• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

দ্য অ্যালকেমিস্ট-৮

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: শুক্র, ১৬/১০/২০০৯ - ১২:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

the_alchemist

দ্য অ্যালকেমিস্ট-৭

দ্বিতীয় খন্ড

প্রায় মাসখানেক হয়ে গেল ছেলেটি স্ফটিক ব্যবসায়ীর সাথে কাজ করছে, যদিও সে বুঝতে পারছিল এই কাজে ঠিক কখনোই তার সন্তুষ্টি মিলবে না । ব্যবসায়ী প্রায় সারাটা দিনই গদিতে বসে বিড়বিড় করে কাটিয়ে দেন, ছেলেটিকে সাবধানে মালপত্র নাড়াচাড়া করতে বলেন যাতে কোন কিছু পড়ে ভেঙ্গে না যায়।

কিন্তু তবুও সে কাজটিতে লেগে ছিল কেবলমাত্র ওনার কারণেই, সারাদিন মুখ গোমড়া করে থাকলেও তিনি ছেলেটির সাথে ভালো ব্যবহারই করতেন, বিক্রির উপরে লাভের অংশ বুঝে পেয়ে ইতিমধ্যেই সে অল্প বিস্তর টাকাও জমাতে পেরেছে। সেদিন হিসাব করে দেখল আগামী এক বছরের মধ্যে ছোটোখাটো একটা ভেড়ার পাল কেনার মতো টাকা সম্ভবত জমে যাবে।

‘আমার মনে হয় দোকানের বাইরে একটা তাক মতো বানিয়ে ওখানে কিছু মাল সাজিয়ে রাখা দরকার, তাহলে রাস্তার ঢাল থেকেও সেটা লোকেদের চোখে পড়বে’—ছেলেটি মালিককে বলে।

‘এইসব তো আমি আগে কখনই বানাইনি, কী দরকার? লোকজন চলতে ফিরতে এর সাথে ধাক্কা লাগিয়ে বসবে, জিনিষপাতি ভাঙবে’—ব্যবসায়ী উত্তর দিলেন।

‘তা হয়তো ঠিক, তবে আমি যখন আমার ভেড়ার পাল নিয়ে পথে নামতাম তখন প্রায়ই দুই একটা ভেড়া সাপের কামড়ে মারা যেত। পথে নামলে এটা হতেই পারে’ ।

ব্যবসায়ী নতুন একজন খদ্দেরের সাথে বেচাকেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ব্যবসা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো, মাঝে মাঝে মনে হয় পুরানো দিনগুলি বোধহয় আবার ফিরে এল যখন এই রাস্তাটি তাঞ্জিয়েরের অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে পরিচিত ছিল।

‘ব্যবসা তো ভালোই চলছে, আমি ভালো আছি, কিছুদিন পর তুমিও তোমার রাখাল জীবনে ফিরে যাবে। কী দরকার এত ঝামেলা বাড়িয়ে’?—ব্যবসায়ী বলতে লাগলেন।

‘কারণ আমাদের দৈব ইশারার প্রতি সাড়া দেয়া উচিৎ’—ছেলেটি বলে ওঠে, খুব একটা ভাবনা-চিন্তা না করেই। কিন্তু বলে ফেলার পর তার কাছে খারাপ লাগতে শুরু করে –ব্যবসায়ী তো আর সেই বৃদ্ধ রাজার সাক্ষাৎ পাননি, উনি দৈব ইশারার কী বুঝবেন?’

‘এটাকে বলে আনুকূল্য নীতি, নবিশের সৌভাগ্য। কারণ জীবন তোমাকে ভাগ্যবিজয়ী হিসেবে দেখতে চায়’—বৃদ্ধ রাজা বলেছিলেন।

কিন্তু ব্যবসায়ী ছেলেটির কথা বুঝতে পারলেন। ছেলেটির এখানে উপস্থিতিই একটা জলজ্যান্ত দৈব ইশারা, বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বিক্রি বাড়ছিল, ছেলেটিকে কাজ দেয়ার ব্যাপারে তার মাঝে কোন আক্ষেপ ছিলনা। বাজারদরের চাইতে অনেক বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছিল সে, কারণ বেচাকেনা আশাতীত ভাবে বেড়ে গিয়েছে। উঁচু হারে লভ্যাংশ বুঝে পেয়ে ছেলেটির আয়-রোজগারও বাড়ছিল। তাঁর ধারণা ছিল কিছু টাকা-পয়সা জমিয়ে কিছুদিন পরেই হয়তো ছেলেটি বাড়ির পথে যাত্রা করবে।

‘তুমি পিরামিডের কাছে কেন যেতে চাও’?—কথা ঘুরাতে তিনি জানতে চাইলেন।
‘কারণ আমি এদের কথা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি’—ছেলেটি তার স্বপ্নের ব্যাপারটা চেপে যায়। গুপ্তধনের কথাটা সে নিজেই আর মনে করতে চায়না, দুঃখজনক স্মৃতির মতো সেটি বিবর্ণ অতীতে মিশে গেছে ।

‘আমি এমন কাউকে চিনিনা যে কিনা শুধু মাত্র পিরামিড দেখতে বিশাল মরুভূমি পাড়ি দিতে চাইবে। ওগুলো কেবল পাথরের স্তুপ। তুমি চাইলে বাড়ীর উঠোনেই একটা বানিয়ে ফেলতে পারবে’—ব্যবসায়ী বললেন।

‘আপনার কখনই দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা জাগেনি’?—ছেলেটি নতুন আরেকজন খদ্দেরের দিকে যেতে যেতে প্রশ্ন করল।

দুইদিন পর ব্যবসায়ী ছেলেটির সাথে তাক বানিয়ে মাল সাজিয়ে রাখার ব্যাপারটি নিয়ে আবার আলাপ শুরু করলেন।

‘অদল-বদল আমার মোটেও ভালো লাগেনা। তুমি-আমি কেউই হাসানের মতো ধনী ব্যবসায়ী না। ব্যবসায় কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তার সেটা সামাল দেবার ক্ষমতা আছে, আমাদের নেই’।

কথা সত্যি, বিষন্ন মনে ছেলেটি ভাবে।

‘বাইরে একটা শো-কেস মতো বানাতে তোমার এত আগ্রহ কেন’?—ব্যবসায়ী তবুও জানতে চাইলেন।

‘আমি তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে যেতে চাই। ভাগ্য প্রসন্ন থাকতেই তার সুযোগ নেয়া উচিৎ, কারণ এটি আমাদের সাহায্যই করতে চাইছে। একেই বলে আনুকূল্য নীতি। বা নবিশের সৌভাগ্য’।

ব্যবসায়ী একটু সময় চুপ থেকে বললেন, ‘ খোদার প্রেরিত পুরুষ আমাদের কাছে কোরান নিয়ে এসেছেন এবং জীবনে পাঁচটি বড় দায়িত্ব আমাদেরকে পালন করতে বলে গেছেন। সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো এক ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করা। অন্যগুলি হচ্ছে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া, রমজান মাসে রোজা রাখা এবং যাকাত দেয়া ’।
এ পর্যন্ত বলে তিনি থামলেন। নবীর কথা মনে পড়ায় তার চোখে অশ্রু জমে উঠেছে। তিনি ধর্মপ্রাণ মানুষ, ব্যক্তিজীবনে যাবতীয় অসহিষ্ণুতা ছাপিয়েও ইসলামিক নিয়ম নীতি অনুযায়ী জীবন যাপন করতে চাইতেন।

‘পঞ্চম দায়িত্বটি কী’?—ছেলেটি প্রশ্ন করে।

‘দু’দিন আগে তুমি জানতে চেয়েছিলে যে আমার দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা আছে কিনা,’—ব্যবসায়ী বলতে লাগলেন- ‘পঞ্চম দায়িত্বটি হচ্ছে তীর্থযাত্রা, আরবীতে বলে হজ্ব। জীবনে অন্তত একবার আমাদের জন্য পবিত্র মক্কায় যাওয়া বাধ্যতামূলক ’।

‘মক্কা পিরামিড ছাড়িয়েও আরও অনেক দূরের পথ। যুবক বয়সে আমি শুধু কিছু টাকা জমিয়ে ব্যবসায়ে নামতে চাইতাম। ভাবতাম হয়তো একদিন ব্যবসা করে ধনী হয়ে যাব, মক্কায় যাবার মতো টাকা-পয়সা হবে। অল্প কিছু টাকা অবশ্য আমার হয়েছিল, কিন্তু দোকানের ভার বুঝে নেবার মতো কাউকে পাশে পাইনি। কাচ ভঙ্গুর জিনিষ, সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হয়। কিন্তু আমার আশ পাশের কতো লোককে মক্কায় চলে যেতে দেখেছি। তাদের মধ্যে কিছু ধনী লোক ছিলেন, নিজস্ব কাফেলা আর চাকর-বাকর নিয়ে পথ চলতেন, কিন্তু অধিকাংশই আমার চেয়েও গরীব ছিলেন’।

‘তীর্থযাত্রীরা সবাই খুব খুশী থাকতেন ঘর ছাড়তে পেরে। ছেড়ে যাওয়া বাড়ীর সামনে তারা হজ্বযাত্রার নিশানা রেখে যেতেন। তাদের মধ্যে একজন মুচিও ছিল, মানুষের জুতা শেলাই করে তার জীবন কাটতো। তার কাছে শুনেছিলাম—মরুভূমির মধ্য দিয়ে তাকে প্রায় হাজার মাইল পায়ে হেঁটে চলতে হয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় তাঞ্জিয়েরের রাস্তায় চামড়া কিনতে অলি গলিতে ঘোরাঘুরি অনেক বেশি ক্লান্তিকর’।

‘তো আপনি মক্কায় এখন কেন যাচ্ছেন না’?—বিস্মিত ছেলেটি প্রশ্ন করে।

‘কারণ এই মক্কা যাত্রার স্বপ্নটিই আমাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। সেটাই আমাকে প্রতিদিনের এই একঘেয়ে জীবন— বোবা-কালা কাচের জিনিষ আর একই বাজে রেস্তোঁরায় দুপুর-রাতের খাবার ইত্যাদির মধ্যেও বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার মনে হয় স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেলে আমার এই বাঁচার আর কোন অর্থ থাকবেনা’।

‘তোমার স্বপ্ন ভেড়ার পাল আর পিরামিডকে ঘিরে, কিন্তু তুমি আমার চেয়ে আলাদা। কারণ তোমার স্বপ্নকে তুমি বাস্তবে রূপ দিতে চাও। আর আমি শুধু স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। কল্পনার জগতে আমি ইতিমধ্যেই হাজারোবার মরুভূমি পাড়ি দিয়ে পবিত্র মক্কার প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছি, সাতবার তাওয়াফ করে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করেছি। আমার সফরসঙ্গী কারা হবেন, তাদের সাথে আমি কী নিয়ে আলাপ করব এর সবই আমি ভেবে রেখেছি। কিন্তু আমার মনে হয় বাস্তবে ব্যাপারটা এত মধুর হবেনা, তাই আশাহত হবার বদলে আমি শুধু আমার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই’।

সেদিন তিনি ছেলেটিকে দোকানের বাইরে জিনিষ সাজাতে শেলফ বানানোর অনুমতি দিলেন। স্বপ্নের বাস্তবায়ন সবার জন্য একই রকমের হয় না।
***
মাস দুয়েক কেটে গেছে, বাইরের চমৎকার শো-কেসটি আরও অনেক নতুন খদ্দের দোকানে টেনে এনেছে। ছেলেটি হিসাব করে দেখল এভাবে আর ছয় মাস চললেই সে স্পেনে ফিরে গিয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুন ভেড়া কিনে নিতে পারবে। এক বছরের মধ্যেই শুধু দ্বিগুন ভেড়ার পালের মালিক হওয়াই না, আরব ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসাও সে চালাতে পারবে। কারণ এতদিনে আরবী ভাষার উপরে তার বেশ ভালো দখল চলে এসেছে। সেইদিন সকালে শূন্যহাতে বাজারে থাকার সময়ের পর সে আর কোনদিন উরিম আর থুমিমকে ব্যবহার করেনি, কারণ পিরামিড এখন তার কাছে দূরবর্তী এক স্বপ্ন, মক্কা যেমন ব্যবসায়ী লোকটির কাছে। যাই হোক, সব মিলিয়ে সে বেশ খুশী মনেই বিজয়ীর বেশে তারিফিয়ায় ফিরে যাবার দিন গুনছিল।

‘তোমাকে সব সময়েই জানতে হবে যে তুমি আসলে কী চাও,’—বৃদ্ধ রাজা বলেছিলেন। ছেলেটির মাঝে এ নিয়ে কোন দ্বিধা ছিলনা—সে জানে নিজের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে। হয়তো এটাই তার গুপ্তধন—সাগর পাড়ি দেয়া, প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারানো, এবং সবশেষ একটি পয়সাও খরচ না করে ভেড়ার পালকে দ্বিগুন করে নেয়া।

নিজেকে নিয়ে তার গর্ব হচ্ছিল। দরকারী বেশ কিছু বিষয় শেখা হয়ে গেছে তার — কাচের জিনিষের ব্যবসা, শব্দহীন ভাষা, এবং দৈব ইশারার মর্মার্থ। এক দুপুরে সে এক পথচারীকে খেদ নিয়ে বলতে শুনল যে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এত উপরে ওঠার পর এখানে ভালো কোন পানশালা খুঁজে পাওয়া যায়না। কথাটি দৈব ইশারাটি হয়ে তার কাছে ধরা দিল ।

‘চলুন আমরা এখানে একটা চায়ের দোকান খুলি’—তখনই গিয়ে সে মালিককে বলে।

‘অনেকেই তো এখানে চা বিক্রি করে’—ব্যবসায়ী বললেন।

‘কিন্তু আমরা ঝকমকে কাচের গ্লাসে চা বিক্রি করতে পারি, লোকজন চা খেয়ে হয়তো গ্লাস কিনেও নিতে চাইবে। সুন্দর জিনিষ মানুষকে বরাবরই আকৃষ্ট করে’।

ব্যবসায়ী আর কথা বাড়ালেন না, কিন্তু সেদিন দুপুরে নামাজের পর দোকান বন্ধ করে তিনি ছেলেটিকে তার সাথে বসে গড়গড়াতে ধুমপান করতে ডাকলেন। আরবরা গড়গড়া জিনিষটা খুব পছন্দ করে।

‘তুমি আসলে কী চাও’?—ব্যবসায়ী জানতে চাইলেন।

‘আমিতো আপনাকে আগেই বলেছি, আমি ফিরে গিয়ে ভেড়ার পাল কিনতে চাই। আর তার জন্য আমার টাকার প্রয়োজন’।

গড়গড়ায় কিছু নতুন কয়লা ফেলে ব্যবসায়ী গভীরভাবে একটা টান দিলেন।
‘আমি এই দোকান করছি প্রায় ত্রিশ বছর হয়ে গেল, আমি কাচের ব্যবসার আগাগোড়া সব জানি। এখন আমি যদি কাচের গ্লাসে চা বিক্রি করতে শুরু করি, তাহলে ব্যবসা আরও অনেক বাড়বে। এতে করে আমার জীবনটাও বদলে যাবে’।

‘সেটা কি ভালো হবে না?’

‘আসলে আমি আমার বর্তমান জীবনেই বেশ অভ্যস্ত। তুমি আসার আগে আমি ভাবছিলাম জীবনের কতটা সময় আমি এক জায়গাতেই নষ্ট করেছি, আর পুরানা বন্ধুরা সব চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একেবারে খারাপ অবস্থায় আছে আবার কেউ খুবই উন্নতি করেছে। এসব ভাবনা আমাকে বিষন্ন করে তুলছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি মোটেও খারাপ নেই। ব্যবসা ততটুকুই আছে যতটা আমি চেয়েছিলাম। আমি কোনকিছু আর বদলাতে চাইনা, নতুন কিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার খাটনি আমার পোষাবে না। সব কিছু যেমন আছে তেমনই থাকুক’।

ছেলেটি বুঝতে পারছিলনা তার কী বলার আছে এখানে। বৃদ্ধ কথা চালিয়ে গেলেন, ‘তুমি আমার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে হাজির হয়েছো। আজকে আমি নতুন করে একটা ব্যাপার উপলদ্ধি করলাম, আশীর্বাদকে উপেক্ষা করলে তা অভিশাপে পরিণত হয়। আমার জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই। কিন্তু তুমি এসে আমার সামনে সমৃদ্ধির রাস্তা , নতুন সব সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছ। এতসব দেখেশুনে আসলে আমার কাছে একটু খারাপই লাগছে। কারণ এখন আমি জানি আমি কী করতে পারতাম, কী করা উচিৎ ছিল –কিন্তু আমি করিনি’।

কপাল ভালো যে আমি তারিফিয়ার সেই রুটিওয়ালাকে কিছু বলিনি—ছেলেটি ভাবে।

সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত তারা ধুমপান করে যেতে লাগলো। তাদের কথাবার্তা সব হচ্ছিল আরবীতে, নিজেকে নিয়ে ছেলেটি গর্ব বোধ করছিল। এক সময়ে সে ভাবত যে জীবনের প্রয়োজনীয় সবকিছুই ভেড়ার পালের কাছ থেকে শেখা সম্ভব, কিন্তু ওরা কখনই তাকে আরবী ভাষা শেখাতে পারত না।

আরও অনেক কিছু আছে যা আমি ভেড়ার পালের কাছ থেকে শিখতে পারতাম না, ওদের সমস্ত মনোযোগ কেবল খাবার আর পানীয়ের দিকে। হয়তো ওরা আমাকে শেখাচ্ছিলনা, আমিই ওদের কাছ থেকে শিখে নিচ্ছিলাম।

‘মাকতুব’—ব্যবসায়ী অস্ফুটে বললেন।

‘এর মানে কী’?—ছেলেটি জানতে চায়।

‘আরব হয়ে জন্মালে তুমি এটা বুঝতে পারতে। তোমার ভাষায় এর কাছাকাছি মানে সম্ভবত—‘লিখিত’।

তারপর গড়গড়ায় আবার কয়লা ভরতে ভরতে তিনি ছেলেটিকে বললেন যে সে চাইলে কাচের গ্লাসে চা বিক্রি করা শুরু করতে পারে। অনেক সময় প্রমত্তা নদীকে থামিয়ে দেয়ার কোন উপায়ই আর বাকী থাকেনা।
***
পাহাড়ি পথের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে উপরে আসতে আসতে বেশ ক্লান্তি চেপে বসলো লোকগুলোর ঘাড়ে। কিন্তু পাহাড়ের চুড়ার উঠে দেখল স্ফটিকের এক দোকানে পুদিনা পাতা দেয়া চমৎকার চা পাওয়া যায়। তরতাজা করা চা, ঝকঝকে কাচের গ্লাসে।

‘আমার বউ এটা কখনই ভাবেনি’—একজন বলে, সেদিন রাতে তার বাড়িতে অতিথি আসার কথা, তাদের কথা ভেবে সে কয়েকটা গ্লাসও কিনল। আরেক জন মন্তব্য করলো,—কাচের গ্লাসে চায়ের স্বাদ অনেক বেড়ে যায়, কারণ এর মধ্যে চাপাতার সুঘ্রান আটকে থাকে। প্রাচ্যদেশে কাচের গ্লাসে চা খাওয়া বহুল প্রচলিত কারণ তাদের বিশ্বাস কাচের মধ্যে যাদুকরী শক্তি লুকিয়ে আছে—তৃতীয়জন জানালো।

বাতাসের গতিতে খবরটা সবখানে ছড়িয়ে পড়তে সময় নিলো না , লোকজন দলে দলে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে সেই দোকানটিতে আসতে লাগলো যেখানে অনেক পুরানো এক ব্যবসাতে নতুন একটা ধারার সূচনা করা হয়েছে। দেখাদেখি অন্যান্য দোকানেও কাচের গ্লাসে চা বিক্রি শুরু হলো, কিন্তু তাদের কারও ব্যবসাই এতটা জমলো না।
খদ্দেরদের ভীড় সামলাতে আরও দু’জন নতুন কর্মচারীকে নিয়োগ দিতে হলো । চা আর কাচের তৈজস পত্রের বিরাট বিরাট চালান আসতে লাগলো, আর দোকান দিনরাত সরগরম রইলো নতুন কিছুর সন্ধানে উৎসাহী নারী-পুরুষের কোলাহলে।

এভাবে কেটে গেল আরও কয়েকটি মাস।
***


মন্তব্য

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ঝরঝরে অনুবাদ। ভালো লাগলো।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মাসকাওয়াথ ভাই!

মূলত পাঠক এর ছবি

এবারের অনুবাদ আরো মসৃণ হয়েছে। লেখা থামে না যেন।

মামুন হক এর ছবি

থামবেনা দাদা, কোথাও আটকে গেলে তুমি তো আছো :)

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দারুন লাগল, e-বই ছাপানো যেভাবেই হোক না কেন, একসাথে দেখতে চাই পুরো বইটা। কেবলে ২য় খন্ড, মনে তো হয় বহুদুর বাকি। আপনাকে লাল স্যালুট লেগে থাকার জন্যে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মামুন হক এর ছবি

আর বেশি বাকি নাইরে ভাই, হয়ে যাবে :)

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

বাহ মামুন ভায়া, বাহ। গোগ্রাসে গিল্লাম। চালিয়ে যান।

একটাই প্রশ্ন - পরের কিস্তি কবে??

-----------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অনুপম, আসবে অচিরেই। ভালো- মন্দ জানিয়ে সাহায্য করবেন আশাকরি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দোস্ত, চালায়া যা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মামুন হক এর ছবি

হ, চালাইতেছি...

বর্ষা এর ছবি

পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আগের পর্বটা আগে পড়িনি। আজ পড়ে নিলাম।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

মামুন হক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ বর্ষা।

তুলিরেখা এর ছবি

ঝরঝরে সুন্দর অনুবাদ।
পড়ে ভালো লাগলো খুব।

----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ভয়ে ভয়ে থাকি হাতি ঘোড়া কিছু হচ্ছে কিনা। আপনার মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম :)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।