওনার বিকাশ একাউন্ট নম্বরটা এখন আমি জানি। আমার মনে হয় যত দিন যাচ্ছে তত দারুন দারুন সেন্সর এবং টেকনোলজি ডেভেলপ হচ্ছে; তাই সিনসিয়ারলি গবেষণা করলে হোমিওপ্যাথির রহস্য ঠিকই ভেদ হবে (পজেটিভ সেন্সে) -- এতে জগতের উপকারই হবে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
বাই দা ওয়ে ইপিকাকে (একটা গাঁজাবৈজ্ঞানিক ওষুধের নাম, যা একসময় ভাল বিজ্ঞানেও ব্যবহৃত হত -- আগের মন্তব্যে ব্যাখ্যা করেছি) বমি না হওয়ার ব্যাপারটা কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন। আমার বাচ্চা তো অবুঝ, প্লাসিবো হওয়ার কথা না। তাকে ভুলে (বের হওয়ার আগে তাড়াহুড়াতে) একবার অন্য অসুধ খাইয়ে দিয়েছিলাম -- যথারীতি আমার গা ভেসেছিলো (বমিতে)।
একটা বিষয় ব্যাখ্যা করতে না জানলেই সেটা গাঁজা হয়ে যায় না। আমরা কেবল স্টেম সেল সম্পর্কে জানলাম। না জেনে কি কেউ এই পদ্ধতি আগেই প্রয়োগ করতে পারে না? হোমিওতে কারো কারো ক্যান্সার ভাল হয়েছে শুনলে লোকজন আমার ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল নিয়েই প্রশ্ন তুলবে -- অথচ দেখুন: ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য কিন্তু ওদিকে গবেষণা চলছে!! আরে বাবা এটা যদি অনিরাময়যোগ্যই হয় (হোমিওতেও ভুলবশত: ভাল হবে না) তাহলে আর গবেষণা কেন?
গবেষণার অর্থই হল যে এটা নিরাময়যোগ্য কিন্তু আমরা পদ্ধতিটা জানিনা -- এরকমই ধরে নিচ্ছি। তাহলে হোমিওতে কারো কারো এরকম জটিল অসুখ সারলে মানুষ সেকথা শুনলে মিথ্যা কথা বলছি বলে হাসে কেন? লজিক টা কী?
আমার নিজের কাজের ফিল্ডেও গ্রামে অনেক উল্টাপাল্টা উপায় দেখি যা কোনো বইপত্রে নাই। হেসে উড়িয়ে দিলে আসলে প্রকৃতির রহস্যটাকেই অস্বীকার করা হবে। কিন্তু সেটা কিভাবে হল সেটা বুঝার জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক সুক্ষ্ণ বিজ্ঞান বের হয়ে আসে -- স্থানীয় লোক সেই বিজ্ঞানটুকু না জেনেই হয়তো নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে।
হোমিওতে রোগ না বরং রোগীর চিকিৎসা করা হয় (কিন্তু মামু'র লেখা এই আর্টিকেলের প্লাসিবো সংক্রান্ত গবেষণায় সকলকে একই ওষুধ দেয়া হয়েছিলো!!)। এলার্জিতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিও কিন্তু তা-ই। আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান, দেখবেন একই লক্ষণে দুইজনকে আলাদা ওষুধ দিবে। একই ওষুধ হলে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া কেন, দোকানে গিয়ে বলেন আমার অমুক হয়েছে -- ওষুধ বিক্রেতাই আপনাকে ওষুধ দিয়ে দিবে --- এভাবে অনেকেই ভাল হয় কিন্তু । বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আলাদা ঔষধ দিতেই পারেন, কারণ তিনি দুই জন রোগীর সেই লক্ষন ছাড়াও অন্য শারীরিক ভেরিয়েবলগুলো আরো ভালভাবে বুঝেন -- এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ দেন। অথচ হোমিওতে একই কাজ করলে সেটা হয় গাঁজাবিজ্ঞান (হোমিওতে বেশিরভাগ ডাক্তারই ভুয়া - এটা অনস্বীকার্য; সেই বেশিরভাগের মূল টার্গেটই থাকে স্পিরিটের ব্যবসা, রোগীর চিকিৎসা নহে)। যার ডায়বেটিস আছে, কিংবা হাই ব্লাড প্রেশার আছে, বা যার উচ্চ কোলেস্টরল কোনো কোনো অসুখে তার জন্য ওষুধ অন্যদের থেকে ভিন্ন হয় -- এটাও গাঁজাবিজ্ঞান নয় -- কারণ এটা অ্যালোপ্যাথি - যা অনেক পুঁজিবাদী কোম্পানীর কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা নিশ্চিত করে!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আপনার মন্তব্যটা পড়েছি। ধন্যবাদ বিশদ মন্তব্যের জন্য। আমি সোমবারের আগে মন্তব্য করার সুযোগ পাবো না। একটু যাচাই করে উত্তর দিচ্ছি।
পাড়ার ডাক্তারের কাছে না গিয়ে আপনার কি মনে হয় সেটা উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন যে পাড়ার ডাক্তার খারাপ?
মূল পোস্টের কোথায় বলা হয়েছে বেশী ঔষধ ভালো আর কম ঔষধ খারাপ? ওহহো ভুলেই গিয়েছি আপনি তো আবার "হালকার উপর ঝাপসা" পড়েছেন লেখাটা।
এরকম কোনো সরাসরি কজাল রিলেশন দেয়া হয়নি। বলেছি হোমিওপ্যাথি খুব খুব কম ক্ষেত্রে প্লাসিবোর চেয়ে বেটার ফলাফল দেখাতে পেরেছে।
এটার ব্যাপারে যুক্তি পোস্টেই দেয়া আছে। সেটা হলো রোগটা বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম এমনিতেই সারিয়েছে। কদিন আগে আমার বাচ্চার ভাইরাল জ্বর হয়েছিলো। ডাক্তার কোনো ঔষধ দেয়নি। সে নিজে থেকেই সেরে উঠেছে।
শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু চিনি ক্ষত সারাতে কাজ করে। অনেক শিশুদের চিনি খাইয়ে দিলে দেখবেন উত্তেজিত হয়ে যায়। যেহেতু আপনার শিশুর রোগ কি ছিলো জানি না তাই বলতে পারছি না চিনি প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে।
একটা টেস্ট করেন। আপনার বাসায় যদি দুজন হোমিও প্যাথি খান তাদের হোমিও লেবেল অদল বদল করে দিন যাতে তারা টের না পান। তারপর দেখুন তাদের অবস্থার অবনতি হয় নাকি একই থাকে।
বোঝা গেলোনা এরকম অভিযোগ কিসের ভিত্তিতে। আমার লেখার কোথায় এরকম কথা বলেছি যে, "একজন সব বিদ্যা সব জেনে ফেলেছে আর হোমিও কিচ্ছু জানেনা"! অদ্ভুত কথা তো!! হোমিওপ্যাথিকে সিম্পলি প্রমান করতে হবে স্ট্যার্ন্ডাড ডাবল ব্লাইন্ড পরীক্ষায় জনসংখ্যার একটি গ্রহণযোগ্য স্যাম্পলের মধ্যে হোমিওপ্যাথির ফলাফল প্লাসিবোর ফলাফলের চেয়ে পরিমানে ভালো হতে হবে। কে কি জানে তাতে কিছু যায় আসে না।
"হালকার উপর ঝাপসা" পড়েছেন বলে এর উত্তর আপনার চোখে পড়েনি। ভালো করে পড়ুন তাহলে চোখে পড়বে।
এই হোমিও অ্যালকোহল সেবনকে ধার্মিকরা কিভাবে দেখে?
প্লাসিবো মানে নকল ঔষধ। পদার্থটিকে ঔষধ বলে মনে হতে হবে সেবন কারীর।
বাকিটা উত্তর দিচ্ছি।
শুধুমাত্র টেস্টের খাতিতে নিজের বাচ্চার উপর ঔষধ পাল্টিয়ে গিনিপিগ টেস্ট করার পরামর্শ আমি অন্তত কাউকে দিবো না।
বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম সারিয়েছে -- খুব ভাল কথা। কিন্তু আগের বার শিশু বিশেষজ্ঞ (অ্যালোপাথির) তাঁকে এ্যাত এ্যাত ঔষধ দিল কেন? সেইবার ইমিউন সিস্টেমে কী সমস্যা ছিলো?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
পরামর্শ-টা যা পড়লাম, ছিল "বাসায় যদি দুজন হোমিও প্যাথি খান তাদের" উপর। সেইখানে কোথাও বাচ্চাদের কথা বলা নেই। আপনার সমস্যাটা বুঝলাম, বাড়িতে বাচ্চা ছাড়া টেস্ট করার "গিনিপিগ" নাই। কিন্তু আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে যেন পরামর্শদাতা বাচ্চাদের উপর-ই পরীক্ষা করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কথাকে এই ধরণের বাঁক নেওয়ান কিন্তু পরিবেশ নষ্ট করে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বাচ্চার কথা বলিনি। বাসার দু'জন অ্যাডাল্টের উপর পরীক্ষা করুন।
শিশুকে অপরিক্ষিত হোমিওপ্যাথি খাওয়াচ্ছেন কিন্তু ঠিকই। সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে কিন্তু বিপদের মুখেও ফেলছেন।
আপনি বার বার অ্যালোপথি অ্যালোপথি করে মুখে ফেনা তুলছেন কেন নিশ্চিত নই। অ্যালোপথি যদি ভুয়া প্রমানিত করতে পারেন তাহলে কি হোমিওপ্যাথি সঠিক প্রমানিত হয়ে যাবে?
ধরা যাক আপনার পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে, "x এবং y একটি সমস্যা সমাধাণ করতে পারে বলে প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে কোনো সর্ম্পক নেই। প্রমান কর যে, y সত্যি সত্যি সমস্যাটি সমাধাণ করতে পারে।"
আপনি উত্তর দিচ্ছেন, "x সমস্যাটির সমাধাণ করতে পারে না, অতএব y সমস্যাটি সমাধাণ করতে পারে।"
শিশুর সুস্থতা যদি বিপদের মুখে পড়া হয় তাহলে আর কথা না বাড়াই ... ...
অ্যালোপাথি ডাক্তার ওষুধ দিয়েছিলো, এটা বলাতেও দোষ খুঁজে পেলেন? এখানে আমি কোথায় অ্যালোপ্যাথিকে ভুয়া বলেছি বা মুখে ফেনা তুলেছি বলবেন? আমি আপনার ইমিউন সিস্টেম সংক্রান্ত উত্তরের কাউন্টার পয়েন্টটা বলেছিলাম।
হোমিও পদ্ধতির পক্ষে কথা বলা অ্যালোপ্যাথির বিপক্ষে কথা বলা নয়। হোমিওতে ঔষধ খেয়ে ভাল হয়েছিলো বলাতে আপনি বললেন যে ইমিউন সিস্টেমে এমনিই ভাল হত -- অর্থাৎ ঐ ঔষধ খাওয়ানো আর না খাওয়ানো সেইম। তাহলে তো ঐ সমস্যায় অ্যালোপথি ডাক্তারও ঔষধ দিত না। এখানে অ্যালোপ্যাথিকে কিন্তু আমি কিন্তু কিছুই বলি নাই। x সমস্যাটার সমাধান করতে পারে না এমন কিছুই কি আমার লেখায় ছিলো? আমি বলেছি x সমাধান করেছে, yও সমাধান করেছে। y সমস্যাটি সমাধান করেছে এবং করে চলেছে। x সমাধান করতে পারে নাই এমন কিছু এখানে বলা হয় নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কিন্তু এই দাবীর পক্ষে কোনো রিজনিং দেননি আপনি। প্রমান কর, ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি। আপনার উত্তর, আমরা জানি এটা সত্য, অতএব ত্রিভুজের তিন কোনে সমষ্টি ১৮০।
শামীম ভাই, আমার মেয়ের বয়স প্রায় ৫। কোষ্টকাঠিন্য তে ভুগছে। একটা পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হলেও খাদ্যাভ্যাস সক্রান্ত কয়েকটি পরামর্শ দেই।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান। আমেরিকায় মেটামিউসিল নামে একটা ফাইবার সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। খেতেও মজা আর খুব উপকারী। বাংলাদেশে বোধহয় ইসুবগুলের ভুষি এর সমতুল্য। সেটা চেষ্টা করতে পারেন।
আপনাদের খাবারের প্রতি একটা ক্রিটিকাল বিশ্লেষণ করুন। প্রয়োজনে নিউট্রিশনিষ্টের সহায়তায় খাদ্যাভাস শুধরে নিন।
আমি ডাক্তার নই। তবে এরকম ক্ষেত্রে নিজের মেয়েকে (প্রায় ৪ বছর বয়স) একটু ব্যায়াম করাই (পা হাঁটু থেকে মুড়িয়ে পেটে চাপ দেয়া) + আরেকটা বিকল্প ট্রাই করি:
১। চকোলেট খেলে। এটাই বেশি আকর্ষনীয় মেয়ের কাছে।
২। হালকা গরম পানিতে মধুর ডাইলিউশন। (এক গ্লাস পানিতে দুই তিন চামচ মধু -- এরকম অনুপাত)। আবার উল্টা সমস্যায় অর্থাৎ তারল্যের সমস্যায় সরাসরি ১ চামচ মধু খাওয়ালে অনেক ক্ষেত্রেই ভাল কাজ করে।
বাই দা ওয়ে: মধুর এই গুণের কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে নাকি শুধু ধর্মীয় ভিত্তিতে বলা সেই সম্পর্কে আমার কোনই আইডিয়া নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
মধুতে একধরণের ব্যাকটেরিয়া (Clostridium botulinum) থাকে। এক বছরের ছোট বাচ্চাকে মধু দিবেন না। সুত্র
তথ্যটুকুর জন্য ধন্যবাদ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
হোমিওপ্যাথিতে আমার বিশ্বাস প্রায় শূন্য। তবে একদিন সন্ধ্যায় এ্যানাল ফিশারের ব্যাথায় অস্থির হয়ে এক বয়স্ক হোমিও ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম, দেখুন হোমিওপ্যাথিতে আমার বিশ্বাস নেই বললেই চলে। তবে আপনার কাছে আপনার জ্ঞানে যদি এমন কোনো ম্যাজিক হোমিও ঔষধ থাকে, যা খেলে এই মুহূর্তেই ব্যাথা চলে যাবে, তবে আজকের পর থেকে আমি হোমিও বিশ্বাস করব। তিনি বললেন আছে না। হা করুন। আমার আজও সেদিন সন্ধ্যার কথা স্পষ্ট মনে আছে, কারণ সারাদিন ব্যাথায় এত কষ্ট পেয়েছি যে, প্রায় নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। উনি হা করতে বলে মুখে কয়েক ফোটা ঔষধ ঢেলে দিলেন। মুখে কেবল ঔষধ পড়ল আর তার সাথে সাথেই মনে হলো আমার ব্যাথা উধাও। জানি না বাকিরা এটাকে কি বলবে, তবে আজ অব্দি আমি সেই সন্ধ্যা ভুলিনি এবং পরবর্তীতে হোমিও চিকিৎসা করে আমি অনেকটাই সুস্থ আছি।
সচলে আমার পড়া সবচেয়ে জরুরী লেখাগুলোর মধ্যে এটিকে প্রথমদিকে রাখব। সত্যি দেশের সর্বত্র "অল্টারনেটিভ মেডিসিন" এর যে ধ্বংসাত্মক দৌরাত্ম্য - তাতে আতঙ্কিত হতে হয়। জনস্বাস্থ্য বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা এবং লেখক এটাও দেখিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাভাষায় বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ রচনা সম্ভব।
কিছুদিন আগে ময়মনসিংহে একটা ব্যাটারি অটোতে এক গ্রাম্য ভদ্রলোক ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও কটুকাটব্য করছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর অটো থেকে নেমে আমি তাকে প্রশ্ন করলাম- "আপনি কি মনে করেন সব রোগ হোমিওপ্যাথিতে সারে? ক্যানসারও?
-হ।
ভাইসাহেব আপনি জানেন না। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এ আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞানই নয়!
আমার আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা দেখে লোকটি আর কিছুই বলল না।
হোমিওপ্যাথ, ইউনানী, কবিরাজি ঝাঁড়-ফুঁক, ডিপ্লোমাধারী স্বাস্থ্যসহকারীরা নামের আগে "ডাঃ" শব্দটি ব্যবহার করছেন অবাধে- যা সম্পূর্ণ বে-আইনী এবং আর জন্যে নির্ধারিত শাস্তি কারাদণ্ড। হোমিওপ্যাথিকে সরকারী মর্যাদা দেয়াটাও চরম ভুল।
এদেশে মূল্য নেই শুধু জানমারি করে এম,বি,বি,এস পাশ করা ডাক্তারদের। সরকারী-বেসরকারী সব খাতেই তাদের পরিশ্রম ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য বেতনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেয়া হয়! আবার অধ্যাপকদের রোজগার একেবারে এমন আকাশ ছোঁওয়া যে, মাসে পাঁচ লাখ টাকা বেতনেও তাঁরা তুষ্ট হবেন না। কারণ তাদের রোজগারটা প্রতিমাসে আরো অনেক অনেক বেশি। কেউ সন্দেহ করলে তথ্য উপাত্ত দেখিয়ে দেব। কাজেই প্রফেসরদের বেতন বাড়িয়ে মাসে ২লাখ-৫ লাখ করলেই সব কিছু লাইনে এসে যাবে না। কারণ এই প্রস্তাবে কেউই রাজি হবেন না!
হোমিওপ্যাথির কোন মান নেই। কাজেই লেখকের শেষ লাইনের সাথে একমত হতে পারলাম না। যার মান নেই, তার মান নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
চমৎকার লেখা এবং সাথের মন্তব্যগুলো।
____________________________
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
দারুন। এরপর থেকে আমি আর তর্ক করব না কারও সাথে। আপনার লেখাটা প্রিন্ট করে পড়তে দিব।
ধন্যবাদ।
শরীরবিজ্ঞানের কিছুই না জেনে, না পড়ে যদি ডাক্তার হওয়া যায় তো কোন বোকায় সে সুযোগ ছাড়ে? আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জীবনে তেইশ রকম (আক্ষরিক অর্থেই) পেশায় ব্যর্থ হয়ে শেষাবধি হোমিওপ্যাথির কল্যাণে ‘ডাক্তার’ পদবী পেয়ে সমাজসংসারে স্থিতু হতে পেরেছিলেন। সঙ্গে থেকে থেকে তাঁর অষ্টম শ্রেণী পাশ স্ত্রীও ডাক্তারি বিদ্যেটা শিখে নেন এবং ডাক্তার সায়েবের অনুপস্থিতিতে রোগী সামলাতে শুরু করেন। প্রতি দশ লক্ষ হোমিওপ্যাথি ‘ডাক্তার’-এর একজনও জীবনে কোনওদিন জ্যান্ত মানুষের হৃদপিণ্ড, যকৃৎ বা ফুসফুস স্বচক্ষে দেখেছেন কীনা সন্দেহ, কিন্তু ‘হোমিওপ্যাথি অ্যালোপ্যাথির চেয়ে ভাল কাজ করে’ এই দাবী করতে কখনও পিছুপা হন না।
গেল হপ্তায় আমার ভায়রার সঙ্গে এ নিয়ে তুমুল তর্ক হয়ে গেল। তিনি নিতান্ত সাধারণ শিক্ষিত নন, বুয়েটের প্রকৌশলী, পশ্চিমা বিশ্বের দুটি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স আর পিএইচডি আছে, কাজ করছেন একটি নামকরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে রসায়নবিদ হিশেবে, কিন্তু হোমিওপ্যাথি যে তাঁর নানা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য রোগ সারিয়ে তুলেছে, সে দাবী ছাড়তে নারাজ। বললাম, চিনির দানা খেয়ে আপনার অসুখ সেরেছে, তাতে আমি সন্দেহ করছি না, কিন্তু সেটা ঘটেছে প্লাসিবো ইফেক্টের কারণে। এই দানা হোমিওপ্যাথি ‘ডাক্তার’-এর কাছ থেকে না এনে আমার ঘরের কৌটো থেকে এনে দিলেও একই কাজ হত, যদি আপনি বিশ্বাস করতেন যে ওটা ‘ডাক্তার সায়েব’-এর কাছ থেকে এসেছে। তিনি কিছুতেই মানবেন না। বললাম, এ তো আমার কথা নয়, বহু গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তের ফল। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগ আর ইন্সিওরেন্স কোম্পানিগুলো ২০১০ সালের পর থেকে এ জাতীয় কোনও চিকিৎসার ব্যয়ভার নিতে রাজি হচ্ছে না। বললেন, তোমার সমস্যা হল, তুমি বইয়ে যা লেখা থাকে, তাই বিশ্বাস কর। যুক্তি দিলাম, কিন্তু এ তো বিজ্ঞানের বই আর পণ্ডিতদের গবেষণা, তাও মানেন না। শেষটায় জানলাম, তাঁর স্কুলশিক্ষক বাবা অবসর সময়ে হোমিওপ্যাথি ‘প্র্যাকটিস’ করতেন। এ হল হোমিওপ্যাথি বিশ্বাসের আরেকটি কারণ। বাবা-নানা-দাদা-জ্যাঠা-মামা-শ্বশুর-তালুই -- এঁদের কেউ কেউ এককালে এ বিদ্যা অনুশীলন করেছেন, একে অস্বীকার করা তাঁদের অপমান করার শামিল। তাই শুধু বিশ্বাস করলেই হবে না, কাছা বেঁধে অন্যের আক্রমণ থেকেও রক্ষা করতে হবে।
আঠার শতকে তাবিজকবজের ব্যবসাও এরকম ভাল ছিল। লোকে ক্রমশঃ শিক্ষিত আর বুদ্ধিমান হয়ে পড়েছে বলে তাবিজকবজের ব্যবসা আজকাল তেমন চলে না, তাই হোমিওপ্যাথিই ভণ্ডদের ভরসা। এদের সবাই যে ভণ্ড, তাও নয়, অধিকাংশই এর শক্তিতে বিশ্বাস করেন বলেই চর্চা করেন। আর নিখরচার ব্যাপারটি (চিকিৎসা করাতে নয়, ডাক্তারি শিখতে) তো রয়েছেই। ঘরে তিনশ’ বছরের পুরনো হানিম্যানের বইটা থাকলেই হল। এক গ্রন্থের পাঠকরা যে সমাজের জন্য কী ভয়ঙ্কর, হোমিওপ্যাথিই তার সবচে’ বড় প্রমাণ।
প্লাসিবো কীভাবে কাজ করে, তা আমার নিজের চোখে দেখা। স্কুলে থাকতে একবার আমার এক বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বিছানা ভেজানোর সমস্যা নিয়ে কথা উঠল। বন্ধু আমাদের কারও সঙ্গে ভাল কোনও হুজুরের পরিচয় আছে কীনা যার তাবিজে কাজ দেয় জিজ্ঞেস করতেই এক ভয়ানক দুষ্টু বন্ধু বলল, আছে, তবে বেশ খরচপাতি লাগবে। বন্ধু মরিয়া হয়ে বলল, যা লাগে দেব, তুই আগে ওর বিছানা ভেজানো বন্ধ কর। দুষ্টু বন্ধু তিনদিনের মাথায় তাবিজ নিয়ে হাজির, আর হপ্তাখানেকের মধ্যে সেই বন্ধুর ছোট ভাইয়ের দীর্ঘ আট বছরের অভ্যাস যাদুমন্ত্রের মত চলে গেল। আমরা সবাই তাবিজের কারিশমায় যখন যৎপরোনাস্তি মুগ্ধ, তখন দুষ্টু বন্ধু বলল, চল তো দেখি তাবিজের ভেতর কী লেখা আছে। তাবিজ খুলে আমরা সবাই বিস্মিত, আর যার ভাইয়ের রোগ সারানো হল, সে রেগে কাঁই। কেননা ভেতরে আরবী দোয়াদরূদের বদলে একগাদা বাংলা অশ্লীল বাক্য লেখা, যার সবকটিই উচ্চারণাতীত। দুষ্ট বন্ধু বলল, তাবিজটি তার নিজের হাতে তৈরি করা। কিন্তু তাতে কী, কাজ তো হল। আমি তখনও প্লাসিবো কী জিনিশ জানতাম না, কিন্তু তাবিজের ওপর থেকে আমার বিস্ময়ের শেষ কণাটুকুও উবে যায় সেদিনই।
অনেকে বলেন, হোমিওপ্যাথি প্লাসিবোই যদি হবে, তবে তা শিশুদের ওপর কীভাবে কাজ করে? ওরা তো ডাক্তার কী জিনিশ বোঝে না। আসলে সেটা কিন্তু প্লাসিবো নয়, দুদিন পর শিশুটির সমস্যা এমনিতেই সেরে যেত। লক্ষ করে দেখবেন, হোমিওপ্যাথি কেবল সেসব রোগই সারাতে পারে, যা মূলত মনোদৈহিক (psychosomatic), অর্থাৎ প্লাসিবো যেখানে কাজ করে। পানি পড়া, তেল পড়া, ডিম পড়া, গুড় পড়া, তাবিজ, কবচ, তাগা, মাদুলি, ঝাড়ফুঁক, দোয়া ইত্যাদি সবই প্লাসিবোর মাধ্যমে কাজ করে। একটা কলাগাছের কাছ থেকে চিনির দানা এনে দিলেও রোগ সারবে, যদি রোগীকে বিশ্বাস করাতে পারেন সেটি এক বড় হোমিওপ্যাথি ‘ডাক্তার’-এর কাছ থেকে আনা হয়েছে।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চ–এর ডঃ জ্যাক বেনভেনিস্তের মত বাঘা বিজ্ঞানী এক ভুল গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ‘হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত জলের স্মৃতিতত্ত্ব সম্ভবত ঠিক’ এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবন্ধ ছাপিয়েছিলেন। সেই দাবী double blind পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি, ফলে বেনভেনিস্তের প্রায় নিশ্চিত নোবেল পুরস্কার চিরকালের জন্য ফস্কে যায়। বিজ্ঞানী সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত মানুষে পরিণত হন। তাঁর দাবী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বিখ্যাত যাদুশিল্পী জেমস র্যান্ডি, যিনি পৃথিবীর সবাইকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, যদি কেউ প্যারানরমাল দাবী প্রমাণ করতে পারেন, তাঁকে এক মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। এই দাবীর মধ্যে হোমিওপ্যাথিও ছিল। দশ বছর পার হয়ে গেছে, আজ পর্যন্ত কেউ সেই এক মিলিয়ন ডলার জিতে নিতে পারেননি। জেমস র্যান্ডি বিখ্যাত উরি গেলারের দৃষ্টিশক্তি দিয়ে চামচ বাঁকানোর দাবীকে ভুয়া প্রমাণিত করেছেন, জনসমক্ষে ভণ্ড প্রমাণ করেছেন জ্যোতিষী, সাইকিক, পামিস্ট ইত্যকার হরেকরকম ধড়িবাজ পেশাদারকে। এক জনপ্রিয় টেলিভিশন প্রোগ্রামে হোমিওপ্যাথির সাড়ে ছয় দিনের ডোজের সমপরিমাণ এক বোতল ঘুমের ঔষধ (যেখানে লেখা ছিল, অতিরিক্ত ডোজের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে যেন সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডাকা হয়, অবশ্যই হোমিওপ্যাথি ‘ডাক্তার’) পুরোটা গিলে আরও আধঘণ্টা অনর্গল কথা বলে প্রমাণ করেছিলেন এতে নির্জলা জল ছাড়া আর কিছু নেই।
আমাদের সমাজে এমনিতেই নানারকম কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, ভণ্ডামি আর কুশিক্ষার বিস্তার বেড়ে চলেছে। এখনই এর বিরুদ্ধে সপাটে যুদ্ধ শুরু না করলে ঝাড়েবংশে বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে এরপর আর মুক্তচিন্তার সুস্থবুদ্ধির মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার লেখাটি অন্তত কিছু মানুষের চোখ খুলে দেবে, এ কামনাই করি।
নিতান্তই গেরস্ত মানুষ, চারপাশে কেবল
শস্যের ঘ্রাণ পাই।
নারে ভাই, আপনার শিশুদের প্লাসিবো তত্ব ঠিক হইলে আমার কাপরচোপড় ঠিক থাকতো -- বমিতে ময়লা হইতো না। আপনার শিশুর এরকম গাড়িতে মোশন সিকনেস বেশি হলে রওনা দেয়ার ৫ মিনিট আগে ইপিকাক ৩০ নামক চিনির গোলা খাওয়ায় রওনা দিয়েন। আরেকদিন অন্য কিছু লেখা চিনির গোলা খাওয়াইয়েন -- ওটার পেছনের বিজ্ঞানটা জানা না থাকলেও ফলাফলের পার্থক্যটা প্রতিবার নির্ভুলভাবে নিজ চোখেই দেখতে পারবেন।
শরীরবিদ্যা স্কুল ছাড়া শেখা যায় না? যে শিখতেছে তার নিজের শরীর নাই? উচ্চতর গবেষণায় লেখাপড়াগুলো কিন্তু কোনো স্কুল শেখায় না -- এমনকি সুপারভাইজিং প্রফেসরও কিচ্ছু নাও শিখাইতে পারে। যা লেখাপড়া করার সব নিজে নিজেই করতে হয় -- অন্তত পক্ষে আমার নিজের এবং আশে পাশে যারা পিএইচডি করছিলো তাদের অভিজ্ঞতা তো তা-ই!
আপনাকে বিনীত ভাবে আরো কিছু গাঁজাবিদ্যার সন্ধান দেই:
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কম্পিউটারে কেমনে ১/০ লেখা হয় সেটা আপনি জানেন না বলেই সেটা গাজাবিজ্ঞান বলে দেয়াটা খুবই উদ্ধত মনে হলো। SEM নিয়েও কখনো হাতে কলমে কাজ করেছেন কি না জানি না। সেটাকেও হুট করে গাজাবিজ্ঞান বলাতে আমি কেবল আপনার জানার কমতি দেখতে পাচ্ছি।
দু'টো ব্যাপারেই আপনি জানতে আগ্রহী হলে গুছিয়ে বলতে পারি।
প্রভাবক কিভাবে বিক্রিয়ার গতি বাড়ায় সেটা শুধুমাত্র সংজ্ঞা মুখস্ত না করে থাকলে ভিস্যুয়ালাইজ করেই বুঝে ফেলার কথা। তবে আপনি যদি নিজ চোখে দেখেন নাই বলে অণু, পরমাণু, ইলেকট্রনের অস্তিত্বই অস্বীকার করেন তবে কথা আর বাড়িয়ে লাভ নাই।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনি মনে হয় উনার কথা টা ধরতে পারেন নাই । হোমিওপ্যাথি কে যে সব সুত্রে গাজাখোর বিজ্ঞান বলা হইতেছে সি সূত্রেই উনি ওই গুলাকে ও গাজা নাগান বলছেন| এই গুলা যেমন গাজা বিজ্ঞান না, ওই হোমিওপ্যাথি ও না । কম্পিউটার এর শুরুতে অপেরাটিং সিস্টেম যে আজকের মতো হবে কেউ বললে টাকে যেমন সবাই গাজাখোর বলতো, বেপার টা তেমন এ । আপনি বি.এন.পি করলে ১০০০+ টা দোষ পাবেন আওমিলিগ এর । উল্টা টাও ঘটে । কিন্তু কেউ ভালোটা দেখে না, মনে ও রাখতে চায় না ।
ধুনফুন ভালই বকলেন।
আমি SEM নিয়ে হাতে কলমে কাজ করি নাই দেখেই তো এ্যাত সহজে গাঁজা বিজ্ঞান বলতে পারলাম (পয়েন্টটা কি পৌঁছুতে পারলাম?)
(হালকার উপর ঝাঁপসা জানি, বিভিন্ন পেপার লেখার সময়ে রেফারেন্সে যেগুলো পেপার থাকতো ওগুলোতে আবার SEM এর কাজের ফিরিস্তি থাকতো)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
"কিভাবে ১ আর ০ সেলে লেখা হয়"
- 'লেখা' হয় না তো, দেখবেন কোথা থেকে? একটি প্রক্রিয়া ঘটে অথবা ঘটে না। আর তার ফলে পরবর্ত্তী ঘটনাপ্রবাহগুলি ঘটে। সেগুলো একসময় দেখা যায়।
"ইলেক্ট্রন প্রোটন -- এইসব কোনটাই কোনো মানুষ দেখেনি।"
- আমাদের চোখের দর্শন ক্ষমতার মধ্যের দেখার জিনিষ নয় ত ওগুলি। যে যন্ত্র ওদের "জেনারেটেড ইমেজ" দেখায় সে তার যান্ত্রিক চোখে তার নিজের ধরণে ওদের দেখে আর তারপরে আমাদের বোধগম্য ধরণে তার দেখাটা আমাদের দেখায়।
"প্রভাবক নামক বস্তু (Catalyst) বিক্রিয়ার গতিকে বাড়ায় বা কমায় কিভাবে? গাঁজাবিজ্ঞান?"
দাদা, এটি কিন্তু প্রবলভাবে বহুল-ব্যাখ্যাত বিজ্ঞান। এই বিষয়ের উপর উচ্চ বা মহাবিদ্যালয় স্তরের যে পাঠ্যপুস্তকগুলি আছে, সেগুলি পড়লেই বুঝতে পারার কথা। সচলে যাঁরা বিজ্ঞান নিয়ে লেখেন তাঁরা রাজী হলে সুন্দর করে একটি পোস্টে বুঝিয়ে দিতে পারবেন।
বিবর্তনবাদের ঘোরবিরোধী শিক্ষিত মানুষেরা বিবর্তনবাদের বিপরীতের সৃষ্টিতত্ত্ব-কে বিজ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হবার পর বিজ্ঞানকেই আক্রমণ করে যখন বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বোঝাতে থাকেন তখন যে নানা রকম "বলুন তো দেখি" ছুঁড়ে দ্যান আপনার দেওয়া "গাঁজাবিদ্যার সন্ধান"-গুলোকে তাদের মধ্যে হাজির থাকতে দেখেছি। কি হবে এসব করে? বিজ্ঞান যখন বলে 'দেখতে পাইনি', সে বলে না 'নেই', সে বলে সেটুকুই, যেটুকু সে বলতে পারে 'দেখতে পাইনি'। আর, তাকে দিয়ে যদি 'আছে' বলাতে হয়, তবে তার অনুমিতি-তত্ত্ব-প্রমাণের পথ ধরেই তাকে সেটা দেখিয়ে দিতে হবে।
তবে হ্যাঁ, হোমিওপ্যাথি এত তাড়াতাড়ি যাবে না, তার বিদায় হওয়া নিয়া তাই এখনি খুব দুশ্চিন্তার কোন কারণ নাই। তাই বলে অবশ্য আমাদের ছোট ছোট ধাক্কাগুলো জারী রাখাও বন্ধ হবে না।
যে যতদিন ধরে যাই বলে গিয়ে থাকুক, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে না।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই বিষয়ে তর্ক না বাড়াই ... ... যে উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিলো সেটার কাজ হয়েছে বলেই মনে হয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আপনি হোমিওপ্যাথি আর ইলেকট্রনকে এক কাতারে ফেললেন? ভাষাহীন হয়ে গেলাম।
ঐ জন্যই তো লেখা!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ইপিকাকের বানান কি? হোমিওপ্যাথির ফার্মাকোপিয়ায় এর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই। বিভিন্ন বানানে এটাকে গুগল সার্চে খুঁজে পেলাম না।
তাহলে আমাদের সবার শরীর আছে। আমরা সবাই ডাক্তার হয়ে যেতে পারি নাকি?
আপনার পরিবারের নন-সিভিল-ইঞ্জিনিয়াররা তো বাসাতেই থাকে। থাকে একজন সিভিল-ইঞ্জিনিয়ারিং এ পিএইচডির সাথে। তারাও কি এ বিষয়ে পিএইচডি হয়ে গেছে।
আপনি বিষয়টিকে খুব পার্সোনালী নিয়ে ফেলেছেন। অনুগ্রহ করে ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে কথা বলুন শামীম ভাই।
ইপিকাকের বানান - Ipecac ।
একসময় স্ট্যাণ্ডার্ড এ্যালোপ্যাথিতে বিষ খেয়ে ফেললে সেটা রক্তে মেশার আগেই 'সিরাপ অফ ইপিকাক' (ইমেটিক) ব্যবহার করে বমির উদ্রেক করে তা শরীর থেকে বের করে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হত। তবে এ্যালোপ্যাথিতে এখন সেটা নানা কারনে নিরুৎসাহিত করা হয়। ইপিকাকের হোমিওপ্যাথিক সংস্করণ অনেক সময় Ipecacuanha নামে পরিচিত।
১। ip·e·cac·u·an·ha (ip'ĕ-kak'yū-an'ă),
The dried root of Uragoga (Cephaelis) ipecacuanha (family Rubiaceae), a shrub of Brazil and other parts of South America; contains emetine, cephaeline, emetamine, ipecacuanhic acid, psychotrine, and methylpsychotrine; has expectorant, emetic, and antidysenteric properties.
Synonym(s): ipecac
[native Brazilian word]
Farlex Partner Medical Dictionary © Farlex 2012
২। Scientific Name(s): Cephalelis ipecacuanha A. Rich. (Rio Ipecac) and C. acuminata H. Karst (Cartagena ipecac). 1 Family: Rubiaceae
Common Name(s): Ipecac , ipecacuanha , golden root , Rio or Brazilian ipecac , Matto Grosso ipecac , Costa Rica ipecac
৩। Other Names: Brazil Root, Brazilian Ipecac, Callicocca ipecacuanha, Cartagena Ipecac, Cephaelis acuminata, Cephaelis ipecacuanha, Ipéca, Ipéca du Brésil, Ipéca du Nicaragua, Ipéca du Panama, Ipecacuana, Ipécacuana, Ipecacuanha, Matto Grosso Ipecac, Nicaragua Ipecac, Panama Ipecac, Psychotria ipecacuanha, Racine Brésilienne, Rio Ipecac, Uragoga granatensis, Uragoga ipecacuanha.
৪। drugs.com থেকে -
Botany - Also known as Psychotria ipecacuanha , ipecac is a small perennial tropical plant that grows to about 60 cm in height. Horizontal roots extend from its slender underground stem. At maturity, the roots have a dark brown or red covering, a bitter taste, and a musty odor. The plant is native to the humid forests of Bolivia and Brazil where large plantations have been established to commercialize the collection of ipecac root. Much of the root crop continues to be harvested from the wild, particularly in South America. 1 India also is an important producer of ipecac.
Chemistry - The root and rhizomes of ipecac contain a number of closely related isoquinoline alkaloids in a total concentration of up to 2.5% by weight of the root, primarily emetine, cephaeline, and psychotrine. 4 Because leaves contain less than 0.5% emetine, they are usually not processed commercially. More than a half dozen other alkaloids are found in different parts of the plant. Emetine may be manufactured commercially by the chemical modification of either cephaeline or psychotrine.
Toxicology - Ipecac extracts may be highly toxic; do not confuse with syrup of ipecac. Emetine is a cardiotoxin and has been associated with serious cardiotoxicity.
প্রাসঙ্গিক সূত্রঃ
উইকিপিডিয়া, ওয়েবএমডি, ড্রাগ্সডটকম, অনলাইন মেডিকেল ডিকশনারি, ইপিকাকের উপর গুগ্ল সার্চ রেজাল্ট;
কিছু জেনারেল সূত্রঃ
মার্কিন হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া (HPUS) অনলাইন ডেটাবেস - শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন ও সাবস্কৃপশনের মাধ্যমে প্রবেশযোগ্য, HPUS-এর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনের উপর খসড়া গাইডলাইন, 'প্রুভিং'এর উপর HPUS কনভেনশনের গাইডলাইন, হোমিওপ্যাথির উপর বৃটিশ এনএইচএসের ওয়েবপেইজ, হোমিওপ্যাথির উপর বৃটিশ হাউজ অফ কমন্সের সাইন্স এ্যাণ্ড টেকনলজি কমিটির রিপোর্ট।
****************************************
ধন্যবাদ তথ্যের জন্য।
ইপিকাক কিন্তু নিরাপদ নয়
।
এই টোটকার ব্যবহার আমার কিন্তু বিশাল ভাবে আমার পয়েন্টটাকে ভ্যালিড করছে।
ওয়েবএমডি বলছে:
ইপিকাক যে নিরাপদ না সেটা এলোপ্যাথিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে --- অতিরিক্ত সেবনের ক্ষেত্রে। সেখানে ইপিকাক যে ঘনত্বে তৈরী ও প্রয়োগ হয় সেটার পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণাটা হয়েছিলো এবং এই গবেষণা কিংবা অন্য কোনো গবেষণার ফলাফল স্বরূপ ইপিকাক ফার্স্ট এইড বক্স থেকে ১৯৫৫ সালে (সম্ভবত) সরিয়ে ফেলা হয়েছিলে। এদিকে, আপনি নিজেই কিন্তু ৬X আর ৩০X এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মূল পোস্টে -- হোমিওতে এই দুটা মাত্রাই ব্যবহার করার কথা আমি লিখেছিলাম। কতবার এগুলো প্রয়োগ করলে ঐ পয়েন্টটা ভ্যালিড হবে?
বাই দা ওয়ে, আমরা আগে বমির সমস্যায় যাত্রার আগে অ্যাভোমিন নামক ট্যাবলেট খেতাম। বাপরে! সাইড ইফেক্টের বহর পড়ে ভয় পেলেও কি জানি একটা মিল লক্ষ্য করলাম। তারপর আরেকটু ঘাটাঘাটি করে এই পাতায় গিয়ে হাজির হলাম। বুঝতে ভুল না হলে, অ্যাভোমিন ট্যাবলেটের উপাদানের জেনেরিক নাম হল promethazine theoclate আর সেই প্রমিথাজিন আর ইপিকাকের নাম একসাথে দেখে অবাক হই নাই। দুটোর মধ্যে সম্পর্ক আছে -- কী সম্পর্ক সেটা অভিজ্ঞজনই উপরের লিংক দেখে কিছুটা আইডিয়া দিতে পারবেন। আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে নিচের লাইনগুলো।
অভিজ্ঞ কেউ কি একটু বুঝিয়ে দিবেন?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কফ সিরাপের প্রিপারেশন বলে মনে হচ্ছে। ইপিকাক সম্পর্কে ধারণা ছিলো না, কিন্তু উপরে মন-মাঝির মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে এটারও এক্সপেক্টোর্যান্ট প্রোপার্টিস আছে।
Ipecac
ঠান্ডা মাথায় লিখছি আলাদা মন্তব্যে। আমি নিজে এই মুহুর্তে এমনিতেই প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত। হোমিও কিংবা অ্যালো কোনোটাতেই এটার চিকিৎসা নাই --- ওষুধ খেলে এক সপ্তাহে সারে, না খেলে ৭ দিনে সারে (ওষুধ খাইলাম আর ঘন্টা/দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় পৌঁছুলাম এমন কোনোটাতেই নাই)। পরিবারে দুই ঘরানার ডাক্তারই বিদ্যমান। জ্বর নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পুরাটা একটানে পড়তে পারিনি। এমনকি সুস্থ অবস্থায় পড়লেও এই পোস্টটি লিখতে আপনি যে পরিমান ইফোর্ট দিয়েছেন পাঠক তার এক দশমাংশ ইফোর্টও দেবে না (জেনেরালাইজেশন সেন্সেই বললাম)। সেজন্য আমার প্রথম মন্তব্যতে বেশিরভাগ অংশ অন্য আরেকটা জায়গা থেকে কপি পেস্ট মেরেছিলাম এক লাইনও পরিবর্তন না করে --- এজন্য ওগুলোকে উদ্ধৃতির মধ্যেও রেখেছিলাম। অন্য আরেক জায়গার একটু কাছাকাছি হলেও হুবহু একই পয়েন্টের বিপক্ষে লেখা না বলেই সেগুলো টু দা পয়েন্টে আসেনি।
যা হোক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই হল একটা স্বতঃসিদ্ধ ধরে আগানো এবং টেস্ট করা। প্রথমে যে পরীক্ষাটার কথা বলেছেন ওটাতেই আমার বিরাট ঘাপলা মনে হয়েছে -- কেন এবং কিভাবে সেটা আলাদা মন্তব্যে লিখছি।
বাসার সকলেই আমার চেয়ে জ্ঞানী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়েও । কারণ আমার স্পেলাইজেশনের ক্ষেত্রেও আমার পরামর্শ তারা ফুৎকারে উড়িয়ে দেয় ---- ক্লাশে পড়ানোর সময়েও এই বিষয়টা আমি ছাত্রদেরকে জানিয়ে রাখি ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
চমৎকার মন্তব্যটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সত্যি বলতে কি বাংলাদেশে থাকাকালীন সময় আমিও হোমিওপ্যাথির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু তথ্য প্রমানের সাপেক্ষে অবস্থান বদলেছি। তথ্য প্রমান যেখানে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার সেখানে ভুল বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে থাকা বোকামী ছাড়া কিছুই নয়।
লেখা শেয়ার করে কিছু মানুষ কে জানিয়েছিলাম - ২/১ টা প্রতিক্রিয়ায় মনে হল হোমিওপ্যাথ বেশ ধর্মসম্মত!
এদের জিজ্ঞেস করবেন তো যে, হোমিও টোটকায় যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় সেটা কতটা ধর্মসম্মত?
facebook
ঐটা ভেষজ এলকোহল, ১০০% হালাল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জব্বর লেখা ! শেয়ার করে পড়াতে হবে অনেককে।
ছুডুকালে মাছের কাঁটা গলায় বিঁধলে হোমিওপ্যাথি খাইতাম, মিষ্টি মিষ্টি গুল্লা গুল্লা
facebook
হু, রসকদম নামে এক জাতের মিঠাই আছে, ঐডারেও হোমিও মিষ্টি কৈতাম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ঘ্যাচাং
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
লেখাটা ভালো লাগল।
হোমিওপ্যাথিতে কতটা বিজ্ঞান আছে, তা দেখার অবকাশ নেই আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষের। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যতক্ষণ না পর্যন্ত সকলের সাধ্যের নাগালের মধ্যে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিরুপায় মানুষ হোমিওপ্যাথি কেন বাটি চালান, শিঙ্গা চালান, পানি পড়া, তাবিজ পড়া, তেল পড়ার দ্বারস্থ হবেই।
শিক্ষা, সচেতনতা, আর সকলের জন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যাবস্থা- কবে হবে কে জানে?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখা গুলো পড়ে ভাল লাগল এবং একটি নতুন জগত এর ধারণা পেলাম যা প্রতিটি মানুষ অজানাকে জানতে চায় মনে হচ্ছে একটি অধ্যায় আজ শেষ করলাম আশা করবো আয়ুরবেদী সম্পর্কে একটু লিখবেন।
আপনার লিখায় অনেক কিছু জানা হলো,তাই আপনাকে ।
আমরা কাকে আসলে দোষটা দিবো?যাদের কাছে শিক্ষার আলো পৌছায়নি তাদেরকে শুধু?কিন্তু আমিতো দেখি আমার দেশে কম বেশি সবাই এই চিকিৎসা সম্পর্কে পজিটিভ ধারনা রাখে,তাদের যুক্তি সেই মোক্ষম টাই,কাজ না করলেও তো এর কোন খারাপ রিয়েকশান নেই, হা হা।আমার কলিগ একজন ফার্মাসিস্ট,যিনি নিজে ওষুধের ফরমুলেশন করেন,ওষুধ বানান।কোন এক্টিভ কতটুকু দিলে কতটুকু কাজ করবে,কেন কি ভাবে কাজ করবে সবি তিনি জানেন।আমরা ওষুধের এতো এতো কোয়ালিটি রাখার চেষ্টা করি,তারপর ও আমাদের ওষুধের প্রটেন্সি সব সময় কাঙ্খিত মাত্রায় আসেনা অথচ কোন কোয়ালিটি,কোন এফেক্ট টেষ্ট ছাড়া তারা একটা প্রোড়াক্ট তৈরী করে আর সেটা শরীরে কাজ করবে এমনটা কি করে বিশ্বাস করা যায়?অথচ সব কিছু জেনেও সেই তিনি নিজে হ্যামিওপ্যাথিক ওষুধ খান।এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আপনি কোথায় যাবেন,বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে যদি এমন অপবিজ্ঞানে মেতে থাকেন তাহলে যারা জানে না কিছু্ই তাদেরকে কি বলবেন?আমি যে কোম্পানিতে আছি সবাই দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা সেরা বিষয়গুলোর ছাত্র(রসায়ন,ফার্মাসি,অনুজীব বিজ্ঞান,জৈব প্রযুক্তি)তাদের বেশি ভাগি হোমিপ্যাথিক চিকিৎসাকে শুধু মাত্র ভালো বলেনা,নিজেরাও গ্রহন করে।কি এক অদ্ভুত বিষয়,আমি অবাক হয়ে ভাবি এও কি করে সম্ভব,বিজ্ঞানের সাথে সারাটা জীবন কাটিয়ে,প্রতিদিন বিজ্ঞান চর্চা করে এরা দিন শেষে পড়ে থাকে অপবিজ্ঞানে?আর কতটুকু পড়লে এরা,আর কতটুকু জানলে এরা বিজ্ঞান পড়ে অপবিজ্ঞান চর্চা করবে না আমি ঠিক জানি না।আমি তাই এইটুকু বুঝি এই ভূত সহজে যাবেনা আমাদের সমাজ থেকে,আমাদের রাষ্ট্র থেকে,হয়তো ধীরে ধীরে আরো বাড়বে এর পরিধি,এর আরো প্রসার ঘটবে এই মিথ্যে প্রচারের যুগে।তাই শামসুর রহামানের সেই কবিতার মতোই আমার মনে হয় “উদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ” আর এমন করেই চলবে আরো দীর্ঘ সময়।
মাসুদ সজীব
হোমিও-প্যাথেটিক আর এলোপাথারি এক জিনিষ নয়।
ইদানিং কিছু জিনিষ জানছি যে, শব্দ দূষণ, দৃশ্য দূষণ --- অর্থাৎ এই দুটো জিনিষের কিছু ব্যবহার মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। উল্টা জিনিষের প্রয়োগও আছে -- চমৎকার মিউজিক/শব্দ মানুষকে উৎফুল্ল করে, তাকে রিফ্রেশ করে; চমৎকার দৃশ্যও নাকি দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে (শরীরে বেশ কিছু কেমিকেলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ (বাড়ানো, কমানো) করে বা ইনিশিয়েট করে)। কোথায় পড়েছিলাম খেয়াল নাই -- সেটা বিজ্ঞানসম্মত নাকি ধর্ম সম্মত ভাবে ক্লেইম করেছিলো সেটাও আসলে খেয়াল করি নাই। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দৃশ্যের প্রতিক্রিয়ার ঘটনা জানি: একবার বাসার কাছে একটা ট্রাকে আগুন দেয়া হল - সেই সময়ে আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। কৌতূহলী হয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। ট্রাকটা আসলে একজনকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিলো। ড্রাইভারকে না পেয়ে মানুষ ট্রাকে আগুন দিয়েছিলো। ওখানে রাস্তার উপর মানুষের ঘিলু এবং বেশ বড় এক টুকরা চামড়া সম্ভবত কান থেকে মাথার দিকের পরে থাকতে দেখেছিলাম। বাসায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে সেটা দৃশ্যের কারণে নাকি গরমের কারণে সেটা নিয়ে যুক্তিতর্ক আসতে পারে -- ওরকম গরমে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না ঐ বয়সে। এছাড়া ডুম-টু নামক গেম খেলা দেখলেও গা-গুলাতো অসুস্থ লাগতো। ডুম-টু মোশন সিকনেসের কারণ এখন চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। যে এই ব্যাখ্যা জানেনা তার কাছে এগুলো রহস্য।
ধান ভানতে শিবের গীতটা এজন্য বললাম -- কারণ, এগুলো এমন এমন জিনিষ যেটা এখনও প্রচলিত পদ্ধতির পরীক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে সরাসরি প্রমাণ করা কষ্টকর। ১০০ জনের উপর ডাইরেক্ট পরীক্ষা করলে বা একজনের উপরেই ১০০ বার (রিপিট) পরীক্ষা করলে একই ফলাফল দেবে না বলেই আমার ধারণা (এই ধারণা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে অবশ্য)। পরীক্ষার ফলাফলের জন্য পরীক্ষাটাই সঠিক উপায়ে ডিজাইন করা গুরুত্বপূর্ণ।
হোমিওপ্যাথি আর হোমিওপ্যাথির ঔষধগুলোর মধ্যে ঔষধগুলো আসলেই ভীষণ ভেজালের বর্ণনা। এখানে কোন কোন রোগে কাজ করবে, কত ডোজ কাজ করবে -- এগুলো বলা আছে কিন্তু কীভাবে কাজ করে সেটা ব্যাখ্যা করা নাই। ঐ যে মূল ব্যাখ্যা ওটা ধরেই আগাতে হয়, কিন্তু সেটা দিয়ে সবকিছুতে ভেজাল বাড়ে বৈ কমে না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এটার কারণ এমন হতে পারে -- যে হঠাৎ করেই ব্যাপারটা বুঝতে পারছে তার কাছে ব্যাখ্যা করার মত সমস্ত তথ্য নাই। এই গল্পটা দেখেন:
সারা কারখানা ঘুরে ইঞ্জিনিয়ার বললো আমাকে একটা ম্যালেট (কাঠের হাতুরি) দেন, তারপর সেটা দিয়ে একটা মেশিনের কোন একটা জায়গায় দুইটা বাড়ি দিলো, কারখানা চালু হয়ে গেল। এরপর যদি স্বতঃসিদ্ধ হয়ে যায় যে ম্যালেট দিয়ে বাড়ি দিলেই মেশিন চালু হবে তাহলে কিন্তু মুশকিল। তারপর নন-ইঞ্জিনিয়ার গবেষক দল ১০০টা মেশিনে বাড়ি দিলো -- দুই একটা দৈবগুণে চালু হল। আবার ১০০টা মেশিনে লোহার হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিলো -- ফলাফল সেইম। ক্লেইম: হাতুড়ির বাড়ি দেয়া না দেয়া সমান কথা। ---- ব্যাপার তো হাতুড়ির বাড়িতে না, ব্যাপার হল কে দিচ্ছে সেটা -- ইঞ্জিনিয়ারের জ্ঞানে। ইঞ্জিনিয়ার ৪ বছর কোর্সে আর ১০ বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেই সমস্যা ধরতে পেরেছে সেটা ব্যাখ্যা করতে ১০ মিনিট যথেষ্ট নয়।
যা হোক আবার বেলাইনে চলে গিয়েছি। লাইনে থাকার চেষ্টা করি। আমি ডাক্তার নই, শরীরবিদ্যা তেমন একটা জানি না -- অবশ্য আমার কাজের ক্ষেত্র হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং (ওয়াটার, ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট ইত্যাদি বিষয়াদি) - তাই কিছু কিছু জিনিষ ডিটেইলে পড়তে হয় (দূষণ এবং হেলথ ইফেক্ট ইত্যাদি)।
এবার মূল আর্টিকেলে উল্লেখিত পরীক্ষাতে কী কী ঘাপলা মনে হয়েছে এবং কেন মনে হয়েছে সেটা বলি:
হোমিওতে রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করে। একই ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন রোগীর ভিন্ন ভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। আবার একই লক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন রোগীতে ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ দেয়া হয়। কারণ ঐ লক্ষণ ছাড়াও আরও অনেকগুলো ভ্যারিয়েবল সেখানে বিবেচনা করা হয়। এইখানেই পরীক্ষাটার ঘাপলা। যেই ১০০ জন রোগীকে একটা লক্ষণে ঐ ঔষধ (+ প্লাসিবো) সেবন করানো হয়েছে -- একজন ভাল হোমিও ডাক্তার হয়তো তাঁদের সকলকে ঐ ঔষধ দিতেন না, অন্য ঔষধ দিতেন।
অ্যালোপ্যাথিতেও কিন্তু এই বিষয়টা লক্ষ্য করেছি -- জ্বর বা শরীরে টেম্পেরাচার হলে আমরা জাস্ট ভাবি প্যারাসিটামল, কিন্তু ডাক্তার বিভিন্ন টেস্ট করে নিশ্চিত হন বা অনুমান করেন কারণটা, তারপর সেটার ঔষধ দেন। গায়ের জ্বরে একজনকে হয়তো দিবেন দাঁত ব্যাথার ঔষধ, আরেকজনের কাণে অলিভ অয়েল, আরেকজন পাবে এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি। তবে এগুলোর কারণ এবং ঔষধের কার্যপ্রণালী সবই চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। হোমিওতে কারণটা ডাক্তার বলতে পারবেন, কিন্তু ঔষধ কিভাবে কাজ করে সেটা আমি কোথাও দেখি নাই। তবে আমি অন্তত দুইজন হোমিও ডাক্তার দেখেছি যাঁরা ঔষধ দেয়ার আগে রোগীর আগের সমস্ত প্রেসক্রিপশন দেখেন, টেস্ট রেজাল্ট দেখেন -- অর্থাৎ ডায়াগনোসিসটা যতদুর সম্ভব ঠিক করার চেষ্টা করেন। পরিচিত ডাক্তারের কাছে শরীরবিদ্যা সংক্রান্ত বইপত্রও দেখেছি (যা আসলে অ্যালোপ্যাথিতে পাঠ্য)। যা হোক হোমিও'র ঔষধের ডকুমেন্টেশন খুবই খারাপ -- অন্তত ইন্টারনেটে ঘেটে আমার সেরকমই মনে হয়েছে। -- এই ব্যাপারে মূল পোস্টের সাথে দ্বিমত নাই।
পরীক্ষাটা যদি ডবল ব্লাইন্ড টেস্ট অব ঔষধ না হয়ে ডাক্তার হত তাহলে ভাল হত। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ঔষধের বদলে একজন খুব ভাল হোমিও ডাক্তার হবে গবেষণার কেন্দ্র। উনি যত রোগী দেখে ঔষধ লিখবেন (সেটা বিভিন্ন ঔষধ হতে পারে) সেখানে ব্লাইন্ড টেস্ট করা হউক। অর্থাৎ ঔষধ লিখে সেটা দেয়ার জন্য প্রেসক্রিপশন যখন কম্পাউন্ডারের কাছে দিবেন সেখানে ডাক্তারের অজান্তেই দৈবচয়নে কোনো রোগীকে ঐ ঔষধই দেয়া হউক আর কোনো কোনো রোগীকে যাস্ট প্লাসিবো দেয়া হউক। এরপর সেই রোগীদের ফলোআপ চেক করে দেখা হউক কার কতটুকু ইমপ্রুভমেন্ট/পরিবর্তন হল। সেই ফীডব্যাকগুলোকে ডাক্তারের বলা বা ফোরকাস্ট করা পিকচারের সাথে মিলছে কি না সেটা মিলিয়ে ইয়েস-নো করার পর পরিসংখ্যান করে দেখা হউক যে আসলে হোমিও ডাক্তারের ঔষধে বনাম প্লাসিবোতে তুলনামূলক মিল বা অমিল কতটুকু। এখানে ভাল ডাক্তার হতে হবে -- ডাক্তার দৈবচয়নে সিলেক্ট করা যাবে না; কারণ হোমিওর বেশিরভাগ ডাক্তারই আসলে তেমন ভাল না।
পার্সোনাল অভিজ্ঞতার কথা বলি। একই লক্ষণে দুইজন ডাক্তার আমাকে দুই ঔষধ দিয়েছিলেন। একজনেরটায় না সারায় অন্যজনের কাছে গিয়েছিলাম। পরেরজনের ক্ষেত্রে কাজ হয়েছিলো। একই ঘটনা কিন্তু অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারের কাছেও হয়েছিলো। দুই ক্ষেত্রেই ভাল ডাক্তার নামে যিনি সুনাম কামিয়েছেন ওনার ওষুধেই কাজ হয়েছিলো। অর্থাৎ সঠিক ডায়াগনোসিসটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
লেখা দারুন হয়েছে , হোমিওপ্যাথিক নিয়ে বেশি কিছু বলার নাই কিন্তু এর প্রতি বিশ্বাস অনেক শিক্ষিত লোকের মধ্যেই আছে। আমার মেয়ে যখন ছোট তখন জ্বর হলে আমার শাশুড়ি হোমিওপ্যাথিক খাওয়ানোর জন্য অনেক জোর করত কিন্তু আমি নিজে ডাক্তার হওয়াতে কখনওই হোমিওপ্যাথিক খাওয়াই নাই কিন্তু আমার শাশুড়ির কাছে অবাধ্য হিসেবে পরিচিত হয় গেছি
ইসরাত
বেশ কনফিউসড হয়ে গেলাম
কারণ, ছোটবেলায় আমার অনেক অসুখ-বিসুখ হোমিওপ্যাথি খেয়ে সেরেছে।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, আমার ডান পায়ের পাতার ওপর (যেখানে আমরা জুতোর ফিতে বাঁধি)
একটা অর্ধেক মার্বেলের সমান ছোট্ট শক্ত টিউমারের মতো হয়েছিল।
ব্যথা-বেদনা ছিল না। তবে মানসিক অস্বস্তি ছিল।
এলোপ্যাথি ডাক্তার বললেন, হাড় বেড়ে গেছে অপারেশন করতে হবে।
এরপর নামকরা এক হোমিওপ্যাথের কাছে গেলাম।
তিনি পাঁচ হাত দূরে এক চৌকিতে শুয়ে এক ঝলক দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন।
সহকর্মীকে কী এক ওষুধের নাম বললেন।
সাত দিন পর পা একদম আগের মতো হয়ে গেল।
এটাকে কী বলব? টোটকা? জাদু-বিদ্যা? প্লাসিবো?
আপনার যেটা হয়েছিলো আমার সেটা হয়েছিলো। আমিও হোমিওপ্যাথি খেয়েছি। আমার সারেনি। এটাকে কি বলব?
আপনার হয়ত এমনিতে সেরে যেতো। ধরুন একটা এক্সটার্নাল কারণ ছিলো - জুতো পরা। জাস্ট ধরে নিন, কারণ অন্য কিছু হতে পারে। এখন হোমিওপ্যাথি খাবার সাথে সাথে যদি কয়টা দিন জুতা পরা বন্ধ করেন তাহলে দুটা কারণের কোনটায় সমস্যাটা সমাধাণ হয়েছে বলতে পারবেন। কজাল রিলেশন (ক এর কারণে খ হয়েছে), দাবী করতে হলে গ, ঘ এবং ঙ কারণগুলো রুল আউট করতে হয়।
আমি হোমিওপ্যাথির ডাই হার্ট ফ্যান নই, সুতরাং জোর করে কিছু প্রমাণ করতে চেষ্টা করব না।
তবে দীর্ঘ দিন যে অসুখ সারল না, সেটা ওষুধ খাওয়ার সাত দিনের মধ্যে সেরে গেল
এটাতেও কি হোমিওপ্যাথির ওপর বিশ্বাস না করে অন্য কোন প্রভাবক খুঁজব?
অসুখ সেরে যাওয়ার বেশ কয়েকটা উদাহরণের মধ্যে আমি একটা মাত্র উদাহরণ দিয়েছি।
জানি তো, সকলেই কবি নন- কেউ কেউ কবি।
সকল হোমিওপ্যাথিস্টের ওষুধেই অসুখ সারে না।
তবে হাজারে এক জন পাওয়া যায় যাঁর দেয়া ওষুধে কাজ হবে।
আমি এমন হোমিওপ্যাথিস্ট দেখেছি যিনি রোগীর কেস হিস্ট্রি মোটা জাবদা খাতায় সংরক্ষণ করেন
এবং রোগীর একটা সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে দেন যাতে ভবিষ্যতে রোগী ফিরে এলে সহজে চিকিৎসা করা যায়।
এঁদের ধৈর্য, শ্রম, নিষ্ঠা দীর্ঘকাল মনে রাখবার মতো।
এজন্যেই হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান না, কবিতা হতে পারে হয়তো।
(আপনাকে ঠাট্টা করছি না কিন্তু!)
****************************************
আরে ভাই, ছোটবেলায় আমি তো হোমিওপ্যাথির সাদা বড়ি এমনি এমনিই খাইতাম!
লেখায়
অনেক ক্ষেত্রেই হয়ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কোন কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি না। তবে আমি বেশ কয়েকবার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছি। ছোটখাট রোগ ছিল বলে ধরে নিতে পারি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্লাসিবোর কারণে সেরে গেছে। কিন্তু একটা বড় ঝামেলা থেকে আমি বেছে গেছি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে সেটা না উল্লেখ করলেই নয় এবং সেটাকে আমি প্লাসিবো বলে মেনে নিতে নারাজ। টানা প্রায় ১ বছর সামার বয়েল এ ভুগে যখন কোন অ্যান্টিবায়োটিক ই কোন কাজ করলনা আমি বাধ্য হয়ে একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ( উনি এম বি বি এস পাশ করে এখন হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করেন) এর শরণাপন্ন হই। এবং তাঁর ওষুধ খাওয়ার পরে এখন পর্যন্ত আর কখনো হয়নি। নিজে এই ঘটনার স্বীকার হওয়ার পর থেকে হোমিওপ্যাথিকে অপবিজ্ঞান বলতে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে ।
মুদ্রা সংগ্রাহক
কোন কিছু কাজ করলেই মনে হয় না সেটা 'বিজ্ঞান' হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শর্ত পূরণ করতে না পারলে তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
****************************************
আমার লেখা পড়ে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসাপাতালে নিউরসার্জন এবং একটি মেডিক্যাল কলেজের নিউরোসার্জারী বিভাগের প্রাক্তন হেড অভ দ্যা ডিপার্টমেন্ট ফেইসবুকে নীচের মন্তব্যটি করলেন।
মেসেজে মন্তব্যটি প্রকাশের অনুমতি চাইলে আরো জানালেন:
আমার হাতে একবার টিউমার হয়েছিলো। হমিওপ্যাথি খেয়ে কাজ হয়ছে । কিভাবে হলো?
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার?
দারুন লেখা।
খালি একটা জিনিস বাদ রয়ে গেছে। সাধারণ ওষুধ ডাবল ব্লাইন্ড টেস্ট দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। হোমিয়প্যাথীতে ওষুধ তৈরী করার মেথডোলজি কি ?
খ সেকশন দ্রষ্টব্য:
Osonkho Dhonnobad ei lekha ti post korar jonno. Besir vag 3rd world country gulo ei HOMIO-PATHETIC chikitsay khotigrostho hochche. Protiti bisoy niye eto valo vabe bujhe lekha sotti sadhubad'er joggo.
Sudhu ekti bisoy ja etir sathe jukto noy kintu comment theke paoa bole seti niye bolchchi (bisoy'er baire giye bolar jonno khoma prarthi) - Marx bad kintu bigyan noy. oti Arthoniti r upor dariye thaka ekti theory ja world er sob university ba college gulo te ortho niti ebong rajniti niye porte jaoa student der portei hoy.
Aro ekbar dhonnobad apnake ei sundor lekha tir jonno.
Mon Chasa'র উপরের ল্যাটিন অক্ষরে করা মন্তব্যটা সচলায়তনের সাথে যায় না যেখানে বাংলায় লিখতে সবাইকে উতসাহিত করা হয়ে থাকে। অনলাইনে এই মুহুর্তে কোন মডু থাকলে এক্ষুনি মুছে ফেলার অনুরোধ থাকল। !!
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
অসাধারন লেখা। আমার মনে হয় এই লেখার প্রাসঙ্গিকতা আরো অনেকদিনই থাকবে। কোনটা বিজ্ঞান এ নিয়ে স্কুল কলেজ পাশ দেওয়া শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যেও পরিস্কার কোন ধারনা নেই। লেখককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
http://www.thedailystar.net/health/1800-studies-later-scientists-conclude-homeopathy-doesnt-work-1317655
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
অনেক কষ্ট করে লেখার জন্য ধন্যবাদ। হোমিও সম্পর্কে এই লেখাটি লেখার জন্য আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। আপনি এই লেখাটি লেখার আগে মনোস্থির করেছেন আপনি হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধে লিখবেন। আপনি একজন সত্যিকারের পর্যবেক্ষক নন। এমন নয় যে আপনি হোমিওপ্যাথি পর্যবেক্ষণ করেছেন। আপনি শুধু কতগুলো অন্য লেখকদের রচনার সাথে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে আরেকটি রচনা লিখেছেন। হোমিওপ্যাথি দিয়ে কি ধরণের আরোগ্য হয় তা দেখতে হলে কোন নামকরা ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথের চেম্বারে কমপক্ষে ৬মাস সময় দিতে হবে। তাহলে আপনি একজন রোগীর ধারাবাহিক অগ্রগতি দেখার সৌভাগ্য লাভ করবেন। ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা রোগীকে একই সময় একাধিক ওষুধ প্রয়োগ করেন না। কেবলমাত্র ১টি ওষুধ প্রয়োগ করেন। যা’ই হোক আপনার প্রতি অনুরোধ - হোমিওপ্যাথি কি তা প্রত্যক্ষভাবে জানার চেষ্টা করুন কারো ২/১টি লেকচারে বিভ্রান্ত হলে সেটা আপনার ব্যর্থতা। কারো প্রতি অন্ধ অনুরাগ বিরাগ এসব ধারণা মনে পুষবেন না। পক্ষ/বিপক্ষ নয় বরং পর্যবেক্ষক হওয়ার চেষ্টা করলে সবাইকে শ্রদ্ধা করতে পারবেন। এবং অনেক কিছু জানতে পারবেন। ধন্যবাদ
কষ্টকরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যে উপদেশ আমাকে দিলেন সেই অনুযায়ী নিজেও পর্যবেক্ষক হয়ে দেখবেন আশা রাখি।
হোমিওপ্যাথি বৈজ্ঞানিক নাকি অবৈজ্ঞানিক তা নিয়ে আপাতত আমি কিছু বলবো না। এখন এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক কিনা তা নিশ্চিত হলেন কিভাবে?
আমার নানার একটা অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি। তার হাটুতে ব্যাথা,হাটতে কষ্ট হয়। গেলেন একজন এলোপ্যাথি ডাক্তারের কাছে, তিনি একটা ইঞ্জেকশন দিলেন, সাথে সাথে নানার হাটু ব্যাথা গায়েব। আরামে হাটতে হাইতে বাড়ি চলে এলেন। কিন্তু পরদিন আবার সেই হাটু ব্যাথা।
আসলে ডাক্তার সাহেব, ইঞ্জেকশন দিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য হাটুর নার্ভ গুলো নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন। আসল সমস্যা সমাধান করতে পারেননি।
আমাকে কেউ এলোপ্যাথির একটা ওষুধ দেখান যা গোড়া থেকে রোগ ভালো করে। জাস্ট পরিচিত একটা ওষুধ দেখতে চাই।
নতুন মন্তব্য করুন