গত সপ্তাহের ঘটনা। মিজোরি স্টেইটের ফারগুসন শহর। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার দুপুর বারোটা। রাস্তার মাঝখানে দুটো কালো কিশোর বা যুবক হেটে যাচ্ছিলো। তাদের একজনের নাম মাইকেল ব্রাউন, বয়স ১৮। এক পুলিশ, ড্যারেন উইলিয়াম তাদের পাশে গাড়ি থামিয়ে তাদেরকে বলে ফুটপাথে হাঁঠতে। তারা বলে আমরা বাসার দিকেই যাচ্ছি। কিন্তু ড্যারেন ধাম করে দরজা খুলে মাইকেলের গলা চেপে ধরে এবং তার পিস্তলটি বের করার চেষ্টা করে। পিস্তলটি বের করার সময় একটি গুলি বের হয়। মাইকেল তখন তার কাছ থেকে ছুটে দৌড়ে পালাতে যায়। পুলিশ তখন তাকে পিছন থেকে গুলি করে। গুলি খেয়ে মাইকেল থমকে দাঁড়ায়, দু'হাত উঁচু করে ঘুরে দাঁড়ায় এবং আর গুলি করতে মানা করে। কিন্তু পুলিশ ক্রমাগত গুলি করতে থাকে, যতক্ষণ না সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাইকেলের সাথে থাকা যুবক দৌড়ে পালিয়ে যায়। তার মুখ থেকেই শুনুন পুরো ঘটনা। [১, ২]
এই ঘটনার পরবর্তী ঘটনাগুলো আরও অদ্ভুত। তিনদিন হয়ে যায় অথচ পুলিশ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয় না। এক বার বলে যে ঠিক কাছাকাছি সময়ে এটি দোকানে ডাকাতি হচ্ছিলো। মাইকেল কে সে কারনে ধরা হয়। কিন্তু কোন অফিসার কাজটি করেছে সেটাও লুকিয়ে রাখা হয়। আবার জানানো হয় যে, ড্যারেন নামের যে পুলিশ গুলি করেছিলো সে জানতো না যে ডাকাতি ঘটছিলো।
লোকজন ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকে প্রতিবাদ জানাতে। তাদের প্রতিহত করতে আর্মি বেশভূষায়, যুদ্ধে ব্যবহৃত গাড়ী নিয়ে টিয়ার গ্যাস, শব্দ গ্রেনেড ইত্যাদি ছোড়ে পুলিশ। জনতা আরো রেগে উঠে। এর মাঝে কিছু লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। পুরো অবস্থা দেখে মিডিয়া ফারগুসন শহরকে আমেরিকার ফারগুস্তান নামে ডাকা শুরু করে।
এ ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ফারগুসন শহরের ৬৭ ভাগ মানুষই কালো। অথচ সে শহরের পুলিশ বিভাগের ৯৪ শতাংশই সাদা! [৩] অর্থাৎ কালোদের মাথায় ছড়ি ঘোরাচ্ছে সাদা প্রসাশন।
এ ধরনের ঘটনা বিরলও নয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে ফ্লোরিডায় ট্রেভর মার্টিন মাথায় হুডি দিয়ে তার বাসার দিকে যাচ্ছিলো। তাকে দেখে 'সন্দেহ' হওয়ায় জর্জ জিমারম্যান নামের এক সেচ্ছাসেবক পাহারাদার আক্রমন করে এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে গুলি করে মেরে ফেলে। [৪] দীর্ঘ মামলা শেষে জর্জ জিমারম্যান নিদোর্ষ প্রমানিত হয়।
আমরা ব্রাউন বর্ণের মানুষরাও কিন্তু এই বর্ণবাদী মনোভাবের আঁচ পাই প্রায়ই। এইতো সেদিন যখন বোস্টনে সাদা চামড়ার এক মুসলিম, বোম ফাটালো, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা আমাকে গালি দিলো এক লোক। তারও কিছুদিন আগে বাইক চালাতে চালাতে যখন এক নেইবারহুডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এক কিশোরী জানালা থেকে খারাপ কিছু একটা বলে উঠল। দুবছর আগে অ্যাকসিডেন্ট হলে পুলিশ এসে সাদা লোকাটার কোনো দোষ নেই জানালো। আমি প্রতিবাদ করতেই বলল, ক্যান উই প্রুভ ইট। আমার বলা উচিৎ ছিলো তুমি যে ওর পক্ষ নিলে, ক্যান হি প্রুভ ইট? এরকম অনেক ঘটনার সাক্ষি আমরা।
প্রেসিডেন্ট ওবামার নিবার্চনে জেতাকে অনেকে মনে করতেন, আমেরিকায় বর্ণবাদ দূর হয়ে যাবার প্রতীক। আসলে এই দেশটির আরও অনেক দূর যাওয়া বাকি এই বর্ণবাদ দূর করতে। আদৌ বর্ণবাদ দূর হবে কিনা সেটা ভবিষ্যত জানে। তাই বলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বন্ধ করা যাবে না। আসুন যে যেখানে আছি সেখানে থেকেই বর্ণবাদকে না বলি। মানবতার পক্ষে, মাইনরিটির পক্ষে হাঁ বলি।
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আদৌ বর্ণবাদ দূর হবে কিনা সেটা ভবিষ্যত জানে। তাই বলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বন্ধ করা যাবে না। আসুন যে যেখানে আছি সেখানে থেকেই বর্ণবাদকে না বলি। মানবতার পক্ষে, মাইনরিটির পক্ষে হাঁ বলি।
facebook
ম্যাসন-ডিক্সন লাইন একটা ভ্রান্ত ধারণা। গোটা যুক্তরাষ্ট তো বটেই, কখনো কখনো মনে হয় গোটা দুনিয়াটাই ম্যাসন-ডিক্সন লাইনের দক্ষিণ দিকে। আমার কাছে 'মাইনরিটি' শব্দটাই আপত্তিকর লাগে। কিন্তু এটা একটা অনস্বীকার্য ব্যাপার।
মানবতার পক্ষে 'হ্যাঁ' বলি। সকল প্রকার বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রমানসিকতা ও বৈষম্যকে 'না' বলি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে, না হলে, পাঠকে বিঘ্নিত করছে, মুর্শেদ ভাই!
যাইহোক, দুটি প্রশ্ন, মুর্শেদ ভাইঃ
১। এই যে নিজ কালারের প্রতি পক্ষপাত, আর ভিন্ কালারকে পারলে খুন করে ফেলা- এও কি এক প্রকার সাম্প্রদায়িকতা নয়?
২। পুলিশ যা করেছে, তা কতটা দায়িত্বগত, কতটা বর্নবিদ্বেষভিত্তিক, আর কতটাই বা পুলিশি (মানে, পুলিশ হলেই হাত নিষ্পিষ করে টাইপের) কম্ম?
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
"আদৌ বর্ণবাদ দূর হবে কিনা সেটা ভবিষ্যত জানে। তাই বলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বন্ধ করা যাবে না। আসুন যে যেখানে আছি সেখানে থেকেই বর্ণবাদকে না বলি।" -
"মানবতার পক্ষে 'হ্যাঁ' বলি। সকল প্রকার বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রমানসিকতা ও বৈষম্যকে 'না' বলি।" -
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নিউজটা দেখে আসলেই বেশ খারাপ লাগলো। দূর থেকে মনে হয় আমেরিকায় বুঝি কালোরা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আসল চিত্র এখন ও বেশ ভিন্ন।
কী আর কইতাম হারামিগুলারে
-------------------
আশফাক(অধম)
সারা দুনিয়ার মোড়লের নিজের ঘরই ঠিক নেই।
মানুষ মানুষের জন্যে
জীবন জীবনের জন্যে
একটু সহানুভুতি কি
মানুষ পেতে পারে না?
ভালো থাকবেন মাহ্বুব ভাই।
আপনার জন্য শুভকামনা।
---------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
একটা ঘটনাও হওয়া উচিত না,,,,,তবে স্বজাতি,,স্ববর্নের মানুষ ত এভাবেই খুন হয়,,, খুনীর মোটিভ জাতির উপর চাপানো কি যুক্তিসংগত,,,,, হিয়া
চৈনিক দার্শনিক খুঙ-ফু-ৎসে (কনফুসিয়াস) বলেছেন, "এ জগতে মানুষই সব, মানুষকে জানাই জ্ঞান । মানুষকে ভালবাসলেই পুণ্য। মানুষের দুঃখ দূর করাই ধর্ম। জীবনের পরম প্রাপ্তি এই পৃথিবীতেই পাওয়া যাবে, আর তা পাওয়া যাবে এই মানুষের মধ্যেই। এর জন্য স্বর্গ বা অন্য কোন কল্পনার আশ্রয় নেবার প্রয়োজন নেই। বিশ্বের সব মানুষকে এক পরিবারভুক্ত ভাবতে হবে এবং যখন তা পারবে তখনই সুখী হবে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ।"
কথা একটাই, আসুন যে যেখানে আছি সেখানে থেকেই বর্ণবাদকে না বলি। মানবতার পক্ষে, মাইনরিটির পক্ষে হাঁ বলি।
বর্ণবাদ নিপাত যাক।
আমার ব্যাক্তিগত ধারনা, কমবেশী বেশীরভাগ কালোদের মধ্য এক ধরনের কমপ্লেক্স কাজ করার কারনে হোক অথবা আচরণগত সমস্যার কারনেই হোক, ওদের চরিত্রে রেসিস্ট (বর্নবাদের) লক্ষণ অন্যদের তুলনায় বেশী স্পস্ট। কমতো দেখলাম না। কাজের ক্ষেত্র, ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে বার/ ক্লাব সব জায়গায় ওরা একইরকম। সাক্ষাতের প্রথমে ওদের মুখ থেকে কবে হায় ডাক অথবা একটা সিম্পল হাসি পেয়েছি মনে করতে পারলাম না। নতুন পরিচয়ে ওরা নিজের থেকেও খুব কম হাত বাড়ায়। বাড়ালেও সেটা আপনার হাতে না, ঘাড়ে (কেমন জানি একটা ডমিনেট ভাব)। ওদের মধ্য "মিক্স এন্ড ম্যাচ" এর প্রবণতা শুধু হোয়াইটদের প্রতি পরিলক্ষিত হয়। তারপরেও ঘটে যাওয়া উপরোক্ত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
________
পত্র করিম
"রেসিস্ট (বর্নবাদের) লক্ষণ" জিনিসটা কি? হাই ডাক আর সিম্পল হাসি না দিলে তাকে রেসিস্ট মনে হয়? নাকি এটা আপনার নিজের বর্নবাদী মনের ধারণা?
আমি বেশ খানিকক্ষণ চিন্তা করেও কালোদের থেকে রূঢ় আচরণের কথা মনে করতে পারলাম না। আমার প্রচুর আফ্রিকান বন্ধু আছে, তারা অভাবী, অবৈধ কাজ করে দু-পয়সা বাড়তি কামানোর ধান্ধা করে, মাঝে মধ্যে ট্রেন বাসের টিকেট না কেটে চড়ে বেড়ায়। এশিয়ানরা কি করে না এগুলো?
আর তাদের এই সুবিধাগুলা দেয় কে, তাদের কাজে লাগায় কারা? সাদারা।
পোল্যান্ডে আমরা সাদাদের হাতে মার খেয়েছি, দুই বন্ধু। খালি গায়ের রঙের জন্যে। তারপরেও আমি বলবো না সব পোলিশরা খারাপ বা সাদারা খারাপ। অনেক ভাল আচরণও পেয়েছি সাদাদের থেকে।
কালোদের থেকে অভদ্র আচরণ হয়তো পেয়েছি কিছু, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হইনি। এবং আমার বন্ধুরা আমাকে দেখলে হাই হ্যালো বলে ডাক দেয়, হাসিও দেয়। ব্যক্তিগতভাবে অনেক সাদাদের মধ্যে যে নাকউচু ভাব পেয়েছি, কালোদের মধ্যে পাইনি, এমনকি এশিয়ানদের মত এত ধান্ধাবাজও পাই নি। আপনি যদি ড্রাগ-ব্যবসায়ী কালোদের দিয়ে সবাইকে বিচার করেন, তাইলে তো সমস্যা। (সাদারা কি কোকেন বেচে না?)
মনে রাইখেন, দিনশেষে ওই ব্রাউন-ইয়েলো কিছু না। আপনি-আমি কালোই, ডার্টি নিগার। কালো-সাদার বাইরে যা কিছু, ওগুলা নিজেরা নিজেদের সান্তনা দেয়ার জন্য আমরা বানায় নিসি। কালো কালোই, এত বাহারের কিছু নাই। আপনি যদি মনে করেন ওরা দাস ছিলো, তাই ওদের আচরণ-মানসিকতা খারাপ; ভাই, আমরাও দাস ছিলাম। আমাদেরও পর্তুগিজরা ধরে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ডাচ হাটে বেচে দিত।
এই লোক হাস্যছলে একদম জায়গামত দিয়েছেন
https://www.youtube.com/watch?v=KUdHIatS36A
ইয়াপ! খুবই ভালো বলেছে।
এক্কেবারে ঠিকমত বলেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু কী করা, অবচেতন ভাবে কমবেশি সবাই এ ধরনের রেশিয়াল প্রোফাইলিং করে একে অপরকে। মানুষ একটা খারাপভাবে তৈরি প্রাণী
তবে আমেরিকায় হুঠ হাঠ গুলি করে দেওয়ার ব্যাপারটা অদ্ভুত। আমাদের দেশে র্যাবও অবশ্য সেটা আয়ত্ব করেছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নতুন মন্তব্য করুন