বাণিজ্যমন্ত্রীর এবার যাওয়া উচিত

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: বুধ, ০৭/১০/২০০৯ - ৫:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেশের মানুষের সাথে চিনি নিয়ে বেইমানী করার পর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়ার জন্য এবার খুচরা বাজারে চিনির মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর দেশের সকল সওদাগরদের পক্ষে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে দক্ষতার প্রমাণ রাখা বাণিজ্য মন্ত্রী ফারুক খান তাতে অত্যন্ত বাধ্য ছেলের মত সায় দিয়েছেন। ঠিক যে সময় চিনির দাম কমে স্বাভাবিক মূল্যে চলে আসার কথা ব্যবসায়ীরা বলছিলেন তখনই এ উদ্যোগ নেয়া হল এবং সম্পূর্ণ ব্যর্থ ( ব্যবসায়ীদের স্বার্থরায় সম্পূর্ণ সফল অবশ্য) এই মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের হাতে ক্রীড়ণক হয়ে এখন রীতিমত দেশসেরা ক্লাউনে পরিণত হয়েছেন। রমজানের একমাস আগ থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করার পরও পুরো রোজার মাস জুড়ে মজুদদারী ব্যবসায়ীদের তাণ্ডব আমরা দেখলাম। তাতে ব্যবসায়ী নেতা থেকে শুরু করে সরকারি আমলা, মন্ত্রী, সিপাহীর মুহুর্মুহু দৌড়ঝাঁপের মধ্যেই একমাস জুড়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার উৎসব চললো। মানুষ দেখলো রাষ্ট্র কী করে অসৎ মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেয়। তাদের অনৈতিক মুনাফা বাগানোর পথকে মসৃণ করতে যা যা করা দরকার বাণিজ্য মন্ত্রী তাই করলেন। এরপর ঈদ শেষ হওয়া মাত্রই চিনি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কয়েকজন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন। বাঃ কী চমৎকার! কী খেলাটাই না খেললেন এই পাকা ব্যবসায়ী। যদি আমরা মনে করি, একমাস ধরে যারা ৩২ টাকার চিনি ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি করে মুনাফা লুটলো তিনি তাদের কাছ থেকে সেই বাড়তি মুনাফার ভাগটা আদায় করতেই গ্রেফতার অঙ্কটা সাজিয়েছেন তিনি, সেটা কি ভুল ভাবা হবে? কার্যত এতে সাধারণ মানুষের কী লাভ হল? এই গ্রেফতার নাটকে তো পকেট ভরবে আমলা,পুলিশ আর বাণিজ্য মন্ত্রীর।
এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্যবৃদ্ধির ধুয়া তুলে পাইকারী ও খুচরা বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হল। এভাবে ধাপে ধাপে ভোজ্য তেলের মূল্য তিন অঙ্কে পৌঁছাতে সহায়তা করেছিলেন এই বাণিজ্য মন্ত্রী। তাই তেলের মূল্য কমে যখন ৪০ টাকায় থাকার কথা তখনও তা মানুষকে কিনতে হয়েছে ৬০/৬৫ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ১২ টাকায় কেনা গম থেকে আটা তৈরী করে আমদানিকারক প্রতি কেজি আটায় ১০ টাকা মুনাফা বাগিয়ে (!!) দেশের পাইকারি বাজারে ২৬ টাকায় ছাড়ার পর তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২৬ টাকার আটা বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। তখন অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল। একের পর এক আটার গুদামে হানা দিয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ করে ফেলল সরকার । শেষ পর্যন্ত ধরমার পদ্ধতি বাদ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কথামত উঠবস করে পার পেয়েছিল সে যাত্রা। ব্যবসায়ীরা জানে, .... টাও ছিঁড়তে পারবে না সরকার। মাংশের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয় প্রতিটি ঈদের আগে এবং ঈদ ছাড়াও মাঝে মধ্যে। যখনই তা করা হয় তখন সাধারণ মানুষের বুঝে নিতে হয় যে মাংশের দাম বৃদ্ধি অত্যাসন্ন। এ রকম অভিযোগ ও প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে রোজার মাসে টিভি ক্যামেরা নিয়ে ব্যবসায়ীদের বাজারবিহার বন্ধ করতে হয়েছিল। তারা বাজারবিহার শেষ করার পরপরই দাম বেড়ে যেত কয়েকগুণ।

এই বাণিজ্য মন্ত্রী যা বলেন তা করতে পারেন না বা করার চেষ্টাও করেন না আর যা করেন তা সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়। বাণিজ্য মন্ত্রীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি প্রথম থেকেই তা আমাদের বুঝতে অবশ্য দেরি হয়েছে। টিসিবি নিয়ে তার কথাবার্তা থেকেই তখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তিনি আসলে কী চান এবং কোন্ পথে যাবেন। মানুষের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রী আর ব্যবসায়ীদের এই তামাশা লীলা আর কতদিন। এ পদে এমন এক ব্যক্তি দরকার যিনি পুরোপুরি রাজনৈতিক এবং অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া মানুষ। একজন বাণিজ্য মন্ত্রী সরকারের ভেতরে সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলবেন , মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সাথে জনস্বার্থে দরকষাকষি করবেন, দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশাহারা মানুষকে কিছুটা মুক্তি দেবেন, নিদেনপক্ষে সেই আন্তরিকতাটুকু দেখাবেন- এটা কি আমাদের খুব বেশি চাওয়া? এদেশের আবেগী মানুষ একটুকু দরদের হাত মাথায় বুলালেই বুক উজার করে ভালবাসে, তার জন্য জীবন দিয়ে দিতে চায়। এই ভালবাসাকেই কেউ আশ্রয় করেছে কেউ করেছে পুঁজি। এমন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কি নেই যিনি শুধুই সেই ভালবাসার কাঙাল?


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

গত উনিশ বছরতো দেখলাম সরাসরি। কোন মেরুদণ্ডওয়ালা লোকরে বাণিজ্যমন্ত্রী বানাইতে সম্ভবত: পীর সাহেবের নিশেধ আছে ......



অজ্ঞাতবাস

মাহবুবুল হক এর ছবি

এখন তো দেখি পীর সাহেবের মুরিদরাই পীর এর ভাব ধরতাছে।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

হাসিব এর ছবি

বিবদমান রাজনৈতিক কাঠামোতে সেইটা সম্ভবও না । শুধু বাণিজ্যমন্ত্রীই না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়েও এই একই আছর আছে ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সব বাণিজ্যমন্ত্রী দেখি একই রকম!

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কী করে বানিজ্যমন্ত্রী হয় সেটাই হলো আসল কথা। যার বানিজ্য নিয়ে জ্ঞান নাই সে হয় বানিজ্য মন্ত্রী!!!! ছোটবেলা শুনতাম সেনা কর্মকর্তাদের বুদ্ধি থাকে হাঁটুতে, এর কী আর ব্যতিক্রম হবে!!!!

বাচাল লোকেরা কাজের কম হয় এটাতো মহামনিষীরা বলেছেন বহু আগে, ওনাকে তাড়াতাড়ি বিশ্রাম দেয়া উচিত,তানাহলে সামনে যে আরো কত কী হবে!!!
ধন্যবাদ।
দলছুট।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তিনি তো দেখা যায় নিজ বাণিজ্য চমৎকার বুঝেন!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দুর্দান্ত এর ছবি

সিরজুদ্দৌলার আমল থেকে সিন্ডিকেটই চালাচ্ছে এ দেশ।
মন্ত্রীর কাজ হল মজা দেখা আর টিকিট বেচা।
তবে মজুদ দারী বন্ধের দায় শুধু এর ঘাড়ে কেন রে ভাই? রাজস্ব বিভাগ বা জাতীয় সংসদ, যেখানে ১২ সিন্ডিকেটির ১০ জনই এখন সদস্য, তাদের কিছু বলেন।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মাহবুবুল ভাই, আর কী বলব?
আমার মনে হয়, একটা বিপ্লব দরকার। কিছু বিপ্লবী মানুষ নতুন ধ্যানধারণা নিয়ে এসে কাজ করে কিছু রক্ত না দিলে আসলে খোলনলচে পাল্টানো যাবে না!
জানি না, কী করা উচিত। ভাবছি...
তবে মনে হয়, একটা উপযুক্ত সিভিল আন্দোলন দরকার। ঐ তথাকথিত সিভিল না। যারা শিক্ষিত, যারা ঝামেলাগুলো বুঝতে পারছে, যাদের বয়স কম, দেশের জন্য সৎ ভালোবাসা আছে, এদের নিয়ে একটা কিছু না করলে আসলে কিছুই হবে না।
এই বুড়ো ষাঁড়গুলোকে জাতির কাঁধ থেকে টেনে নামানো দরকার।
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মাহবুবুল হক এর ছবি

মনের কথা কইছেন। আসেন হাত মিলাই। বিপ্লবের জন্য এখন চে বা মুজিবের পদ্ধতি খাটবো না। নিজেদের মধ্যে মতবিনিময়, মিথষ্ক্রিয়া দরকার। এজন্য আধুনিক যোগযোগ ব্যবস্থাগুলান কাজে লাগাইতে হইবো। যার যার জায়গা থেইকা যার যার কাজ বা দায়িত্বটুকু পালন করেন তাতেই কাজ হইয়া যাইবো।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

সাফি এর ছবি

এই লোক একটা ভাঁড় , প্রথম যেদিন ক্যামেরা নিয়ে ভাড়ামি করতে কারও্য়ান বাজার গেসিলো, সেদিন ই এর উপর থেকে আশা শেষ

হিমু এর ছবি

বাণিজ্যেতে গেছেন উনি সিন্ধুবাদের মতো!



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।