২০১৩ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস : প্রশাসন নীরব কেন ?

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/১১/২০১৩ - ১০:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে পুরো পরীক্ষাটাকে একটা তামাশায় পরিণত করেছে। প্রথম পরীক্ষা (২০/১১/১৩) ছিল গণিত যার প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য আজকের পত্রিকাতেও এসেছে। আর আজকের বাংলা পরীক্ষার (২১/১১/১৩) প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে সকাল বেলাতেই। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে অভিভাবকদের মাঝে চাপা উত্তেজনা, ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা চলছিল; পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র বিতরণ করার সাথে সাথে নিশ্চিত হয়ে গেছে অনেকেই যে, এসব প্রশ্ন নানাভাবে তাদের কাছে এসেছে আরো আগে। সাজেশন আকারে নয়, রীতিমত প্রশ্ন আকারে - এমনকি বাংলা পরীক্ষায় প্রশ্নের ক্রম পর্যন্ত হুবহু মিলে যাওয়ার ঘটনাও দাবী করেছেন কোন কোন অভিভাবক। আমার কাছে বাংলা পরীক্ষার এমন কয়েকটি প্রশ্নের একটি কপি হাতে এলে বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে সংগ্রহকারীকে ভর্ৎসনা করলেও আজ সকালে সেই থুতু নিজেকে গিলতে হয়েছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে কয়েকজন অভিভাবকের কাছে জানতে চাইলে বুঝতে বাকী থাকে না যে এটা সবারই জানা, গত পরীক্ষা থেকেই। সুতরাং এমন নয় যে, প্রশ্নগুলো পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হচ্ছে, বরং এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এসব প্রশ্ন আরো আগেই ফাঁস হয়েছে, শুধু একটু রাকঢাক ছিল- এখন সেটাও নেই। কারণ এইসব প্রশ্নপত্র এখন কেনাবেচার গণ্ডী অতিক্রম করে পারস্পরিক উপকার ও উপহারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের ধরণ দেখে বোঝা যায় এসব প্রশ্ন উৎসস্থল থেকে খুব নির্বিঘ্নে অনুলিখিত। তা না হলে শব্দ-বাক্য ক্রমানুসারে ফাঁস হত না। তার ওপর এমনও শোনা যাচ্ছে যে, ইন্টারনেটেই নাকি এসব প্রশ্নের অনলাইন ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে !! আমাদের শিক্ষা বিভাগ পাশের হারের রেকর্ড গড়া-ভাঙ্গায় যেভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে আছে তাতে এসব বিষয় তারা কতখানি আমলে নেবে সেটাই সন্দেহ। উপরন্তু তারা মনে মনে আনন্দিতও হতে পারে এই ভেবে যে, পাশের হার বাড়া ও জিপিএ "ফাইভ" এর বন্যা বয়ে যাওয়ার এমন সুযোগ সরকারের সাফল্যের জন্য ভালোই তো, ভালো না ! মাঝখানে সর্বনাশ হচ্ছে সারাদেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে যারা ভালো ছাত্র-ছাত্রী তাদের ক্ষতি অপূরণীয়। তাদের শিক্ষা জীবনের প্রথম পরীক্ষাতেই তারা এমন এক অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হল যেখানে এক নোংরা তৃতীয় পক্ষ মাঠের বাইরে থেকে ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের মত কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছে।

এর আগে জেএসসি পরীক্ষা (হয়ত মাদ্রাসারও) এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তথ্য-প্রমাণসহ উদ্ঘাটিত হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অভিযোগ অস্বীকার করে সেটাকে স্রেফ গুজব বা বিচ্ছিন্ন মিল বলে আত্মরক্ষা করেছেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াতো নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সব নির্মমতা ও আতঙ্ককে অতিক্রম করে গেছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা। এখনও যারা শিশু, এখনও যারা এ সমাজের অন্ধকার দিকগুলোর সাথে পরিচিত হয়নি, এখনও যাদের পরীক্ষায় ভালো করা বা বৃত্তি পাওয়ার সুন্দর স্বপ্নগুলো শুধুই নিজকে মেলে ধরার নিষ্পাপ ইচ্ছা তাদেরকেও যে-আমাদের বড়দের কদর্য লোভ-লালসা আর বিকৃত-আকাঙ্ক্ষার শিকার হতে হচ্ছে এমন সর্বনাশা খেলা পৃথিবীর কোন্ জাতি দেখেছে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নপুরন বা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচতে যে পোড়খাওয়া মানুষ টাকা ছড়াতে দ্বিধা করে না এসব কোমলমতি শিশুরা সেই দলের নয়। তবু আমরা তাদেরকে একটি ঘৃণ্য পাকচক্রের মধ্যে ফেলে দিয়েছি অবলীলায়। রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, সরকারের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে যতখানি আমাদের নৈতিক অধঃপতন তার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। প্রাথমিক শিক্ষার প্রশ্নপত্রটাকেও ফাঁস করার মত বিষয় বলে যারা মনে করেছেন তারাতো কোন বিবেচনাতেই মানুষ নন। কোন শাস্তিই তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ কীভাবে ? আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি ? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো ?

একসময় পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এমন সংবাদ লোকে বিশ্বাসই করত না; প্রশ্ন হাতে পেলেও সেটি আসলে পরীক্ষায় আসবে কিনা ঘোর সন্দেহ থেকে যেত মানুষের। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এসবকিছু মানুষের ভয় ও বিস্ময়ের সীমা অতিক্রম করে এখন রীতিমত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাকে একই ধরনের অন‌্যসব ঘটনার থেকে ব্যতিক্রম ও গুরুতর মনে করি। তাই এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এর মূলোৎপাটন জরুরি।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

প্রশাসন নিরব কারণ ঠিকমতো প্রতিবাদ হয়নি।
এরকম পোস্ট দিলে প্রমানসহ দিতে পারলে ভালো।
যেমন আপনি লিখেছেন,

আমার কাছে বাংলা পরীক্ষার এমন কয়েকটি প্রশ্নের একটি কপি হাতে এলে বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে সংগ্রহকারীকে ভর্ৎসনা করলেও আজ সকালে সেই থুতু নিজেকে গিলতে হয়েছে।

আপনি মূল প্রশ্নের কপি আর হাতে যা এসেছে সেটার কপি পোস্টের সাথে দিলে একটা তুলনা করা যেত। আর হাতে আগে যেটা এসেছে সেটার তারিখ প্রমানও একটা গুরুত্বপূর্ণ।

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুবুল হক এর ছবি

আমি কারো কাছে বিচার চাই না- তবে এ থেকে পরিত্রাণ চাই। তাই ইচ্ছে করেই প্রশ্নের কপি যুক্ত করিনি। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন হাতে এলে তবেই না তাকে ফাঁস বলা যায়। এটুকু নিশ্চিত না হয়ে অযথা ব্লগে সময় নষ্ট করব কেন?

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আপনার কাছে একটি অনুরোধ, আগামী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি এখানে প্রকাশ করুন, আমরা একটু মিলিয়ে দেখি, তারপর থুথু গিলি?

ঘুমকুমার এর ছবি

এ ধরনের অভিযোগ প্রতিটা পাবলিক পরীক্ষার আগে/পরেই শোনা যায়। এবারও শুনতে পাচ্ছি। কতটুকু সত্য জানি না। লেখকের কাছে যদি প্রমাণ থাকে তাহলে সেটা প্রকাশ করার অনুরোধ রইলো।
আপনি যেমন বলেছেনঃ

আমি কারো কাছে বিচার চাই না- তবে এ থেকে পরিত্রাণ চাই।

বিচার না হলে তো পরিত্রাণ হবে না। আর সেজন্য সবাইকে প্রতিবাদী হতে হবে। আর সবাইকে সচেতন এবং প্রতিবাদে উদ্ভুদ্ব করার জন্যই প্রমাণ দরকার।

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

গতকাল শুনলাম- প্রশ্নফাসের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হ্যেছে। কিছু কি জানতে পারবো এই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে?

-এস এম নিয়াজ মাওলা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

একসময় পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এমন সংবাদ লোকে বিশ্বাসই করত না; প্রশ্ন হাতে পেলেও সেটি আসলে পরীক্ষায় আসবে কিনা ঘোর সন্দেহ থেকে যেত মানুষের। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এসবকিছু মানুষের ভয় ও বিস্ময়ের সীমা অতিক্রম করে এখন রীতিমত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।