পৃথিবীর পথে পথে, সেই পথ যেন না শেষ হয় (পর্ব ৪)

মইনুল রাজু এর ছবি
লিখেছেন মইনুল রাজু [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৬/০৮/২০১৩ - ১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্যাসকেইড মাউন্টেইন। প্রকৃতির এই রাজকন্যা তার রূপের লাবণ্যে মাতিয়ে রেখেছে গোটা আমেরিকার পশ্চিম উপকূল। উত্তর দিকের কিছু অংশ আবার পড়েছে কানাডাতেও। আমেরিকা এবং কানাডার সীমান্তে ক্যাসকেইডের যে অংশটা, এইতো এই কিছু দিন আগেও সেখানে পদচারণা ছিলো না কোনো মানুষের। প্রকৃতির নিজস্ব খেয়ালে শীতের সময় তুষারের ঢাকা পড়ে যেত পর্বত চূড়াগুলো। আবার, গ্রীষ্ম আসলে তুষারশুভ্র পাহাড়ের গা থেকে বরফের আস্তরণ সরে গিয়ে, চুপি চুপি আকাশপানে উঁকি দিতো সবুজ তরু-লতারা। লোকচক্ষুর অন্তরালেই পরিসমাপ্ত হয়ে যেত প্রকৃতির সে-সমস্ত নাট্যকলা। আর, লোকজন সেখানে যাবেই-বা কি করে! হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড়, বন্য জীবজন্তুর সদর্প আনাগোনা; পথ নেই, রথ নেই, সুখে-দুঃখে পাড়া-প্রতিবেশিরা কেউ নেই। তার উপর আছে তুষারের প্রবল ঝাটকা, পাহাড়ী প্লাবন, ভূমিধ্বসের মত বিধ্বংসী বিপর্যয়।

তবু, কে কখন থামিয়ে রাখতে পেরেছে বেপরোয়া মানুষদের। দুর্গম, দুর্লঙ্ঘকে পরাস্ত করাইতো যুগে যুগে সে-সব মানুষদের দুর্নিবার নেশা। ১৮৯৮ সাল পরবর্তী বছরগুলোতে, আমেরিকা-কানাডা সীমান্তবর্তী বন্য ক্যাসকেইডকে পরাস্ত করে, যিনি হাজার হাজার ফুট উঁচু পর্বত দু-পায়ের নীচে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই দুর্দান্ত মানুষটি একজন নারী- লুসিন্ডা ডেভিস। দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে সাথে নিয়ে লুসিন্ডা ক্যাসকেইডের যে জায়গাটাতে আস্তানা বানিয়েছেন, সেখান থেকে তাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীটির বাড়ীও ছিলো সাত মাইল দূরে, বাইশ মাইল পার হয়ে পাওয়া যেত নিকটতম লোকালয়টির দেখা। ডেভিস ফ্যামিলির সেই পদচিহ্ন অনুসরণ করে আজ সেখানে পথ হয়েছে, সে পথে যোগ হয়েছে নিয়ন বাতি, আর আমাদের হয়েছে নির্ভেজাল প্রকৃতির নিরুপম সৌন্দর্য উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ।

ডেভিস পরিবারের নামে নামকরণকৃত ডেভিস পিক্ এবং তাদেরই বিজয়কৃত কলোনিয়াল, পিরামিড কিংবা সাওয়ারডৌ পিক্ থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঝর্ণাগুলোর পানি এসে জমা হয়, পায়ের কাছে জন্ম নেয়া লেইক ডিয়াবলোতে। নীচে নেমে আসার সময় সে ঝর্ণাধারা সাথে করে নিয়ে আসে গ্লেসিয়ারের চাপে চূর্ণবিচূর্ণ পাথরের মিহিকণা। আর, সে-সমস্ত পাথরগুঁড়োর রঙে রঞ্জিত হয়ে ডিয়াবলো লেকের পানি যে বর্ণ ধারণ করেছে, পৃথিবীর কোন দৃষ্টি আছে সে রূপ দেখে থমকে যাবে না।

ছবিঃ লেইক ডিয়াবলো।

নীল নয়, সবুজ নয়, নীলাভ সবুজ সে হ্রদের দিকে তাকিয়ে শুধু মনে হয়- 'রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, গুণে মন ভোর, প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে, প্রতি অঙ্গ মোর'।

ছবিঃ লেইক ডিয়াবলো।

লেইক ডিয়াবলোর পাশেই, একদা ডেভিস পরিবারের পদচারণায় ধন্য লেইক রস্। সেখানকার পানির রঙ আবার সম্পূর্ণ আলাদা। এক মাইল প্রশস্থ আর তেইশ মাইল লম্বা সে লেইক ধরেই আমেরিকা থেকে কানাডা চলে যাওয়া যায়। বোটিং কিংবা কায়াকিংয়ের জন্য, লেইক রস্ এর মত উপযুক্ত আরেকটি জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন। শহর থেকে অনেক দূরের, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নির্জন সে লেইকে নৌকা চালিয়ে, প্রকৃতিকে একেবারে যেন কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়। আর, আমরাও সে সুযোগটা কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করলাম না।

ছবিঃ লেইক রস্।

আমরা মানে আমি, জুয়েল আর বখতিয়ার ভাই; এবং সদা হাস্যময়ী অর্চি। এক মাইল দীর্ঘ পার্বত্য পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমে আমাদের পৌঁছাতে হলো ঘাটে, খেয়াঘাটে। পাহাড়ী পথ ধরে নামতে নামতে শুধু ভাবতে হয়েছে, ফিরতি পথে এই একমাইল পথ আবার পাহাড় বেয়ে উঠে আসতে হবে। লেইকের ওপারে পাহাড়ের পায়ের কাছে সারি করে দাঁড়িয়ে আছে কটেজ। এ-সমস্ত জায়গাগুলোতে মানুষজন ছুটি কাটাতে আসে। অনেক আগে থেকে রিজার্ভ না করা থাকলে খালি পাওয়া যায় না। কিন্তু, আমাদের উদ্দেশ্য হলো নৌকা ভাড়া করে রস্ লেইকে ঘুরে বেড়ানো। সে না-হয় হবে, আগেতো ওপারে যেতে হবে, যেখান থেকে নৌকাগুলো ভাড়া নিতে হয়। কিন্তু, সেখানেতো আর সাঁতার কেটে যাওয়া যাবে না। ঘটনাটা তাহলে কি দাঁড়ালো, সেটা ভাবতে ভাবতেই এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে বললেন, তোমরা যদি ওপারে যেতে চাও, এখানে অপেক্ষা কর। কিছুক্ষণ পরই বোট আসবে, প্রতিজন দুই ডলার করে ভাড়া নেবে।

ছবিঃ লেইক রস্ এবং তীরে গড়ে উঠা কটেজ।

উনার কথা মতো খানিক পরেই সুজন মাঝি খেয়া পারের তরণীসহ এসে হাজির। ওয়েস্টার্ন মাঝি তার দ্রুত্গতির যানে চড়িয়ে ক্ষণিকেই আমাদের ওপারে নিয়ে নামিয়ে দিলো। ওপারে গিয়ে বোট ভাড়া করার পালা। ব্যবসার কর্ণধারিণী প্রথমে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “আগে কখনো তোমরা কেউ এই বোটগুলো চালিয়েছ?” আমরা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে টাকিয়ে জানান দিলাম, “না”। তিনি জানালেন, “কোনো ব্যাপারই না, তামাম দুনিয়ায় যত কাজ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে সোজা হলো বোট চালানো। তিনি মিনিটের মধ্যেই তোমাদেরকে এই বিদ্যা শিখিয়ে দেয়া হবে”।

এরপর, “অলরাইট” বলে একজন ট্রেইনার আমাদের চারজনকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। ইঞ্জিনচালিত ছোট্ট বোটের ভিতর গিয়ে সে বিভিন্ন রকমে ডানে বামে ঘুরিয়ে, এক বাটনে চাপ দিয়ে ইঞ্জিন পানিতে ডুবিয়ে, আরেক বাটনে চাপ দিয়ে পানি থেকে উঠিয়ে, ডানে ঘুরিয়ে গরম করে, বামে ঘুরিয়ে স্টার্ট করে, ফরোওয়ার্ড বলে সামনে টেনে, ব্যাকওয়ার্ড বলে পেছনে টেনে, আকর্ণবিস্তৃত হাসি হেসে বললো, “দেখলেতো কি রকম সোজা!”

তার কথা শুনে সাথে সাথে আমার মনে পড়ে গেলো, ঢাকা শহরের ফকিরাপুল বাজারের কথা। সেখানে একবার তরমুজ কিনতে গেলে দোকানদার এবং তার সাথের লোকজন বললো, “তরমুজ যদি টকটকে লাল না হয়, তাহলে এক পয়সাও দিতে হবে না”। সেই শর্তে তরমুজ কিনে, তাদেরকে বললাম, “ঠিক আছে এবার কেটে দেখা যাক, কিরকম লাল”। কাটার পর দেখা গেলো, তরমুজের ভিতরটা মোটামুটি চালকুমড়ার মত সাদা। কিন্তু, দোকানদার এবং তার সঙ্গীসাথীরা সবাই একযোগে “ওয়াও ওয়াও” রব তুলে সমস্বরে বলতে থাকলো, “এর থেকে লাল আর তরমুজ হয় না, জবা ফুলের মত লাল তরমুজ, এবার টাকা দেন”। আমি বুঝলাম, তরমুজওয়ালা ব্যাটারা আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি প্রয়োগ করতে শিখে গেছে। যাহা আমার কাছে সাদা, তাহাই উহাদেরর কাছে রক্তজবা লাল। সবই আপেক্ষিকতার লীলাখেলা। সে-দিন নগদ টাকা দিয়ে সাদা তরমুজ কিনে বাসায় ফিরেছিলাম।

কিন্তু, লোকালয় ছেড়ে দূরে, উত্তর আমেরিকার জনবিরল এই লেইকে, শুধু ব্যবসা করার নিমিত্তেই কি তিন মিনিটে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালনা শিখিয়ে, “দেখলেতো কি রকম সোজা” বলে, কারো হাসতে থাকা উচিৎ কি-না, সেটা নিয়ে আমি যখন মহাচিন্তায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই আমাদের দলের বখতিয়ার ভাই বলে উঠলেন, “ইয়েস, ভেরি ইজি!” এই বলে সোজা হেঁটে গিয়ে উপস্থিত হলেন ইঞ্জিনের পাশে। উনার দেখাদেখি জুয়েলও গিয়ে উঠলো বোটে। আমি ভাবছিলাম, “এরা কি আসলেও বুঝছে সব কিছু, নাকি সাহস দেখানোর মূকাভিনয় করতে গিয়ে ধরা খেতে যাচ্ছে”। কিন্তু, পরক্ষণেই যখন দেখি অর্চিও হাসতে হাসতে বোটের উপর গয়ে লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিতে শুরু করেছে, তখন আর উপায় নেই দেখে মিনমিন করতে করতে আমিও গিয়ে উঠলাম আমাদের ছোটতরীতে।

ছবিঃ মেঘ পাহাড়ের দেশের লেইক রস্।

প্রথমে দিক ঠিক রাখতে খানিকটা বেগ পেতে হলেও, বখতিয়ার ভাই বিপুল বিক্রমে ঠিকই চালিয়ে নিচ্ছিলেন। আমরাও মহাখুশী। তিনমিনিটের শর্টকোর্সেই লোকটা কি চমৎকার ক্যাপ্টেইন হয়ে গেলো। ব্যক্তিগত জীবনেও উনি খুব গোছানো। এই যেমন কিছুদিন আগে, রাস্তা থেকে কে বা কারা উনারা গাড়ী নিয়ে চলে গেছে। তিনি অবশ্য কোনোভাবেই কারণটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। উনি কেবল গাড়ির সামনের দরজার গ্লাস খোলা রেখে, ভেতরে চাবি রেখে সারারাত বাসায় ঘুমিয়েছেন। আর, তাতেই কি-না সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখেন, দুষ্ট লোকের দল সে গাড়ী নিয়ে হাওয়া।

ছবিঃ রস্ লেইকের জলপথ।

প্রথম প্রথম খানিকটা শঙ্কা থাকায় ক্যাপ্টেইন বখতিয়ার ভাই তীর ঘেঁষে তরী চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন। তবে, ঘাট ছেড়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেলো, মূল লেইকে যাওয়ার প্রবেশপথটিতে লম্বা লম্বা গাছ ভাসিয়ে সীমানা তৈরী করে রাখা আছে; যাতে করে ঢেউ এসে তীরে আঘাত হানতে না পারে। সমস্ত জলযানগুলোকে গাছ নির্মিত সেই সীমানা প্রাচীরের মাঝখান দিয়ে যেতে হবে। আমাদের ক্যাপ্টেইনের মাঝখান হয়ে যেতে সাহসে না কূলানোর কারণে, একেবারে তীর ঘেঁষে প্রাচীর পার হবার চেষ্টা করলেন। আর, প্রাচীরের কাছে গিয়েই দেখা গেলো সেটা পার হবার উপায় নেই, মজবুত লোহার শিকল ডুবে আছে পানির খানিকটা নীচে।

ক্যাপ্টেইন নৌকা স্টার্ট দিতে পেরেছিলেন, কিন্তু, সেটা আর বন্ধ করে দেখেননি। তিন মিনিটের শর্ট কোর্স চার মিনিটেই ভুলে যাওয়া হবে, সেটাইতো স্বাভাবিক। বখতিয়ার ভাই আর জুয়েল মিলে নৌকা থামানোর চেষ্টা করে গেলেন। কিন্তু, সেটিতো আর কলাগাছের ভেলা নয়, যে একটু-আধটু ডানে-বামে কাত করলে থেমে যাবে বা গতি কমে যাবে। যা হবার তাই হলো। তীরের সাথে ধাক্কা লেগে ইঞ্জিন বন্ধ হলো এবং ভাসতে ভাসতে তীর থেকে খানিকটা দূরে এসে নৌকা স্থির হলো। তারপর, কত ভঙ্গিমায় যে স্টার্ট করার চেষ্টা করা হলো, কিছুতেই কাজ হলো না। ওদিকে ভাসমান গাছপ্রাচীর দিয়ে পানি আটকে রাখাতে, ঠিক সেই জায়গাটাতেই ঢেউগুলো তীব্র এবং এলোমেলো। আমাদের বন্ধ হওয়া নৌকা দুলতে থাকলো অনিয়মের নিয়মে।

ছবিঃ লেইকের মাঝে জেগে থাকা ছোট্র দ্বীপ; বস্তুত, নিমজ্জ্বিত পাহাড় চুড়া।

কোনোভাবেই যখন স্টার্ট দেয়া যাচ্ছে না এবং ঘাট থেকে যখন আমরা এত দূরে চলে এসেছি যে, কাউকে দেখা যাচ্ছে না বা চিৎকার করলেও আওয়াজ পৌঁছাবে না, ঠিক তখনই তীরের গাছপালা ভেদ করে হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে উঁকি দিলো একদল কিশোরী। ক্যাপ্টেইন বখতিয়ার ভাইকে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কি কোনো সমস্যা? তোমাদের কোনো হেল্প লাগবে?” ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল ক্যাপ্টেইন আকর্ণবিস্তৃত হাসি হেসে বললো, “নো, উই আর গুড! থ্যাঙ্ক ইউ!!” আরে, উই আর গুড মানে কি! কত তাড়াতাড়ি “থ্যাঙ্ক ইউ” বলা যাবে, ক্যাপ্টেইন কি সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন না-কি! ততক্ষণে, অন্যকিছু বলার আগেই সে-দলটি গাছ-পালার আড়ালে হারিয়ে গেলো। আমরা তিন জন মিলে বখতিয়ার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “উই আর গুড ক্যামনে?” ক্যাপ্টেন তখন মিন মিন করে ছড়িয়ে দিলেন মুচকি হাসির ফোয়ারা।

এদিকে, ততক্ষণে ঘটনার আরো অবনতি হয়েছে। আমাদের বোট আপনা থেকে ভাসতে ভাসতে গিয়ে ঠেকেছে লোহার শিকলের কাছে। সমূহ সম্ভাবনা আছে ইঞ্জিনের সাথে আটকে নৌকা উল্টে যাবার। ততক্ষণে, বিদেশিনীদের ধন্যবাদ দিতে পারার সুখস্মৃতি মুছে গিয়ে ক্যাপ্টেন বখতিয়ার ভাইয়ের মুখও বিমর্ষ হয়ে উঠেছে। ওদিকে জুয়েল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌকার পাটাতনে থাকা লগিবৈঠা বের করে আনতে। অবশ্য তখনও দেখি একজন হাসতেই আছে। অর্চি। নৌকাডুবির আসন্ন বিপদের কথা ভেবে আমি যখন দু”একটা অলুক্ষণে ভাবনা মনে নিয়ে আসতে শুরু করেছি, তখন সে হি হি করতে করতে বলছে, “নৌকা ডুবলে আমার সমস্যা নেই, আমার সমস্যা এই ঠান্ডা পানি”। এই মেয়ে বলে কি! তার সমস্যা নাকি পানি!! এই কিছুক্ষণ আগেও জানিয়েছে, তার সর্বোচ্চ সাঁতারের রেকর্ড বিশ মিটার লম্বা সুমিং পুল, তাও ডুবে-টুবে বেশ কয়েক লিটার পানি গিলে। আর এখন জানাচ্ছে, তার একমাত্র সমস্যা না-কি ঠাণ্ডা।

অবশ্য, সে-কথা যে তার মনের কথা নয়, তা টের পাওয়া গেলো একটু পরেই। আমাদের নৌকা থেকে খানিক দূর দিয়ে, ইঞ্জিন ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো আরেকটি নৌকা। অর্চি তখন চিৎকার করে ডেকে ডেকে বলছে- “হেল্প! হেল্প !! উই আর স্টাক!!!” হলিউডের অনেক সিনেমায় এরকম চিৎকার করে হেল্প চাওয়ার কাহিনী দেখেছি। কিন্তু, কখনো কল্পনাও করিনি, একদিন আমাদেরকেও ঠিক সেভাবে চিৎকার করে সাহায্য চাইতে হবে। অর্চির চিৎকার শুনে অন্য নৌকার মানুষেরা প্রাণ ভরে হাসতে হাসতে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে থাকলো। ইয়া মাবুদ! ঘটনাটা কি! অর্চির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম। ওর কোনো ঠিক নাই। দেখা যাবে, সে হাসতে হাসতে হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করছে! কিন্তু, নাহ, সে সিরিয়াস ভাবেই বলছিলো। বুঝতে পারলাম, ইঞ্জিনের আওয়াজের কারণে “হেল্প হেল্প”-ই হয়তো তাদের কানে গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়ে গেছে “হ্যালো হ্যালো”।

কিন্তু, আড়ালে ক্যানোয়িং করতে থাকা দুই জন ঠিকই সে ডাক শুনতে পেয়েছে। তারা এসে আস্তে আস্তে উপস্থিত হলো আমাদের নৌকার পাশে। দুজন ডানে-বামে গিয়ে টেনে-হিঁচড়ে, লোহার শেকল থেকে আমাদের নৌকা ছাড়ালেন। আমাদেরকে বৈঠা বেয়ে নিকটতম তীরে পৌঁছার পরামর্শ দিয়ে তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন ঘাটের দিকে। সেখানে গিয়ে তারা বলতে পারবেন, আমাদের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে।

এবার আমাদের মাঝি হবার পালা। কিন্তু, বৈঠা বেয়ে আমরা যেদিকে যেতে চাই, নৌকা যায় ঠিক তার উল্টো দিকে। জুয়েল বলে ডানে চালাতে হবে, আর ছোটবেলায় কলাগাছের ভেলা ভাসানোর বিপুল অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি বলি, না বামে চালাতে হবে। দেখা গেলো, আমার কথা একশত ভাগ ভুল। ভুল-শুদ্ধের দোলাচলে দুলতে দুলতে আমরা যখন এদিক সেদিক চলতে থাকলাম, ঠিক তখনি লেইকের পানি দুইভাগ করে, তীব্রগতিতে পাহাড়ী নির্জনতা ভেঙ্গে দিয়ে চলে আসলো উদ্ধারকারী বোট।

ছবিঃ আমাদের উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম।

বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম, কি করে সমস্যার সমাধান হয় সেটা দেখার জন্য। আসলে সমধান নয়, অপেক্ষা করছিলাম সমাধান যেন না হয় সেটা দেখার জন্য। যাতে করে তারা বুঝতে পারে, কি সুবিশাল বিপদের মধ্যে নিমজ্জ্বিত থেকেও শুধু বুদ্ধি আর সাহসের কারণে এ-যাত্রা আমরা রক্ষা পেলাম। “তোমাদের জায়গায় অন্য কেউ হলে নির্ঘাত একটা দুর্ঘটনা হয়ে যেত” মনে মনে সেরকম কিছু শোনার আকাঙ্খাও ছিলো। তার আগে অবশ্যই জানিয়ে দিলাম, ডানে-বামে, উপরে-নীচে, সব কিছু টেনেটুনে কত রকম ভাবে আমরা চেষ্টা করার পরো এই নষ্ট ইঞ্জিন স্টার্ট নেয় না।

উদ্ধারকারী লোকটা আমাদের নৌকায় আসলো। বললো, “জায়গা দাও”। জায়গা দিলাম। তারপর নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে যে লম্বা স্ট্রিংটা টেনে ইঞ্জিন স্টার্ট করতে হয়, সেটা ধরে সে টান দিতেই স্টার্ট হয়ে গেলো ইঞ্জিন। আমরা ততক্ষণে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি, আর ভাবছি কোনো ভাবে ব্যাটা যদি জিজ্ঞেস করে, “ভাইজানগো দেশ কুন খানে”, তাহলে বলবো, তিব্বত, না-হয় নেপাল। লোকটা হাসতে হাসতে বললো, “এই বোটটা আসলে আমাকে চেনে, তাই দেখলেই ভালো হয়ে যায়। আশা করি সমস্যা হবে না আর। গো এহেড এন্ড এনজয়”।

ছবিঃ সূর্যস্নান।

এরপর শুরু হলো আমাদের লেইক রস দেখার পালা। কিন্তু, চার সদস্যবিশিষ্ট সংসদে ক্যাপ্টেইন বখতিয়ার ভাইয়ের উপর অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলো। অভিসংশনের মাধ্যমে উনাকে অব্যাহতি দেয়া হলো। কিছু সময়ের জন্য জুয়েল এবং আমি ক্যাপ্টেন হবার পর, একমাত্র নারী সদস্য তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত হলো। সরব কণ্ঠে আওয়াজ তুলে সে জানান দিলো, ক্যাপ্টেইন হতে চায়। অবশেষে, অর্চির হাতেই ইঞ্জিন চালানোর দায়িত্ব দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম, রস্ লেইকের মাঝ দিয়ে।

ছবিঃ ম্যাপ দেখে নেভিগেশান ঠিক করায় ব্যস্ত ক্যাপ্টেইন বখতিয়ার ভাই।

দুপাশে সুউচ্চ পাহাড়দের রেখে বয়ে চলা সে হ্রদের জলে যখন সূর্য এসে পড়ে, মনে হয়, হ্রদ নয়, অন্য কোনো উপগ্রহ। কেমন জানি প্রশান্ত এক অচেনা আরণ্যক অনুভূতি কাজ করে। পাহাড়গুলোর গায়ে আবার ঘন জঙ্গল, সেখানে উঁচু গাছের সারি। ক্ষণে ক্ষনে তারও উপরে উড়ে বেড়ায় আমেরিকান ঈগল। হয়তো এ-সমস্ত কোনো এক সুউচ্চ গাছের শাখায় বাসা বেঁধেছে সে।

ছবিঃ আমাদের সূর্যটা, সব জায়গায় ঠিকই পৌঁছে যাবে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

নৌকা ছুটিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ করে চোখে পড়ছে, তীরের কাছে নেমে হাঁটুজলে পা ডুবিয়ে পাথরে বসে আছে অচেনা যুগল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লেগে থাকে তাদের চোখে-মুখে, দূর থেকে দেখা যায় না। আমাদের দেখে হাত নাড়ে। আমরাও হাত নেড়ে স্বাগত জানাই।

ছবিঃ তীরের কাছের সুউচ্চ তরুরাজী।

জলপথ পাড়ি দিতে দিতেই একসময় আমাদের ফেরার সময় ঘনিয়ে আসে। বিকেলের শেষ আলো এগিয়ে আসার তখনও কিছু সময় বাকী। এতদূর নৌকা চালিয়ে ফিরে আসা, তবু কারোরই ক্লান্তি নেই। বরং, চোখভরা প্রশান্তি। আমরা তীরে এসে নৌকা ভেড়াতেই, ডকে বসে থাকা অতিথিরা হাত তালি দিয়ে আমাদের স্বাগত জানায়। গুড জব।

ছবিঃ প্রতিফলণ ও প্রতিসরণ।

এই পৃথিবীর এমন এমন কিছু জায়গা আছে, চলার পথে যেগুলো মনের ভেতর দাগ কেটে যায়, আবারো তার কাছে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু, সে-সুযোগ সব্সময় হয় না। ফিরে আসার সময় তাই বার বার পিছনে তাকিয়ে দেখছিলাম, কি জানি, হয়তো আর কখনো ফিরে আসা হবে না এখানে। এক পৃথিবী সৌন্দর্য দেখার জন্য, এক পৃথিবীর পথ চলার জন্য, এক জীবন খুব অল্প সময়; তবু, সেই পথ যেন না শেষ হয়।

এই সিরিজের বাকী পর্বগুলিঃ
পর্ব ১ পর্ব ২
পর্ব ৩
অন্যান্য সব লেখা

মইনুল রাজু
ফেইসবুক

[/justify]


মন্তব্য

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

অসাধারণ সব ছবি! লেখাটাও ভালো লাগলো।

মইনুল রাজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

savage_mountain এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক

মইনুল রাজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ ছবি একটার পর একটা। উত্তম জাঝা!
আপনার লেখা, যেমন বরাবর লেখেন আপনি - ঝরঝরে, সরস। চলুক
সাবাশি দিতে লাগে আপনাদের নিজেরা চালিয়ে বোট নিয়ে ভেসে পড়াকে। তবে ঐ সাবাশি দেওয়া পর্যন্তই। আপনারা ঘরে ফিরলে আপনাদের সাথে আড্ডা জমাতে খুব-ই আনন্দ পাব; কিন্তু আপনাদের সাথে বেড়াতে যাওয়া নেই। হাসি
খুব মজা পেলাম তরমুজ কেনার গল্পতে।
- একলহমা

মইনুল রাজু এর ছবি

আমি নিশ্চিত ঘরে ফিরলে নয়, বরং বেড়াতে গেলেই বেশি আনন্দ পাবেন। হাসি তরমুজ কেনার গল্পটা অনেক আগের, আমার কলেজে পড়ার সময়ের। এখনো পরিষ্কার মনে আছে। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

প্রতিফলণ ও প্রতিসরণ - অসাধারণ লাগলো।

লেখা বরাবরের মতই বাকরহিত করে দেয়া। তবে এবারে পর্বটা বেশী ভালো লেগেছে। আর এমন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে যদি একটু এডভেঞ্চার না-ই হলো, তবে আর মজা কোথায়? (আপনাদের নৌকা জনিত ঘটনার কথা বলছি)।

কামনা করছি এরকম লেখা "যেন না শেষ হয়"

____________________________

মইনুল রাজু এর ছবি

এডভেঞ্চার হবার কারণে শেষ পর্যন্ত আমরাও মহাখুশি ছিলাম। আসলেও দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

ইস কি সুন্দর লেখা আর কি অসাধারন সব ছবি গুরু গুরু , জীবনে কোনদিন তো এইসব জায়গায় যাওয়া হবে না তাই শুধু আপনাদের লেখা পড়ি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি
ইসরাত

মইনুল রাজু এর ছবি

অবশ্যই যেতে পারবেন। আপনার আসপাশেও দেখবেন সুন্দর জায়গা আছে, পুরো পৃথিবীটাইতো সুন্দর। সে-সব নিয়ে লিখে ফেলুন। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার সব ছবির সাথে অসাধারন ধারাভাষ্য! মুগ্ধ হলাম!!

সে-দিন নগদ টাকা দিয়ে সাদা তরমুজ কিনে বাসায় ফিরেছিলাম।

ইয়ে... এর পরের বার তরমুজ কেনার সময় আমাকে সাথে নিয়েন, তরমুজ লাল হলেও আমি বলবো সাদা ফকফকা চোখ টিপি

আব্দুল্লাহ এ এম

মইনুল রাজু এর ছবি

সেটাই একমাত্র ভরসা, দলবল সাথে নিয়েই তরমুজ কিনতে যেতে হবে। দেঁতো হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

বন্দনা এর ছবি

দারুণ সব ছবি রাজু ভাই।

মইনুল রাজু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

রাত-প্রহরী এর ছবি

হাততালি
ছবিগুলো অসাধারণ! শেষ ছবিটা মগজে ঢুকতে অনেক সময় নিলো। ডান হাতের তর্জনী আর চোখ খুব ভালো আপনার।
আপনার লেখা নিয়ে বলার কিছু নেই। আপনি লেখেন ছবির চেয়েও ভালো।
আনেক শুভেচ্ছা জানবেন।

------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

মইনুল রাজু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ জানবেন। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিগুলোর মতোই আপনার লিখা অনেক সুন্দর আর ঝরে ঝরে হয়েছে,আর প্রাকৃতিক পরিবেশ টা অদ্ভুত সুন্দর।কেমন জানি স্বপ্ন দৃশ্য স্বপ্ন দৃশ্য মনে হচ্ছিলো।এমন সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখে আমার নিজের দেশের কাপ্তাইয়ের কথা মনে পড়লো।বর্ষায় কাপ্তাইয়ের সৌন্দর্য অন্যমাত্রার।লেকের পাশে প্রাচীন সুউচ্চ সব পাহাড় আর তার বুকে সবুজ গাছ গাছালি আমাকে বিমোহিত করে ছিলো।একদিন অবশ্যই যাবো রস লেইকে।তখন না হয় আপনাকে পথ প্রদর্শক হিসাবে নিয়ে যাবো।হা হা।সুন্দর সুন্দর ছবি আর দারুন বর্ণনাময় লিখার জন্যে আপনাকে অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ।ভালোথাকবেন,বেচে থাকলে দেখা হবে নিশ্চিয় একদিন।

মাসুদ সজীব

মইনুল রাজু এর ছবি

দেখা হবেই, সেই প্রত্যাশা থাকলো। আর, কাপ্তাই লেইক এরিয়া অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা।

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

মাথানষ্ট ম্যান। বেশী সুন্দর নীল।

মইনুল রাজু এর ছবি

হাসি দেঁতো হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

সাহেদ এর ছবি

অসাধরন সব ছবি আর অসাধারন লেখা আপনার লেখা বিশেষ করে পাহাড়ের পটভূমিতে সাদা মেঘের দল এই ছবিটা এত সুন্দর যে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম ছবিটার দিকে।
আপনার লেখা দারুন ভালো লাগে। প্রথম যেদিন আপনার লেখার লিঙ্ক গুলা পাই সেদিনেই সবগুলা লেখা পরেছিলাম গুগল সাইটের।

মইনুল রাজু এর ছবি

জায়গাটা অন্যরকম ভালোলাগার একটা অনুভূতি এনে দিয়েছিলো। খুবই মনোরম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

মনের রাজা টারজান এর ছবি

লেখা পড়তে ইচ্ছে হয়নি,

ছবি গুলি দেখে কেমন যেন হয়ে গেলাম, মনে হচ্ছে ।।। ওখানেতেই ত আমি ছিলাম এত দিন, আমার হারিয়ে যাওয়া রুপকথার দেশ!!!

কমেন্ট করে তারপর আপনার লেখাগুলি হয়ত পরব, হয়ত আবার ডুবে যাব ছবি গুলিতে ।।।

মইনুল রাজু এর ছবি

আমার নিজের কাছেও রূপকথার দেশই মনে হয়েছিলো। আসলেও খুব শান্ত আর সুন্দর জায়গাটা।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

কৌস্তুভ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি আপনি কি মানুস?

মইনুল রাজু এর ছবি

আমি আবার কি কইল্লাম! দেঁতো হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

মইনুল রাজু এর ছবি

আমি আবার কি কইল্লাম! দেঁতো হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

মন মাঝি এর ছবি

অপূর্ব!

লেকের পানির রঙের বাহার স্রেফ মাথা খারাপ করে দেয়। লেক ডিয়াবলোর পানির ঝকঝকে সায়ান বা একুয়া-ব্লু রঙ, লেক রসের কখনো শ্যামরক-গ্রীন, কখনো ডজার-ব্লু, কখনো সিরুলিয়ান-ব্লু, কিম্বা কখনো লিঙ্কন-গ্রীন, ইত্যাদি রঙে স্নাত হতে হতে প্রাণমন একদম জুড়িয়ে যায়। মনে হয় সারাটা জীবন যদি এইরকম বাহারি প্রায় ক্যালাইডোস্কোপিক রঙের সাগরেই ডুবে থাকতে পারতাম - হয়তো লেকের পারে ছোট্ট কোন কুটিরে।

তবে বাংলাদেশেও কিন্তু এরকম চোখধাঁধানো-মনভোলানো স্বর্গীয় রঙের লেক বা নদী আছে। বা অন্তত ছিল। আমাদের নাফ নদীও একসময় এমনই অসাধারণ ঝলমলে, নিষ্কলুষ একুয়া/টারকুইজ-ব্লু ছিল। যেন কোন মূল্যবান রত্ন বিশুদ্ধ তরল রূপ ধারণ করে প্রবাহিত হচ্ছে। ৮০-র দশকের শেষের দিকে প্রথম যখন দেখি, তখন কতক্ষণ ধরে যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে একটা ঘোরের মধ্যে সেই রঙ আকণ্ঠ পান করে গেছি, তা আজ আর মনে নেই। নাফের পানি রঙ অন্তত ছবির ডিয়াবলোর পানির চেয়ে কোন অংশে কম ছিল বলে মনে হয় না। এখন অবশ্য টুরিস্ট-লঞ্চের ডিজেল, আবর্জনা, ইত্যাদির ধাক্কায় চিত্রটা একটু ভিন্ন, কিন্তু পুনরুদ্ধার-অযোগ্য বোধহয় না।

****************************************

মইনুল রাজু এর ছবি

উইকিপিডিয়াতে লেইক ডিয়াবলোএর কালারকে টারকুইজ-ব্লু বলছে। ইউএসএ-তে আমি অনেক লেইকে ঘুরে দেখেছি, কিন্তু ডিয়াবলো এর মত রঙ কোথাও দেখিনি। একদম অনন্য, বেশি সুন্দর। আমার ধারণা ছিলো এরকম রঙ শুধুমাত্র বুঝি কেমিস্ট্রি ল্যাবেই দেখা সম্ভব।

আর রস্ এর কুটিরগুলো দেখে মনে হয়েছে, আহা, একদিন-দুইদিন নয়, অন্তত বারো মাস থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে তাকে দেখতে না পারলে, বুঝি সাধ মিটবে না। ছবির দেশ, কবিতার দেশ মনে হয়েছে।

আমিও নাফ নদীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, আপনি যে রূপ দেখেছেন সেটা দেখার সুযোগ হয়নি। আমার কাছে রাঙ্গামাটি, কাপ্তাইয়ের লেইকগুলো খুব সুন্দর লেগেছিলো।

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

ইস! কী অসাধারণ সব ছবি! লেখাটাও কতো সরেস। খুব, খু-উ-ব ভালো লাগলো।

-নিয়াজ

মইনুল রাজু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চোখ জুড়িয়ে দেয়া সৌন্দর্য, এই সৌন্দর্যের গহনে ডুবুরি হতে কার না মন চায়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মইনুল রাজু এর ছবি

চলুক

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

স্পর্শ এর ছবি

ছবির মত!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মইনুল রাজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

স্বপ্নচোরা এর ছবি

আপনার উচিত শীতকালেও সেখানে একবার দর্শন করে আসা, প্রকৃতির আরেক আবহে এরকম "অসহ্য সুন্দর" কী রূপ ধারণ করে তা না দেখে থাকতে ইচ্ছে করে না।
বিশেষ করে লেইক রস আর ডিয়াবলোতে ডুব দিতেই বেশি ইচ্ছে করছে এখন।
তবে ঠিকই বলেছেন - এক জীবন খুবই অল্প সময় পৃথিবীটাকে দেখার জন্য।

মইনুল রাজু এর ছবি

আমি নিশ্চিত শীতকালে অন্যরকম সুন্দর লাগবে জায়গাগুলো। ক্যাসকেইডের মধ্যে লুকিয়ে থাকা, ওয়াশিংটন স্টেইটের এই জায়গাগুলোতে আমি এবারই প্রথম যাই। আমার ধারণাও ছিলো না যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে আমেরিকার এই স্টেইটটা এত বেশি সুন্দর হবে। কেন জানি তাদের প্রচারণা কম। নিজ থেকে এক্সপ্লোর না করলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যেত। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

স্বপ্নচোরা এর ছবি

শীতকালটা প্রকৃতি সবসময়ই অন্যরকম রূপ ধারণ করে.....এটা কখনো কখনো সুন্দরের "ভয়ঙ্কর বৈপরীত্য" হয়েও ধরা দেয়।
আলাস্কাতে আপনার যাবার কোন প্ল্যান-ট্যান আছে নাকি? ওপারের ঘাটে গেলে আপনার চোখ দিয়েই আমার শত শত বরফ মাটির ওয়ালপেপার, বাস্তবের চোখে একবার দেখা হয়ে যাবে..........যা হোক আপনার পরবর্তী ভ্রমণের আকর্ষক লেখার অপেক্ষায় থাকলাম বাঘের বাচ্চা

তারেক অণু এর ছবি

অপূর্ব! লেখা ভাল লাগল, লাল তরমুজ চোখ টিপি জটিল!

মইনুল রাজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

ক্যাপ্টেন নিমো এর ছবি

অসাধারণ সব ছবি, সেই সাথে অপূর্ব লেখা। ছবি গুলো কি এইচডিয়ার করা নাকি ভাই? আর এত সুন্দর জায়গা দেখলেই দম বন্ধ হয়ে পেট ফেটে মরে যাবো মনে হচ্ছে।

মইনুল রাজু এর ছবি

আমার ফটোগ্রাফিতে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এইচডিআর কিনা জানা নেই। হবার কথা নয়। তবে, আমি ম্যাক মেশিনের আইফটোতে ব্রাইটনেস/শার্পনেস/শ্যাডো বাড়াই কমাই একটু।

এই জায়গায় গিয়ে, আমাদের দম ফেটে মরে যাবার অবস্থাই হয়েছিলো। হাসি ধন্যবাদ আপনাকে।

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মইনুল রাজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

shamin alam এর ছবি

সত্যি অসাধারণ সব ছবি, সেই সাথে অপূর্ব লেখা। আমি মুগ্ধ। ধন্যবাদ আপনাকে এতো চমৎকার করে ব্লগ লিখার জন্য।

মইনুল রাজু এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকেও। হাসি

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।