মেক্যানিকাল বন্ধুত্ব

মাশীদ এর ছবি
লিখেছেন মাশীদ (তারিখ: শুক্র, ২৮/০৪/২০০৬ - ১২:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


[বুয়েটের মেক্যানিকাল ডিপার্টমেন্টে যখন পড়তাম তখন অজস্র ক্লাস, ক্লাসটেস্ট, সেশনাল (ল্যাব), কুইজ, PL আর ফাইনাল পরীক্ষার সাথে সাথে পেয়েছিলাম কিছু অসাধারণ বন্ধু। তাদের মধ্যে দু'জন সৌরভ আর সুবর্ণা। এককালে আমার লেখা একটা নবীনবরণের ছড়া ওরা প্রতি নবীনবরণে আবৃত্তি করত। এ বছর 'মেক্যানিকাল ফেস্টিভাল' এর জন্য ওদের কথা ভেবে জুনিয়রদের ('01 ব্যাচের প্রতনু আর সাগরের) অনুরোধে লিখেছিলাম এ ছড়াটা। বিশেষ কারণে ওদের এটা পড়া হয়নি, পড়েছে 4র্থ বর্ষের রাসেল ও টিনা। এখানে ছড়াটা তুলে দিলাম, ব্যাচ '97 এর আমার সব অসাধারণ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে যাদের কথা ভেবে হঠাৎ হঠাৎ মন চলে যায় অন্য এক সময়ে, অন্য এক খানে.....]

সুবর্ণা: মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টে এসে
ভেবেছিলাম গেলাম বুঝি ফেঁসে
কাড়ি কাড়ি 4 Creditএর চাপে
মস্তিষ্ক বিগড়ে না যায় শেষে

সৌরভ: ক্লাসখানি সব আজব চিজে ভরা
স্যারগুলোও অন্য ধাতুয় গড়া
কাঠখোট্টা জীবন হল শুরু
সারাটা দিন শুধুই লেখাপড়া

সুবর্ণা: পড়ছে মনে 1ম সে ক্লাসটেস্ট
পাশেই ছিল পড়ুয়া ক্লাসমেট
কপি করে খাতা দেবার পরে
জানতে পেলাম ছিল অন্য সেট

সৌরভ: হঠাৎ এ মন বিশাল ধাক্কা খেল
নানান view এ Drawing Sessional এল
রিপিট, রিপিট এবং শুধুই রিপিট
'জীবন কঠিন' তা জানিয়ে গেল

সুবর্ণা: C++ Programming এর ভাষা
যায় উড়ে যায় বোঝার সকল আশা
মেশিন ডিজাইন বইটা দেখেই বুঝি
কপাল আমার কেমনতর খাসা

সৌরভ: স্বভাব আমার ফাঁকিবাজি করা
এই নিয়ে মোর অনেক রেকর্ড গড়া
গ্রুপমেটের নামটাসহ রিপোর্ট
কপি করেও খাইনি আমি ধরা

সুবর্ণা:PL শুরু হতেই সর্বনাশ
চোথার চিপায় জীবনটা হাশফাঁশ
কঠিন ফাইট দেবার পরেও জানি
যথারীতি খেতেই হবে বাঁশ

সৌরভ: মাথা ব্যথা, মাথায় মাখি Vicks
Heat পড়ি, না Fluid Mechanics ?
রুমমেট কয়,'এইবারো বাঁশ খাবি?'
আমি বলি,'এইটা আবার জিগস?'

সুবর্ণা: কুইজগুলোতে বাঁশ খেয়েছি আগে
ফাইনালেতেও কেমন যেন লাগে
গ্রেড শীটটা হাতে পেয়ে তাই
পিত্তি আমার যায় জ্বলে যায় রাগে

সৌরভ: Mecha য় এসে জীবনটা ছারখার
ছেলে-মেয়ের অনুপাতের হার
এমন কেন? বলতে কি কেউ পারো?
খোদাতালার এইটা কি বিচার?

সুবর্ণা: দারুণ লাগে ফুচকা ও চটপটি
ক্লাস শেষ হলেই ক্যান্টিনেতে ছুটি
ক্যাফের সামনে ক্রিকেট খেলা দেখে
আমরা সবাই হেসেই লুটোপুটি

সৌরভ: মেয়েগুলো দেখায় শুধু খেল
ভাবেসাবে ভীষণ যে অাঁতেল
ঘুরছে তারা বড় ভাইয়ের পিছে
ফাটা কপাল মোদের যে নাই বেইল

সুবর্ণা: বুয়েট ছেলে টিউশানিতে যেয়ে
ছাত্রী তাদের পুচকে কোন মেয়ে
টাংকি মারে পড়ানোরই ফাঁকে
আক্কেল হয় মায়ের ঝাড়ি খেয়ে

সৌরভ: চোথার গন্ধ পেলেই আমি হাসি
এক দৌড়ে যাই ছুটে পলাশী
ভ্যালেন্টাইনে একটা কপি পেলে
বুয়েট মেয়ে বলবে 'ভালবাসি'

সুবর্ণা: ছেলেগুলো ভীষণ রকম একা
দেখলে মেয়ে একটু ন্যাকা-ন্যাকা
1ম দেখায় যায় পড়ে যায় প্রেমে
খুব সহজেই আবার যে খায় ছ্যাঁকা

সৌরভ: তুই কি জানিস? বলছি আমি শোন
আঁতেল তোরা, কঠিন তোদের মন
মোদের মতন ভাল ছেলে পেয়ে
ছিনিমিনি খেলিস সারাক্ষণ

সুবর্ণা: কী যে বলিস এক্কেবারে যা তা !
জীবন যেন তোদের ড্রয়িং খাতা
প্রেমে পড়েও তাই খেয়ে যাস রিপিট
ছঁ্যাকা খেয়ে নষ্ট তোদের মাথা !

সৌরভ: বুয়েট মেয়ে চেনা যে খুব আছে
পাত্তা দিলেই উঠিস তোরা গাছে
মুহূর্তে যাস মোদের কথা ভুলে
ভাল চোথা পেলেই কারো কাছে

সুবর্ণা: আমরাই তো কত্ত দুপুর বেলা
কারখানা টু্যর অথবা বইমেলা
একই বাসে একই সাথে গেছি
তারপরেও করিস হেলাফেলা !

সৌরভ: এমনি করেই এ ওর পিছে লেগে
রাগিয়ে খুব কখনো বা রেগে
অনেক গুলো PL দিয়ে পাড়ি
বন্ধুত্ব উঠতে থাকে জেগে

সুবর্ণা: মেকানিকাল ফেস্টিভালের ফাঁকে
বন্ধুত্ব বেড়ে যেতেই থাকে
বুঝতে পারি মেকানিকাল বেস্ট
পড়ছি মোরা সব সেরা বিভাগে

সৌরভ: এই বুয়েটের পথে হেঁটে হেঁটে
এমনি ভাবেই জীবন যে যায় কেটে
6 বছরে 4 বছরের কোর্স
শেষ করে ভাই মোদের আশা মেটে

সুবর্ণা: সবাই ভাবি বাঁশ খাওয়া শেষ হলো
এবার সবাই যে যার পথে চলো
র্যাগের নানা অনুষ্ঠানের শেষে
তবু কেন দু' চোখ টলোমলো?

সৌরভ: একই সাথে এতটা পথ ঘুরে
চলে গেছি আজকে অনেক দূরে
পড়ছে মনে ক্লাসের অবসরে
গাইতাম গান সবাই যে এক সুরে

সুবর্ণা: সময় যখন ছিল বুঝিনি যে
এখন বুঝি হারিয়েছি কী যে
মন পড়ে রয় ফেলে আসা দিনে
যখন তখন দু' চোখ যে যায় ভিজে

সৌরভ: সময় চলে ভীষণ দ্রুতগামী
কাজের ফাঁকে হঠাৎ ভাবি আমি
এই বুয়েটে তোদের কাছে পেয়ে
জেনে গেছি বন্ধু কত দামী

সুবর্ণা: পড়তে গেছে অনেকে দেশ ছেড়ে
চাকরি পেয়ে ব্যসততা যায় বেড়ে
বিয়ে করে অনেকে আজ সুখী
কেউ এখনো চাকরি খুঁজে ফেরে

সৌরভ: ছিটকে গেছি সবাই একেক দিকে
মন তবুও তোকেই চিঠি লিখে
গ্রুপমেইলে হঠাৎ ইমেইল বলে
বন্ধুত্ব আজো আছে টিকে।

[প্রথম ছবিটা অক্টোবর 2004 এ যমুনা ব্রিজের কাছে এলেঙ্গা রিসোর্টে আমাদের পিকনিকের সময় তোলা। পরেরটা ডিসেম্বর 2003 এ নন্দন পার্কে তোলা।]


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।