বাংলাদেশের শিশুদের বই পড়ার সুযোগ খুব কম। স্কুলের বই জোগাড় করার সুযোগই নেই অনেকের। পড়ার বইয়ের বাইরের বই জোগাড় করার সুযোগ খুবই অপ্রতুল।
আমি যখন প্রাইমারী স্কুলে ছিলাম তখন স্কুলে একটা ছোট লাইব্রেরীর মতো করা হয়েছিলো। সেখানে আহামরী না হলেও কিছু বই পাওয়া যেতো। কিন্তু বই চুরির ধাক্কায় সেই লাইব্রেরী আর টেকেনি। একই অবস্থা হতো পাড়ার লাইব্রেরীগুলোর। শখ করে একজন দু'জন পাঠাগার গড়ে তুললেও বই চুরির ধাক্কায় সেগুলোও টিকে থাকতে পারেনি বেশী দিন। কিশোর বই পড়ুয়াদের তাই নিজ পয়সায় বই কিনে পড়া ছাড়া তেমন কোনো সুযোগ ছিলোনা বললেই চলে।
এই ফাঁকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কথা না তুললেই নয়। ঢাকায় মিরপুরের মতো জায়গায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বিচরণ সসময়টা ছিল না বললেই চলে। অনেক পরে বিসাকে এর গাড়ী দেখেছি। কিন্তু ততদিনে আমার পড়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।
হাই স্কুলে উঠে হাতের কাছে পেয়েছিলাম চট্টগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরী। নিয়মিত বই পড়তে যাবার সেই সময়টা খুব আনন্দময় কেটেছে আমার। এছাড়া চট্টগ্রাম নিউমার্কেটের আশেপাশের নতুন পুরোনো বইয়ের দোকান চষে বেড়াতাম আমরা কয়জন পড়ুয়া।
ঢাকায় ফিরে বই কেনার অভাব পুরণ করেছে নীলক্ষেত। নীলক্ষেত আমাদের উচ্চশিক্ষার বইয়ের একটা বিরাট অভাব পুরণ করেছে। কিন্তু সেই সাথে নতুন বইয়ের বাজার নীলক্ষেতের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে পড়ুয়াদের জন্য স্কুল কেন্দ্রীক, পাড়া কেন্দ্রীক পাঠাগার নেই বললেই চলে। পাবলিক লাইব্রেরী নামে প্রতিটি বড়শহরে একটি করে পাঠাগার থাকলেও কিশোরদের জন্য সেটা সীমিত কিংবা নাগালের বাইরে। পুরোনো বইয়ের দোকানগুলো আর নীলক্ষেতের উপর অনেক সময় ভরসা করতে হয় পড়ুয়াদের। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্ভাবনা থাকলেও, অন্ততঃ আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ে, এই প্রভাব সবার কাছে পৌঁছায়নি। ইলেকট্রনিক বইয়ের বিষয়ে পরে আসছি।
আমার উচ্চ শিক্ষার সময়টুকুতে পড়াশোনার বাইরের বই পড়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। আমার বাবা আমার অতিরিক্ত বই পড়া দেখে রীতিমত বিরক্ত হতেন, একেতো টাকা খরচ, দ্বিতীয়ত চোখে চশমা নিতে হয়েছিলো ছোটবেলা থেকেই। তিনিও খুশী হন পড়াশোনার বাইরের পড়া বন্ধ করেছি দেখে। ইন্টারমিডিয়েটের পর পর কেনা একগাদা বইয়ে পোকা জমতে থাকে।
এরপর বাইরে চলে আসি পড়াশোনা করতে। এখানকার ইউনিভার্সিটিতেও একাধিক লাইব্রেরী আছে যেখান থেকে আনলিমিটেড বই ধার নেয়া যায়। আমাদের বাংলাদেশে ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরী ছিলো ছোট্ট আর বই দিতো, যতদূর মনে পড়ে, দু'টো করে। তাছাড়া এখানে বই ছাড়াও পড়ার জন্য জায়গা আছে, গ্রুপ স্টাডির জন্য আলাদা রুম আছে, ফ্রি ইন্টারনেট, ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার এগুলোতো আছেই।
এরমাঝে পড়াশোনা শেষ করে চাকরী শুরু করি। মাঝে কিছু বই পড়ার শুরু করলেও বিভিন্ন কারণে বই পড়ার সুযোগ হয়নি। ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে অডিও বই শুনতাম সেসময়।
একসময় লক্ষ্য করলাম এদেশে প্রতিটি শহরে একটি করে লাইব্রেরী আছে। আপনি শহরের বাসিন্দা হলে ফ্রি বই নিতে পারবেন যতখুশী। অবশ্য আপনার প্রোপার্টি ট্যাক্সের একটা অংশ যায় লাইব্রেরীতে। এছাড়া লাইব্রেরীতে শিশুদের জন্য বই পড়া, বিভিন্ন অ্যক্টিভিটি আছে। বই ছাড়াও পাওয়া যায় ভিডিও, অডিও সিডি/ডিভিডি। ইদানীং ভিডিও গেইম আর ই-বইও রাখে সেখানে।
ইতিমধ্যে ই-বইয়ের প্রচলন হয়েছে। অ্যামাজন কিন্ডল, নুক এবং বিভিন্ন ট্যাবলেট ডিভাইসের উপর ভিত্তি করে ই-বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু বাংলা ইবইয়ের প্রচলন এখনো বাড়েনি। সচলায়তন শুরুতে কিছু ই-বই প্রকাশ করেছে এবং পরবর্তীতে প্রকাশায়তন নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়। বইদ্বীপ নামে আরেকটি ওয়েবসাইট এব্যাপারে কাজও করছে। কিন্তু এবিষয়টি এখনও শিশু।
এদেশে পুরোনো বইয়ের দোকানও আছে। অ্যামাজন, অ্যালিব্রিস বা অ্যাবিইবুকসের মাধ্যমে পুরোনো বই কেনা যেতে পারে। সমস্যা হলো শিপিং খরচ। কিংবা আশেপাশের পুরোনো বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারা যেতে পারে।
এছাড়াও প্রতিটি শহরের লাইব্রেরীগুলো তাদের পুরোনো বই, কিংবা অন্যান্য পাঠকদের দান করা বইগুলো নিয়ে নিয়মিত বইমেলা করে থাকে। সেখানে খুব সস্তায় বই পাওয়া যেতে পারে। কয়েকটা লাইব্রেরীর মেলা ঘাঁটলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন লাইব্রেরীর মেলাগুলোতে ভালো বইগুলো বিক্রি হয়। এই লাইব্রেরী মেলাকে কেন্দ্র করে আবার কিছু বইবিক্রেতা বা বইসন্ধানীকে দেখতে পাবেন। এরা সস্তায় বই কিনে করে ইন্টারনেটে বিক্রয় করে লাভের আশায়। রীতিমত বারকোড স্ক্যানার নিয়ে ঘোরে এরা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আমেরিকাতে স্কুলে, কলেজে এবং ইউনিভার্সিটিতে বই সংগ্রহ করা কোনো সমস্যা নয়। তাছাড়া প্রতিটি শহরে একটি করে লাইব্রেরী থাকে যেখানে বই ছাড়াও নানাবিধ জ্ঞান আহরণের সুযোগ রয়েছে। সেইসাথে পুরোনো বইয়ের দোকান, ওয়েবসাইট এবং লাইব্রেরী কেন্দ্রিক বইমেলায় সস্তায় বই কেনার সুযোগ আছে। উপরন্তু ই-বইয়ের উত্থানের সাথে সাথে বই পড়া এবং সংগ্রহ করা আরো সহজ হয়েছে।
আমারা কেনো উন্নতি করছি না এটি নিয়ে আমরা অনেক সময় হা হুতাশ করি। কিন্তু এই দুটো দেশের এই একটি বিষয়ে তুলনা করলে সমস্যাটির একটি মাত্রা চোখে পড়ে। একটি জাতির শিশু সমাজ যখন পর্যাপ্ত পরিমান পড়ার সুযোগ পায় না, তখন সে জাতি পিছিয়ে যেতে বাধ্য। অথচ সমস্যাটির সমাধাণ খুব জটিল নয়। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এই যুগে স্বল্প খরচে সমস্যাটির সমাধাণ করা যায়।
পাঠকের কাছে প্রশ্ন: আপনি যে জায়াগায় থাকেন সেখানে বই সংগ্রহের উপায় কি? বাংলাদেশ বা একই ধরণের অপ্রতুল বইয়ের দেশে বই সংগ্রহের সমস্যাটি কিভাবে সমাধাণ করা যায়?
মন্তব্য
জার্মানি
পাবলিক লাইব্রেরি আছে সব শহরে। বড় শহরে কয়েকটা করে আছে এই জিনিস। স্থানীয় লাইব্রেরিতে কাঙ্খিত বই না থাকলে লাইব্রেরির সদস্য হয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করে জার্মানির যেকোন পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বই নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করা যায়। অতএব বাজারে পাওয়া যায় বা লাইব্রেরিতে আছে এরকম যেকোন বইই আসলে পাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ
আমি গেলবার দেশে গিয়ে বেশ একগাদা বই কিনেছি। বই কেনার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে বেদনাদায়ক। (আরো কয়েকটা লাইন লিখে মুছে দিলাম। হতাশাজনক পরিস্থিতি একেবারে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
জার্মানীতে অন্য লাইব্রেরী থেকে বই আনাতে পয়সা দিতে হয়? এখানে সেটা ফ্রি। এক শহরের বাসিন্দা হয়ে পাশের শহরের লাইব্রেরী থেকেও বই নেয়া যায়।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরো বলেন।
বাংলাদেশে দুইটা লাইব্রেরিতে গেলাম। একটা পাবলিক লাইব্রেরি আরেকটা ঢাবি লাইব্রেরি। পাবলিক লাইব্রেরিতে বইয়ের অবস্থা করুণ। ওটা একটা জায়গা যেখানে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা মোটামুটা গাইড বই মুখস্ত করতে যায়। ঢাবির লাইব্রেরিতে রিসোর্স ব্যবহার করতে পারবেন না যদি না আপনি ছাত্র বা শিক্ষক হন। বটমলাইন আপনি এতোবড় একটা শহরে সারাজীবন সদস্য হয়ে থাকার মতো কোন লাইব্রেরি সুবিধা পাবেন না। আর মফস্বলের অবস্থা বলার মতোই না। লোকজন লাইব্রেরি বলতে বোঝে যেখানে খাতাকলমপেন্সিলকাগজগাইডবই ইত্যাদি পাওয়া যায়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
পাবলিক লাইব্রেরীতে একবার গিয়েছিলাম। কমফোর্টেবল লাগেনি। চিটাগংয়েরটা বরং অনেক সাচ্ছন্দ্যময় ছিল। এখন কি অবস্থা কে জানে!
আমি কখনো চট্টগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরিতে যাইনি।
ব্যাপারটা শুনতে হাস্যকর ঠেকছে হয়তো, চট্টগ্রামবাসী হিসেবে। তবে আসলেই যাওয়া হয়নি এখনো।
কারণটা খুব সহজ। বাসা থেকে অনেক দূরে, শৈশবকৈশোরে বই পড়ার জন্য একা একা অতদূরে যাওয়ার অনুমতি মিলতো না। একটু বড় হওয়ার পর মন ভরিয়েছে নিজের ক্ষুদে লাইব্রেরিই।
ছোটবেলা থেকে ঐ এক পড়ার অনুমতি মেলানোতে কষ্ট হয়নি কখনোই, বাসায় শেলফ ভরা বই ছিল, দেখেছি খালা- মামাদের বন্ধুদের বাসা থেকে ধার আনা বইতে বুঁদ হয়ে থাকতে। জন্মদিনের উপহার হিসেবে জামাজুতো কিংবা পুতুলের বদলে আজীবনই বই-ই মিলেছে।
ইস্কুল এবং কলেজের লাইব্রেরিতে যে কটা ছেঁড়াখোঁড়া বইপুস্তক ছিল, সব-ই পড়েছি। সংগ্রহ সুবিধার ছিল না, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীর সদস্য হওয়ার সুযোগ হয়নি।
ইয়ার ফাইনালের ছুটিতে মাসখানেক কক্সবাজার কাটিয়েছিলাম, তখন জেলা পরিষদ লাইব্রেরির প্রায় আধাআধি সংগ্রহ উল্টে শেষ করা হয়েছিল। মফস্বল শহরের হিসাবে সংগ্রহ ছিল বেশ ভাল, ক্ষুদে পাঠকের প্রতি লাইব্রেরিয়ানের সাহায্য- সমর্থন ছিল প্রশংসনীয়।
একসময় বই কেনার উৎস ছিল নিউমার্কেটের কারেন্ট বুক স্টোর।
পুরোনো এবং তুলনামূলক সস্তা বইয়ের খনি অমর বইঘর, সেখান থেকেও কিনেছি বিস্তর।
ঢাকায় আজিজ সুপার মার্কেট, কনকর্ডের মধ্যমায় গেছি সাকুল্যে ক'বার।
অনলাইনে বই কেনা হয় রকমারী থেকে। বিশেষত নীলক্ষেত.কম নামের একটি পুরনো বইয়ের অনলাইন সাইটের আমি নিয়মিত ক্রেতা। মাত্র ২৫ টাকা এক্সট্রা সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে দু-তিন দিনের মধ্যেই অর্ডারকৃত বই বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। এখনো অভিযোগ করার মতো কিছু পাইনি। হাজার পাঁচেক টাকার বই কেনা হয়েছে বোধহয় গত আট-নয় মাসে।
বইয়ের জন্য এখনকার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বাতিঘর। আ প্লেস নেক্সট টু হেভেন। দুটো শাখা ওদের, চেরাগি পাহাড়ের মোড় আর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নিচতলায়। যত নিয়মিত পারা যায়, সময়সুযোগ [এবং সামর্থ্য হলেই] পেলেই ঘুরে আসি। ক্যাটালগ অনুযায়ী সাজানো অঢেল বই আছে, বসে পড়ার জায়গা আছে, অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, পাঁড় পড়ুয়াদের জন্য আয়োজিত আড্ডার নিয়ম আছে, ছোট্ট একখানা কফিকর্নারও।
প্রয়োজনীয় বই ঢাকা বা দেশের বাইরে থেকেও আনিয়ে দেওয়া হয় চাইলে। আর কী চাই?
ইয়ে, বিশাল মন্তব্য করে ফেললাম নাকি!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অমর আর কারেন্ট বুক স্টোরে যায়নি এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের বাতিঘরেও সম্ভবতঃ অনেক গিয়েছি। তোমার বই পড়া নিয়ে একটা লেখা দিতে পারো।
হুম, মেটাব্লগিং হয়ে গেলে সব দোষ পোস্টদাতার- এমন বিষয়ে পোস্টানোর জন্য।
বই সবচেয়ে বেশী কেনা হয়েছে নীলক্ষেত থেকে (স্কুল আর কলেজের কাছে ছিলো তাই)। সবচেয়ে বেশী পড়া হয়েছে বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে (বাসার কাছে ছিলো, তাই)। একবার শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে নিজের কান মলেছি- লোকজনের বাজে ব্যাবহার, নোংরা আর অগোছালো অবস্থা দেখে (২০০০ এর কথা- এখন কী অবস্থা জানি না)। পুরোনো ঢাকার আরমানীটোলা মাঠের পাশের লাইব্রেরিটা, সেই হিসেবে, অনেক ভালো ছিলো- এমন কী ৯০ এর দশকেও। এছাড়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধুবান্ধব আর স্বজনদের বই স্রেফ মেরে দিয়ে বিদেশে চলে এসেছি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিচার করলে বাচ্চাদের বই পড়াতে স্কুল লাইব্রেরীর বিকল্প নাই , ধাড়ীদের বেলায় পাবলিক লাইব্রেরী। টরন্টো শহরে সোয়াপমিট (SwapMeet) বলে এক ব্যাপার হয়। পড়া হয়ে যাওয়া বই, দেখা হয়ে যাওয়া ডিভিডি আর শোনা হয়ে যাওয়া সিডি অদলবদল করার জন্য অনেক লোক একসাথে হয় কয়েকমাস পরপর। ওই রকম কিছু হলে মন্দ হয় না।
সোয়াপমিটের আইডিয়াটা তো ভালো। আমেরিকাতেও এরকম কিছু থাকতে পারে। আমার জানা নেই হয়ত। সোয়াপমিট ছাড়া বইয়ের আর উৎস কি কানাডাতে?
সোয়াপমিট তো ঢাকায় চালু করা যায়!
(সতর্কতাঃ হাতি মন্তব্য)
ইউ এস এঃ
আসার পরপরই ভার্সিটির লাইব্রেরিতে গিয়ে অবাক হয়েছিলাম। রাজ্যের বই, যেটা নিজেদের লাইব্রেরিতে নেই সেটা আবার ইন্টার-লাইব্রেরি লোন দিয়ে আনানো যায়। বই কতগুলো নিতে পারবো জিজ্ঞেস করায় হেসে লাইব্রেরিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, "As many as you can carry" (দুষ্টুলোকে এখন দেখলে বিশ্বাস করবে না, তখন পুরাই চিকনা ছিলাম)। আর বই বলতে শুধু পড়ার বই না, রিল্যাক্সেশনের জন্য দোতলায় আলাদা পুরো কর্নার, তাতে মোটা মোটা গদিওয়ালা সোফা, তার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট ক্যাবিনেট আর বিভিন্ন জনরার গল্পের বই, লাইট রিডস। এক সাইডে আবার একটা সেন্টরের কংকাল রাখা । আর ছয়তলা লাইব্রেরির তলায় তলায় গ্রুপ স্টাডি রুম, কোয়ায়েট স্টাডি রুম, মাইক্রোফিল্ম রুম, এক কোণায় স্টারবাকস, বিশাল স্টুডেন্ট কমনস ভর্তি পাবলিক কম্পিউটার - এসব দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেছিল একটু নিজের দেশের কথা ভেবে।
একটু সড়গড় হওয়ার পরে আবার শহরের পাবলিক লাইব্রেরিতে মেম্বার হলাম। সেখানে মেম্বার হতে গিয়েও একই অনুভূতি। লাইব্রেরিয়ান মুখ কাঁচুমাচু করে জানালো মেম্বার যেদিন হচ্ছো, সেদিন মাত্র বত্রিশটা বই নিতে পারবে। বারবার করে বুঝিয়ে দিল এটা শুধু প্রথম দিনের জন্যই, এর পর থেকে যতগুলো ইচ্ছে ততগুলো নিতে পারো। আমাদের ছোট শহরেই লাইব্রেরির শাখা বিশটা। অনলাইনে লগ ইন করে ইচ্ছেমত বই সিলেক্ট করে পিক আপ দিয়ে রাখা যায়, লাইব্রেরি স্টাফ সবগুলো বই জোগাড় করে ইমেইল পাঠিয়ে দেবে। এরপর বাড়ি ফেরার পথে সময় করে খালি নিয়ে আসা। নিজেদের ব্রাঞ্চে না থাকলে অন্য ব্রাঞ্চ থেকে এনে দেবে। সেই সাথে আছে অডিও বুক, মুভি এইসবের কালেকশন। যদি কোন ব্রাঞ্চেই পছন্দসই বই না থাকে, তাহলে সাজেস্ট করার অপশন আছে, সাধারনত এক বছরের পুরানো মুভি হলে কিনে ফেলে, বইও যদ্দুর জানি কিনে ফেলে। আমি কখনো নিজে সাজেস্ট করি নি যদিও, আশেপাশের লাইব্রেরি মিলিয়ে কোথাও না কোথাও পেয়ে গেছি। আর এই পুরো সার্ভিস এক্কেবারে ফ্রি।
বাংলাদেশঃ
লাইব্রেরিতে প্রথম যাই আব্বুর সাথে, ময়মনসিংহ জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে। প্রথমদিন গিয়েই মাথা খারাপ হয়ে গেছিল আমার, এত্ত এত্ত বই (আমি তখন এক্কেবারেই ছোট, বছর আটেক হবে হয় তো বয়স)। আব্বু ছেড়ে দিয়েছিলো বাচ্চাদের সেকশনে, খুঁজে পেতে নিয়েছিলাম আশি দিনে পৃথিবী ভ্রমণ, জুল ভার্নের নাম সেদিনই প্রথম জানা। বিকাল পাঁচটায় গেছিলাম, তারপর সময় কিভাবে গেলো টেরও পাই নি, সাড়ে সাতটায় আব্বু এসে বললো আটটায় লাইব্রেরি বন্ধ, বাসায় যেতে হবে, আমার তখনও গোটা দশ-বারো পাতা বাকি, ফিলিয়াস ফগ তখন ভাঙা সাঁকোর ওপর দিয়ে জোরে ট্রেন চালিয়ে নিতে বলছে, এই অবস্থায় কী আর ওঠা যায়? শেষে লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে বই শেষ করে উঠলাম, আব্বু রিকশায় উঠে হুমকি দিল যে আর কখনো নিয়ে আসবে না। যদিও সেটা ফাঁকা হুমকি ছিল সেটা পরের সপ্তাহেই বুঝতে পারলাম যখন আব্বু আবার বললো, "যাবে না কি মা?"
ঢাকায় এসে তাই পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে খুব হতাশ হয়েছিলাম, গাইড বইয়ে ভর্তি এ কী লাইব্রেরি? একবারের বেশি তাই ভিতরে ঢোকা হয় নি, বরং বাইরের সিঁড়িতে আড্ডা দিতেই মজা লাগত।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
বাংলাদেশের সেকশনটা আগে জুড়ে দিলেই মন্তব্যটা একটা পোস্ট হয়ে যাবে।
আমি একবার একটা বই কিনতে পরামর্শ দিয়েছিলাম এক লাইব্রেরীকে। আমাকে আবার ইমেইল করেছে জাস্টিফাই করার জন্য। বই কেনার কারণ জানাতেই কিনে আমাকে জানিয়েছিল।
ইন্টারলাইব্রেরী লোন সবচেয়ে সুবিধাজনক যখন থিসিস পড়ার দরকার হয় তখন।
আমি মন্তব্য লিখতে লিখতে সেটাই ভাবছিলাম, প্রায় পোস্ট সাইজের মন্তব্য। আসলে প্রিয় বিষয় তো! আমি এখানকার লাইব্রেরিতে যাই, গোটাদশেক করে বিভিন্ন ধরনের বই নিয়ে আসি, ফেলে ছড়িয়ে পড়ি। পুরাই রাজকীয় হাল।
এখনকার কথা জানি না, আমার ছোটবেলায় অ্যাট লিস্ট ময়মনসিংহের পাবলিক লাইব্রেরি অনেক ভালো ছিল। ছোটদের সেকশনে অনেক বই পড়েছি - এইচ জি ওয়েলস, রাশান রূপকথা, জুল ভার্ন, সত্যজিত - প্রতি মঙ্গলবারে আব্বুর সাথে গিয়ে একগাদা করে বই পড়ে আসতাম।
আরেকটা লাইব্রেরি ছিল শহরে, মুসলিম লাইব্রেরি মনে হয় নাম, সেখানেও বেশ বই দেখেছি, এবং সব ধর্ম-বিষয়ক বই ছিল না। তবে ঐ লাইব্রেরিতে যাওয়া হয় নি, বাসা থেকে দূরে বলে।
স্কুলের লাইব্রেরি ছিল, কিন্তু সেটা সারাবছর তালাবন্ধ থাকত। তাতে অবশ্য আমাদের খুব সমস্যা হত না, ক্লাস সিক্স থেকে আমরা বন্ধুরাই একে অন্যের সাথে বই পাল্টাপাল্টি করে পড়তাম, সেবার অনুবাদ, তিন গোয়েন্দা আর পরের দিকে ওয়েস্টার্ন।
কলেজে অবশ্য লাইব্রেরি থেকে বই নিতে দিত, সেখান থেকে ও হেনরি আর মার্ক টোয়েন সমগ্র নিয়ে পড়েছিলাম মনে আছে। তবে খুব বেশি বৈচিত্র্য ছিল না।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
বই পড়া নিয়ে এই মন্তব্যগুলো নিয়ে আর আরও না বলা কথা (যেমন, বই পড়া নিয়ে সবচেয়ে দুঃখজনক বা আনন্দজনক মুহুর্ত কি?) নিয়ে একটা পোস্ট লিখে ফেলো। যেহেতু এটা তোমার নিজের কথা এবং কন্ট্রোভার্সি জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে না, তাই মনে হয় পোস্টটা মেটাব্লগিংয়ের দায়ে দোষী হবে না।
টিউলিপ আপু,
আপনার আব্বু কি শামসুদ্দীন স্যার?
একটা অসাধারণ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
বই নিয়ে উন্মাদনা তৃতীয় নয়ন উন্মোচনের পর থেকেই। মা এবং মামাদের ছিল বইয়ের সংগ্রহ এবং পড়ার অভ্যেস। পিতৃদেব "নভেল" পড়ার নিতান্ত বিরোধী হলেও কেন যেন কর্মসূত্রে ঢাকায় গেলেই দাদা ও আমার জন্য নিয়ে আসতেন উপেন্দ্রকিশোর ও সুকুমার রায়!
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে পড়বার এবং সে সময় কাগজে-কলমেও বাংলাদেশের সেরা স্কুল ছিল সেটি। সপ্তম শ্রেণীতে থাকতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হই। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে আমাদের স্কুলে কেন্দ্রে সব ক'টি কার্যক্রম ছিল না। কিন্তু কেন্দ্রে চেয়েও মারাত্মক ছিল আমাদের স্কুল লাইব্রেরীটি। অসাধারণ সংগ্রহে ঠাসা লাইব্রেরীটি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকত লাইব্রেরিয়ানের অভাবে। ডে শিফটের এক স্যার সপ্তাহে দুই দিন ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সেই সুযোগে নেয়া "পৃথিবীর ইতিহাসঃ প্রাচীন যুগ" বইটি আমার মনে সংশয়ের বীজ বপন করে এবং সেই থেকে আমার অন্ধকার যাত্রার শুরু! স্বভাবতই এই নামমাত্র সুযোগে পড়ার তেষ্টা মিটত না। স্কুলের শেষদিনে জঘন্যতম ছাত্র হিসেবে বক্তৃতা দেবার সুযোগ পেয়ে এসব অনিয়ম এবং স্কুল প্রাঙ্গণে খেলাধুলো নিষিদ্ধ করার কালা কানুনের বিপক্ষে আশ মিটিয়ে বললাম যেখানে ভালো ছাত্ররা সব আবেগে-আহ্লাদে গদোগদো, কেঁদেকেটে একশা! এত বছর পর ছোট ভাইয়ের কাছে শুনেছি এখন খেলাধুলো নিষিদ্ধ নেই- তবে এমনিতেই নাকি কেউ খেলে না! লাইব্রেরীর অবস্থা জানি না। শুনেছি ডে শিফটের ছাত্ররা কিছু বেশি বই পেত স্যারের অফিস আ'র এর কল্যাণে।
ছেলেবেলায় নানা কৌশলে র্যালি থেকে পালাতাম, কখনো দেয়াল টপকে, কখনো স্যারের অগ্নিদৃষ্টি এড়িয়ে ভোঁ-দৌড় দিয়ে। সে রকম দিনগুলিতে আমি আর আমার বন্ধু রিয়াদ হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতাম ছোট বাজারে ময়মনসিংহের পাবলিক লাইব্রেরীতে। পাগলা দাশুর সঙ্গে সেখানেই পরিচয়!
আমাদের ক্যাম্পাসে সৃজনশীল বইয়ের কোন লাইব্রেরি ছিল না। কেন্দ্র গাড়ি ভর্তি আলো নিয়ে হাজির হত শুক্কুরবারে!
কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি বা হালের "মেধা চত্ত্বর" নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। মুখস্থবিদ ও গাইডবাজদের রাজধানী হয়ে গেছে এটা।
বই নিয়ে আরো লিখুন। কিছুদিন আগে এক পুস্তকবেনিয়া সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, আমি বোধহয় নিয়মিত পুস্তক-ক্রেতা নই। -তা নিয়মিত কিনা জানিনা, তবে এখনো আমি সেই বিরল সৌভাগ্যবানদের একজন যার বৌ এর চেয়ে বই এর পেছনে ব্যয় বেশি!
আমার বাবা প্রথম দিকে বই পড়া নিয়ে খুশী থাকলেও পরের দিকে ভীষণ রেগে যেতেন। তার কাছে সাহিত্য হচ্ছে বঙ্কিম, শরৎ, রবীন্দ্রনাথ এগুলো। অথচ আমি পড়ি কমিক, থ্রিলার। ভীষণ বিরক্ত হতেন এগুলো দেখলে।
পাবলিক লাইব্রেরীতে একবারই গেছিলাম, আর যেতে ইচ্ছে হয়নি।
রাজশাহীতে থাকতে নিয়মিত যেতাম বইপত্র, গ্রন্থমেলা, সূচিপত্র, বই বিচিত্রাতে। ছোট শহর, মোটামুটি আমরা বইপড়ুয়ারা সবাই সবাইকে চিনতাম আর বই আদানপ্রদান করতাম। জেলা পাবলিক লাইব্রেরীর সদস্য ছিলাম, বই আনতাম ওখান থেকেও। তবে পছন্দসই বই পাওয়া মুশকিল হতো। বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরীর পরিবেশ খুব সুন্দর ছিল, কিন্তু ছোটদের বইয়ের সেকশন অতটা সমৃদ্ধ ছিল না। শিশু একাডেমীতে গিয়েও বই পড়তাম, তবে সেটার সংখ্যা ছিল কম।
এখন বই কিনি রকমারী ডট কম থেকে আর মাসে একবার নীলক্ষেত গিয়ে।
____________________________
ছোট শহরের এই সুবিধা। একটা বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
আমি অনেকবার অনেকেই বলেছি যে আমার বাচ্চাদের আমি হিমুর মতো বহুবই পড়ুয়া হওয়ার সুযোগ করে দিতে চাই। ছোটবেলায় নানা কারণে খুব বই পড়ার সুযোগ হয়নি। এখন সে সুযোগ একেবারেই নাই বললে চলে। জীবনে পড়ার সময়, নতুন কিছু জানার সময় বোধহয় পার করে এসেছি।
যাই হোক, কলোরাডোতে এসে যে লাইব্রেরির দেখা পেলাম তাকে ছোটখাট একটা মল বলা চলে। এত সুন্দর এত চমৎকার এত আকর্ষণীয় লাইব্রেরী আমার সারা জীবনেও দেখিনি। একদম বাড়িয়ে বলছিনা। সত্যিই।
মেয়েকে নিয়ে মেম্বার করে দিয়েছি। সম্ভবত তিরিশটি করে বই ধার নেয়া যায়। বাচ্চাটার পড়ার খুবই আগ্রহ। ঈদে-জন্মদিনে সে জামা-কাপড় চায়না, চায় বই। কিন্ডল কিনে দিয়েছি। সেদিন সে নিজেই খুঁজে বের করেছে তার লাইব্রেরির মাধ্যমে আমাজন থেকেও বই ধার করা যায়। লাইব্রেরিতে সার্চ করে বইটি পছন্দ হলে সেটা আরেকটা সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে আমাজন থেকে বরো করা--ব্যস। সেটা সরাসরি কিন্ডলে ডেলিভারি করে দেয় ইনস্ট্যান্টলি।
বাংলাদেশেও সহজেই ইবইকে জনপ্রিয় করা যায়। স্মার্টফোন আর ট্যাবলেটের যুগে সেটা অনেক কম খরচেই করা যাবে বলে ধারণা করি।
ব্যক্তিগত
আমি চাই বাচ্চারা বাংলা বইও যেন পড়তে পারে। কিন্তু বাচ্চাদের বাংলা বই কোথায় পাবো আর সেটার ই-ভার্সন না থাকলে খরচে পোষায় না। ই-ফরম্যাট হলে সেটা এফোর্ডেবল হতো। কেউ এ ব্যাপারে কোন পরামর্শ দিলে ভালো হয়। ধন্যবাদ।
শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন তাদের পছন্দের বাইরেও তারা কিছু বই পড়ে। আর পড়ার গতি বাড়াতে উৎসাহ দিবেন। ছোট ছোট করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন। ভোকাবলারি বাড়াতে পারে এরকম বই পড়তে উৎসাহ দিবেন। সাধারণতঃ ওদের বইয়ে একটা করে লেভেল দেয়া থাকে। ধীরে ধীরে উঁচু লেভেলের বই পড়তে উৎসাহ দিবেন। সেই সাথে বইটার একটা সামারী লিখতে বলবেন। একটা ডায়েরী দিবেন সেখানে সে সামারীগুলো লিখে রাখতে পারে। তবে এত কিছু করে আবার বই পড়ার মজাটা নষ্ট না হয়ে যায় সেটাও লক্ষ্য রাখবেন।
প্রথম বইপড়ার অভ্যেসটা এসেছে আমার ভাইয়ার কাছ থেকে, ও সারাদিনি বই পড়তো। ওর দেখাদেখি পড়া শুরু করলাম। তারপর প্রথম যৌবনে যখন ক্রিকেট খেলে টাকা অর্জন করতে শিখলাম তখন থেকে গানের ক্যাসেট আর বই এই দুটোর পেছনে আমার সব টাকা যেত। কলেজে পড়ার সময় আমাদের পাড়াতে একটা পাঠাগার হলো খুবি ছোট পরিসরে। সেখানেই আমি প্রথম দেখা পেয়েছিলাম আলোকিত সব লেখা, আর বই। তারপর নিজ শহর ছেড়ে চট্টগ্রামে আসার পর ৭-৮ বছর সময়টা অমর বইঘর ছিলো বইয়ের একমাত্র ঠিকানা। অসংখ্য বই কেনা হয়েছে অমর বইঘর থেকে। চট্রগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরীতে কতদিন কেটেছে জানা নেই, বিশেষ করে বর্ষাকালটা ওখানেই কাটতো আমার। ঢাকায় আসার পর থেকে সেটা এখন হয়েছে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে বইয়ের দোকানগুলোতে। আর বই মেলায় কেনা হয় একসাথে ৩০-৩৫টা বই। গতদুই বছর যা কিনেছি তার বেশিভাগি পড়ার সুযোগ পাইনি কিংবা অলসতা করে পড়িনি, একদিন অনেক অনেক অবসর পাবো তখন পড়বো বলে জমিয়ে রেখেছি । গতকয়েক মাসে রকমারি থেকে বই নিয়েছি, ওদের সার্ভিস ও ভালো। একসাথে যত বইয়ের অর্ডার দেই চার্জ নেয় মাত্র ৩০টাকা।
মাসুদ সজীব
রকমারী কি অনলাইন সার্ভিস?
রকমারীর ওয়েবসাইট লিঙ্ক দিলাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ভালো সার্ভিস। সেইসাথে বই রিভিউয়ের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত।
রিভিউয়ের ব্যবস্থা আছে দেখছি। যদিও রিভিউয়ের সংখ্যা অপ্রতুল।
দারুণ আলোচনা!
১।
প্রায় সব জেলাশহরে এখন অন্তত "পাবলিক লাইব্রেরীর" অবকাঠামো তৈরি হয়েছে... বই আছে কিনা জানিনা
২।
খুশির খবর হল, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের "ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি" এখন ঢাকার বাইরেও অহরহ দেখি
৩।
প্রতিষ্ঠিত সংগঠন (কচি কাচার মেলা/খেলাঘর) এদের কে কি কোনও ভাবে যুক্ত করা যায়? ফুলকুড়ির নেটওয়ার্ক কিনতু কাটাবন প্রকাশনীর অবিরাম সরবরাহ করে চলেছে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এছাড়া বৃটিশ কাউন্সিলও ছিলো। যদিও অ্যাক্সেস ছিলো সীমিত।
পরিবেশটা সুন্দর হলেও আমজনতার জন্য ফী একটু বেশিই হয়ে যায়, মুর্শেদ ভাই... আমি ছাত্রজীবনে একবছর মেম্বার হয়েছিলাম... যেতাম ওদের উচ্চগতি ইন্টারনেটের জন্য... পরে আর নবায়ন করাই হয়নি আর একদম ছোটবেলায় মনে পড়ে রাজশাহীসহ বিভাগীয় জেলাগুলোয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের শাখা+লাইব্রেরী ছিল... রাজশাহীরটা ৯১/৯২ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায়... বাকিগূলোর খবর জানিনা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কথাটা কে কীভাবে নেবেন জানি না, তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশে এখন সফটবুকের কথা ভাবার সময় হয়ে গেছে। বই পড়ার ডিভাইসের দাম একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সম্ভব। হয়তো আগামী পাঁচ বছরে গণচীনের নির্মাতারা এই কাজটা করে ফেলবে। তাছাড়া স্মার্টফোনের স্ক্রীন আরেকটু বড় হলে সেখানেও বই পড়া যায়। এর সব কিছুই দ্রুত হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ২০০ টাকা দামের বই কিনবে না, কিন্তু ২০,০০০ টাকা দামের ফোন কিনবে এবং সেটাতে দুই দিন পর পর ৫০০ টাকা রিচার্জ করবে। যস্মিন দেশে যদ্যাচার। তাই মোবাইল ফোন, ট্যাব ইত্যাদি পোর্টেবল ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের কাছে বই পৌঁছে দিতে হবে।
ডাউনলোডের অপশন বন্ধ করে শুধু পড়ার অপশন রেখে অনলাইন লাইব্রেরি চালু করলে সম্ভবত আইপি ল’ ভাঙা হয় না। কপিরাইট নেই এমন বইয়ে ডাউনলোডের অপশনও খোলা রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে সেন্ট্রালি একটা লাইব্রেরি করলেই চলে। কারো কাছে কোন দুষ্প্রাপ্য বই থাকলে সে সেটা লাইব্রেরিকে স্ক্যান করার জন্য দিতে পারে। এভাবে সবাই একটা বিশাল সংগ্রহশালার মালিক হয়ে যাবে। এভাবে শুধু বই না, সাথে গান, মুভি আর ছবিরও লাইব্রেরি হয়ে যাবে। সাথে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথা ভেবে অডিও বুকের সংগ্রহও গড়ে তোলা যায়। এভাবে যাতায়ত, বিপণন, সংরক্ষণ ইত্যাদি খাতের অর্থ বেচে যাবে যেটা নতুন বই/গান/মুভি/ছবি জোগাড়ে ব্যয় করা যাবে।
ছাপা বই পড়তে আরাম, ই-বুক পড়তে ভাল্লাগেনা – ইত্যাদি কথা বলার মানুষ দ্রুত কমে আসবে। এক/দুই প্রজন্ম পরে এগুলো ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে। কিন্তু বই পড়া বন্ধ হবে না।
গুগলের প্রডাক্টের মতো একটা বাংলা ওপেন সোর্স লাইব্রেরি জাতীয় কিছু করা কি খুব অসম্ভব?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইবুক প্রসঙ্গে কাগজের বই নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সবাই ভুলে যায় যে নিকট ভবিষ্যতে বাচ্চারা প্লাস্টিকের খেলনার বদলে ট্যাবলেট পিসি হাতে নিয়ে বড় হবে, সেসব অনাগত প্রজন্মের পড়ুয়ারা হয়ত ট্যাবের স্ক্রিনেই জীবনের প্রথম বই পড়বে।
আমি বরং এখন কাগজের বইয়ের চেয়ে ইবুকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
গুগল বুকসেই লেখক/প্রকাশক সরাসরি বই দিতে পারেন। ফ্রি করে দেওয়া যায়, বা ফ্রি প্রিভিউ (কিছু পাতা পড়া যায় বাকিটা কিনে পড়তে হয়), বা স্নিপেট ভিউ (আদৌ কোন পাতা ফ্রি নয়, পুরোটাই কিনে পড়তে হয়) সেট করা যায়। প্ল্যাটফর্ম তৈরিই আছে, কেবল লেখক/প্রকাশকের অংশগ্রহণের অপেক্ষা। গুগল বুকস আস্ত বই ডিজিটাইজ করে রাখে ফলে কোন বই বা তার নির্দিষ্ট পাতা ফ্রি না হলেও সার্চ রেজাল্টে দেখাবে যে এই বইয়ের ভেতর এই এই লাইন আছে ওই কিওয়ার্ডসহ। খুবই উপকারী জিনিস।
..................................................................
#Banshibir.
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভালো আইডিয়া। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
পুনশ্চঃ বাচ্চাদের নানা প্রতিযোগিতায়, স্কুলের নানা ইভেন্টে, বাচ্চাদের জন্মদিনে বা কোন অ্যাচিভমেন্টে তাদেরকে বুক রিডার উপহার দেয়া যেতে পারে। এতে তাকে বস্তুত বইয়ের জগতটাই উপহার দেয়া হয়। একই কাজ বড়দের ক্ষেত্রেও করা যেতে পারে।
আমি মাফিয়াদের হাত থেকে বইয়ের মুক্তি চাই। আমি চাই লেখক আর পাঠকের মধ্যে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের সংখ্যা যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনা হোক। তাহলে লেখক যেমন তাঁর প্রাপ্যটা ঠিকমতো পাবেন, তেমন পাঠকও ন্যায্যমূল্যে বইটা পড়তে পাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাফিয়ারা গোসসা করবে তো!!
ইউএসএ:
আমি যে শহরে থাকি সেটায় বেশকিছু স্টোর আছে যারা বিভিন্ন বই রাখে এবং কিছু ডেডিকেটেড বুকস্টোরও আছে। এদের অনেকেই পুরনো বই (মার্কেট রিলিজ ১+ বছর পূর্বে) ১ ডলারে বিক্রি করে। এ কারণে, আমি প্রায়ই বুকস্টোর এ যাই, উল্টে-পাল্টে ভালো লাগলে বেশকিছু বই কিনে নিয়ে আসি, আবার নিশ্চিত হতে না পারলে বইয়ের নাম টুকে নিয়ে আসি, নেট ঘেঁটে দেখি রীডারদের রিভিউ, তারপর কিনি। আমার বাসা থেকে ১৫ মিনিট হাঁটা দূরত্বে সিটি'র লাইব্রেরি আছে, তাতে বাংলা বইও আছে। ই-বুকে আমার কেন জানি আগ্রহ কম, তাই ছাপানো বই খুঁজে বেড়াই।
শব্দ পথিক
আপনার আইফোন বা অ্যন্ডয়েড ফোন থাকলে গুডরিডস বা অ্যামাজন প্রাইস চেক অ্যাপটা ইনস্টল করে নিতে পারেন। তারপর অ্যাপটা ব্যবহার করে বইয়ের আইএসবিএন বার কোডটা স্ক্যান করে বইটার রিভিউ তৎক্ষণাৎ দেখে নিতে পারেন।
বইয়ের নেশাটা জেনেটিক অসুখ। ছোটবেলা থেকে বাবাই বই কিনে দিত সবরকম। এক আত্মীয় বিদেশে চলে যাবার আগে তার বিরাট সংগ্রহ আমাদের বাসায় দিয়ে যান, বয়সের কাঁটা দুই ডিজিটে যাওয়ার আগেই বুঝে না বুঝে শরৎ, আশুতোষ, হুমায়ূন, কমিক, থ্রিলার সব কিছুই পড়া হয়ে গেছিল।
ক্লাস সিক্সে ভর্তি হই হলিক্রস স্কুলে। আমাদের রুটিনেই ছিল সপ্তাহে একটা পিরিয়ড লাইব্রেরি ক্লাস যখন লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই অবশ্যই নিতে হতো এবং পড়ে পরের সপ্তাহে ফেরত দিত। অসম্ভব সমৃদ্ধ একটা লাইব্রেরি, শুধু বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সংগ্রহই না, বিদেশি প্রচুর বই সিস্টাররা নিয়ে আসেন যখন তারা ছুটিতে বিদেশে বাড়ি যান। আমার দুঃখ ছিল সপ্তাহে কেবল একটা বই নেয়া যায় বলে, ক্লাস নাইনে উঠার পর রুটিন ক্লাস আর থাকে না, কিন্তু তখন যখন খুশি একটা করে বই নিতে পারতাম। স্কুল লাইফ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দিনে ২/৩টা বার করে লাইব্রেরিতে ঢুঁ মেরে ২-৩টা করে বই পড়েছি তখন। এমনকি প্রধান শিক্ষক বরাবর একটা আবেদন ও করেছিলাম পাশ করার পরেও যেন আমাকে লাইব্রেরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়, ঢাকার কোথাও তখন আর এরকম লাইব্রেরি পাওয়া সম্ভব ছিল না।
এরপর বিশ্ব সাহিত্যের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির সদস্য হিসেবে কিছু পড়েছি। সবচে হতাশাজনক ছিল বুয়েটের লাইব্রেরি। অনেক টেকনিক্যাল বই থাকতে পারে, কিন্তু এর বাইরে সাহিত্যের তেমন কিছুই নাই। আর বই নেয়াও যা হ্যাপা। এর বাইরে নীলক্ষেত আর নিউমার্কেটই ভরসা।
বাইরে বিদেশে এসে আমার আর টিউলিপের অভিজ্ঞতা একই। আমি ঐ ইউনিভার্সিটি পছন্দই করেছিলাম লাইব্রেরিটা দেখে।
এর পরে অ্যারিজোনাতে দেখেছি প্রায় সব গ্রোসারি দোকানের বাইরে বিরাট একটা টিনের বাক্স রাখা ( ময়লা ফেলার বাক্সের মত) যেখানে ব্যবহৃত বই ফেলে যায় মানুষ, এগুলা বিভিন্ন গরীব অঞ্চলের স্কুলগুলোর লাইব্রেরিতে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশে পাড়ার লাইব্রেরি না টেকার কথা উল্লেখ করায় দুঃখের কথা মনে পড়লো। আমার দাদা নিজের বিশাল দুর্লভ সংগ্রহ তার গ্রামের বাড়িতে লাইব্রেরিতে দান করে, সে সংগ্রহে কি কি বই ছিল সেগুলা বাবার মুখে শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে লাফাতে লাফাতে স্কুলে হাজির হলাম লাইব্রেরি দেখতে। শুনি ছেলে পিলে বই ইস্যু করে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে চুলা জ্বালাতে ব্যবহার করে লাইব্রেরি খালি করে ফেলেছে। অথচ ৭০ এর দশকে সংগ্রহ করা বিদেশি বইএর অনুবাদ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, রিডার্স ডাইজেস্টের মত দারুন সব কালেকশন দিয়ে সেই লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছিল এক অজ পাড়াগাঁ এ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আহা, এই অসুখের একটা ভাইরাস তৈরি করে ছড়িয়ে দিতে মুঞ্চায়... অনার্য'দা কুথায়??
এটা দেশেও শুরু করা যায় না?? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এই স্টাইলে শীতবস্ত্র সংগ্রহ তো ভালই হয়... এটাতেও মানুষ নিশ্চয় সাড়া দেবে
আর... ইয়ে মানে... আপনার আর কোন আত্মীয়স্বজন দেশের বাইরে-টাইরে যাবে না?
খবর দিয়েন... যেতে না চাইলে বলেন দৌড়ানি দেই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত ও নিজে সংগৃহীত জানের টুকরা সেই বইএর সংগ্রহ ফেলে আমি নিজেই এখন দেশের বাইরে। :'( মেঝে থেকে ছাদ অবধি দেয়াল জোড়া বই এর তাক এর দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুমাতে যেতাম। ঐটাই ছিল আমার স্বর্গ।
এত যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছিলাম, ক্যাটেগরি অনুযায়ী, লেখকের নামের আদ্যাক্ষর অনুসারে। বই এর নাম বললে এখনো কো-অর্ডিনেট বলে দিতে পারব, কোন তাকে কতটা ডানে বামে রাখা আছে। :'(
কি মনে করাইলেন ভাই। :'(
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শিফট করতে যেয়ে আমার কো-অর্ডিনেট এর ১৩টা বেজে গেছে
ইয়ে... মানে... আপনার বাসা তো এখন খালি...
কেয়ারটেকার লাগবে না?? স্বর্গেও নাকি দারোয়ান লাগে...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একবার একটা ব্যক্তিগত উদ্যোগ দেখেছিলাম, ঢাকাভিত্তিক বই শেয়ারিং এর জন্য। অনলাইন লাইব্রেরির একটা ভার্শন। আপনার সংগ্রহে কি কি বই আছে আর আপনি মানুষকে পড়তে দিতে চান, তার একটা তালিকা ওয়েবসাইটে দেবেন, যারা পড়তে ইচ্ছুক তারা তখন যোগাযোগ করে আপনার কাছ থেকে বই নিয়ে পড়বে। তখন পর্যন্ত কেবল উদ্যক্তা ৩/৪ জনের সংগ্রহের তালিকা ছিল সেখানে। এখন আর সেই উদ্যোগের কি অবস্থা জানি না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বই নিয়ে আমার অবস্থাটা একটু ঝামেলার! ছোটবেলায় বই নিয়ে অনেক-ই সময় কাটিয়েছি। বড়বেলায় পৌঁছে আবিষ্কার করেছি, বই আমার পক্ষে বিষ! কাগজের গুঁড়োয় আমার এলার্জি। এমন কি নুতন বই পড়াও যে কত সময় যন্ত্রণাকর হয়ে ওঠে! ভাগ্যিস কম্পিউটার-এর যুগ এটা! না হলে যে আমার কি হত!
মার্কিন মুলুকের এই শহরে পাব্লিক লাইব্রেরী থেকে আমরা বই পড়তে পাই বিনামূল্যে - কি ছাপা কি ইলেকট্রনিক! আর এখন অন-লাইন-এর দৌলতে লাইব্রেরীতে যেতেও লাগে না! অন-লাইনে বই-এর সংখ্যা অবশ্য অনেক কম। তবে আমি আর পড়ি কতটুকু!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পোষ্ট পড়েও লগইন সমস্যায় মন্তব্য করা হচ্ছিল না। আজ এসে দেখি আমার যা বলার ছিল তার অধিকাংশই বলে ফেলেছেন কয়েকজন। তবু কয়েকলাইন যোগ করি।
একসময় আমার প্রিয় জায়গা ছিল চট্টগ্রামের পাবলিক লাইব্রেরী। আশি নব্বই দশকের ছাত্রজীবনের অনেকগুলো দুপুর কেটেছে লাইব্রেরীতে। শুনে মনে হতে পারে খুব ভালো ছাত্র ছিলাম। আসলে একেবারেই উল্টো। আমার একাডেমিক বইয়ের একটা পাতাও কোনদিন আমি উল্টাইনি লাইব্রেরীতে। ওখানে যেতাম আনন্দপাঠের জন্য। বেহুদা ক্লাসের বই পড়ে কে সময় নষ্ট করে।
যাই হোক বিনাপয়সায় অকাজের বই পড়ার জন্য আমার পছন্দের জায়গা ছিল তিনটা। চট্টগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরী(তখন এটা ছিল মুসলিম হলের ভেতরে, পরে নতুন ভবনে আসে), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী(এটা ছিল তখন আর্টসফ্যাকাল্টির সামনের এডমিন বিল্ডিং এ, বর্তমান অবস্থায় এসেছে নব্বই সালের পরে পাহাড়ের পাদদেশে), বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরী (তখন এটা ছিল লালদিঘির দক্ষিণ পাড়ে)। একটা সময় আবিষ্কার করি লালদীঘির পাড়ে বৃটিশ কাউন্সিলের উপর তলায় আরেকটা লাইব্রেরী আছে, যার নাম মিউনিসিপ্যাল পাবলিক লাইব্রেরী। অনেকে এটার খোঁজ জানে না। এই লাইব্রেরীতে উপনিবেশ আমলের বই পত্রিকাও দেখেছিলাম।
এই লাইব্রেরীগুলোতে বই পড়া, বই খোঁজা ইত্যাদি খুব সহজ ছিল। মানে হাতের নাগালে থাকতো বইয়ের তাকগুলো। নিজে পছন্দ করে বই নিতে পারতাম। ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরীতে এই সুবিধা ছিল না বলে ওখানে দুয়েকবার গিয়ে বিরক্ত হয়ে এসেছি। কয়েক বছর পর চট্টগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরী বাদে বাকীগুলোতে ঢাকার সিস্টেমে বই পড়া চালু হয়। তখন থেকে আমি লাইব্রেরীতে যাতায়াত বন্ধ করে দেই। গত দুই দশক আমি লাইব্রেরীতে যাই না। চট্টগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরী এখন কি অবস্থায় আছে জানি না। ইচ্ছে করলেও সময় মেলাতে পারি না। ওরা যখন খোলে আমি তখন অফিসে, আমি যখন বের হই অফিস থেকে ওরা তখন বন্ধ করে চলে যায়।
বই কেনার জন্য প্রিয় জায়গা ছিল বইঘর, কারেণ্ট বুক সেন্টার, মনীষা, অমর বইঘর ইত্যাদি। এখন বাতিঘর, বিশদ বাঙলায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। অবাক লাগে শহরে জনসংখ্যা যানবাহন হাটবাজার শপিং সেন্টার বেড়েছে অগণিত, কিন্তু বই কেনার জায়গা বেড়েছে মাত্র তিন চারটে। যতটা বেড়েছে তার চেয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকানের সংখ্যা বেশী। কারেণ্ট বুক সেন্টারকে চারপাশের ফুটপাত হকার যেভাবে গ্রাস করে রেখেছে ওটার নিঃশ্বাস নেবার জায়গাটুকুই কেবল আছে এখন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নতুন মন্তব্য করুন