আজ বাংলা একাডেমির বই মেলা থেকে ফেরার পথে এমন এক ঘটনার মুখোমুখি হলাম যা এতদিন আড্ডার মুখরোচক গল্প হিসেবেই শুনে এসেছি, সিনেমা বা নাটকেই এমন সম্ভব।রাত প্রায় ন’টা বাজে তখন। আমি আর আশরাফ ভাই (নিসর্গ সম্পাদক সরকার আশরাফ) হাঁটতে হাঁটতে জাতীয় যাদুঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছি শাহবাগ বাসস্ট্যান্ডের দিকে। রাস্তার মাঝখানে আইল্যান্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো একটি মটর সাইকেলের ওপর বসে আছে এক তরুণী। সাথে গৌরবর্ণ দীর্ঘকায় এক যুবক, চোখে গ্লাস না সানগ্লাস বোঝা গেল না। আমাদেরকে হতভম্ব করে দিয়ে কোত্থেকে দুই তরুণী দৌড়ে এসে চড়াও হল যুবকের ওপর। একজন তো মটর সাইকেলে বসা তরুণীর গালে কষে এক চড় কষিয়ে দিলো।
দুই তরুণী তারস্বরে যুবকের উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছে- “ আমাদেরকে বসিয়ে রেখে তুমি এখানে অন্য মেয়ের সাথে কী করে বেড়াচ্ছ ? তোমার লজ্জা করে না ? আরেকজনের বৌ এর সাথে এসব করে বেড়াও?” দুই তরুণীর কথা প্রায় অভিন্ন। আমি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চলে যেতে চাইছিলাম কিন্তু আশরাফ ভাই নাছোড়বান্দা। শওকত ওসমানের গল্পের লাইন মনে পড়ল- ‘ অন্যের অপমান দেখার নেশা বড় নেশা।’ সে নেশায় আমাকেও পেয়ে বসলো। ততক্ষণে পরিস্থিতি আরো খারাপ। আশপাশের মানুষ জড়ো হয়েছে। বেশ বড়সড় জটলা তৈরি হয়েছে সেখানে। তরুণী দুটি যুবককে কিছুদূর টেনে এনে ভীষণ উত্তেজিত এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে অপদস্ত করে চলেছে। পুলিশে দেয়ার ভয়ও দেখালো। মটর সাইকেলে বসা তরুণীকে গার্মেন্টসের মেয়ে বলে ধিক্কার যুবকের লাম্পট্যের ফিরিস্তি দিতে দিতে কেঁদে ফেললো এক তরুণী। দুএকজন জানতে চাইলো, এইলোক আপনার কি হয়? এক তরুণী জবাব দিলো, কিছু হয় না। আমি ভাবছি তবে কি প্রেমিক প্রবর একসাথে তিন মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছিলেন ? এই দুই তরুণী ঘটনা টের পেয়ে ভেতরে ভেতরে একজোট হয়েছে আর মওকা খুঁজছিলো হাতেনাতে ধরার? তাই হবে। না হলে দুজনই একই সুরে কথা বলবে কেন ? এদিকে যখন বিশাল হট্টগোল তখন মটর সাইকেলে বসা তরুণী কিন্তু নির্বিকার বসে আছে সেখানেই। এমন সময় ছেলেটা আরেক কাণ্ড করে বসলো, চড় বসিয়ে দিলো এক তরুণীর গালে। আর যায় কোথায় ! পাবলিকের দুচারটা কিল-ঘুষি যুবকের গায়ে পড়তে লাগলো। আমি তো ভাবলাম এবার বেচারাকে গণপিটুনীর হাত থেকে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু কি মনে করে তরুণী দুজনই মানুষকে শান্ত করলো। সরিয়ে নিয়ে গেল সেই মটর সাইকেলের দিকে। জনতার ভিড় ততক্ষণে আরো বেড়েছে। এমনিতেই ওই এলাকায় চষে বেড়ানোর মানুষের অভাব নেই তার ওপর এমন রসালো ঘটনার মজা কে ছাড়তে চায় ! দুই তরুণী এক হঠাৎ চড়াও হল মটর সইকেলে বসা তরুণীর ওপর । মটর সাইকেল পড়ে গেল। তরুণী মানুষের ভিড়ের মধ্য দিয়েই দৌড়ে পালালো। দুই তরুণীর একজন অনুরোধ করছিলো সেই মেয়েকে ধরে দেবার জন্য। এদিকে আরেক তরুণী যুবককে টেনেটুনে নিয়ে যাচ্ছিল থানার দিকে। কেউ একজন এক তরুণীর ক ছে জানতে চাইলো, লোকটা আপনার কি হয়? তরুণী জবাব দিলো, আমার সাথে এনগেজমেন্ট হইছে। কথাটা আমার বিশ্বাস হলো না। আমি আর আশরাফ ভাই বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। দিনেদুপুরে রাজপথে প্রকাশ্যে কেতাদুরস্ত ছেলের গালে কষে চড় বসিয়ে দিয়েছে এক মেয়ে- এমন দৃশ্য আমি দেখেছি, তাও আবার বগুড়া শহরে। কিন্তু এমন ঘটনার সাক্ষী হওয়া সত্যি দুর্লভ সুযোগ। মাত্র তিনজন গোপীকে সামলাতে ব্যর্থ এই বাঙালি কৃষ্ণের দুর্দশা দেখে ভাবছিলাম শ্রীকৃষ্ণ কী করে সাতশ গোপীকে সামলাতেন।
মন্তব্য
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
সেইরকম!!!!!!!!!!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
ঠিকই হইছে, ব্যাটার কাণ্ডজ্ঞান বড়োই কম। তিনজনের সাথে মিশবি তো মিশ, কিন্তু সবই শাহবাগে কেন! ঢাকায় কি আর জায়গা নাই নাকি!
.................................................................
...ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি...
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
গল্পে প্যাচ লাইগা গেছে। কোন তরুণী কী করলো ঠাহর করা যায় না। তিনজনের নাম দিয়া বলেন একটু আবার। খালেদা, হাসিনা, বিদিশা। তারপর দেখি ঘটনাটা ক্যাম্নেকী।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
- ব্যাপার না। একটা ছোট্ট ক্র্যাশ কোর্সের দরকার ছিলো কৃষ্ণবাবাজীর।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এই জন্য কিছু কিছু লোকে জর্ম্মান দেশে থাকাই ভালো। দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো না।
(কথাটা ধুসর গোধুলীকে বলি নাই)
সেইরম কাহিনী!!
আমি জানতাম কৃষ্ণের ১৬শ গোপী ছিল
এরকমই হয়।
আগে গেলে বাঘে খায়
পিছে গেলে সোনা পায়
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
অপ্রাসঙ্গিক অনুরোধঃ
মাহবুব ভাই, যতদূর জানি আপনি শিক্ষকতার সাথে জড়িত। সচলদের জন্যে বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানরীতি নিয়ে কি একটু আলোকপাত করতে পারেন ভবিষ্যত কোন পোস্টে? এক পোস্টে সম্ভবত জিনিসটা সহজভাবে উপস্থাপন করাও মুশকিল, প্রয়োজনে একটি সিরিজ করা যেতে পারে (আয়েশা আখতারও বোধহয় আপনাকে সহযোগিতা করতে পারেন এ ব্যাপারে)। মোট কথা, বানানরীতি নিয়ে একটি রসপূর্ণ লেখার আব্দার জানাচ্ছি জোর গলায়।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বাংলা একাডেমির বানানরীতি বাংলা একাডেমিই মানে না এমন অভিযোগ আছে। না মানার প্রবণতা আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। বাংলা একাডেমি না এনসিটিবি কে বড়, পত্রিকাঅলারা আবার বিশাল এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে তাই তাদের ভাবসাবই আলাদা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা (বিশেষত ভাষার শিক্ষক) আবার প্রত্যেকে বানান সম্পর্কে নিজস্ব মূল্যায়নকেই প্রাধান্য দিতে ভালোবাসেন সবমিলিয়ে এক হযবরল অবস্থা। বাংলা বানানরীতির ইউনিফরমিটি আনার ক্ষেত্রে পত্রিকাগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারতো । কিন্তু তারা নিজেদের ইচ্ছেমত বানানরীতি ব্যবহার করতেই উত্ সাহী বেশি। বাংলা একাডেমি, এনসিটিবি, বোর্ড , দৈনিক পত্রিকা - কাদের বানানরীতি অনুসরণ করবো এই ধাঁধাঁয় পড়ে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যখন আমাদের কোনো বানানরীতি ছিলো না, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানানরীতি আমরা অনুসরণ করতাম সেটাই হয়তো ভালো ছিলো- অন্তত কোন বানানটা সঠিক সেই গোলকধাঁধাঁ ছিলো না। আমি আয়শা আক্তারসহ সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই এ বিষয়ে নিজ নিজ ভাবনা প্রকাশ করার জন্য। আর বাংলা একাডেমি প্রণীত বানানরীতি সম্পর্কে দুএকদিনের মধ্যেই লেখা ছাড়ছি।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
সুমন ভাই ঠিকই কইছেন , তিন তরুণীর নাম ব্যবহার করলে বুঝতে সুবিধে হইতো। কি করমু কন, ঘটনা দেখার পর আমার মাথায় যে জটটা পাকাইছিলো সেইটা কোনোমতে নামাইতে চাইছিলাম। ধরেন, মটর সাইকেলে বসা তরুণীর নাম জরিনা, আর আক্রমণকারী দুই তরুণীর নাম সখিনা,জুলেখা। তন্মধ্যে সখিনা ছিলো সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক। (নামগুলা কারো কমন পইরা গেলে আমি দায়ী না কইলাম )
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
নতুন মন্তব্য করুন