প্রবাসী ঈদ
প্রথম বারের মত দেশের পরিচিত গন্ডীর বাইরে ঈদ করলাম। যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম ততটা খারাপ হয়নি। ঈদের দিন সকালে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম যে কপালে যাই থাকুক, ক্লাসে যাবনা। সারা জীবন ঈদের দিন কখনো ক্লাস করিনাই, এইবারই বা কেন করব? ঈদ মানে ছুটি। সিদ্ধান্তটা নেবার পর থেকেই মনটা বেশ হাল্কা হয়ে গেল। সকাল থেকেই ছিলো মুষলধারে বৃষ্টি। শেষ কবে ঈদের নামায মিস করেছিলাম মনে করতে পারছিলামনা। তার উপর প্রথম বৈদেশিক ঈদের নামাজ, মিস দেবার কোন কারনই দেখিনা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলাম ঈদের নামায পড়তে। অবশ্য একা না, সঙ্গে ছিল মামা, খালু আর এরিক (খালাত ভাই)।
ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়েছে এক ইনডোর বাস্কেটবল কোর্টে। জামাতের ইমাম আবার পাকিস্তানী। এখানেও দেখি পুরা বাংলা স্টাইল। পিছন থেকে কিছু লোক বিভিন্ন আঙ্গুল দিয়ে ইমামকে ইশারা করছিল। অভিজ্ঞ বাঙ্গালী মাত্রই জানে এই ইশারা আসলে টাকা কালেকশনের ইশারা। পাঁচ আঙ্গুল দেখানোর মানে হল ইমাম যেন পাঁদ মিনিট পর জামাত শুরু করে, টাকা তোলার তখনো বাকী। ইমামও তাঁর অনুসারীদের একান্ত বাধ্যগত, টাকা কালেক্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ শুরু করলোইনা। দশটার নামাজ সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে একসময় শেষ হয়ে গেল। এবার কোলাকুলির পালা। সবাই যখন কোলাকুলিতে ব্যস্ত তখন দেখি এক লোক কিছুক্ষন পর পর আমাকে দেখছিলো। এক সময় আমার কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ঈদ মুবারাক, আপ রাজ হ্যায়না?”। পাইক্কা (পাকিস্তানী) পাবলিক; উর্দুতে কথা বলছে। আমার হিন্দী-উর্দুর দৌড় আবার করেঙ্গা-মারেঙ্গা-ধরেঙ্গা পর্যন্ত। হিন্দী মুভি দেখতে বসলে আমার প্রধান সম্বল হয় ইংলিশ সাবটাইটেল! সাবটাইটেল না থাকলে শিল্পীদের আকার-ইঙ্গিত দেখে হাল্কার উপর ঝাপ্সা দিয়ে কাহিনী মোটামুটি বুঝে নেই। যাই হোক, আগের কথায় ফেরত যাই। একজন পাইক্কা আমাকে রাজ ভেবে ভুল করছে, তাকে শোধরানো উচিত। আমিও আমার হিন্দী জ্ঞান সম্বল করে পালটা জবাব দিলাম, “ঈদ মুবারাক, নেহি চাচা, সরি!”।
লোক বেশ অবাক- “আপ জানতে হ্যায়। আপকো সুরৎ রাজ য্যায়সা হ্যায়”
“জান্তা হু!” – মাথা নেড়ে বললাম।
লোকটা আরো অবাক- “আপ জানতে হ্যায়! ক্যায়সে?”
“নাহলে আপ মুঝে নেহি জিগাতা হ্যায়।” – আমার এই কথায় বেচারা কি বুঝল কে জানে বেশ সমঝদারের মত মাথা নেড়ে চলে গেল। একজন লোকের চেহারা রাজের মত, কিন্তু সে রাজ না, এই ব্যাপারটা আবার সেই লোক জানে – একজন পাইক্কাকে বিভ্রান্ত করার জন্য এর চেয়ে জটিল কিছু মনে হয় দরকার হয়না!
ফুল
দেশে কারো বাসায় দাওয়াতে গেলে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যেতে হত। আর বিদেশে কারো বাসায় গেলে নিতে হয় ফুল। মিস্টিতো খাওয়া যায়, নিজেরা না খেলেও অন্য কোন মেহমান আসলে নাস্তা হিসেবে দেয়া যায়। কিন্তু এই ফুলগুলো টিকে বড়জোড় তিন দিন। তারপরেই শুকিয়ে শেষ। না পারা যায় নিজে খেতে না পারা যায় অন্যকে খাওয়াতে, ফুল নিয়ে আসলে কি লাভ কে জানে।
ঈদের পরের শনিবার এক বাংলাদেশীর বাসায় আমাদের সবার দাওয়াত ছিলো। তো তার বাসায় যাওয়ার জন্য ফুল নিতে হবে। আমার আর মামার উপর ভার পড়ল ফুল জোগাড়ের। গেলাম ফুলের দোকানে। ফুলের পাশাপাশি অর্কিডের কিছু চার ফুটি গাছ ছিল। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসল, একটা গাছ ধরে নিয়ে গেলে কেমন হয়? মামাকে বুঝালাম যে ফুল নিলে তিন দিনে শুটকি হয়ে যাবে এর চেয়ে গাছ নিয়ে যাই। মামা রাজী। পছন্দসই ফুলের টব নিয়ে দোকানী মেয়েটার কাছে গেলাম। গিফটের জন্য ফুল নিলে সেটা আবার ফিতা-টিতা দিয়ে সাজিয়ে দেবার নিয়ম। মেয়েটাকে বললাম সাজিয়ে দিতে।
“ক্যান ইউ প্লিজ ডেকোরেট দিস প্ল্যান্ট?” মেয়েটাকে বললাম।
মেয়েটা বেশ অবাক – “হোয়াই?”। মনে হয় প্রথমবার কেউ তাকে গাছ সাজাতে বলেছে।
“এটা গিফট হিসেবে যাবে তো তাই” – আমি তাকে বোঝাতে চেস্টা করছি।
“আমাদের অনেক ফুলের তোড়া আছে, সেখান থেকে একটা পছন্দ করতে পার। আমরা সেটাকে সাজিয়ে দেব।”
“দেখ আমরা আসলে এই গাছটাই নেব। এটাই গিফট হিসেবে যাবে, এটাকেই সাজাতে হবে।” – সাধ্যমত বোঝানোর চেস্টা করি।
“আমি আসলে গাছ কখনো সাজাইনি। তাই আমি জানিনা এটা কীভাবে করতে হয়”।
এতক্ষনে তাহলে আসল কথা বের হয়েছে! “তুমি এক কাজ কর, যেভাবে ফুল সাজাও সেভাবেই এটাকে সাজিয়ে দাও”।
অবশেষে মেয়েটা গাছ সাজিয়ে দেয়। তেমন আহামরি কিছু না। আগে থেকেই পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিলো। কেবল উপরে কোনায় তিন রঙের তিনটা ফিতা আটকে দিল। এই সাজুগুজু করাতে এত ধানাই-পানাই!
জালের জগত
গত কয়েক দিনে যে কটা কাজের কাজ করেছি তার মধ্যে একটা হল, আমার ওয়েবসাইটকে একটা ভাল হোস্টিং সার্ভিসে হোস্ট করা। ওয়েবসাইটটা এতদিন ছিল গুগলপেইজে। কিন্তু গুগল পেইজ নোটিশ দিয়েছে যে তারা এর সমস্ত সার্ভিস বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই অন্য আরেক সার্ভারে পুরো সাইটকে হোস্ট করতে হয়। এতে আরেকটা লাভ হয়েছে যে পুরো সাইটটাকে আপডেট করে ফেলেছি। তবে ফ্রী কিন্তু ভালো ওয়েবহোস্ট খুঁজতে গিয়ে আরেকটু হলে কাবাব হয়ে গিয়েছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত একটা পাওয়া গেছে। এটা ছাড়া অন্য আরেকটা যে কাজ করলাম সেটা হল, ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা। প্রায় দু’শতাধিক মানুষকে শ্রেণীবিন্যাস করা চাট্টিখানি কথা না। তবে ভালয় ভালয় শেষ করতে পেরেছি এটাই আসল কথা। ইদানিং দেখি ফেসবুকে প্রচুর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। আমার একটা অভ্যাস হল অপরিচিত মানুষদের আমি এ্যাড করিনা। পরিচিত মানুষদের মাঝে থাকতেই ভালো লাগে। তবে রিজেক্ট করার আগে একটা ম্যাসেজ পাঠাই ‘হ্যালো, তুমি আমাকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলে। আমি কি তোমাকে চিনি? যদি পরিচিত কেউ হও তবে একটা রিপ্লাই পাঠাও প্লিজ।’ এক সপ্তাহ অপেক্ষা করি, এর মাঝে উত্তর না এলে টা টা বাই বাই। বেশিরভাগ সময়েই এগুলোর কোন উত্তর আসেনা। তবে মাঝে মাঝে বিশ্বায়নের আহবান নিয়ে কিছু উত্তর আসে “... চিনি নাতো কি হয়েছে... পৃথিবীর ক’জন এখন ক’জনকে চেনে... তবে এখন থেকে আমরা চেনা জানা হব... বন্ধু হব... ”- এইসব আহবানও টা টা বাই বাই!
মন্তব্য
নিজ ব্লগে প্রকাশিত: http://maqtanim.blogspot.com/2008/10/blog-post.html
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হিন্দি বা উর্দুতে কেউ কথা বলার চেষ্টা করলে সোজাসুজি বাংলা চালিয়ে দেবেন। আর না হলে ইংরেজি। আমার মনে হয়, ওদের কথা বুঝলেও ইংরেজি/বাংলা ছাড়া না বোঝার ভান করে জবাব না দেয়া ভাল।
অবশ্য পরবাসে কথা বলার মানুষ পাওয়া দুষ্কর বলেই জানি .... তাই হয়তো এসব মনে থাকে না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
- আংরেজী দিয়ে কাজ চালানোর কাজটা করে যাই আমি। একটা সময় দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ঐ ভাষাটা ভালোই রপ্ত ছিলো। অনভ্যাসে মুখ দিয়ে কিছুই বের হয় না, বুঝি মোটামুটি। কিন্তু প্রথম দেখাতেই এরা যেভাবে প্রশ্ন করে, 'আপনি ঊর্দূ বুঝেন?' মেজাজ টং করে ওঠে। আমি হেসে মাথা নাড়িয়ে 'না' সূচক কিছু জানিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেই, 'আপনি বাংলা বুঝেন?' ওপাশ থেকে কী উত্তর আসবে জানাই থাকে। হেসে হেসেই বলি, 'তাহলে হয় আংরেজী নয়তো জার্মানই হবে উৎকৃষ্ট মাধ্যম, না-কী বলেন?'
আমার এক বন্ধু ছিলো ইউনিতে। ব্যাটা আমাদের পাঁচজনের বন্ধুবৃত্তের বাইরে সবার সঙ্গেই চোখ বুজে আংরেজী চালাতো। জিজ্ঞেস করলে বলতো, "আজাইরা আলাপি পাবলিক খেদানোর অতিব সহজ উপায়। কতোক্ষণ বাতচিত চালাইবো!"
তবে মাঝে মাঝে অবশ্য আমাদের সঙ্গেও চলাতো। তখন কয়েক পশলা কিল-ঘুষা খাইলেই আবার লাইনে উইঠা যাইতো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন