রঙ্গীন দুনিয়া #১ [উড়াল পর্বঃ প্রথম ভাগ]

অভ্রনীল এর ছবি
লিখেছেন অভ্রনীল (তারিখ: শনি, ২৩/০৮/২০০৮ - ৪:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিন পর সচলে লিখতে বসলাম। না লেখার প্রথম কারন অবশ্য আমার ব্যস্ততা; আর দ্বিতীয় কারন বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সচলে ঢুকতে না পারা [কাহাতক আর হাঙ্কি পাঙ্কি করে প্রক্সি সাইট দিয়ে ঢোকা যায়!]। দেশের বাইরে আসাতে দ্বিতীয় কারনটা সমাধান হলেও প্রথমটা এখনো অমিমাংসিত অবস্থায় আছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে ভয়াবহ ধরনের ব্যস্ত ছিলাম। ভিসা প্রসেসিং, কেনাকাটা, অফিসে রিজাইন দেয়া – বহুত ঝামেলা। গ্রাজুয়েশন করার পর ভালই ছিলাম। হঠাৎ কী মনে হল আরও লেখাপড়ার জন্য মাথা কামড়া-কামড়ি শুরু হল। এম এস করার জন্য ইউরোপকেই পছন্দ করলাম। টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেলফ এ এডমিশন পেলাম। ওই দিকে আবার মামা খালা নেদারল্যান্ডস থাকে। সব মিলিয়ে একেবারে খাপে খাপ মিলে যাবার দশা আর কী। যাই হোক সংক্ষেপে এই হল আমার নেদারল্যান্ডস যাবার আদ্যোপান্ত।

ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ

নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। প্লেন কিভাবে আকাশে উড়ে এটা নিয়ে মনে কোনদিন সন্দেহ জাগেনি। কিন্তু আজকে সকালে যখন ব্রিটিশ এয়ার ওয়েযের বিএ১৪৪ ফ্লাইটটাকে দেখলাম তখনই মনে প্রথম সন্দেহটা জাগলো। আসলেই কি এই বিশাল জিনিসটা আকাশে উড়তে পারে? রান ওয়েতে বিশাল ধবধবে সাদা প্লেনটা ডানা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কনকনে ঠান্ডা লাউঞ্জে বসে ছিলাম প্রায় ঘন্টাখানেক। একসময় ডাক পড়ল প্লেনে উঠার। লাইন ধরে উঠলাম একসময়। আব্বা বাসায় বারবার বলে দিয়েছিলো যে চেক ইনের সময় যেন জানালার পাশের সিটের জন্য রিকোয়েস্ট করি। এটাই আমার প্রথম প্লেনে উঠা। তাই উপর থেকে পৃথিবী দেখার সাধ কেন অপূর্ণ থাকবে। কিন্তু সারাক্ষন মনে রেখে ঠিক টিকেট চেক ইনের সময় ভুলে গেলাম রিকোয়েস্ট করতে। কী আর করা! এ যাত্রায় আর জানালার পাশে বসা হোলনা মেনে নিয়েই প্লেনে উঠলাম।

রাখে আল্লাহ মারে কে! প্লেনে উঠে দেখি জানালার পাশের সিটের পাশের সিটটাই আমার। যাক বাবা অন্তত পাশের যাত্রীর উপর দিয়ে উঁকি মেরে জানালা দিয়ে কিছু তো দেখা যাবে! হঠাৎ মনে হল পাশের যাত্রী যদি মেয়ে হয় তাহলে তো উঁকি দিলে পুরা মার্ডার কেস! যাই হোক এক সময় প্লেন নড়াচড়া শুরু করল এবং আমার আর জানালার মাঝে আর কেউ নেই! যাক শেষ পর্যন্ত একটা আশা পুর্ণ হল তাহলে।

পাখির চোখে বাংলাদেশ

উপর থেকে বাংলাদেশকে যে এত অসাধারন লাগে তা আগে কখনো চিন্তা পর্যন্ত করিনাই। এক কথায় অপূর্ব! মেঘের ফাঁক দিয়ে একে একে চোখে পড়লো হোটেল রেডিসন, গুলশান লেক, হকি স্টেডিয়াম; আরো অনেক কিছু, কিন্তু সব গুলো ঠিক মত বুঝতে পারিনাই। একসময় চোখে পড়ল গ্রাম। গ্রামের টিনের ঘরের চাল গুলো রোদে ঝিকমিক করছিলো। যাই দেখিনা কেন, কেবল সবুজ রংটাই চোখে পড়ে। সবুজের মাঝে এঁকে বেঁকে গেছে চকচকে রূপালি নদী। সবুজের মাঝে রূপালী ফিতার মত নদী; অসম্ভব সুন্দর একটা সমন্বয়। না দেখলে এককথায় বোঝানো অসম্ভব!

আমি কবি মানুষ না। তাছাড়া কবিতা খুব একটা পড়িওনা। এক কথায় আমি কখনোই কবিতার সমঝদার ছিলাম না। তাই আমার ভান্ডারে কবিতার সংখ্যা অনেক কম। পাখির চোখে বাংলাদেশকে দেখে আমার মনে হয়েছিলো কোন কবিই এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশকে কোন কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে পারেনাই; হোক সেটা রবিন্দ্রনাথ বা দ্বিজেন্দ্রলাল। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, যদি তাদেরকে রূপালী-সবুজের অসাধারন মিশ্রনটা দেখানো যেত তারা এক বাক্যে তাদের সব সৃষ্টি নতুন করে লিখতেন।

মহাপতঙ্গের পেটে

খাওয়া দাওয়ার দিক থেকে মনে হয় প্লেনের কোন বিকল্প নেই। শুরুতেই সকালের নাস্তা। কিছুক্ষন পর আবার নাস্তা। তারপর আবার এক প্রস্থ। তারপরে লাঞ্চ। মোটামুটি বেশ রমরমা অবস্থা আর কী! আমার পাশের লোক আবার সিলেটি প্লাস লন্ডনি। বেশ মাই ডিয়ার ধরনের। এই লোক বছরে তিন-চারবার দেশে আসে। তার কাছে ঢাকা-লন্ডনের দশ ঘন্টা জার্নি কোন ব্যাপারই না। এরই মধ্যে প্লেনের ছোট এলসিডি টিভিতে একের পর এক মুভি আর কার্টুন চলতে লাগলো। ডিজনী’র “ক্রনিকেলস অফ নারনিয়া”র দ্বিতীয় পর্বটা দেখে ফেললাম। আর কার্টুন নেটওয়ার্কের একটা চ্যানেলে লাগাতার ভাবে “বেন টেন” আর “কে এন ডি” চলছিলো।

শুনেছিলাম এয়ারহোস্টেসরা বেশ অমায়িক হয়। কথাটা মিথ্যা না। তবে একেকজনের যে দামড়া সাইজ, দেখলেই কিছু বলতে ভয় করে। আর ব্রিটিশদের হাসি দেবার ভঙ্গীটা বেশ অদ্ভুত। এরা হাসি দেবার সময় মাথা নাড়ানাড়ি করে চোখ ভুরু কুঁচকে বিটকেলে হাসি দেয়, ব্যাপারটা হাসি না ভেংচি বোঝা বেশ কঠিন! আমার পেছনের সীটে এক বঙ্গদেশীয় ছেলে পাশের সীটের সহযাত্রী হিসেবে পেয়েছে এক ব্রিটিশ রমনীকে। কী তার উচ্ছ্বাস! পুরা জার্নিতে সে ইয়েস-নো-ভেরি-গুড টাইপের ইংলিশ দিয়ে মহিলার সাথে বকর বকর করে গেছে। আমি মাঝে মাঝে ভয়ে ছিলাম যে মহিলা না আবার ক্ষেপে যায়। তবে মহিলা দেখলাম বেশ সরব হয়েই ঐ আদমীর সাথে কথা চালিয়ে গেছে। ব্রিটিশরা সত্যিই বিচিত্র!

[চলবে...]


মন্তব্য

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহা চলুক!
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অভ্রনীল এর ছবি

চলছে... দেঁতো হাসি
_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এরা হাসি দেবার সময় মাথা নাড়ানাড়ি করে চোখ ভুরু কুঁচকে বিটকেলে হাসি দেয়, ব্যাপারটা হাসি না ভেংচি বোঝা বেশ কঠিন!

অসুবিধা নেই
কয়েকদিন গেলে এইসব ভেংচিকেই হাসি হিসেবে গ্রহণ করা শিখে ফেলবেন
তখন বাংগাল মেয়ের নিঃশব্দ হাসিকে বলবেন আনকালচার্ড
এক্সপ্রেশন লেস

অভ্রনীল এর ছবি

নিঃশব্দ হাসিকে এখনো বড় ভয় পাই... কেমন জানি ভুতূড়ে বলে মনে হয় দেঁতো হাসি
_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বৃটিশ এয়ারওয়েজে নেক্সটটাইম ভ্রমনের সময় , অনলাইনে চেকইন করে ফেলবেন । তাতে করে পছন্দসই সিট পাওয়া যাবে । আমি সবসময় তাই করি ।
এতে এয়ারপোর্টের ঝামেলাও কম হয় , শুধু ব্যাগ ড্রপ করলেই চলে ।

ওজন কতোটুকু নিয়েছেন ? এখন কিন্তু বৃটিশ এয়ারওয়েজ ৩২ কিলো দিচ্ছে , সাথে দুইটি হ্যান্ডব্যাগ ।
আগে মাত্র ২০ কিলো দিত ।

অভ্রনীল এর ছবি

৩২ কিলো! বলেন কি!! ওরা তো আমাকে ২৩ কিলো দিসে... যদিও আমি ২৭ কিলো নিসি... তবে ব্রিটিশে আর যাচ্ছিনা... ভয়াবহ কম জায়গা... হাত পা নাড়ানোর জায়গা নাই... জঘন্য...
_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

রায়হান আবীর এর ছবি

দ্বিতীয় কারন বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সচলে ঢুকতে না পারা [কাহাতক আর হাঙ্কি পাঙ্কি করে প্রক্সি সাইট দিয়ে ঢোকা যায়!]

এই সমস্যার সমাধান তো তো অনেক আগেই হয়ে গেছে। তাছাড়া যদি সমাধান নাও হতো আমি আজীবন হাঙ্কি পাঙ্কি করে ঢুকতাম, আজীবন।

প্রবাস সিরিজ হতে যাচ্ছে নিশ্চই। সাথেই আছি। হাসি

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

অভ্রনীল এর ছবি

সমাধান যে হয়ে গেসে সেটা জানতামনা। দেশ ছাড়ার দুই সপ্তাহ আগেও সরাসরি ধুক্তে পারিনাই সচলে।

যাই হোক... সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ...

_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মাস্টারমশাই, এভাবে না বলে চলে গেলা যে! গ্রুপসেও কোন মেইল দেখলাম না। কারো মুখেও কিছু শুনলাম না। যাই হোক, ভালো থেকো। নিয়মিত লিখো। পাঠক হিসেবে পাবা সবসময় হাসি
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

অভ্রনীল এর ছবি

ইনশাল্লাহ...
_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

লেখাটা ভাল হইছে ম্যাক ...

বেস্ট অফ লাক ফর দ্য নিউ লাইফ ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

অভ্রনীল এর ছবি

ধন্যবাদ কিঙ্কু...

_________________________________
| ছোট্ট রাজকুমারের আরো ছোট্ট জগৎ |
_________________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।