প্রবাসে চর্ম গোলকের চক্করে

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: সোম, ০৮/০৬/২০০৯ - ৭:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছর দু'য়েক আগে আমাগো টিমের নতুন ইংরাজ ম্যানেজার ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে আমারে কয়, দ্যাখ সামনে বছরের সবচে বড়ো টুর্নামেন্ট আমি এইডা জিতবার চাই। আমি কইলাম খুব ভালো কতা বস, ক আমার কী করতে হইব। ভরসা পাইয়া লালমুখো বান্দর শালায় আমারে যা কইল তাতে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। ভক ভক কইরা বিয়ারের গন্ধ ছাইড়া হড়বড় কইরা কয় -দ্যাখ তোর আর আগের মত বেইল নাই, তোর খেলায় সোনালী দিনের ঝলক এখনো মাঝে মাঝে দেখি, কিন্তু এইটা তো ঝলক দিখলা যা এর কম্পিটিশন না, তুই বরং অফ যা , আমি তোর পজিশনে (সেন্ট্রাল মিডফিল্ড) জার্মান রাফায়েল হালারে খেলাই, ওই হালায় জ়েরার্ডের মতো বক্স টু বক্স দৌড়ায়, আর দশ মিনিট দৌড়াইলেই হাঁপানী রুগির মতো তোর চেহারা হইয়া যায়, তুই উপ্রে উঠলে নিচে নামস না আর নিচে নামলে উপ্রে উঠতে পারস না। তুই বরং ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডার হিসাবে লোথার ম্যাথাউস বা লিলিয়াম থুরামের পজিশনে খ্যাল, তয় আগেই কই সব খেলায় যে তোরে নামামু তার গ্যারান্টি নাই, ভাও বুইজ্জা যেই খেলায় লিংক পজিশনে লুক লাকবো সেইটায় তোরে নামামু, আর নাইলে তুই বেঞ্চে বইসা মাছি মারবি।

আমার মিজাজ সাংঘাতিক খারাপ হইল, কইলাম শালা তুই কী বাল বুজস, আমি যতক্ষন মাঠে থাকি ততক্ষনই আমগো দলের জিতার এট্টা চান্স থাকে, কী দেখলি এত বছর?, টুক টাক যা জিতছি সবই তো আমার গোলে বা প্লেটে সাজাইয়া দেওয়া বলে। হালায় কয় হ জানি স্পট কিকে তোর থিকা ভালো কেউ নাই, কিন্তু ফুটবল তো খালি পেনাল্টি , ফ্রী কিক বা কর্ণার কিকের খেলা না, হ জানি তুই ট্যাকলও ভালো করস, সাধে কী আর তোরে সবাই কসাই কয়, কিন্তু আমার দলে প্রথম এগারো জনে থাকতে হইলে সবচে আগে নাগবো ফিটনেস, তর হেইডা নাই, বিড়ি টাইনা তোর দম খতম, দুই হাঁটুতে আর অ্যাংকেলে পট্টি বাইন্ধা খেলস, রাফায়েলরে দ্যাখ হালায় পুরাই গুল্লি, তোর মতো স্কিল না থাকলেও স্প্রিন্টারের মতো দৌড়ায়। যাউক গা অনেক তর্কা তর্কির পর দুইজনে রফা করলাম যে এই টুর্নামেন্টে আমি আমার জায়গায়ই খেলুম, রাফায় থাকপো অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডার হিসাবে আমার সামনে, আর যদি এইবার কমসে কম কোয়ার্টার ফাইনালে যাইতে না পারি তাইলে আমি শ্যাষ, হয়তো বদলী হিসাবে টিমে থাকুম , নাইলে তিন নম্বর দলে গিয়া ফুল টাইম খেলুম। মনডা বিষম খারাপ হইলো, এক নম্বর দল থিকা আগেই ইস্তফা দিছি , ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দেওয়ার আগেই, বুড়া হাড্ডিতে এত চাপ মানায় না। ভাবছিলাম এই মাঝারী দলটায় মনের সুখে খেইলা যামু, টিমটা আমিই বানাইছিলাম আরো কয়েকজনের লগে মিল্যা। এহন যা অবস্থা তাতে এই টিম থিকাও বাদ যাওন লাগব, যাউক লাস্ট ট্রাই মাইরা দেখি কী হয়।

এই দেশে ফুটবলের ভাত নাই, পুলাপান সব বেসবল আর বাস্কেটবল নিয়া মাতামাতি করে। আমরা সৌখিন বিদেশী ফুটবলাররাই সারা বছর নানা রকম অপেশাদার লীগ আর টুর্নামেন্ট খেইলা ফুটবলের জান বাচাইয়া রাখি। তিন মাস পর পর দেশের বড় চাইর শহরের এক শহরে ষোলটা টিম নিয়া দুই দিনের জম জমাট টুর্নামেন্ট হয়, এইটাই আমাগো কাছে উৎসবের মতো। সবচে বড়োটা হয় রাজধানী শহর তাইপেতে, খালি এইখানেই আমরা মিডিয়ার কাছে এট্টু পাত্তা পাই, রেডিও, টিভির লগে বড় দৈনিকের সাম্বাদিকেরাও দুই চাইর মিনিটের জন্য পায়ের ধূলা দিয়া যায়। ম্যানেজারের লগে গিয়াঞ্জাম কইরা মিজাজটা খারাপ হইলেও দানা বান্ধতে থাকা হতাশাটারে বড় বিলাই দিয়া আয়েশ মতো গুল্লি কইরা টিমের লগে তাইপে গেলাম গা , কোয়ার্টার ফাইনাল আর নাইলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক।

প্রথম খেলা চ্যাম্পিয়ন টিমের লগে, হেরা ঘোষনা দিয়াই নামলো যে পাঁচ গোল দিব, খেলা শুরুর বিশ সেকেন্ডের মধ্যে হেগো জাপানী স্ট্রাইকার ডাইভিং হেডে এট্টা গোল দিয়া পরমান করলো যে হেরা তামাশা কইরা পাঁচ গোলের কতা কয় নাই। কিন্তু পরের মিনিট থেইকাই আমরা খেলাডা ধইরা নিলাম , যদিও আপ্রান চেষ্টা কইরাও গোল আর শোধ করতে পারলাম না। ম্যানেজার কিছু কইলনা, নিজেই দেখছে আমরা জান প্রান দিয়া লইড়া গেছি, আমার একটা শট পোস্টে না লাগলে ফল অন্য রকম হইত।

পরের খেলা একটু দূর্বল একটা দলের লগে, আমরা টার্গেট করলাম হালি খানেক না হইলেও গোডা তিনেক গোল দিমু, না হইলে গোল অ্যাভারেজে পিছাইয়া যাইতে হইব। কিন্তু কীয়ের কি, আমি বলের পর বল বাড়াই সামনে কিন্তু কেউই আর গোল দিবার পারেনা, কানাডার পোলা ইয়ান এক্কেবারে ফাকা জাল পাইয়াও বাইরে মারলো, কেম্নে সেইটা আজতক কেউ বুজতে পারে নাই। খেলার দুই মিনিট বাকী, আমরা একটা কর্ণার পাইলাম, মিশরী উটের বাচ্চা খালেদ আমারে না জিগাইয়া নিজেই মারতে গেল, কিন্তু বলদের ঘরের বলদ বল উঠাইয়া দিল এক্কেবারে গোল কিপারের হাতে। আমি বুজলাম যে আমার হইলো সারা, এই ম্যাচের পরেই বুট মাচায় উঠাইয়া রাখুম, না জিতলে কোয়ার্টার ফাইনালে আর যাওয়া যাওয়ি নাই , আমারও আর খেলা খেলি নাই। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক, লাস্ট মিনিটে আরেকটা কর্ণার পাইলাম, এইবার আমি নিজেই গেলাম মারতে। আস্তে আস্তে কর্ণার ফ্লাগের দিকে যাই আর ভাবি, এইবার যদি কিছু না হয় তাইলে আর কোন আশা নাই, সবাইরে কইলাম ডি বক্সের ভিত্রে গিয়া ঢুকতে, এমনকি গোল কিপাররে পর্যন্ত আগাইয়া আনলাম । তারপর খুব খিয়াল কৈরা সেকেন্ড পোস্টের উদ্দেশ্য ব্যানানা কিক মারলাম...বল উড়তাছে...উড়তাছে...আমি, আমার দলের পুলাপান, সাইড লাইনের সবাই হা কইরা তাকাইয়া আছি...দেখলাম বল ভাসতে ভাসতে ছয় গজী বক্সের মাথায় আইসা হালে বাতাস পাওয়া ঘুড্ডির মতো গোত্তা মাইরা পোস্টের দুরুহ কোনা দিয়া জালে ঢুইকা গেল! গোওওওওওওওল...মামুউউউউউউউউন কইরা সবতে চিক্কুর দিয়া উঠল আর আমি জার্সি খুইলা মাথার উপ্রে ঘুরাইতে ঘুরাইতে জংলী জানোয়ারের মতো দৌড় লাগাইলাম...পিছনে আমার পুরা টিম...অতিরিক্ত খেলোয়াড়রাও জান বাজি রাইখা ধাওয়া কইরা আমারে মাটিতে পাইড়া ফালাইল...জার্সি খোলার অপরাধে হলুদ কার্ড দেখলাম কিন্তু আমার দল জানে পানি পাইল। ঐ গোলডার পর পুরা টিম মিলা সিদ্ধান্ত নিল, আমি যতদিন ইচ্ছা দলে থাকুম, আমারে কোন ম্যানেজারের বাপেও চাইলে হটাইতে পারব না।

সেইবার খোদায় আমাগো দলে আছিল। পরের খেলা সুপার ঈগলসগো লগে, সব পরবাসী নাইজেরিয়ানগো টিম। এরা খেলে ভালো, কিন্তু ডাকাইতের মতো, কুন মায়া দয়া নাই, হেগো চিন্তা ভাবনা হইল...আয় বাবা দেইখা যা...একটা ঠ্যাং রাইখা যা। একবার মারামারি কইরা হেরা পুরা এক বছরের লাইগা ব্যান খাইছিলো কিন্তু খেলার ইস্টাইল বদলায় নাই। কয়েক বছর আগে এই মাঠেই এক খেলায় আমারে তাগো এক ডিফেন্ডার পিছন থিকা আইসা জোড়া পায়ে লাত্থি মারছিল, এখনো পায়ে দাগ আছে। আমিও হালার কল্লা চাইপা ধরছিলাম, রক্তা রক্তি কান্ড, কিন্তু রেফারী লাল না দেখাইয়া দুইজনেরেই হলুদ দেখাইয়া ছাইড়া দিছিল। যাউকগা এই খেলায়ও আমাগো জিততে হইব, খেলা শুরুর দশ মিনিটে হেরা খালি চাপাইলো আর আমরা এগারো জনে ডিফেন্ড করলাম, এর পরেই এক তাজ্জব কান্ড, কমিটির লুকজন আইসা খেলা বন্ধ কইরা দিল, নাইজেরিয়ান হালারা নাকি বেআইনি ভাবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া পিলিয়ার মাঠে নামাইছিল। আমাগোরে বাই লজ অনুযায়ী ২-০ গোলে জিতাইয়া দিল আর আমরা হন হনাইয়া কোয়ার্টার ফাইনালে উইঠে গেলাম। কোয়ার্টার ফাইনালেও আমরা দুর্দান্ত খেলছিলাম, কিন্তু টাইব্রেকারে হাইরা যাই। পরের বছর আইসা কাপ জিতা যামু এই প্রতিজ্ঞা কইরা আমার ফিরৎ গেলাম।

গত বছর তাইপে টুর্নামেন্টের আগে আমাগো প্রস্তুতি খুব ভালো চলতেছিল। কুন ইঞ্জুরি নাই, আঠারো জনের সবাই রেডী। ট্রেনিংয়ের শেষ দিনে আমরা আমাগো এক নম্বর টিমের লগে একটা ফ্রেন্ডলী ম্যাচ ঠিক করলাম। আমাগোই বন্ধু বান্ধব কিন্তু তারা পুরা দেশে চ্যাম্পিয়ন আর আমরা তখনও খালি স্বপ্নই দেহি। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হবে রাতের বেলা, ফ্লাড লাইটের আলোতে। খেলার মজাই আলাদা। আমরা ফাটাফাটি রকমের ভালো খেলতছিলাম, ফাস্ট হাফে ডি বক্সের মাথা থিকা হাল্কা চিপে গোল মারলাম একটা, হেরা ঝাপাইয়া পইড়া আক্রমনের ঝড় তুলল কিন্তু গোল আমরা আইজ রাইতে আর খামুনা, আমিও বক্স টু বক্স দৌড়ানো শুরু করলাম...এতদিনে ম্যানেজারের মুখে হাসি ফুটল। রাফা হালায়ও আমার লগে দৌড়াইয়া পারেনা। সেকেন্ড হাফে আমরা ভাবলাম অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স, কাউন্টার অ্যাটাকে হেগোর জান ঝালাপালা কইরা ফালাইলাম। এমুন সময় ঝল মইলা রাইতটা কাল রাইতে রূপ নিল। আমি একটা বল পাইলাম বাম দিকের লাইনের কাছাকাছি, বল ধইরাই একটারে ডজ দিয়া কাইত কইরা সামনে ছুটলাম, দেখি সামনে ছয়ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা আর পাচ ফুট চওড়া ইটালিয়ান স্ট্যালিয়ন টম প্যাসিওলা, হালায় এমনিতে চলে হাতির মতো হেইল দুইলা, ভাব্লাম অরে বডি ডজ দিয়াই কাটাইয়া যামু। কিন্তু হেই রাইতে বান্দির পুতে মাল মুল কী জানি খাইছিল কে জানে, পুরা হাই স্পীড ট্রেনের গতিতে আমার দিকে তাইড়া আসল, আমি সইরা যাওনের আগেই লম্বু বলদের কান্ধের লগে ধাক্কা খাইয়া আমার চোখ মুখ পুরাই ভসকাইয়া গেলো। চোক্ষে মুক্ষে আন্ধার দেখতে দেখতে চাইর হাত পাও ছড়াইয়া মাটিতে পড়লাম, উঠতে না উঠতেই বুক ভাসাইয়া রক্ত পড়া শুরু হইল। নিমেষেই রক্তে সব সয়লাব, খেলা বন্ধ, হালার পুতে আমারে টাইনা উঠাইয়া কয় তোর নাক তো পুরাই ভাইঙ্গা গ্যাছে, এক্ষুনি ডাক্তারের কাছে যা। আমি কিছু না কইয়া এক হাতে রক্ত সাফ করতে করতে বেঞ্চে গিয়া বসলাম। পুলাপান আইসা টিসু মিসু হাবি জাবি হাতে দিয়া নাক চাইপা ধইরা আসমানের দিকে চাইয়া থাকতে কইল। বড় খেলার আর তিন দিন বাকী, আমি বুজলাম আমার খেলার আশা শ্যাষ। তবু একটা ট্রাই মাইরা দেখুম ডাক্তরে কী কয়, একলা একলাই গাড়ি চালাইয়া গেলাম হাস্পাতালের ইমার্জেন্সীতে। রক্তা রক্তি কান্ড দেইখা নার্সেরা দৌড়া দৌড়ি লাগাইয়া দিল, এক্স রে কইরা দেখল নাকের নরম হাড্ডি দুই টুকরা। অপারেশন ছাড়া গতি নাই। আমারে সেই রাইতে আর বাসায় যাইতে দিলনা, ঘুম পাড়াইয়া রাখলো। পরদিন ভোরে অপারেশন থিয়েটারে নিয়া কয়, তোমার আত্মীয় স্বজন কাউরে খবর দেও, অপারেশন টেবিলা মইরা টইরা গেলে আমরা দায়ী না এই মর্মে সাইন করার লোক লাগব। আমার বউ তখন বাপের বাড়ী, আমি কইলাম আমার ত্রিভূবনে কেউ নাই, সাইন আমিই করুম এখন কথা বাড়াইয়া চাক্কু চালাও। অপারেশনের পর ঘুম থিকা উইঠা আয়নায় দেইখা নিজেরেই চিনি না, নাক দিয়া বড় বড় প্লাস্টিকের নল বাহির হইয়া রইছে, পুরা চেহারা ঢাকা ব্যান্ডেজ। টিম আমারে রাইখাই তাইপে গেলো , প্রথম রাউন্ডেই আউট, আমারে ফোন কইরা পুলাপান কয় বস তুমি থাকলে অন্যরকম হইত, যাউকগা সামনের বছর তোমারে লইয়াই কাপ জিতুম। আমি কতা কইতে পারি না, খালি নাঁকি সুরে কইলাম হ...খাড়া ভালো হইয়া লই।

ভালো হইলাম, মাঠে আবার নামলাম, আশায় বান্ধি বুক। বড় কাপটা জিতাই রিটায়ার করুম। গরীব ঘরের পোলা , দেশে থাকতে পয়সার অভাবে বুট পর্যন্ত কিনতে পারি নাই অথচ একটা বড় ট্রফি জিতা ক্যামেরার ফ্লাশের সামনে ভেটকি দিয়া খাড়াইয়া থাকায় বড় সাধ আছিল। এখন পয়সার সমস্যা নাই, কিন্তু শইল তো আর মানেনা। তার পরেও চালাইয়া গেলাম, লাত্থি গুতা খাইয়াও থামিনা। কিন্তু আমারে থামাইতে ভাগ্য পিছে লাগছে সেই কবে থিকা। যখন পুরানা ফর্ম ফিরা পাইলাম তখনই হামলাইয়া পড়ল জীবনের সবচে বড় আঘাত, গত বছরের শেষ দিকে এক লীগ ম্যাচে কোস্টারিকান এক বদমাইশ পিছন থিকা এক ভয়ংকর স্লাইড ট্যাকলে আমার হাটুর সব থিকা জরুরী লিগামেন্টটারে টুকরা টুকরা কইরা দিল। হাটু রিকন্সট্রাকশন করা ছাড়া গতি নাই, বাধ্য হইয়া মাস কয়েক আগে অপারেশনটা করাইলাম। আমার দলের পুলাপান আমারে খুব ইজ্জত করে, ভালো পায়, তারা আমারে ডেডিকেট কইরা সারা দেশের দল গুলারে নিয়া বড় একটা টুরনামেন্ট আয়োজন করল, সিটি মেয়রের জায়গায় আমারে দিয়া পুরুস্কার বিতরনী করাইল, আমি সাইড লাইনে খাড়াইয়া ক্রাচে ভর দিয়া চিল্লা পাল্লা কইরা আমাগো টিমরেই ট্রফি জিতাইলাম। পাও একটু ভালো হইলে আমারে কইল ম্যানেজারী করতে, আমিও আবার তো খেলুমই ভাইবা রাজী হইলাম।

পরশু দিন গেলাম আমার সার্জনের কাছে, তারে জিগাই ডাক্তর সাব কেমুন দেখলেন আমি আর কয় মাস পরে মাঠে নামতে পারুম? সে আমার দিকে চাইয়া কয় মিয়া এত লাফাও ক্যান, তোমার ইঞ্জুরী নিয়া মাইকেল ওয়েন মাঠে নামছে তের মাস পর, এসিয়েনের লাগছে এগারো মাস, আর তোমার তো মাত্র গেলো আড়াই মাস। বছর খানেক যাউক তারপর দেখি, তয় মাঠে যে আবার নামতে পারবা তার কুন গ্যারান্টি নাই, ফিফটি ফিফটি চান্স। তার লগে বিয়াপক তর্ক হইল, কইলাম মামু গ্যারণ্টি যদি দিবার না পারো তাইলে ভগি চগি দিয়া আমার হাটুটারে কাইট্টা ফালা ফালা করলা ক্যান? আগে তো তাও ব্যাডমিন্টন বা পিং পং খেলতে পারতাম আর এখনতো তাস পিটানো ছাড়া কুন গতি নাই...হালায় কয় বুড়া বয়সে যাতে আর্থারাইটিস না হয় তার লেইগা চাক্কুবাজি করছে, আমার খেলা লইয়া তার কুন মাথা ব্যথা নাই। মন মিজাজ খারাপ কইরা চইলা আসলাম, বুড়া হইতেছি সব শখ তো সবার লেইগা না।

কাইল লীগের একটা খেলা আছিল, আমার টিম চালানোর কথা, গেলাম না, অন্য ম্যানেজাররে কইলাম দেখতে। রাইতে পুলাপাইন ফোন দিল, জিগায় বস কী হইছে তোমার? ডাক্তরে কী কইছে? তুমি আইজকা আইলানা ক্যান মাঠে? আমরা তোমারে খুব মিস করি। এই মাসের শ্যাষেই তো আবার তাইপের বড়ো খেলা, তুমি না গেলে কিন্তু এইবারও আমাগো ট্রফি জিতা হইবোনা। আমি চুপ কইরা থাকি...কী কমু... মনে মনে কই বাঞ্চোতের দল আমি কি মিস করিনা তগো হোগায় লাইত্থানো আর নিজেও লাত্থি খাইয়া মাটিতে পইড়া ঘাসের গন্ধ শুইকা আবার লাফ দিয়া উইঠা বল লৌড়ানো?
মুখে কই.. কিপ মিসিং মি কিডস, দেয়ার ইজ নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন...


মন্তব্য

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

এক বছরে কিছু হবে না বস ... আবার স্বমহিমায় মাঠে ফিরে আসুন এই কামনা রইলো
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, ফিরে আসব অবশ্যই , দরকার হলে বায়োনিক ম্যান হয়ে হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মামুন হক এর ছবি

চিন্তাইয়েন না বস , সব ঠিক হয়া যাইব, নিজের মন খারাপ থাকায় স্বার্থপরের মতো আপ্নাগো মনডাও খারাপ কইরা দেওয়ার মতো একটা পচা কাম করলাম, দেশে আইসা মিঠাই মনডা খাওয়াইয়া মনডা আবার ভালা কইরা দিমুনি

সাইফ এর ছবি

ভরসা পাইয়া লালমুখো বান্দর শালায় আমারে যা কইল তাতে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। ভক ভক কইরা বিয়ারের গন্ধ ছাইড়া হড়বড় কইরা কয় -দ্যাখ তোর আর আগের মত বেইল নাই, তোর খেলায় সোনালী দিনের ঝলক এখনো মাঝে মাঝে দেখি, কিন্তু এইটা তো ঝলক দিখলা যা এর কম্পিটিশন না, তুই বরং অফ যা

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হাততালি পুরা গুল্লি টাইপের লেখা।

আহা বস, কি লেখাই না দিলেন, শুরুর অর্ধেক পইড়া হাসতে হাসতে জান শেষ ভাগে আসিয়া মনটা বড়ই খারাপ হইল। আশাকরি ৬ মাসের মধ্যে মাঠে ফিরা যাইবেন।

মামুন হক এর ছবি

তুমি ডাক্তর মানুষ, ভালো জানবা। কিন্তু আমি আমার নামুম মাঠে এই হইল কথা

দ্রোহী এর ছবি

টীমের ছবি দেখে মুগ্ধ!

আমিও সামান্য ফুটবল খেলি। তবে আমাদের দলের অবস্থা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মতো। তাই আমি বিজ্ঞাপন দিয়েছি, "বুট বিক্রী হবে"।

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ দ্রোহীদা, মুগ্ধ হওয়ার মতো আরো কিছু ছবি ছিল, কিন্তু সেগুলা কমেন্টে কেম্নে আপ্লোড করে বুঝলাম না, ছবিতে ক্লিক করলেই ওয়েব অ্যাড্রেস চায় কিন্তু সব তো ফোল্ডারে জমানো...

হিমু এর ছবি

সবচে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে, ফ্লিকারে আপলোড করেন। তারপর ছবিতে ক্লিক করলে দেখবেন ডানদিকে শেয়ার করার অপশন আছে। সেখান থেকে গ্র্যাব দিস লিঙ্কে ক্লিক করলে একটা কোড পাবেন এমবেড করার জন্য। সেটা এনে পেস্ট করে দিলেই কিচ্ছা খতম।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সবজান্তা এর ছবি

মারাত্মক টান টান লেখা। আমি কইতে পারেন এক নিঃশ্বাসেই পড়লাম। আপনার তো ভাই গল্প কওনে ভঙ্গি ফাটাফাটি।

আর বস শুনেন, এতো ঘাবড়ায়েন না, কয়টা দিন রেস্ট নেন, দেখবেন ঠিক হয়া গ্যাছে। পরের বছর কাপে আপনি খেলবেন, চ্যাম্পিয়ান ভি হইবেন। ফু দিয়া দিলাম।


অলমিতি বিস্তারেণ

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ সবজান্তা ভাই, তুমি সব জাইনা যখন বলছ তাইলে তাই সই। আর ঘাবড়ামুনা...দেখি কী আছে কপালে

অর্জুন মান্না [অতিথি] এর ছবি

হাসি

মামুন হক এর ছবি

হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার লেখা, মামুন ভাই!

আপনার লেখার জনপ্রিয়তার কথা ভেবে আপনার অনুমতি ছাড়াই এখানে একটা তথ্য জানার জন্য পাঠকদের উদ্দেশে লিখছি, আশা করি মামুন ভাই কিছু মনে করবেন না।

আমার এক বন্ধুর জন্য এমন একটা ওয়েবসাইটের খোঁজ চাই যেখানে আমেরিকা-নিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য রিয়াল এস্টেট, রেন্টাল ও সাব-লিজের খোঁজ পাওয়া যায়। আমার এক বন্ধু একটি দক্ষিণ এশিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত, সেই বাবদ আমেরিকাবাসী বাঙালী মেয়েরা যাঁদের সহায়তা দরকার হয় তাঁদের জন্য এই তথ্যটি কাজে লাগবে।

কেউ জানলে জানাবেন দয়া করে।

মামুন হক এর ছবি

সাংঘাতিক মাইন্ড খাইছি মূলোদা, এখন নগদে আমার এই কিচ্ছা নিয়া একটা কমিক্স সিরিজ বানান হাসি

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

এই ফাঁকে লুহার মৌজা বানিয়ে ফেলুন।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মামুন হক এর ছবি

হ। আইডিয়া খারাপ না

দুর্দান্ত এর ছবি

সবতে চিক্কুর দিয়া উঠল আর আমি জার্সি খুইলা মাথার উপ্রে ঘুরাইতে ঘুরাইতে জংলী জানোয়ারের মতো দৌড় লাগাইলাম

বুড়া হইতেছি সব শখ তো সবার লেইগা না

কিপ মিসিং মি কিডস, দেয়ার ইজ নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন

গল্পটা আমি পড়লাম। মনে হইল ক্লিন্ট ইস্টউডের বানানো কোন ফিল্ম দেখতাসি। অসাধারন ন্যারেটিভ।

একটু ধৈর্য ধরেন বস, তিরিশ-চল্লিশ কোন বয়স না। হাঁটুটারে একটু সময় দেন। এক দুইটা বাচ্চা ফুটান। এর মধ্যে দেখবেন আবার " লাত্থি খাইয়া মাটিতে পইড়া ঘাসের গন্ধ শুইকা আবার লাফ দিয়া উইঠা বল লৌড়ানো" শুরু হইয়া গেসে।

মামুন হক এর ছবি

আপ্নেতো বস আগে থিকাই সব জানেন, সব সময়েই হাত পা কান সব বাড়াইয়া দিয়া রাখছেন, ধন্যবাদ দিয়া আপ্নেরে খাটো করুম না

তানবীরা এর ছবি

অথচ একটা বড় ট্রফি জিতা ক্যামেরার ফ্লাশের সামনে ভেটকি দিয়া খাড়াইয়া থাকায় বড় সাধ আছিল।

ব্যাপার না বস, জীবনতো হপায় শুরু

---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মামুন হক এর ছবি

হ আফা, মাত্রতো মিড লাইফ ক্রাইসিস শুরু, সামনে খেলা আরো কতো বাকী...

কীর্তিনাশা এর ছবি

পুরা লেখা পইড়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি। শেষের দিকে আইসা আবার মন খারাপ হয়ে গেল।

যাউকগা - এই লেখা পইড়া আপনারে গুরু না মাইনা উপায় নাই গুরু গুরু

আর মন খারাপ কইরেন না বস॥ আবারো সদর্পে মাঠ কাঁপাইবেন এই শুভ কামনা রইলো হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ কীর্তি, আপনার সর্বনাশা হাসি শুনে আমারো মন ভালো হয়ে যাচ্ছে

আকতার আহমেদ এর ছবি

"কস কী মমিন" টাইপের অনুভূতি হইসে লেখা পইড়া। আপ্নে তো মিয়া বিরাট প্রতিভা!
যাই হোক, কয় মাস অফ থাকেন। তারপর মাঠে ফিরা যান আবার। ট্রফি জিতেন, ভেটকি দিয়া ছবি তুলেন, অত:পর রিটায়ার কইরা বাকী জীবন বিড়ি খায়া আর সচল কইরা কাটায়া দেন। ফ্রি-তে দোয়া কইরা দিলাম.. যান!

মামুন হক এর ছবি

ধুরো পরতিভা দ্যাখলেন কই...হাউশ আছে বস্তা ভরা এই যা
দোয়ার জন্য ধন্যবাদ বস

উজানগাঁ এর ছবি

ভাইরে, লেখাটা পড়ে চার্লি চ্যাপলিনের ছবি দেখার অভিজ্ঞতা হইল। একদিকে যেমন হাসি পাচ্ছিল আবার মন খারাপও হচ্ছিল অন্যদিকে।

দোয়া থাকল, সুস্থ হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি। হাসি

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই, আপনার নামটা জানার খুব ইচ্ছা ছিল, উজান গাঁ তো আপনার গেরামের নাম মনে হয়

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

সেটাই!!! দেয়ার ইজ নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন মন খারাপ

মামুন হক এর ছবি

লেটস নট গেট ওল্ড দেন হাসি

ইফতেখার আনাম এর ছবি

আসলেই সব কিছু যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
কিছুদিন বিশ্রাম নেন। এই ফাঁকে আরো কিছু পোস্ট চাই। হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পুরোটা আরাম করে পড়বো বলে দেরি করে এলাম। খেলতে নামে সবাই, ব্যাথা পাই আমি একাই। আপনার এই পোস্টের সাথে সাথে তাই নিজের অনেক যন্ত্রণাকাতর মুহূর্ত মনে পড়ে গেল। তবুও কি খেলা থেকে দূরে থাকা যায়, বলেন? এই যে আমি এখনও মচকানো পা আর ভচকানো লিগামেন্ট নিয়েও খেলতে নেমে যাই প্রায় প্রতিদিন... খাইছে

মামুন হক এর ছবি

হ ভাই ২০০৮ সালে ভাগ্য আমার লগে করল খালি প্রতারণা, ২ টা সার্জারী ( রি কন্সট্রাকশনের আগে হাঁটুতে আরেকটা ছোট অপারেশন করতে হ ইছিল) আর অসংখ্য ছোট-বড় ইনজুরী। কিন্তু হাটুঁর লিগামেন্ট নিয়া সাবধানে থাকবা, এর চেয়ে বাজে ইনজুরী আর ত্রিভূবনে নাই। আমার প্রথম লিগামেন্ট টিয়ার হয় ২০০৫ সালে, কিন্তু না থাইমা খেইলা গেছি, সেই পাপের ফল এখন ভোগ করতেছি।

রেনেট এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা! আপনার হার না মানা মানসিকতার ভীষণ ভক্ত আমি প্রথম থেকেই। আর সে জন্যই জানি, আপনাকে সান্তনা দেয়ার দরকার নেই। আপনি জাত চ্যাম্পিয়ন। স্যালুট আপনাকে।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বহুত মজা করেই পড়তেছিলাম। নাক ভাঙা আর রক্তারক্তির পর আর পারলাম না। আমি আবার দুব্বল মনের মানুষ কি না হাসি
তাড়াতাড়ি আবার খেলায় ফেরত আসেন, এই শুভকামনা থাকল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।