কথায় আছে মক্কার লোক হজ্জ্ব পায় না। আমাদের হয়েছে সেই অবস্থা। এতোদিন অ্যারিজোনায় থাকলাম অথচ এখানকার সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলোই দেখা হয়নি। তবু সেমিস্টারের প্রেশারের মধ্যে যখন আমার স্ত্রীর আমেরিকান প্রফেসর দক্ষিনের একটা শহরে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইল তখন চট করে রাজি হতে পারিনি। এশিয়ান প্রফেসররা এতো ভাল হয়না। সেই প্রফেসর আমার স্ত্রীকে এত সুন্দর করে অনুরোধ করেছে যে সে না করতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম।
সেই প্রফেসর, ড: বয়ার মূলত Bisbee শহরে যাবে। সেখানে একটা নতুন আর্ট গ্যালারী শুরু হতে যাচ্ছে। সেই গ্যালারীতে ড: বয়ার কিছু ছবি বিক্রী করতে যাবে। ছবিগুলো তার এক বন্ধুর আঁকা।
ড: বয়ারের বয়স সত্তরের কাছাকাছি। ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারেনা, খালি ঝিমায়। সে কিভাবে তিন ঘন্টার রাস্তায় কিভাবে গাড়ি চালাবে সেটা নিয়ে আমি একটু চিন্তিতই ছিলাম। সেও দেখি আমাকে দেখে খুশী হয়ে উঠল, আমাকে তো বলেই বসল, তুমিই গাড়ি চালাও বাবা।
বিসবি শহরটা খুব ছোট একটা শহর। পুরো শহরটার মূল অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হচ্ছে শিল্পকলা। বিভিন্ন ধরনের আর্ট গ্যালারী ছড়িয়ে আছে শহরটার একমাত্র রাস্তা মেইন স্ট্রিটে। আন্দাজ করলাম শহরটায় লোকসংখ্যা পাঁচশতের বেশী হবে না। ড: বয়ার বানিজ্যিক কথা বার্তায় ব্যাস্ত তাই আমি, মৌটুসী আর ড: বয়ারের আরেক ছাত্র, 'বিশাল', ছোট্ট শহরটা ঘুরে দেখে ফেল্লাম।
বিভিন্ন আর্ট গ্যালারী আর বিভিন্ন জিনিসের সমারোহে দোকানগুলো সাজানো। এক দোকানে দেখলাম মোহাভে (Mojave) কাউন্টির রেড ইন্ডিয়ানদের করা স্কাল্পচারে সাজানো। কিছু কিছু স্কাল্পচার আছে যার গায়ে দাম লেখা ২৭,০০০।
একটা দোকানে দেখলাম হ্যালোইনের দুর্লভ কিছু মুখোশ সাজিয়ে রেখেছে। আরেক দোকানে লোহার তৈরী রেড ইন্ডিয়ান দ্রব্য সাজানো রয়েছে। অনেক পুরোনো আমেরিকান দ্রব্য সাজিয়ে বসেছে এক দোকান। তাছাড়া অনেক দোকানেই রেড ইন্ডিয়ান দ্রব্যাদি সাজানো রয়েছে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল দুচারটা কিনি, কিন্তু দাম দেখে সাহসে কুলোল না।
আসার পথে পড়ল টুম্বস্টোন শহর। টুম্বস্টোন কথাটার শাব্দিক অর্থ হল পাথরের কবরফলক। এক সময় হয়ত খুব আউট-লদের আনাগোনা ছিল এখানে। উনবিংশ শতকের শুরুতে এখানে একটা খনিতে রৌপ্য পাওয়া যায়। আর তখন খুব বিখ্যাত হয়ে যায় এই শহর। এখন সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। তবে আছে ঐতিহ্য। এখনও তারা সেই ওয়েস্টার্ন ধাঁচটা ধরে রেখেছে। সেটা দিয়েই টুরিজ্যম ব্যবসা করে যাচ্ছে।
শহরটাতে আমরা নেমেই মনে হলো ১৮০০ শতকের কোন ওয়েস্টার্ন শহরে ঢুকে পড়েছি। সেই রকম বার, রাস্তায় কাউবয় জিনস পরা লোকজন, পুরোনো ডিজাইনের কাপড় চোপড় পরা মহিলার, ঘোড়ার গাড়ি চলছে। সময় যেন হঠাৎ পথ হারিয়ে ফেলেছে এখানে এসে।
আমরা সেখানটায় লাঞ্চ সেরে নিলাম, স্পনসর ড: বয়ার। তারপর ফিরে চললাম টেম্পির উদ্দেশ্যে, মাথায় এক গাদা হোমওর্য়াকের টেনশন নিয়ে।
(সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০৬)
মন্তব্য
একেবারে উপরের ছবিটা জোশ।
ওয়েস্টার্ণ ছবি ছবি লাগে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
শহরটা ভীষণ সুন্দর লাগছে ছবিতে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
প্রথম বাক্যে ধর্মের অবমাননা!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
এ্যাঁ! কথাতো ভুল বলেন নাই!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
প্রফেসর ও মৌটুসির সম্পর্ক দীর্ঘজীবি হোক।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
সম্প্রতি ২:৩০ ট্রেইন টু ইয়ুমা ছবিটা মনে হয় শুট্যিং হয়েছে এখানে। অদ্ভুত একটা শহর।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
লেখার প্রথম লাইনেই ধর্মানূভুতি আহত হলো।
তাই বাকিটুকু পড়ে বটুমিয়ার ছেলের মতো গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে চাই না বিধায় বাকিটুকু পড়লাম না।
ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট! একটা শহরের জনসংখ্যা পাঁচশ, এইটা শুইন্যা আমার জনসংখ্যানুভূতি আহত হৈল!
মাহবুব মুর্শেদ-এর ওজন কিছু কমছে মনে হৈল। বেশ কাউবয় কাউবয় লাগতেছিল
................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
'বয়' টুকু মানতে পারলাম না, তবে বাকিটা নিয়ে আপত্তি নেই।
কম কম লাগতেছে নাকি! আহা, আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ছবিগুলা মচৎকার!
এইখানেও এইরকম একটা জায়গা আছে। আঠার/ঊনিশ শতকের মত করে পুরা শহর সেট করে রাখা, সিটি অব ব্যালারাট। যাওয়া হয় নাই যদিও সময়ের কারণে...।
আপনি দেখি এক লেখায় দুই ধর্মরে আঘাত করলেন! শুরুতে মক্কা, আর মাঝের প্যারায় রাম আর অযোধ্যারে নিয়া টানাটানি!
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
যাও মিয়া ব্যালারাট। কি আছে জীবনে। অষ্ট্রেলিয়ান এবোরোজিনিদের গল্প শুনি আমরা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অনুভূতি যা আহত হইছিলো, চমৎকার বর্ণনা আর আরও চমৎকার ছবিগুলোর মলম মাখিয়ে সে ইনজুরি সারিয়ে তুললাম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
চমৎকার! সুযোগ পাইলে দেইখা আসবো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
চলে আসেন বস। সোজা দক্ষিন বরাবর রওনা দেন। দেখেন কি কাঠ ফাটা রোদে থাকি আমরা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আহা,আমাদের সোনারগাও।
রিক্সাওয়ালার বস্তি।
নতুন মন্তব্য করুন