ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় একটি দিন। অগ্নিঝরা মার্চের ঊর্মিমুখর এদিনে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র ঘোষণা দেন।
কবি নির্মলেন্দু গুণ শেখ মুজিবের সাত মার্চের ভাষণকে বলেছেন একটি মহাকাব্য। আর সেই মহাকাব্যের মহাকবি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবি গুণের কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে কবি অভিহিত করার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকার মতো কাগজে। কাগজটি শেখ মুজিবকে নাম দিয়েছিল 'এ পোয়েট অব পলিটিক্স' ।
চলুন ফিরে যাই একাত্তরে-
৬ মার্চ লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে অপসারণ করে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই উত্তপ্ত সময়ে নৃশংস বলে কুখ্যাত টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরণের উদ্দেশ্য যে মিলিটারির বুটের নিচে পূর্ব পাকিস্তানের গণ আন্দোলনকে দাবিয়ে দেয়া । এটা উপলব্ধি করতে পেরে ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জনাব বি এ সিদ্দিকী টিক্কা খানের শপথনামা পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন। ফলে সৃষ্টি হয় এক অচলাবস্থার। এদিকে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বাধীন ‘নিউক্লিয়াস’ শেখ মুজিবের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যাতে তিনি ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার জন্য শেখ মুজিবের ওপর চাপ তুঙ্গে উঠে এবং সেদিনই তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দীর্ঘ আলাপ হয়। প্রেসিডেন্ট তাকে অনুরোধ করেন, যেন তিনি এমন কোনো পদক্ষেপ না নেন যাতে আর প্রত্যাবর্তনের কোনো পথ না থাকে। একই দিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষণা দেন যে, আগামী ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ভাষণে প্রেসিডেন্ট যে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন, তাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের রেডিক্যাল অংশ শেখ মুজিবের ওপর আরো চাপ প্রয়োগ করতে থাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার জন্য। পরদিন ৭ মার্চ জনসভাকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাড়িতে চলতে থাকে প্রস্তুতি। এদিকে পাকিস্তানে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন এবং হুমকি দেন মার্কিন সরকার পাকিস্তান ভাঙ্গা সহ্য করবে না’। রাতে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসে এবং সিদ্ধান্ত ছাড়াই গভীর রাতে মূলতবী হয়ে যায়।
এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ৭ মার্চ বেলা ২.৩০ মিনিটে রেসকোর্সের জনসমুদ্রের সামনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের অপশাসন ও নিষ্পেষণ থেকে বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র ঘোষণা দিতে দাঁড়ালেন।
ভাইয়েরা আমার,
আজ-দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী,রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তাঁর অধিকার চায়। কি অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পুর্ণভাবে আমাকে-আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেমব্লি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করবো এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস, বাংলার অত্যাচারের বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস, ২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষ নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁন মার্শাল'ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৪ সালে ৬-দফা আন্দোলনের ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁনের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খাঁন সাহেব সরকার নিলেন- তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন-গণতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম।
তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেলো, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁন সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি, শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করলাম- ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেননা, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসে প্রথম সপ্তাহের হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে আমরা এসেমব্লিতে বসবো। আমি বললাম, এসেমব্লির মধ্যে আলোচনা করবো- এমনকি এও পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশী হলেও একজন যদিও সে হয় তাঁর ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।
জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন, যে আলোচনার দরজা বন্ধ না, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাঁদের সঙ্গে আলাপ করলাম- আপনারা আসুন-বসুন আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করি। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসে তাহলে কসাইখানা হবে এসেমব্লি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হবে, যদি কেউ এসেমব্লিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেমব্লি চলবে। তারপরে হঠাৎ ১ তারিখে এসেমব্লি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসাবে এসেমব্লি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে, আমি যাবো। ভুট্টো সাহেব বললেন তিনি যাবেননা। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপর হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্ধ করে দেয়ার পরে এদেশের মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠল।
আমি বললাম , শান্তিপুর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সব কিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিলো। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লো, তারা শান্তিপুর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। কি পেলাম আমরা, জামার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরীব-দুঃখী নিরস্ত্র মানুষের মধ্যে- তার বুকের উপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু-আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি- তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
তার সাথে আমার দেখা হয়, তাকে আমি বলেছিলাম জনাব ইয়াহিয়া খাঁন সাহেব আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কিভাবে আমার গরীবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের উপর গুলি করা হয়েছে। কি করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কি করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি নাকি স্বীকার করেছি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স হবে।
আমিতো অনেক আগেই বলেছি কিসের আরটিসি, কার সঙ্গে বসবো? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে বসবো? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘন্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন সমস্ত দোষ তিনি আমার উপর দিয়েছেন, বাংলার মানুষের উপর দিয়েছেন।
ভাইয়েরা আমার,
২৫তারিখ এসেমব্লি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০তারিখে এসে বলে দিয়েছি যে, ঐ শহীদের রক্তের উপর পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারেনা। এসেমব্লি কল করেছে, আমার দাবি মানতে হবে প্রথম সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত দিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপরে বিবেচনা করে দেখবো আমরা এসেমব্লিতে বসতে পারবো কি পারবো না। এর পূর্বে এসেমব্লিতে বসতে আমরা পারি না।
আমি, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিস্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্টকাচারী, আদালত-ফইজদারী, শিক্ষা প্রতিষ্টান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরীবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেইজন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিস গুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবেনা- রিকসা-ঘোড়াগাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে- শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জর্জকোর্ট, সেমি গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবেনা। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন।
এরপরে যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু-আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমারা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই , তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবেনা। কিন্তু আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবাইয়া রাখতে পারবানা। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের ডুবাতে পারবে না।
আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাঁদের সাহায্য করতে চেষ্টা করবো। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকা পয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই ৭ দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছাইয়া দেবেন। সরকারী কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হয় , খাজনা - ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো- কেউ দেবে না। শুনেন , মনে রাখবেন, শত্রু বাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্বকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলার হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-নন বাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই , তাঁদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে, আমাদের যেন বদনাম না হয়। মনে রাখবেন রেডিও -টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনে তাহলে কোন বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোন বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। ২ ঘন্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাঁদের মাইনা পত্র নেবার পারে। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন-টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে হলে আপনারা চালাবেন। কিন্তু যদি এই দেশের মানুষকে খতম করার চেস্টা করা হয়- বাঙালিরা বুঝেশুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুল। এবং তোমাদের যা কিছু তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।
মনে রাখবা, ''রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ''।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম''।
জয় বাংলা [১]
উল্লেখ্য,বঙ্গবন্ধরু বক্তৃতাকালে জনতার কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল স্লোগান, "জাগো জাগো- বাঙালি জাগো", "পাঞ্জাব না বাংলা- বাংলা বাংলা", "তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা", "তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব", "বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো।" ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রিলে না করার প্রতিবাদে বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মচারীরা কাজ বর্জন করেন এবং বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সকল অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রিলে করা হবে- এ ঘোষণার পর সারা বাংলায় শ্রোতারা অধীর আগ্রহে রেডিও সেট নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ করে দেযার প্রতিবাদে বেতার কেন্দ্রটি অচল হয়ে পড়ে
। তখন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্র পুরনায চালু হয। [ ২ ]
এই ভাষণটির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা। ৭ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের শাসন কার্যত বিলুপ্তই হয়ে যায়। সবকিছুই পরিচালিত হতে থাকে শেখ মুজিবের নির্দেশক্রমে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সেনানিবাসেও স্বাধীনতার অনুকুল প্রতিক্রিয়া হয় । তৎকালিন মেজর (পরে জেনারেল , রাস্ট্রপতি ) জিয়া বলেন -"৭ ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হলো আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দিলাম " । [৩] তৎকালীন মেজর শাফায়াত জামিলের স্মর্তিচারণ -“বঙ্গবন্ধুর আহবান, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু , আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি , তোমরা বন্ধ করে দেবে , এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-আমাদের মধ্যে আবার দ্রুত উদ্দীপনা ফিরিয়ে আনল । পরে ভেবে দেখেছিলাম , তাৎক্ষণিক উদ্যোগের কথা না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর এই ভাষনে যুদ্ধের ইঙ্গিত ও দিক নির্দেশনা তো ছিল ।" [৪]
বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি যথার্থই ছিল গ্রীন সিগনাল কিন্তু সরাসরি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা নয় । উত্তাল মার্চে অনেক রাম শ্যাম যদু মদু স্বাধীনতা ঘোষণা ও নানারকম হঠকারী বক্তব্য দিলেও একমাত্র বঙ্গবন্ধু সেই চোরাবালীতে পা রাখেননি । মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বিচক্ষনতার প্রকাশ হয়েছিল ৭ মার্চে । যারা বলেন (আম্বালীগের কট্রর সমর্থক ) বঙ্গবন্ধু ৭ ই মার্চই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তারা যেমন ইতিহাসবিকৃতিকারী তেমনি যারা বলেন তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি এবং কামটা ভালু হয়নাই এসব তেনা প্যাচানী ও লাদানি করেন তারা ছাগু ।
৭ তারিখে কোন্ পটভূমি ও পরিস্থিতে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন এটা শুরুতেই বলা হলেও আবারও সেদিকে নজর দেয়া দরকার । “মার্চের প্রথম পাঁচ দিনে পূর্ববাংলার স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের তীব্রতা দেখে ইয়াহিয়া অপ্রত্যাশিতভাবেই আবার ঘোষণা করেন, ২৫ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। এটা তাচ্ছিল্য করার বিষয় ছিল না। কাজেই ৭ মার্চের জনসভায় শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে তিনটি দাবি তোলেন-কারফিউ তুলে নিতে হবে, মার্শাল ল প্রত্যাহার করতে হবে এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিনি এ-ও জানতেন, এ দেশের অনেক মানুষ স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে জনসভায় এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতি সেই ঘোষণার অনুকূলে ছিল না। পর্যাপ্ত সামরিক প্রস্তুতি না নিয়ে এ ধরনের ঘোষণা বিরাট বিপদ ডেকে আনতে পারত। এই নাজুক অবস্থায় মানুষকে সংগ্রামমুখী করে রাখার উদ্দেশে এবারের সংগ্রামের চরিত্র উদ্দীপ্তভাবেই তিনি তুলে ধরেন। সেই ঘোষণাকে সে সময় যেভাবেই গ্রহণ করা হয়ে থাকুক, মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা শুরু হওয়ার পর মানুষ এই আলোচনার ফলাফলের দিকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরে-শেখ মুজিবের কণ্ঠে স্পেসিফিকভাবে কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা না থাকায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৭ মার্চের ঘোষণাকে প্রত্যহ কয়েকবার করে বাজানো হয়েছে। তারও অনেক বছর পরে উত্তরসূরিদের রাজনীতি আবার সেই কথা দুটি সামনে এনে তা স্বাধীনতা ঘোষণার সমার্থক প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যে পটভূমিতে, যে বাস্তবতা বোধ থেকে এবং যেভাবে ওই বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল, তার যথার্থতা ভাবাবেগবর্জিতভাবে এ দেশে কমই আলোচিত হয়েছে। ওটা তাঁর অনুসারীরাও করেননি, বিরুদ্ধবাদীরাও না।" [৫]
দোহাই:
১। http://www.nybangla.com/Bijoy/Documents/7th%20March%20Address.pdf
২। http://liberationwarmuseum.org/today-in-1971/49-march/95-march-7-1971
৩। ১৯৭২ সালে রচিত এবং পাক্ষিক বিচিত্রার ২৬ মার্চ ১৯৭৪ সংখ্যা প্রকাশিত জিয়ার নিবন্ধ 'একটি জাতির জন্ম'
৪। কর্নেল শাফায়াত জামিল , একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর , সাহিত্যপ্রকাশ , ঢাকা ২০০০ , পৃ ১৫ ]
৫। মঈদুল হাসান, ‘ফিরে দেখা ১৯৭১ http://www.profile-of-bengal.com/p-b/www.profilebengal.com/looking_back.htm
মন্তব্য
ভাষণের অডিও এখানে
ভাষণের ভিডিও এখানে
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
১৯শে মার্চ জয়দেবপুরে মেঃ জেঃ (পরবর্তীকালে) মইনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বাঙালি সেনারা নাকি বিদ্রোহ করে। যদ্দুর মনে পড়ে, মইনুল হোসেন চৌ মারা যাওয়ার আগে বিভিন্ন টক-শোতে এটা উল্লেখ করতেন জিয়ার আগেই সামরিক বাহিনী্তে বাঙালিদের সেনাসদস্যদের স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার উদাহরণ হিসেবে, এবং সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর ২৬শে মার্চের ঘোষনার আগেই যে তারা যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলেন তার উদাহরণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকারীর ক্রেডিট নেয়ার জন্যও কিছুটা। আমার বোঝার ভুল হতে পারে অবশ্য।
মইনুল হোসেন চৌ-দের এই সামরিক বিদ্রোহ কি ৭ই মার্চের ভাষন ও সেই ভাষনজাত মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ববর্তী আন্দোলনের অংশ এবং বঙ্গবন্ধুর মার্চের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম কর্তৃক প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্যভাবে সমর্থিত ছিল, নাকি এটা একটা রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাহীণ বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন সেনাবিদ্রোহ ছিল ? ২৭শে মার্চে জিয়ার ঘোষণা ও যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে এর অবস্থান কোথায়?
আসম আব্দুর রবের একটা সাক্ষাৎকার শুনে মনে হল বঙ্গবন্ধু প্রায় তাদের কথাতেই উঠতেন-বসতেন তখন, ৭ মার্চের ভাষনের সব কন্টেন্টও প্রায় তাদের লিখে বা বলে দেওয়া। রব সাহেবদের কি আসলেই এতটা ভূমিকা ছিল?
তোফায়েল আহমেদের একটা সাক্ষাৎকার শুনে মনে হল, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরিকল্পনা '৬২ থেকেই করছিলেন। এ ব্যাপারটাও আমার কাছে পরিষ্কার না।
****************************************
মইনুল হোসেন চৌধুরী তো ১৯শে মার্চ জয়দেবপুরে ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মব কন্ট্রোলে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তাঁর বইতে দাবি করেছেন, জাহানজেব আরবাব মিছিলে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিলেও তিনি তাঁর সৈনিকদের বলেন মাথার ওপরে গুলি করতে। কোনো মৃত্যু না ঘটায় ব্রিগেডিয়ার আরবাব মেজর মইনের ওপর চড়াও হন, এবং পরবর্তী নির্দেশে দুই তিনজন উত্তেজিত জনতা নিহত হন। পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার আরবাব ইনসাবঅর্ডিনেশনের অভিযোগ এনে মেজর মইনকে টাইট দেয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু ওপরমহলে তাঁর খাতির থাকায় সুবিধা করতে পারেননি।
বিদ্রোহ প্রথম করেন ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম (পরবর্তীতে ১ নং সেক্টর কমাণ্ডার, বীর উত্তম)। তিনি ২৪শে মার্চ চট্টগ্রাম সীমান্তে ইপিআরের বিওপিগুলোতে অবাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করে তাদের বন্দী করার নির্দেশ দেন এবং তা কার্যকর করান।
ধন্যবাদ হিমু ভাই
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আমার মনে হয় সবারই বিশাল সব অবদান আছে। জয়দেবপুরে জেনারেল মইনের, চিটাগাং এ মেজর রফিকুল ইসলামের আর সামগ্রিক ভাবে জিয়ার।
কারুরটাকেই খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
‘সেদিন ছিল শুক্রবার ও হাটবার। প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোকের সমাবেশ ছিল সেখানে। মেজর মঈন প্রতিবন্ধকতার সামনে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ, ব্রিগেড কমান্ডার জাহানজেব ও তার জোয়ানরা সেখানে পৌঁছে।
‘ব্রিগেড কমান্ডার হুকুম দেয় “ফায়ার অ্যান্ড ক্লিয়ার দ্য ব্যারিকেড।” মেজর মঈন হুকুম পাওয়ার পর প্রথম বিউগল বাজালেন এবং পতাকা উঠিয়ে গুলি ছোড়া হবে মাইকে ঘোষণা করলেন। এ ঘোষণায় জনতার মধ্যে কোনো ভয়ভীতির সঞ্চার হয়নি। তারপর তিনি জনতার মধ্যে একজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশ শোনার পর জনতার মধ্যে একটু ভয় ও ভীতির সঞ্চার হয়।
‘মেজর মঈন যাঁকে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁকে বাংলায় বললেন যে নিচের দিকে গুলি ছুড়ে দাও। যেহেতু গুলি গিয়ে একটা গাছের সঙ্গে লেগেছে, সেহেতু ব্রিগেড কমান্ডার এটা দেখে রাগান্বিত হলেন। তিনি নির্দেশ দিলেন, “ফায়ার ফর অ্যাফেক্ট।” এবারও জনতার মধ্যে নড়চড় হচ্ছিল। তাই মেজর মঈন আরেকজনকে লক্ষ্য করে বললেন, অমুককে গুলি ছোড়। কিন্তু এবারও তিনি বললেন, ওপরের দিকে মেরে দাও। এবার যে গুলি করেছিল, সে রাইফেলটাকে এমনভাবে ধরেছিল যে মনে হচ্ছিল সে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ছে।
‘এ খণ্ডযুদ্ধ প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো চলে এবং এরপর সম্পূর্ণ এলাকা জনতামুক্ত হয়।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
৭ মার্চের ভাষণের কন্টেন্ট আসলে বিশেষ কারো দেয়া মনে হয় না। সাংবাদিক আতিকুর রহমানের কাছে এক সাক্ষাৎকারে আবদুস সামাদ আজাদ বলেছিলেন, ৭ মার্চের ভাষণের খসড়া প্রস্তুত করেছিলো তাজউদ্দীন আহমেদের নের্তৃত্বাধীন এক কমিটি। এতে ছিলেন আবদুস সামাদ, আবদুল মোমেন, সিএস্পি অফিসার আহমদ ফজলুর রহমান। আহমদ ফজলুর রহমানের ধানমন্ডির বাসায় ৫-৬ তারিখ ধরে এই খসড়া প্রস্তুত করা হয়।
তবে শেখ মুজিব সম্ভবতঃ কোন খসড়াই পুরো অনুসরণ করেন নি। বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিবের কথা অনুযায়ী স্বীয় বিবেচনাবোধের উপরেই আস্থা রেখেছিলেন
কমিটিতে ড:কামালও ছিলেন ।
হ
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
একটা অফটপিক ব্যক্তিগত কৌতুহল (আপনি যেহেতু ইতিহাস/মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখেন, তবে অন্যদের কাছেও) --
আমি অনেকদিন আগে আমার নানার ঢাকার বাসায় একটা মরিচা পড়া অদ্ভূত লোহার মুখোশ পেয়েছিলাম। এখন আর ভাল মনে নেই, তবে যদ্দুর মনে পড়ে - এই বাঁকা মুখোশটা মুখের উপর প্রায় খাপে খাপে বসে যেত। এর চোখের জায়গায় দুটো বড় ফুটো ছিল, মুখ বা নাকের জায়গায় কিছু ছিল কিনা বা নাকমুখ বেরিয়ে থাকত কিনা মনে পড়ছে না এখন। আর কানের কাছে স্ক্রু/বল্টু বা ঐ জাতীয় কিছু একটা ছিল।
আমার নানার ঐ বাসাটা ছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর। '৭১-এ উনারা অন্যত্র চলে যান। বাসাটা পাকবাহিনি দখল করে নেয়। স্বাধীনতার পর ফিরে আসলে বাসার কম্পাউন্ডের ভিতর পিছনদিকে জঙ্গল হয়ে যাওয়া বাগানে অনেক গুলি, গুলির বেল্ট, হেলমেটসহ পাক সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অনেক চেনাঅচেনা জিনিষ পান, যার মধ্যে এই মুখোশ ছিল। পরবর্তীকালে আমি এই মুখোশ আর সম্ভবত একটা হেলমেট নিয়ে আসি উনাদের বাসা থেকে। এগুলি আমার কাছে ছিলও অনেক দিন।
এর মধ্যে ঐ ভীতিকর মুখোশটা আমাকে অনেকদিন রহস্যতাড়িত করেছে - কারন আমি এর ব্যবহারটা কি তা কখনো বুঝে উঠতে পারিনি। কেউ একজন তখন আমাকে বলেছিল ঐ লোহার মুখোশটা বন্দী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর টর্চার করার জন্য নাকি ব্যবহৃত হত - তাদের মুখে ঐটা পরিয়ে কানের জায়াগায় বল্টুর মত জিনিষটা নাকি রেঞ্চ জাতীয় কিছু দিয়ে ঘুরিয়ে মাথার উপর চাপ দেয়া হত যাতে করে মাথা ফেটে যায়। বা ঐরকম কিছু। কিন্তু আমার কাছে সেটা তেমন বাস্তবসম্মত মনে হয়নি তখন, কারন অত পুরু লোহার মুখোশ ওভাবে বাঁকাটা আমার কাছে সম্ভবপর মনে হয়নি। লোহা তো কোন নমনীয় বস্তু না। কিন্তু বাচ্চা বয়সে ওই আয়রন মাস্কের অন্য কোন রকম ব্যবহারও আমার মাথায় আসেনি।
আমার প্রশ্ন আপনি, বা ঐ প্রজন্মের কেউ, পাকবাহিনির ব্যবহৃত এমন কোন লোহার মুখোশ কি দেখেছেন বা এরকম কিছুর কথা শুনেছেন? কেউকি কি বলতে পারবেন এই, বা এরকম মুখোশ কেন ও কিভাবে ব্যবহৃত হত ?
****************************************
লোহার মুখোশ কেন, মোটাসোটা লোহার আংটাও ওভাবে স্ক্রু ঘুরিয়ে টাইট দেয়া যায়। আপনার সংগ্রহে কি জিনিসটা এখনও আছে? কিংবা কোনো ছবি তুলে রেখেছেন?
নাহ্.... এখন আর নেই। ৮-১০ বছর বয়সে ওটা নেহাতই খেলার উপকরণ ছিল আমার কাছে।
****************************************
আপনার তথ্যসম্বৃদ্ধ লেখাটি পড়ে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জনাব বি, এ, সিদ্দিকী, টিক্কা খানের শপথ না পড়িয়ে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেটা আমাদের জন্য একটি বহুল আলোচিত উৎসাহব্যাঞ্জক উদাহরণ তৈরি হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু সেদিন কেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় একটি বিশেষ দিক উঠে আসতো, তা হলো, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করে আমাদের ঐ আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিবর্তে বিচছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। বঙ্গবন্ধু, অপর দিক থেকে প্রথম আঘাতটা আসার অপেক্ষা করেছিলেন। সম্ভবত সেটাই তখনকার বিবেচনায় সঠিক ছিল।
আমি রাজনীতি বিশ্লেষক নই। সে সময়ে আমাদের মাঝে যে ধরনের আলোচনা হতো তারই কিছু অংশ শেয়ার করলাম।
তবে টিক্কা খানকে কে শপথ করিয়েছিলো? জামাতি/ছাগু প্রচারণা বা তাদের পাঁতিহাস অনুযায়ী -কে.এম.সোবহান ! কিন্তু এটা সত্য নয় । আসলে একই বিচারক তাকে শপথ করিয়েছিলেন । রেফারেন্স্ঃ
"On 6th March ........Yahia Khan appointed Lt. Gen Tikka Khan, nicknamed "Butcher of Baluchistan" as the Govornor of East Pakistan. But on 7th March the Chief Justice" (Justice B. A. Siddiky of the East Pakistan High Court refused to adminster the oath to him. However later on 9th April he adminstered the oath (perhaps) under threat".(Ref: In Bangladesh: past and present by Salahuddin Ahmed , Dec 1, 2004,Page 174)
"The Chief Justice who refused oath to Tikka Khan, as the Governor of East Pakistan" is a half truth spread by his grand-nephew Chowdhury Irad Ahmed Siddiky who wilfully omitted the fact that on 9th April 1971, the then Chief Justice Badruddin Ahmed Siddiky adminstered the [oath as on Dhaka High court record].
হ
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা ।।।। খুব ভাল লাগলো।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ মানিক ভাই - আমাদের গর্বের দিন গুলোর অন্যতম এই ৭ ই মার্চ - বঙ্গবন্ধু র এই দিনের উচ্চতায় আর কোন বাঙ্গালী কে দেখিনি -
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
খুব চমৎকার লেখা মানিক ভাই
ডিসেম্বারের দিকে আপনার সব গুলা লেখা আমি আমরা বন্ধু ব্লগে পড়েছি...
আপনাদের খুব দরকার বাংলাদেশের।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ঠিক যেমনটা হওয়া প্রয়োজন লেখাটা ঠিক তাই।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, একজন মানুষ নিজে রেসকোর্সে দাঁড়িয়ে নিজ কানে "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম" - এই বাক্যটা শোনার পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বা হেঁটে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন কীভাবে! আমি হলে তো এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। এক সাথে এই অসহ আনন্দ, উত্তেজনা, প্রাপ্তি ও দায়িত্বের ভার বহন করা অসম্ভব।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত।
হ
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
এমন সাহসী আর প্রত্যয়ী উচ্চারণ শুধু একজনই করতে পারেন তিনি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ভাল লাগল, মানিক ভাই! আজও কয়েকবার শুনেছি। এখনও রক্তে শিহরন তুলতে সক্ষম মাইকের দুর্বলতাকে ভেদ করে আসা এই আশ্চর্য, অনবদ্য ভাষণ! বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুনের 'একটি কবিতা পড়া হবে' কে তাই কখনো অত্যুক্তি মনে হয় না; চিরন্তন কবিতার মতই এখনো হৃদয়ে দোলা দেয়, মার্চের সেই অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের গনগনে উত্তাপ টের পাই বুকের গভীরে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ থেকে সামান্য কোট করার লোভ সামলাতে পারছি না:
''আমার বুকের' অংশটি বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের রাজনীতিকে দারুণভাবে ব্যাখ্যা করে বলে আমার মনে হয়। নিজের দেশের মানুষকে উনি ওনার বুকে স্থান দিয়েছিলেন। তাই তো তিনি বলতে পারেন, 'আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না'' এবং কোটি কোটি মানুষও কোন সমস্যা ছাড়াই বুঝে নিতে পারে নেতার 'আমার বুকের' কথাটার অর্থ! জনগণ ও নেতার অন্তর যখন এভাবে এক হয়ে যায়, তখন কোন জাতির মুক্তি ঠেকানো হয়ে পড়ে অসাধ্য! কারণ নেতার আহবানে জনগণ তখন প্রাণ দিয়ে দিতে পারে অকাতরে! তখন দারুণ শক্তিশালী ও আধুনিক একটা সেনাবাহিনীকে মাত্র নয় মাসেই 'কাইত' করে দিতে পারে লুঙ্গি-গামছা পড়া ও তুলনামূলক অনভিজ্ঞ অথচ তেজের আগুনে প্রদীপ্ত এক মুক্তিবাহিনী।
সম্পূর্ণ একমত! আওয়ামীলীগের কট্রর সমর্থকেরা এভাবে ৭ই মার্চের ভাষণের অনন্যতাকেই অস্বীকার করেন আসলে! আর বঙ্গবন্ধু মানুষকে হতাশ করেছিলেন বলে অনেক বামপন্থী নেতা এই সেদিন পর্যন্ত বাগাড়ম্বর করেছেন।
যারা 'মানুষ স্বাধীনতার ডাক শোনার আগ্রহ নিয়ে এলেও বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি' বলে স্বাধীনতার ঘোষণাকে বিকৃত করতে চায়, তারা একটি বিষয় বিস্মৃত হয় যে, বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু! সুতরাং, তাকে নিয়ে এই সন্দেহ একেবারেই হাস্যকর!
অনেক ধন্যবাদ, মানিক ভাই!
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ মানিক ভাই। অনেক কিছু জানালেন। মন্তব্যগুলোতেও কতকিছু উঠে এসেছে।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ মানিক ভাই এই আসাধারন লেখাটির জন্য।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
৭ই মার্চে রেস কোর্সের মাঠে বসে এই ভাষন শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো ।
তথ্য সমৃদ্ধ এই লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ মানিক ভাই ।
আপ্নি সৌভাগ্যবান ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
কিছুই বলার নাই।
ডাকঘর | ছবিঘর
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ
স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রণি...........
আমারো প্রিয় একটা গান
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
তথ্য সমৃদ্ধ চমৎকার লেখা মানিক ভাই।
খুব ভাল লাগলো।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
জয়য়য়য় বাংলা !
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নতুন মন্তব্য করুন