প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকুরীর পদমর্যাদা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এমন খবর নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের চাকুরী দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হচ্ছে, বাড়ছে শিক্ষকদের বেতনও। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলও স্বতন্ত্র হচ্ছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এসবই আশার কথা, আনন্দের কথা। আমাদের জাতীয় জীবনে আনন্দের সংবাদ আসে খুবই কম, যা আসে তা-ও পত্রিকার পাতায় ঠাঁই পেতে লড়াই করতে করতে আসে। প্রায় চার লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক সারাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড বলা যায়। সেদিক থেকে বিচার করলে এটি দেশময় এক আনন্দবার্তা। কিন্তু এর সাথে খানিকটা আশাহত হবার মত কারণও আছে। জানা যাচ্ছে, একই সাথে উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) পদমর্যাদা বাড়িয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (আগেও তা-ই ছিল) । এই একটি সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায় সরকারের বিবেচনায় শিক্ষকদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অবশ্য সরকারের এসব সিদ্ধান্ত-যে আমলাতন্ত্রের মস্তিষ্কপ্রসূত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশাসনিক পদকে সকল সময় সকল বিবেচনায় কর্তৃত্বের ছড়ি ঘুরাতে হবে- এমন বিবেচনা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বহুকাল ধরেই টেনে রেখেছে পেছন দিকে। কোনো রাজনৈতিক সরকারই এই রাহু থেকে মুক্ত নয়, হতে পারে নি, কবে হতে পারবে তাও আমাদের অজানা। সে ভিন্ন কথা।
সরকারের প্রাথমিক শিক্ষায় বিগত ১০ বছরে লক্ষণীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চমান বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্তত বাংলাদেশের বাস্তবতায় যতটা সুচারুভাবে সম্ভব। এ পেশায় যোগ্যতাসম্পন্ন, মেধাবী ও কর্মঠ তরুণ-তরুণীদের আগ্রহও তৈরি হয়েছে ব্যাপক। তাই এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রার্থিত শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক প্রায়শই পাওয়া যায়। এটি একদিকে যেমন আশাব্যঞ্জক অন্যদিকে সতর্কতাসংকেতও। যোগ্যতার মূল্যায়ণ না হলে তা হতাশার সৃষ্টি করে এবং তা সংক্রমিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদটি নিয়োগ শর্ত অনুযায়ী স্নাতক সনদধারী প্রার্থীদের। কেবল এই একটি কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটিকে তার চেয়ে একধাপ নিচে রাখা কতটা যৌক্তিক? শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রধান বিবেচ্য হলে যেসব প্রাথমিক শিক্ষক স্নাতকোত্তর পাশ তাদের বেতন স্কেল এটিইওর উপর নির্ধারণ করা কী অযৌক্তিক হবে? বস্তুত ভারতের মত বাংলাদেশেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনস্কেল শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে পারে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে একটি দপ্তরের প্রধান করেও এটিইওর হাতের পুতুল বানিয়ে রাখার কারণ কী হতে পারে? ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভূত যে কতটা নাছোড়বান্দা এ থেকেই বোঝা যায়। সেকালে পরিদর্শকের কুকুরের এক পা-এর জন্য যে খরচ রাষ্ট্র সেই শিক্ষককে সারা মাসে তা-ও দিত না। আর্থিক অবস্থার এখন হয়তো লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি কি হয়েছে কোথাও ? প্রাথমিক শিক্ষার মাঠ পর্যায়ে এটিইওদের দৌরাত্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতি প্রকাশ্য বিষয়। যার অধিকাংশ আসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শোষণ করে। এটিইও পদে চাকুরীর জন্য পুলিশের মত লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন বহু আগ থেকেই চলছে। ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ যেখানে আছে সেখানে নিয়োগবাণিজ্যে টাকার অঙ্কটাও অনেক। এসব কথা সরকারের অজানা তাও নয়। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার এই জাগরণের কালে সেই এটিইও পদটিকে আবারও প্রধান শিক্ষকের ওপর স্থান দেয়া শিক্ষাব্যবস্থার জন্য মঙ্গলজনক নয়। যে শিক্ষার্থী শ্রেণিশিক্ষক বা প্রধান শিক্ষককে জীবনের আদর্শ ধরে নিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করে তার সেই লক্ষ্য দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফিকে হতে থাকে শ্রদ্ধার্হ শিক্ষাগুরুর ওপর মটরসাইকেল থেকে নেমে আসা এটিইওর খবরদারি দেখে। তাই আজও, সেই ব্রিটিশ আমলের মত, বিদ্যালয় পরিদর্শক বা শিক্ষা কর্মকর্তার আগমন সংবাদে বিচলিত হন শিক্ষক। অন্য কোনো কারণে নয়, ছাত্রদের সামনে অপমান-অপদস্ত হওয়ার ভয়ে; বেতন বন্ধ বা জরিমানার শাস্তির আশঙ্কায়। সেইকাল থেকেই বিদ্যালয় পরিদর্শনে প্রশাসনের উদ্দেশ্য, ছাত্রদের মাঝে একটা হিরোইজম তৈরি করে শিক্ষককে ক্ষুদ্রজ্ঞান করা। আমরাও তাই দেখেছি। এ অবস্থার এখনো খুব একটা উন্নতি হয়েছে বলে শুনিনি।
সরকারের প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে তার শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের দায়িত্ব ছাড়াও অনেকরকম দায়িত্ব পালন করতে হয়। বস্তুত অন্যান্য দায়িত্ব এতটাই বেশি যে, শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর মূল কাজটা বলতে গেলে গৌণই থেকে যায়। তারপরও যদি তাকে বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে ছুটি-ছাটা বা চাকুরীর নানা প্রয়োজনে, আবেদন-নিবেদনে এটিইওর কলম বা দয়ার মুখাপেক্ষী হতে হয় তবে তো তার যন্ত্রণার আগুনে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সেই আগুন কেউ দেখবে না, যখন দেখবে তখন সব শেষ। বর্তমান বাস্তবতাও তাই বলে। তাই যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত তা হলো-
(১) এটিইওর মত প্রধান শিক্ষকের পদকেও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা।
(২) এটিইওর দায়িত্ব যাতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ না করে তেমন সুরক্ষা-ব্যবস্থা রাখা। অর্থাৎ উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্ধারিত ও সুসমন্বিত রাখা।
(৩) প্রাথমিক শিক্ষকের চাকুরীর এসিআর থেকে শুরু করে কোনকিছুই এটিইওর কর্তৃত্বে বা তত্ত্বাবধানে না রাখা।
(৪) শিক্ষক ও এটিইওর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরির ব্যবস্থা করা।
বহু কষ্টে, কিছু ত্যাগী ও উদ্যমী লোকের শ্রমে-ঘামে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় যে সোনালি আভা দেখা যাচ্ছে তা যদি আবার অন্ধকার গুহায় চলে যায় তাহলে সবচেয়ে লাভবান হবে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এতিমখানা-মাদ্রাসা ব্যবসায়। এটি যে কোনোভাবেই জাতি ও রাষ্ট্রের আদর্শের অনুগত, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিক, মুক্তচিন্তার মানুষ তৈরি করে না তা আমরা হাড়ে হাড়ে অনুধাবন করছি। প্রাথমিক শিক্ষক একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে নিবিড় ও প্রত্যন্ত কর্মী। তাকে যথাযথ ও সঠিকভাবে কাজে লাগালে সমাজবিপ্লব ঘটানো কঠিন নয়। টলস্টয়ের এ চিন্তা অমূলক নয়, দুনিয়ার অনেক দেশই তা করে দেখিয়েছে। আমরাও তা পারবো।
মন্তব্য
আমার নিকটাত্মীয়দের কয়েকজন পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। একটা জিনিস বুঝেছি এদের দেখে। তা হলো যারা মানুষ গড়ার কারিগর, তাদের যদি পেটের চিন্তায় ব্যস্ত থাকতে হয়, তবে শিব গড়তে বাঁদর গড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সব জাতীয় দিবসে শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিতি বাধ্যতা মূলক। যে কোন রকম কাজে বা জরীপে প্রাথমিক শিক্ষকদের কাজে লাগানো হয়। এইরকম অনেক কাজ তাঁদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হলেও তাঁদের সচ্ছলভাবে পরিবার ভরণপোষণ করার মত বেতন দেয়া হয়না। এটা চলে আসছে অনেকদিন ধরে। ফলাফল? যাদের আর কোন উপায় নেই, তাঁরা যান এই পেশায়। অথচ সবচেয়ে মেধাবীদের এবং যারা শিশুদের পছন্দ করেন তাঁদের আসা উচিৎ এই পেশায়।
আর একটা মজার জিনিস শুনেছি। অনেকেই পাড়ার/পরিচিত ইউনিভার্সিটির ভালো ছাত্র/ছাত্রীদের ভাড়া করে আনেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সময়ে তাঁর পাশে বসে পরীক্ষা দেয়ার জন্য, যেন তিনি ঐ ভালো ছাত্র/ছাত্রীর দেখে অথবা শুনে সঠিক উত্তর লিখে পরীক্ষা পাশ করতে পারেন। তাহলে এদের পরবর্তী শিক্ষক জীবন কেমন হবে?
____________________________
নিরেট সত্য কথা।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
তানিম, ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টা ভাববার জন্য।
প্রথমত আমাদের সরকারে যারা থাকেন তাদের মানসগঠনই এমন যে, শিক্ষককে শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু ভাবতে তারা অভ্যস্ত নন। আর প্রাথমিক শিক্ষক তো আরও প্রান্তে অবস্থান করেন, তাকে নিয়ে সরকার ও প্রশাসন ঠিক ততটাই ভাবেন যতটা নির্বাচনের ভোটব্যাংক হিসেবে ভাবতে হয়। তাই শুরুতেই অনেক বঞ্চনা তাঁর প্রাপ্য হয়ে যায়। (১) এর পিছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ অনেকটা তা-ই। এছাড়া প্রশাসনিক সুপিরিয়রিটি চর্চার ব্যাপার তো আছেই।
(২) দুজনের দায়িত্ব আলাদা হলেও এটিইও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা ব্যবহারের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশের রীতি অনুযায়ী এর যথেচ্ছ ব্যবহারও করেন। (৩) এ ব্যাপারটি সম্ভবত এখন নেই। আমি নিশ্চিত নই। আমি আরও তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে জানাচ্ছি। েআসল কথা হল, যার যার দায়িত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। কিন্তু এটিইও বা ডিপিইও এসব পদে যারা থাকেন তাদের কাজের ধরন বা ব্যবস্থাই হল প্রাথমিক শিক্ষককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা আর অপদস্ত করা। তারা ভুলে যান, পুরোনো দিনের প্রশ্নাতীত আনুগত্য বা হুজুর-হুজুর করার ভাব নিয়ে একালের উচ্চশিক্ষিত (অনেকক্ষেত্রে এটিইও বা ডিপিইওর চেয়ে বেশি), বলিষ্ঠ, মেধাবী শিক্ষকরা এ পেশায় আসছেন না।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
শিক্ষকের পদমর্যাদা অবশ্যই প্রথম শ্রেণীর হওয়া উচিত।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যেয়ে দেখেছি যে এটিইও’দের একটা প্রধান দায়িত্ব মনিটরিং হলেও সেই কাজের জন্য তাদের পর্যাপ্ত যাতায়াত ভাতা রাখা নেই, এই একটা কারণেই তাদের প্রায় অনেকেই কোন বিদ্যালয় মনিটরিং করতে গেলে যাতায়াতের খরচ সেই স্কুল থেকে নিয়ে নেন, নিয়ে নেন বলা ঠিক হবে-না, সিস্টেমটাই এভাবে তৈরি হয়ে আছে, তারা শুধু সেটার সাথে কমপ্লাই করেন!! ব্রিটিশ সিস্টেমের পরিবর্তন হয়নি কোথাও, সেটাকে আরও শক্তিশালী করতে আমলাতন্ত্র যা করা দরকার তার সবই করে গেছে বিগত ৪২ বছর। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে মনিটরিং সবচাইতে দুর্বল জায়গা, পিইডিপি-টু থেকে আমরা পিইডিপি-থ্রি’তে পৌঁছেছি কিন্তু এই সমস্যা থেকে উত্তরণে কতটা অগ্রগতি হয়েছে সেটা প্রশ্ন-সাপেক্ষ এবং বিপরীত মতামতগুলো প্রমাণসাপেক্ষ। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্বল একটা জাতি চাইলেও আর কতদূর এগুতে পারবে?
আপনার পরামর্শগুলো নির্দিষ্ট, ৪ নাম্বার’টি নির্ভর করে শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে, তাই এটি নিয়ে কিছু বলছি না, বাকি তিনটা পরামর্শের বেলায় আরও কিছু জানতে চাইছি।
(১) এটিইওর মত প্রধান শিক্ষকের পদকেও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা -- এটা করা হয় না কেন? নির্দিষ্ট কোন কারণ আছে কি?
(২) এটিইওর দায়িত্ব যাতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ না করে তেমন সুরক্ষা-ব্যবস্থা রাখা। অর্থাৎ উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্ধারিত ও সুসমন্বিত রাখা -- এক্ষেত্রে কি সুনির্দিষ্ট কোন নীতি আছে? ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’গুলো কিভাবে রাখা? পাশাপাশি এটিইওর যে এসিআর হয় সেটি’তে প্রধান শিক্ষকদের মূল্যায়নের কোন সুযোগ রাখা আছে কি?
(৩) প্রাথমিক শিক্ষকের চাকুরীর এসিআর থেকে শুরু করে কোনকিছুই এটিইওর কর্তৃত্বে বা তত্ত্বাবধানে না রাখা। --- এসিআর তাহলে কে করবে? আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।
এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও লিখবেন আশা করছি।
তানিম, ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টা ভাববার জন্য।
প্রথমত আমাদের সরকারে যারা থাকেন তাদের মানসগঠনই এমন যে, শিক্ষককে শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু ভাবতে তারা অভ্যস্ত নন। আর প্রাথমিক শিক্ষক তো আরও প্রান্তে অবস্থান করেন, তাকে নিয়ে সরকার ও প্রশাসন ঠিক ততটাই ভাবেন যতটা নির্বাচনের ভোটব্যাংক হিসেবে ভাবতে হয়। তাই শুরুতেই অনেক বঞ্চনা তাঁর প্রাপ্য হয়ে যায়। (১) এর পিছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ অনেকটা তা-ই। এছাড়া প্রশাসনিক সুপিরিয়রিটি চর্চার ব্যাপার তো আছেই।
(২) দুজনের দায়িত্ব আলাদা হলেও এটিইও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা ব্যবহারের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশের রীতি অনুযায়ী এর যথেচ্ছ ব্যবহারও করেন। (৩) এ ব্যাপারটি সম্ভবত এখন নেই। আমি নিশ্চিত নই। আমি আরও তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে জানাচ্ছি। েআসল কথা হল, যার যার দায়িত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। কিন্তু এটিইও বা ডিপিইও এসব পদে যারা থাকেন তাদের কাজের ধরন বা ব্যবস্থাই হল প্রাথমিক শিক্ষককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা আর অপদস্ত করা। তারা ভুলে যান, পুরোনো দিনের প্রশ্নাতীত আনুগত্য বা হুজুর-হুজুর করার ভাব নিয়ে একালের উচ্চশিক্ষিত (অনেকক্ষেত্রে এটিইও বা ডিপিইওর চেয়ে বেশি), বলিষ্ঠ, মেধাবী শিক্ষকরা এ পেশায় আসছেন না।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
একজন প্রাথমিক শিক্ষক হোম ভিজিট, উঠান বৈঠক, অভিভাবক সভা, সরকারের নানা স্বাস্থ্য-পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্য্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকেন। তার এসিআর দেন প্রধান শিক্ষক এবং প্রতিস্বাক্ষর করেন এটিইও। তার ওপর সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য অংশ নারী; যাদের চাকুরির পরিবেশ দেখারও কেউ নেই। শুধু এ কাজেই সারাদেশে কয়েকটা এনজিও থাকা দরকার। আছে কিনা আমি জানিনা।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রাম এলাকার সল্প শিক্ষিত হোমরা চোমরা সভাপতির সাক্ষর ছাড়া হয় না। প্রধান শিক্ষকের কর্তৃত্ব সহকারী শিক্ষকদের ছুটি দেয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ সেখানে স্কুলে চেইন অফ কমান্ড অনেক ক্ষেত্রেই খাটে না।তাই স্কুলের রেজাল্টের শো-কজ খাওয়ার টেনশনে ঘুম আসে না প্রধান শিক্ষকের। সুনামগঞ্জের একজন শিক্ষককে স্কুলে যেতে হলে প্রথমে আধ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে, এক ঘণ্টা লোকাল বাসে আবার আধ ঘণ্টা এবং সর্বশেষে খেয়া হয়ে স্কুলে যেতে হয় ,সরকার কি তাদের এই পরিশ্রম , নিদেনপক্ষে ট্রান্সপোর্ট কস্টটা মাথায় রাখে? তারপর শিক্ষা অফিসের সেই ভয়ংকর জায়গায় ছেলের বয়সী টিইও-এটিইও দের বয়োবৃদ্ধ শিক্ষকদের উপর তাচ্ছিল্যময় আচরন ,ঘুস,কয়েকজন নেতৃস্থানীয় শিক্ষকদের নির্লজ্জ চাটুকারিতা, মহান শিক্ষকের কাছে আমার মাথাকে নিচু করে দেয়। স্কুল ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জরিপ সহ বাকি সব কেরানির কাজকর্মও সামলাতে হয় শিক্ষকদের। আর বেতন ? এক সপ্তাহ একটা প্রাইমারী স্কুলে কাঊকে ক্লাস করানোর সুযোগ দিয়ে বলা উচিত সেটা কত হলে ভাল(বলা বাহুল্য তিন জনের স্কুলে প্রায়শই একজন শিক্ষককে একই সাথে তিন চারটা ক্লাস সামাল দিতে হয় এবং এই স্কুলের বাচ্চারা গায়ের খেটে খাওয়া লোকের সন্তান ইংলিশ মিডিয়ামের বাচ্চাদের মত ঘরে অন্তত দু-চারটা টিচার থাকে না !)। এত সমস্যা সমাধান না করে শুধু কয়েকদিন পর পর এদের ট্রেনিং দিয়ে অভাগা দেশের এত টাকা খরচ করে কি শিক্ষার মান উন্নত হবে !
কথাগুলো বর্ণে বর্ণে সত্য। একদম হৃ্দপিণ্ডে আঘাত করল।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
নতুন মন্তব্য করুন