পাপুন্তুসের সাথে যখন আপনাদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম তখনও সে পৃথিবীর আলো দেখেনি। আজ দীর্ঘ দিন পরে তার আরেকটি অধ্যায় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
পাপুন্তুস অর্থাৎ জীয়নের বয়স যখন প্রায় দুই তখন থেকেই সে তার সম বয়সী বাচ্চাদের থেকে পিছিয়ে পড়ছিল। যে বাচ্চা প্রায় আট মাস বয়সে আধো বোলে 'বাবা' বলতো, আমাদের নকল করে চুটকি আর তালি বাজাতে চেষ্টা করতো সে বাচ্চা এক বছর বয়স পার করে যেন সেই দক্ষতা গুলো হারিয়ে ফেলতে লাগলো। ডাক্তারের পরামর্শে আমরা দেড় বছর বয়সের পর থেকেই তাকে Early Intervention থেরাপি দেবার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু দুই বছর বয়সেও ওর অবস্থা ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিল।
সে সময় জীয়ন শারীরিক ভাবে ভীষণ দুর্বল। নিয়মিত বমি, গ্যাস, পেটের সমস্যা, নিয়মিত জর জারি লেগেই থাকতো জীয়নের। তখনও কথা বলতে শিখেনি সে। অচেনা লোকের চোখের দিকে তাকায় না। সে সময় বাসা বদলের পর নতুন যে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যাই সে ওকে দেখেই বলল যে, শীঘ্রি ওকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাও।
দু’হাজার তেরর এক সকালে আমরা বিশেষজ্ঞের চেম্বারে হাজির হলাম। আগের দিনই কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জীয়নকে পর্যবেক্ষণ করেছে। সেদিন ফলাফল আলোচনা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আমাদের ধীরে ধীরে ব্যাখ্যা করলেন জীয়নের সমস্যাগুলো, আর আমাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। ডায়াগনসিস: অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার। চোখ মুখ শক্ত করে তার কথা গুলো শুনে গেলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমি নিশ্চিত যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিশ্চয়ই ভুল বলেছে। জীয়নের মা, মৌটুসীকে আশ্বস্ত করলাম যে, চিন্তা করো না, আরেক জন বিশেষজ্ঞ দেখাবো। বাসায় ফেরার পথে মৌটুসী চোখের পানিতে গাড়ি চালাতে পারছিলো না। ঘোরের মধ্যে তার মনে হচ্ছিল সারা পৃথিবী যেন আজ উল্টো দিকে যাচ্ছে।
সেদিন সারা দিন আমাদের দুজনের ভীষণ অস্থিরতায় কাটল। আমাদের বুকের মাঝে অনন্ত গহীন একটা অন্ধকার, মাথার ওপর একটা বিশাল পাথর। এ বিষয়ে যতই পড়াশোনা করি ততই মনে হতে থাকে বিশেষজ্ঞ ঠিকই বলেছে। সন্ধ্যায় আমরা আমার বাবা মা কাছে ফোন করে বিষয়টা জানাতে গিয়ে মৌটুসী অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো। ওদিকে আমার বাবা-মাও কাঁদছে। সেদিন রাত, বাকি ক'টা দিন বা বাকি কয়েকটা মাস আমাদের কেমন গেছে সে কথা নাহয় আজ থাক।
এর পর বছর পাঁচেক ধরে বিষাদের পাঁচটি অধ্যায়, অস্বীকার, রাগ, চুক্তি, বিষণ্নতা আর মেনে নেওয়া, প্রত্যেকটিই পার করেছি একে একে। একের পর এক সমস্যা এসেছে। আর আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। সেই সাথে বিদেশ আর বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাও কম সামলাতে হয়নি। তবু জীবন থেমে থাকেনি। পথ চলাও থমকে যায়নি।
সাত বছর আগের এই দিন আমার জীবনটা আলো করে জীয়ন আমাদের কোলে এসেছে। এখনও কথা বলতে শিখেনি। কিন্তু এখনও সে আমাদের জানের টুকরা। তার বন্ধু নেই একজনও। কিন্তু সে আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড, আমাদের পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের এই যাত্রা দীর্ঘ, আর পথ বন্ধুর। তবু আশা হারাবার কিছু নেই। কারণ আমরা জানি, সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা।
হ্যাপি বার্থডে পাপুন্তুস।
মন্তব্য
শুভ জন্মদিন জীয়ন।
আপনি, আপু, জীয়ন সবার জন্য শুভকামনা থাকলো। জীয়ন একদিন নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে তার বাবা-মা কতো অসাধারণ!
অলমিতি বিস্তারেণ
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ জন্মদিন পাপুন্তুস! অনেক বড় হও।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ জন্মদিন জীয়ন। ভালোবাসা রইলো।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
অনেক ধন্যবাদ।
কে বলে বন্ধু নেই? সশরীরে পাশে থাকতে না পারলেও আমরা সবাই পাপুন্তুসের বন্ধু। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
অনেক অনেক ধন্যবাদ ইশতি।
শুভ জন্মদিন জীয়ন, অনেক ভালবাসা।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
অনেক ধন্যবাদ।
Thank you for sharing this touching story with us. We couldn't stop crying.Me and Rumana always talked about Jeon and both of you. We both expressed our anger toward Almighty Allah for this injustice to the most beautiful hearted people like you both. This is not right at all. Please no worries. We are Jeon's friends forever. We are your friends . We are with your happiness and with your sadness. We will be here for Jeon and for you now and forever. Amazing couple like you deserve nothing but goodness and happiness. Love you Jeon...wishing you a very happy birthday
মফিজ ভাই, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার দুজনে এবং বাচ্চারা সবাই খুব ভালো বন্ধু।
হ্যাপি বার্থডে পাপুন্তুস
জীবন্ত-
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ জন্মদিন পাপুন্তুস!
অনেক অনেক আদর তোমার জন্য!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অনেক ধন্যবাদ তিথী।
শুভ জন্মদিন জীয়ন। বিজ্ঞান থেমে নেই।
--- মোখলেস হোসেন।
অনেক ধন্যবাদ।
হ্যাপি বার্থডে জীয়ন। এইযে তোমার কেক।
..................................................................
#Banshibir.
অনেক ধন্যবাদ সত্যপীর।
শুভ জন্মদিন জীয়ন। অনেক অনেক শুভকামনা।
অনেক ধন্যবাদ চরম উদাস।
শুভ জন্মদিন জীয়ন।
অনেক ধন্যবাদ রায়হন।
শুভ জন্মদিন জীয়ন বাবা---
তুমি হয়ত টের পাওনা---তোমার কিন্তু হাজার হাজার বন্ধু আছে। তোমার মিষ্টি বাবা-মা তো আছেই---সেই সাথে আছে আরো লক্ষ হাজার মানুষ সারা পৃথিবী জুড়ে। তোমার বন্ধু হবার জন্যে রোজ সকালে ঐ টকটকে লাল সূর্যটা উঠছে, তোমার কথা ভেবে ভেবেই আকাশ তার রং বদলায়। তোমার জন্যে ঐ ছোট্ট পাখিটা চেনা-অচেনা সুরে সারাটা দিন শিস দিয়ে যায়। তুমি যেন রাতে ভয় না পাও সেইজন্যে বিশাল একটা রূপোর থালা ভেসে ওঠে আকাশে---সে তোমার এক মামা হয়--চাঁদ মামা!
জীয়ন সোনা, আমিও তোমার এক বন্ধু হই----আমি দেখতে তোমার চেয়ে একটু বড়সড়---কিন্তু মনের মাপে একেবারে তোমার মত।
কোন একদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে--তখন আমি তোমাকে একটা খুব সুন্দর গল্প শোনাবো! সেই গল্পে এক রাজকুমার আছে, এক রাজকুমারি আছে, তাদের মনের সকল ভালবাসা দিয়ে তিলে তিলে করে গড়ে তোলা একটা সোনার পুতুল আছে। সেই গল্পে রাজকুমার আর রাজকুমারি তাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় সোনার পুতুলটাকে সাথে করে নিয়ে এক ভয়াল তেপান্তরের মাঠ পাড়ি দেয়--- সেই ভয়াল মাঠে কত কী ঘটে!! বিকট দর্শন ময়দানবেরা আসে সোনার পুতুলটাকে নিয়ে যাবে বলে, কখনো আসে অন্ধ করে দেওয়া বালির ঝড়, কখনো আসে অনলবর্ষী দিন, নিরিন্ধ্রীয় অন্ধ রাত----কিন্তু রাজকুমার আর রাজকুমারি তাদের পথচলা থামায় না---কারণ এই সোনার পুতলটা কে তারা যে কথা দিয়েছে--এই বিশাল তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে একদিন পৌঁছে দেবে চির বসন্তের দেশে!
সে এক ভীষন সুন্দর গল্প---
তুমি বড় হও দাদাঠাকুর, আমি আসছি সে গল্প শোনাতে--
আবারো, শুভ জন্মদিন!!
অনেক ধন্যবাদ অনিকেত।
শুভ জন্মদিন রাজকুমার পাপুন্তুস! তোমার জন্য অনেক অনেক রূপকথাময় ভালোবাসা ও আদর।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী!
শুভ জন্মদিন পাপুন্তুস! নিশ্চয়ই ও শক্ত হয়ে বেড়ে উঠবে; সামনে এগিয়ে যাবার বাধা যতই বন্ধুর আর কঠিন হোক না কেন, ও সেটা অতিক্রম করবেই!
অনেক শুভকামনা রইলো।
অনেক ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ।
শুভ জন্মদিন পাপুন্তুস।
ধন্যবাদ।
আপনি, আপু আর জীয়নের জন্য ভালোবাসা রইলো। সেই সাথে জীয়নের জন্য জন্মদিনের শুভ কামনাও।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
ধন্যবাদ।
শুভ কামনা, জীয়ন বাবা। বড় হও।
ধন্যবাদ সৌরভ।
কী আর বলবো, কিছু বলার ভাষা নেই। আপনাদের অনুভবগুলো তো কোনভাবেই উপলব্ধি করতে পারবো না, যতটুকু পারলাম, তাতেই অবর্ননীয় কষ্টে ভরে গেল মনটা। আমাদের সবার সবটুকু শুভেচ্ছা রইল জীয়নের জন্য।
অনেক ধন্যবাদ।
আমার ভাগ্নে সূর্যও জীয়নের মত। ওর বয়সও কাছাকাছি।
ভালো থেকো জীয়ন। শুভ জন্মদিন
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অনেক ধন্যবাদ অনার্য।
পাপুন্তুস অনেক অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য, শুভজন্মদিন। পাপন্তুস তোমার মত একটা সোনামনির জন্য আমিও অপেক্ষা করছি কে জানে সে কেমন হবে। শুধু জানি সে যেমনই হোক তোমার বাবা-মার মত আমাদের কোলেও সে এক অনন্ত ভালোবাসার খনি হয়েই থাকবে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
অনেক ধন্যবাদ সোহেল।
হ্যাপি বার্থডে পাপুন্তুস!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অনেক ধন্যবাদ সাক্ষী।
আমি আস্থা রাখি মানুষের প্রতিভায়, চিন্তা করা আর কাজ করার ক্ষমতায়। আমি আস্থা রাখি সারা দুনিয়াব্যাপী এই স্বর্গের ফুলদের যে সমস্যা সেটা কাটিয়ে ওঠার মতো চিকিৎসাব্যবস্থা অচিরেই আবিষ্কৃত হবে। বিজ্ঞান যাদু নয়, তবে বিজ্ঞান যাদুরও অধিক। কারণ, বিজ্ঞান বস্তুজগতের অন্তর্নিহিত শক্তিগুলোকে বের করে আনতে পারে। আমার দুই ভ্রাতুষ্পুত্র যাদের একজনের বয়স ২২ আর আরেক জনের বয়স ১৮ তারাও জীয়নের মতো। তাদের বাবা-মা'কে কাছ থেকে দেখায় আমি বুঝতে পারি মুর্শেদ-মৌটুসীকে প্রতিটা মুহূর্ত কী অসীম শক্তিতে, কষ্টে, ভালোবাসায় পার করতে হয়। আমি কামনা করি তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হোক, জীয়ন তার চারপাশের আর দশটা স্বর্গের ফুলের মতো বেড়ে উঠুক। আমরা যেমনটা চাই তেমনটা হোক জীয়নের জীবন, আমার দুই ভ্রাতুষ্পুত্রের জীবন, তাদের মতো সব স্বর্গের ফুলদের জীবন।
শুভ জন্মদিন জীয়ন বাবা! ভালো থেকো, আনন্দে থেকো সারা জীবন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক ধন্যবাদ ষষ্ঠ পাণ্ডব! আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রদের জন্য শুভকামনা।
কেন যে এই লেখাটা পড়লাম আবার। কেন যে কান্না আসে।
তোমাদের দেখলে অনেক ভালো লাগে মুর্শেদ। তোমরা অনেক শক্ত দল।
এই লড়াই তোমরা সহজে হারবেনা।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অনেক ধন্যবাদ রানা।
এমন একটা লেখা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। একেবারেই। মন্তব্য করা আর হলোনা তাই।
শুভ জন্মদিন বাবা। অনেক অনেক ভালো থেকো
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অনেক ধন্যবাদ নজমুল ভাই।
আমার এক কাজিন আছে এরকম।আমার চেয়ে মাত্র বিশ দিনের বড়।স্বাভাবিক হলে সে নিশ্চয়ই আজ আমার বন্ধুর মত হত! অথচ সে এখনো শিশু রয়ে গেল!
অনেক ধন্যবাদ গগন।
ধৈর্য রাখুন ভাই। আর সৃষ্টিকর্তার চমৎকারিত্বের প্রতি আস্থা রাখুন। শুভ জন্মদিন জীয়ন।
____________________________________________________________________
ইতিহাস পড়ি না, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশকে প্রতিদিন যেভাবে দেখেছি, সেটাই বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস।
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ জন্মদিন, জীয়ন
facebook
অনেক ধন্যবাদ তারেক।
পড়তে দেরি হয়ে গেল তাও শুভ জন্মদিন জীয়ন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
অনেক ধন্যবাদ নিবিড়।
শুভ জন্মদিন না দেখা ছোট্ট বন্ধু! সদা আনন্দে থাকো।
lots of love for the little one
নতুন মন্তব্য করুন