মাত্র দশ বছর বয়সেই ১৬৮২ সালে রাশিয়ার জার সাম্রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন পিটার। কাগজে কলমে পিটার দ্যা গ্রেইট। তার নামেই রাশিয়ার শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গ। কিন্তু, ফিনল্যান্ড উপসাগরের পূর্ব উপকূলে, নেভা নদীর তীরে, যেখানটাতে পিটার শহর গড়ে তোলার জন্য মনস্থির করেছেন, সেখানটাতে পণ্যবাহী জাহাজ এসে ভীড়ার কোনো উপায় ছিলো না। কারণ, নিকটবর্তী অগভীর সমুদ্র জাহাজ চলাচলের জন্য অনুপযোগী। জাহাজ নেইতো বাণিজ্যও নেই! বাণিজ্য না থাকলে সে আবার শহর কিসের!! কি উপায়, কি উপায়!
উপায় একটা আছে। সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকে বিশ মাইল দূরেই ফিনল্যান্ড উপসাগরেই আছে কটলিন আইল্যান্ড। সেখানে একটা বন্দর বানালেইতো হয়। জাহাজগুলো এসে সেখানেই নোঙ্গর ফেলবে। বস্তুত, কটলিন আইল্যান্ড থেকেই ফিনল্যান্ড উপসাগরের শুরু, তার আগের অগভীর অংশ নেভা নদীর অববাহিকা। কিন্তু, এখানেও আছে আরেক সমস্যা। কটলিন আইল্যান্ড যে সুইডেনের দখলে। এবার কি হবে! কি আর হবে, "জোর যার, রাজ্য তার" সূত্রের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে দখল হয়ে গেলো কটলিন আইল্যান্ড। আর তারই সাথে হয়ে গেলো বিশ্ববিখ্যাত শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গের গোড়াপত্তন।
সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরের অদূরের এই কটলিন আইল্যান্ড দিয়েই পিটার যাত্রা করতেন ইউরোপের উদ্দেশ্যে, ফিরেও আসতেন একই পথে। শুধু তাই নয়, শীতকালে বরফে আচ্ছাদিত থাকে বলে, পরবর্তীতে পিটার এই জায়গাটিকে নির্বাচিত করলেন অন্ততপক্ষে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য। কিন্তু, তাই বলেতো আর এক দ্বীপাঞ্চলের জাহাজঘাটায় গিয়ে তিনি অবকাশ যাপন করতে পারেন না।
তাই, অবকাশ যাপনের জন্য ঠিক সেইন্ট পিটার্সবার্গ আর কটলিন আইল্যান্ডের মাঝামাঝি এক জায়গায়, মূল ভূখণ্ডেই পিটার নির্মাণ শুরু করলেন এক সুরম্য প্রাসাদের; যেখান থেকে এক চোখ দিয়ে তিনি দেখতে পারবেন প্রিয় শহর পিটার্সবার্গ আর অন্য চোখে দিয়ে নজর রাখবেন কটলিন আইল্যান্ডের দিকে। নিজের আঁকা নকশায় তৈরী হওয়া সেই প্রাসাদের নাম পিটার রেখেছিলেন "আনন্দ নিকেতন" (Monplaisir/my pleasure) , কাগজে কলমে পরিচিত পিটারহফ প্যালেস নামে।
সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকে পিটারহফ প্যালেসে যাওয়ার জন্য উপস্থিত হলাম টিকিট কাউন্টারে। নদী পথে যাত্রা। টিকিট কাটা এখানে মহাসমস্যা। ইংরেজীতে এখানে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে, রাশিয়ান ভাষায় মিনিটের পর মিনিট ধরে কি যেন বলে যায়। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, সে যে এক লাইন ও বুঝতে পারছে না, সে ব্যাপারে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তবে, আমাকে সে সমস্যায় পড়তে হয়নি। সাথে আছে মীম (ব্লগার তাওসীফ হামীম)। সে বাংলার মত করে রাশিয়ান বলে। রাশিয়ান ভাষায় থাকা তার দক্ষতার কল্যাণে, নির্ভেজালে টিকিট কেটে শুরু হলো পিটারহফ প্যালেসের উদ্দেশ্যে যাত্রা। নেভা নদীর উপর দিয়ে বয়ে চললো জলযান।
খানিক পরেই শহরের কোলাহল ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম উপসাগরে। তারপর সৌন্দর্য দেখার পালা। রাশি রাশি সৌন্দর্য। ফিনল্যান্ড উপসাগরে দ্রুতগতিতে চলমান জলযানে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম খুব নীচ দিয়ে ভেসে চলা মেঘ। মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। সে-রকম এক মেঘমালার দিকে তাকিয়ে আরো একবার বুঝতে পারলাম, পৃথীবির প্রতিটি কানায় কানায় ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য। না-জানি, আরো কত কত পথ, কত কত প্রান্তর অচেনাই থেকে যাবে, অদেখাই থেকে যাবে। মেঘতো জীবনে কম দেখা হলো না, তবু কেন জানি, ফিনল্যান্ড উপসাগরের উপর দিয়ে ভেসে চলা এই মেঘদল, তাদের অপার সৌন্দর্য দিয়ে একেবারেই মাতাল করে দিলো।
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট যাত্রার পর গিয়ে পৌঁছালাম পিটারহফ প্যালেসে। ভিতরে গিয়ে বুঝতে বাকী থাকলো না, কেন পিটারহফ প্যালেসকে বলা হয় “রাশিয়ান ভার্সাই”। চমৎকার করে গোছানো প্রাসাদ প্রাঙ্গণ।
শুধু প্রাসাদ আর তার সন্মুখভাগ নয়, বরং চতুর্দিকে যতদূর সম্ভব হয়েছে ছবির মত করে সাজানো। বাগানে বাগানে নান ধরণের গাছ, ফুল আর মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে ভাস্কর্য। ।
অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের কত পরিবর্তন করে দেখলাম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম কত ছুটোছুটি করে দেখলাম; তবু, একটা জিনিসের পরিবর্তন দেখিনি কখনোই। যেখানেই যাই না কেন, নিজ অবস্থানের যত পরিবর্তনই আনি না কেন, পরিবর্তন হয় সেই জিনিসের। পরিবর্তন হয় না আমাদের অপরূপ এই পৃথিবীর রূপ। অনির্বচনীয় সুন্দর তার প্রতিটি ধূলিকণা, অনিন্দ্য বাহারী তার প্রতিটি জলকণা। অক্ষত হয়ে, মহাকালব্যাপী টিকে থাকুক, অফুরন্ত সৌন্দর্যের আধার, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের একমাত্র বাসস্থান, আমাদের একমাত্র বাড়ী- রূপসী এই পৃথিবী।
এই সিরিজের বাকী পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
অন্যান্য সব লেখা
মইনুল রাজু
ফেইসবুক
মন্তব্য
ছবিগুলো অসাধারন হয়েছে, সাথে বর্ননা।
এই প্রমান অবশ্য অকাট্য নয়, ইন্টারনেট থেকে ছবি নিয়ে ফটোসপে সহজেই ইনসার্ট করে দেয়া যায় । যদি সত্যি সত্যি প্রমান করতে চান, তাহলে আমাদের কাউকে স্বাক্ষী হিসেবে সাথে নিতে হবে(অবশ্যই আনুসঙ্গিক সকল খরচ আপনি নির্বাহ করবেন, এই শর্তে)।
ফটোশপ করেতো আপনাকে সাথেও নিয়ে যাওয়া যাবে। আপনার ছবি পাশে জোড়া দিয়ে বলবো এই যে স্বাক্ষী।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
হ্যাঁ সেটাও করতে পারেন, তাতে খরচও অনেক কম হবে ।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
আমিও একবার ভেবেছিলাম ফটুশপ নাকি ।।।
এত সুন্দর ছবি দেখে মনটাই জানি কেমন হয়ে গেল।
-ছায়াবৃত্ত
ধন্যবাদ। আমার প্যালেসের চেয়েও বোট-এ করে আসার সময় অন্য রকম সুন্দর লেগেছিলো। মেঘ দেখেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
সত্যিই কী এমন জায়গা আছে নাকি সবই ফটোসপ ! অপরূপ সৌন্দর্য।
আসলেও অপরূপ। আমি সময়ের স্বল্পতার কারণে সবকিছুর ছবি তুলতেও পারিনি।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
চমৎকার হইছে, আর ছবি নাই ?
- আরাফ করিম
আরো ছবি আছে। সেগুলোও হয়তো কোথাও কখনো দেব। ধন্যবাদ আপনাকে।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
আগের মতোই ধারাবাহিক অসহ্য সব সুন্দর ছবি হয়েছে
তবে এতো সুন্দর দৃশ্যবলীর বর্ণনাটা খুবি ছোট মনে হলো,আরেকটু দীর্ঘ করলে বোধহয় পরিপূর্ণ তৃপ্ত হতাম।কল্পনায় সবে মাত্র আমি ও ঢুকেছিলাম পিটারহফ প্যালেসে আর ওমনি শেস করে দিলেন এটা হইলো কিছু
পরের লেখা আরো দীর্ঘ হবে সেই আশা রাখি।আপনি আর অণুদা দুইজনে ষড়যন্ত্র করে আমাদের কে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য দেখনোর পনে নেমেছেন সেটা বুঝি।লোভটাও বাড়িয়ে দিচ্ছেন,একদিন নিশ্চয় আমরাও হুম এমন ঘুরে ঘুরে সৌন্দর্যকে ক্যামেরা বন্ধী করে সচলে এসে সেই গল্প আর ছবি লিখে দিবো।
(বি দ্র: থ্রি জি আসতেছে এই ঠ্যালায় ২ঘন্টা অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ৫-৬ চেষ্টার পর মন্তব্য করতে সফল হয়ে গেলাম,এই সুখ কোথায় রাখি?)
মাসুদ সজীব
ব্যক্তিগতভাবে আমি ইনডোর এর চেয়ে আউটডোর বেশি পছন্দ করি। তাই, মিউজিয়াম কিংবা রাজাধিরাজের খাসকামরা আমরা পছন্দের তালিকায় পরের দিকে থাকে। প্যালেসের ভিতরে ঢুকি নাই। তাই সেটার বিস্তারিত লিখতে পারলাম না।ইতিহাস আর ন্যাচারাল/আউটডোর বিউটি আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, সেটা নিয়ে খানিকটা লিখেছি কিন্তু।
তবে, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, প্যালেসের কথা শুরু করতে না করতেই একেবারে দুই লাইনেই শেষ করে দিয়েছি। ভেবেছিলাম ছবি দিয়েই সেটা যতদূর কাভার করা যায়, তাই করি। নেক্সট টাইম আরেকটু বাড়িয়ে লিখবো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
কী সুন্দর, কী সুন্দর!!
____________________________
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
নীল রংগুলো সেইরকম আসছে! একেবারে Ultramarine ব্লু!
পোস্ট ভাল্লাগ্লো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ। অনেক দিন হয়ে গেলো, আপনি এবার লেখা ছাড়েন তাড়াতাড়ি।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
দারুণ ফটোশপ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমার কম্পিউটারে ফডুশপ নাই। আপনি লোক ভালো না।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ছবিগুলো দেখেতো মনে হচ্ছিল নিজেই বোধহয় চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছি.......দারুন তুলেছেন- দিনের আলোয় মনে হচ্ছে সব অসম্ভব রকমের উজ্জ্বল।
পিটার মহাশয় বেচে থাকলে প্রাসাদের এই অনিন্দ্য সুন্দর চেহারা দেখে মনে হয় নাচানাচি করতেন
পিটার মহাশয় বিশাল এক ডাকাত। ১২০০ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলাইসে। সৌন্দর্য সে কতটুকু বুঝতো, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এই সব প্যালেস তারা বানাতো ভাব দেখানোর জন্য।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
ভাব দেখানোর জন্য বানাতো এটাও যেমন সত্য, আমার মনে হয় তাদের কেউ কেউ সুন্দরের পূজারীও ছিল বৈকি!! তাজমহলটা কেমনে হইল তাইলে বলেন দেখি?
তাছাড়া সেরা স্থাপত্যগুলোর পিছনে মাঝেমাঝেই করুন কাহিনি খুজে পাওয়া যায়.....তাজমহলের ক্ষেত্রে যেমনটা শোনা যায়!!
বিউটি এন্ড দ্যা বিস্ট এর মত ব্যাপার। মানুষের মাঝেই বিউটি আর বিস্ট একসাথে বিরাজ করে।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
নতুন মন্তব্য করুন