স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জ্ঞানপাপী প্রজন্ম - ১

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/১১/২০০৭ - ১০:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগেই দালাল আইনে ( কোলাবরেটর এ্যাক্ট-১৯৭২) সারা দেশে ৩৭০০০ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছিলো এবং তাদের মধ্যে ১৫০০ সাজা ভোগ করছিলো। তন্মধ্যে ১৮৫ জন ( সংখ্যাটি প্রায় কাছাকাছি ) ছিল গুরুতর অভিযুক্ত। তাদের বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। এদেরই কয়েকজন পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে পালিয়ে বৃটেন চলে যায় । লন্ডন-ভিত্তিক চ্যানেল ফোর এর ‌'ওয়ার্ল্ড ক্রাইম ফাইলস' ডকুমেন্টরিতে এদের কয়েকজনের (চৌধুরী মইনুদ্দীন, আব্দুল লতিফসহ আরেকজন) খোঁজ দেয়া হয়েছিল। তাদের সাক্ষাত্ কার নেয়ার চেষ্টাও তারা করেছিল। কিন্তু চোরের মন পুলিশ পুলিশ অবস্থা - সাংবাদিকদের কাছ থেকে তাদের পালানো আর মুখ লুকানোর দৃশ্যই বলে দেয় তারা অপরাধী। বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপে তবে সুনির্দিষ্ট চারটি ক্ষেত্রে( হত্যা ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ) অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমার আওতার বাইরে রাখা হয়। কিন্তু সব ওলট-পালট হয়ে যায় জেনারেল জিয়া ১৯৭৫ এর ৩১ শে ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করলে। এ আইনে অভিযুক্ত এবং সাজাভোগকারীরা সবাই মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের আলো-হাওয়ায় বীরদর্পে ঘুরতে থাকে, অথচ এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তারা ইতিহাসের ঘৃণ্যতম অপরাধগুলো সংঘটিত করেছিল। বিশিষ্ট রাজাকারদের ছবি ও তালিকা সংযুক্ত একটি পোস্টার মেজর জেনারেল মীর শওকত তার টয়লেটের কমোডের ওপর টানিয়ে রাখেন এ কথা তিনি এক টক শো তে যেভাবে বললেন তাতে তার প্রতি আমার যে অশ্রদ্ধা ছিল তা খানিকটা হলেও প্রশমিত হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে লে. জেনারেল হারুন বলেছিলেন, নিজামীর মত ঘৃণ্য রাজাকার যখন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে রাস্তা দিয়ে যেত আমার মনে হতো বুকের ভেতর সুই ঢুকছে। আশার কথা সেক্টর কমান্ডাররা ঐক্যের ডাক দিয়েছেন , মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে প্রাণে চাই তাদের চেষ্টা সফল হোক। আমরা যদি স্বাধীনতার শত্র“দের দমন করতে পারি তাহলেই কেবল জাতীয় ঐক্যের সোনার হরিণটি আমাদের নাগালে আসবে। আর ঐক্যবদ্ধ বাঙালি যে কতটা ক্ষমতা রাখে তা বিশ্ব দেখেছিল ৫২-তে, ৭১ এ।


মন্তব্য

আড্ডাবাজ এর ছবি

চ্যানেল ফোরের ভিডিওটা বেশ কিছুদিন আগে হাতে আসলেও সময়ের অভাবে ইউটিউবে তুলতে পারিনি। প্রায় ৯০ মিনিটের ভিডিওটির ব্যাপক প্রচার দরকার। তবে ভিডিওর চেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াটা আরো বেশী দরকার। সরকার চোরাচালানিদের বাঁচাবার জন্য ট্রুথ কমিশন তৈরী করতে গলদঘর্ম হয়ে কাজ করছে, কিন্তু জামাতীদের পশম ধরতে লজ্জা পাচ্ছে>>।

অমিত আহমেদ এর ছবি

পারলে ভিডিওটা টরেন্টে দিয়ে দেন।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

মাহবুবুল হক এর ছবি

বিগত বছরগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিক করতে সরকারগুলো যত ব্যস্ত ছিল, রাজাকারদের তালিকা করতে ততটা সময় দিলে আবর্জনা সাফ করতে বেশি কষ্ট হত না।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্টেও অনেক ঘাপলা আছে, জানেন নিশ্চই। আমাদের স্কুলে এক স্যার আছেন, দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু নিজের নাম প্রত্যাহার করেন কারন ওই লিস্টেই এলাকার এক দুর্ধর্ষ রাজাকারের নাম ছিল।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।