ফরাসী বিভ্রম
আগের পর্বে বেহুদা জ্বালাইলাম আবঝাব বলে...চলেন মূল প্যাচালে যাই...
০১. অ্যাপেটাইজারঃ স্ট্র্যাডলড ইন আ জেট প্লেন
সে বছর মালয়েশিয়ান এয়ার সস্তায় বিজনেস ক্লাসের টিকেট দিচ্ছিল, তাই ইকোনমি ছেড়ে আগে বাড়লাম। যাত্রী হিসেবে আমি একটু অসামাজিক টাইপের , কোনমতে রাতের খাবার সেরেই ঘুমিয়ে পড়লাম চওড়া সিটটাকে বিছানা বানিয়ে । জানালার পাশের আসনে ছিলেন এক সুবেশী ভদ্রমহিলা , হাই হ্যালো ছাড়া আর কোন কথা হয়নি। কে জানত গভীর রাতে তিনি এভাবে ধরা দেবেন!
ঘুম ভাঙলো বড়ো ধরনের এক ঝাঁকুনীতে, চোখ মেলে আরও বড়ো ঝাঁকুনী , সোজা বাংলায় তব্দা খেলাম। আমার উরুর উপরে বিব্রতমুখে বসে সিটের হাতল ধরে পতন ঠেকাতে ব্যস্ত সেই ভদ্রমহিলা! ক্যাম্নে কী!!
ঘটনা হলো আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলাম , এদিকে ভদ্রমহিলার সাংঘাতিক মাত্রার বাথরুম পেয়েছিল । দুই একবার এক্সকিউজ মি বলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙাতে না পেরে পেটের দায়ে আমাকে ডিঙ্গিয়েই ছোট ঘরের দিকে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! একপা কোনমতে ঘুমে কাদা আমার ওপারে নিতেই বেরসিক বিমানে অসময়ের ঝাঁকুনীতে টাল হারিয়ে অত্যন্ত বিপজ্জনক ভঙ্গীমায় তার এই অপাত্রে আসনগ্রহণ।
দিল উড়ে গেল, নিদ্রা চটে গেল, হুড়মুড়িয়ে পা টেনে নিয়ে তাকে যাবার রাস্তা করে দিলাম। বাকী রাস্তাটুকুতেও নিদ্রাদেবী আর প্রসন্ন হলেন না, পাপ লোডেড মনে নানা দৃশ্য ধরা দিতে লাগলো। যদিও সেই ভদ্র মহিলার দিকে আর তাকাতেও সাহস করে উঠতে পারলাম না।
০২.উদাম গলায় চার্লস দ্য গলে
ঝিমাতে ঝিমাতে এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে দেখি সেই ভদ্রলোকও ঝিমাচ্ছেন। আমার দিকে বলতে গেলে একবারও না তাকিয়ে সিল-ছাপ্পর মেরে ছেড়ে দিলেন। লাগেজ নিয়ে মিটিং পয়েন্টে গেলাম। কোথাও কেউ নেই। আমাকে নিতে আসার কথা ব্যবসায়ী বন্ধু অ্যালবার্টের। ভাবলাম হয়তো পথেই আছে, আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে প্রয়োজনে ওকে ফোন করব।
নিঃসঙ্গ মানুষের সবচে বড়ো বন্ধু তার বদঅভ্যাস। পকেটের মার্ল ব্রো লাইট জানান দিল, লাগেজ থেকে বড়ো একটা ওভারকোট বের করে পড়ে নিয়ে বাইরে গেলাম নিকোটিনের ডাকে সারা দিতে।
বাইরে বেরিয়ে দেখি লোকজনের হাত-পা-মুখ-চোখ সব ঢাকা, আমার শুধু কোট গায়ে-- হাত খালি, গলা খালি। তীব্র শীতের প্রথম দংশনটা অনুভব করলাম খোলা কানে। তার পর প্রতিটা নিশ্বাসেই মনে হচ্ছিল কইলজাগুর্দাফ্যাপসা সব বরফ হয়ে যাচ্ছে। জীবনে এই প্রথম আগুন না লাগিয়েই শ্বেত পরী মুখে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আবার টার্মিনালের ভেতরে ফেরত গেলাম। প্যারিসে সেদিন সকালে তাপমাত্রা ছিল হিমাংকেরও ১২ ডিগ্রী নীচে।
অ্যালবার্টের তখনও কোন পাত্তা নেই। ফোন বুথ খুঁজে নিয়ে ব্যাটাকে পাকড়াও করলাম। জানা গেল তার গাড়ি চাপা পড়েছে পুরু বরফের ছাউনীতে, স্টার্ট নিচ্ছেনা কোন ভাবেই। অগত্যা ট্যাক্সি নিয়েই হোটেলের পথে রওয়ানা হতে হলো।
হোটেল প্যারিসের একটু বাইরে, লা রেইনসি নামের এলাকায়। অ্যালবার্টের অফিসের কাছে, সে ই ব্যবস্থা করেছে। রুম তেমন ভালো না লাগলেও, শিহরণ জাগানিয়া ভ্রমণের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশ দুপুরে ঘুম থেকে উঠে দেখি অ্যালবার্টের নোট, সে এসে ফিরে গেছে আমি ঘুমাচ্ছি শুনে। ট্যাক্সি নিয়ে যেন তার অফিসে চলে যাই, কাজ-আড্ডা-লাঞ্চ সব সেখানেই হবে।
বোনান, অ্যালবার্টের ডাক নাম, ইহুদী ব্যবসায়ী। আমার দেখা ডাকসাইটে ব্যবসায়ীদের একজন। জন্মসূত্রে মরোক্কান, ফ্রান্সে চলে এসেছে বহু বছর আগেই। মরক্কোতেও ব্যবসা আছে, সেখানে একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রজেক্টের ব্যাপার স্যাপার চুড়ান্ত করতেই আমাকে দরকার পড়েছিল।
০৩. কান্ধে ব্যাগ, হাতে ফাইল...সামনে সাক্ষাৎ আজরাইল
কথা প্রসঙ্গে বোনান বলেছিল যে ওর বাড়ি আর অফিস একই জায়গায়। ট্যাক্সিওয়ালা জেলখানার মতো উচু দেয়ালে ঘেরা এক বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দিল। দুর্গের প্রবেশদ্বারের মতো শক্তপোক্ত গেটের সামনে এসে দেখি অনেকগুলো কলিং বেলের সুইচ, কোনটাতেই নামটাম লেখা নেই। এক কোনায় উকি দিচ্ছে সিরিয়াস চেহারার সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রথম ঘন্টাটা বাজাতেই বোনানের গলা ভেসে আসল। বলল গেটে খুলে দিচ্ছে, সেও আসছে আমাকে ভেতরে নিয়ে যেতে।
সয়ংক্রিয় গেট খুলে গেল, ভেতরে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। তারপরে একটা সাদা দোতলা বাড়ি। আমি ঢুকতেই পেছনে দরজা বন্ধ হবার আওয়াজ পেলাম। এক বা দুই কদম গিয়েছি এর মধ্যেই একদল কুকুরের গগনবিদারী ঘেউ ঘেউ শব্দে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার অবস্থা হলো। পুরোপুরি নিশ্চিত না, তবে মনে হয় ওগুলো জার্মান শেফার্ড ছিল। তিনটা দানবাকৃতির কুকুর। দুইটা বোনান কোনমতে গলায় বাঁধা বেল্ট ধরে আটকে রেখেছে, আর অন্যটা ছুটে গিয়ে আমাকে এই মারে তো সেই মারে। এগুলো লেখা পড়া শেখা কুকুর, কামড়ে দেবেনা ঠিক, কিন্তু ভয় দেখিয়ে পিপাসার্ত করে দিতে একটুও কমতি করলোনা।
ঠান্ডায় না, আমি ভয়ে জমে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
( যাই এখন একটু পান্তামুক খেয়ে ভয় কাটিয়ে আসি)
মন্তব্য
মামুন ভাই, একবার চা টা এবার পান্তা, সাথে ইলিশ আছে তো, মাটির খানকি আছে? নাকি পাঠায় দিমু!!!!!!!!!
ভালো লাগলো। আপনার লেখার তুলনা হয় না। জটিল বস।
পান্তা খাইয়া তাড়াতাড়ি আহেন, আমরা গরম ভাত খাইয়া ল্যাপটপ নিয়া বইসা আছি।
ধন্যবাদ।
দলছুট।
এইটা কি লিখলেন বস? সানকি হবে?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
"মাটির খানকি আছে"
আমাদের দেশে মাটির সানকি বলে। ঐখানে আবার 'খানকি'র মানে প্রমোদবালা। এক দেশের গালি আরেক দেশের বুলি। কি বলেন?
আবারও ধন্যবাদ দলছুট। তবে বানান একটু খিয়াল কৈরা
না নাই । আমারে একটা কিনে দেন ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এইবার থামেন লাভ নাই।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
- এক নাম্বারের কাহিনী শুইনা তো আমার পাপলোডেড মনও নানান সিনারী কল্পনা শুরু করে দিছে! আপনে মিয়া এইটা একটা কাম করলেন? জানালা দিয়া আন্ধার আসমান দেখায়া কইতেন, "দেখছোনি আইজকা দিনটা কেমন সুন্দর!"
আপনেও মার্লবরো লাইট নি? দেখা হৈলে আর তাইলে সমস্যা নাই।
জার্মান শেফার্ড চুদির্ভাই গুলা একটাও মানুষ না। হালার্পুতেগোরে দেখলেই কইলজা শুকায়া যায়। আর যদি কোনোমতে একটা 'ঘেউ' করে তাইলে আমি নিরাপদ দূরত্বে থাইকাও প্রায় 'হার্টফেইল' করি। নিজেরে কত্তো যে বুঝাই, ওরে গোধু, কুত্তা দেইখা তুই করিসনা ভয়, দড়িতে তার ধরা থাকে সুন্দরী কারো হাত! কিসের কি, কোনই লাভই হয় না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হা হা, আমি কি আর তোমার মতো উমেনাইজার? মেয়েদের সাথে কেম্নে কথা কয় তাই তো জানিনা।
হ আমিও মার্ল ব্রো লাইট চালাই ব্রো, দেখা হোক, এক সাথে টানুম
বলো কী এতদিন জর্মন দেশে থাইকাও তোমার ঐদেশের কুত্তা সামলানো শেখা হৈলোনা??
ভদ্রমহিলা যে কোলের উপর বইসা পড়লেন- তাঁর পরনে কি আসিলো?
...
আর একটা কুসচেন হইতাসে
আর
আপনার দোশ্ত কি গডফাদার টাইপ কিসু একটা নি ??
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
পুলাপান মানুষ এত কথা জিগাও ক্যান? আর আমি কি আন্ধারের মধ্যে চোখ বড়ো বড়ো করে দেখছি নাকি যে সে কী পড়া ছিল?
আমার দোস্ত ক্যান এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থাকে সেইটা শেষ পর্বে জানবা ।
ভাল্লাগছে রে তোর লেখা। অনেকদিন পরে পড়ছি। প্রথম পর্বটাও ভালো হইছে কিন্তু বুঝতে পারিনি। খোমবই দেখিনা বহুদিন, তাই বুঝতে পারলামনা কি হইছে। যাহোক, যা হবার তাই হবেই। একসাথে থাকলে এরকম হয়তো হয়। নজরুলের সেই লাইটনটা মনে পড়ে?
"আমরা সকলে এক সিদ্ধি, একই ধ্যানের মশাল ধরিয়া বিকশিত হইতে চাই"
--হ মনে পড়ে। আমরা বড়ো একলা হয়ে যাচ্ছি।
বাক্যটা মনে হয় ছিল ... একই ধ্যানের মৃণাল ধরিয়া...
মামুন ভাই, এই পর্ব পুরাই হইসে। খারান দেখি ফন্ট বড় করতে পারি কিনা।
আপনে বস, লেখাটা দুর্দান্ত
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ফন্ট বড়ো করলা ক্যাম্নে? আমারে শিখাও না মিয়া...
ওস্তাদ ছোলো-পয়জনিং এর পায়তারায় আছেন না তো।
সহেনা ঝাতনা......
আরে না! পরের পর্বেই শেষ
আরো কিছু ঘটছিলো নাকি??
---------------------
আমার ফ্লিকার
পুলাপানের মনে খালি পাপ
বাঙালী হাত সামলে রাখে। বিদেশি'রা হস্তক্ষেপ করে স্যরি বলে
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
চরম বর্ণবাদী কথাবার্তা। সিমনের আইপি সহ ব্যাঞ্চাই
বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ বিদেশীনীদের ঘনঘটা
মামুন্ভায়ের মনে ছল...
(নেপথ্যে শ্লোগান: মামুন্ভাইয়ের উপর পতন কেন
জবাব চাই দিতে হবে)
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এইসব হাবিজাবি কথা বাদ্দিয়া নতুন লেখা দে
চা খেয়েও লোকে তবে ফেরত আসে? সাবাশ মামুন ভাই। অ্যাপেটাইজারটা তো সেরকম মুখরোচক।
কুকুরে আমারো ভীষণ ভয়... দেখতে যতই নিরীহদর্শন হোক না কেন!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আরে খোমাখাতায় বারবার তোমার খোঁচা খেয়েই তো লিখতে বসলাম
ভাইরে, কত ধরনের লোডেড মন নিয়ে এত চলাফেরা করলাম, কই বরুণারাতো কখনোই পাশের সিটে পরল না। ভাল লাগল ভ্রমনকাহিনী...।
আরে ভাই, 'টপাল টপাল সবই টপাল' !
হ দাদা, টপালের নাম ভূপাল
ভাইরে এইটা যেই সময়ের কথা তখন প্রতিমাসে ট্রাভেল করতাম, এমন কত্ত ফ্লাইট গেছে পাশের যাত্রীর যন্ত্রণায় মনে হৈসে যেন প্লেন থিকা লাফ দিয়ে নেমে যাই। আবার কখনও আশপাশের কোন যাত্রীর সহযাত্রী ভাগ্য দেখে ঈর্ষায় জ্বলছি।
পাশে সৈরাম কারও পড়ার ঘটনা খুব কমই ঘটছে, এই জন্যই ঘটা করে আপনাদের বলতেছি
মামুন ভাই আপনার এই লেখার দুই পর্ব একসাথে পড়লাম , পরের কিস্তি কবে ছাড়বেন? আপনার ভ্রমন সংক্রান্ত লেখাগুলো দূর্দান্ত লাগে আমার ।
এক নম্বর কাহিনী কিছু সেন্সর করে বলেন নাইতো
---------------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
হায় হায় প্রজাপতির মনেও দেখি অনেক পাপ
লেখো না ক্যান অনেকদিন?
সাধারণ কাহিনীগুলোও এতো মজা করে বর্ণনা দেন আপনি!
অনেক ধন্যবাদ মৃত্তিকা , ভালো থাকবেন
পরের পর্ব কই ভাই? জলদি নামান।
আসিতেছে ভ্রাতঃ এট্টু দম লইয়া লই
নতুন মন্তব্য করুন