বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে সাম্প্রতিক আলোড়ন থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গর্জে ওঠা মানুষ এখনও নিঃশেষ হয়ে যায় নি। ভালো লাগছে সব রাজনৈতিক দল রাজকারদের বিরুদ্ধে অভিন্ন ভাষায় কথা বলছে। এমন ঐকমত্য আগে দেখি নি। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে সেই দুর্বার গণ আন্দোলনের কথা মনে পড়ছে। তবে আমি চিন্তিত একটি বিষয় নিয়ে তা হল, বিগত বছরগুলোতে একাত্তরের রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী তথা জামাতের (ইসলামী শব্দটি লিখলে ইসলামের অমর্যাদা হবে) রাজনীতির সাথে না বুঝেই যারা জড়িত হয়েছে বা যাদেরকে অত্যন্ত কৌশলে ইসলামের দাওয়াতের নামে মওদুদীবাদের আফিম দিয়ে নেশায় বুঁদ করে মগজ ধোলাই করার কাজ তারা ইতোমধ্যেই শেষ করেছে তাদেরকে এই বিশাল অন্ধকূপ থেকে উদ্ধার করা যায় কিভাবে ? একাত্তর সম্পর্কে তারা জানে সম্পূর্ণ ভিন্ন ইতিহাস। যে ইতিহাস তাদেরকে শেখানো হয় তা গো.আজম , মর.নিজামী, দেহো.সাঈদী, আম.মুজাহিদ দের বানানো বা ব্যাখ্যা করা। সেটা তারা পরম মমতায় মগজে ধরে রাখে। পরিসংখ্যান বলে, বর্তমানে প্রায় পনের কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত দশ কোটি মানুষ আছে যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধে ১-৫ এর মধ্যে ছিলো। সমস্যাটি তাই প্রকট। একদিকে যেমন একটি প্রজন্ম তৈরি করা হয়েছে যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা জানে তা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের কাছ থেকে শেখা অর্থাত্ বিভ্রান্ত আবার একটি প্রজন্ম তৈরি হয়েছে যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতেই আগ্রহী নয়, তারা বিষয়টিকে বিতর্কিত, গোলমেলে ব্যাপার বলে মনে করে। স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তানেরা স্বাধীনতার ইতিহাস শেখে পরাজিতদের কাছ থেকে, যারা স্বাধীনতা প্রতিহত করতে চেয়েছিল তাদের কাছ থেকে; বিজয়ীদের কাছ থেকে নয় এব চেয়ে লজ্জা আর অপমানের বিষয় কি হতে পারে ?
একটা ঘটনা বলি-
একবার কলেজে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানের জন্য ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে কমিটি গঠনের আয়োজন চলছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা উপস্থিত আছে। ছাত্রলীগ নেতা পরিস্কার জানিয়ে দিলো আলোচনায় বা মূল অনুষ্ঠানে শিবিরের কোনো নেতা থাকতে পারবে না আর থাকলে তারা সে অনুষ্ঠান বর্জন করবে এবং নিজেরাই অনুষ্ঠান করবে। তাদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে আমাদের উদ্যোগ প্রায় পণ্ড হওয়ার অবস্থা। ছাত্রদল নেতারা শুধু বিরোধিতা করার জন্যই ছাত্রলীগের বিরোধিতা করায় আমাদের সভা একটা বিতর্ক অনুষ্ঠানে রূপ নিলো। অথচ শিবির প্রতিনিধিরা চুপচাপ। থাকবেনাই বা কেন, তাদের হয়ে ওকালতিটা তো ছাত্রদলের গর্দভগুলোই করে দিচ্ছে। এক পর্যায়ে শিবিরের নেতা উঠে বক্তব্য রাখা শুরু করলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা শিবির করে নি। তার যুক্তি , তখন শিবিরের কোন অস্তিত্বই ছিলো না। শিবিরের জন্ম স্বাধীনতার পর... সালে..ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক জায়গায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সুকৌশল মিথ্যাচারের জবাব না দেয়াটা আমার নৈতিক পরাজয়ের পর্যায়ে পড়ে বিধায় আমি তার প্রতিবাদ করে কিছু তথ্যসহ স্বাধীনতাপূর্ব কালের ছাত্র সংঘ এবং পরবর্তীকালের শিবিরের অভিন্নতা ব্যাখ্যা করলাম এবং তাদেরকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানার পরামর্শ দিলাম। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয় নি। বরং সভা শেষে আমার কাছে এমন কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যেগুলো আমি আরও বহুবার বিভিন্ন বিতর্কে শিবিরের কর্মীদের মুখ থেকে শুনেছি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীভুক্ত সবাই এসব মনগড়া, বালখিল্যসুলভ, অশোভন প্রশ্ন বা তথ্য (তন্মধ্যে একটি মন্তব্য সম্প্রতি প্রাক্তন সচিব ও রাজাকার হান্নান শাহ করেছেনÑ স্বাধীনতা যুদ্ধ নাকি গৃহযুদ্ধ ছিলো এবং তাতে ৩০ লক্ষ শহীদ হয় নি হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার, ধিক! ) করে থাকে। এসব ইতরামি বোধ হয় তাদেরকে রীতিমত ওয়ার্কশপ করে শেখানো হয় ।
তো যাই হোক, আমার প্রতিবাদকে তারা হালকাভাবে নেয় নি। ২৬ শে মার্চ মূল আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা আরও বড় নেতাকে নিয়ে এলো এবং সেই নেতা একই বিষয় একই ভাষায় ব্যাখ্যা করলো। আমার সেখানে আলোচনা করার কোনো সুযোগ ছিলো না। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হল না এ ঘটনা আগের সেই প্রতিবাদের জবাব। অনুষ্ঠানে অনেক ছাত্র/ছাত্রী উপস্থিত আছে। আমি সভাপতির অনুমতি নিয়ে মাইকের সামনে গিয়ে আবারো একই বক্তব্য দিলাম। অনুষ্ঠান শেষে কয়েকজন শিবির কমী আমাকে ঘিরে বিনয়ের সাথে জানতে চাইল, নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা যাবে এমন কয়েকটি বইয়ের নাম। আমি তাদের বললাম “ তুমি যদি মুক্তিযুদ্ধকে জানতে চাও তাহলে আগে দেশ ও স্বাধীনতার পক্ষে নিজকে দাঁড় করাতে হবে। তাহলে তোমাকে বলে দিতে হবে না বইয়ের নাম, তুমিই বুঝে নিতে পারবে কোন বই কতখানি পড়তে হবে। ” কয়েকটি বইয়ের নাম বলে দিলাম।
ওদের সংঘবদ্ধ শয়তানি আর জ্ঞানপাপাচার দেখে আমি অবাক - এ কোন প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে , যারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ, বাঙালী জাতি, ভাষা আন্দোলন, সংস্কৃতি সবকিছুর প্রতিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ? হয়ত এরা প্রকৃত সত্যের কাছাকাছিও যেতে পারে নি কখনো । কারণ সেখানে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এমনকি পাকিস্তানীদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে যদি তারা বিচার করতো তাহলেও তাদের অনেক ভ্রান্তিমোচন হত।
মন্তব্য
সব রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনতা বিরধীদের বিরুদ্ধে একই সুরে কথা বলার দু'টি দিক আছে, আর সেই বিষয়টা আমরা যারা অরাজনৈতিক, তাদের ভালোমতো লক্ষ্য করা উচিত। একটা দিক অবশ্যই সুখকর যে, সেই অশুভশক্তির পক্ষে কেউ এখন কাজ করছে না, আর দুঃখের দিক হলো, অতীতে প্রত্যেকেই যুগপদভাবে তাদের বিরুদ্ধাচরণ ও তাদের সাথে এক টেবিলে বসা, দুটোই করতো নিজেদের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঐ ধরনের ফায়দা লুটার সূযোগ নাই, তাই তারা এখন অন্ততঃ একটি প্রতিযোগীকে সরিয়ে দেবার সংকল্পে এই কাজ করছে। আর এই সরানোর কাজ কৃতকার্য হলে, এর জন্যে কৃতিত্বের দাবি হবে তাদের দ্বিতীয় অর্জন। কিন্তু ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি এবং সরলপ্রান কিছু মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আপনজনদের নিঃস্বার্থ আবেদনকে এই দলগুলো বরাবর রাজনৈতিক-পন্য হিসেবে ব্যাবহার করে এসেছে। গুদামজাত-পচনশীল পন্য যেমন ব্যাবসার স্বার্থে (বা বড় ক্ষতির ভয়ে) কমদামে ছেড়ে দেওয়া হয়, এরা এখন তাই করছে। তবু ভালো যে এই মূহুর্তে নিঃস্বার্থ স্বাধীনতাকামীদের বিপক্ষে কোন ভাওতাবাজি করার দুঃসাহস আপাততঃ কেঊ করবে না। তবে, আমাদের এইসব সুবিধাবাদিদের পুর্বের কার্যকলাপ ভুলে গেলে চলবে না। এরা আবারো সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে, যে কোন সময়...
মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাসকে গোলমেলে ব্যাপার মনে করে এমন প্রজন্ম স্বাধীনতা বিরুধীরা পরিকল্পিত ভাবেই তৈরি করছে আর আমাদের অবহেলাও অনেকাংশে দায়ী। রাস্ট্র কিছু করুক আর না করুক আমারা যে যতটুকু পারি আমাদের চেস্টা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে সচেতন করে তুলতে।
মাসুম খবরকি? লিখে যা নিয়মিত।
৩৬ বছরের কাফ্ফারা দিতে হলে কাজ করতে হবে তৃণমূল থেকে।স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এ ব্যাপারে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে কার্যকর ভুমিকা পালনে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
And It should continue
genaration after genaration.
নতুন মন্তব্য করুন