এই লজ্জা কোথায় রাখি?

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৪/২০০৯ - ৭:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধুসর গোধুলি মহাশয়ের খায়েশ মোতাবেক মাথার মধ্যে বিশাল বক্ষা স্বর্ণকেশী আর্জেইন্টাইন ললনার কাহিনী প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম। লিখতে বসব এমন সময় হঠাৎ কি মনে হওয়ায় ঢাকায় ফোন করলাম। মায়ের সাথে মজা করে আড্ডা দিতে দিতে জানতে চাইলাম বাবা কই, মা বলল..." আছে বাসায়ই, তোর চাচার সাথে কথা বলতেছে।" আমি জানতে চাইলাম কোন চাচা ( খোদার মর্জিতে আমার চাচা-মামার অভাব নাই, মায়ের কাজিনই আছে গোটা তিরিশেক)। মা বলল " তোর শাহজাহান চাচা ( বাবার চাচাত ভাই), দুই ভাইয়ে সকাল থেকে কি পটর পটর শুরু করছে আর থামেনা, খালি দ্যাশ , রাজনীতি , আর পুরান কথা নিয়া ভগর ভগর আর চা বানাইতে বাইনাইতে আমার জান শ্যাষ। কথা বলবি তোর বাবার সাথে?"

আমি বললাম " বাবার সাথে কথা একটু পরে বলি, এখন চাচারে ডাকো।"

“হ্যালো মামুন কেমন আছো বাবা?"...চাচা খুব আন্তরিকভাবে জানতে চাইলেন।

“আছি ভালোই, আপনে এই তুমি তুমি করে বলা কবে থেকে শুরু করলেন?"

“আরে বাবারা তোমরা এখন কত বড় হইয়া গেছ, লেখা পড়া শিখছ, দেশ বিদেশ ঘুর , এখন আর মুখে আর তুই তোকারি আসেনা।"-চাচা বলেন।

“ছাই শিখছি, কাজের জিনিষ তো আপনে শিখাইছেন, আপনার কাছে সাতার দেয়া শিখছি, গল্প শুনছেন না যে সাতার না জানলে জীবনের ষোল আনাই বৃথা?"
আমরা সব ভাই বোনেরাই এই চাচার কাছে সাতার শিখেছি। তার শেখানোর পদ্ধতিটা ছিল খুবই উদ্ভট আর আশ্চর্য রকমের কার্যকরী। গ্রামের বাড়ীর সামনেই ছোট্ট খাল (এককালের প্রমত্ত নদী), উনি কোন পুলাপাইনের বয়স তিন বছর হইলেই হাতে ধরে সেই খালের পারে নিয়ে যেতেন , আর নিয়ে বলা নেই কওয়া নেই একবারে ছুড়ে খালের মাঝে ফেলে দিতেন। আর আমরা জান বাচানোর স্বার্থে পানি খেতে খেতে অতি দ্রুত সাতার শিখে ফেলতাম। যদি কোন দুর্বল বালক বা বালিকা বেশীমাত্রায় পানি পান করিয়া জীবন যুদ্ধে পরাজিত হইবার মত পর্যায়ে চলিয়া যাইত তাহলে চাচা কমান্ডো স্টাইলে ঝাপাইয়া পড়িয়া উহাকে উদ্ধার করিয়া হেলা ভরে বাড়ীর পথে রওয়ানা করাইয়া দিতেন। বলা বাহুল্য শীশু সমাজে ভুলিন্ঠিত মান সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সেই পরাজিত নাদান বালক বা বালিকা নিজ গরজেই পরের দিন চাচার ফ্রী ট্রেনিং এ হাজির হইয়া যাইত।

চাচা হো হো করে প্রানখুলে বললেন " তোর এই ভাড়ামীর স্বভাব এখনো গেলনা। তোর জন্মের পরেই ভাবীরে কইছিলাম পোলা এখনই যেই জোরে চিক্কুর দেয় বড় হইয়া সবার মাথা পাগল কইরা দিব।"

চাচার মুখে তুই শুনে খুব ভালো লাগল। আমি তার শরীরের কথা , ফ্যামিলির বাকীরা কে কেমন আছে জানতে চাইলাম। সবশেষে সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম তার পায়ের কথা। " আছে আর কি"...এড়িয়ে যাওয়া ভংগীতে চাচা জবাব দিলেন। এই বিষয়ে উনি কখনই বেশী ক থা বলতে চাননা। হাজার খোচা খুচিতেও না।

কেন যেন আলাপ আর জমল না, চাচা ফোন রেখে আবার বাবার সাথে আড্ডা দিতে গেলেন।

ছোট বেলা থেকেই জানতাম এই চাচা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন । আমাদের বিশাল পরিবারে মুক্তিযোদ্ধার অভাব নেই, বাবা ৬৬ সাল থেকেই স্থানীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন ( মুক্তিযুদ্ধের পুরা সময়টাই জংগলে লুকিয়ে প্রচার চালিয়ে গেছেন), মেঝ চাচা পাক আর্মির হয়ে বাংগালী নিধনে রাজী না হওয়ায় সাড়ে পাঁচ বছর নাপাক পাকিস্তানের জেলে দুঃসহ জীবন কাটিয়েছেন ( পরে বন্দী বিনিময়ের আওতায় তার মুক্তি মেলে পঁচাত্তর সালে)। আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় হয়েছি। একাত্তর সালে জন্ম হওয়া বড় ভাইয়ের নামও মা রেখেছেন স্বাধীন। তো মুক্তিযোদ্ধা চাচা আর নতুন কি? শাহজাহান চাচাকে তেমন একটা বিশেষ পাত্তা কোন কালেই দেয়া হয়নি , তার উপর উনি একটু ডাকা বুকো ধরনের ছিলেন। হুট হাট মুখ খারাপ,মেজাজ খারাপ করে বসতেন। মাইর‌্যা ফালামু, কাইট্টা ফালামু টাইপের টেম্পার। তার প্রিয় হুমকি ছিল " গলায় গামছা দিয়া গাংগের পারে টাইন্যা নিয়া কাচি দিয়া জবাই কইর‌্যা দিনের বেলায় খাজুর গাছে উপরে ঠ্যাং আর নীচে মাথা দিয়া ঝুলাইয়া রাখমু।"

এ হুমকির বাস্তবায়ন কখনই ঘটেনি, তবে বাড়ির মা-বউদের মুখ টিপে অনেক হাসিয়েছে। একবার আমার বাবার সাথেও সম্পত্তির ভাগ বাটোঁয়ারা নিয়ে তার বিশাল ঝগড়া লেগে গেল, বাবাকেও উনি একই হুমকি দিলেন, পরে আমার মায়ের মধ্যস্ততায় দুই ভাই নিজেদের মধ্যে মিল মিশ করে বাড়ীর উঠানে গলা গলি দিয়ে কাঁদলেন। বাড়ীর মেয়েরা নিজেদের মধ্যে হাসা হাসির করার নতুন কিছু উপাদান পেল।

তার পর অনেকদিন কেটে গেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে সখ্যতা আরো বেড়েছে, সমবয়সী হওয়ার কারনে তাদের মাঝে আড্ডাও ভালো জমে।

আমার বাবার খুব গাছ লাগানোর শখ। আমার দাদারো নাকি তাই ছিল। বাড়ির আশে পাশে, রাস্তার পারে উনি গত এক যুগে প্রায় হাজার দশেক চারা রোপন করেছেন। পরিবেশ বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে ওনার খুব একটা মাথা ব্যথা নেই , তবে চারা গুলোকে সন্তানের স্নেহে লালন-পালন করেন। ফোন করলেই ওনার গাছের গল্প, কোথায় কি ঔষধী গাছের কথা শুনেছেন তা আনতে শাহজাহানকে নিয়া যাবেন, আর আমরা ভাবি দুই ভাইয়ে বিনা বাধায় ম্যারাথন আড্ডা মারার ফন্দী।

সিডরে আমার বাবার এত শখের গাছের প্রায় বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেল। আমরা অনেক সান্তনা দেই কিছুতেই কাজ হয়না, বাবার গলা নির্জীব ই থেকে যায়। সিডরের কথা জেনে দেশ বিদেশ থেকে অনেকেই ফোন করে, ই-মেইল করে সহানুভূতি জানায় , জানতে চায় আমার পরিবারের সবাই ভালো আছে কি না ইত্যাদি। আমিও সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে দায় সারা গোছের উত্তর দেই। বাবার মন খারাপের কারনে আমারো মন খারাপ, কিন্তু মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি কম থাকায় বাবার মন ভালো করার কোন রাস্তা বের করতে পারলাম না।

ধুসর গোধুলি ভাই যেমন ভরসা দিলেন , ল্যাখতে থাকেন নাম যোগাইবো ভুতে, তেমনই বাবার মন ভালো করার অতি সহজ বুদ্ধিটা যোগালেন আমার খালা শাশুড়ী। আমার বউয়ের বাপের আদি বাড়ী হইল স্কটল্যান্ড আর বর্তমান নিবাস অস্ট্রেলিয়া।

হউড় মহাশয়ের পুর্ব পুরুষেরা রুটি চুরি কইরা ধরা খাইয়া কালাপানির শাস্তি ভোগ করতে অস্ট্রেলিয়া গিয়া সেই দেশেই জোর পুর্বক নিজেদের অধিষ্ঠিত করিয়াছিলেন...কি বলতে কি বলা শুরু করলাম, আপনেরাও যে কি ধমক দিয়া থামান ও না।

যাই হোক আমার ইন ল'দের মুহুর্মুহু অনুরোধে চান্দা তুলিয়া বাবার বেবাক গাছ পুনরায় লাগাইয়া দিতে মনস্থ করিলাম। সেই বার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন সবাই ক্রীস মাসের গিফট এক্সচেঞ্জ না করে বাংলাদেশে বৃক্ষ রোপনের মহতী উদ্দেশ্যে চান্দা দিল। এক সুমুন্দি ( হি থিঙ্কস হি ইজ আ রক স্টার) নাচিয়া কুদিয়া লাইভ মিউজিক পরিবেশন করিয়া এক রাত্রিতেই প্রায় চোদ্দশ অস্ট্রেলিয়ান ডলার তুলে ফেলল। অস্ট্রেলিয়ানরা আসলেই প্রকৃতিপ্রেমী। টুক টাক করে ভালোই টাকা উঠে গেল , হিসাব করে দেখলাম বাবাকে প্রায় হাজার বিশেক চারা কিনে দেয়া যাবে। লাফাইতে লাফাইতে গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে দেশে চলে গেলাম। সঙ্গে বিলাতী আত্নীয় স্বজনের বাবার প্রতি লেখা বিভিন্ন ধরনের উৎসাহ ব্যঞ্জক চিঠি আর কার্ড। বাবা কখনই অন্যের সাহায্য নিতে চান না, টাকা পয়সা তো দুরের কথা। মায়ের সহযোগীতায় হাতে পায়ে ধরে তারে রাজী করালাম। তার পর পুরো পরিবার নিয়ে প্রায় আঠারো বছর পরে গ্রামের বাড়ী চলে গেলাম। গ্রাম খুব একটা বদলায়নি , মানুষ কিছুটা বদলেছে। গ্রামের ছেলে পেলেরা কলা গাছ দিয়ে গেট বানিয়ে ইংরেজীতে ওয়েল কাম লিখে আমাদের স্বাগতম জানালো। মনটা জুড়িয়ে গেল তাদের আন্তরিকতায়।

বাবা তার পেয়ারের দোস্ত শাহজাহানকে ছাড়া কিছু করবেন না , তাই তাকেই দেয়া হল চারা বেছে কেনার দায়ীত্ব। যত আশা করেছিলাম তত চারা মিললনা , যা পাওয়া গেল তা নিয়েই বাবা খুব সোরগোল করে কাজে নেমে গেলেন। দিন মজুরদের সাথে বাবার যেমন সখ্যতা , চাচার তেমনই দুরত্ব , তার হাতে চড় চাপড় খেয়ে সবাই তার থেকে দূরে থাকে। বাবা তাদের সাথে মিলে চারা লাগাতে লাগাতে মনের সুখে আকিজ বিড়ি টানতে লাগলেন , আর আমি না দেখার ভান করে চাচাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বের হলাম। ঘন্টা খানেকের মধ্যে চাচার কথায় মনটা বিষিয়ে গেল। তার মুখে মানুষের বদনাম ছাড়া আর কোন কথা নেই, কোন এক অজ্ঞাত কারনে সারা দুনিয়ার প্রতিই তিনি নির্মম ভাবে বীতশ্রদ্ধ। তাকে একবার অনুরোধ করে বললাম, চাচা দুই একটা ভালো কথা বলেন , দুনিয়ার সবাই তো খারাপ না, তিনি ঝাঝিয়ে উঠে বললেন, "তোদের দুনিয়ায় ভালো মানুষ থাকতে পারে এই দেশে সব চুতিয়া , কোন হক বিচার আছে এই দেশে?" কি প্রসঙ্গে কি বললেন কিছুই বুঝলাম না। মনে মনে ভাবলাম গল্পে উপন্যাসে পড়া কোন তিক্ত বিক্ষুব্ধ বৃদ্ধলোকের পাল্লায় এসে পড়েছি। আমি তাকে ঠান্ডা মাথায় সমস্যা সমাধানের খুবই কার্যকর কিছু পদ্ধতি বাতলাইলাম। তিনি শুনে বললেন, " তোর চিন্তা ভাবনা ভালো , কিন্তু যেই দেশে কোন ন্যায় বিচার নাই সেই দেশে মাথা ঠান্ডা করে চলা খুব মুশকিল।" উনি বিস্তারিত কিছু বললেন না আর আমিও ওনার মনের খেদ সম্পর্কে অন্ধকারে রয়ে গেলাম।

পরদিন সকালে চাচা এসে বললেন , " আমার একটা কাজ করে দিবি? একটু ঠেইকা গেছি"

আমি না জেনেই মাথা কাৎ করলাম।

“চল আজকে থানা সদরে যাবো, যাইতে যাইতে তোরে কাজের কথাটা বলব।"

ভ্যানে উঠে দু'জন যাত্রা শুরু করলাম। যেতে যেতেই জানলাম যে আমরা যাচ্ছি থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে, অত্র অঞ্চলের সব মামলা-মোকাদ্দমা , বিচার-শালিস তার অঙ্গুলীর ইশারায় ডানে-বামে টার্ন নেয়। রাজাকারদের আস্ফালনের এই কলিযুগে বীর মুক্তিযোদ্ধার এই প্রবল প্রতাপের কথা শুনিয়া আমার বক্ষদেশ ইঞ্চি ছয়েক ফুলিয়া গেল। জায়গা- সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে কারা যেন চাচার নামে শত্রুতা মূলক মামলা করেছে, সেই মামলা প্রত্যাহার করাতে হলে কমান্ডার সাহেবের হুকুম চাই।

"তো আমাকে এখানে কি করতে হ বে?" ... সরল মনে জানতে চাইলাম।

উনি যা বললেন শুনে মেজাজটা একেবারেই চড়ে গেল। কমান্ডার সাহেবের বউ-বাচ্চা সব অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আমার কথা নাকি লোক মুখে শুনেছেন, এখন আমি তার কাছে তদবির নিয়ে গেলে অজি মাটির টানে কাজটা হুড়মুড়িয়ে হয়ে যাবে। চাচা তার নিজের স্বার্থে আমাকে এভাবে ব্যবহার করছেন? মনটা একদম তেতো হয়ে গেল। যাই হোক কথা যখন দিয়েছি তখন ওনাকে হেল্প করার চেষ্টা করব , আর এর পরে আমি আর ওনার ধারে কাছে নাই , মনে মনে আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

কমান্ডারের বাড়ির কাছে এ সে চাচা বললেন " তুমি ভিতরে যাও , আমি ঐ চায়ের দোকানে গিয়ে বসি , কথা শেষ হলে আমাকে ওখানে পাবে। তোমার কথা বলা আছে, কোন অসুবিধা হবেনা।"

তারপর আমার বিস্মিত চোখের দিকে তাকিয়ে যোগ ক র লেন , " আমি ভিতরে যাবো না, কারন আছে, তোমাকে যাওয়ার পথে বলব।"

আমি আর কোন কথা না বলে একাই বাড়ীর ভেতরে চলে গেলাম। চ মৎকার ছিম ছাম বাড়ী, ভদ্রলোকের রুচি আছে , বাইরে দু'টা গাড়ীও দেখলাম। কমান্ডার সাহেব কে ভালোই লাগল। কলা খাওয়ালেন, চা -মুড়ি খাওয়ালেন। অস্ট্রেলিয়ায় কুইন্সল্যান্ডের গোল্ড কোস্টে একবার ক্যাসিনোতে কি ঝামেলায় পড়েছিলেন তার গল্প করলেন। শুধু গল্পই না যে তদবীরে এসেছি সেই কাজ ও করে দিলেন, থানার ওসি কে আমার সামনেই ফোনে বললেন " আরে আমার এক অস্ট্রেলিয়ান ভাইস্তা আসছে( কথাটা আমার একটুও পছন্দ হলনা), তার কামটা একটু কষ্ট করে তাড়াতাড়ি করে দিয়েন, যেই মামলার কথা বলছে তা আজকে থেকে অফ , মনে থাকবো?" তার কথামত ওসি ঐ দিনই মামলাটা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করলেন, হাজার হইলেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলে কথা!

তার পর উনি আমাকে নিয়ে হাটতে হাটতে নদীর পাড়ে গেলেন, বিনা ভনিতাতেই বললেন, " তোমার চাচা শাহজাহান , মানুষ খারাপ না , কিন্তু মাথায় একদম বুদ্ধি শুদ্ধি নাই। খালি আবেগে ছাগলের মত ম্যাতাইলে কি জীবন চলে? "

আমি অমত পোষন করার কোন কারন খুজে পেলাম না। উনি আমাকে নদীর উপর নির্মানাধীন একটা ব্রীজ দেখিয়ে বললেন , " এইটা করতে গিয়া আমার পুরা এক কোটি টাকা লস , কিন্তু কি করব, এলাকার মানুষকে কথা দিছি , নিজের পকেট থেকে টাকা ভইরা হইলেও , এই বছরেই ব্রীজ বানাইয়া দিব।"

তার মহতী প্রানের প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মন নুয়ে আসে। আমি তার পদধুলি নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে বিদায় নেই।
ফেরার পথে চাচা খুব চুপ চাপ। নীরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম .." কমান্ডার সাহেব তো একেবারে ফেরেশ্তা মানুষ। নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে ব্রীজ করে দিচ্ছেন।"
তার পর ইঙ্গিতপুর্ন স্বরে যোগ করলাম , " সব মুক্তিযোদ্ধা যদি ওনার মত করিৎকর্মা হইত ! "

আমার কথায় চাচা বিষ ঢালা গলায় বললেন, " ঐ শালার বেটার কথা আমার সামনে বল বিনা।"

এই মাত্রা তার পাছার চামড়া বাচালেন যে মহামানব তার প্রতি চাচার কৃতঘ্নতা দেখে আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেল। হিস হিসিয়ে বললাম...

" দ্যাখেন চাচা মিয়া সারাদিন দুনিয়ার সব মানুষের প্রতি আপনের গীবত শুনে আসছি, কিছু বলি নাই , কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের প্রতি আপনের এমন অসম্মানজনক কথা বার্তা মানতে পারবনা। ভ্যান থামান , আমি এখান থেকেই হেটেই বাড়ী যাব।"

ভ্যান থামল, কিন্তু চাচার ভ্যাজর ভ্যাজর ( তখন তাই মনে হয়েছিল) থামলনা।

উনি এবার কন্ঠে হেমলক বিষ ঢেলে চড়া সুরে বলতে লাগলেন-

"কিসের মুক্তিযুদ্ধ করছে ঐ শালায়? যুদ্ধের পুরা সময়টাই সে ভোলায় তার শ্বশুর বাড়ীতে লুকাইয়া আছিল। আগরতলা থিকা ট্রেনিং নিয়া আইস্যা সিলেটে যুদ্ধ করছি। তেলিয়াপাড়ার যুদ্ধে আমার পায়ে গুলি লাগে। পুরা নয়দিন সিলেটের জংগলে সাপ-খোপ খাইয়া জান বাচাইছি। মা-বাপের দোয়া সংগে থাকায় পাওটা বাইচ্যা গেছে। যুদ্ধের বহুবছর পরে ঐ হারামজাদা ঘুষ দিয়া মুক্তিযোদ্ধার ছাট্টিফিকেট বাইর করছে, আর গতবার বি এন পির আমলে পার্টিরে টাকা দিয়া কমান্ডারের পোস্ট কিন্যা নিছে। আমরা দ্যাশের লাইগ্যা যুদ্ধে গেছি , ছাট্টিফিকেটের জন্য না। কিন্তু গতবার আমি মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য গেলে আমারে কয় কমান্ডারের কাছ থিকা সনদপত্র আনতে হইব , পায়ে গুল্লির দাগ দেখাইলাম, কোন কাম হয় নাই।

আর এই শুওরের বাচ্চায় মাইনষের কাছে কয় নিজের পকেট থিকা টাকা দিয়া ব্রীজ বানাইতেছে, মউতের সময় অর মুখে আল্লায় যেন কলেমা না আনায়। সরকার বরাদ্দ করছে সাড়ে তিন কুটি টাকা, চাইর টা পিলার বানাইয়াই কয় ফান্ড শ্যাষ, তুই ই ক চাইর টা পিলার বানাইতে কি তিন কুটি টেকা লাগে? এলাকার সব কন্টাকের কাম তার হাতে , প্রত্যেক মামলা আর শালিসে তারে টাকা দিতে হয়। তার আয় মাসে দশ লাখ আর আমি অভাবের কারনে বড় পোলারে স্কুল থিকা ছাড়াইয়া ধার কর্য কইরা পাঠাইছি সৌদি আরবে। সে ঐ দেশে আগুনের মত গরমে রাস্তা ঝাড়ু দেয়।“
আমি আর কোন কথা না বলে ভ্যানে উঠে বসলাম। লজ্জায় তার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, মুখে কোন কথা আসছিলনা। এক বার ভাবলাম চাচার গুলির ক্ষতটা একটু ছুয়ে দেখি, কিন্তু সাহস করতে পারলাম না, যেই হাতে এক ক্ষমতাধর মহা বাটপারের পদ ধুলি নিয়ে আসছি সেই নাপাক হাত চাচার পায়ে কেমনে লাগাই?

খোদার দয়ায় ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে আসল, হৃদয় ভাংগা এক নীরবতার মধ্য দিয়ে ক্যাচ কোচ আওয়াজ করে ভ্যান চলতে লাগল। ভ্যানওয়ালার এসব বিষয়ে কোন আগ্রহ বা মতামত নাই, তাকে বাড়ী যেতে হবে রাত ঘনাবার আগেই, বাড়ীতে তার বৃদ্ধা মা, বউ আর ছোট ছোট তিনটা বাচ্চা অপেক্ষায় আছে সদায় নিয়ে তার ফেরার। আবছা অন্ধকারের মধ্যে আমি একবার সাহস করে চাচার মুখের দিকে তাকালাম, না তার চোখে টল টল করা অশ্রু দেখিনি, রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করার পরবর্তী সাইত্রিশ বছরের অমানবিক জুলুম আর আর অত্যাচারে তার চোখের পানি শুকিয়ে সেখানে ধু ধু মরুভূমি হয়ে গেছে। শহীদের রক্তে ভেজা ( কোন আবেগী কথা না লিটারেলি সোকড ইন ব্লাড) এই দেশের মাটিকে চোখের নোনা জ্বলে ভাসিয়ে দিলেও তাতে তার উর্বরতা বাড়বে না, কোমলতা ফেরাতে হলে এই মাটিকে আবার খাটি বক্তে ভেজাতে হবে। কিন্তু রক্ত দিবে কে? সারা দেশের ব্লাড ব্যাংক মিলেও তো এত পরিমান শুদ্ধ রক্ত পাওয়া যাবেনা। আচ্ছা টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখা যায়না? জরুরী ভিত্তিতে একটি দেশের প্রান বাচাতে রক্ত প্রয়োজন--সহৃদয় ব্যক্তিরা এগিয়ে আসুন।
আমার দিকে তাকাইয়েন না, আমার শরীর চিংড়ি মাছের মত, উহাতে কোন গ্রুপের রক্তই নাই ।


মন্তব্য

মামুন হক এর ছবি

কিরে ভাই আমার লেখার আগা মাথা সব গেলো কই?

হিমু এর ছবি

প্রত্যেক প্যারার পর একবার করে এন্টার মারবেন। তা না হলে গোটা লেখাটা একটা প্যারা হিসেবে আসে, তখন আর দেখা যায় না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

বিপ্লব রহমান এর ছবি

একি! 'বিস্তারিত' ক্লিক করলে লেখা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে কেনো?? মন খারাপ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

স্নিগ্ধা এর ছবি

মামুন হক - কী বলবো জানি না ...... কখনও আপনার চাচা'র জন্য কিছু করার কোন প্ল্যান থাকলে দয়া করে জানাবেন। আমি আন্দোলন টন কিছু করতে পারি না, কোনরকম কিছু মবিলাইজ করা বা গড়ে তোলা আমার ক্ষমতার বাইরে - তবে কোনভাবে আমাদের দেশের এইসব মানুষগুলোকে একটুও কোনরকম সাহায্য করা গেলে - আছি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার কেন জানি এই অ্যাপ্রোচটা পছন্দ হয় না। মুক্তিযোদ্ধাদের 'সাহায্য' করার চাইতে অমুক্তিযোদ্ধা ভন্ডদের উৎখাত করাটা বেশি জরুরী। আসলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বাড়তি কোনো প্রতিদানও চায় না। যারা আর্থিক অসঙ্গতিতে আছে, তাদেরকে অন্যভাবে ট্রিট করা যেতে পারে, অসহায় শব্দটা মুক্তিযোদ্ধার সাথে ব্যবহার করতে আমার প্রেস্টিজে বাধে। যেমন ধরেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চাইতে সম্ভবত লেবাসী মুক্তিযোদ্ধাদেরই লাভ হয়েছে বেশি।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার কথা বা মনোভাব বুঝতে পারছি - কিন্তু, 'আমি স্নিগ্ধা' আমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে 'সাহায্য' হলে সাহায্য বা 'উৎখাত' হলে তাই-ই , মোট কথা কোনভাবে কোন কিছু করা হলে তাতে যোগ দিতে চাই। আমার নিজের 'সাহায্য' (ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছাড়া) বা উৎখাত কোনটার জন্যই কিছু গড়ে তোলার ক্ষমতা নেই - তাই আমি অন্যেরা সানাই বাজালে তাতে পোঁ ধরার জন্য পা বাড়িয়ে আছি হাসি

আর, আমি কিন্তু অসহায় বলি নি - তবে অবহেলিত তো বটেই!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

স্নিগ্ধাপু, আপনার অ্যাটিটিউড বুঝতে পেরেছি। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আগুনঝরা লেখা। রাগী লোকজন মানুষ হিসেবে ভালো হয়। মুক্তিযুদ্ধের দলীয়করণ আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে একভাবে, বিএনপি-জামাতের আমলে হয়েছে অন্যভাবে। এই পোস্ট পড়ে অনেকটা অনুভূতিশূন্য হয়ে গেলাম। জানা সমস্যার সমাধান অজানা থাকলে এরকম একটা অনুভূতিহীন অনুভূতি হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রানা মেহের এর ছবি

কী লিখলেন এসব?
ভালো লাগেনা
এসব পড়তে একদম ভালো লাগেনা
শুধু লজ্জ্বা লাগে
এই লজ্জা রাখার জায়গা নেই কোথাও
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাইফ এর ছবি

মামুন ভাই, আপনে তো আবার ও ঝড় তুললেন দেখি। আপনার লেখায় খুব ধার। দাগ রেখে যায়। ভন্ড মুকতিযুদ্ধের ভুয়া সনদ নিয়া নাটক তো আজ্কএ নতুন না। আর রাজাকার এর লাফানিতে তো দেশ এ থাকা দায়। আপনার পরব্রতি লেখার অপেখখায় থাকবো।

দৃশা এর ছবি

লগাইতে বড় আলসেমী লাগে, মাগার মাঝে মাঝে কিছু লেখা পড়লে মন চায় আলসেমী দূরে থুইয়া একটু লগাই।
আমার মন্তব্য করার মত কোন ভাষাও নাই, আবার কোন শরমও নাই, শরমগুলান জানি কই হাপিস হয়া গেছে।

আপনার আগের লেখাগুলাও বেশ ভাল লাগছিল পড়তে, বাট মাগার কিন্তু সেই আলসেমীর হাতে কঠিন বাঁন্ধা পড়ছিলাম। এই লেখা দেইখা পাপী মনের হাউশ হইল মন্তব্য করার। পাপমোচন তো হইল না, মাগার হাউশমোচন কইরা গেলাম।

দৃশা

মামুন হক এর ছবি

স্নিগ্ধা আপা চাচা এখন টাকা পয়সার দিক দিয়ে ভালোই আছেন, বড় ছেলে মাসে মাসে টাকা পাঠায়( আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সহৃদয়তার জন্য) । তবে অনেকটা বুড়িয়ে গেছেন, আমার বোনের কাছে শুনলাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাকি আর কোন কথাই বলতে চাননা। কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা ঘুরিয়ে অন্য প্রসংগে চলে যান। এই জিনিষটাই আমার কাছে খারাপ লাগে। আমরা ছোট বেলা থেকে কানের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আর খবরের আগে টিভিতে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে... গান শুনতে শুনতে দেশপ্রেমের বড়ি বুঝে না বুঝে গিলেছি, কিন্তু আমাদের বাপ চাচারা তো এত রকমের মিডিয়ার ক্যাচ ক্যাচানি শুনে সব ফেলে দেশের জন্য রক্ত দিতে ঝাপিয়ে পড়েন নি, উনারা নিঃস্বার্থ ভাবে সত্যিকার অর্থেই দেশকে বাচাতে এগিয়ে এসেছেন...ওনাদের দেশপ্রেমটাই আমার কাছে খাটি মনে হয়। আমাদের অনেকের কাছে খারাপ লাগলেও নিজেরা একটু কষ্ট করে খুজে দেখেন সারা দেশের আনাচে কানাচে এমন অনেক কাহিনী পাবেন। কষ্ট হলেও আমাদেরকেই এই অনাচারের সমাপ্তি টানতে হবে, এই দায়ীত্ব এখন আমাদের , অস্বীকার করার উপায় নেই। থ্রি নট থ্রি রাইফেল আর বুকের অদম্য সাহস দিয়ে যদি মুক্তিযোদ্ধারা যদি বিভীষন পাকি আর্মিকে নাস্তানাবুদ করতে পারে, তাহলে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে দেশ থেকে অনেক জঞ্জাল সাফ করা সম্ভব , মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করা আর তাদের মৃত্যুর আগেই রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে রাজাকারের কালো হাত সরানো সম্ভব বলে মনে করি।

মামুন হক এর ছবি

হিমু ভাই মনে থাকবে, নতুন মানুষ তো তাই ব্লগিং এর নিয়ম কানুন এখন ও ভালো ভাবে জানিনা। আপনার গাইডেন্সের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

কি বলবো বুঝছি না। অনেক কথা লিখবো ভেবেই শুরু করেছিলাম, কিন্তু মাঝপথে আবার লেখাটা পরে সব গিলে ফেলেছি।
ভাল লাগছে না কিছু।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

দুর্দান্ত এর ছবি

খুব ভাল লাগলো আপনার লেখা। পাঁচাইলাম।
আপনার চাচাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি কেবল ঐ মানুষটার মনোজগতের কাঁটার মাপটা বুঝতে চেষ্টা করছি। কীভাবে তাঁরা সবকিছুর পরও জীবনটা চালিয়ে যান, সেই চালিয়ে যাওয়ার শক্তিমান মোটরটার গর্জন শোনার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি পরাজয়ের তিতা স্বাদ আমৃত্যু মুখের টাকরায় বয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিশাপটাকে আঁচ করতে। ওরকম পরাজিত অহং থাকা না থাকার থেকে কষ্টকর।

অসাধারণ স্বচ্ছভাবে লিখেছেন মামুন। শুভকামনা রইল আপনার পরিবারের প্রতি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সচল জাহিদ এর ছবি

মামুন ভাই সকালে উইঠাই লেখাটা পড়লাম। অতিথি মানুষ তাই তারকা দেবার সাধ্য নাই, থাকলে ফাটাইয়া দিতাম। আপনার চাচার প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রইল পারলে আমাদের মন্তব্যগুলো তাকে একবার পইড়া শুনাইয়েন, তার মন ভাল হবে, কে জানে মুরুভূমির বুকে দু' এক ফোটা বর্ষনও হতে পারে তাতে কষ্টের পরিমানটা কমবে হয়ত।

-------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সিরাত এর ছবি

কি লেখা! খুব, খুব ভাল লাগলো মামুন ভাই। আহ, এরকম লেখা পড়ে কি যে একটা অনুভুতি হয়!

আর সাবজেক্ট ম্যাটার প্রসঙ্গে অন্যরা তো যা বলার বলেই দিয়েছেন।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

সচলায়তনে আপনাকে আগে কখনো দেখিনি। আপনি তো সচলায়তনেরই মানুষ। এতদিন দূরে ছিলেন কেন? কোথায় ছিলেন?

আমরা সকলেই আছি আপনার পরিবারের পাশে, যে পরিবার নিয়ে দেশ গর্ব করতে পারে।

সকলের জন্য শুভকামনা।

.......................................................................................
Simply joking around...

.......................................................................................
Simply joking around...

অনিকেত এর ছবি

মামুন ভাই,

অসাধারন লেখা বললে কম বলা হবে।
আপনার চাচার উদ্দেশ্যে আমার নতজানু শ্রদ্ধা।

এরকম লেখা আরো আসুক---
শুভেচ্ছা---

অর্জুন মান্না [অতিথি] এর ছবি

কিছু বলার নেই।

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখার জন্য অভিনন্দন.....!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দেশের স্বার্থেই রাজাকারদের সাথে সুযোগ সন্ধানী সার্টিফিকেট সর্বস্ব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উৎখাত করাটা ফরয হয়ে গেছে অনেক আগেই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

অনেকক্ষণ আগে পড়ে রেখেছি। কী লিখবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না।
পেলাম না এখনও।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সবজান্তা এর ছবি

আজকাল অসহায় লাগতে লাগতে কেমন যেন বোধহীন হয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে লজ্জা লাগে, ব্যক্তিগত সব চিন্তা কিংবা সমস্যার সমাধানে ক্রমশ এতোই মগ্ন হয়ে যাচ্ছি, মানুষের জন্য যে কিছু করা উচিত ক্রমশ সেই বোধ লুপ্ত হচ্ছে...


অলমিতি বিস্তারেণ

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার লেখা!

মামুন হক এর ছবি

এই মাত্র আম্মার সাথে আবার কথা হল। সেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ভাই গত নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। দুই ভাই মিলে এখন হরিলুট চালাবে বলে আশংকা করছি। আমার বাপ চাচাদের বয়স হয়ে গেছে তারা আর এসব নিয়ে কোন হাংগামায় যেতে চান না, কিন্তু আমার ইচ্ছে হচ্ছে রকেট লঞ্চার দিয়ে ঐ হারামীদের সব কিছু উড়িয়ে দেই।
মায়ের কাছে আরো শুনলাম আমাদের অঞ্চলে সত্যিকার যারা মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের অনেকেই দুঃস্থ অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন, কিন্তু কেউই সরকারী সাহায্যের লোভে হাত পাতেন না। আম্মাকে বলছি আমাকে একটা তালিকা বানিয়ে দিতে। আগামী রোজায় দেশে যাব , তখন গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে আসব আর যদি তারা দয়া করে গ্রহন করেন তাহলে তাদের চিকিৎসা, ছেলে-পেলেদের পড়াশুনা, বা যেভাবে তারা ভালো মনে করেন সেভাবে কিছু কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করব।
যদি আপ্নারা কেউ আমার সাথে যেতে চান তাহলে বলবেন , ঢাকায় এক সাথে মিট করে সবাই মিলে যাওয়া যাবে।
@আনিস ভাই, সচলায়তনেরই ছিলাম , আছি আর থাকব। ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার ( পড়ুন স্বার্থপরতা)কারনে তেমনভাবে অংশ নেয়া হয়নি। এখন থেকে নিয়মিত পাবেন।

স্নিগ্ধা এর ছবি

মায়ের কাছে আরো শুনলাম আমাদের অঞ্চলে সত্যিকার যারা মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের অনেকেই দুঃস্থ অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন, কিন্তু কেউই সরকারী সাহায্যের লোভে হাত পাতেন না। আম্মাকে বলছি আমাকে একটা তালিকা বানিয়ে দিতে।

মামুন হক - আমি কিন্তু আগের কথাটা সিরিয়াসলীই বলেছিলাম। সত্যি যদি এরকম কিছু একটা করা হয়, অনুগ্রহ করে আমাকে জানাবেন। আমার সীমিত সাধ্যে (বিনয় নয়, আসলেই ভাই আমি বড়লোক নই মন খারাপ ) যদ্দূর যা পারি করবো। ওহ্‌, আরেকটা কাজ করতে পারি - সাথে যেতে তো আর পারবো না তবে ইনিয়ে বিনিয়ে, প্যানপ্যানিয়ে একখানা মনগলানো চিঠি লিখে দিতে পারি যাতে ওনারা বোঝেন যে এটা আসলে কারুর পক্ষ থেকে সাহায্য নয়, করুণা নয় - বরং এটা long overdue একটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের জন্য না হলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হলেও এটা তাঁদের নিতেই হবে।

আমার চেনাশোনারা যদিও বিশ্বাস করে না, আমি কিন্তু আসলে 'চাইলে' বেশ মিষ্টি মিষ্টি কথা লিখতে পারি দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

কিছু বলার নেই ...

অতিথি লেখক এর ছবি

নির্বাক হয়ে গেলাম পড়ে।

-নীড় সন্ধানী

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমি এই সমস্যার সমাধান জানি না।
কোনোদিন যদি মাথায় আসে, তাহলেই কিছু বলা সম্ভব। তার আগে না।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এটা আসলে পিঠ চাপড়ে দেবার মতো কোন লেখা নয়। তাতে লেখার বিষয়বস্তুর সাথে রসিকতা করা হয়।



অজ্ঞাতবাস

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আদৌ কি কিছু বলার আছে?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নিবিড় এর ছবি

কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

মামুন হক এর ছবি

কিছু বলার দরকার নাই, যে যার অবস্থানে থেকে নিজ নিজ পরিবার বা অঞ্চলের অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটু দেখভাল করার চেষ্টা করলেই কাজ কিছুটা এগিয়ে যাবে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। যদিও পড়সি বহুত আগে। শুধু এইটুকু জানায়া যাই, এইটা আমার জীবনে পড়া সেরা ব্লগগুলার একটা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।