আমরা যারা আশির দশকে জন্মেছিলাম!

অভ্রনীল এর ছবি
লিখেছেন অভ্রনীল (তারিখ: শনি, ২৮/০৩/২০০৯ - ২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মনে পড়ে যায়... আশির দশকের সেইসব সোনালী দিনগুলোর কথা।

মনে পড়ে যায়... শুক্রবারের থান্ডারক্যাটস বা জেটসন্স এর কথা। সঙ্গে ছিলো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট, কেয়ার বেয়ার আর টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টেলস। আরো ছিল ভল্ট্রন আর গোবট।

মনে পড়ে যায়... রবিবার আর বুধবার রাত থাকতো ইংলিশ সিরিয়ালের জন্য বরাদ্দ। ম্যাকগাইভার, মায়ামি ভাইস, এয়ারউলফ, নাইট রাইডার, স্টারট্রেক, দ্যা ফলগাই, দ্যা এটিম, হাওয়াই ফাইভ ও... কতকিছু।

মনে পড়ে যায়... বহুব্রীহি, সংশপ্তক আর এইসব দিনরাত্রির কথা। তখন কেউ সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকতোনা, কারন শুক্রবার ছাড়া বিটিভি প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলতো। ছিলনা অন্য কোন চ্যানেল দেখার সুযোগ।

মনে পড়ে যায়... ঈদ আনন্দমেলা, যদি কিছু মনে না করেন আর ইত্যাদির কথা।

মনে পড়ে যায়... প্রতি বুধবারে রাত নটায় ম্যাকগাইভার দেখার জন্য নৃত্যের তালে তালে অনুষ্ঠানটা জোর করে দেখার কথা।

মনে পড়ে যায়... শুক্রুবারের মুভি অফ দ্যা উইক আর মনের মুকুরে নাটক। রাতে ছিল বিল কসবি শো , আরো পরে এলো পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস।

মনে পড়ে যায়... টার্মিনেটর টু দেখে রাতে ঘুমাতে না পারার কথা।

মনে পড়ে যায়... তখন খেলার সরঞ্জাম বলতে ছিল লাটিম, মার্বেল আর কোকাকোলার কল্যাণে ইয়ো ইয়ো। প্লাস্টিকের পিস্তল কারো হাফপ্যান্টের বেল্টের হুক থেকে ঝুলতে দেখলে সবাই এসে ভাব জমাতো শুধুমাত্র পিস্তলটা একবার হাতে নেবার জন্য।

মনে পড়ে যায়... হ্যালির ধুমকেতু, আটাশি’র বন্যা আর ম্যারাডোনার একহাতে গোল দেবার কথা।

মনে পড়ে যায়... কাউকে শালা বলে গালি দিতেও তখন মুখে আটকাতো।

মনে পড়ে যায়... দোকান থেকে কার্টুনের স্টিকার কেনার কথা। বাবলগাম খাওয়া হত ডাইনোসোরাসের ট্যাটুর জন্য।

মনে পড়ে যায়... ভিসিপি আর ভিসিয়ারের কথা। সবার মুখে মখে তখন ছিল “হাওয়া হাওয়া” গানটা।

মনে পড়ে যায়... ব্রিক গেমের কথা। তখন ছিলো না কম্পিউটারের জোয়ার।

মনে পড়ে যায়... বড়লোক বন্ধুদের কথা, যাদের কে তাদের বাবা-মা রা টিফিনের জন্য প্রতিদিন দুই টাকা করে দিত।

মনে পড়ে যায়... শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা আর যাদুঘরের কথা, সপ্তাহশেষে ঘোরাঘুরির একমাত্র যায়গা ছিলো ঐগুলো।

মনে পড়ে যায়... ট্রাকের মত চেহারার কাঠের সিটওয়ালা মুড়ির টিন বাস গুলোকে। তখন কোন এসি বাস ছিলোনা।

মনে পড়ে যায়... চাচা চৌধুরি, বিল্লু, পিঙ্কী, টিনটিন আর আর্চির কথা। পাওয়া যেত থান্ডারক্যাটস, স্পাইডারম্যান আর সুপারম্যানের কমিক্সও।

মনে পড়ে যায়... গোয়েন্দা রাজু আর তিন গোয়েন্দার কথা।

মনে পড়ে যায়... ফীডব্যাক, সোলস, মাইলস, মাইকেল জ্যাক্সন, আবা আর মর্ডাণ টকিঙ্গের কথা। প্রিয় গান ছিল “চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে...” তখনো জানতামনা গানটা কে গেয়েছে!

মনে পড়ে যায়... অঙ্ক ক্লাসে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠা বানরটার কথা, যে আমাদের জীবনকে অতীষ্ট করে রাখতো।

মনে পড়ে যায়... স্কুলে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলার কথা।

মনে পড়ে যায়... বরফ-পানি, লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, কুমির-তোর-জলে-নেমেছি, চোর-পুলিশ আর সাত চারার কথা।

মনে পড়ে যায়... টীচার হেড ডাউন করে রাখতে বললে হেডডাউন করে কোলের উপর কমিক্স বই পড়ার কথা।

মনে পড়ে যায়... কোক আর পেপসি খেয়ে কে কত ঢেকুর তুলতে পারে সেই প্রতিযোগীতার কথা।

মনে পড়ে যায়... স্কুলে যাবার সময় গলার কাছে মালার মত করে ফ্লাক্সটা ঝুলতো।

মনে পড়ে যায়... রিংচিপস আর সিভিটের কথা। মিমি আর বেবি লজেন্সো বাদ ছিলোনা।

মনে পড়ে যায়... পোলার আর বেবি আইস্ক্রিমের কথা। চকোবারের নাম তখনো কানে আসেনি।

মনে পড়ে যায়... একজনের কাছে পেজার দেখে অবাক হয়েছিলাম খুব!

মনে পড়ে যায়... ঘুড়ি উড়ানোর দিনগুলোকে। সুতায় মাঞ্জা দিতে গিয়ে হাত কেটেছি কতবার!

মনে পড়ে যায়... ভিউকার্ড, পোস্টার, স্ট্যাম্প আর কয়েন জমানোর কথা। এগুলো পাবার জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম!

মনে পড়ে যায়... কলম ফাইটের কথা। স্কুলের টিফিনের অন্যতম প্রধান কাজ ছিলো স্পেশাল কলম দিয়ে কলম ফাইট খেলা।

মনে পড়ে যায়... স্কুলের সেই দেমাগী ক্যাপ্টেনের কথা, যার হাতে ছিলো প্রেসিডেন্টের সমান ক্ষমতা। ক্লাসে কথা বললেই নাম উঠে যেত ব্লাকবোর্ডে। অনেক সময় নাম উঠতে কথা বলার দরকার হতনা, ক্যাপ্টেনের সাথে ঝগড়াঝাঁটিই এর জন্য যথেষ্ট ছিলো।

মনে পড়ে যায়... প্রায় ফাঁকা একটা শহরে বেড়ে উঠার কথা। যা এখন লোকে লোকারন্য।

মনে পড়ে যায় আশির দশকের সেইসব সোনালী দিনগুলোর কথা।

Powered by beta.joggle.com


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

মুভি অফ দ্য উইক শুক্রবারের আগে মনে হয় বৃহস্পতিবার রাতে দেখাত।
আমিও বিটিভি নিয়ে একটা পোস্ট দেবার প্ল্যান করছি দেঁতো হাসি

অভ্রনীল এর ছবি

বৃহস্পতিবারের রাতের কথা মনে নাই... তবে এক সময় বাংলা সিনেমাও রাতে দেখাইতো... সেইটারও টাইমটেবিল মনে নাই...
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

কবি এর ছবি

বান্ধবীদের কথা বাদ গেছে তো!

অভ্রনীল এর ছবি

ভালো কথা মনে করায় দিসোস... বান্ধবীদের হাড্ডি-পাতিল খেলার গেস্ট থাকতাম দেঁতো হাসি... মানে যখন মেহমানের দরকার হইতো তখন আমারে ধইরা নিয়া যাইতো... ছোট ছোট হাড়ি-পাতিলে গাছের পাতা- ঘাস এইসব দিয়া রানা বান্না হইতো... জিব দিয়া এক ধরনের টক্‌টক্‌ আওয়াজ কইরা খাইতে হইতো...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সারোয়ার এর ছবি

আপনার কথায় আমারও ছোটবেলার কথা মনেপড়ে গেল।
এখন আমার মেয়ে একই ভাবে আমাকে খেতে দেয়।
বাসায় তো গাছের পাতা- ঘাস এইসব পাওয়া যায় না, তাই গাছের পাতা-ঘাসের পরিবর্তে কাগজের টুকরা ব্যবহার করে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৮০র দশকের মতো সমৃদ্ধ সময় বোধকরি এই দেশে আর আসে নাই... শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি- সবকিছুতে একটা দারুণ সময় তৈরি হয়েছিলো। আর ছিলো আন্দোলন। এরশাদ বিরোধী।
আশির শেষে সেই যে গোটা জাতি নিবির্য আর সুবিধাবাদী হইতে শুরু করলো...

আহ্... আশির দশক যারা না পাইছে তাদের জন্য সত্যিই করুণা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অভ্রনীল এর ছবি

আশির দশক যারা না পাইছে তাদের জন্য সত্যিই করুণা...

এক্কেরে একমত... চলুক

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

'80s rock হাসি

একটা ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম ৮০ র দশকের নানা কথকথা নিয়ে স্মৃতিচারণ।

লেখাটা পড়ে ছোটবেলার অনেক মজার মজার ঘটনা মনে পড়ে গেল।

চলুক


এমন শহরে আমি ঘুরি , নাকি শহরটাই ভবঘুরে?


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

অভ্রনীল এর ছবি

'80s আসলেই rocks... দেঁতো হাসি

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

বিপ্রতীপ এর ছবি

আহা! সব স্মৃতি একসাথে নাড়িয়ে দিলেন... চলুক
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

অভ্রনীল এর ছবি

লিখার পর টের পাইসি আমি আসলে কিছুই লিখিনাই... বহুত কিছু বাদ পইড়া গেসে...
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কেনো এই নিঃসংগতা তো এই সেদিনের গান মাত্র । আশির দশকের তালিকায় কেনো?

পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষার জন্য 'ছাত্রসখা' আর হরলাল রায়ের বাংলা ব্যাকরন 'একের ভেতর পাঁচ', সাদা কালো টেলিভিশ ন, এমিলের গোয়েন্দাবাহিনী , আংশিক রঙ্গীন সিনেমা, ক্যাসেট বাজিয়ে গান শোনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলী, মফস্বলের স্কুল থেকে মিছিল করে বেরিয়ে আসা, জরুরী অবস্থা, সন্ধ্যে সাতটায় বিবিসি - আহা এইভাবে হঠাৎ একদিন বড় হয়ে যাওয়া ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অভ্রনীল এর ছবি

অন্য আরেকটা গান দিতে গিয়া এইটা দিয়া ফেলসি... দিবার কথা ছিল "তুমি রোজ বিকালে আমার বাগানে..." যেইটা সোর্ড ব্লেডের এ্যাডে দেখাইতো... প্লে-লিস্ট আপডেট করসি...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'বন্যেরা বনে রয় তুমি এ বুকে ' এই গানটা আছে নাকি সংগ্রহে? হাসি
কি ভয়াবহ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

টুটুল এর ছবি

গানটা অডিও টেপে আছে হাসি
সিডিতে নাই মন খারাপ

মুশফিকা মুমু এর ছবি

দারুন একটা লেখা! চলুক খুব ভাল লাগল, অনেক কিছু মনেপড়ে গেল
তোমার বেশির ভাগ মনেপড়ার সাথে একমত, আমার কাছে এখনো বেশ কিছু পুরোনো চাচা চৌধুরীর কমিকস আছে। আমার স্ট্যামপ আর স্টিকার জমানোর দুটা এলবাম ছিল, থান্ডারক্যাটস এর ক্যাসেট ছুটির দিন ভিসিআর এ সারাদিন দেখতাম। ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট, কেয়ার বেয়ার আর টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টেলস ও দেখতাম তবে মনে নাই কবে কবে হত। আরেকটা শো দেখতাম "এসো গান শিখি" একদম রেগুলার। কতগান শিখেছি ঐ শো দেখে। হাসি

আর গান গুলোর কথা কি বলব "অলটাইম ফেভারেট" স্পেশালি তপনের "মন শুধু মন ছুঁয়েছে" আর মাইলসের "চাঁদ তাঁরা সূর্য নও তুমি" (এটা মনেহয় ৯০র শুরুর দিকের হবে, কারণ মনেহয়না ৯০র আগে আমি গান শুনতাম)।

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অভ্রনীল এর ছবি

গানের সাথে তো আমার সেই অর্থে পরিচয় আসলে নব্ব্ইয়েয়ের দিকে... বলতে গেলে আশির শেষ দিকে... তাই ঠিক মত জানিনা আসলে কোন গান কখন রিলিজ হইসিলো...

'এসো গান শিখি' আমিও রেগুলার দেখতাম... গান শিখার জন্য না... মিঠু ও মন্টির জন্য... মিঠু-মন্টিকে মনে আছে??

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। কিন্তু আশির দশকে জন্মে ম্যারাডোনার হাতের গোল মনে আছে? ওটা তো '৮৬র ঘটনা। এত কম বয়সে? রাত জেগে আব্বা খেলা দেখতো সেটা আমার একটু একটু মনে পড়ে।

অনেক আনন্দের সাথে অনেক মান অভিমানের কথাও মনে পড়লো। থাক, সেগুলো ইটচাপা দেয়াই থাক। সবকিছু বের করলে জীবনের স্বাদবোধ নষ্ট হয়ে যায়।

আপনিতো মনে হয় আরেকজন পাঠকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিচ্ছেন।

অভ্রনীল এর ছবি

৮৬'র টা মনে নাই তবে নব্বইয়েরটা কিছুটা মনে আছে যেটা ইটলীতে হইসিলো আর যেটাতে ফাইনালে হাইরা ম্যারাডোনা কান্না কাটি করসিলো... তখন আগের বিশ্বকাপের ফুটেজ দেখাইতো টিভিতে... তখন দেখসিলাম... ঐ সময় ফুটবল মানে মোহামেডান-আবাহনী আর ম্যারাডোনেকে চিনতাম... এই যাহ মোহামেডান- আবাহনীর কথা লিখতে ভুইলা গেসি... মন খারাপ

_______________
এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

অভ্রনীল এর ছবি

আপনিতো মনে হয় আরেকজন পাঠকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিচ্ছেন।

পিপিদা কি নিজের কথা কইলেন? পাঠকটা কি আপ্নে?? চিন্তিত 'আরেকজন' মানে কি? আমি কি এর আগেও কারো "হৃদয়ে" আসন গাড়সিলাম নাকি... দেঁতো হাসি
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

Tusar এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। আমার ও অনেক কথা মনে পরে গেল।

অভ্রনীল এর ছবি

আপনারেও ধইন্যাপাতা...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

একাকী আমি এর ছবি

চমত্কার সৃতিদরণ .. আরো ছোট্ট ছোট্ট জিনিস মনে পড়ছে .... সনপাপড়ির ছোট্ট packet আর টিকটিকির ডিম ( বুনবুনি ) নিউমার্কেট থেকে আম্মা নিয়ে আসত/ রান্না-বান্না খেলার সময় ছেলেদেরকে শুধু বাজার করতে বলতাম .. টেলিভিশন এ নতুন-কুঁড়ি , ছায়াছন্দ , ইনক্রেডিবল হাল্ক, Twin Peaks , বিকাল ৫ তার আগে থেকে ই টেলিভিশন খুলে বসে তাকিয়ে থাকতাম আর সেই লাইন লাইন আর tooooooooooooooo একটা শব্দ সহ অপেক্ষা করতাম .. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কাসেট শুনতাম .. জগজিত-চিত্রার "বেশিকিছু আশাকরা ভুল .." এর কাসেট ... কত কি যে লিখব আর কি লিখবনা .. আবার ও ধন্যবাদ আপনাকে ..

নজমুল আলবাব এর ছবি

আবছায়ার মতো মনে পড়ে এক্টা কার্টুন ছবির কথা। পঙ্গপালের মতো এক্টা বাহিনি ছিলো। সম্ভবত কোনো এক দুষ্টু বিড়ালের সাথে তাদের যুদ্ধ করতে হতো সারাক্ষণ। সেই যুদ্ধের হুঙ্কার ছিলো ইয়েবেট বা এই টাইপ... মনে পড়ে না নামটা।

২টা থেকে বিটিভিতো এই সেদিন শুরু হলো। ৫ টা থেকে বিটিভি খুলতো। বৃহস্পতিবার রাতে হতো মুভি অব দ্যা উইক। মাসে একবার সেই চাঙ্কেই দেখাতো বাংলা সিনেমা। দ্যা এ টিম, সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, নাইট রাইডার কতো যে নাম। একটা সিরিজ ছেলো মোটর সাইকেল ওয়ালা নায়কের। সেইটাতে আবার কামান বন্দুক ফিট করা ছিলো!

মনে আছে টিভির চেয়ে তার ব্যাটারির ওজন ছিলো বেশি! একটা ব্যাটারি স্ট্যান্ডবাই থাকতো। আমাদের আরজু ভাই সেই ব্যাটারি কাধে নিয়ে যেতো জগন্নাথপুর বাজারে...

আহা আমার ১২ ইঞ্চি ফিলিপ্স সাদাকালো। তুমি এখন কেমন আছো?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অভ্রনীল এর ছবি

মনে পড়সে... কেবল শুক্রুবারে ২টার সময় বিটিভির দ্বিতীয় অধিবেশন খুলতো... অন্যান্য দিন ছিল পাঁচটায়... মোটর সাইকেল ওয়ালা সিরিজটা যদ্দুর মনে পড়ে সম্ভবত "স্ট্রীট হক"...
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এটা এখন আর ৮০ দশকে থাকতেছে না, সকলের বাল্যবেলার স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে।
আশিতে ছিলো বালকবেলা আমার। পয়লাতে নিজের বাড়িতে টিভি ফ্রিজ কিসসু ছিলো না। পুরা এলাকায় একটা টিভি ছিলো সাদাকালো। সেই বাড়ির জানালার বাইরে খাড়ায়া টিভি দেখতাম। তারপর আমাদের বাড়িতে প্রথম টিভি আসলো... সে যে কী আনন্দের ছিলো।

ক্যাসেট প্লেয়ারে মান্নাদে টাইপ গানই বেশি শুনতে পারতাম। কারন তখনো নিজের পছন্দে গান শুনতে পারি নাই। শেষদিকে এসে ব্যান্ডের ক্যাসেট কিইনা ভইরা ফালাইছিলাম।
সোলস, ফিডব্যাক, মাইলসের গান শুনতে শুনতে একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করলাম ওয়ারফেজ, রকস্টার্টা, ইন ঢাকা... সঞ্জয়, বাবনা, ইমরান, কমল। তারপর সব গান কেমন পানসে লাগা শুরু করলো। গন্ধে গন্ধে আড্ডার আশে পাশে ঘুরতে শুরু করলাম রেইনবোর। মেটালিকা আয়রন মেইডেন শুনতে শিখলাম। জেমস তখন মার্ক নফলার হুবহু বাজাইতো। কনসার্টে যাওয়া, টিকিট কেনার টাকা নাই, চুরি কইরা কনসার্ট দেখা... এলিফ্যান্ট রোডের মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্টের দোকানের সামনে দাঁড়ায়া থাকতে থাকতে নব্বই চলে আসলো। রেনেসার গান শুনলাম... আহা, রানওয়ের মাটি ছুঁয়ে ডানা মেলে উড়ে গেলো যেন একটি পাখি... আহা। এলআরবি হইলো... হকার হকার কিংবা মাধবী বলে গলা ফাটাইলাম।

আশির দশকের ব্যান্ড সঙ্গীত একটা দারুণ জিনিস হইলো... সেই জোয়ারে ৯০'এ সারাদেশে আবাল বৃদ্ধ বনিতা ব্যান্ডসঙ্গীত চর্চায় নামলো। এবং তখন মনিটর, স্টার্লিং সহ অনেক ব্যান্ড আইলো বাজারে। বন্যেরা বনে রয় তুমি এ বুকে- এইটা নাসিরের গাওয়া, ব্যান্ডটার নাম ভুলে গেছি। নাসির এখন সলো গায়।
তখনকার অনেক হিট গান আমরা খুব উপহাসের সাথে গাইতাম- মহুয়া বনে দেখেছি তারে, এলোচুল ঘুঙুর বাধা পায়। চাঁদ সাজালো আলো রূপালী... মাঝরাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়... খোদা তোমায় ডাকবো যখন... এইসব প্রবল হিট হইতে লাগলো।
আমরা অবশ্য তখন এইগুলারে খুব পাত্তা দিতাম না। নাকি নাকি রোমান্টিক গান ছাইড়া আমরা তখন হেভি মেটালের স্বাদ পাইছি। আর নব্বইয়ের শুরুতেই হাতে উঠলো গিটার।
৯২ সালে... তখন গিটারের কোয়ালিটি বুঝতাম না। অর্ডার দিয়া সুর নিকেতন থেকা বানাইলাম একটা গিটার... (আসলে গিভসন কিনার টাকা আছিলো না, গিভসন জাম্বো ছিলো ২০০০ টাকা, আমি অর্ডার দিয়া চান ডিজাইনের একটা গিটার বানাইলাম ৯০০ টাকা দিয়া) পুরা এলাকায় প্রথম গিটার, আমি আর রাবুল নামে আমার এক বন্ধু। দুইজনে গিটার লয়া কী যে তাফালিং... আহা...

আর আশির দশকের শেষ নব্বইয়ের পুরাটা জুইড়া সেবা প্রকাশনী। পাগলের মতো পড়ছি।

আর আমার একটা ভীষণ বাতিক ছিলো রাস্তায় রাস্তায় হাঁটার। একা একা আমি ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতাম... ঘন্টার পর ঘন্টা... কোথায় কোথায় চলে যেতাম জানি না।

আশির একেবারে শেষদিকে সেই পিচ্চিবেলাতেই ঢাবি এলাকায় মিছিলের স্বাদ পেয়ে গেলাম। সে এক জ্যান্ত স্বাদ। বুঝি না বুঝি মিছিল হইলেই হাত উঠাই... কাঁদানো গ্যাস, পুলিশের লাঠি, দৌড়ে পালানো ঢাকার অচেনা অলিগলিগুলি... আর সবশেষে ৯০'র ৬ ডিসেম্বর... স্বৈরাচারের পতন... আহ্... আমার কৈশরের প্রিয় আশির দশক।

আশির দশক এতো বড় যে কয়েক যুগের সমান একটা বই আমি একলাই লিখে ফেলতে পারবো... আহা... কাল রাতে হইছিলাম... আবারো স্মৃতিকাতর হইলাম আপনার এই পোস্ট পইড়া...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হে হে... কত কথা মনে পইড়া গেল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

নাসির যে ব্যান্ডে গাইতো সেটার নাম ইভস। আমরা একসাথে ছিলাম, কিন্তু ইভসের তোজো ভাই নাসিররে চুরি করে নিয়ে যায় আর নাসিরও চোখ উল্টায়ে দেয়। ও এইটা খুব ভালো পারে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

নাসিরের ইভস ব্যান্ডের তিনটা জনপ্রিয় গান এখানে আছে- [নাসির খুব সম্ভবত পরে ইভস ছেড়ে 'নিউ ইভস' গড়েছিলো]

জেমসের সোনালী সময়ের গাওয়া একটা গান- [এ্যালবাম- 'অনন্যা'(?)]

আরেকটা ব্যান্ড বোধ'য় ছিলো সে সময়ে, 'লিজেন্ড'- [পরে তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়]

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ও একটা কথা বলতে ভুলে গেছি... আমার তো এই পোস্টে কমেন্টানো উচিত হয়ই নাই... আমি তো আশির দশকে জন্মাই নাই... জন্মাইছি ৭০ দশকে...
তবে আশির দশকই আমার সব...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কথা সত্য। আমার বেড়ে ওঠা ৯০-এর দশকে হলেও আমার আনন্দগুলো অনেকটাই ৮০-র দশক কেন্দ্রিক। ৬০-এর দশকের পর ৮০-র দশকই ছিল সবচেয়ে সুফলা। সব দিক থেকেই। কেন যে লোকে ৭০-এর দশক নিয়ে লাফালাফি করে বেশি!

নজমুল আলবাব এর ছবি

আরে আমিওতো ৭০ এর পাপী। তবে শেষের দিকের।
৮০ দশকে আমরা বড়ো হইছি বলেই হয়তো এইটা বলছেন ইশতিয়াক। কিন্তু লোকজনে বলে এই দশকটা আসলে নিস্ফলা। সাহিত্যের লোকজনেতো হামেশাই বলে কথাটা।

রাজনীতির কথা ভিন্ন।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

তাইতো, সত্তরের দশকেই জন্ম, আর সেকারণেই ৮০র দশক ভালোমতো উপভোগ করতে পেরেছি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

জেমসের বাজানো মার্ক নফলার... অসামান্য। এক কালে কিছু গান শুনেছিলাম জেমসের গাওয়া। নফলার আর ক্ল্যাপটনের।

আলাভোলা এর ছবি

দেখ সব নতুন কাহিনী
মন ভরে যায় তোর জানি
কত যুগ পেরিয়ে গেছে
নতুন তবু রয়ে গেছে...

আহারে ! আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...

অভ্রনীল এর ছবি

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...

আহারে ! ধইন্যাপাতা আপনাকে...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

টুটুল এর ছবি

"ওই লাল শাড়ীরে" অথবা "মেলায় যাইরে"র গানের কথা কেউ কয় না মন খারাপ

ভিসিপি/ভিসিআরের কথা কেউ কয়না হাসি

আলুবাজারে/সিদ্দিকবাজারে/কাপ্তান বাজারে ৫টাকা দিয়া ভিসিআর দেখা যাইতো ... সেইটা কেউ কয় না চোখ টিপি

সিক্সমিলিয়ন ডলার ম্যান/বায়োনিক ওমেন/ওয়ান্ডার ওমেন/ইনক্রিডিবল ম্যান ... আরো কত্ত কি হাসি

ভালো পোস্ট হৈছে হাসি

অভ্রনীল এর ছবি

ইনক্রেডিবল হাল্ক দেইখা হেব্বি ডরাইতাম...
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লাল শাড়ীর গানের কথা মনে করাইলেন? সেসময় এইরম আরো অনেক অনেক গান... বিশেষ করে উইনিং, সাডেন এদের গান খুব হিট ছিলো... ঐ দূর পাহাড়ের ধারে হইলো গিটারে আমার তোলা প্রথম গান...

ভিসিপি ভিসিআর নিয়া তো অনেক কাহিনী... সিদ্দিকবাজারে ভিসিআর দেখার কাহিনী? হা হা হা হা... আপনে কোনডা দেখতেন? চোখ টিপি
টুপি নিয়া দেখতেন না টুপি ছাড়া দেখতেন? হা হাহ হা হা... সে এক দারুণ মজার... টিকিট কাইট্টা ভিসিআর-এ সিনেমা দেখতে গেলে হাতে টুপি ধরায়া দিতো। এক ঘরে অনেক মানুষ বইসা দেখো সিনেমা... পুলিশ আইলে মাথায় টুপি দিয়া মিলাদ মাহফিল... হা হা হা হা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

জন্ম আশির দশকে হলেও আশ-পাশ বুঝতে বুঝতে ৯০ দশকে চলে গেছি যদিও ঘটনা সব একই রকম......তখন শুক্রবার বাংলা সিনেমা দেখার আশায় বসে থাকতাম আর নায়ক-নায়িকার রোমান্টাক মুহূর্ত গুলো আসলেই কেন যেন একসাথে ভাই-বোনদের পানি পিপাসা পেয়ে যেত...!! মুরব্বীরা বসে থাকত যেন কিছুই হয়নি আর আমরা পানির গ্লাস মুখে নিয়ে হিহিহিহি করে হাসতাম.......

(জয়িতা)

অভ্রনীল এর ছবি

হুমম... সেইসময় নায়ক নায়িকার কোলাকুলি করার দৃশ্য বড়দের সামনে দেখতে ভয়ানক লজ্জা লাগত... দেঁতো হাসি
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

থান্ডারক্যাটস, ম্যাকগাইভার, মায়ামি ভাইস, এয়ারউলফ, নাইট রাইডার, স্টারট্রেক, দ্যা ফলগাই, দ্যা এটিম, বহুব্রীহি, সংশপ্তক, এইসব দিনরাত্রি, পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস আর সেই অঙ্ক ক্লাসে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠা বানরটার কথা....
ইশ...
কতো কথা যে মনে করিয়ে দিলেন...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অভ্রনীল এর ছবি

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটাতে রিওয়াইন্ড করার একটা অপশন থাকা জরুরি ছিল... মন খারাপ

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটাতে রিওয়াইন্ড করার একটা অপশন থাকা জরুরি ছিল...

জীবন তো এখনো প্লে-ই হয়নি, হে আশির দশক! আপনারা যারা আশির দশক, তাদেরকে মুখগুলো করে বলতে ইচ্ছে করছে: ওহ! তোমরা কত্তো ছোওটোওও!... চোখ টিপি

আমি সত্তরের দশকের। আশির দশকে বালক বেলা পেরিয়ে তারুণ্যে পৌঁছে যাওয়া। তবু আশির দশককে একটানে যেভাবে আপনি চোখের সামনে নিয়ে আসলেন, তা সত্যিই খুব অসাধারণ।

ক্যারি অন! হাসি


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অভ্রনীল এর ছবি

কত আর ছোট হব কন! এখন তো বড় হইয়া বুড়াত্ব পাইবার পথে... দেঁতো হাসি

লেখা ভাল্লাগার জন্য ধইন্যবাদ!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

s-s এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। অভ্রনীল, আপনি এগুলো মনে করতে পারেন, স্কুলের টিফিন মানে ছিলো মধ্যেখানে বাটার দেওয়া বাটারবন নামে একটা লম্বা রুটি, আর ক্রীমরোল ছিলো বিস্কুটের মতো মুচমুচে একটা নলের অনেক ভেতরে ক্রিম দিয়ে পোরা, ওটার ক্রিম খাবার জন্য অনেকক্ষণ ধরে রোলটা খেতে হতো মন খারাপ, এক টাকার নোট ছিলো হরিণের ছবি দেওয়া, অরেঞ্জ স্কোয়াশ নামে কড়া কমলা রংয়ের ফুড কালার দেওয়া গরমকালের মাস্ট ড্রিংক, কোজাক ললিপপ, নাবিস্কোর "খ্যাত" গোলাপি রঙের মোড়কে বিস্কিট মাঝে মাঝে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যেতো, মাটির গলা লম্বা পানি রাখার সোরাই,আনন্দমেলার সাইজ ছোট ছিলো, ইত্তেফাকে টারজান কার্টুন, দুপুরে রেডিওতে ওয়ার্ল্ড মিউজিক শুনে আ্যমেরিকান আ্যকসেন্ট শেখা হাসি, রবিবার সকালে রেডিওতে কলকাকলী এবং টিভিতে শুক্রবার ভোরে ক্বারী বেলালীর আরবী শেখার আসর, লায়লা হাসানের নাচের প্রোগ্রাম রুমঝুম,চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবসময় ভুল ইংরেজীতে লেখা মেনু হো হো হো, নিউমার্কেটের সামনের গেটে দু'ধারে দু'টো দোকান ভর্তি ছিলো স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড আর স্পোর্টস স্টারে, সব নামী খেলোয়াড় আর নায়কদের পোস্টার ছিলো ভেতরের গেটের কাছে, বিচিত্রা ছিলো, ছিলো আনন্দবিচিত্রা, যায়যায়দিন (তখনও অতটা বাজে হয়ে যায়নি), রোববার, সন্ধানী, ফাইন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস, খবরের কাগজ ( যেটা পরে আজকের কাগজ হয়ে গেলো), কাদেরী কিবরিয়া সাবিহা মাহবুব পাপিয়া সারোয়ার ছিলো,হুমায়ূন আহমেদেরও আগে ছিলো আতিকুল হক চৌধুরী আংকেলের নাটক খুব বোরিং হাসি, তারপর মেয়েদের "ধোতি কামিজ" বলে একটা উদ্ভট ফ্যাশন আর অনেক গুলো করে কান ফোড়ানো কানটাকে একদম মোরব্বা বানিয়ে ফেলা, তখনও বিদেশ থেকে আনা জামা আর পারফিউমের কদর ছিলো, মিল্ক ট্রে আর ফেরেরো রশার এরকম দুধভাত হয়ে যায়নি। কেউ বিদেশে থাকে মানেই নিশ্চয়ই অনেক বড় কিছু এরকম একটা জনমত ছিলো হাসি, বড় ভাইয়া বা আপুরা সব ভালো ভালো নামকরা ইউনিতে যেতো, ভিউকার্ড জমানো হতো, অনেক কিছুর , সকাল সন্ধ্যা, বহুব্রীহি আর অয়োময় তো বটেই -------:) হাসি হাসি

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

অভ্রনীল এর ছবি

স্কুলের টিফিন মানে ছিলো মধ্যেখানে বাটার দেওয়া বাটারবন নামে একটা লম্বা রুটি

বাটারবন জিনিসটা এখনো মুখে লাইগা আছে... আহা কী জিনিস ছিল ...

ক্রীমরোল ছিলো বিস্কুটের মতো মুচমুচে একটা নলের অনেক ভেতরে ক্রিম দিয়ে পোরা

ওই জিনিস ভাইঙ্গা খালি ক্রিমটা খাওয়া হইতো...

এক টাকার নোট ছিলো হরিণের ছবি দেওয়া,

একটা এখনো কালেকশনে আছে...

অরেঞ্জ স্কোয়াশ নামে কড়া কমলা রংয়ের ফুড কালার দেওয়া গরমকালের মাস্ট ড্রিংক

খাইলে পরে জ্বিব কমলা কালার হইয়া যাইতো...

নাবিস্কোর "খ্যাত" গোলাপি রঙের মোড়কে বিস্কিট মাঝে মাঝে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যেতো

নাবিস্কো গ্লুকোজ... চায়ের সাথে আমজনতা খাইতো...

ইত্তেফাকে টারজান কার্টুন

টারজানরে চিন্সিলাম এই জিনিস দিয়া...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আমি আশিতে জন্মাইলাম না ক্যান ??
...টিভি সিরিজ আর কার্টুনগুলা ছাড়া তো আর সব অচেনা লাগে...

-------------------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অভ্রনীল এর ছবি

হেব্বি মিস করসেন... কি আর করা... সব উপরওয়ালার মর্জি!! দেঁতো হাসি

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

অতিথি লেখক এর ছবি

@সুহানঃ তুই কি কইতে চাস তুই নব্বইয়ে জন্মাইছস। মাইয়াগো লাহান বয়স কমাইতে চাস ক্যান।

আমাদের জন্ম আশি'র একেবারে শেষের দিকে হলেও আমাদের বেড়ে ওঠার ধরণে অভ্রনীল'দার বর্ণিত আশির দশকটার ব্যাপক মিল পেলাম। টিভি শো গুলোর মধ্যে ম্যাকগাইভার, পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স, ক্যাপ্টেন প্লানেট, নিনজা টারটেলস তো আমরাও পেয়েছিলাম।

ধৈবত

রানা মেহের এর ছবি

চমতকার স্মৃতিজাগানো লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আলাভোলা এর ছবি

এপ্রিল মাসের পোস্টঃ পোকাদের দল পাতকুয়ায় ফেরে
+ ৬ মাস
অক্টোবর মাসের পোস্টঃ পাক সার জমিন সাদ বাদ
+ ৬ মাস
এপ্রিল মাসের পোস্টঃ ???

অপেক্ষায় নাজির, কখন আসিবে এপ্রিল ২০০৯। লেখক লিখিবেন নতুন লেখা...

অভ্রনীল এর ছবি

পুরাটা পড়ার জন্য আপনেরে ধন্যবাদ...
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আপনি খুব খারাপ। কতশত কথা মনে করাইয়া দিলেন।
আশি আর নব্বই মিলিয়েইআমার বেড়ে ওঠা। কত স্মৃতি হাতড়ে ফেরা।

অভ্রনীল এর ছবি

আপনে আমারে গালি দিলেন!! আপ্নেও পরম [চরম না কিন্তু!] খ্রাপ...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

আরিন এর ছবি

১) উন্মাদ এর কার্টুন পরতে খুব মজা লাগত।
২) শপিং এর সময় টেইলারস এর মধ্য এসির বাতাস খাওয়ার জন্য ঢুকতাম।
৩) আলিফ লায়লা দেখে রাতে ঘুমাতে পারতাম না।
৪) টম আর জেরি কিডস দেখে দুই ভাইবোন টম আর জেরি সাজতাম।

অভ্রনীল এর ছবি

উন্মাদ এর কথা বাদ পইড়া গেসে...
আলিফ লায়লা আর টম এন্ড জেরি কিডস তো মনে হইতাসে নব্বইয়ের দশকে দেখাইতো...

যাই হোক ... লেখা পইড়া কমেন্টানোর জন্য আপ্নেরে এক গোছা ধইন্যাপাতা...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আহা!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অভ্রনীল এর ছবি

হুমম!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমিও এই দলেই পড়ি। আহ ৮০! ক্যামনে ভুলি! লেখা আর মন্তব্যে মনটা উদাস হয়ে গেলো। স্কুলের সামনে দুইটাকা নিয়ে রাজা হয়ে যেতাম। পেটিস, আমসত্ত্ব, চানাচুর, কৎবেল, হজমি, চটপটি, আমড়া, কটকটি, কামরাঙা, আলুর দম, বুট, ছোলা, কুলফি, আইসক্রিম... কত কী যে বিক্রি হতো!


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অভ্রনীল এর ছবি

পেটিস, আমসত্ত্ব, চানাচুর, কৎবেল, হজমি, চটপটি, আমড়া, কটকটি, কামরাঙা, আলুর দম, বুট, ছোলা, কুলফি, আইসক্রিম...

হ মনটা উদাস হইয়া যায়!! আহরে আশি!
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

গৌতম এর ছবি

আহারে! কতো কিছু মনে করাইয়া দিলেন!

আশির দশক ছিলো বলেই না আজকের পৃথিবী এতো সুন্দর! হাসি
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অভ্রনীল এর ছবি

আশির দশক ছিলো বলেই না আজকের পৃথিবী এতো সুন্দর!

চলুক
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

স্পর্শ(অফলাইন) এর ছবি

কতো কিছু মনে পড়ে গেলো।

অমিত এর ছবি

৭০ এর শেষ দিকে জন্ম, আর ৮০ তে বড় হওয়া লোকজনে দেখি সচল থৈ থৈ করছে
সমষ্টিগতভাবে আমরা মনে হয় একইভাবে, একই ছবি দেখে, একই গান শুনে বড় হয়েছি
আমরা সবাই আমি

অভ্রনীল এর ছবি

এই পোস্টটা দিবার পর আমিও অবাক হইসি এইটা দেইখ্যা যে এখানকার লোকজন প্রায় সব কাছকাছি সময়ের মধ্যে... সবার চিন্তা ধারনা এইজন্যই কি প্রায় কাছকাছি?? কে জানে!!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বেশি জোস! খুব ভাল্লাগল। আশির দশকের সারমর্ম...

কত কী যে মিস করি এখন...

অভ্রনীল এর ছবি

হ আসলেই বহুত কিছু মিস করি... মন খারাপ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সাবিহ ওমর এর ছবি

কাচের বোতলে লিটার কোক কি এখন কোথাও পাওয়া যায়?

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

আহা আশির দশক! থ্যাণ্ডার ক্যাটস, ডেনভা দা লাষ্ট ডাইনোসর, TMNT এর মত কার্টুন; পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারর্স অথবা এয়ার ওলফ এবং সেই ম্যাকগাইভার!! কিংবা 'মুভি অব দা উইক' এ প্রচারিত সেই প্রসিদ্ধ মুভিগুলি(টু লেট দা হিরো, রোমান হলিডে বা গানস অফ নেভারন!!)
জাপানী একটা সিরয়ালে কথা মনে পড়ছে(আসলে দুইটা) ১: ওশিন(এই সিরয়ালটার ভক্ত ছিল আমার মা. খালারা) আরকেটা ছিল .. উইণ্ড(নামের প্রথম অংশটুকু আর মনে করতে পারছি না কিন্তু টাইটেল গানটার বিষাদমাখা সুর খানিকটা মনে পড়ে)
বাড়ীতে বাড়ীতে মান্নাদের গান অথবা শ্যামল মিত্রের গান ছিল খুবই কমন।
মহুয়া বনে দেখিছি তারে' বা লাল শাড়িরে, মিষ্টি মেয়ে চোখটি তোল(মনে হয় সলিড ফিঙ্গারস্) এর গান গুলি সারাদিন শুনতাম আমাদের সেই ন্যাশনাল টুইন ওয়ানে।
বড় আপার কল্যাণে বিকাল ৩টায় রেডিও এতে শুনতাম 'ওয়ার্ল্ড মিউজিক' এ 'উইদ ওর উইদ আউট ইউ' বা ক্রিস ডি বার্ক এর 'মিসিং ইউ' !!

কত স্মৃতি কত কথা মনে পড়ছ ! তখন ভাবতাম কবে বড় হব !!

"এই মুখরিত জীবনের চলার পথে, অজানা...." গানটার কথা অনেকদিন পর মনে পড়লো !
অনেক ধন্যবাদ হিমু আপনার এই চমৎকার পোষ্টটির জন্য, ভাল থাকবেন।

অভ্রনীল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হিমু আপনার এই চমৎকার পোষ্টটির জন্য, ভাল থাকবেন।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

_______________

::: উবুন্টু ও মিন্টকে ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে! :::

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে সরি কইলেও তো লজ্জা কাটবো না, তারপরেও কই অত্যাধিক দু:খিত অভ্রনীল । হিমুর একটা পোষ্ট পড়তে ছিলাম, তার পরই আপনার পোষ্টটা পইড়া এতই নষ্টালজিক হইছিলাম যে কার পোষ্ট এইডা আর খিয়াল নাই !!
মড়ু ভাই দয়া কইরা "হিমু" পরিবর্তে "অভ্রনীল" কইরা দিলে লইজ্জা শরম থেইকা কিছুটা রেহাই পাইতাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

হায় হায়! গোবটস! আহহা! বিটিভি নিয়ে রিসেন্ট পোস্টে এতই টিভি আলচনা হয়েছে যে সেদিকে আর না যাই। কিন্তু একী অসাধারণ পোস্ট পড়া হল আজ সন্ধ্যায়... বাহ! বাহ! কত কথা, কত গান। আর কত মানুষ ৮০-র দশকের এই সচলে! মজার ব্যাপার হল ৮০-র আর ৯০-এর গানগুলি এখন বড় হয়েগা শুনি আর বার বার ভাল লাগে। হাসি
80's আসলেই Rocks!! দেঁতো হাসি
পিঙ্কী, চাচা চৌধুরী কি ৯০-এ নয়?
হায়রে কলমের মারামারি, ছেলেদের নিরলস চ্যাম্পিয়ন্স লীগ চলত প্রতিটা ক্লাসের ফাঁকে।
রিং-চিপ্স না এখনো খুঁজলে পাওয়া যায়, আর আমি কিনে ফেলি দেখলেই। দেঁতো হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোকোলা লজেন্স, বেবী আইস্ক্রীম, গ্লাস কেক!

আর সত্যজিৎ রায়! ফেলুদা, প্রফেসসর শঙ্কু... দেঁতো হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আহারে... আমার শৈশব আমার জীবন... আহারে... নস্টালজিক হয়ে গেলাম...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

প্রাকৃত জন [অতিথি] এর ছবি

৮৬ তে জন্ম। বুঝতে বুঝতে ৯০ এর দশক। বিগত দশকটার অনেক কথা মনে পড়ে গেল।
ধন্যবাদ আপনাকে।

রিম সাবরিনা [অতিথি] এর ছবি

উনিশশ...আশি সালকে কি আশির দশক বলে নাকি উনিশশ...সত্তর হল গিয়ে আশির দশক। আমার খালি কনফিউশন হয়ে যায়। কিন্তু লেখাটা পড়ে অসাধারণ লাগল। আসলেই দিনগুলি ছিল জটিল!

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্তরের দশকে জন্ম হলেও স্মৃতির শুরু আশির দশক থেকে, সেই ভিত্তিতে লিখছি। ম্যাকগাইভারের দিন সকাল থেকে হায়রে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন কারেন্ট না যায়! ম্যানিম্যাল আর স্টিংরে নামে সিরিয়াল ছিল, ওই দুইটাও আমার খুব প্রিয় ছিল। -রু

দিপু (১৯৮৯) এর ছবি

আচ্ছা, আশির দশক কত থেকে কত?
আমার মনে হয় ১৯৭১-১৯৮০, যেমন এখন হচ্ছে একবিংশ শতাব্দী (২০০১-২১০০)...

চরম একটা Post, যে একবার পড়বে, সে কমপক্ষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়বেই...

দিপু (১৯৮৯) এর ছবি
দিপু (১৯৮৯) এর ছবি

ম্যাকগাইভার ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন...

guesr_writer rajkonya এর ছবি

আশির দশকে এরশাদের পতন। সে জন্য ঘন ঘন হরতাল, কারফিউ। আর আমাদের স্কুল যাওয়া বন্ধ। শেষের দিকে বার্ষিক পরীক্ষা কয়েকটা বিষয় হলই না। এত হরতাল কারা করে? আমার এমন প্রশ্নের উত্তরে আম্মা বলেছিলেন হাসিনা আর খালেদা। শুনে আমি বলি, ''তাহলে তো এরশাদই ভাল।'' আমার এই কথাটা নিয়ে আম্মা এখনো হাসে।

আশির দশকের ভয়াবহ বন্যা। আমাদের এলাকাতে কোন পানি উঠেনি। স্কুল বন্ধ। আমাদের বাসায় এসে তখন থাকতেন বন্যাক্রান্ত আত্নীয়রা। টিভিতে দেখতাম বন্যার পানি, এরশাদের লেখা বন্যার গান। গানটা যেন কী ছিল? কেউ কি বলতে পারবেন?

বিকেল ৫টা বাজার আগে থেকেই ঘড়ি নিয়ে বসে থাকতাম। কখন টিভি খুলবে। এক সময় ৫টা বাজত। ''ও আমার বাংলাদেশের মাটি'' এই সুরে শুরু হত বিটিভি। তারপরে রুটিন অনুযায়ী কোনদিন গীতা, কোনদিন ট্রিপিটক বা বাইবেল পাঠ। আমার সবচেয়ে ভাল লাগত ''ট্রিপিটক পাঠ''। বুদ্ধং সারানং গাচ্ছা, ধাম্মাং সারাং গাচ্ছা...আমিও শিখে ফেলেছিলাম।

নাটক দেখার জন্য আবারও ঘড়ি নিয়ে বসতাম। কখন ৮ঃ৩০ বাজবে? কিন্তু বিটিভির সংবাদ যে শেষই হয় না! আর তাতে অনেকক্ষণ রাষ্ট্রপতি এরশাদের সারাদিনের কার্যকলাপ আমাকে দেখতে হত।

সে সেসময় পত্রিকার অনেকটা অংশ জুড়ে থাকত চাঞ্চল্যকর রিমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। মুনীর খুকুর নানা রকম ছবি। আমি পড়তে শেখার আগে থেকেই এসব ছবি দেখেছি। আর ক্লাস সিক্সে উঠার পরে হল বিচার। মুনীর আর খুকুমণির একটা ছবি ছিল, যাতে মুনীর সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। আর খুকু তার পেটের উপর বসে আছে। দেঁতো হাসি আমার এক সিনিয়র বান্ধবী (সে তখন ফাইভে পড়ে), তার কাছ থেকে আমি জ্ঞান পাই। মুনীর তো বড় মানুষ তাই ওর পেটের উপরে এভাবে বসলেও সে ব্যাথা পায় নি। গড়াগড়ি দিয়া হাসি সে সময় যাদের নাম মুনীর ছিল, তাদের নামের উপর দিয়ে বেশ একটা ঝড়ই যেত।

আরেকটু বড় হবার পরে এক শুক্রবারে বসে বাংলা সিনেমা দেখছি। হঠাৎ শুনি প্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু সংবাদ। আহারে, কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম! সারাদিন স্কুলে বান্ধবীরা এই নিয়েই আলোচনা করতাম। আর পরের বছর ডায়নার দুর্ঘটনাও আমাদের একই রকম দু;খ দিয়েছিল। পত্রিকাগুলোর অনেকটা অংশ জুড়ে থাকত এসব খবর।

কলম ফাইট খেলা আমি আমার ছোট বেলায় দেখেনি। অনেক পরে ভার্সিটিতে পড়ার সময় ছেলেদের খেলতে দেখেছি। এখনো ছেলেরা কলম ফাইট খেলে স্কুলে ক্লাসে একটু সুযোগ পেলেই। তবে মেয়েদের মধ্যে এই খেলার প্রচলন নেই।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

হঠাৎ শুনি প্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু সংবাদ। আহারে, কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম! সারাদিন স্কুলে বান্ধবীরা এই নিয়েই আলোচনা করতাম। আর পরের বছর ডায়নার দুর্ঘটনাও আমাদের একই রকম দু;খ দিয়েছিল।

এইগুলাতো নব্বুইয়ের দশকের ক্যাঁচাল

guesr_writer rajkonya এর ছবি

মন খারাপ আরে তাই তো!

নাফিস এর ছবি

মনে পরে রবিবার রাতে রবকপ দেখার কথা নাফিস

কালো কাক এর ছবি

@rajkonna: কলম ফাইট মেয়েদের মাঝেও ছিল , আমরা খেলসি তো ক্লাসের গ্যাপে !!! তবে এটা '৮০ '৯০ এর ব্যপার না মনে হয়, এখনও স্কুলে বাচ্চারা কলম ফাইট খেলে !!
ছায়াছন্দ, শুক্রবারের বাংলা সিনেমা (তাও প্রতি শুক্রবার না, মাসে একদিন অথবা দুইদিন মনেহয় , বাকিগুলায় মুভি অফ দ্যা উইক), ইয়ো ইয়ো, আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি !!!! (দীর্ঘশ্বাস !!!) ('৮০ লেজ থেকে '৯০এর মাথা !!!)

guesr_writer rajkonya এর ছবি

আমি আমার ছোটবেলায় ছেলে বা মেয়ে কাউকেই কলম ফাইট খেলতে দেখিনি। মন খারাপ (তাই বলে এবার এটা ভেবে নেবেন না যে, আমি বলতে চাচ্ছি, কলম ফাইট কেউ খেলত না)

শাহনাজ এর ছবি

কত কি মনে পড়ে গেল। কালো কালো হজমি কি এখনো কিনতে পাওয়া যায়? খুব খেতে ইচ্ছে করে।

guest writer এর ছবি

বেশ নাই বা হলাম আমরা একেবারে খাটি আশির দশকের লোক।কিন্তু ছোটবেলাটা কাটিয়েছি ওই আশির দশকের ঘাড়ে চেপে বসা নব্বই এর শুরুর দিক্টায়।তখনো এর অনেকগুলোই তখনো আমাদেরকেও আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।

আশির শেষে সেই যে গোটা জাতি নিবীর্য আর সুবিধাবাদী হইতে শুরু করলো
নজরুল ভাই একেবারে মনের কথাটি বলে দিয়েছেন।

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

নব্বইয়ের দশকে জন্মেই আমি এর ৮০% পেয়েছি খাইছে

নস্টালজিক করার মত পোস্ট।

একাকী আমি এর ছবি

এই পোস্টে কমেন্টানো ঠিকই আছে নজরুলভাই এবং অন্যান্যরা যারা ৭০এ জন্মেছেন .. ৭০ এর দশক এ জন্মালে তো আর ঐ একই দশকএ এত কিছু বোঝা যায়না ? আসল দশক তো ৮০ এর দশক !!! টিন (Teen) যুগের দশক ছিল ৮০ এর দশক ...

বুনো গোলাপ এর ছবি

রেডলীফ আর স্টেডলার এর কলম, প্রায় দুই হাত লম্বা বলপেন.......... পচা দেখতে নিউজপ্রিন্ট, রাস্তার চালতার আচার, দুই তিন রং এর সন্দেশ (সাদা-সবুজ আর হলুদ, খয়েরি, লাল ).............. ডিয়ার ফুটবল, খুব ভালো কোয়ালিটির টেনিস বল........শিরশিরে একটা অনুভুতি জাগাত ....................... এবং আরো অনেক অনেক কিছু...... শৈশবের সেই বিশাল খেলার মাঠটা পরে দেখে অবাক হয়েছি---এত্ত ছোট!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।