নিজেকে কখনই আমি কম্পালসিভ পেসিমিস্টদের দলে ফেলিনা...সব কিছুর মধ্যেই ইতিবাচক কিছু খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু গত কিছুদিন যাবৎ মন খুব বিক্ষিপ্ত অবস্থায় আছে। কারণ নতুন কিছু না, আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। অন্যান্য সব ক্ষেত্রে আত্মসম্মান বোধ খুব তীব্র হলেও নিজ দেশের ক্ষেত্রে এসে বিশ্ব বেহায়া আমি, আমি একা না আপনারাও সবাই আমার সাথে। আর তাই যেই দেশ ভাত দেয়ার ভাতার না কিল দেয়ার গোঁসাই, সে দেশের জন্য স্বদেশে বা বিদেশ বিভুঁইয়ে আমাদের পেট পুড়ে। আমরা দেশের জন্য ভাবি, কষ্ট পাই, দেশের নামে কেউ খারাপ কিছু বললে কোমরে গামছা বেঁধে তার প্রতিবাদ করি। কিন্তু এভাবে আর কত? বিনা পুঁজিতে আর কতোকাল আমরা দেশ গৌরবের এই আত্মপ্রসাদ উপভোগ করে যেতে পারব? গৌরবময় ইতিহাস চিবিয়ে তো ছিবড়ে বানিয়ে ফেললাম কিন্তু ইতিহাস তো ভাত দেয় না।
এই লেখার শুরুতে দেশ নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে মাছের মায়ের অনেক অশ্রু বিসর্জন ঘটিয়ে ছিলাম, কিন্তু পরে পড়তে গিয়ে খেয়াল হলো- একটাও নতুন কথা লিখতে পারিনি, মুছে দিলাম সব পুরানো ঘ্যান ঘ্যানানি--দেখনদারী গণতন্ত্রের হাতে জিম্মি গোটা জাতি, সর্বস্তরে দুর্নীতির আত্মীয়করণ, চোরাবালি--মজা পুকুর--ধ্বসে যাওয়া কড়িকাঠ --উদ্ভট ঊট...এইসব আগডুম বাগডুম--এগুলা তো এখন ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও জানে, এমনকি এর থেকে পরিত্রানের উপায়ও জানা, কিন্তু তার বাস্তবায়নের চাবিকাঠি নেই আমাদের হাতে... এই দেশের কাছে আপনার আমার মতো মুর্খ দেশপ্রেমীদের কি চার আনা দাম ও আছে?( দীর্ঘশ্বাসটা বরং বেহায়ার মতো গিলেই ফেলি)।
গত সপ্তাহে দেশ থেকে এক ব্যবসায়ী ভদ্রলোক আসলেন। আমার অনুরোধে সঙ্গে নিয়ে আসলেন রাজস্ব বোর্ড কতৃক প্রকাশিত আমদানী-রপ্তানীর সাথে সম্পর্কিত বাংলাদেশ গেজেট, অর্থ আইন, কাস্টমস আইন এবং আরো কিছু পুস্তিকা। তো সেগুলো নিয়ে পড়াশুনা করে কাস্টমস এর আইন আর প্রয়োগগত ফাক-ফোকড় আর দেশের অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন আর কোন উৎসাহ পাচ্ছিনা-- দেশের এই বেহাল অবস্থার পেছনে জনবিচ্ছিন্ন অপগন্ড সরকার না রাক্ষস-খোক্কস ব্যবসায়ী মহল বেশী দায়ী সেই ডিম আগে না মুরগী আগের চিরন্তন দার্শনিক প্রশ্নের সুলুক সন্ধানে মাথা ভারী হয়ে আছে।
ইদানীং ভুতের মুখে রাম নামের মতো সরকারের হর্তা কর্তাদের বয়ানে কালো টাকার প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসছে। টাকা তো টাকাই--সেটা আবার কালো বা সাদা হয় কীভাবে? আসলে কালো টানা বলতে সরকার বাহাদূর অপ্রদর্শিত আয়কে বোঝাতে চেয়েছেন, কল্যাণমুখী অর্থনীতির পথে টাকার বর্ণবাদ এক বিরাট অন্তরায়--এই ছিল তাদের যুক্তি। কিন্তু তারা আসল কথাটা চেপে গেছেন সযত্নে- কালো টাকা আসলে সরকারী আত্মঘাতী কালা কানুনের সৃষ্টি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। আসলে কথা টানলে অনেক কথা আসবে। ছোট একটা উদাহরণে ব্যাপারটা বলি, ধরেন আবুল লবণের ব্যবসায়ী। দেশে যেহেতু লবণের চাহিদা অনেক বেশি তাই বিদেশ থেকেও আমদানী করতে হয়। এখন লবণ আমদানী করতে গিয়ে আবুল দেখল সরকার এর আমদানী শুল্ক নির্ধারণ করেছেন ২৫%, তার উপরে ভ্যাট আছে , আছে সম্পুরক কর, আরো নানা হাবি জাবি খরচ , এ রকমের উচ্চ হারের শুল্কনীতি আজকের দুনিয়ায় বেমানান, অর্থনীতির সুষম বিকাশের অন্তরায় আর সীমাহীন দুর্নীতির খনি । এর পর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো আছে কাস্টমস অফিসারেদের চা-পানির খরচ। সব মিলিয়ে এক কেজি লবণ আমদানীতে তার যেই খরচ তাতে লাভের গুড় পিপড়ায় খেয়ে তার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেবে। তো বাধ্য হয়ে আবুল আন্ডার ইন ভয়েসিং করে, প্রতিযোগিতার ইদুর দৌড়ে টিকে থাকতে ১০ টাকায় লবন কিনে কাগজ পত্রে ১ টাকা দেখিয়ে আমদানী করে ।
এখন এল সি মানে ঋণ পত্রে তো দেখানো থাকে ১০% দাম, তো বাকী টাকা সাপ্লায়ার কীভাবে পাবে? জলবত তরলং--হুন্ডির মাধ্যমে। তো এই হুন্ডিওয়ালারা এই টাকা কোথায় পায়?--আরো সোজা--প্রবাসীদের রেমিট্যান্স থেকে। যদি আন্ডার ইনভয়েসিং উঠে যেত, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরো কতগুনে বাড়ত তা হিসাব করে দেখা যেতে পারে। এদিকে আবুল তো ১ টাকা দাম দেখিয়ে লবণ এনে ১৮ টাকায় বিক্রি করছে , তার লবণের কেনা দাম আসলে ১০ টাকা হলেও সরকারী হিসাবে তার লাভের পরিমাণ অনেক বেশি, আর এই লাভের গুড়ের পেছনে সরকারী পিপিলিকারা হেলিকপ্টারে সার্চ লাইট নিয়ে ঘুরছে। তো আবুল বাধ্য হয়ে কাগজ পত্রে ভেজাল করে, টাকা লুকায়, কষ্টের আয় রোজগার কালো হয়ে যায় রাস্ট্রীয় অর্থ সন্ত্রাসের দৌরাত্মে। সরকার অপ্রদর্শিত আয়ের ব্যাপারে ইদানিং যতটা উৎসাহী, অপ্রদর্শিত ব্যয়, বিশেষ করে হুন্ডির ব্যাপারে ততটাই উদাসীন। এটা একটা সরল উদাহরণ, রাক্ষস খোক্কস কর্পোরেটরা পরোক্ষ সরকারী সহায়তায় রীতিমতো বেসমেন্টে টাকশাল বসিয়ে কালো টাকা ছাপিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন আর যার জের টানতে হচ্ছে আপনার, আমার দেশের সব সাধারণ মানুষের। সেই জটিল প্রসঙ্গে যাওয়ার মতো মানসিক শক্তি এখন পাচ্ছিনা।
মাস ছয়েক আগে চিটাগাং পোর্টে দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসানো হয়। উদ্দেশ্য ভালো- কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে জটিলতা কমানো। কম্পিউটারাইজড স্ক্যানারে আস্ত ৪০ ফিট কন্টেইনার ঢুকে যাবে, ভেতরে মাছি থাকলেও ধরা পড়বে, কার্টন খুলে দেখতে হবেনা। সময় অনেক বাঁচবে, ঝামেলাও কমবে। কথা ঠিক- এফ সি এল শিপমেন্ট গুলো আজকাল আগের চেয়ে কম সময়ে খালাস হচ্ছে। কিন্তু ঝামেলা বেধেছে অন্য যায়গায়, আসলে এটাকে ঝামেলা বলা ঠিক হবে কি না তাও বুঝতে পারছিনা-- তা হলো এই স্ক্যানার অপারেটরদের আয় রোজগার হঠাৎ করে বেশ বেড়ে গেছে। আর বেড়েছে যাচাই-বাছাই, এক্সামিন ছাড়া পুরা কন্টেইনার খালসের খরচ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই রেট এখন মাত্র ২৫ লাখ টাকা।
অস্ত্র আর মাদক ব্যতীত যে কোন পণ্য ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিনা পরীক্ষায় কাস্টমস হাউস থেকে বিনা বাধায় বের হয়ে আসবে। ভেতরে গাধা থাকুক, আর ঘোড়া থাকুক ব্যাপার না।
এসব দেখে মনে হয়, যেই দেশে রাস্ট্রের তত্ত্বাবধানে সর্বস্ত রে দুর্নীতির প্রসার ঘটে কী দরকার সেই দেশের উন্নতিতে মাথা ঘামানো। কাল্পনিক পরশ পাথরের বদলা হিসেবে সরকার ভস্ম পাথর হাতে দন্ডায়মান , ভালো যে কোন উদ্যোগেই সেই পাত্থর ছুয়ে দিয়ে তাকে নিমেষেই ভষ্মে পরিণত করে দেবে। পুঁজিপতির দেশের ৯৯% মানুষের রক্ত-মাংস-ঘাম-কইলজাগুর্দাফ্যাপসা সব ছাই করে দেয়ার পরেও তাদের তৃষ্ণা মেটেনা, কোন দিন মিটবে বলেও মনে হচ্ছেনা। তার চেয়ে এই দেশ গরীবই থাক, পুঁজিপতিদের উচ্ছিষ্ট খাওয়ার চেয়ে গরীব মানুষ কলাপাতায় সেদ্ধ ভাত আর ডাল খেয়ে সম্মানের সাথে বাঁচুক--তাতেও আমি খুশী।
পর্যাপ্ত অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা হাতে না পেলে আমাদের কথা কেউ শুনবেনা তা ঠিক, কিন্তু মাইক্রো লেভেলে, নিজস্ব ক্ষুদ্র গন্ডিতে যতটুকু সম্ভব সমাজ বা দেশের, বা অন্তত চেনা-অচেনা দুই চারজন মানুষের ভাগ্য বদলাতে যদি কোন কাজে আসি, তাহলে নিজেকে অন্তত এটুকু বলে সান্ত্বনা দিতে পারব যে আমাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল, আমরা চেষ্টা করেছিলাম...
ছোট ছোট বালুকার কণা...বিন্দু বিন্দু জল...হয়তো গড়ে তোলে কিছু একটা... হয়তো...
মন্তব্য
খাঁটি একটা জিনিষ তুলে আনছেন মামুন ভাই। এইজন্যই চায়ের কাপে ঝড় তোলার সময় "কালো" ব্যবসায়ীদের গালি দিতে গিয়েও থমকে যাই, মনে হয় "সাদা" পথে বেঁচে থাকার সুযোগ কি আসলেই আছে? ঠিক কতটা কঠিন এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা ভাবতে গেলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। ব্যক্তি পর্যায়ে একজন-দুজন করেই আসলে এগিয়ে আসতে হবে, আশা করতে হবে একদিন এক-দুইজন করেই একদিন গোটা দেশে পর্যাপ্ত লোক হবে যারা কীনা দেশটাকে বদলিয়ে দেয়ার সাহস ও ক্ষমতা রাখে।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ধন্যবাদ ভুতুম, একলা কারো ঘাড়ে দোষ দিতে হইলে বাবা আদম ছাড়া আর কাউরে তো দেখিনা। আপাতত ধৈর্য ধরা ছাড়া গতি নাই।
আরো বিস্তারিত চাই মামুন ভাই। একেবারে খাত ধরে খাতা খুলেন।
তাই করতে চাইছিলাম বস, কিন্তু ঐ স্ক্যানার আর ২৫ লাখের ঘটনা শুনে মন মেজাজ খুবই খারাপ আছে। মেশিনারী ইম্পোর্টের সুযোগ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ চুদির্ভাইয়ের আপন ভাই ইয়াবা বানানোর যন্ত্রপাতি এনে কী করল তা তো দেখলেনই।
কিছু কী হইব এইসব লিখে?
লিখেও কিছু হবে না, না লিখেও কিছু হবে না। কিন্তু তবু লিখা উচিত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আচ্ছা দোস্ত লিখব, কিন্তু মনে হয় এসব নিয়ে একটা ধারাবাহিক টিভি সিরিয়াল হলে আরো ভালো হতো।
মামুন ভাই, অনেক কিছু জানতে পারলাম, লিখে হয়ত কিছু হবে না, কিন্তু যখন সবাই জিনিষগুলো জানবে, তখন হয়তো কোন ফলাফল পাওয়া যাবে। আসলেই কী আমাদের সৎ ভাবে ব্যবসা করার ব্যবস্থা আছে? আরো বিস্তারিত লেখা দেন বস, খালি তো ছোয়া দিয়ে চলে গেলেন।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আসলে মেজাজ খারাপ থাকায় কিছুই পরিস্কার করে লিখতে পারিনি, দেখি সামনে আরো গুছিয়ে লিখব।
মনের কথা বলছেন ভাইয়া। আরও জানতে চাই!
------------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ধন্যবাদ। ঠিক আছে
হুম।
হুম।
নতুন মাত্রা জানা হলো একটা...
দেশে কালো টাকা বানানোর অঢেল সুযোগ আর সেই টাকা বিদেশে পাচারের অবারিত দ্বারের কারণে জিডিপি ভায়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সুবিনয়দাকে পাচ্ছিনা, পেলেই তার সাথে আলাপ করে এ নিয়ে লেখা দিব।
মামুন ভাই...আপনার সৎ সাহস আর তেজের সাথে ভালোই পরিচিত। বিস্তারিত পোস্ট দিয়ে ফেলেন। আরো জানতে চাই।
কার্টুনটা কিন্তু আসলেই সেরম।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
ধন্যবাদ রেনেট। পুরা চক্রটা আসলে ভয়াবহ রকমের হতাশাজনক, তার পরেও বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব।
ব্যাপক চিন্তা-ভাবনার লেখা - পুরা পড়ার সময় পাই নাই - তবে চিন্তা নাই - বুকমার্ক দিয়া রাখছি - সময় করে পরে পড়মুনে (আফটার অল জ্ঞানীর জ্ঞান কথা); তারপরেও যেই কারণে কমেন্ট করতাসি তা বইল্লা লই - ছবিটা জব্বর হইছে - আমার মতন কম চিন্তার মানুষের জন্য লেখার মূল ভাব বোঝার জন্য পারফেক্ট!
বাই দ্যা ওয়ে - ভোট দেয় কেমতে? ক্লিক করলে কিছুই হয় না না হইলে আরেকটা ৫ তারা দিতাম শুধু ছবির জন্যই
ভাইজান ভোটাইতে পূর্ন সচল হওয়া লাগিবে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
পাকামো না করে মন দিয়ে লেখা পড়
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
খুবই সময়োপযোগী লেখা। ভাল লেগেছে।
বছর দশেক আগের কথা। সন্দ্বীপে ড্রিলিং চলছে। মাটি খূঁড়তে খুঁড়তে ভুতাত্বিক জরিপের নানান যন্ত্র লাগে। এগুলোর আকাশ ছোঁয়া দাম, ভাড়াও অনেক। তাই ড্রিলিং সিকোয়েন্সের সাথে মিল রেখে ধাপে ধাপে ভাড়া সিঙ্গাপুর থেকে আনা হচ্ছে, কাজ শেষে আবার তা ফেরত চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি মোতাবেক এইসব যন্ত্রপাতির আমদানি রপ্তানি দুটোই শুল্কমুক্ত। প্রি-শিপমেন্ট রিপোর্ট দিচ্ছে এক বিশ্বনন্দিত সিঙ্গাপুরস্থ দালাল। কন্টেইনার সিলগালা করার আগে ফটো তুলে রাখা হয়। সব ঠিক ঠাক, কাস্টমস, পোর্ট ইত্যাদির সবাই বেশ দেশপ্রেমিকের মত কাজ করে প্রতিমাসে সপ্তাহে ১০-১২টা ২০ফুটি কন্টেইনার ড়্যান্ডম প্রসেস করে ছেড়ে দিচ্ছেন। কন্টেইনার ছাড়িয়ে তা জাহাজে করে সরাসরি সন্দ্বীপ চ্যানেলে রিগে চলে যাচ্ছে। গতিময় উত্তেজনা। সবাই সন্তুষ্ট।
এরি মধ্যে এক জুম্মাবার রিগ থেকে জরুরী খবর এলো। যে আদ্যোপান্ত সিল্গালা করা একটি কন্টেইনার, সিলগালা করার আগের ছবিতে যেখানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন লগিং যন্ত্র দেখা যাচ্ছে, রিগে নিয়ে খোলার পর দেখা যায় সেটা ভর্তি সুন্দর প্লাস্টিক মোড়া প্যালেটবদ্ধ সিঙ্গাপুরি ইঁট।
বস এরকম হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে প্রতিবছর কিন্তু সরকার যতটা গর্জে তার বিন্দুমাত্রও বর্ষে না। ১ লাখ কোটি টাকার লোক দেখানো বাজেট ঘোষনা আসল কিন্তু এর ৫% ও আলোর মুখ দেখেনা। তার পরেও কথা বলে যেতে হবে।
বস,
বহুদিন পরে একটা দুর্দান্ত টপিক নিয়ে লেখা দিলে!!
টাকার বর্ণবাদ আমাদের সামাজিক বর্ণবাদের মতই---একটা রোগ যার সৃষ্টি হয়েছিল কিছু মানুষের সংকীর্ণ স্বার্থ সিদ্ধির কথা মনে রেখে।
তোমার যন্ত্রণা টের পাই। তোমার আক্ষেপও টের পাই।
কিন্তু লেখাটার সবচাইতে ভাল দিকটা হল---শেষে এসে তোমার আশাবাদটাও ভাল করে টের পাই।
আর এই আশাবাদ ছাপিয়ে যাক সকল আধার, সকল আঁধার--
আশার আলোটুকু সামনে নিয়ে আসার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ বস। তোমার সহানুভূতি আমাকে শক্তি যোগায়।
লেখা পড়ে কিছু বুঝি নাই। তবে কার্টুনটা দেখে নারকীয় আনন্দ পাইছি। হা হা হা.........এইটা বড় করে প্রিন্ট করে দরজায় লাগিয়ে রাখতে হবে।
আপ্নে মিয়া পিন্টু সুমনের সাথে মিশে পুরাই বরবাদ হয়ে গেছেন...
ভাল লাগলো মামুন ভাই। জানলেও লাভ, হয়তো সেইটাই লাভ। এরকম আরো লেখেন।
আর কিছু করা না যাক, লিখে তো প্রতিবাদ করা যায়। সেটাই বা কম কিসে?
ঠিকাছে সিরাত, তোমার কথা তো আমি আবার ফেলতে পারিনা পরের লেখাতেই দেশে ইলেক্ট্রনিক্স শিল্প বিকাশের বাধা গুলো নিয়ে লিখব।
দুঃখিত কার্টুনটি আসলে এই লেখার সাথে খাপ খাচ্ছেনা, তাই মুছে দিলাম।
সামনে আরো লেখা আসছে, আপনাদের পড়ার আমন্ত্রণ এবং মতামত জানানোর অনুরোধ রইল।
ব্যবসায়ীমহলকে গালি দিয়া আসলে লাভ নাই। তারা যে নিরুপায় এইটা কিন্তু আপনার লেখায় আপনে দেখাইসেন। চক্রটা আসলে অন্যরকম। সরকারের ব্যায়ের প্রধান খাত দুইটা একটা হইল রাজস্ব আরেকটা ঊন্নয়ন। রাজস্ব থেইকা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় আর উন্নয়ন থেইকা রাস্তাঘাট, ইস্কুল-কলেজ ইত্যাদি অবকাঠামো তৈরি হয়। এখন চক্রটা খেয়াল করেন। রজস্ব আয় কম হয় বলে সরকার কর্মকর্তাদের বেতন কম দেয়। কাজেই তারা ঘুষের রাস্তায় যাইতে বাধ্য হয়। দেশপ্রেমের কথা আমরা বলি সবাই কিন্তু নিজের বউ পোলাপানেরে ভাল্মন্দ খাওয়ানোর জন্য তারা যেই বেতন ভাতা পায় তাকি যথেষ্ট? অবশ্যই না। কাজেই ঘুষ খাওয়ার ব্যপারটা অনেকটা সর্বজনীন হয়ে গেছে। এখন তারা যদি সবক্ষেত্রে এই রকম ঘুষ বা ঊপরির ওপর নির্ভর করতে থাকে তাইলে ঘটনাটা কি দাড়াচ্ছে? আমদানির খরচ বেড়ে যাচ্ছে, ব্যাবসা বানিজ্যের খরচ [cost of doing business] বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবাসায়িদের পক্ষে তাই সততার রাস্তায় হাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকার ব্যবসায়ী মহল ব্যপারটা বোঝে। এখন বোঝার পর রাস্তা তাদের কাছে দুইটা একটা হইল কঠিন - লম্বা। আরেকটা সোজা। কঠিন হইল কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাড়াইয়া দিয়া তাদেরকে সৎ হওয়ার সুযোগ দেওয়া। (ব্যপারটা এই রকম জলের মত সহজ না অবশ্য দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততার কারনে)। আরেকটা কাজ হইল সম্ভব হইলে আমদানি শুল্ক কমান (এতে করে দুই কারনে সরকারের আয় বাড়তে পারে ১) বেশি আমদানি - বেশি রাজস্ব [ইম্পোর্ট ইলাস্টিসিটির উপর নির্ভর করবে অবশ্য এই পরিমান] ২) কর ফাকি দেবার প্রয়োজন কম হলে ব্যবসায়ীরা তাদের আয় প্রদর্শনে পিছপা হবে না। অপরাধে জরান তে যে ঝুকি আছে এটা সবাই বোঝে। এই ঝুকি নেবার পেছনে ইন্সেন্টিভ যদি বেশি হয় তাহলেই কেবল বেশি ঝুকি নিবে ব্যবসায়িরা যেটা তারা এখন করছে।
তবে সরকার সোজা রাস্তা নিচ্ছে। এই কালো টাকার ব্যপারটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে। রাজনৈতিক কারনে দোষ পড়ছে ব্যাবসায়ীদের ওপর - তার কালো টাকার মালিক ইত্যাদি বলে তারা নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিকভাবে অবশ্য এই সংস্কার কঠিন। আমার ধারনা কোন রাজনৈতিক সরকার সহযে ঐ পথে হাটবে না।
উপরের ব্যখ্যা এই বক্তব্যের সাথেও যায়। আমার মনে হয় ব্যবসায়িরা বাধ্য হয়েই এই আন্ডার ইনভয়েসিং করে থাকে।
বাংলাদেশে সৎ ভাবে জীবন যাপন করাটা একটা নীতির ব্যপার হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছে। দেখতে হবে সৎ ভাবে জীবন ধারন করার মূল্য কতটা? পীয়ার প্রেসারের ব্যপারটাও ভেবে দেখবেন।
এই দরকারি আলোচনার জন্য ধন্যবাদ মামুন ভাই। আপনার লেখা আমার খুব ভাল লাগে বইলা রাখলাম কিন্তু।
আশা টিকায়ে রাখাটা জরুরী মামুন ভাই। সম্ভব হইলে জানান দিয়েন। কোন কাজে লাগতে পারলে ভালই লাগব।
নাজিদের বাঁধা দেয়ার থিম নিয়া সিনেমা ভাল্কারি (Valkariye) দেখসিলাম গত বছর তার শেষদৃশ্যে একটা কথা লেখা ছিল। অসাধারন মনে হইছিল। কেন কাজে না আসলেও কেন লেখা দরকার সেই প্রশ্নের উত্তরেই বলছিঃ
YOU DID NOT BEAR THE SHAME
YOU RESISTED
SACRIFICING YOUR LIFE
FOR FREEDOM, JUSTICE, AND HONOR
বেশ উপরের দিকের আদর্শ মনে হইতে পারে। কিন্তু মাথার কাছে টানায়ে রখতে তো দোষ নাই।
কতটা হবে সেটা নির্ভর করে কিভাবে এই বালুকনা গুলা সাজান হইতেসে তার উপর। সমস্যাগুলান নিয়া ভাল মতন আলাপ আলোচনার দরকার আছে যাতে এই গুলার গোড়ায় যাই তে পারি। বুদ্ধিমত্তা আর চেষ্টার সমন্বয় করলেই কাজের অনুপাতে ফলটা বেশি হবে।
রিয়াজ ভাই,
আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা। আপনার মন্তব্যগুলো আমার লেখার চাইতেও অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত এবং ধারালো হয়েছে। অভিনন্দন।
মানুষ হয়ে জন্মানোর হ্যাপা অনেক, আর তার মধ্যে বাংলাদেশী হয়ে দুনিয়াতে আসা মানেই লাইফ ইজ আ সাফারিং জাতীয় প্যাকেজে দস্তখত করে আসা। মাঝে মাঝে মনে হয় ভুল জমানায় চলে আসছি, জন্ম থেকেই হাত পা বাঁধা, কিন্তু চাইলেই তো আর সেটা বদলে দেয়া সম্ভব না। তবুও আশা নিয়েই ঘর করি, আশায় পকেট ভরি।
YOU DID NOT BEAR THE SHAME
YOU RESISTED
SACRIFICING YOUR LIFE
FOR FREEDOM, JUSTICE, AND HONOR
--মাথার কাছে টানিয়ে রাখার মতো কথাই।
আরো কিছু লেখা গুছিয়ে আনছি। আশা করছি এভাবেই বুদ্ধি-পরামর্শ-দিক নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করে যাবেন
মামুন ভাই আর রিয়াজ ভাই, দুজনকেই সহজবোদ্ধ ভাবে আলোচনাটা করার জন্য।
রিয়াজ ভাই Valkyrie এর ডায়লগের চেয়ে আমার কাছে আপনার এই কথা গুলো বেশি মূল্যবান লাগলো। পারলে দুজনেই আরো বিস্তারিত পোস্ট দিন, ভেতরের খবর আমরা কিছুই জানি না, কিন্তু জানতে চাই।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
লেখা নিয়ে কী-ই বা বলব!
তবে কার্টুন গেল কই?
কার্টুনটা একটু অশ্লীল ছিল, তাই জনস্বার্থে সরিয়ে দেয়া হয়েছে
নতুন মন্তব্য করুন