[ছুটতে ছুটতে পনিরের প্রবেশ। হাতে দুই তিনটি কাগজ।]
পনির: কোথায়? কোথায় তুমি? চুমকী? এই চুমকী? আজ তোমাকে প্রমান করে ছাড়ব, কতটা ভুল বুঝেছিলে তুমি আমাকে। বলেছিলাম না, তিন চারটা চাকুরী নিয়ে তবে তোমাকে দেখাবো। ধর কয়টা, চাকুরী নেবে। কোথায় তুমি?
[বসে পড়বে সোফায়]
আরে কি অবাক কান্ড! জরিনা? ও জরিনা। (দর্শকদের দিকে) আরে কেউ নেই দেখছি। অন্য সময়তো হাবলুটাও ঘুর ঘুর করে আজ সেইটারেও দেখি না। (পকেট থেকে দুটো টাকা বের করে) দুইটা টাকা পকেটে ছিলো, নাহ কেউ নেই নেবার মত!
[খপ করে সোফার পেছন থেকে টাকাটা ধরবে হাবলু]
হাবলু: আছে আছে। অবশ্যই নেবার মত কেউ আছে। বহুত শুকরিয়া ভাইজান। বলেন কি করবার পারি আপনার জন্য।
পনির: ব্যাটা বদ্। এতক্ষণ সোফার পেছনে কি করছিলি? চেচাচ্ছিলাম শুনতে পাস নাই?
হাবলু: জ্বী ভাইজান। শুনলাম বইলাই তো উঠলাম।
পনির: যাকগে। ঐ তোর আপা কইরে? কখনও পাওয়া যায় না। আজকাল বাইরেও বের হয় না।
হাবলু: বাইর হবে ক্যামনে? আপামনি সারাদিন দরজার বন্ধ কইরা ভিতরে বইসা থাকে।
পনির: কেন?
হাবলু: আরে ঐ বুইরা আছে না? আপামনিরে দেখলেই কি সব রং-ঢং করার চেষ্টা করে।
পনির: হ্যাঁ? বলিস কি? তলে তলে এত দূর? ব্যাটা বদ্।
হাবলু: বদ মানে? বিরাট বদ। আর এর লাইগাইতো ঘর থাইকা বের হয় না।
হাবলু: তাইলে কি?
পনির: শাট আপ্। তোর এত জানার দরকার নাই।
হাবলু: জ্বী ঠিক বলছেন। তয় ঘটনা কিন্তু আরও আছে ভাইজান।
পনির: তার মানে?
হাবলু: বাড়িতে আইজকাল নানান কিসিমের লোকের আনাগোনা। মনে হয়, পেত্তেক দিন সকালে আহে কি জানি মাস্টারনি। বুইরা মিয়া তার কাছে রং আর ঢং শিখে।
পনির: মানে?
হাবলু: মাইনে এই কি কইরা কথা কইলে, গান গাইলে মেয়েদের খুশী করা যায় য় সেইসব আরকি।
পনির: যত সব পাগল ছাগলের কারবার।
হাবলু: না না ভাইজান মোটেও না। মাস্টারনি আফা খুব ভাল ভাল জিনিস শিখায়। আমি নিজে উপকার পেয়েছি।
পনির: কি?
হাবলু: জি। এর লাইগাইতো সকাল থাইকা সোফার পিছনে লুকাই আছি। লুকাইয়া লুকাইয়া বুইরার লগে আমারও শিক্ষা হইতাছে আরকি। ঐ যে মনে কয় মাস্টারনি আফা আইতাছে। আমি আইতাছি।
[হাবলুর প্রস্থান। শিক্ষিকার প্রবেশ।]
পনির: স্লামুআলাইকুম।
শিক্ষিকা: অলাইকুম সালাম। আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
পনির: আমি? আমি পনির। এ বাড়ির জামাই আরকি।
শিক্ষিকা: ওহ্ বেশ বেশ। আমি হচ্ছি অবলা মহিলা কলেজের রং-ঢং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষিকা।
পনির: হ্যাঁ? বলেন কি? এরকম ডিপার্টমেন্ট আছে নাকি আবার?
শিক্ষিকা: নিশ্চয় আছে। আপনাকে প্রতিদিন কতভাবেই না রং-ঢং করতে হয়। এই ধরুন প্রেমিক হিসেবে, স্বামী, কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে। কিংবা ধরুন চামচা হিসেবে। এর সবই আমরা শেখাই।
পনির: অ্যাঁ! বলেন কি?
শিক্ষিকা: ঠিকই বলছি।
পনির: ম্যাডাম আমাকে একটু কিছু উপদেশ দিবেন?
শিক্ষিকা: নিশ্চয় বলুন।
পনির: এ বাড়ির যে মেয়েটা আছে না? ঐ যে তুলি। তার ধারনা আমি নাকি মস্ত ক্ষ্যাত। কত চেষ্টা করেও তার মন পেলাম না।
শিক্ষিকা: হুম্ বুঝতে পারছি। আচ্ছা চট করে একটা প্রেমের গান গানতো।
পনির: (গলা ঝেড়ে) তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরন যাত্রা...
শিক্ষিকা: ঠিক আছে, ঠিক আছে। কিন্তু পনির সাহেব এটাতো ছ্যাকা খাওয়া গান। এ গান কেন গাচ্ছেন?
পনির: রোজই গেতে হয় কিনা।
শিক্ষিকা: মানে?
পনির: তুলির সাথে দেখা করতে আসলেই এক রকম গলা ধাক্কা দিয়ে রোজ বের করে দেয়। তখন এ গান গাইতে গাইতেই বাড়ি ফিরতে হয়। অবশ্য ধাক্কা না দিলে আমি যেতেই চাই না।
শিক্ষিকা: ঠিক আছে অন্য গান শিখে নেবেন কেমন?
পনির: আচ্ছা
শিক্ষিকা: এবার চট করে একটা রোমান্টিক ডায়ালগ দিন তো।
পনির: (দুহাতে মুখ ঢেকে) যান্ কি যে বলেন! আমার বুঝি লজ্জা করে না?
শিক্ষিকা: বুঝলাম। খুব লজ্জা বুঝি আপনার?
পনির: জ্বী
[হাবলুর প্রবেশ]
হাবলু: ভাইজান জলদি চলে। আফা আপনারে বুলায়। কি বলে জরুরী পরামর্শ আছে আপনার লগে।
পনির: অ্যাঁ তাই? চল চল এক্ষুনি চল। ম্যাডাম আপনার কাছে অনেক কিছু শেখার ছিলো। আপনার কলেজে আসব একদিন চিকনে।
শিক্ষিকা: নিশ্চয়।
হাবলু: ভাইজান আসেন। বুইরা মিয়া কইলাম যখন তখন আইয়া পড়তে পারে।
পনির: ঠিক আছে চল।
[ভেতর থেকে চানমিয়ার গলার শব্দ।
চানমিয়া: জরিনা, ঐ জরিনা...]
হাবলু: মরছে কইতে না কইতেই বুইড়ার আমদানি। ভাইজান আহেন আমার লগে তাড়াতাড়ি।
[সাইফু আর হাবলুর প্রস্থান। চানমিয়ার প্রবেশ]
চানমিয়া: আস্সালামু আলাইকুম।
শিক্ষিকা: অলাইকুম সালাম।
চানমিয়া: ম্যাডাম কতক্ষন আসছেন? ছরি ছরি, দেরি করাই দিলাম আপনার।
শিক্ষিকা: না না ঠিক আছে। তা আসুন শুরু করা যাক। তা আপনার হবু জামাইয়ের সাথে দেখা হল মাত্র। ছেলে মন্দ না।
চানমিয়া: জামাই? এইখানে?
শিক্ষিকা: ঐ যে পনির না কি যেন নাম।
চানমিয়া: কি পনির হারামজাদা? এখানে আইছিলো?
শিক্ষিকা: হ্যাঁ
চানমিয়া: ঐ বদটাইতো আমার চুমকীর পিছনে লাগছে। ম্যাডাম আমারে তাড়াতাড়ি সব শিখাইয়া দেন। যাতে তুলির মনডা পাই। সব ঠিক ঠাক থাকলে সামনের মাসেই বিয়া, ইনশাল্লাহ।
শিক্ষিকা: ঠিক আছে। আচ্ছা চট করে একটা রোমান্টিক গান গানতো।
চানমিয়া: (গলা ঝেড়ে) ... অ্যাঁ বাত্তি নাইরে কব্বরে ... মইরা গেলে বাত্তি নাই কব্বরে ...।
শিক্ষিকা: ওহ নো নো। এই গান ভুলেও না। অন্য একটা সুন্দর প্রেমের গান শিখে নেবেন কেমন?
চানমিয়া: আইচ্ছা। ভাল না লাগলে আরেকটা গাই?
শিক্ষিকা: না থাক। এবার চট করে একটা প্রেমের ডায়ালগ দিন।
চানমিয়া: ম্যাডাম লইজ্জা করে তো।
শিক্ষিকা: মরেছে! আপনারো খুব বেশী লজ্জা?
চানমিয়া: জ্বী। তয় খারান খারান মনে পরছে একখান।
শিক্ষিকা: ঠিক আছে বলুন
চানমিয়া: অ্যাঁ বলবো? হাম দিলকা সাচ্চা হে। তুম হামারা বাচ্চা হে। হেঃ হেঃ হেঃ
শিক্ষিকা: চলবে। তবে বাংলায় বলতে হবে। আচ্ছা এবার একটা প্রমের কবিতা বলুন।
চানমিয়া: প্রেমের কবিতা? হে হে মনে করছেন পারুম না? তয় হুনেন
"সুরঞ্জনা, অইখানে যায়ো নাকো তুমি
কোইয়োনাকো কথা ঐ যুবকের লগে
ফিরা আহো চুমকী - থুক্কু সুরঞ্জনা।"
শিক্ষিকা: এভাবে আবৃত্তি করলে তো আপনার চুমকী সত্যি সত্যই যুবকের সাথে পালাবে!
চানমিয়া: তাইলে আপনেই শিখায়া দেন।
শিক্ষিকা: দাঁড়ান একটা সাম্প্রতিক জমাট প্রেমের কবিতা খুঁজে বের করছি। .. হ্যাঁ এইতো
"অপূর্ণতায় নষ্টে কষ্টে গেলো এতোটা কাল,
আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো -
এসো দুজনে প্লাবিত হই প্রেমে,
নিরাভরন সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।
থাকবো ব্যাকুল শর্তহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।"
চানমিয়া: ছি ছি ছি! কি লেখছে এই সব? আস্তাগফিরুল্লাহ।
শিক্ষিকা: তোবা করছেন কেন? এরকম প্রেমের কবিতা আবৃত্তি করতে না পারলে কিন্তু চুমকি নাই।
চানমিয়া: অ্যাঁ চুমকি নাই? দেন দেন। আমি আবার টেরাই করি।
শিক্ষিকা: না থাক আজ আর না। বইটা রাখুন। কাল ভাল করে পড়বেন কেমন?
চানমিয়া: ম্যাডাম আগামী মাসেই বিয়া। চুমকীর মন পাবো তো?
শিক্ষিকা: চেষ্টা করতে দোষ কি? আসি তাহলে।
[শিক্ষিকার প্রস্থান]
চানমিয়া: (নিজে নিজে)
"অপূর্ণতায় নষ্টে কষ্টে গেলো এতোটা কাল,
আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো -
এসো দুজনে প্লাবিত হই প্রেমে,
নিরাভরন সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।
থাকবো ব্যাকুল শর্তহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।"
তোবা তোবা আমারে দিয়া হইবো না। ধুর্।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন