নন্দিত নগরে - পর্ব ২ (প্যারিস)

মইনুল রাজু এর ছবি
লিখেছেন মইনুল রাজু [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৭/০৪/২০১৩ - ৩:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ছবিঃ আইফেল টাওয়ার

ট্রেনের টিকিট কেটে আর দেখতে ইচ্ছে করলো না আমাকে জানালার পাশের সিটটা দেয়া হয়েছে নাকি অন্য সিটটা দেয়া হয়েছে। জানালার পাশে পাশে সিট না-হলে, সেটা মেনে নেয়া আমার জন্য চূড়ান্ত কষ্টের একটা ব্যাপার। ফ্রান্স-প্যারিসতো দূরে থাক, ঢাকা-চিটাগাং রোডে দাউদকান্দির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছটা দেখার লোভই আমি সামলাতে পারি না।

যাত্রার শুরুতে স্টেশান থেকে আমার পাশের সিটের যাত্রী উঠেননি, দুইটা সিটই ফাঁকা। মনের সুখে ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি গল প্রদেশ, দেখছি ফ্রান্স। এই সেই গল, একদা কত কত বীর যোদ্ধার পদচারণায় মুখরিত ছিলো যার দশ দিগন্ত; এই সেই ফ্রান্স, একদা যে-ছিলো কত কত ভিনদেশি জ্ঞানীগুণী-শিল্পী-সাহিত্যিক-দার্শনিকের তীর্থভূমি।

বিস্তৃর্ণ ঘাসের প্রান্তর ভেদ করে প্রাণপণ চেষ্টায় সূর্যটা যখন উপরের দিকে টেনে নিয়ে আসছে আলোকিত ভোর, আপন মনে আমিও যখন ভাবছি এত সুখে সইবো কেমন করে, ঠিক তখনই এক ভদ্রমহিলা এসে “মশিয়ে টশিয়ে” মিশিয়ে কি যেন একটা বলে ফেললো। আমিও “জনম দুঃখি কপাল পোড়া” ভাব করে বললাম- "সরি, আই স্পিক ইংলিশ"। মনে মনে আশা, হতভাগা এক ট্যুরিস্ট ভেবে যদি সিদ্ধান্ত নেয়, যাহ বাবা যেখানে বসে আছিস সেখানেই বসে থাক, তাও ফ্রেঞ্চ বাদ দিয়ে আমার সাথে ঐ ইংলিশ-ফিংলিশ করিস না। আমার ক্ষীণ সেই আশাকে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে নেপোলিয়ানসুলভ ভাব নিয়ে ম্যাডাম বললেন - "আই থিঙ্ক ইউ আর ইন মাই সিট"।

সম্ভ্রমের সাথে তার বসার ব্যবস্থা করে দেবার পর দেখা গেলো ভদ্রমহিলা আসলে নেপোলিয়ানজাতীয় কিছু নয়। বরং, হাসতে হাসতে কুটি কুটি হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কোথা হতে এসেছি, কোথায় যাই, কি উদ্দেশ্য। প্যারিস যাচ্ছি শুনে বলতে শুরু করলেন রাজ্যের প্রশ্ন।
-আগে কখনো গিয়েছো?
--না।
-ওখানে কেউ রিসিভ করবে তোমাকে?
--না।
-ছয় সাত দিন সময় নিয়ে এসেছো তো।
--না! ছয় সাত ঘণ্টা সময় নিয়ে এসেছি, ফিরতি ট্রেইন সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশে।

ততক্ষণে, তার চোখ বড় হয়ে কমলা লেবুর সমান হয়ে গেছে। আবার প্রশ্ন,
-তুমি কোন স্পট থেকে কোন স্পটে যাবে সেটা প্ল্যান করা আছে।
--না।
-স্টেশান থেকে নেমে কোন ট্রেনে উঠবে জানো?
--না।
-তুমি একটু-আধটু ফ্রেঞ্চ জানো?
--না।

এ-পর্যায়ে যখন আর একটু হলে সে কেঁদেই ফেলবে, তখন তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, শোনো আমার কাছে এমন একটা জিনিস আছে, যেটা দিয়ে আমি সমস্ত প্যারিস তন্নতন্ন করে ফেলতে পারবো। স্পাইডারম্যানের পোশাক জাতীয় কিছু একটা কল্পনা করে সে যখন জিজ্ঞেস করে, “কি সেই জিনিস”? আয়রনম্যানের মত সুস্থির হাসি হেসে আমি উত্তর দিই, “ম্যাপ, প্যারিস শহরের ম্যাপ”।

কিন্তু, তাতে কি আর মমতাময়ীর দুশ্চিন্তা দূর হয়। এ-পর্যায়ে, ব্যাপক পরিশ্রম করে নিজের হ্যান্ডব্যাগের একেবারে গভীর থেকে গভীরে গিয়ে বের করে আনে এক টুকরো কাগজ। আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, “ভাইডি আমার! কোথায় যাবে, কি খাবে, কিচ্ছু আমি জানি না। তোমার জন্য আর কিছুতো করতে পারলাম না। এই নাও, এখানে প্যারিস শহরের ট্রেনের একটা পাস আছে। সারা শহর ঘুরে বেড়াতে পারবে। আনলিমিটেড রাইড।” তাকে জানালাম, আমি কোথায় যাবো সেটা তখনো পর্যন্ত আসলে আমিও জানি না। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম। শুধু জানানো হলো না, আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।

ইস্ট স্টেশান, প্যারিস। এক দিনে প্যারিস শহরের কিছুই যে দেখা সম্ভব নয়, সে আমি ভালো করেই জানি। তবু, বিশাল মহাকাব্যের সূচীপত্রে চোখ বুলিয়ে নিতে পারলেই বা মন্দ কি! স্টেপ ওয়ানঃ স্টেশানের ঘড়িটায় চোখ বুলিয়ে হাতঘড়ির সাথে সময় মিলিয়ে নেয়া। স্টেপ টুঃ ইনফরমেশান ডেস্কে গিয়ে শহরের বাস কিংবা ট্রেইন সার্ভিসের তথ্য সম্বলিত লিফলেট নিয়ে নেয়া। স্টেপ থ্রিঃ বোতল ভর্তি পানি, ইমার্জেন্সি পুলিশ ও মেডিকেল ফোন নাম্বার নিয়ে নেয়া। স্টেপ ফোরঃ ম্যাপ খুঁজে স্টার্টিং পয়েন্ট বের করে নেয়া, যেই স্পট থেকে শুরু হবে প্যারিস ভ্রমণ। স্টেপ ফাইভঃ স্টেশান থেকে সর্বপ্রথম যেই ট্রেনটা ধরতে হবে সেটা খুঁজে বের করা। ফাইনালি, রেডি-সেট-গো।

Montmartre- উত্তর প্যারিসের ছোট একটি পাহাড়। পাহাড় না বলে টিলা বলাই ভালো। বাংলায় এ-পাহাড়ের নাম বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। ম্যাসাচুসেটস্ বলতেই আমার জান বের হয়ে যায়। তারপরও, একান্ত বাধ্য হয়ে যদি বলতেই হয় তাহলে বলবো- “মোঁ মার্ত্রে”। মোঁ মার্ত্রের চূড়ায় আছে দর্শনীয় এক ব্যাসিলিকা। কিন্তু, তার থেকেও বড় কথা, সেখানে গেলে ক্ষণিকের তরে মনে হয়, এই বুঝি চলে এলাম দেবালয়ে। অলিম্পাসের চূড়ায় বসে দেবতা জিউস যেমন দেখতে পান সমস্ত পৃথিবী, তেমনি মোঁ মার্ত্রের চূড়ায় গেলে দু'চোখ ভরে দেখা যায় তিলোত্তমা প্যারিসের রূপ, দেখা যায় সহস্র বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা রঙিন এক ইতিহাস। আর, সেই রূপ-লাবণ্যের মোহে আবিষ্ট হয়েই হয়তো একদিন এই মোঁ মার্ত্রে ঘিরে গড়ে উঠা জনপদে এসে আস্তানা গেঁড়েছিলেন- ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, সালভাদর দালি, ক্লদ মনে, পাবলো পিকাসোর মত জগদ্বিখ্যাত শিল্পীরা।

ছবিঃ মোঁ মার্ত্রের চূড়ায়

মায়াবী এক কন্যার মায়ার ডাকে মোঁ মার্ত্রের মায়া ছেড়ে চলে যেতে হলো। মোনা লিসা'র (লেডি লিসা) কথা বলছি, তার প্রাঙ্গণে না গেলেই নয়।ল্যুভর মিউজিয়ামে সুরক্ষিত আছে মোনা লিসা চিত্রকর্মটি। মিউজিয়ামে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে প্রবেশের জন্য এত বড় লাইন যে পুরোদিন আমার লাইনে দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দিতে হবে, তার চেয়ে বরং সিদ্ধান্ত নিলাম লেডি লিসার টানেই না হয় পরে আরেকবার আসা যাবে এই শহরে।





ছবিঃ লুভ্যর প্রাঙ্গন।

লুভ্যর যে এত বড় হবে সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই ছিলো না। এর প্রতিটা ভবনের বাইরের দেয়ালে যে পরিমাণ শিল্পকর্ম আছে, শুধু সেটা করতে গেলেই প্যারিস শহরে কয়েকশো ভাস্কর তৈরী হয়ে যাবার কথা। প্যারিস শিল্পী তৈরীর কারখানা না হবারতো কোনো কারণ দেখি না। লিখে বুঝানো সম্ভব নয়, কি নিপুণ সেইসব শিল্পকর্ম, কত যত্নেই না শিল্পী তৈরী করেছেন তাদের অনবদ্য সেই সৃষ্টিগুলো।

লুভ্যর থেকে বের হয়ে চলতে শুরু করা যায় শঁন জেলিজে'র পথ ধরে। শঁন জেলিজে (Champs-Élysées), কিছুটা বিতর্ক সাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং বিখ্যাত রাস্তা। প্যারিসের নামকরা সব ব্র্যন্ড দোকান আর ফ্যাশন হাউজগুলো এই রাস্তায় অবস্থিত। প্রেমের শহর প্যারিস, ফ্যাশানের দেশ ফ্রান্স, রোমান্সের ভাষা ফ্রেঞ্চ। তার সাথে ছন্দ মিলিয়ে বলা চলে চাঞ্চল্যের সড়ক শঁন জেলিজে। হয়তো তাই, সিনেমা হল আর সুবিখ্যাত ক্যাফেগুলোও বলতে গেলে ভীড় করেই দাঁড়িয়ে আছে শঁন জেলিজের পাশ ধরে। তবে, তার মাঝে চুপটি করে সস্তার ম্যাগডোনাল্ডসের জায়গা করে নিতে সমস্যা হয়নি একটুও।





ছবিঃ শঁন জেলিজের পথ ধরে

শঁন জেলিজে ধরেই একদিকে একেবারে রাস্তার শেষে লা ডিফেন্স- প্যারিসের ব্যবসায়িক এলাকা এটি। বেশিরভাগ আকাশচুম্বী ভবনগুলোর অবস্থান লা ডিফেন্সেই। হাজার বছরের পুরোনো প্যারিসে শহরের ভবনগুলোর দেয়ালে ইট-পাথরের সাথে সাথে কেমন করে জানি “ইতিহাস”, “ ঐতিহ্য” কিংবা “অতীত” শব্দগুলোও গেঁথে আছে। কিন্তু, লা ডিফেন্স ব্যতিক্রম। ইতিহাস সেখানে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেছে চাকচিক্যের নীল মোড়কে। তবে, সাথে সাথে এটাও সত্য যে, বর্তমানের সুবর্ণ সৃষ্টিই, ভবিষ্যতের বিবর্ণ ইতিহাস।



ছবিঃ অত্যাধুনিক লা ডিফেন্স

লা ডিফেন্স থেকে আইফেল টাওয়ার। খুব বেশি দূর নয়। অথবা, মেট্রায় চড়ে যাওয়ার কারণে টের পাইনি। নির্মাতা গুস্তাভ আইফেলের নামে নামকরণকৃত, ১৮৮৯ সালে উন্মুক্ত হওয়া ৩২০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি আজও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি (টিকিটের বিনিময়ে) ভ্রমণকৃত টাওয়ার। নির্মাণকালীণ সময়ে এটিই ছিলো বিশ্বের সর্বোচ্চ টাওয়ার। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে হিটলার যখন প্যারিস দখল করতে আসে, ফ্রেঞ্চরা তখন আইফেল টাওয়ারের এলিভেটরগুলো টাওয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, যাতে করে পাঁয়ে হেঁটে টাওয়ারে উঠতে হয়। বলা হয়ে থাকে যে, হিটলার ফ্রান্স জয় করতে পারলেও জয় করতে পারেনি আইফেল টাওয়ার।


ছবিঃ আইফেল টাওয়ার

নানান রকম দেশের নানান রকম টুরিস্টের সমাগমে মুখরিত টাওয়ার প্রাঙ্গণ। তার মাঝ থেকে একজনের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে বললাম, “ তুমি কি আমার একটা ছবি তুলে দিতে পারো”। শুনে লোকটা বলে, “অবশ্যই! তুমি আমার ছবি তুলতে চাও, এতো খুব ভালো কথা। পারলে হাসিতে গড়াগড়ি খায়।” কোনোভাবেই আমার মাথায় আসলো না, এই ইহজগতে এত এত জিনিস থাকতে, আমার ক্যামেরায় আমি তার ছবি তুলতে চাইবো, এই চিন্তা তার মাথায় আসলো কি করে! কিন্তু, এত আগ্রহ করে ভদ্রলোক আইফেল টাওয়ার পিছনে নিয়ে দাঁড়ালো, তাকে আর হতাশ করার সাহস আমার হলো না। আমার ক্যামেরায় তুলে ফেললাম সেই সুখী মানুষের ছবি। কে জানে, কালের বিবর্তনে একদিন সেটাই হয়তো পরিণত হবে আমার প্যারিস ভ্রমণের সুখ স্মৃতিতে।

ছবিঃ দূর থেকে আইফেল টাওয়ার

আইফেল টাওয়ার থেকে নটর ডেম। কিভাবে যাওয়া যায় ভাবছিলাম। রাস্তার পাশের বাস স্টেশানে দাঁড়িয়ে থাকা, প্রায় আইফেল টাওয়ারের সমান বয়সের একজন বয়স্ক মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম। ইংলিশ বুঝতে না পারলেও ঠিকই বুঝতে পেরেছেন নটর ডেম যেতে চাই। ঈশারা দিয়ে বললেন উনার সাথে গাড়িতে উঠার জন্য। ট্রেনের যে পাস আমার কাছে আছে সেটা দিয়ে বাসেও চড়া যায়। অন্যকিছু বলতে পারছেন না আমাকে, বার বার বলছেন কোন স্টেশানে নামতে হবে আমাকে। পাশের বসের সিটে বসে থাকা উনার স্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছেন শুধু, আর মাথা নাড়ছেন একটু পর পর। বুঝা যাচ্ছে, উনার শহরে আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছেন আমাকে। মুখের ভাষা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু, স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা-আন্তরিকতার ভাষা জগৎজুড়ে একই।

বাসের ভিতর থাকা ম্যাপ দেখে বুঝার চেষ্টা করছিলাম আর কয় স্টেশান পরে নামতে হবে আমাকে। ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হতে চাইছিলাম, বললাম আর তিন স্টেশান পর তাহলে আমাকে নামতে হবে। বলার সাথে সাথে মনে হলো আমি যেটা করলাম, সেটা স্রেফ একটা অপরাধ। চলন্ত গাড়ীতে কাঁপতে কাঁপতে উঠে এলেন তিনি। ম্যাপের সামনে এসে কম্পমান আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন আমাকে কোথায় নামতে হবে। সে মুহূর্তে শুধু মনে হলো, এই রকম কিছু মানুষ আছে বলেই হয়তো আমাদের পৃথিবীটা আজও এত সুন্দর। আমার আগেই তাঁরা নেমে গেলেন, যতদূর সম্ভব দেখা গেলো দু'জনে আমার দিকে হাত তুলে হাসতে থাকলেন।




ছবিঃ নটর ডেমের ভিতর বাহির

নটর ডেম শব্দের অর্থ আওয়ার লেডি (Our Lady), লেডি বলতে “মাতা মেরী” কে বুঝানো হয়ে থাকে। ১১৬৩ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া এই ক্যাথেড্রালটি গোথিক স্টাইল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। ৮৫০ বছর পর ২০১৩ সালে নটর ডেমের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছিলাম, কত ইতিহাসই না বুকে ধারণ করে আছে এই বুড়ো স্থাপনা, কত না কর্ম-অপকর্মের নীরব সাক্ষী এই ক্যাথেড্রাল। এই সেই ক্যাথেড্রাল, যাকে কেন্দ্র করে ভিক্টোর হুগো লিখেছিলেন কালজয়ী হাঞ্চব্যাক অভ নটর ডেম; এই সেই নটর ডেম, ১৯ বছর বয়সে পুড়িয়ে মারা জোয়ান অভ আর্ক কে মৃত্যুর প্রায় পাঁচ শতাব্দী পরে নির্দোষ সাব্যস্ত করে যেখান থেকে দেয়া হয়েছিলো সাধু (saint) উপাধি; এই সেই নটর ডেম, যেখান থেকে নেপোলিয়ানোকে ঘোষণা করা হয়েছিলো ফরাসি সম্রাট।


ছবিঃ বাস্তিল স্কয়ার (July Column)

এবার নীচের ছবিতে থাকা দোকানটার কথা বলা যাক। এ-দোকানটার একটা বিশেষত্ব আছে। প্যারিস থেকে যখন আমি ফিরে আসছি, তখন মনে পড়লো ফ্রিজ ম্যাগনেট কেনা হয়নি। সাথে সাথে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। লাস ভেগাস গেলেও আমি যে ফ্রিজ ম্যাগনেট কিনি, কুয়েত সিটিতে গেলেও সে ফ্রিজ ম্যাগনেটই কিনি। আসপাশের মধ্যে এ-দোকানটাকে পাওয়া গেলো। কেনা-কাটা শেষে যখন টাকা দিতে গেলাম, দোকানদার খুব কষ্ট করে ইংলিশ বাক্য বানিয়ে বললো, "আর ইউ হোয়ার ফ্রম?" আমি উত্তর দিই, "ফ্রম ইউএসএ, বাট, মাই কান্ট্রি ইজ বাংলাদেশ"।

লোকটা নিমিষের মধ্যে ডেস্কের নীচে হাত দিয়ে বের করে আনলো একটা "মাউস প্যাড"। এনেই বলে, "এটা আপনার জন্য গিফট্"। খুশি হলাম তিনি বাংলাদেশী দেখে। আমি বললাম, "আপনার বাড়ী কোথায়?" তিনি বলেন, "নোয়াখালী"। আমি বলি, "আমারও"। দুজনেই তখন যতগুলোসম্ভব দাঁত বের করে হেসেই যাচ্ছি। হাসতে হাসতে ভাবছিলাম- দুনিয়া যে ব্যাপক ক্ষুদ্র জায়গা সেতো আগেই জানি, কিন্তু, এত যে ছোট সেটা জানা ছিলো না। দোকানের বাইরে এসে যখন ছবি তুলতে গেলাম, তখন মনে হলো, আরে তাইতো! এ প্যারিস শহরে কে আর গাউসিয়া মার্কেটের মত করে দোকান সাজিয়ে রাখবে!

নীচে দেয়া আমার এই ফেইসবুক অ্যালবামগুলোতে প্যারিসের আরো কিছু ছবি পাবেন-

BeaNudityFul (সৌগ্নর্য)
Louvre and Montmartre
Eiffel Tower & Notre Dame Cathedral
Champs-Élysées and La Défense

নন্দিত নগরে সিরিজের বাকী লেখাঃ লাক্সেমবার্গ
অন্যান্য লেখাঃ এখানে

মইনুল রাজু


মন্তব্য

আকাশহীন এর ছবি

আপনার লেখা পরে সত্যি ভাল লাগলো। বিশেষ করে ফ্রিজ ম্যাগনেট কেনাটা। কারন আমিও কোথাও গেলে স্মৃতিস্মারক হিসেবে ফ্রিজ ম্যাগনেটই কিনি আর গত মাসে ফ্লোরেন্সে ভ্রমনের সময় আপনার মত আমারও এক বাংলাদেশি দোকানদারের সাথে দেখা হয়ে যায়।

মইনুল রাজু এর ছবি

আমার ফ্রিজ ম্যাগনেট কেনার অবশ্য আরো একটা কারণ আছে। খুব কম খরচে হয়ে যায়। তাছাড়া, কেনাকাটা করে এবং কি কিনবো সেটা চিন্তা করে সময়ও খরচ করতে হয় না। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

তিথীডোর এর ছবি

সমস্যা হলো ফ্রান্স শুনলেই আমার মার্গারিটের কথা মনে পড়ে। মন খারাপ

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

বন্দনা এর ছবি

মার্গারিটের কথা শুনে আমার মার্গারিটার কথা মনে পড়ছেরে খাইছে

বন্দনা এর ছবি

তিনদিন ছিলাম প্যারিসে, এত কিছু দেখার মত যে পুরাই বেড়াছেড়া লেগে গিয়েছিল।লুভরে ঢুকে তো পুরাই মাথা আউলা, এত বড় মিউজিয়াম ঠিক মত দেখতে গেলে একদিনে ও শেষ হবেনা। লেখা ভালো লাগছে, ছবিগুলা দারুণ।

মইনুল রাজু এর ছবি

লুভ্যর মিউজিয়ামের ভিতরে আমার যাওয়া হয়নি এবার। আপনিতো তাও বলছেন একদিন, আমাকে মিনিমাম তিনদিন সময় নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

মইনুল রাজু এর ছবি

চিন্তিত

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

মইনুল আজিজ এর ছবি

আপনার চোখে প্যারিস দেখলাম হাসি

মইনুল রাজু এর ছবি

হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

সুদীপ  এর ছবি

নটরডেম নামটা শুনলেই কলেজের মা মেরির মূর্তির কথা আর সেখানে বসে আড্ডা মারার কথা মনে পরে যায়। মিস মাই কলেজ।

মইনুল রাজু এর ছবি

আপনি কি বাংলাদেশের নটর ডেম কলেজের কথা বলছেন? আমারও কলেজ সেটা। জীবনে কাটানো সেরা সময়গুলোর একটা। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

"সমস্যা হলো ফ্রান্স শুনলেই আমার মার্গারিটের কথা মনে পড়ে।"
হুম...

সুবোধ অবোধ

পৃথ্বী এর ছবি

শুধু অচেনা মানুষদের এরকম হাসি দেখার জন্যই অনেক দূর পাড়ি দেওয়া যায়।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

মইনুল রাজু এর ছবি

অজানা অচেনা পরিবেশে মানুষের এই আচরণগুলো সত্যিই মন ভালো করে দেয়। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

ফ্রুলিংক্স এর ছবি

লেখা+ছবি ভালো লাগলো।

কয়েকবারই যাওয়া হয়েছে প্যারিস। সকালের ট্রেনে ফ্রাঙ্কফুট থেকে রওয়ানা হয়ে বিকেলে ফেরত।

মইনুল রাজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

ফালতু প্রোগ্রামার এর ছবি

আবারো সুন্দর একটি লেখা দিলেন স্যার... আবারো হিংসিত হলাম... হাসি

মইনুল রাজু এর ছবি

আবারো ধন্যবাদ দিলাম। হাসি
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

তারেক অণু এর ছবি

লেখার মাঝে মাঝে আপনি যেভাবে নিজের অভিজ্ঞতা গুলো ঢুকিয়ে দিয়েছেন তার তারিফ করতেই হচ্ছে, ভালো স্টাইল, কিন্তু ভ্রমণকাহিনী যেমন ঝরঝরে হবার কথা তেমন হয়েছে মনে হয় নি আমার কাছে, লিখতে লিখতেই ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।

মইনুল রাজু এর ছবি

এত এত স্পট। একেকটা টপিক নিয়ে মাত্র দু-এক প্যারা করে লেখার সুযোগ পেলাম। আরো বিস্তারিত লিখতে পারলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু, ব্লগে খুব বেশি লম্বা লিখতে চাইলাম না আবার দুই পর্বও করতে চাইলাম না।

আমারো আশা লিখতে লিখতে আরেকটু ভালো হবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ফিডব্যাকগুলো কাজে আসবে। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

ধুসর জলছবি এর ছবি

আপনি ছয় সাত ঘণ্টায় এত কিছু দেখলেন কি করে, আমারও বন্দনার মতই অবস্থা। তিন দিন ছিলাম, তারপরও মনে হয়েছে কিছুই দেখলাম না। ল্যুভর অর্ধেকটা দেখতে পেরেছি বললে ভুল হবে শুধু হেটে বেড়িয়েছি, এভাবে কি আর দেখা হয়? তবে আইফেল টাওয়ারের উপরে উঠার অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল, যদিও বিশাল লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আমরা উপরে উঠার পরই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। অসাধারণ লেগেছে। হাসি আমারও আপনার মত যাওয়ার পরের দিন সকালে নাস্তা করতে গিয়ে দেখি সেখানে এক বাংলাদেশী। আমার হাসবেন্ড আমাকে বাংলায় জিজ্ঞেস করছিল কি খাবে, সে আমাদের চমকে দিয়ে আমাকে বলেছে "হ্যা, আপু বলেন কি খাবেন " । এরপর পরের দিন ফোন রিচারজ করতে গিয়ে দেখি দোকানটা এক বাংলাদেশীর হাসি আসলেই দুনিয়া অনেক ছোট দেঁতো হাসি

মইনুল রাজু এর ছবি

এই যে আপনি টাওয়ারে উঠলেন লাইনে দাঁড়িয়ে, আমি সেটা করিনি। মানে করতে পারিনি। আমার টাইম খুব কম ছিলো। তারপরেও এত কিছু দেখতে পারার মূল কারণ বলবো, প্যারিস শহরের মেট্রো। নিউ ইয়র্কের মেট্রো ফ্রিকুয়েন্সির জন্য ভালোই নাম করা। কিন্তু, তারপরও আমার কাছে প্যারিসের মেট্রো নিউ ইয়র্কের চেয়েও বেটার মনে হয়েছে।

প্যারিসের মেট্রোর দেখি আবার ট্রাকের চাকার মত চাকা লাগানো। দেঁতো হাসি
https://lh3.googleusercontent.com/-BLT-U5lH8us/UW68c5AiG7I/AAAAAAAABPg/0K2BbKkK3y4/s960/metro.jpg

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার পোস্টটা দেখে আমাদের প্যারিস ভ্রমণের কথা মনে পরে গেলো! ফিরে এসে অভিজ্ঞতাটা লিখে সচলায়তনে পোস্টও করেছিলাম। (যদিও লেখাটা শেষ করা হয়নি কখনো!)

লিংক গুলো দিয়ে দিলাম। সব চেয়ে মজার ব্যাপার একই জায়গায় ঘুরে এসে দুজনের অভিজ্ঞতা কখনো দুরকম আবার কখনো আশ্চর্য রকম এক!

আপনার লেখা এবং ছবি দুটোই ভালো লেগেছে।

অবশেষে প্যারিস যাত্রা
অভাজনের প্যারিস ভ্রমন - ১
অভাজনের প্যারিস ভ্রমন - ২
অভাজনের প্যারিস ভ্রমন - ৩

- ছাইপাঁশ

মইনুল রাজু এর ছবি

বেশ সুন্দর লিখেছেন আপনি। লেখাগুলো পড়লাম। তাছাড়া বিভিন্ন দরকারি তথ্যও দিয়েছেন (রায়ানএয়ার, কাউচসার্ফিং)। শেষের দুইটা পর্বে মূল লেখায় ছবিগুলো আসছিলো না। লিংক ব্রোকেন অথবা আমার সিস্টেমে লোড হতে দেরী হচ্ছিলো।

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তখনও ছবি ঠিক মত এটাচ করা শিখি নি!

স্যাম এর ছবি

নন্দিত নগরে ভ্রমণ চলুক

মইনুল রাজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।