আগের পর্বটি যাদের পড়া হয়নি বা ভুলে গেছেন তারা টিপি দেন এখানে
--------------------------------------------------------------------------
সামিয়া বসেছে গাড়ীর সামনের সীটে, ড্রাইভারের পাশে। রাহেলা পেছনে, তার পাশেই ছোট একটা ঝুড়িতে রানী। তারা যাচ্ছে শুলশানের এক পেট শপে, সামিয়ার পরিচিত এক পশু ডাক্তার ওখানেই বসেন। রানীর প্রথম গাড়ী চড়া, রাহেলার ও। সম্পূর্ন ভিন্ন পরিবেশে খানিকটা ভীত রানী ঘাপটি মেরে পড়ে আছে , হঠাৎ রাস্তার ঝাঁকিতে সে একটু নড়ে চড়ে উঠল। মিহি স্বরের সন্ত্রস্ত এক মিয়াঁও শোনা গেল। পরম মমতায় রাহেলাও তাকে অভয়বানী শোনায়, ঝুড়ির ফাক দিয়ে বেড়িয়ে আসা রানীর ছোট্ট থাবায় হাত বুলিয়ে দেয়। প্রশ্রয় পেয়ে রানীর স্বর আরো চড়তে থাকে। এবার সে রীতিমত উচ্চকন্ঠে প্রতিবাদ জানায়, কয়েদখানা ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে চেষ্টা করে। রাহেলার আর সহ্য হয়না, সে ঝুড়ির ঢাকনা খুলে রানীকে বের করে আনে। কোলে বসিয়ে আদর করে, গলার নীচে চুলকে দেয়, দুর্বোধ্য আওয়াজে নানা রকম আহ্লাদী শব্দ করতে থাকে। আদরপ্রিয় রানী ধীরে ধীরে শান্ত হয়, গড় গড় আওয়াজের সাথে মাথা দিয়ে রাহেলার কোলে ঢু মারতে থাকে।
সামিয়া পেছনে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার রাস্তার দিকে মনোযোগী হয়, ড্রাইভার মোশারফ মিয়াকে সাবধানে চালাতে বলে। ঢাকার ট্রাফিক তার একেবারেই সহ্য হয়না।
রানীর জীবনে এমনদিন আর আসেনি, রাহেলার ও না। পেশাদার পশু-চিকিৎসক একবার চোখ তুলে তাকিয়েই কি করতে হবে তা বুঝে নেয়। রাহেলার হাত থেকে রানীকে ছাড়িয়ে কাচঘেরা একটি ঘরে নিয়ে বেচারীকে শ্যাম্পু দিয়ে গা ধুইয়ে হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে শুকানো হল। ভয় পেতে পেতে রানী ততক্ষনে সব ভয়ের উর্দ্ধে উঠে গেছে। ম্যাও ম্যাও করার সাহসও অবশিষ্ট নেই, কাউকে আচড়ে খামচে দেয়া তো দূরের কথা। সম্পুর্ন ন তুন পরিবেশে অচেনা-অজানা অদ্ভুৎ সব জিনিষ , মানুষ আর খাচায় বন্দী আরো অনেক ছোট ছোট কুকুর-বেড়াল-খরগোশের অপরিচিত গন্ধে রানী উদবিগ্ন, সন্ত্রস্ত আর অসহায় বোধ করতে লাগল। সমস্ত অনুভূতি জড় করে সে খানিকটা পরিচিত ঘ্রাণের খোজে এদিক সেদিক তাকালো কিন্ত তার আর রাহেলার মাঝে তখন কাচের দেয়াল।
গা ধোয়ানো শেষে রানীকে তোয়ালেতে জড়িয়ে বাইরে নিয়ে আসা হল, পাংশু মুখ করে রাহেলা তার দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু পশু ডাক্তারের ইশারায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি ঘরে, সামিয়া আর রাহেলা দুজনেও সেখানে ঢুকে পড়ে।
-“ আফা এই হানে কি?” রাহেলা জানতে চায়।
“এখানে রানীকে টিকা দেয়া হবে, ছোট বাচ্চাদের যেমন দেয়া হয়, পশুদের ক্ষেত্রেও তাই। টিকা দেয়া না হলে ওর অনেক খারাপ খারাপ অসুখ করতে পারে। তুমি ভাববেনা, খুব ছোট্ট সূচ, রানী টেরও পাবেনা”- সামিয়া নরম স্বরে রাহেলাকে বোঝায়।
রানী টের পেল কি পেলনা তা বোঝা গেলনা, পুরো সময়টাই সে ডাক্তারের টেবিলে নিশ্চল হয়ে পড়ে রইল, শুধু প্রথম বার সুই ঢোকানোর সময় একটু শিউরে উঠল, রাহেলা তা দেখে সামিয়ার হাত আকড়ে ধরে, দ্বিতীয়বার রানী তাও করলনা। যন্ত্রনার শেষ ওখানেও হলনা, রানীর গলা থেকে পুঁতির মালা খুলে ফেলা হল, তার যায়গা নিল পোকার বংশ বিস্তার প্রতিরোধক কলার। ছোট্ট সবুজ রংয়ের কলারটি রানীর গলায় রাখতে হবে দুই মাস। রানীর চেহারা-ছবি সবই পালটে গেল।
ড্রাইভার মোশারফ মিয়া চুপচাপ সবই খেয়াল করে। এদ্দুর একটা বিলাইয়ের বাচ্চা নিয়া দুইজন ডবকা মেয়েমানুষের আদিখ্যেতা দেখে তার পিত্তি জ্বলে যায়। সামিয়া আজ প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ করেছে একটা বেড়ালছানার পেছনে, যা প্রায় তার এক মাসের বেতনের সমান। শুধু ডাক্তার দেখানোই না, হাবি জাবি নানাপদের খাবার কিনেছে রানীর জন্য, শুকনা খাবার, টিনজাত খাবার, খেলনা কিনেছে কয়েক ধরনের । সবচেয়ে বেশি যেটা তাকে আঘাত দিয়েছে তা হল রানীর জন্য সামিয়ার কেনা ছোট্ট একটি বেড়ালের টয়লেট, আর তাতে ছড়ানোর জন্য এক বস্তা স্পেশাল বালি। এগুলো সবই মোশারফ মিয়াকেই বয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠাতে হয়েছে। ডবকা ছুড়ি দু’টো তখন বিলাই নিয়া আহ্লাদে ব্যস্ত। সে ভেতরে ভেতরে গজ গজ করতে থাকে।
সামিয়া পরের দিন থেকে নিয়মিত রাহেলার ঘরে আসা যাওয়া করা শুরু করে। সে চলে যাবে সপ্তাহ দুয়েক পরেই, তার আগেই রানীকে আদব কায়দা শিখিয়ে মানুষ বানাতে তাকে বেশ জোরসোরেই লাগতে দেখা যায়। এতসব নিয়ম কানুন রাহেলাকে ক্লান্ত করে তোলে, একবার সে ভাবে সামিয়াকে বলে যে তার বেড়াল বেড়ালই থাকে, তাকে মানুষ বানানোর কোনই প্রয়োজন নেই, কিন্তু বলতে তার সাহস হয়না। আগে রাহেলা তার নিজের খাবার ভাগ করে খেত রানীর সঙ্গে, এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। একদিন চেপে ধরে রানীর হাত-পায়ের নখ কেটে দেয় সামিয়া। রাহেলার কাছে সেটাও ভালো লাগেনা। তার কাছে মনে হয় রানী তার চেয়ে সামিয়াকেই ইদানীং বেশী পছন্দ করে, সামিয়াকে দেখলেই রানী কেমন যেন বেশী বেশী উছ্বাস দেখায়, লাফ দিয়ে উঠে পড়ে সামিয়ার গায়ে, ছোটাছুটি করে খেলে। আগে রাতে তার কোন ঘেষে ঘুমাত রানী, এখন সে সামিয়ার দেয়া ছোট্ট ঝুড়িটাতে ঘুমায়, রাহেলা ডাকলেও আগের মত সাড়া দেয়না। রাহেলাও ভেতরে ভেতরে গজ গজ করতে থাকে।
ড্রাইভার মোশারফ মিয়ার চাকরী চলে গেছে। কারনটা আর কিছু না, বড় সাহেব তার টুক টাক চুরি-দারী ধরে ফেলেছেন। তাকে বলা হয়েছে এই সপ্তাহটা থেকে সামনের মাসের পহেলা তারিখে সে যেন নতুন ড্রাইভারের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়। সে পাকা ড্রাইভার , কাজ খুজে পেতে তার হয়ত তেমন সমস্যা হবেনা কিন্তু হাতে নাতে ধরা পড়ে অনুতপ্ত হবার বদলে সে রেগে যায়, তার মাথা রাগে দপ দপ করতে থাকে। এমন সময় তার চোখে পড়ে সামিয়া একটা খেলনা ইঁদুর রশিতে বেধে রানীর সাথে খেলছে। হঠাৎ করে তার নিজেকেও বড়লোকের রশিতে বাধা খেলনা ইঁদুর বলে মনে হয়। সপ্তাহে সাত দিন কাজ, ছুটি-ছাটার বালাই নেই, চব্বিশ ঘন্টার যে কোন সময় তার ডাক পড়তে পারে , খাওয়া –দাওয়া বেশিরভাগই হয় রাস্তায় অথবা বাড়ীর কাজের লোকেদের সঙ্গে করতে হয়। এত খাটা খাটনির পরেও কেউ তার নামটা পর্যন্ত মনে রাখেনা, আজ পর্যন্ত তাকে কেউ মোশারফ বলে ডাকেনি। রাত বিরেতে বাইরে থেকে একা ফিরলে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলতে হয় আমি ড্রাইভার দরজা খোলেন, মোশারফ বললে তাকে দারোয়ানও চিনবেনা। মাথায় রাগ থাকায় মোশারফের এটা খেয়াল হলনা যে দারোয়ান ইদ্রিস আলীর নামটাও সে জানেনা, তাকে সব সময় সে দারোয়ান বলেই ডেকে এসেছে। সামিয়াকে বিলাই নিয়ে আহ্লাদ করতে দেখে মোশারফের পিত্তি জ্বলতে জ্বলতে অঙ্গার হয়ে যায়।
সামিয়া পশু-চিকিৎসকের সাথে কথা শেষ করে এই মাত্র ফোনটা রেখেছে, তাকে খানিকটা চিন্তিত দেখায়। কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। কথাটা সে কিভাবে রাহেলাকে জানাবে তা ভাবতে থাকে। রানীকে নিয়ে সামিয়া রাহেলার আবেগের ব্যাপারটা বোঝে, অন্তত সে তাই মনে করে। ভালো করে বুঝিয়ে বললে রাহেলা আপত্তি করবেনা বলেই তার ধারনা। অথবা না বললেও হয়ত চলে, সব শুনে রাহেলা যদি বোকার মত বেকে বসে তাহলে আরেক সমস্যা, একবার ভাবল অন্য কোন কারন দেখিয়ে রানীকে রাহেলার কাছ থেকে কয়েক ঘন্টার জন্য নিয়ে কাজটা সেরে ফেলা যায়। আবার টিকা দেয়ার কথা বলা যেতে পারে, কিন্তু রাহেলা যদি সাথে আসতে চায়? রানীর প্রকৃত অভিভাবক তো সে ই। কি করা যায়, কি করা যায় ভাবতে ভাবতে সে রাহেলাকে সব খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিল। এটা রানীর ভালোর জন্য, এটা রাহেলা বুঝলেই হয়। সামিয়া চিন্তা মাথায় নিয়ে রাহেলার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
রাহেলা আর মাজেদা ইদানীং এদিকে সামিয়াকে ঘন ঘন আসতে দেখে অভ্যস্ত, তারা খুব একটা আশ্চর্য হল না। সামিয়া রাহেলাকে ডেকে বাইরে নিয়ে গেল। মাজেদা দু’জনের কাউকেই আজকাল দেখতে পারেনা। তার ক্ষোভের বলির পাঠা হয়ে সিরামিকের একটি প্লেট ছত্রখান হয়ে মেঝেতে পড়ে রইল। একটু পর নিজেই ঝাড়ু দিয়ে ভাঙ্গা প্লেটের টুকরো গুলো জড়ো ক রতে করতে সে অস্ফুটে বলে ওঠে-
“ঝাড়ু মারি বড়লোকের শখের কপালে, বিড়ালের গু মাইখ্যা ঝাড়ু দিয়া আমাগো গরীবের কপাল ও পিটাই, এই বান্দি গিরি করার থিকা ভিক্ষা কইরা খাওন ভালো”।
অথচ সে কিন্তু এ বাড়ীতে বেশ ভালো আছে। বেতনের টাকা জমিয়ে সে গ্রামে টিনের ঘর বানিয়েছে, তার দুই ছেলে স্কুলে যায়, মাজেদা গত পাঁচ বছরে পুরো পঁচিশটাদিন তাদের সাথে কাটিয়েছে। তার ভাদাইম্যা স্বামী ছেলেদের নিয়ে বছরে দুই একবার তাকে দেখতে আসে। ছেলেরা বাপের লুঙ্গীর পেছনে লুকিয়ে তাদের মাকে দেখে, কাছে তেমন আসেনা।
সামিয়া যথাসাধ্য সহজ ভাষায় ব্যাপারটার গুরুত্ব রাহেলাকে বুঝিয়ে বলে। রাহেলা জানে এই আফায় সবার চেয়ে অন্যরকমের , তার দ্বারা কারো ক্ষতি হবেনা। সে শুকনা মুখে সম্মতি জানিয়ে চলে আসে। সামিয়া নিশ্চিন্ত হয়ে পরের দিনই কাজটা সেরে ফেলার প্রস্তুতি নেয়। রাহেলা ব্যাপারটা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছে সে স্বস্তি বোধ করে, বেচারী বুঝতে না চাইলে হয়ত ওর অমতেই ব্যাপারটা ঘটাতে হত , যদিও বিষয়টা রানীর জন্য ভালো কিন্তু রাহেলা সেটা না বুঝলে ঝামেলা বাড়ত বই কমত না। সামিয়া সন্ধ্যায় গিয়ে রানীর খাবার-দাবার, পানির পেয়ালা এসব নিজের কাছে নিয়ে আসে। আজ রাতে রানীকে কোন খাবার বা পানীয় দেয়া যাবেনা, ভুল্ক্রমেও না, পশু-চিকিৎসক বার বার করে নিষেধ করে দিয়েছেন। সামিয়া বিছানায় এলিয়ে নতুন একটা বই পড়তে শুরু করে, ‘অন্ধকারের হৃদয়’ বইটি আজও শেষ করা হয়নি।
রাত একটু ঘনালে রাহেলাও বিছানায় যায়। রানী আজ অন্যান্য দিনের চাইতে বেশী চঞ্চল। সে প্লাস্টিকের একটা ইদুর ছানা নিয়ে সারা ঘরে হুটোপুটি করে খেলতে থাকে। খেলতে খেলতে রানী এক সময়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে যায়, সে রাহেলার পাশে শুয়ে পড়ে। রাহেলা সেদিকে ভ্রূক্ষেপও করেনা, শুন্যচোখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। রানীর তৃষ্ণা পায়, ক্ষুধা পায়, সে গুটি গুটি পায়ে তার খাবার যেখানে থাকে সেদিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। সে লাফ দিয়ে আবার রাহেলার পাশে চলে আসে, আহ্লাদী স্বরে অভিযোগ জানায়, মাথা দিয়ে বাড় বাড় রাহেলার পেটে ঢুশ দিতে থাকে। রাহেলা আর সইতে পারেনা , সে ধাক্কা দিয়ে রানীকে দূরে সরিয়ে দিয়ে দেয়ালে দিকে মুখ ফিরায়, তার চোখের বান কারো চোখে পড়েনা।
রানীর হায়া-শরম বলতে কিছু নাই, সে একটু পরেই সব ভুলে আবার রাহেলার পাশে শুয়ে পড়ে কতক্ষন বেহুদাই নিজের ল্যাজ ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত রানীর দিকে তাকিয়ে রাহেলার মন মায়ায় ভরে যেতে থাকে।
“আহারে এদ্দুর একটা বাচ্চারে কাইলকা ডাক্তর সাবে কাইট্টা ফালাফালা কইরা ফালাইবো!”- সে অস্ফুটে বলে ওঠে। বলে ফেলেই রাহেলা ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারে। সামিয়া যখন তাকে জানায় যে কাল সকালে সে রানীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বন্ধ্যাকরন অপারেশন করাতে সে বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পারেনি। শুধু এটুকুই বুঝেছে যে এতে রানীর ভালো হবে। সামিয়া তাকে বোঝায় যে, বছর বছর বাচ্চা বিয়ানোর চাইতে ছোট্ট থাকতেই অপারেশন করে রানীকে বন্ধ্যা করে দিতে হবে, আর যেহেতু কিছুদিন পরেই চলে যাবে তাই এখুনি এটা সেরে ফেলা দরকার। রানীর সারা গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে পেটে এসে রাহেলা থেমে যায়, এই ছোট্ট পেটটাই কাল সকালে ছিড়ে-ফুড়ে ফেলা হবে, আহারে রানী না জানি কত কষ্টই পাবে, কত রক্ত বেরুবে এই ছোট্ট শরীরটা থেকে, কতদিন না জানি বেচারী অসুস্থ থাকবে, আচ্ছা যদি ওর ঘুম কোন দিন না ভাঙ্গে? নানা দুশ্চিন্তায় রাহেলার মন অস্থির হতে থাকে। সে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। রানী জেগে ওঠে। থাবা বাড়িয়ে রাহেলার ঝুলে থাকে চুল খামচে ধরে। রাহেলা তা ছাড়াতে গিয়ে হেসে ফেলে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাহেলার দু শ্চিন্তাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে, সাথে রানীর ক্ষুধা-তৃষ্ণা। সে বার বার তার খাবার খুজে ফেরে। রাহেলা হঠাৎ শান্ত ভাবে উঠে দাড়ায়, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি করবে সে বিষয়ে। দরজা খুলে রাহেলা রান্না ঘরে যায়। রানী পেছনে পেছনে আসে। ফ্রীজ খুলে রাহেলা রাতের খাবারের অবশিষ্ট থেকে ভাত আর মাছ বের করে, মাছ ভেঙ্গে ভাত মাখিয়ে বাটিতে করে রানীকে দেয়। অনেকদিন পর চেনা মাছের গন্ধে খুশী ক্ষুধার্ত রানী উম-ইয়াম জাতীয় বিচিত্র শব্দ করে চেটে পুটে খেতে থাকে। রাহেলা শান্তি-মাখা চোখে তাকিয়ে থাকে। তার এত আদরের রানীর গায়ে কেউ ছুরি চালাবে তা সে হতে দেবেনা, রানীর পশমও সে কাউকে স্পর্শ করতে দেবেনা।
( চলবে)
বিঃদ্রঃ 'রানী' বানানটা ইচ্ছা করেই ওভাবে লেখা হয়েছে, ভুল করে নয়।
মন্তব্য
মামোমা - গল্প ভালো হচ্ছে, আসলেই।
কিন্তু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে নাকি? হুমম ...
আর, বানান ভুল ছিলো - ধরি নাই
হায়রে পয়েন্ট কামানোর এমন সুবর্ণ সুযোগ কেউ ছাড়ে আজ কাল?
গল্প লম্বা হয়ে যাচ্ছে জানি, কিন্তু ছোট করে লিখতে গেলে নিজের কাছেই কেমন যেন কাঠ খোট্টা লাগে, অল্প কথায় ভালো কিছু লেখার বিদ্যা এখনো আয়ত্ত্ব হয়নি। পরের পর্বেই এই ছাই-পাশ গল্পের এপিটাফ লেখা হবে- কথা দিলাম
রানীরে ছাইড়া দিলাম মাগার বাকিগুলি ছাড়লাম না।
গাড়ী > গাড়ি
সম্পূর্ন > সম্পূর্ণ
অভয়বানী > অভয়বাণী
ভেঙ্গে > ভেঙে
নীচে > নিচে
ঢু > ঢুঁ
কি করতে হবে > কী করতে হবে
কাচঘেরা > কাঁচঘেরা [তবে এ নিয়ে নাকি বিতর্ক আছে]
উর্দ্ধে > ঊর্ধ্বে
আচড়ে > আঁচড়ে
খাচায় > খাঁচায়
খোজে > খোঁজে
সূচ > সূঁচ
ছিড়ে-ফুড়ে > ছিঁড়ে-ফুঁড়ে
আরো আছে টুকিটাকি।
নীচে, নিচে এবং উর্দ্ধে, ঊর্ধ্বে: এই দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু দু রকম বানান চলে। নীচ মানে পামর ইত্যাদি ছাড়াও তলায়ও বোঝায়। আর উর্দ্ধে পুরোনো বানান কিন্তু বাতিল হয়ে যায় নি।
আল্লাহ্! সবাই বানান ধরে ফেলছে , আমি লেইট- ধূর! তবে হ্যাঁ দু'টো বানানই হয়, আমি বাংলা একাডেমী র প্রমিত বানান অনেক সময় অনুসরণ করছিনা, পুরনো বানানরীতি অভ্যস্ত বলে। সেটা সবক্ষেত্রে হলেই ভালো হয়। আর রাণী র লেখাটা পড়েই যাচ্ছি, পড়েই যাচ্ছি -- ---- মজাই লাগছে -- ইস্ , দেখি প্রথম পর্বে যাই যদি কোনো বানান ভুল ধরতে পারি আপনার :
সহস্র ভুল পাবেন, ভুলে ভরাই জীবন আমার
অনেক ধন্যবাদ হিমু ভাই বানানগুলো ঠিক করে দেয়ার জন্য। এর পর থেকে এই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই আশা রাখি।
আপনাকেও ধন্যবাদ ব্যাপারটিকে স্পোর্টসম্যানশিপের সাথে নেয়ার জন্য। আজকে এক রামছাগল দোস্ত মেসেঞ্জারে কী হম্বিতম্বি আমার ওপরে, এভাবে আপনাকে বানান ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে। তাকে যতোই বোঝাতে যাই, এটা আমাদের বানানকে বাগ মানান কর্মসূচির আওতায় একটা শিশুতোষ খেলা, বলদের ঘরের বলদ মানতেই চায় না। শেষমেশ বললাম, যাঁর পোস্টে ভুল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, তিনি যখন কিছু মনে করেননি, তুই রামছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা ফাল পাড়স ক্যান? তখন সে একটু থামলো। এই ছাগলটাকে নিয়ে যে কী করি!
আগেও বলছি আমি এই খেলার সবচেয়ে বড় সমর্থক আমি নিজেই। বাংলা বানান নিয়ে আমার দূর্বলতা হয়তো কোনদিনই এভাবে চোখে পড়ত না যদি আপনারা এই দুর্দান্ত খেলাটি মাঠে না নামাতেন। এখন প্রতিদিন কিছুটা হলেও সময় বানান শেখার পেছনে ব্যয় করি। জঞ্জাল অনেক জমে গেছে, সাফ হতে অনেক সময় লাগবে , কিন্তু শুরুটা তো হল আপনাদের এই মহতী উদ্যোগের মধ্য দিয়ে। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা জানা নেই।
সেই বলদের ঘরের বলদকেও জানাই বাধভাঙ্গা ভালোবাসা
ছুড়ি->ছুঁড়ি
কতক্ষন->কতক্ষণ
দাড়ায়->দাঁড়ায়
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ লাগলো গল্পটা।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
- সামিয়া নামটা আমার হেব্বি পছন্দ। ছোটবেলায় টিভিতে শুভ্র দেব'র পেপসির এ্যাড থেকেই!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
যা বলছিলাম, বানান এ হিমুদারে বিট করতে পারবে না কেউ। চমৎকার গল্প, চলবে না, দৌড়াবে।
বাড় বাড়->বার বার
ঢুশ->ঢুঁশ
ফাক->ফাঁক
যন্ত্রনা->যন্ত্রণা
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিরেখা অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। চন্দ্রবিন্দু , ন আর ণ বিষয়ক ভুলচুক আমার এ জীবনে সংশোধন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছি । চেষ্টা করে যাব। তবে বার বার কে বাড় বাড় লেখাটা বাড়াবাড়ি ধরনের ভুল হয়ে গেছে। এটার জন্য আমার -১০০ আর আপনার +১০০ পাওয়া উচিত।
বস, বানান তো আর একদিনে ঠিক হবে না, পরের পর্বটা ছাড়েন। আমার তো আর টর সয় না। আর আমার ব্লগস্পট টা চেক কইরেন
পরের পর্রের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালো লাগছে। পোষা প্রাণীগুলো নিজের অস্তিত্বের অংশ হয়ে থাকে। ওদের কষ্টে আমাদের কষ্ট হয় আরো অনেক বেশি।
এরপর...?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
গল্পটা চমৎকারপ তবে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে মূল গল্প থেকে দূরে চলে গেছে ডালপালা ধরে
০২
সঠিক বানানটা কিন্তু রানি
রাণীও নয় রানীও নয়
বহু বহু কাল আগে রাণী লিখত। বাংলা একাডেমির বানানে এটা রানি
ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।
এই লেখাটা বাগ মানছে না, কী যে করি!
গল্পটা আমার নিজের কাছে খুব ভালো লাগে, এটা নিয়ে একদিন একটা নাটক বানাবো ভেবে রেখেছি, কিন্তু লেখাটা জমছে না।
এইবারও শেষ হয়নি! তাইলে বরং অপেক্ষা করি। পুরাটা আসুক, একসাথে পড়ব।
ব্যস্ততা খুব বেশি যাচ্ছে নাকি? দেখাই যায় না যে আপনাকে আজকাল। সাংহাই থেকে ফেরেননি এখনো?
আরেক পর্বেই শেষ করে দিব, ইমানে কইলাম
হ ফিরে আসছি , কিন্তু ব্যস্ততা কমে নাই।
নতুন মন্তব্য করুন