খবরটা হয়ত আমাদের অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। একে তো কোর্ট-কাচারির তার ওপর নিজের দেশের রসালো কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেরও নয় আবার প্রথম পাতার সংবাদও নয় তাই সময়ের বহু নিরীহ খবরের মত এটাও ডুবে গেছে বিস্মৃতিতে। খবরটা পরশু দিনের যার সার সংক্ষেপ হল,
' ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অন্তবর্তী নির্দেশে প্রকাশ্য রাস্তা দখল করে আর কোন ধর্মীয় উপসনালয় নির্মাণ করা চলবে না। ইতোমধ্যে যেসব রাস্তা দখল করে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদুয়ারা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মিত হয়েছে, এগুলোর ব্যপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ওই সব উপাসনালয় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করবে। খবরে প্রকাশ, ২০০৬ সালে গুজরাটে পৌরসভাগুলোর রাস্তায় অবৈধভাবে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এর আওতায় কিছু উপাসনালয় পড়ায় এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে কোর্ট এ রায় দেন।' -প্রকৃতই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিফলন এ রায়ে পাওয়া যায়; যেখানে জনকল্যাণই প্রাধান্য পাবে, অন্য কিছু নয়।
খবরটি পড়তে পড়তে বাংলাদেশের বাস্তবতায় ফিরে এলাম। মনে পড়লো গত রমজানে দুই শুক্রবার রোকেয়া সরণীতে তালতলার কাছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে যানজটে (?) আটকে থাকার কথা। কারণ ১০০ ফুট রাস্তার অর্ধেকটা বন্ধ করে মুসল্লিরা নামায পড়ছিলেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভর দুপুরে ফাঁকা রাস্তাঘাট থাকা সত্বেও যানজটে পড়ে শতশত যানবাহন। স্থবির দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। অনেক যাত্রী নামাজই পড়তে পারলেন না। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে মসজিদ পর্যন্ত এসে নামায ধরলেন। যানজট এড়িয়ে উল্টোদিক দিয়ে যেতে গিয়ে দুর্ঘটায় পড়ে চাকা দুমড়েমুচড়ে গেল একটি রিকশা ও একটি ভ্যানের । দুর্বিষহ কষ্টের মধ্যে পড়ল মহিলা আর শিশুরা। এটা অবশ্য প্রতি শুক্রবারই ঘটে । মহল্লার অলিগলিতো অনেক যায়গাতেই বন্ধ করে দেয়া হয়। জামাতের সময় এমন বিপাকে পড়তে হয় ঢাকা শহরের অনেক এলাকাতেই। বাংলাদেশের পুণ্যার্থী মানুষ সিভিক সেন্সের তোয়াক্কা করে না; পুণ্য আয়ের প্রকাশ্য ও প্রদর্শনযোগ্য উপায় ছাড়া অন্যগুলোতে তাদের তেমন কোনো উৎসাহ নেই। তা না হলে নামাযের সময়কে কর্মঘন্টা ফাঁকি দেয়ার রেওয়াজ গড়ে উঠতো না আর রোজার মাসে ঘুষ খাওয়া নিয়ে সরস কৌতুকও হতো না।
আমার এলাকায় কেবল সিকি বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৭টি মসজিদ । কেবল জুম্মার নামায ছাড়া অন্য ওয়াক্তগুলোতে বিশাল মসজিদগুলোর সামান্য অংশই মুসল্লি থাকে। তারপরও এলাকার রাস্তার ওপর শেড দিয়ে সেটিকে মসজিদের উঠান বানিয়ে ফেলেছে লোকজন। পরিহাসের বিষয় হল, যারা এটাকে অন্যায় মনে করে তারাই দিব্যি সেখানে নামায আদায় করছে। আর জুম্মার সময় বা এরকম কোনো বিশেষ উপাসনালগ্নে উপচে পড়া মুসল্লি অবরুদ্ধ করে ফেলে রাস্তাঘাট- এমনকি শহরের বড় বড় রাস্তাও। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও যে বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয় তা এইসব ফাঁপা মুসল্লিদের কে বোঝাবে; যখন মসজিদের ইমাম বা ধর্মীয় নেতারাই এতে উৎসাহ দেন এবং ‘লাল সালু’র মজিদের মত নিজের ক্ষমতা দেখে পুলকিত বোধ করেন। জনসংখ্যার ঘনত্ব ভেদে একটি এলাকায় দুতিনটি মসজিদ যথেষ্ট যদি সেগুলোকে পর্যাপ্ত জায়গা নিযে করা হয় এবং সবরকম সুযোগ-সুবিধা ও বহুতল করে গড়ে তোলা হয়।বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় সহনশীলতা ও ঔদার্য যে ক্রমশ কমছে, বাড়ছে গোঁড়ামি তা সহজেই বোঝা যায়- গবেষণা প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, এতে আনন্দিত হতো সবাই, দেশও উপকৃত হত যদি দেখা যেত একই হারে দেশ থেকে দুর্নীতি কমে যাচ্ছে, মানুষ আরো দেশপ্রেমিক হচ্ছে,পরমতসহিষ্ণুতা বাড়ছে, মানবতাবোধ সমৃদ্ধ হচ্ছে, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ক্রমাগত মসজিদ ও হাজির সংখ্যা বৃদ্ধি সত্বেও মানুষের মানদণ্ডে আমরা যে কেবল নিচেই নামছি তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
মসজিদের কারণে এলাকার রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা থেমে গেছে এমন উদাহরণ সারা দেশে ভুরি ভুরি। বড় বড় রাস্তাও পার্শ্ববর্তী মসজিদের কারণে বিষমাকৃতি হয়ে আছে এমন উদাহরণও খোদ ঢাকাতেই আছে। তাছাড়া সরকারি জমি বা খাস জমি কিংবা দুর্বলের জমি দখলের জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি যে মসজিদ-মাদ্রাসা বানানো তা সবাই জানে । কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না। বললেই সেটাকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয় এবং প্রতিবাদীকে নাস্তিক বা ইসলামের দুশমন আখ্যা দেওয়াও অবধারিত। সঙ্গে যদি ক্ষমতাসীন দলের একটু আশীর্বাদ থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
সুতরাং আমাদের দেশে ভারতের উদাহরণ সৃষ্টি করা কতটা দুঃসাধ্য এবং কেন তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু ভারতেও মন্দিরের পুরোহিতরা আছেন, আছে শিবসেনা, আছে বালথ্যাকারের মত উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী বা নেতা। কই তারা তো লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামলো না! গেল কোর্টে। আর কোর্টও মানুষকে, মানুষের অধিকার ও প্রয়োজনকে জনস্বার্থ ও মানবিক তুল্যমূল্যে যাচাই করেই রায় দিল, কোন টুপি বা টিকির দিকে তাকালো না।
ভাগ্যিস বলেননি দেশের সব মুদির দোকান গুলোকে জোরা লাগিয়ে একট বিশালাকার কমপ্লেক্সে পুরে দেয়া হোক।
দেশে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যে হারে বেড়েছে আমার ধারনা মাদ্রাসাও একই হারে বড়েছে। কোন কারনে আপনার চোখে মদ্রাসাগুলো একটু বেশি লাগছে হয়ত।
আর মাদ্রাসার এই বৃদ্ধি যে সবক্ষেত্রে চাহিদা বা ধর্মীয় প্রয়োজনে নয় তা কয়েকদিন আগে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বাংলাদেশ বিষয়ক এক সেমিনারের বিভিন্ন গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে যা দেশের প্ত্র পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। এ মুহূর্তে লিংক দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।
মাদ্রাসার ছাত্রদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন সে পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে তৈরি জানযট নিয়ে কি ভাবে। আপনি মুসল্লিদের রাস্তায় নামাজ পড়া ব্যপারটা যেভাবে দেখছেন সে হয়ত একই ভাবে ব্যাপারটা দেখবে।
আপনার নিজের আবেগের আলোকে একজন মুসল্লির আবেগকে বিচার করুন।
আবেগ দিয়ে বিচার করলে রাষ্ট্র ও সমাজ চলে না। মুসল্লির আবেগ দিয়ে বিচার করলে তো শুধু ধর্ম থাকে আর কিছু থাকে না। ধরুন ( এটা হাইপোথেটিকাল নয) পাড়ার একদল আবেগী মুসল্লী আপনার বাড়ির উঠানটাকে মাদ্রাসা বানাতে চাইল কিংবা আপনার বাড়ির দরজার সামনে চারটা মাইক নিয়ে সারাদিন মসজিদের জন্য সদকায়ে জারিয়ার ওয়াজ করা শুরু করলো- কি মনে হয় আপনার ? আপনি কি তখন আবেগে চোখ বন্ধ করে থাকবেন। নাকি সিভিক কাণ্ডজ্ঞান আর আইনের আশ্রয় নেবেন ?
সেটা উগ্র ধর্মিবিশ্বাসিদের মত উগ্র ধর্মবিদ্বেষিদের মধ্যে হয়ত সমান ভাবেই রয়েছে।
উগ্র ধর্মবিদ্বেষী আবার কোন টার্ম আছে নাকি ? প্রথম জানলাম। তো তাদের উগ্রতাটা কেমন উগ্রতা ? তারা কোথায় আত্মঘাতি হামলা চালায়, কোথায় বোমা মারে, কোথায় মানুষ জবাই করে, কোথায় ফতোয়া দিয়ে নারীকে হত্যা করে, কোথায় মা-বাবাকে বাধ্য করে সন্তানকে হত্যা করতে ? বলবেন কি ?
পসিশনালিটির দরুন দর্শনে যে একপেশে ভাবনা তৈরি হয় সেটার হাত থেকে বাঁচার সহজ উপায় হচ্ছে নিজের বিশ্বাস থেকে একটু পিছে এসে সার্বজনীনতার আলোকে বিষয়গুলোকে দেখা।
উপায় বাৎলে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। এ চর্চাটা আপনারই প্রয়োজন মনে হচ্ছে। কারণ সার্বজনীনতার আলোকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আপনি তো আরো আগেই জনদুর্ভোগের বিপক্ষে থাকতেন। আমি তো বহুবার এমন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি- নিজে যখন মুসল্লির কাতারে যাই তথন সেই দুর্ভোগের কথা মনে থাকে।
রাগিব এবং রিয়াজের মন্তব্যের পর আমি আমার লেখাটিকে আবারও পড়লাম । আমার লেখার একটা জায়গাতে শুধু মাদ্রাসার প্রসঙ্গ আছে কিন্তু তারা দুজনই প্রবলভাবে মাদ্রাসাকে টেনে এনেছেন। কারো ধর্মীয় অনুভুতিকে খাটো করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো না । আমি শুধু নাগরিক কাণ্ডজ্ঞান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতাকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছি। ধর্মকে সামনে টেনে আনলেই সব অন্যায় ন্যায় হয়ে যায় না, সব কষ্ট লাঘব হয় না। এ আলোচনা এখানেই ক্ষান্ত হোক।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
হাইপোথিটিকালি ধরি ঢাকা বা তার আশপাশের সবগুলো শহিদ মিনারকে ভেঙ্গে একযায়গায় নিয়ে আসলে তো অনেক যায়গা সাশ্রয় হয়। সেটা যদি কেউ করতে চায় তবে আমরা সংস্কৃতি ঐতিহ্য, ইতিহাস এসবের দিক থেকে বিষয়টিকে উদ্ভট মনে করব। কিন্তু আইডিয়াটা কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বেশ ফাংশনাল। ----কিসের সাথে কি!সহিদ মিনারে কি প্রতি সপ্তাহে ভিরের কারনে রাস্তা বন্ধ হয়।
মন্তব্য
ধন্যবাদ চরম সত্য কথাটি বলার জন্য। অতিথি লেখক না হলে পাঁচ তারা দাগাতাম।
সালটা ২০০৪ অথবা ২০০৫, সন্ধার পর স্ত্রীকে নিয়ে পান্থপথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম রাসেল স্কয়ারের দিকে। সেদিন ছিল ২৭শে রমজান। সম্মানিত(? )সিজনাল মুসল্লীরা রাস্তা বন্ধ করে আখেরাতের রাস্তা পরিস্কার করতে ব্যস্ত। হেঁটেও রাস্তা পার হবার উপায় নেই। অনেক সতর্কভাবে রাস্তা পার হচ্ছি হঠাৎসেই তথাকথিত মুসল্লীদের মাঝ থেকে আমার স্ত্রীকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করলো.............।
দেশে আসলে মুসলমান অপেক্ষা গোঁড়া ধর্মান্ধ ভন্ডের সংখ্যা দিন দিন বাড়াচ্ছে নব্য মজিদরা।
মজিদরা তো তাদের গুষ্টি বাড়িয়েই চলছে আর আমরাও অসহায় এর মতো মানুষের ধর্মবোধ ও অন্ধত্বের পার্থক্য না বোঝার পাপকে বসে বসে দেখছি।
--------------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
এখানে একটা ট্রেন্ডের কথা বললেন, সময়ের সাথে আচরনের তুলনামূলক চিত্র না দেয়া হলে এই সিদ্ধান্তে কিভাবে পৌছালেন বোঝা গেল না। হয়ত আমার পর্যবেক্ষনের দুর্বলতা।
রাস্তায় হাটা যেমন একটা সিভিক চাহিদা নামাজ পড়াটাও তেমন। যিনি বা যারা নামাজ পড়ছেন মুসল্লি হিসাবে তার নামাজের জন্য স্থানের সংকুলান দরকার আছে এটাকেও আপনার লেখায় একটু যায়গা দিতে পারতেন। সমস্যাটা হচ্ছে সময় এবং স্থান ভেদে স্পেস ব্যবহারের কনফ্লিক্ট। আপনি পথচারি হিসাবে রাস্তায় হাটাকে যখন বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তখন একজন মুসল্লির কাছে নামাজ পড়াটা জরুরী। যেই হকার রাস্তার পাশে পশরা সাজিয়ে বসেন তার কাছে তার ব্যবসা জরুরী। ব্যপারটাকে একটা সামগ্রিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য নিজেকে পথচারি, মুসল্লি বা একজন হকার এরকম ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ের মধ্যে ফেলার চেয়ে যদি একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টি দেয়া যেত তাহলে বোধ হয় সবার বোঝার সুবিধা হত।
এখানে মূল সমস্যা দেখছি স্থানাভাব। সমস্যাটিতে মুসল্লি এবং পথচারি দুই গ্রুপেরই সমস্যা হচ্ছে। সহনশীলতার কথা যখন বলছেন তখন মুসল্লিদের সমস্যাটি আপনার চোখ এড়িয়ে গেল কেন সেটা ঠিক স্পষ্ট হলনা।
ধর্মীয় উগ্রতা আমাদের সমাজে ছিল এবং আছে। তবে এখানে যেই সমস্যাটি বর্ণনা করলেন সেটা ঠিক কি ভাবে উগ্রতার পরিচয় হল তা স্পষ্ট হয়নি।
"রাস্তায় হাটা যেমন একটা সিভিক চাহিদা নামাজ পড়াটাও তেমন"
যদি বুঝতে ভুল না হয়ে থাকে তাহলে মুসুল্লিরা মসজিদের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছিলেন। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তো সমস্যা। রাস্তা তো নামাজ পড়ার জায়গা নয়, হাঁটার জায়গা। নিশ্চয়ই আমি মাগরিবের সময় মসজিদের ভেতরে দুসারি নামাজীদের মাঝের জায়গায় সান্ধ্যভ্রমনে যাবো না? মুসলমানদের নামাজ পড়তে হবে- অতি উত্তম, কিন্তু তাই বলে নামাজীদের জন্য বাকী সবার একেবারে আক্ষরিক অর্থে পথ ছেড়ে দিতে হবে এটা কেমন কথা হলো?
এই শিশুসূলভ আচরণের উৎস সম্ভবত "সবার উপরে ইসলাম" মানসিকতা; যতো শিগগির সম্ভব এ থেকে বেরিয়া আসা উচিত।
স্থানাভাবে জন্য অনেক সিভিক ফাংশনের জন্য এক্সল্কুসিভ যায়গা পাওয়া যায় না। একজন মুসল্লি আমার মনে হয় না শখ করে রাস্তায় নামাজ পড়েন। সেখানেও যায়গার অভাব রয়েছে। আমি বলছিনা রাস্তায় নামাজ পড়ার বিষয়টা কাম্য কোন ব্যাপার। কিন্তু লেখক বলেন নি এখানে সমাধান কি হতে পারত। আমিও সেটা বুঝতে পারছিনা।
আমরা কি নিয়ে কমপ্লেইন করিছি সেটা বোধ করি খেয়াল করে দেখা দরকার। বাংলাদেশে যেমন মাইক দিয়ে আজান দেয়া হয় তেমন অনেক দেশেই সম্ভব নয়। এখানে সংস্কৃতির একটা দিক আছে। যাদের করের টাকায় দেশের সব রাস্তা ঘাট তৈরি হয় তাদের একটা বিশাল অংশ এই ভাবে সপ্তাহের বিশেষ দিনে মসজিদ উপচে রাস্তায় নামাজ আদায়ে বাধ্য হয়। এতে রাস্তায় যারা চলাচল করেন তাদের অসুবিধা হয়। যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন তার কি উপায় থাকা সত্ত্বেও সেটা করছেন। যদি তাই হয় তবে সেটা অবশ্যই ঠিক নয়। এমনি তেও সেটা ঠিক আমি বলছি না। কিন্তু তারা যখন বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামাজ পরেন তাদের অপারগতার একটা দিক যে এখানে আছে সেটা কেউ লক্ষ্য করছেন কি? দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমার কাছে এটার মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা দেখতে পাইনি। বরং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপের দরুন সৃষ্ট সমস্যারই অনেকগুলো চেহারার একটা চেহারা দেখতে পাচ্ছি।
সবধরনের ধর্মাচরন "মজিদের" সাথে তুলনিয় নয়। এর মধ্যে যে প্রচ্ছন্ন শ্রেনীকরন দেখা যাচ্ছে সেটাতে আপত্তি জানাচ্ছি।
রিয়াজউদ্দিন
-- বাংলাদেশের লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর ওপর অনেকদিন ধরেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা চলছে এরকম অনেক সংবাদ প্ত্রপত্রিকায় বের হয়েছে ও হচ্ছে। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছিল একটা উল্লেখযোগ্য অংশ, এখনও সেটা চলছে তবে ধুকে ধুকে। পাশাপাশি মাদ্রাসার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে ( যার সাথে ধর্মপ্রচারের চেয়ে মাদ্রাসা পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের যোগাযোগ বেশি) । নব্বইযের দশকের মাঝামাঝিতে আমার এলাকায় (ঢাকার উত্তরাঞ্চলে) মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল একটি। আর এখন অন্তত ৬টি। আর হেফজখানার তো গোনাগানতি নেই। এক একটি মসজিদ ও মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে যে মানুষগুলো এলাকায় আস্তানা গাড়ে তাদের পেশাই ধর্ম। সেসাথে যোগ হচ্ছে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম। এলাকায় কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে দেখলেই একশ্রেণীর মানুষ ভদ্র ভাষায় এসবের কুফল ব্যাখ্যা করার কাজে নেমে পড়ে। কখনও তীব্র আপত্তির মুখে পড়তে হয়। আমি গবেষক নই খোদ ঢাকা শহরের কেন্দ্রে বসে আমার এলাকাকে ইউনিট ধরে এবং নিয়মিত একাধিক পত্রিকা পড়ার তথ্য মাথায় নিয়ে কথাগুলো লিখেছি। গবেষক হলে সংখ্যায় প্রকাশ করতাম।
রাগিব
আপনার এ যুক্তির পর আমার কিছু বলার নেই। একটি নির্দিষ্ট এলাকার রাস্তা একটা নির্দিষ্ট সময় বন্ধ থাকবে তা যদি আগে থেকেই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে জনস্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধবোধ থেকেই তা করা হয় এবং তাই হওয়া উচিত। বিষয়টি যদি আপনি এভাবে দেথেন তাহলে ভুল ভাঙবে। আমেরিকায় কি সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন ইচ্ছা হলেই যখন তখন রাস্তা বন্ধ করা হয় ?
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
ভাগ্যিস বলেননি দেশের সব মুদির দোকান গুলোকে জোরা লাগিয়ে একট বিশালাকার কমপ্লেক্সে পুরে দেয়া হোক।
আর মাদ্রাসা বাড়ার পরিসংখ্যান সম্পর্কেঃ
দেশে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যে হারে বেড়েছে আমার ধারনা মাদ্রাসাও একই হারে বড়েছে। কোন কারনে আপনার চোখে মদ্রাসাগুলো একটু বেশি লাগছে হয়ত। শহরের যেই অংশের কথা বললেন লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে ঘর বাড়ি কি হারে বেড়েছে। অন্তত ঢাকার যে যায়গায় বড় হয়েছি সেখানে আপনার বলা ট্রেন্ডটি আমি দেখতে পাইনি। তবে সমস্যাটা হয়ত মাদ্রাসার সংখ্যার মধ্যে নয়।
আপনার নিজের আবেগের আলোকে একজন মুসল্লির আবেগকে বিচার করুন। আপনার যা বিশ্বাস আর একজন মুসল্লির যা বিশ্বাস তা হয়ত আলাদা কিন্তু তার আবেগের বা প্রয়োজনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে ওয়াকফ করা সম্পত্তির ওপর তৈরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার মত আইনবিরুদ্ধ পরামর্শ দিয়ে আপনি সেটাকে উদারতা বলছেন? আর পাড়া মহল্লা ছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রেও মুসল্লিদের নামাজ পড়ার স্থানের দরকার হতে পারে। চাহিদা ছাড়া এগুলো গড়ে ওঠেনি। হাইপোথিটিকালি ধরি ঢাকা বা তার আশপাশের সবগুলো শহিদ মিনারকে ভেঙ্গে একযায়গায় নিয়ে আসলে তো অনেক যায়গা সাশ্রয় হয়। সেটা যদি কেউ করতে চায় তবে আমরা সংস্কৃতি ঐতিহ্য, ইতিহাস এসবের দিক থেকে বিষয়টিকে উদ্ভট মনে করব। কিন্তু আইডিয়াটা কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বেশ ফাংশনাল। প্রতিটা শহিদ মিনারে সারাবছর কতটা যায়গা ফাকা পড়ে থাকে। সেখানে কেবল একটা হলে তো অনেক সুবিধা। এমনটা বলতে চাচ্ছেন না আশা করি।
আপনি সমাজে শৃংখলার কথা বলছেন? কেবল রাস্তায় দাঁড়িয়ে একজন নিরুপায় মসুল্লী ১০ মিনিট নামাজ পরলেই সেটা নষ্ট হয়ে যাবে? জুমার নামাজে যত মুসল্লি হয় তাদের প্রয়োজনে জন্য যদি আনুপাতিক হারে ঢাকার সব স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয় হয়ত ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা দেড় বা দ্বিগুন হয়ে যাবে। তখন ঢাকায় যে স্থানাভাব সেটাত আরো প্রকট হবে।
quote]তবে একটু দূরে যে মসজিদের তৃতীয় তলা ফাঁকা পড়ে আছে সেখানে না গিয়ে বাড়ির কাছের মসজিদের রাস্তায় নামায পড়ার মানুষও কম নেই
কি আর করা? যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। আমরা বাজারে সস্তায় তেল, লবন, পাওয়া যাবে জেনেও অনেক সময় পাড়ার মুদির দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনি। দূরে ভাল স্কুল থাকলেও অনেক সময় কাছের সাধারন মানের স্কুলে পড়ি। এখানে কাছের মসজিদের নামাজ পড়তে যাওয়াটা আপনার কাছে বড় অপরাধ হয়ে গেল! আমার মনে হয় না রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে বাকিদের রাস্তায় চলার অসুবিধা তৈরির দুরভিসন্দি নিয়ে মুসল্লিরা মসজিদের যান। অনেক ক্ষেত্রে হাতে সময় না থাকা, আগে থেকে মুসল্লির সংখ্যা প্রেডিক্ট করতে না পারা এসব কারনে চাইলেও সমন্বয় করা কঠিন হয়।
এরচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভিন্নমতাবলম্বিদের অনুভুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া অথবা কেবল মাত্র বিশ্বাসের পার্থক্যের ভিত্তিতে মোটাদাগের শ্রেনীকরন। এটাও বড়ধরনের সামাজিক সমস্যা। সেটা উগ্র ধর্মিবিশ্বাসিদের মত উগ্র ধর্মবিদ্বেষিদের মধ্যে হয়ত সমান ভাবেই রয়েছে।
আপনার উপরের মন্ত্যব্যে দেখুন প্রভাত ফেরি বা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মত বিষয়গুলো যখন আসছে আপনার বক্তব্য নমনীয়। আপনি বলছেন না যে সেখানে রাস্তা বন্ধ হওয়াটা একটা সমস্যা। ব্যপারটা এমন একধরনের বিষয়গুলোতে রাস্তা বন্ধ হবার ব্যপারটি বোধগম্য আর মসজিদের মুসল্লিদের কারনে সৃষ্ট জানযট অগ্রহনযোগ্য বিশৃংখলার বৃহত্তর কারন। একটু লক্ষ্য করে দেখুন। মাদ্রাসার ছাত্রদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন সে পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে তৈরি জানযট নিয়ে কি ভাবে। আপনি মুসল্লিদের রাস্তায় নামাজ পড়া ব্যপারটা যেভাবে দেখছেন সে হয়ত একই ভাবে ব্যাপারটা দেখবে।
একভাবেই আপনার দর্শন আপনার বিশ্বাসগত অবস্থানের দ্বারা সীমাবদ্ধ গন্ডীতে ঢুকে পড়ছে। পসিশনালিটির দরুন দর্শনে যে একপেশে ভাবনা তৈরি হয় সেটার হাত থেকে বাঁচার সহজ উপায় হচ্ছে নিজের বিশ্বাস থেকে একটু পিছে এসে সার্বজনীনতার আলোকে বিষয়গুলোকে দেখা। আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি। আপনার কাছে মনে হয়েছে উগ্র প্রতিক্রিয়া। সেটা আমার দুর্ভাগ্য।