নবীন বরণের ছড়া

মাশীদ এর ছবি
লিখেছেন মাশীদ (তারিখ: শনি, ০৭/০৭/২০০৭ - ২:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম লিখেছিলাম আমাদের লেভেল পূর্তির অনুষ্ঠানের জন্য, আমার বন্ধু জিয়ার গুঁতানিতে। পরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের নবীন বরণের জন্য কিছুটা পরিবর্তন করি। সেটা ২০০১-২০০২ এর দিকের কথা। সেই থেকে মেক্যানিকালের প্রতি নবীন বরণে এই ছড়াটা আবৃত্তি করা হয়। ডিপার্টমেন্টের থীম ছড়া হয়ে গেছে। এবার দেশে গিয়ে খুব কাকতালীয়ভাবে একটা নবীন বরণ অনুষ্ঠান পেয়ে গেলাম। আগে আবৃত্তি করত আমার সহপাঠী বন্ধু সৌরভ আর সুবর্ণা, পরে রাসেল-জুলি ও আরো অনেকে। এবার পেলাম নতুন অচেনা এক জুটিকে। ভাল লাগল খুব। আমি নেই, কিন্তু আমার ফেলে আসা ডিপার্টমেন্টে আমার ছড়া রয়ে গেছে। যাই হোক, এখানে বুয়েটের ১১টা বিভাগের মধ্যে সবগুলোকে পঁচা বানিয়ে আমরা যে সেরা সেটা প্রমাণের একটা চেষ্টা করেছিলাম - যেন নবীনরা ইন্সপায়ার্ড হয়। নিছকই একটা ফাজলামী মাত্র। অন্য বিভাগের কেউ সিরিয়াসলি নিয়ে মাইন্ড খাইয়েন না প্লিজ! কিছু কিছু পয়েন্ট বুয়েটের বাইরের বাকিরা বুঝবেন না তাই শেষে ফুটনোট দিয়ে দিলাম।

মেক্যানিকাল ডিপার্টমেন্টে পড়তে এসে তোমরা
মনটা খারাপ করে কেন মুখ করেছ গোমড়া?
লেখা এবং পড়ার চাপে পাচ্ছে কি ভাই ভীষণ ভয়?
ভয় পেয়ো না, বলছি শোন, অন্য সবাই পরিচয়।

CSE তে পড়ছে ওরা, পড়ায় ভীষণ সিরিয়াস -
চোখের পাওয়ার ১০ এর ওপর, কেউ মাইনাস, কেউ বা প্লাস!
ভুল প্রোগ্রাম করে PC ক্র্যাশ করানোয় সব সেরা,
কয় টেরাবাইট আঁতেল ওরা ভাবলে হবে চোখ ট্যারা!
জটিল জটিল চিন্তা করে রাত-সন্ধ্যা-দিবস-ভোর -
বন্ধু প্রিয় কম্পিউটার, সংখ্যা প্রিয় শুধুই 4!

ইলেক্ট্রিকাল পড়ছে যারা, মনের মাঝে নেই আলো,
আঁতলামীতে দুই নাম্বার, ফাজলামীতেও নয় ভাল।
AC-DC সার্কিটেরই জটিল প্যাঁচে ভর্তি head,
গুরু ওদের থেরাজা আর গুরু ওদের বয়েলস্টেড।

সিভিলেরই ছাত্র ওরা কারো কথায় দেয় না কান,
কত ইটে কতটা ঘুষ - হিসাব করাই ওদের প্রাণ।
আছে ওদের সিমেন্ট, বালু, আর আছে রড-সুরকি-ইট,
ভাঙা কিছু লিফটও ছিল, আর আছে ভাই মাথায় ছিট।

কেমিক্যালের ছাত্র যারা আজব প্রাণী খুব ভীষণ,
দোষ না ওদের, OAB তে ক্লাস করাটাই এর কারণ।
EME আর Civil Building দেখে কেমি'র সবাই হায় -
বিরহেরই গান গেয়ে আর কাব্য লিখে দিন কাটায়!

IPE তে পড়ছে যারা মানুষ ওরা খুব কৃপণ,
ভাবে কেবল কম খরচে বাড়বে কবে উৎপাদন।
আছে ওদের মিলিং মেশিন, লেদ মেশিন আর কাটিং টুল,
এসব নিয়ে সারাক্ষণই ছিঁড়ছে সবাই মাথার চুল।

Water Resource পড়ছে যারা মানুষ তো নয় খুব ভাল,
মনটা করে উড়ুউড়ু আকাশ যখন হয় কাল।
ভালবাসে খোদার কাছে 'মেঘ দে' বলে গাইতে গান -
বন্যা ওদের ধন-সম্পদ, বন্যা ওদের জীবন-প্রাণ।

Metal এবং Materials দুইয়ের মাঝে বাস করে
জ্ঞান-বুদ্ধি যাচ্ছে ক্ষয়ে, মাথায় গেল জং ধরে।
OAB'র এক চিপাতে ধাতু ঘষাই ওদের কাজ -
দুঃখে ওরা থাকছে কেমন সেসব কথা থাক না আজ!

Naval এরই ছাত্র যারা হিরো ওদের সব নাবিক -
প্রিয় ছবি 'সারেং বউ' আর ইংরেজিতে 'টাইটানিক'।

স্থাপত্যতে পড়ছে ওরা বাউন্ডুলে কয় জনা -
ভয় পাবে, তাই ওদের কথা এই ছড়াতে বলব না।

বাকি আছে পড়ছে যারা নগর পরিকল্পনা,
শহর গড়ার নামে করে পয়সা মারার জল্পনা।

এবার শোন মোদের কথা, মেক্যানিকাল পড়ছি আজ -
'আমরা সেরা' এই কথাটি বলতে মোদের হয় না লাজ।
সারাক্ষণই ক্লাস করি ভাই হোক না সকাল-রাত-বিকাল,
হোক না সেটা থিওরী ক্লাস, শপ কিংবা সেশনাল।
লেভেল টু এর টার্ম ওয়ানেতে চার চারটা 4 ক্রেডিট
করার পরেও নানান ভিউয়ে ভরতে পারি ড্রইংশীট।
ভালবাসি পড়তে মোরা Heat ও Fluid Mechanics,
অবসরে করতে পারি সব নষ্ট যন্ত্র ফিক্স।
ছুটির দিনে বেড়িয়ে যাই কারখানাতে ট্যুর দিতে,
এছাড়া দিন ভরিয়ে দেই নাটক-ছড়ায়-সঙ্গীতে।

এই বুয়েটে 'অল-রাউন্ডার' শুধুই আছি আমরা যে -
আমরা ভাল, এছাড়া ভাই আর যা আছে সব বাজে।
এই কথাটি জানি বলেই পড়ার মাঝেও থাকছি বেশ,
'আমরা সেরা' আবার বলেই এই ছড়াটি করছি শেষ।


CSE হচ্ছে Computer Science and Engineering. যখন লিখেছিলাম তখন ওরা টপ ডিপার্টমেন্ট ছিল, সব অতি আঁতেলরা ভর্তি হত যারা সারাদিন গ্রেইড 4 out of 4 পাওয়ার পিছে ছুটত; ইলেক্ট্রিকাল তখন দুই নাম্বারে ছিল, পরে ১ নাম্বার হয়ে যাবার পরে কিছু লাইন বদলে দিয়েছিলাম কিন্তু সেই লাইন এখন আমার মনে নেই; থেরাজা আর বয়েলস্টেড ইলেক্ট্রিকালের দুই বিখ্যাত টেক্সট বইয়ের লেখকের নাম, যেগুলো আমাদেরও ১ম টার্মে পড়তে হয়; OAB হচ্ছে Old Academic Building, বুয়েটের সবচেয়ে পুরানো গোলকধাঁধা টাইপ বিল্ডিং, কেমিক্যাল আর মেটালার্জি ডিপার্টমেন্টের ক্লাস ছাড়াও এখানে আরো কিছু ক্লাস হয়; EME আর Civil Building বুয়েটের অপেক্ষাকৃত নতুন বিল্ডিং যেখানে বড় বিভাগগুলোর ক্লাস হয়; IPE হচ্ছে Industrial Production Engineering; সেশনাল শব্দটা বুয়েটে ল্যাব অর্থে ব্যবহৃত হয়; লেভেল মানে বর্ষ আর টার্ম মানে সেমেস্টার।


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

মজা পাইছি। তয় মানুষরে এমনে পচাইতে হয়না মাশীদ, হেসে বদদোয়া লাগবো শয়তানী হাসি

তারেক এর ছবি

মাশীদাপু, এইটা আপনার কীর্তি?
বোম মারুম মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ভাগ্য ভালো আমি এই কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ি নাই।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তুই জিনিয়াস।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসিব এর ছবি

আপনে কি ২০০০ ব্যাচ ? মানে রোল নাম্বারে কি ০০ লিখতে হইতো ?


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

মাশীদ এর ছবি

আমি '৯৭ ব্যাচ। রোল নাম্বারে ৯৭ লিখতাম। মেক্যানিকালের কোড ছিল ১০ আর আমার এমনি রোল নাম্বার ছিল ০৭১। সব মিলে রোল নাম্বার বা স্টুডেন্ট নাম্বার ছিল ৯৭১০০৭১। ৭১-এর ছড়াছড়ি দেখে মজা লাগত খুব।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

শ্যাজা এর ছবি

মজা কম।

---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

নিঘাত তিথি এর ছবি

খাইসে! পুরা বস।

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

শামীম এর ছবি

তবে রে ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাহাখু=হাসতে হাসতে খুন।

উৎস এর ছবি

এখনও CSE কি ২ এ?

মাশীদ এর ছবি

ঠিক জানিনা। কম্পিউটার আর ১ম এ ছিল না এটা শুনেছিলাম। কোনটা কত নাম্বারে সেটা জানিনা।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

মাশীদ এর ছবি

অপু ভাই, তারেক, আরিফ ভাই, বদ্দা, হাসিব ভাই, শ্যাজাদি, তিথি, মিয়া ভাই, শিমুল, উৎস ভাই - সবাইকে ধন্যবাদ হাসি


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ফারুক হাসান এর ছবি

হুম। এইসব ভুয়ামি কইরাই তো ছ্যাকানিকালে পড়ছেন।
কেমিKOOL আর হইতে পারেন নাই।
-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

মাশীদ এর ছবি

oh dear কুদ্দুস,
don't be silly! তুই এত্ত kool বলেই তো তোকে ছ্যাঁকা দেবার কথা আমি ভাবতেই পারি না! (বাতাশা আবার আশে-পাশে নাই তো? ভাগ্যিস সিঙ্গাপুর ছাড়সি, নাইলে তো কপালে খারাবি ছিল!)


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

মাশীদের ছন্দের কান খুব ভালো।
কোনো সন্দেহ নাই এটা মেকানিক্যালের জাতীয় ছড়া হয়ে আরো কয়েক যুগ কাটিয়ে দেবে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মাশীদ এর ছবি

ওররে খোদা!
বস্ দেখি আমার ছড়ায় কমেন্ট করসেন?
এই আনন্দে দুইটা লাফ দিয়ে আসি গে যাই।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

আশিক আহমেদ এর ছবি

নবীনবরনের জন্য তো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করে গেছেন, এইবার বিদায় নিয়ে কিছু লেখেন। কারন ওইটা আরো বেশি মন খারাপ করা। আচ্ছা...আপনি যেটা পড়ছিলেন বিদায়ের সময়...ওইটা কি মনে আছে?

মাশীদ এর ছবি

আররে বিয়াস, চলে আসছিস!
গুড, গুড।

আমাদের বিদায়ে কিছু পড়ি নাই তো। গত মেক্যানিকাল ফেস্টের জন্য বিদায়ী পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লিখসিলাম একটা। ঐ যে যেটা সুবর্ণা আর সৌরভের পড়ার কথা ছিল কিন্তু রাসেল আর টিনা পড়ে শেষে পঁচানি খাইসিল। ঐটা সামহোয়্যারে দিসিলাম। দাঁড়া, এখানেও তুলে দেবনে।

তুই এই বিষয়ক কথা না বাড়ায় লেখা শুরু কর। বুয়েটে তো কঠ্ঠিন মজার সব নাটক লিখেছিস। এখানেও ভাল কিছু দে।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

আশিক আহমেদ এর ছবি

অযান্ত্রিকের পুরানো দুইটা সংখ্যা pdf করতেসি, লাগলে আওয়াজ দিয়েন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।