গ্যাস ইঞ্জিন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১০/২০০৭ - ১১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এটা নিতান্তই একটা ফালতু লেখা। হুদাই কাতুকুতু দেবার চেষ্টা আছে। সেনসিটিভ মানুষকে না পড়বার অনুরোধ রইল। আর পুরো ব্যাপারটাই কল্পিত, সত্যের খানিকটা সুবাতাস থাকলেও থাকতে পারে।)

ঈদের দিন সকালবেলা নামাজ শেষে প্ল্যান মোতাবেক বাড়ি বাড়ি ঘোরা শুরু। যেখানেই যাই চটপটি, হালিম, বিরিয়ানী। খুশীতে দাঁত বেরিয়ে গেল। প্যান্টটাকে আরো ইঞ্চিখানেক নামিয়ে দিয়ে, বেল্টটাকে একটু ঢিলা করে দিয়ে সমানে চালিয়ে গেলাম।

বিকেলে পেটটা একটু মোচড় দিয়ে উঠল। কিন্তু পেটের দিকে নজর দিলে প্লেটের দিকে নজর দিবে কে? সুতরাং চালাও জোরে সোরে। আরো হালিম, আরো চটপটি, আরো বিরিয়ানী, আরো মিষ্টি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে পেটের দিকে তাকিয়ে খুশীতে দাঁত বেরিয়ে গেল আমার। সকাল ছিলাম একমাসের পোয়াতী, এখন ছয়মাস - আহা স্বাধের ভুঁড়ি আমার।

রাতে আবার পটলাক নামে এক পেট-লাকী অনুষ্ঠান। হেঁ হেঁ হেঁ - ঠিকই ধরেছেন পেটের জন্যই সেটা লাকী কিনা! পেটের সৌভাগ্যে আনন্দিত হয়ে আমি পেটকে উদার হস্তে চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় দিয়ে ভরিয়ে তুললাম। দেখলাম আবার মত আরও কয়েকজন সন্তানসম্ভব ভ্রাতা আশেপাশেই ঘুরছেন। তাদের সাথে চোখাচোখিতে জানান দিলেন যে হ্যাঁ পেটকে তারা অনাগত সন্তানের মতই যত্নআত্তি করছেন।

মধ্যরাত অবধী ভায়েরা খেয়েদেয়ে গলা পর্যন্ত ভরে তুললেন। সবাইকে দেখলাম চেয়ারে বসে পেটটা ফুলিয়ে আদুরে বেড়ালের মত মৃদু চোখ বুজে আয়েশ করছেন আর মাঝে মাঝে ঘাড়ের লোম ফুলিয়ে গরর গরর করছেন। অনুষ্ঠান শেষে সবাই দাঁত খিলাল করতে করতে বাড়ি ফিরে গেলেন।

বাসায় এসে অনুভব করলাম যে পেটটা তার সীমানা ছাড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। কি করি ভাবতে ভাবতে হজম করার প্রয়াসে একটা ছোট্ট দইয়ের কৌটা খুলে খেলাম। ব্যাস আর যায় কই। আবার পেটের ভিতর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। অজস্র বোমা পড়ার চুঁইই, ধুম ধুম শব্দ শোনা যেতে লাগল।

আমি কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার পায়তারী করতে না করতেই টের পেলাম রাসায়নিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। উন্নত বিশ্বগুলো ধমাধম বোমা ফেলছে তৃতীয় বিশ্বে। তৃতীয় বিশ্বে কাঁপা কাঁপি অবস্থা। আমি কাঁথা চাপা দিয়ে ঘুমাতেই রাসায়নিক গ্যাসের প্রভাবে আমার কাঁথা ফুলে ফুলে উঠতে লাগল।

আমার স্ত্রী ভাল মনে ঘুমাতে এসে একই কাঁথার নীচে ঢুকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাসের প্রভাবে আরেকটু হলেই অক্কা পেয়েছিল আরকি। জিজ্ঞাসা করল, উঁহু, একি অবস্থা!!? আমি বললাম, অবস্থা সুবিধার না। তৃতীয় বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ। রাসায়নিক বোমার আঘাতে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। তুমি উন্নত বিশ্বের পক্ষে না তৃতীয় বিশ্বের পক্ষে? তার রেগে মেগে ড্রয়িংরুমে যাওয়া দেখে বুঝলাম, তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে রক্ষণশীল দেশগুলো আসলে উন্নত বিশ্বের পক্ষেই থাকবে।

মাঝরাতে গরমে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম উচ্চচাপের প্রভাবে এসি বন্ধ হয়ে গেছে। আর আমার স্ত্রী সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে মাথাঘুরে পড়ে গেছে। শেষমেষ জানালা খুলে দিয়ে গৃহচাপ কমাতে হল। আর হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফেরালাম।

পরদিন দুপুরে আবার দাওয়াত। আগের দিনের বেড়ালস্বভাব ভাইদের সাথে দেখা। তাদের একেকজন জানালেন রাসায়নিক যুদ্ধের পরপর তারা অনেকে পারমানবিক যুদ্ধের উপর দিয়েও গেছেন। কেউ কেউ এগারোবার পর্যন্ত বোমাবর্ষণ করেছেন। কোন প্রকার শান্তি চুক্তিতে কাজ হয়নি। ভাবীরা শ্বাসিয়ে গেলেন - আজকে কম খাই যেন আমরা। এক বড় ভাই খেপে গেলেন। বললেন, তোমরা এমন করো কেন? মানুষ মাত্রেই পর্দনশীল।

সব চেয়ে কষ্টে ছিলেন হানিফ ভাই। ভাবী তাকে ঘর থেকে বেরই করে দিয়েছেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের উপরেও কিছু আছে নাকি? তিনি মনের কষ্ট চাপিয়ে না রাখতে পেরে বললেন, কি আর কমু! আছিলাম মানুষ হইলাম গ্যাস ইঞ্জিন।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সার্থকভাবে কাতুকুতিফাইড। আমি বেশি খাওয়া হয়ে গেলে বলি, 'ছয় মাস কি নয় মাস অবস্থা' আমার!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার অবস্থা সেইরকমই দাঁড়ায় ভাইজান। :|

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চাপা মাইরেন না।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হা হা হা হা হা হা হা
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

কাতুকুতুতে বড়ই আরাম পাইছি।:)

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

আছহাবুল ইয়ামিন এর ছবি

ভোজনেই প্রকৃত বিলাস

সৌরভ (লগইন করতে ইচ্ছে করেনা) এর ছবি

অশ্লীশ হয়েছে।
গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অমিত আহমেদ এর ছবি

আপনার ডায়েটের কি হলো?
আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে না হেভী টিপস নিলেন? শেষে এ অবস্থা?

আমার সারাটা ঈদ গেলো ঘুমায়।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দেঁতো হাসি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

জব্বর হইছে দেঁতো হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমি ভেবেছিলাম লোকজন অফেন্ডেড হতে পারে! এখন দেখি হাসে!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মন খারাপ করার দরকার নাই। অফেন্ডেড হওয়ার লোক না পাওয়া গেলে নিজে নিজে অফেন্ডেড হওয়া জায়েজ আছে। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দ্রোহী এর ছবি

হা হা হা হা
সেইরকম!


কি মাঝি? ডরাইলা?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।