সম্ভবত ১৯৭১ সালের পর বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী-স্রোত দেখছে পৃথিবীর মানুষ। এই হতভাগ্য মানুষগুলোর প্রায় সবাই মধ্যপ্রাচ্যের ইয়াজিদী, কুর্দী, বাঙালি, আরবীয়, শিয়া, সুন্নী আরও কত সম্প্রদায়ের মুসলিম, অমুসলিম; এক কথায় আদম সন্তান। আরবের রাজনীতি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, জর্ডান, তুরস্ক, ইয়েমেনসহ সবদেশকে তছনছ করে দিয়েছে। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আইএসের বর্বরতা। তালেবানের মধ্যযুগীয় ইসলামিক রীতিবিরুদ্ধ বিভীষিকাময় শাসনত্রাসন আপাতত শেষ হতে না হতেই আইএসের নির্মমতা সবাইকে হতবাক করেছে। তবে এহেন ক্রুড়াতাও সমর্থন এমনকি প্রয়োজনীয় মনে করার মত মুসলমানের অভাব নেই। আমাদের দেশেই মাদ্রাসা-মসজিদে আইএসের বীরত্বে চোখ চিকচিক করার মত মুসলমান কম নয়। আল শাবাব, বোকো হারাম আফ্রিকার ভূমিপুত্রদেরকে প্রতিদিন যে একইভাবে উৎখাত করছে সেটা অবশ্য বাঙালি মুসলমানের কাছে ততটা রোমান্টিক নয় যতটা আরবের নাম শুনলে তার চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে।
প্রতি হজ্জ্বে কমপক্ষে ২৫ বিলিয়ন ডলার কামানো সৌদি আরব অথবা বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসী ফুর্তিনগর আরব আমিরাত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে এ ঘটনায়। আর প্রতি মুহূর্তে বোমা আর উগ্র সাম্প্রদায়িকতার হুমকিতে থাকা ইউরোপের কাছে আমরা মানবতার আশা করছি, এবং দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকেও শেষপর্যন্ত তারা মানবতাকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। হাঙ্গেরি-জার্মান-অস্ট্রিয়া তিনটি দেশেই উল্লেখযোগ্য ইহুদির বাস। অন্তত আমাদের দেশের গড়পড়তা মুসলমানের কাছে তারা খ্রিস্টান বা ইহুদি বা নাসারা বা কাফের, মানুষতো নয়ই। তারা মুসলমানের শত্রু । আমাদের দেশে ওয়াজ-বয়ান-খুতবাতে তাদের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষার মোনাজাত হরহামেশাই শুনি। যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লক্ষ মানুষকে জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করে, ঘরবাড়ি-মাতৃভূমি-জীবিকা পেছনে ফেলে পালাতে বাধ্য করেছে তার কথা কিন্তু মুসলিম নেতারা বলছেন না। তারা বরং ইউরোপের মানবতার জন্য গলা ফাটাচ্ছেন। সাম্প্রদায়িকতা যখন মানবতাকে গিলে খায় তখন তারা চুপ থাকেন, আর মানবতা যখন অতিধার্মিকের উগ্রতাকে নস্যাৎ করে তখন তারা নিজকে সাম্প্রদায়িক বলতে দ্বিধা করেন না।
মোহাম্মদ কুর্দীর পরিবারের ১১ সদস্যকে জবাই না করলে, তার প্রিয় স্বদেশকে নরকভূমিতে পরিণত না করলে হয়তো আমাদেরকে তিন বছরের ছোট্ট আইলানের লাশ দেখতে হতো না। এই শিশুর লাশ যাদেরকে কাঁদিয়েছে তারা আরব বা আইএসের কাছে আবেদন জানানোর চেয়ে ইউরোপের বিধর্মীদের কাছে মানবতা আশা করাই যুক্তিযুক্ত মনে করেন। কারণ ইতোমধ্যেই বিশ্বের কাছে প্রমাণিত- সাম্প্রদায়িকতা কখনও মানবতাকে রক্ষা করতে পারে না, কিন্তু মানবতা পারে সব সম্প্রদায়কে একসুতায় বাঁধতে।
মন্তব্য
এই লিঙ্ক অনুযায়ী এই তিনটা দেশকে খৃষ্টানপ্রধান বলাই মনে হয় বেশী যৌক্তিক। তবে পোস্টের মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত; মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ মুসলিমপ্রধান দেশগুলির কেউ এই উদ্বাস্তুদের জন্য তাদের দরজা খুলে দেয়নি। উদ্বাস্তুদের নিয়ে ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ মানবতাবাদীদেরও তেমন লাফালাফি নেই।
Emran
আপনার কথা ঠিক। আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম, অনেক ইহুদির বাস এসব দেশে। পরিসংখ্যান অবশ্য তাই বলে। ইউরোপে ফ্রান্সের পরই অন্য জনসংখ্যার অনুপাতে প্রথমে হাঙ্গেরি (২১২:১), তারপর অস্ট্রিয়া (৬৮৫:১) এবং জার্মানিতে (প্রায় ৯০০:১) বেশি সংখ্যক ইহুদির বাস। যদিও এ সংখ্যা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া এসব দেশের চেয়ে অনেক কম। তবুও বাক্যটি ঠিক করে দিলাম। ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
পুরো ইউরোপ কে বাহবা দেওয়ার সময় বোধকরি এখনো আসেনি। তবে জার্মানি যা করছে তা ভাল একটা দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে।
পিঙ্গল
তাতেও যদি আমাদের দেশের তথাকথিত ইসলাম রক্ষাকারীদের চোখে খুলে।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
আপনার বক্তব্যে যে প্রচুর সত্যতা নেই তা নয়, কিন্তু তারপরও এটা যে সত্যের ব্যপকভাবে সরলীকৃত, একপেশে ও খণ্ডিত সংস্করণ তা সম্ভবত আপনিও জানেন। তাই এনিয়ে কোন বিতর্কে গেলাম না, শুধু স্মরণ করিয়ে দিলাম।
আমার কাছে কেন যেন মনে হয় কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। এই মনোভান মূলত কট্টর মৌলবাদীরাই পোষন করে, সাধারণ মানুষের মধ্যে মনে হয় না এটা এত প্রবলভাবে বিদ্যমান, যদিও তারা প্যালেস্টাইন-ইরাক ইত্যাদির জন্য আম্রিকাকে দায়ী করে থাকে।
এটাও কিন্তু অত্যন্ত খণ্ডিত, একপেশে তথ্য। সিরিয়ার রিফিউজির সবচেয়ে বেশি আশ্রয় দিচ্ছে তার আশেপাশের অন্যন্য মুসলমান / আরব দেশগুলিই! অধিকাংশ রিফিউজি তো সেখানেই। শুধু সিরিয়া কেন, গত ৬০-৭০ বছর ধরে অন্তত রিফিউজিদের বার্ডেন এরাই বহন করে যাচ্ছে - প্যালেস্টেনিয়ান, ইরাকি, সিরিয়ান, আফগান সমস্ত রিফিউজিদের ক্ষেত্রেই সেটা করে যাচ্ছে। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অন্যতম আর্থিকভাবে পশ্চাদপদ দেশ বাংলাদেশ পর্যন্ত - রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে। আপনার মহান মানবপ্রেমীরা একটার পর একটা দেশ বোমা মেরে গুড়া-গুড়া করে দিয়ে, ইশ্বরের সার্টিফিকেট দেখিয়ে তাদের দেশ দখল করে নিয়ে, বা অস্ত্র-টাকা-উষ্কানি জুগিয়ে পরস্পরে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে আজ পর্যন্ত যে লক্ষ লক্ষ মিলিয়ন মিলিয়ন রিফিউজির জন্ম দিয়েছে ও চাপিয়ে দিয়েছে - তাদের কিন্তু পার্শ্ববর্তী মুসলমান দেশগুলিই আশ্রয় দিয়ে চলেছে আজ পর্যন্ত। কোন কোন ক্ষেত্রে এর কোন কোন দেশে রিফিউজির সংখ্যা ঐ দেশের মূল অধিবাসীদের ছাপিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, মূল অধিবাসীদের জীবন ভয়াবহ রকম কঠিন করে তুলেছে, ভেঙ্গে পড়ার উপক্ক্রম হয়েছে তাদের অর্থনীতি - তারপরও। এবং এটা তারা দশকের পর দশক ধরে করে চলেছে। পশ্চিমা মিডিয়া এসব সত্য তেমন একটা হাইলাইট করে না বলে বা নিজেদের যে কোন কৃতিত্ব বা মহত্বের কাহিনি ২৪/৭ ঢাক পিটিয়ে চলে বলে এগুলি মিথ্যা হয়ে যায় না।
এই মুহূর্তে যে সিরিয়ান রিফিউজিদের কাফেলা দেখছেন জার্মানির উদ্দেশ্যে - এরা কোত্থেকে আসছে? এদের বেশির ভাগই সম্ভবত সরাসরি সিরিয়া থেকে আসছে না। আসছে তুরষ্ক থেকে (এবং অন্যান্য কিছু মুসলিম দেশ থেকে)। অর্থাৎ ইউরোপ / জার্মানি থেকে বহুগুনে অসচ্ছল তুরষ্ক তাদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং ধারণ করছিল এবং বেরও করে দেয়নি (তারাই বরং লুকিয়ে-চুরিয়ে অবৈধ পন্থায় বেরিয়েছে)। এই অর্থে এরা আসলে "রিফিউজি"-ও না, বরং "ইকনমিক মাইগ্রেন্ট" যারা উন্নততর জীবনমানের জন্য ইউরোপ যাচ্ছে, ঠিক আশ্রয় বা প্রাণ বাঁচানোর জন্য নয়। উইকি বলছে - "As of February 2015, Turkey has become the world's biggest refugee hosting country with 2.1 million Syrian refugees and had spent more than US$6 billion on direct assistance to refugees"। আমি নিশ্চিত এই অফিশিয়াল সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে তুরষ্কে সিরিয় রিফিউজির সংখ্যা অনেক বেশি। তুরশক, লেবানন, জর্ডান, ইরাক সবাই আশ্রয় দিয়েছে, দিচ্ছে। উইকি বলছে - "while thousands also ended up in more distant countries of the Caucasus, the Persian Gulf, North Africa"।
মুসলিম দেশগুলি হয়তো অত ঢাকঢোল পিটাচ্ছে না বা তাদের পিআর ক্যাম্পেন হয়তো তেমন উদ্যোগী বা ইফেক্টিভ না যার কারনে তাদের গল্পগুলি হয়তো আপনার মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি বা হয়তো আপনাত নলেজেই পৌঁছায়নি পুরোপুরি, কিন্তু তার মানে এই না যে তারা আসলে কিছুই করছে না।
যাহোক, আপনার লেখাটার মূল স্পিরিটের সাথে আমি একমত এবং আমিও মনে করি এসব দেশের, বিশেষ করে গালফ দেশগুলির আরও এ্যাক্টিভ হওয়া উচিত।
আমি আপনার
****************************************
আর এই কাজে যে পেনিনসুলার আরব দেশগুলো সক্রিয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, সেটাও বিবেচনায় আনা উচিত। ১৯৪৭ সালের পর সৌদি আরব কুয়েত কাতার বাহরাইনে কয় জন রিফিউজিকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে? ভাগ্য ভালো তুরস্ক জর্দান ইরাক সিরিয়া বাংলাদেশ ছিলো, তা না হলে মুসলমানদের ভাবমূর্তির কী যে হোতো!
ভালো ও মন্দ সবখানেই আছে এবং মানুষ মানুষই - কেউই বিশুদ্ধভাবে ফেরেশ্তা বা ইবলিশ না, কেউই একচেটিয়াভাবে ভালো বা মন্দ না। তাই ভালো-মন্দ দুটোকেই স্বীকার করা প্রয়োজন, অন্তত অস্বীকার করা ঠিক না (পোস্টলেখকের মতো)। এটা আমার মতে আখেরে সুফল বয়ে আনে না।
তবে আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে। আপনার পয়েন্টের সাথে দ্বিমত না, নিছকই লেখার স্টাইল সংক্রান্ত একটা প্রশ্ন মাত্র। প্রশ্নটা হলো -- কোন বিষয়ে ভালো বা মন্দের আলোচনায় প্রতিবাক্যে সর্বদা ভালো-মন্দের ব্যালেন্স করে করে চলতে হবে রোপওয়াকারের মত? যখন কোন বিষয়ের ভালো নিয়ে আলোচনা করছি তখন কি কিছুতেই, কোন অবস্থাতেই, কোন কারনেই শুধু ভালোর উপর নিবদ্ধ থাকা যায় না মন্দকে অস্বীকার না করেই - অন্যকোন সময় অন্যকোন প্রসঙ্গে নাহয় মন্দের আলোচনা করা গেল? কিম্বা যখন মন্দের আলোচনা করছি তখন মন্দের উপর নিবদ্ধ থাকলাম - ভালোটা অস্বীকার না করেই?
জার্মান ও সুইডিশরা বিরাট মহত্বের পরিচয় দিয়েছে ও দিচ্ছে একথা নিসঙ্কোচে, নির্দ্বিধচিত্তে, অকুণ্ঠভাবে স্বীকার্য এবং বাহবাযোগ্য। সার্বরাও সিরীয়দের প্রতি নাকি দারুন সহমর্মিতা ও মানবিকতা দেখাচ্ছে। এটাও নির্দ্বিধায় প্রশংসনীয়। তাহলে গত অর্ধ শতাব্দীর উপর ধরে যারা এর থেকে বেশি বৈ কম ত্যাগ স্বীকার করছে না বা মহানুবভবতা দেখাচ্ছে না, তাদের কথা কেন উল্লেখ করবো না, এমনকি সরাসরি অস্বীকার করবো? আর তাদের মহত্বের কথা উল্লেখ করতে হলে ভিনদেশি কুয়েতি-বাহরাইনি-সৌদি-কাতারিদের ছোটলোকামির কথা উল্লেখ করে সেটা ব্যালেন্স করতে হবে তৎক্ষণাৎ? তাহলে কি বর্তমানে সিরীয় প্রসঙ্গে জার্মানদের ঔদার্যের কথা উল্লেখ করতে হলে সাথে সাথে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের বর্বরতার কথা, অসউইৎস-বুচেনওয়াল্ড-গ্যাসচেম্বারের কথা উল্লেখ করে সেটা ব্যালেন্স করতে হবে বারবার, আর না করলে সেগুলি অস্বীকার করা হয়ে যাবে? (বিবিসি, সিএনএন কিন্তু এরকম ব্যালেন্সিং করছে না)। কিম্বা, সিরীয়দের প্রতি সার্বরা যে মানবিক সহানুভূতিশীল আচরণ করেছে সেটার প্রশংসা করলে সাথে সাথে দুই দশক আগে তারাই যে বসনিয়ান মুসলিমদের উপর নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল, সেব্রেনিৎসায় একরাতে সাত হাজার মুসলিম হত্যা করেছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি - এইসব উল্লেখ করে ব্যালেন্স দিতে হবে? না দিলে সেসব অস্বীকার করা হয়ে যাবে? ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ করতে হলে বারবার ৭১-এ ভারতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে হবে, নইলে তা অস্বীকার করা হবে? কিম্বা মন্দের বা নিন্দার আলোচনায় রত হলে - ধরুন, ৭১-এ পাকিস্তানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করলে সাথে সাথে পার্বত্য-চট্টগ্রামে বাঙালিদের আচরণের কথা বলে সেটা ব্যালেন্স করতে হবে? কিম্বা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করলে সাথে সাথে ভারতেও ঘটা এরকম ঘটনার উদাহরণ দিয়ে সেটা ব্যালেন্স করতে হবে? আর ব্যালেন্স না করলে কি ভারতের ঘটনা অস্বীকার করা হবে, নাকি বাংলাদেশেরটা উল্লেখ করা অন্যায় বা অবৈধ হয়ে যাবে?
আপনার কি মনে হয়?
আশা করি কি জানতে বা বলতে চাইছি সেটা বুঝতে পেরেছেন। এটুকু বাদ্দিলে আপনার মন্তব্যের প্রথম লাইনের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমতই শুধু না, বরং আমার মতামত এ বিষয়ে হয়তো আরও কড়া ও অভিনব। তবে, এনিয়ে লিখতে গেলে মন্তব্য একটা বিরাট রচনা হয়ে যাবে। সুতরাং আপাতত এটুকুই থাক।
****************************************
আপনার একটা কথা কোট করেছিলাম, উত্তেজনাবশে খেয়াল করেন নি বোধহয়।
আপনার এই কথা শুনলে মনে হয় পশ্চিমারা একাই বদমায়েশ, বাকিরা বিরাট সাধু, ভায়ে ভায়ে উস্কানি দিয়ে বিরাট হাঙ্গামা বাঁধিয়ে রাখে পশ্চিমারা। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সমস্যাটা শিয়া-সুন্নি সংঘাতের। এই সমস্যা যখন শুরু হয়, তখন তাতে কোনো পশ্চিমার হাত ছিলো না। ইয়াজিদকে নিশ্চয়ই রোমানরা এসে কুবুদ্ধি দেয় নি, তাই না? তো এই উদ্ভট ঝগড়া ১৪০০ বছর ধরে একটা অঞ্চলের মানুষ জিইয়ে রাখছে, আপনি তাদের কোনো দোষ দেবেন না, দোষ দেবেন শুধু পশ্চিমাদের, কারণটা কী? ইরান-ইরাক-সৌদি অস্ত্র কেনে বলেই তো পশ্চিমারা অস্ত্র বেচতে পারে। আর পশ্চিমারা যদি এতোই খারাপ হবে, সৌদিরাই বা তাদের টেকাটুকা সব পশ্চিমাদের ব্যাঙ্কে ঠেসে ভরে রাখে কেন?
আপনার এই বিরাট প্রশ্ন টাইপ করার ফাঁকেও সৌদি বিমান হামলায় ইয়েমেনে লোক মরছে, জানেন নিশ্চয়ই। পশ্চিমাদের বিষ্ঠায় হাত দিলে খানিকটা সৌদি-ইরান-ইসরায়েলি বিষ্ঠাও হাতে লেগে যাবে, এটা অস্বীকার করতে গেলে আপনারও টাইপ করে হাতে ব্যথা হবে, সঙ্গে আমারও।
আমরা মনে হয় অপ্রয়োজনীয় তর্ক করে নিজেদের সময় নষ্ট করছি ও "টাইপ করে হাতে ব্যথা" করছি, কারন আমার মনে হচ্ছে না অন্তত এই প্রসঙ্গে আপনার সাথে আমার কোন প্রকৃত বা গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্য আছে। আমি আসলে কোন কিছুই অস্বীকার করিনি (যা মনে হয় আসলে আপনিও জানেন)। আলোচ্য প্রসঙ্গে কোন বৃহত্তর প্রেক্ষিতের আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক বলেই ঐ বৃহত্তর প্রেক্ষিতের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যসব প্রসঙ্গ ধরে আর টানাটানি করিনি - পোস্টলেখকের বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের স্পেসিফিক জবাবে সেসব অপ্রয়োজনীয় মনে করেই টানিনি (অপ্রয়োজনীয়তাটা কিছুটা হলেও আমার উপ্রের প্রশ্নগুলির মাধ্যমেও পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি)। এর মধ্যে অন্যকোন "হিডেন" বায়াস বা এজেন্ডা নেই, সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
****************************************
আমারও কোনো কিছু "ব্যালান্স" করার বিশেষ তাগিদ ছিলো না। কিন্তু পোস্টের নিচে আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যে একটা অংশ অনুপস্থিত দেখে সেটা যোগ করে দিয়েছিলাম, যেটা সচলায়তনে মন্তব্যের মাঠে সচরাচর ঘটে। তারপর আপনি যে দীর্ঘ মন্তব্যে প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, সেটা পড়ে বোকা বনে গিয়েছি। কারণ পোস্টের নিচে আপনার মন্তব্যের সূত্র ধরে আপনাকেই বরং ঐ প্রশ্নটা করা যায়। আপনি যে স্পিরিট নিয়ে মন্তব্যের খাতায় পশ্চিমাদের আকামগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন, সেই একই স্পিরিট নিয়ে আমিও তাদের আরব ল্যাংবোটদের ভূমিকা যোগ করায় আপনি চটে গেলেন কেন, সেটা বুঝতে আমি অপারগ।
আপনার মন্তব্যের জবাবে আসলে অন্য একটা প্রতিমন্তব্যে আমার প্রতিক্রিয়ার ছাপ কিছুটা হলেও পড়ে গিয়েছে মনে হয় অনবধানতাবশত! স্যরি!
****************************************
আপনার দৃষ্টিভঙ্গী মোটামুটি পরিস্কার,
খৃষ্টান দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়,তবে-কিন্তু-পরন্তু-উপরন্তু,অনেকটা বাধ্য হয়ে চক্ষুলজ্জার কারনে,এই আর কি?
আমার দৃষ্টিভঙ্গীর চ্যাটের বালও বুঝেননি আপনি!
এত সোজাসাপ্টা, সৎ ও দিবালোকের মত স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীণ আমার বক্তব্য যে এরপরও এর মধ্যে যা লিখিনি বা যার বিন্দুমাত্রও লেশও নেই বা তেমনটা আছে এমন কিছু ভাবারও কোনো কারন নেই - তেমন সম্পূর্ণ অস্তিত্ত্বহীণ কিছুই যখন আবিষ্কার করে বসলেন, তখন বোঝাই যাচ্ছে যে আমার - আর শুধু আমার কেনও যেকোন সুস্থবুদ্ধির মানুষের কোন কথাই বুঝতে হলে - আরও কয়েক মিলিয়ন বছর বিবর্তিত হয়ে অন্তত Homo Sapiens পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়ে তারপর সচলায়তনে আসতে হবে আপনাকে। (ইউভাল নোয়াহ হারারিকে খবর দিতে হবে - তার একটা ক্রিটিকাল তত্ত্ব অন্তত আপনি মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন!)
****************************************
অনুগ্রহ করে এ ধরনের ঢালাও ভুল তথ্য পোস্টে দেবেন না। ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাঙ্গেরিতে ইহুদি মতাবলম্বীরা মোট জনসংখ্যার ০.৪৮%, জার্মানিতে ০.১৫% আর অস্ট্রিয়ায় ০.১১% [সূত্র]।
আপনি যা লিখেছেন তার জবাব আমি অন্যত্র দিয়েছি। আমি কোন গবেষণা অভিসন্দর্ভ লিখিনি এখানে। ইহুদি প্রধান কথাটা ভুল, আমি স্বীকার করেছি, তবে ইউরোপে জনসংখ্যার অনুপাতে ফ্রান্সের পর সবচেয়ে বেশি ইহুদি এসব দেশেই। ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
প্রথমত এখন যারা ইউরোপে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন তাঁরা কেউ কি আদৌ শরনার্থী?
বরং এরা আফ্রিকা দিয়ে ইউরোপে অনুপ্রবেশকারীদের ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
সবচেয়ে বড় কথা যে আইলানের লাশ দেখে ইউরোপীয়রা শোকে মাতম করছে সেই আইলান তথা কুর্দি জাতির এহেন করুন পরিনতির জন্যে দায়ী কে?
বরং ইংরেজ ও ফরাসীদের সাথে তুর্কিরা মিলে একটা জাতিকে চারদেশে ভাগ করে দিয়ে পাকাপোক্তভাবে শরনার্থী বানিয়েছে।
কেউ এদের প্রতি কোন দয়া করেনি, আরবরা এদের নিজদেশে (কুর্দিদের) আশ্রয় দিয়েছে আর ইউরোপিয়ানরা কিঞ্চিৎ লোকদেখানো মানবতা দেখাচ্ছে। অথচ ফিলিস্তিনিদের বেঘর হওয়া নিয়ে এত মাতামাতি কিন্তু এতবড় একটা জনসংখ্যা তথা জাতির বেঘর হওয়া নিয়ে কারো কোন রা নেই , সেখানে আরব, ইরান (নন-আরব) ও ইউরোপিয়ানদের কি মেলবন্ধন !!! একেই বলে সব রসুনের এক ......।
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
গাল্ফের ধনী আরব রাষ্ট্রগুলি (সৌদি, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, আরব আমিরাত) কেন ইউরোপ বা অন্য তুলনামূলকভাবে অসচ্ছল আরব রাষ্ট্রগুলি বা তুরষ্কের মতো সিরীয় রিফিউজিদের গ্রাহণ করছে না - এই রহস্যজনক প্রশ্ন নিয়ে বিবিসির ওয়েবসাইটে একটা ইন্টারেস্টিং লেখা হঠাৎ চোখে পড়লো - এখানে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। তবে এখানে লেখাটা থেকে আমি খানিকটা উদ্ধৃত করছি --
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন