অনেকদিন আগে ‘যখন পুলিশ এলো’ শিরোনামে কয়েক পর্বে আমি লিখেছিলাম পুলিশ সম্পর্কে একেবারে প্রত্যক্ষ কয়েকটি অভিজ্ঞতার কথা।এগুলো এতটাই বাস্তব যে অনেকের অনেক অভিজ্ঞতার সাথে হুবহু মিলে যেতে পারে। অনেকদিন পর আবার পুলিশ প্রসঙ্গে লিখতে হল। বাবুল মাতবর বা তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা বা সিটি কর্পোারেশন কর্মকর্তা বিকাশ কিংবা তারও আগে বিশ্বাবিদ্যালয় ছাত্র খলিল (সম্ভবত) এমন আরও অনেকের ক্ষেত্রে পুলিশ যে পোশাকধারী সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তা স্পষ্ট। এসব ঘটনায় পুলিশের কখনও বিচার হয় না তা নয়। তবে সে সংখ্যা এতই কম এবং এত অগোচরে হয় যে, এর কোন ছাপই পড়ে না বাহিনীতে অথবা জনমনে। সাথে সাথে বদলী বা ক্লোজড বা সাময়িক বরখাস্ত-যে কোন শাস্তি নয় তা এখন সবাই বোঝে। অথচ বৎসরে একআধবার সেই কয়েকটি শাস্তির হিসেব কড়ায়গণ্ডায় ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকাশ করে পুলিশের জনসংযোগ দপ্তর। অন্যদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্তের জন্য পুলিশ বাহিনীর বাইরে দক্ষ অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত সংস্থা গড়ে তোলার কথা বহুবার বলা হলেও এটা হিমাগারে পড়ে থাকে। তবে পুলিশের আধুনিকায়ন কিন্তু কোন বাধাই মানে না। থাকে সবসময় তরতাজা। পুলিশ সদর দপ্তর দেখলে মনে হবে সিলিকন ভ্যালির অফিস। দুঃখের বিষয় হল, পুলিশের যেসব কাজ অনেকদিন থেকেই সরাসরি জনসম্পৃক্ত ( যেমন পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, জিডি করা ইত্যাদি) সেগুলো থেকে ঘুষ-দুর্নীতি উৎখাতের কোন প্রচেষ্টা বা সাফল্য গত ৩০ বছরে দেখিনি। আর পুলিশের আচরণ যে মোটেই সেবামূলক মানসিকতার নয় সেকথা সবাই স্বীকার করেন। এটাকে আমরা ‘এ্যাটিটিউড’ সমস্যা বলতে পারি। কিন্তু এটা দূর করার কোন মটিভেশনাল কার্যক্রম পুলিশ বাহিনীতে আছে কিনা জানি না। থাকলেও তা যে কোন কাজে আসছে না তা মাঠপর্যায়ে পুলিশের বাড়াবাড়ির দিকে লক্ষ্য রাখলেই বুঝতে পারব। আসলে মাঠপর্যায়ের পুলিশী কার্যক্রম মনিটর করা হলেও পুলিশের আচার-আচরণ, জনগণের সাথে সম্পর্ক বা তথা এ্যাটিটিউড গভীরভাবে দেখাই হয় না এটা নিশ্চিত। তা না হলে আমাদের ছাত্র জীবনে দেখা ‘এইট পাশ’ পুলিশের আচরণের চেয়ে এখনকার উচ্চশিক্ষিত পুলিশের আচরণ আরও কদর্য ও অশালীন হয় কী করে। একটা ঘটনা বলি, ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা প্রধানমন্ত্রী বা কোন বিশেষ অতিথির যাতায়াতের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়, আমি প্রেসক্লাব ঘেঁষে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম। একজন এসআই (সম্ভবত) আমাকে থামতে ইঙ্গিত করলেন। আমি থামলাম তবে ফুটপাথ ধরেই সামনে যাব এমনটা ইঙ্গিতে জানালাম কারণ তিনি ওয়্যারলেস মুখে দিয়ে অত্যন্ত সতর্ক চোখে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরাচ্ছিলেন। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি হাতের লাঠিটা তুলে তেড়ে আসলেন এবং ‘ওদিকে যাওয়া যাবে না- বললাম না’ এমন একটা কথা বললেন। আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমি জানি, আবার কিছু বললে তিনি লাঠি চালিয়ে দেবেন। রাস্তাঘাটে পুলিশ আম-জনতাকে ‘তুই’ সম্বোধন করতেই বেশি পছন্দ করে, সেটা যে হয়নি তাই বা কম কিসে ? এই পুুলিশের দ্বারা বাবুল মাতবরের জীবনাবসান হলেও পুলিশ ভাল কাজ করছে, বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্টিফিকেট দিয়েছেন। দিতেই হবে, না দিলে তার মন্ত্রিত্ব থাকে না। অথবা আইজির বিধিবর্হিভূত সাফাই ‘ব্যক্তি পুলিশের অপকর্মের দায় সমগ্র বাহিনী নিতে পারে না’ আমাদেরকে অবাক করেছে, কারণ এটা বাহিনী- রাজনৈতিক দল বা ক্লাব নয়। এখানে প্রত্যেক সদস্য বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করে। এমন গরবোলা কী করে বাহিনীর কর্তা হয় আমরা বুঝতে পারি না। সম্ভবত এসব কারণেই পুলিশ সদস্যরা নিজেদেরকে ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করছে। যারা মনে করছেন এই উচ্ছৃঙ্খলতা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ঘটছে, তারাও আসলে আংশিক বলছেন। পুলিশ বাহিনীর অন্তঃস্থ দুর্বলতা রাজনৈতিক নয়, পেশাদারিত্বের। যে-পুলিশ সোর্স ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়- রাজনৈতিক শক্তি সে ব্যবহার করে না, উর্দি আর পেশার অন্ধকার দিকগুলো ব্যবহার করে। রাজনৈতিক যোগসূত্র এর সাথে বাড়তি ক্ষমতা যোগ করে যার ফলে পুলিশ হয়ে ওঠে ফ্রাংকেনস্টাইন।
[
বাবুল মাতবরের অনেক কিছুই ছিল না । সমাজে ক্ষমতা দেখানোর ‘কড়ি’ও ছিল না ‘ছড়ি’ ছিল না; এমনকি সেটা জাহির করার মত জারিজুরিও ছিল না। উল্টা পুলিশের খাতায় নাম ছিল। তবে নামের শেষে ‘চক্রবর্তী’ ছিল না এমন আবিষ্কার করে যারা বেশ বাহবা নিচ্ছেন, তাদের এঁটো ঘাটার আর চেটো চটকানোর আঙুল বেশ লম্বা, নাকটাও বেশ সূঁচালো। বাবুল মাতবরের মত বাঙাল, পূর্বপুরুষের মাতবরির ঐতিহ্য নামের সাথে বহন করে প্রমাণ করল ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’ কাকে বলে। অবশ্য আমরাও এমন গোঁফ-খেজুরে যে একটা আদম সন্তান পুলিশের হাতে জ্বলে পুড়ে গেলেও মজা করে ‘ফেসবুক চুষছি’। তাহলে আমাদের কী করা উচিত ! অনেক কিছু। সরকার পতনের আন্দোলন থেকে সিপাহী-জনতার বিপ্লব কোনটাই বাদ দেয়া যাচ্ছে না। অন্তত সবাই মিলে বিএনপি না হয় জামাতে যোগ দেয়া উচিত যাতে পুলিশের শাস্তি হয়, নইলে এদের বাড় বাড়তেই থাকবে তাই না !! অথবা পুলিশ বাহিনীকে আরও আধুনিক করা উচিত; তাদের কনস্টেবলের বেতন সচিবের উপরে থাকতে হবে নইলে সততা আসবে কীভাবে !! বাবুল মাতবরের দোকানের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে এমন ঘটতো কিনা এটাও ভেবে দেখার বিষয়।(ইহা একটি ফেসবুকীয় পপকর্ণ স্ট্যাটাস)।
ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস লিখে আমার নিজকেই অপরাধী মনে হচ্ছিল, তাই চলে এলাম ব্লগে। যা লিখতে চাই সেই কথাগুলো এখানেই লিখলাম। আমরাতো আসলে ‘জটিল’ ‘কঠিন’ ‘ফাট্টাফাটি’ ‘হেব্বি’ ‘অসম্’ মার্কা স্ট্যাটাস বানাতে গিয়ে অনেক গুরুতর বিষয়কে পপকর্ণ স্টাইলে গিলে ফেলি। তাই এই দ্বৈতাদ্বৈত নাটক করতে হল। আরও একটি উদ্দেশ্যে একাজ করা যা প্রকাশ করতে চাই অন্তত ১৫ দিন পর। ]
মন্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তার মত বাবুলও কোনও ‘ফৌজদারি অপরাধ’ করেছে হয়তো
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পুলিশ নিয়া কিছু বল্লেতো এখন আবার পুলিশের ফেসবুক সেলিব্রেটিরা তেড়ে আসে।
মজার ইস্কুলের ছেলে-মেয়েদের হয়রানির কথাটাও স্মরণযোগ্য
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন