দ্য অ্যালকেমিস্ট-২

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: সোম, ০১/০৬/২০০৯ - ৭:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
*আগের পর্ব পড়ুন এখানে

বৃদ্ধা ছেলেটিকে পথ দেখিয়ে বাড়ীর পেছনের দিকের একটি কামরায় নিয়ে গেলেন , রঙ্গীন পুঁতির তৈরী পর্দা দিয়ে এটি বসার ঘর থেকে আলাদা করা । কামরাটিতে আসবাব বলতে কেবল একটি টেবিল , যীশুখ্রীষ্টের পবিত্র হৃদয়ের একটি দেয়ালচিত্র আর দু’টি চেয়ার।

চেয়ারে বসার পর কোন ভণিতা ছাড়াই ছেলেটির হাত দু’টি নিজের দু’হাতে তুলে নিয়ে তিনি প্রার্থনা করতে শুরু করলেন । এটা শুনতে জিপসীদের প্রার্থনার মত মনে হচ্ছিল । চলার পথে ছেলেটির জিপসীদের সম্পর্কে কিছুটা ধারনা হয়েছে, তারাও ভ্রমন করে তবে তাদের সঙ্গে পশু পাল থাকেনা । লোকে বলত যে, জিপসীরা তাদের জীবন চালায় ছলচাতুরীর মাধ্যমে , শয়তানের সাথে তাদের গোপন অলিখিত চুক্তি আছে এবং তারা বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে রহস্যময় আস্তানায় লুকিয়ে রাখে । ছেলেবেলায় জিপসীদের পাল্লায় পড়ার তীব্র ভয়টি আজ বৃদ্ধার হাতে হাত বাধা পড়ায় আবার তার মাঝে ফিরে এল ।

দেয়ালে যীশুখ্রীষ্টের ছবির দিকে তাকিয়ে সে নিজেকে অভয় দিল, এখানে অশুভ কিছু নেই । বৃদ্ধা যেন তার ভীতি সম্পর্কে জেনে না যান এজন্য সে তার হাত দু’টোকে স্থির রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। সে নিঃশ্বব্দে প্রার্থনা করতে শুরু করে ।

‘বেশ উল্টা পাল্টা’ -বৃদ্ধা বললেন, ছেলেটির হাত থেকে চোখ একটুও না সরিয়ে, তারপর আবার নিরব হয়ে গেলেন ।

ছেলেটির ভয় বাড়তে থাকে। তার হাত কাঁপা দেখে বৃদ্ধা সেটা বুঝতে পারেন । সে দ্রুত তার হাত টেনে নেয় ।

‘আমি এখানে ভাগ্য গণণার জন্য আসিনি’ -সে বলে, ইতিমধ্যেই অযথা এখানে আসার অনুতাপ তাকে ঘিরে ধরতে শুরু করেছে । একবার ভাবে কিছু টাকা দিয়ে এখান থেকে বেড়িয়ে যাবে, অদ্ভুৎ স্বপ্নটিকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়তো ঠিক হচ্ছেনা ।

‘তুমি এসেছ স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে’- মনে করিয়ে দিলেন বৃদ্ধা। তারপর শুরু করলেন, ‘স্বপ্ন তো সৃষ্টিকর্তার ভাষা। যখন তিনি আমাদের ভাষায় কথা বলেন তখন আমি তা ব্যাখ্যা করতে পারি । কিন্তু যখন তিনি আত্মার ভাষায় কথা বলেন তখন শুধু তুমিই এর অর্থ বুঝতে পারবে । তবে যার ভাষায়ই বলুক, আমার পারিশ্রমিক তোমাকে দিতেই হবে ।’

আরেকটি চালাকি, ছেলেটি ভাবে । কিন্তু সে একটা ঝুঁকি নিতে চাইল। রাখালরা সবসময়েই হিংস্র নেকড়ে আর অনাবৃষ্টির ঝুঁকি নিয়ে পথ চলে, এটাই তাদের জীবনকে আনন্দ আর উত্তেজনায় ভরিয়ে রাখে ।

‘আমি একই স্বপ্ন দু’বার দেখেছি’ সে বলে যায়, ‘স্বপ্নে এক মাঠে অচেনা এক শিশু এসে আমার ভেড়াগুলোর সাথে খেলতে শুরু করে । আমার ভেড়ার সঙ্গে এরকম খেলা আমার ভালো লাগে না। কারণ ভেড়াগুলো নতুন মানুষকে ভয় পায় । কিন্তু বাচ্চারা কেন জানি ভয় না পাইয়েই খেলতে পারে ওদের সঙ্গে। কেন, আমি জানি না। জানি না পশুরা কিভাবে মানুষের বয়স টের পেয়ে যায়।‘

‘বলে যাও’-বৃদ্ধা বললেন ।
‘আমি চুলায় রান্না চড়িয়ে এসেছি, আর তোমার কাছে বোধ হয় খুব একটা টাকা-পয়সা নেই, অযথা আমি বেশি সময় নষ্ট করতে পারবোনা।’

‘শিশুটি ভেড়াগুলোর সঙ্গে অনেকটা সময় ধরে খেলতে থাকে’-বিচলিত কন্ঠে ছেলেটি বলে যায়- ‘এবং হঠাৎ বাচ্চাটি আমাকে দু’হাতে ধরে তুলে মিশরের পিরামিডের কাছে পৌছে দেয়’ ।

মিশরের পিরামিড কী বা কোথায় বৃদ্ধা জানেন কিনা তা বুঝতে সে একটু থামে । কিন্তু তিনি চুপ রইলেন।

" তারপর মিশরের পিরামিডে...’ -ব্যাপারটার গুরুত্ব বাড়াতে সে শেষ শব্দগুলো খুব ধীরে ধীরে উচ্চারণ করে- ‘শিশুটি আমাকে বলে, এখানে আসলে তুমি গুপ্তধন খুঁজে পাবে । এবং ঠিক যখনই সে আমাকে গুপ্তধনের যায়গাটি নির্দিষ্ট করে দেখাতে যায়, আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়—দু’বারই।’

বৃদ্ধা কিছু সময় চুপ রইলেন । তারপর আবার তার হাত দু’টি টেনে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলেন ।

‘তোমাকে এখনই কিছু দিতে হবেনা’-তিনি বললেন ।
‘তবে গুপ্তধনের দশভাগের একভাগ আমার চাই, যদি তুমি সেটা খুঁজে পাও’।
ছেলেটি হাসল - খুশীতে । এখানে খরচ করবে বলে যে টাকাগুলো সাথে এনেছিল তা বেচে যাবে, কারণ স্বপ্নটি গুপ্তধনের মত আজগুবি বিষয় নিয়ে ।

‘ঠিক আছে, স্বপ্নটি ব্যাখ্যা করুন’ ।

‘প্রথমে আমার কাছে শপথ কর । শপথ কর যে আমাকে তোমার গুপ্তধনের দশ ভাগের এক ভাগ দেবে আমি তোমাকে যা বলতে যাচ্ছি তার বিনিময়ে’।

রাখাল ছেলেটি শপথ করল । বৃদ্ধা তাকে যীশুর পবিত্র হৃদয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে আবার শপথ করতে বললেন ।

‘এটি পৃথিবীর নিজস্ব ভাষায় বর্ণিত একটি স্বপ্ন । আমি এর ব্যাখ্যা করতে পারি, তবে স্বপ্নটি খুবই জটিল । এ কারণেই গুপ্তধনের একাংশ আমার ন্যায্য দাবী বলে মনে করি’ - বৃদ্ধা বলতে শুরু করলেন ।

‘স্বপ্নটার অর্থ হলো- তোমাকে অবশ্যই মিশরের পিরামিডের কাছে যেতে হবে। আমি পিরামিডের কথা কোন দিন শুনিনি, কিন্তু যদি কোন শিশু স্বপ্নে তোমাকে তা দেখিয়ে থাকে তবে সেটা অবশ্যই কোথাও আছে । সেখানে তুমি তোমার গুপ্তধন খুজে পাবে যা তোমাকে একজন ধনী লোকে পরিনত করবে ।’

ছেলেটি অবাক হল, একটু বিরক্তিও বোধ করল । এ ধরনের সহজ সরল ব্যাখ্যা শোনার জন্য তার এই বৃদ্ধার কাছে আসার দরকার ছিলনা । কিন্তু এর জন্য কোন টাকা খরচ হচ্ছেনা মনে পড়ায় তার বিরক্তিটা মাত্রা ছাড়ালোনা ।

‘এভাবে আমার সময় নষ্ট করার কোন অর্থ হয় না’-সে খানিকটা আহত স্বরে বলে ওঠে।

‘আমি তোমাকে আগেই বলেছি যে তোমার স্বপ্নটি খুব কঠিন । এটি জীবনের একটি সরল দিক যেটি একই সঙ্গে খুবই অসাধারণ, একমাত্র জ্ঞানী লোকেরাই এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারেন । যেহেতু আমি তেমন জ্ঞানী নই আমাকে তাই অন্য বিদ্যা রপ্ত করতে হয়েছে-যেমন হাত দেখা ।’

-‘বুঝলাম ,কিন্তু আমার মত ছেলে মিশরে কি করে যাবে ?’

‘আমি কেবল স্বপ্নের অর্থ বলি, কিভাবে তার বাস্তবায়ন করতে হয় সেটা আমার জানা নেই ।’

-‘আর আমি যদি মিশরে না যাই ?’- ছেলেটি জানতে চাইল ।

‘তাহলে আমি আমার পারিশ্রমিক পাবোনা। এটা এর আগেও ঘটেছে।’

বৃদ্ধা ছেলেটিকে চলে যেতে বললেন , এই বলে যে তিনি ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে যথেষ্ট সময় নষ্ট করেছেন ।

হতাশ ছেলেটি ভাবল স্বপ্নে বিশ্বাস করার বোকামী আর নয় । হাতে পড়ে থাকা কাজগুলোর কথা মনে পড়ায় সে বাজারে গিয়ে সে কিছু খাবার কিনল,পুরনো বইটি আরেকটি পুরনো কিন্তু বড় কলেবরের বইয়ের সাথে বদলে নিল , এবং বাজার-চত্বরে বসে আঙ্গুরের রসে তৈরী সুরাটি চেখে নিতে একটি খালি বেঞ্চ খুঁজে নিল। গ্রীস্মের উষ্ণ দুপুরে সদ্য কেনা পানীয়টি তাকে চনমনে করে তুলছিল । ভেড়ার পাল শহরের প্রধান প্রবেশ পথের পাশে এক বন্ধুর আস্তাবলে রাখা আছে । এখানে অনেকেই তার পরিচিত । চলার পথের এই ব্যাপারটাতে সে খুব মজা পায়, বিভিন্ন জায়গায় তার অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয় কিন্তু তাদের কাউকেই প্রাতিদিন সময় দিতে হয়না ।

প্রতিদিন যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয় , আস্তে আস্তে তারা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় । ঘর ছাড়ার আগে তার জীবনেও এমনটি ঘটেছিল । কাছের এই মানুষেরাই তাকে বদলে দিতে চায় । আর বদলে না গেলে তারা খুব ক্ষেপে যায় । মনে হয় অন্য লোকেদের জীবন কী ভাবে চলা উচিৎ সে বিষয়ে সবার পরিস্কার ধারণা রয়েছে, কিন্তু নিজের জীবন নিয়ে মাথাব্যথা তেমন নেই।

সূর্য আরেকটু ঢলে পড়লে সে যাত্রা শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। আর তিনটি মাত্র রাত পরেই তার স্বপ্ন-কন্যার দেখা মিলবে ।

একটু আগে বদলে নেয়া বইটি সে পড়তে শুরু করে । বইয়ের প্রথম পাতাতেই একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে । আর চরিত্রগুলোর খুব বিদঘূটে সব নাম, সহজে উচ্চারন করা যায়না । সে ভাবে যদি নিজে কোনদিন বই লেখে তাহলে একটি একটি করে চরিত্রের পরিচয় দেবে যাতে করে পাঠককে একসাথে অনেকগুলো নাম মনে রাখার ঝামেলা পোহাতে না হয় ।

মন লাগিয়ে পড়তে থাকায় একটু পরে বইটি তার কাছে ভালো লাগতে শুরু করে । অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছিল এক তুষারাবৃত দিনে , কাঠ ফাটানো এই গরমে ঠান্ডার অনুভূতিটিকে তার চমৎকার লাগছিল । এমন সময় এক বৃদ্ধ লোক তার পাশে বসে হঠাৎ করেই আলাপ জমানোর চেষ্টা শুরু করলেন ।

‘ওরা কি করছে?’ - বাজারের লোকগুলোর দিকে দেখিয়ে বৃদ্ধ প্রশ্ন করেন।

" কাজ করছে "-মনোযোগী পাঠকের ভঙ্গীতে ছেলেটি শুকনো স্বরে উত্তর দেয়।

আসলে সে মেয়েটির সামনে ভেড়ার পশম কিভাবে তুলবে তা ভাবছিল । জটিল কাজটি তার কাছে কত সহজ তা দেখিয়ে মেয়েটির বাহবা নেয়ার চিন্তা ঘুরছিল তার মাথায়। দৃশ্যটি সে অনেকবার কল্পনা করেছে, প্রতিবারই মেয়েটির মুগ্ধতা চরমে পৌছায় যখন সে ব্যাখ্যা করে কী ভাবে ভেড়ার লোম পেছন থেকে সামনের দিকে তুলতে হয় । মেয়েটির ভালো লাগা ধরে রাখতে সে আরো কিছু চালু গল্প মনে করে রাখে । প্রায় সবগুলো গল্পই বইয়ে পড়া কিন্তু সেগুলো নিজের অভিজ্ঞতা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে । মেয়েটি যেহেতু পড়তে জানেনা সে এটা ধরতেও পারবেনা ।

বৃদ্ধলোকটি কিন্তু আলাপ জমানোর চেষ্টা করে যেতেই লাগলেন । নিজের তৃষ্ণা আর ক্লান্তির কথা বলে ছেলেটির বোতল থেকে কয়েক চুমুক পান করতে চাইলেন । আপদ বিদায় হবে এই আশায় ছেলেটি কথা না বাড়িয়ে বোতল এগিয়ে দিল ।

কিন্তু বৃদ্ধলোকটিকে কথায় পেয়েছিল, তিনি এবার বইটির নাম জানতে চাইলেন । ছেলেটির ইচ্ছা করছিল জবাব না দিয়ে রূঢ়ভাবে উঠে গিয়ে অন্য বেঞ্চে বসতে, কিন্তু ছোটবেলায় বাবা তাকে বড়দের সাথে ভদ্র ব্যবহার করতে শিখিয়েছেন। উঠে না গিয়ে সে বৃদ্ধের চোখের সামনে বইটি মেলে ধরল । দু’টি কারণে - প্রথমত সে নিজেই বইটির নামের সঠিক উচ্চারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিল না, আর ভাবলো যদি বৃদ্ধ পড়তে না জানেন তাহলে হয়তো লজ্জা পেয়ে নিজেই এখান থেকে উঠে যাবেন।

‘হুমম্’ -বৃদ্ধ বললেন, বইটি উল্টেপাল্টে দেখে, এমন ভঙ্গীতে যেন বইটি অদ্ভুত কোন বস্তু।
‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বই তবে খুবই বিরক্তিকর ।’

ছেলেটি বৃদ্ধের কথা শুনে অবাক হয়ে ভাবল- কী আশ্চর্য উনি পড়তে জানেন এবং এই খটমটে বইটিও পড়েছেন! আর তার কথামত বইটি যদি বিরক্তিকর হয়েই থাকে তাহলে সময় থাকতেই এটি বদলে নেয়া দরকার।

‘পৃথিবীর আর সব বইয়ের মতো এটিও গৎবাধা কথায় ভরপুর’ -বৃদ্ধ বলতে থাকলেন - ‘এতে বলা হয়েছে স্বয়ংকিংবদন্তী নির্ধারণে মানুষের অক্ষমতার কথা । আর শেষে বলা হয়েছে যে প্রতিটা মানুষই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথাটিতে বিশ্বাস করে ।’

‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথাটি কি?’ ছেলেটি বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করে।

‘সেটি হল- একটা পর্যায়ে এসে আমরা সবাই আমাদের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি, আর ভাগ্য আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা ।’

-‘আমার জীবনে এমনটা কখনই ঘটেনি । সবাই চেয়েছিল আমি যেন ধর্মযাজক হই কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছায় যাযাবর রাখাল হয়েছি ।’

‘চমৎকার! কারন তুমি সত্যিই ভ্রমণ করতে পছন্দ কর ।’ -বৃদ্ধ বললেন ।

তিনি জানেন আমি কি ভাবছিলাম-ছেলেটি আপনমনে নিজেকে বলে। বৃদ্ধলোকটি এরমধ্যে আনমনে পাতা উল্টাতে থাকলেন , বইটি ফেরৎ দেয়ার কোন লক্ষণ তার মধ্যে দেখা গেলনা । ছেলেটি চোখে পড়ল যে লোকটার পোষাক কেমন যেন অদ্ভুৎ ধরনের । আর তাকে দেখতেও খানিকটা আরবদের মত লাগে। এ অঞ্চলে যা তেমন অস্বাভাবিক নয় । তারিফিয়া থেকে আফ্রিকা মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, নৌকা চড়েই তা পাড়ি দেয়া যায় । আরবদের এই শহরে প্রায়ই দেখা যায় ,বেচা-কেনা করতে আর দিনে কয়েকবার অদ্ভুৎ ভঙ্গীতে প্রার্থনারত অবস্থায় ।

‘আপনার বাড়ি কোথায়?’-নীরবতা ভেঙ্গে ছেলেটি জানতে চায় ।

‘অনেক জায়গায়।’

‘কারো বাড়ি কখনোই এক সঙ্গে অনেক ঠিকানায় হয়না। আমি একজন রাখাল , অনেক লোকালয়েই আমি থেকেছি কিন্তু আমার বাড়ী নির্দিষ্ট এক জায়গায় , প্রাচীন দুর্গের কাছাকাছি এক শহরে । ওখানেই আমার জন্ম ।’ –ছেলেটি বলে।

‘ ভালো কথা । আমরা তাহলে বলতে পারি যে আমার বাড়ী সালেমে । ’

সালেম কোথায় ছেলেটির তা জানা না থাকলেও বৃদ্ধ লোকটি তাকে মুর্খ ভাবতে পারে এই ভয়ে সে জানতে চাইলনা । সে বাজারের ব্যস্ত মানুষের চলাচলের দিকে তাকিয়ে রইল ।

‘সালেম যায়গাটা আসলে কেমন?’ ছেলেটি ধারণা পেতে ঘুরিয়ে জানতে চাইল ।

‘এটা বরাবর যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে ।’

এতেও কোন ধারণা পাওয়া গেলনা । তবে সে জানত যে সালেম আন্দালুসিয়ার কোথাও নেই । থাকলে এতদিনে সে অবশ্যই জানতে পারত ।

‘আচ্ছা সালেমে আপনি কী কাজ করেন?’ সে আবার প্রশ্ন করল ।

‘সালেমে আমি কী করি? আমি সালেমের রাজা !’-বৃদ্ধ হেসে ফেললেন।

(চলবে)


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

এ পর্বটি কি প্রথম পর্বের পরে এডিট করেছেন মামুন ভাই না আগেই লেখা? লাইভলি (গম্ভীর এর উল্টো হিসেবে) মনে হল কিছুটা! হাসি নাকি বইটাই এ জায়গায় এসে লাইভলি হয়ে যায়?

মামুন হক এর ছবি

এডিট করছি মিয়া, আগের পর্বের গম্ভীর ভাবটা পাঠক হিসাবে আমার কাছেও বিরক্তিকর লাগছে। ধন্যবাদ তোমারে ভাইয়া। এই টোনটা কি চলবে?

সিরাত এর ছবি

চলবে। 'যায়গা' ঠিক করলে দৌড়াবে! চোখ টিপি

মামুন হক এর ছবি

শালার পোড়া কপাল, বানানটা ঠিক করে লিখছিলাম, কিন্তু পরে সেভ করতে ভুলে গেছি। খুব লজ্জা পাইলাম।

সাইফ এর ছবি

বস, এখন আগের চেয়ে ভালো লাগতেছে, আর যে যাই বলুক না কেন, আপনে কোপাইতে থাকেন, আমরা আছি আপনার পিছে।

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ দিতে দিতে তো টায়ার্ড হয়ে গেলাম সাইফ ভাই হাসি
মানে লেখার প্রশংসার জন্য না, সব মিলিয়েই, কতো ব্যাপারেইনা তুমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও। তোমার ভাবী ঐ দিন বলে সাইফ সাউন্ডস রিয়েলি সাইফ...হাহাহা

ভুতুম এর ছবি

আপনি তো নগদে ইমপ্রুভড লেখা দিয়ে দিলেন! শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো। চালিয়ে যান।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

মামুন হক এর ছবি

ঐ মিয়া শ্রদ্ধা ধুইয়া পানি খামু? জলদি চেরাগ আলীর গল্প শেষ করেন দয়া কইরা, এমুন সব মজার গন্ধ ( নান্না মিয়ার মোরগ পোলাওয়ের মতো) পাইতাছি যে আর তর সইতেছেনা। ভাই না ভালা হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ইংরেজি আগে পড়া থাকায় ঘটনার যে জন্য অপেক্ষা সেটা কম টের পাচ্ছি নিশ্চিত কিন্তু নিজের ভাষায় তরতরিয়ে পড়ার মজাই আলাদা। এই মজাটা আপনার দ্বিতীয় পর্বে এসে পাওয়া শুরু করেছি।
একটা অনুরোধ, মাঝ পথে থামবেননা( যেটা আমার হয় আর কি)। কাজটা শেষ করুন। আপনার অনুবাদের ভাষা নিয়ে কিছু কথা বলা যায়, তবে এগুলো গৌন।

'বৃদ্ধা ছেলেটিকে পথ দেখিয়ে বাড়ীর পেছনের দিকের একটি কামরায় নিয়ে গেলেন , রঙ্গীন পুঁতির তৈরী পর্দা দিয়ে বসার ঘর থেকে আলাদা করা । আসবাব বলতে কেবল একটি টেবিল ,দু’টি চেয়ার আর ঈশ্বরপুত্রের পবিত্র হৃদয়ের একটি দেয়ালচিত্র মাত্র।
চেয়ারে বসার পর কোন ভণিতা ছাড়াই ছেলেটির দু হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে তিনি প্রার্থনা করতে শুরু করলেন । শুনতে জিপসীদের প্রার্থনার মত মনে হচ্ছিল ।'

- আমি লিখলে এভাবে লিখতাম। আবারো বলছি এটা গৌন, খুবই গৌন বিষয়। অনেক পাঠকের হয়তো আপনারটাই ভালো লাগবে হাসি

নিয়মিত পাঠক হিসেবে হাজিরা দিয়ে গেলাম। সবসময় মন্তব্য যদি না ও করি, পাঠের নিশ্চয়তা থাকলো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাইজান।
আসলেই আপনি যেভাবে লিখলেন সেটা আমার কাছেও অনেক বেশি ভালো লাগলো।
শিল্পী মানুষদের হাতের হালকা ছোঁয়াতেই এভাবে রুগ্ন শিল্প জীবন্ত হয়ে ওঠে ( এইটা কিন্তু মন থেকে বলছি)। আমি চেষ্টা করে যাব এ রকম করে শিখতে, হয়তো অনেক সময় লাগবে কিন্তু বেটার লেট দ্যান নেভার হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

সম্পূর্ণ আড়ষ্টতাহীন অনুবাদ সুদুর্লভ, কাজেই প্রথমবারের অনুবাদে সেই গুণ আশা করছি না। ভালো লাগছে, তাছাড়া মূল পড়া না থাকায় গল্পের আকর্ষণেও পড়া হয়ে যাচ্ছে।

ক্রিয়াপদের কাল (টেন্স) নিয়ে সম্পূর্ণ মূলানুগ না থাকা গেলে কিছুটা মসৃণ হয় অনুবাদ, আমার ধারণা। কখনো চ্যাটে আলাপ হবে তা নিয়ে।

লিখতে থাকুন।

মামুন হক এর ছবি

হ্যা মূলোদা অবশ্যই বলবেন, আপন ভেবে ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে দেবেন এই ভরসাতেই তো কাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং লিখে আপনাদের জ্বালাতন করার আস্পর্ধা দেখাই।

মূলত পাঠক এর ছবি

মূলোদা বললে কিন্তু "মূলোঘন্ট খান" বলে কেটে পড়বো!

আপনার পরিকল্পনা (যা নিয়ে সেদিন কথা হলো) নিয়ে যোগাযোগ করেছি কুমারসাহেবের সাথে, এই সপ্তাহে দেখা হবে। যদিও এখনো অবধি তাঁর বক্তব্য যা, তা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। মন খারাপ

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধুরো, এই বইটা আমি আগে অনুবাদ করতে চেয়েছিলাম, আপনি আগেই করে ফেল্লেন! তবে আপনার অনুবাদের ব্যাপারে পারমর্শগুলো যা পাওয়া যাচ্ছে তা থেকে অনেক কিছু শিখছি। গিনিপিগ আপনিই হোন। দেঁতো হাসি

তবে আপনি যে সাহস করে এই প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন তাতে সাধুবাদ জানাই।

একটা কথা, লেখকের নিজের ভাষায় ওনার নামের উচ্চারণ সম্ভবত: "কোয়েলিয়ো"।

মামুন হক এর ছবি

হে ধর্মপুত্র আমি যাহা করিতেছি উহাতে কুশলতার মান অত্যন্ত নীচু। তবে সৌভাগ্যের বিষয় এই যে আমার ভুল ধরিবার এবং সংশোধণ করিবার উদ্দেশ্যে অনেক মহান রাজপুরুষ তাহাদের সদয় হস্ত , মস্তিস্ক ইত্যাদি প্রলম্বিত করিয়া দিয়াছেন। আপনিও যোগদান করিয়া দোজাহানের অশেষ নেকী হাসিল করুন!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দুটো পর্ব একসাথে পড়লাম।
আমার কাছে ভাষার গতি বেশ সাবলীল লাগলো, মামুন ভাই।
বেশ ভালো লাগছে পড়তে। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল। আপনারা প্রশ্রয় দেন বলেই এই লেখা লেখির অভিনয়।

উজানগাঁ এর ছবি

মামুন ভাই, এই যে আপনার নিজেকে সবসময় অতিক্রম করার চেষ্টা ঐটাকে আমি শ্রদ্ধা করি। এই পর্বে এসে সেটা আরো ভালোভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে। মূল বইটা পড়িনি তাই বুঝতে পারছি না এটা কতপর্ব লাগবে আপনার শেষ করতে। তবে এইটুকু বলতে পারি, আপনার পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য আমি অপেক্ষায় থাকবো। হাসি

মামুন হক এর ছবি

ভাইজান এই যে আপনার মধ্যে অন্যদের প্রতি ( হোক সে আমার মতো দূর্বল) অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ দেখতে পাই আমিও সেটাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি। অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

"অদ্ভু" সুন্দর!! হাসি

ভাল্লাগল, মামুন ভাই। কাহিনীও জমে উঠল দেখি। তাড়াতাড়ি পরের পর্বটা দিয়েন।

'রানী' কি শেষ হবে না? চিন্তিত

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন। নিজের নামকে ধনেপাতা দিতে কেমন জানি উদ্ভট লাগে হাসি
রানী শেষ হবে ভাই, চেষ্টায় আছি।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

সত্যই জইমা গ্যাছে! হাসি
খুউব ভালো হচ্ছে মামুন ভাই।
মূলের প্রতি শ্রদ্ধা পাচ্ছি, আপনার মুন্সিয়ানাও টের পাচ্ছি।
প্রথম পর্বের চেয়ে আরো বেটার তো বটেই, আমার কাছে তো এমনিতেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিসাবেও অনেকই ভালো লাগছে।
চালায়া যান, অপেক্ষায় থাকলাম অধীর।
চলুক
পাঁচতারা দিয়া গ্যালাম নির্দ্বিধায়।
হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

মামুন হক এর ছবি

আমার প্রিয় গদ্যকার সাইফুল ভাই যদি এ কথা বলেন তাহলে নো চিন্তা ডু ফূর্তি মনে এগিয়ে যাব। থ্যাংকস ব্রো হাসি

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

জি.এম.তানিম এর ছবি

এই পর্বটা পড়ে আগের থেকেও ভাল লাগল। মামুন ভাই, চালিয়ে যান। জলদি পরের পর্বগুলো চাই!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

তানবীরা এর ছবি

পড়ছি

---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।