পলকের এক ছেলেবেলা

মাশীদ এর ছবি
লিখেছেন মাশীদ (তারিখ: বুধ, ২৪/১০/২০০৭ - ১:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখেছি, আমি খুব বর্তমান নিয়ে থাকি। ফেলে আসা সময় নিয়ে প্রথম কিছুদিন খুব ভাবি, তারপর একটা থ্রেশোল্ড পিরিয়াড পার হয়ে গেলেই সেটা নিয়ে খুব একটা আর ভাবা হয় না। বর্তমান নিয়েই পুরোপুরি ডুবে যাই। মানে কৈশোরে এসে সেটাই এনজয় করেছি, বাল্যকাল নিয়ে ভাবিনি, যৌবনে মেতে থেকেছি যৌবনের উৎসবে, কৈশোরের স্মৃতিতাড়িত হইনি বেশি। এখন বাল্যকাল নিয়ে ভাবতে গিয়ে তাই অনেক দূর ফিরে চাইতে হচ্ছে। কেমন যেন, মনে হচ্ছে অনেক দূরে ফেলে আসা অন্য কোন জীবন। হুট করেই চলে গেছে যেন। মেঘদলের 'ছেলেবেলা' গানটার শেষ লাইনটুকু মনে পড়ে গেল - পলকের এক ছেলেবেলা।

আমার ছেলেবেলা কেটেছে বুয়েট ক্যাম্পাসে। শুধু ছেলেবেলা নয়, আমার কৈশোর আর যাপিত যৌবনের বেশির ভাগ জুড়েই আছে বুয়েট ক্যাম্পাস। আমার জন্মের সময় বাবা-মা মালেশিয়ার পিন্যাং এ থাকলেও আমার কয়েক মাস বয়সের পর থেকেই আমি ঢাকায় আর এক বছর হওয়ার পর থেকেই বুয়েটের পাড়ায়। মনে পড়ে, ছোটকালে আম্মা আমাকে কেন জানি প্রায়ই বলত আমাকে নাকি মালেশিয়ায় কুড়িয়ে পেয়েছে। আয়নায় আমার চিংকু চেহারা দেখে আমি সেটা প্রায় মেনেই নিতাম। কিন্তু শিশুবয়সে আমার বুদ্ধি মনে হয় ভালই ছিল কারণ মনে প্রশ্ন জাগত, আমাকে না হয় মালেশিয়ায় কুড়িয়ে পেয়েছিলে, আমার বোনেদের ব্যাপারটা কি? ঢাকায় থেকেও ওদের চেহারা কেমন করে ইকুয়্যালি চিংকু?

যাই হোক, বাংলাদেশী বা মালেশিয়ানই হই না কেন, ছোটবেলায় আমার কাছে পৃথিবী মানে কোন দেশ ছিল না, ছিল আমার বাসা - স্কুল - ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস বলতে আমাদের পাড়াটুকু। বুয়েটে টিচারদের থাকার পাড়া দুইটা, ছোটকালে আমাদের কাছে যেগুলো লালপাড়া আর সাদাপাড়া নামে পরিচিত। পাড়ার অন্য বাচ্চাদের তুলনায় আমার পৃথিবী একটু বড়ই ছিল বলা যায় কারণ আমি দুটো পাড়াতেই থেকেছি। আমার এক বছর বয়স থেকে ক্লাস ফোরের শুরু পর্যন্ত (১৯৮৮) ছিলাম লালপাড়ায়। এরপর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত সাদাপাড়ায়। সেসময় এই দুই পাড়ার মধ্যে দূরত্ব বিশাল মনে হত (পরে বুঝেছি সেটা ঠিক নয়)। আমার পৃথিবীর অধিবাসী ছিল আমার মা-বাবা, দুই বোন আর পাড়ার যাবতীয় বিভিন্ন বয়সী বাচ্চা-কাচ্চা আর চাচা-চাচীরা (পরে যাদের অনেককেই আমার শিক্ষক হিসেবে পেয়ে রিগ্রেট করেছি)। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি যে পাড়ার সবাই মিলে একটা পরিবারের মতই ছিলাম তখন। স্কুলে অনেককে দেখতাম কাজিনদের সাথে খুব ক্লোজ, আমার কাছে পাড়ার সবাই আমার ইমিডিয়েট আত্মীয়দের চেয়ে বেশি কাছের ছিল ছোটকালে, অনেকে এখনো আছে।

আমার মায়ের সাথে সেই ছোটকাল থেকেই আমি খুব কাছের হলেও ছেলেবেলার কথা মনে পড়লে পাড়ার বন্ধুদের আর স্কুলের কথাই বেশি মনে পড়ে এখন। আর সাথে আমার বোনেদের কথা। আমরা তিনবোন। আমি সবার ছোট। মেজবোন আমার থেকে ৬ বছরের বড় আর বড়বোন ১০। ছোটকাল থেকেই শুনেছি আমার দুইবোনই আমাকে খুব দেখে-শুনে রাখত (স্ট্রলারসহ আমাকে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে উল্টে ফেলে দিয়ে পরে আম্মার ভয়ে আমার চেয়ে স্ট্রলারের কোন ক্ষতি হল কিনা সেটা নিয়ে ওদের উদ্বেগের কথাও শুনেছি)। মালেশিয়ায় সাংসারিক কাজ সেরে আর তিন বাচ্চা পেলে ক্লান্ত আম্মা নাকি অনেক সময় দুপুরবেলা ওদের কাছে আমাকে নির্দ্বিধায় রেখে দিবানিদ্রায় যেত। আমার বড়বোন সেসময় থেকেই তার ভাল রান্নার হাতের নমুনা দিত চুরি করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানিয়ে, ওর আর আমার মেজবোনের জন্য। শুনেছি ঐসব চোরাকারবারির সময় আমি সেই শিশুকাল থেকেই নাকি ওদের খুব ভাল পার্টনার ইন ক্রাইম ছিলাম, কখনোই নাকি হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে ওদের ধরিয়ে দেইনি। আমার ছয় বছর বয়সী মেজবোন নাকি সেসময় আমাকে কোলে নিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে গান ধরত, 'বাবু যে বাবু, তুমি যে বাবু, সেটা তো জান না' (যেটা নিয়ে আমি এখনো ওকে পঁচাই ও নিজে যে শিশু থেকেই একটা হাবলু ছিল সেটা কি ও জানত কিনা এই প্রশ্ন করে, হে হে হে!)। একটু বড় হওয়ার পরে দেখেছি ওদের দুইজনের সম্পর্ক খুবই বাজে ছিল ছোটকালে, সারাদিন ঝগড়া লেগেই থাকত, কিন্তু আমাকে আদরের ব্যাপারে আবার দু'জনেই খুব একমত (এটা আমার বড়মামার বাসাতেও দেখেছি, বড় ভাই আর বোনের সারাদিন ঝগড়া, তিন নাম্বারের সাথে দুইজনেরই খাতির)। যাই হোক, সেই শিশুকাল থেকেই আমার দুই বোন আমার দুই মেন্টর। জীবন নিয়ে ভাল-মন্দ যা কিছু শেখার - সব শিখেছি ওদের থেকেই। একবার ক্লাস থ্রি এর কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি ক্লাসে সবার সামনে ওদের প্রিয় গান ‘নীলাঞ্জনা’ না বুঝেই বিশেষ আবেগের সাথে গেয়েছিলাম, যেটা আমার অনেক ক্লাসমেটই আজো দুর্ভাগ্যক্রমে মনে রেখেছে। অবশ্য বোনদের থেকে সবকিছুর শিক্ষাটা কৈশোরে আরো বেশি প্রকট ছিল। বাড়ির ছোটবোন থাকায় যেটা হয়েছে, আমার বড়বোনের সামনে এখনো কেউ কোন বাচ্চার উদাহরণ দিলেই ওর আমার কথা মনে পড়ে এবং খুব সুন্দর করে বলে, আমাদের মাশুমণিও তো এমনি করত! পুরা যাচ্ছেতাই বেইজ্জতি! এই লেখা লিখতে বসে ওকে আর তাই জিজ্ঞেস করিনি আমি বাল্যকালে কেমন ছিলাম মনে আছে কিনা। গতকাল আমার মেজবোনকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, আমি শিশু হিসেবে কেমন ছিলাম? বাল্যকালের কিছুই তো মনে পড়ছে না! আমার বোন খুব আদরমাখা গলায়, ইয়ে, মানে msn এ যতটুকু আদরমাখা গলা টের পাওয়া যায় আর কি, বলল, তুমি অতি ভাল একটা বাচ্চা ছিলে, খুবই ভাল ছোটবোন। ছোটকালেই পাকা ছিলে খুব, তবে ভাল টাইপ পাকা, ইচড়ে টাইপ না। তোমার ঠিক দোষ না, বড় দুই বোন থাকলে এমনি হয়। Api (আমাদের বড়বোন) and I used to adore you. We still do! যাক, ছেলেবেলার কথা লেখার শুরুতে উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতি মনে না পড়লে কি হবে, আমি যে আমার বড় দুইবোনের অতি আদরের ছোটবোন ছিলাম, এই বড়বেলায় এসে সেটা তো মনে পড়ে গেল!

আমার মায়ের ভাষ্যমতে শিশুহিসেবে আমি অতি ‘হ্যাপি বেবি’ ছিলাম। যখন-তখন হাসিমুখে চেনা-অচেনা যারতার কাছে চলে যেতাম, যেটায় আম্মা নাকি মাঝেমাঝে একটু বিরক্তই হত। সে গল্প পরে যতবার শুনেছি, ততবারই সাথে শুনেছি ঘুমের মধ্যেও আমি মা’কে কেমন চিনতাম সেটার গল্প। আপি আমাকে ঘুমের মধ্যে আদর করতে গেলে আমি যদি জেগে যেতাম, ও নাকি তাড়াতাড়ি নিজেকে আম্মা দাবী করে বলত, ‘মিত্তি আম্মা’ ‘মিত্তি আম্মা’, যেন আমি আশ্বস্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু আমি নাকি সবসময়ই ঘুমের মধ্যে বলতাম, তুমি মিত্তি আম্মা না, যেটা শুনে অ্যাট লিস্ট আম্মা আশ্বস্ত হত। পিন্যাং এ আমি নাকি আমার ওয়াকারে চড়ে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়িয়ে বাসার যাবতীয় খবরের কাগজ ছিঁড়ে ফেলতাম আর আমাদের রেকর্ড প্লেয়ারের ভলিউমের নবটা ঘুরিয়ে ম্যাক্সিমামে দিয়ে রাখতাম। বলাই বাহুল্য, এরপর যে গান শুনতে এসে রেকর্ড প্লেয়ার চালাত, সে যারপরনাই বিরক্ত হত। প্রথম হাঁটা শিখেছিলাম সিঙ্গাপুরে, আমাদের পারিবারিক ছুটির একটা ট্রিপে। কে জানে, হয়ত সেই টানেই গত দু’বছর সিঙ্গাপুরের আনাচে-কানাচে হেঁটে বেড়িয়ে এখন আবার মালেশিয়ায়।

যাই হোক, বুয়েটের পাড়ায় আমার ছোটবেলা কেটেছে দুর্দান্ত। পাড়ার প্রায় সবাই আমরা পড়তাম বুয়েটের ভিতরের ইনজিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসেই। তাই পাড়ার বন্ধুরাই স্কুলে, আবার স্কুলের বন্ধুরাই পাড়ায়। তখন ওটাই নরমাল ছিল, তবে পরে বড় হয়ে টের পেয়েছি আমরা পাড়ার পিচ্চিরা খুবই লাকি ছিলাম। বিশাল মাঠ, পেয়ারা আর আম গাছ সাথে আরো নানান ফুলের গাছ - ঢাকা শহরের প্রায় মাঝখানে এমন জায়গায় বাল্যকাল কাটাতে কপাল লাগে বৈকি! সকালে স্কুল আর বিকালে নিচে নেমে খেলা-ধুলা, খুব মজার একটা ছেলেবেলা! বিকালে আসরের আযানের পর থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত নিচে খেলার কোন পরিবর্তন হয়নি আমার পুরো ছেলেবেলা এবং কৈশোর জুড়ে। লালপাড়ায় প্রধান খেলা ছিল সাতচাড়া, বরফপানি, কুতকুত আর শীতের দিনে ব্যাডমিন্টন। পেয়ারা গাছের বিভিন্ন ডালে ঝুলে সেটাকে জাহাজ কল্পনা করেও কি কি জানি খেলতাম। আর মাঠের এক কোণে একটা উঁচু জায়গা ছিল, তখন আমাদের কাছে পাহাড় বলতে সেটাই। ওখানেও কি কি জানি খেলা হত। বছর শেষে বাধ্যতামূলক ছিল পিকনিক। সেসময় ২-৩ বছরের ছোট-বড়দের নিয়ে একেকটা গ্রুপ ছিল পাড়ায়। পিকনিক হত গ্রুপভিত্তিক। বড়দের একদিন, তো ছোটদের আরেকদিন। ছেলে-মেয়েদের আবার আলাদা দিন। বুয়েটের কোন হলের প্রোভোস্ট চাচা হল থেকে তাঁবু নিয়ে আসতেন। পাড়ার মাঠের মাঝে তাঁবু গেড়ে খুব ফেস্টিভ আবহাওয়া তৈরি হত। পিকনিকের আগের দিন সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৈজসপত্র জোগাড় করা হত। নিচে নিজেদের বানানো চুলায় কোন এক ভাল আন্টি পিকনিকের দিন সেই জিনিসপত্র দিয়ে রান্না করতেন। দুপুরে বাড়ি গিয়ে সবাই শাড়ি পরে আবার তাঁবুতে ফিরে সেই অমৃত খেতাম একসাথে। প্রতিবছর তাই ফাইনাল পরীক্ষা শেষে আমরা অধীর আগ্রহে থাকতাম পিকনিকের। ছোটকালের খুব কম সময়েই আমি ফিরে যেতে চাই (বড় হয়ে আরো অনেক বেশি মজার বাঁদরামি করেছি দেখে)। সেই খুব কম সময়ের একটা হচ্ছে এই বাৎসরিক পিকনিক। আমার এখনি ইচ্ছা করছে আবার সবাই একসাথে চুলা খুড়ে পিকনিক করি। আহা! কী মজাই না হত পিকনিকে! আরেকটু বড় হয়ে অবশ্য আমরা রাতের পিকনিকও করতাম। পাড়ায় থাকার মজাই আলাদা!

স্কুলে বা পাড়ায় আমার বোনেদের বা ওদের সমসাময়িক গ্রুপের সবাইকে তখন অনেক বড় মনে হত। ক্লাস টু-থ্রিতে পড়া আমাদের কাছে তখন ক্লাস সিক্স-সেভেনের আপু-ভাইয়ারা বিশাল বড়। পরে স্কুল পার হয়ে যাবার পরে ক্লাস টেনের পুচকেদের দেখে খুব মজা লাগত।

লালপাড়ায় তখন মহিলাদের একটা ক্লাব ছিল। সেটার আন্টিরা বেশ কালচারাল ছিলেন। আমাদের সেখানে নাচের ক্লাস হত, গানের ক্লাস হত, ছবি আঁকারও। নাচের ক্লাসটা মনে পড়ে খুব। যেই স্যার আমাদের শেখাতেন, উনি খুব যত্ন করে শেখাতেন। আমি লালপাড়া ছেড়ে সাদাপাড়ায় যাবার পরে আমাকে আনা-নেয়ার লোকের অভাব হওয়ায় উনি নিজেই আমাকে ওনার যাবার পথে সাথে নিয়ে নিতেন। একবার ওনার জন্য আমরা পাড়ার বাচ্চারা টিভির 'পাতাবাহার' অনুষ্ঠানে নাচার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেবার টিভি ভবনে রিহার্সেলের সময় যেকোন টিভি ব্যক্তিত্বকে দেখলেই আমরা দল বেঁধে অটোগ্রাফ নিতে যেতাম, কিছু বুঝেই হোক আর না বুঝেই। ছোটকাল থেকেই ওরকম হুজুগে বাঙালিগিরি দেখাতে গিয়ে দেখা গেল আমার অটোগ্রাফ বইয়ের প্রথম পাতাতেই স্থান করে নিয়েছে এককালের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান অন্তরঙ্গের উপস্থাপক রায়হান গফুর। আমার বড় দুইবোন এখনো চান্স পেলেই আমাকে পঁচায় সেই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে, আমি নাকি হয়রান গফুরের একমাত্র ডাই-হার্ড ফ্যান। ঐ একদিনের শিশুসুলভ ব্যাপার যে এমন একটা লাইফলং হয়রানি হয়ে যাবে - কে জানত!

পাড়ায় আমাদের ক্লাসের বিরাট একটা দল ছিল। আমি, ফারু, সোহান, সাদাত, শিশির,পাপুন, মিতুন, নোরীন, মিশি, ইলোরা - সব মিলে বিরাট একটা দল। আরো বেশ ক'জন ছিল যারা খুব বন্ধু ছিল তবে অন্য স্কুলে পড়ত বলে একটা দূরত্বও ছিল। সাদাপাড়ায় চলে যাবার পরে ওদের সাথে আর যোগাযোগ ছিল না, তবে বাকিদের সাথে এক স্কুলেই ছিলাম দেখে বেশ যোগাযোগ ছিল, এখনো আছে। মনে পড়ে যায়, ফারু আর আমি একসাথে স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম। ফারু ভয় পেয়ে কাঁদছিল দেখে ওকে বলা হল আমার সাথে ভাইভাতে ঢুকতে। আমাদের বলা হয়েছিল ফুল অথবা মানুষ আঁকতে। এখনো মনে আছে কেমন করে জানিনা, আমি তখন একটু চিন্তা করে দেখেছিলাম যে আমি সেসময় কাঠিমানুষ ছাড়া আর কোন হিউম্যান ফিগার আঁকতে পারতাম না (ইয়ে, মানে, এখনো পারিনা), তাই ফুল আঁকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমার দেখাদেখি ফারুও ফুল এঁকেছিল। এভাবেই খেলাচ্ছলে স্কুলে ভর্তি হওয়া।

ছেলেবেলায় বছরের ইউনিটটা খুব স্পষ্ট ছিল। মানে একটা বছর শেষ হয়ে আরেকটা শুরু হওয়ার সাথে অনেক কিছু পাল্টে যেত, তাই সেটা অনুভব করতাম খুব বেশি। তখন নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস, নতুন ক্লাস মানেই নতুন বই-খাতা আর পড়াশুনা, বার্ষিক স্পোর্টস আর তার কিছুদিন পরেই রোজার লম্বা ছুটি। বছরের শুরুর কিছুদিন তাই খুব আনন্দে কাটত মনে পড়ে। নতুন বছর মানেই তখন ছিল নতুন উত্তেজনা, যেটা এখন আর অনুভব করিনা। ঠিক বার্ষিকভাবে রুটিনমাফিক তেমন কোন পরিবর্তন আর যেন নেই এই বড়বেলায়। সবই 'same old, same old' টাইপ। সেসময় বছরের শুরুতে নতুন বইয়ের মলাট কোন ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা দিয়ে বানাবো - সেটাতেও মহা উত্তেজনা ছিল। যাই হোক, স্কুলে আমার সবদিকেই রেকর্ড বেশ ভাল ছিল। একদিকে ক্লাসে সমানে গাল-গল্প করায় যেমন বেশ নামকরা ছিলাম, তেমনি পড়াশুনাতেও ভালই ছিলাম। টিচাররা তাই বেশি অভিযোগ করতে পারেননি কোনদিন। আমার বাবা-মা'র সাথে দেখা হলে খুব ভদ্রভাষায় শুধু বলতেন, 'মেয়ে পড়াশুনায় ভাল, তবে খুব চঞ্চল' যেটা শুনলেই আমার খুব হাসি পেত (এখনো পাচ্ছে)। বছরের শুরুতে আরেকটা ব্যাপার নিয়ে আমরা খুব উত্তেজিত থাকতাম সেটা হল বার্ষিক স্পোর্টস। পিকনিকের সাথে এই দিনটাও আমার বছরের সবচেয়ে প্রিয় দিন ছিল। আমাদের প্রিয় পিটি স্যার খুব আগ্রহের সাথে এটার আয়োজন করতেন। মেগা বাটুল হয়েও কোন এক অদ্ভুতভাবে দৌড়ে খুব ভাল ছিলাম। ৫০ মিটার থেকে ৭৫ হয়ে ১০০ মিটারে স্কুল জীবনে খুব কমই প্রথম হইনি। সেসময় আমাদের চারটা হাউজ ছিল - তিতুমীর, শেরেবাংলা, রোকেয়া আর মোহসীন। সব ছাত্র-ছাত্রীরা এই চার হাউজের একেকটায় ছিল। আমি তিতুমীরের একজন গর্বিত সদস্য ছিলাম কারণ বার বছরের স্কুলজীবনে (প্লেগ্রুপ, কেজি হয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে টেন) প্রতিবছর দেখতাম তিতুমীরই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হত। স্কুলজীবনের উপরের ক্লাসগুলোয় আমি আমার খুবই অ্যাথলেটিক টিমমেট লোমা’র বছরের প্রথম কিছুদিন কাটত পয়েন্ট হিসেব করে, কে কোনটায় কম্পিট করলে দলগতভাবে পয়েন্ট বাড়বে। আমি দৌড় কাভার করলে বাকিগুলোয় ও থাকত (আমি আবার লংজাম্পে বিশেষ বাজে ছিলাম, একবার ৫জনের মধ্যে ফিফথ হয়েছিলাম)। হাইট অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটেগরীও আমরা চেষ্টা করতাম কাভার করতে। সাথে আমাদের মতই টিম স্পিরিটে উদ্বুদ্ধ আরো ক'জন জুনিয়ার ছিল। এই টিম স্পিরিট সেই ছোটকাল থেকে অনেকদিন ছিল। স্কুল ছাড়ার পরেও বেশ ক'বছর স্পোর্টস ডে'তে আমরা বুয়েটের মাঠে ঠিক হাজির হয়ে তিতুমীর হাউজকে সাপোর্ট দিয়ে আসতাম। এখন লিখতে বসে মনে হচ্ছে সেসময় থেকেই যে আমরা নিজেরা কে কি জিতি ভাবার থেকেও টিমের ওভারঅল পয়েন্টের কথা ভাবতাম, সেটা একটা ভাল ট্রেনিং ছিল। টিম স্পিরিট ব্যাপারটা যে সংক্রামক আর এটা দিয়ে যে অনেক কিছু করা যায় এই বোধটা পরবর্তীতে অনেক কাজে এসেছে। তবে স্পোর্টসে আমাদের স্কুলে অতি বিচ্ছিরি বাটি-ঘটি প্রাইজ দিত। তিতুমির হাইজের আরেক স্টার অ্যাথলিট পাপুন একবার একটা বালতি দেখে খুব ভয়ে ছিল না জানি সেটা কে পায়, পরে দেখা গেল ও-ই পেয়েছে। অন্যসব প্রাইজের মত ওটাও ওদের বাসার শো’কেসে শোভা পেত। সেই লোমা এখন অ্যামেরিকা, পাপুন অস্ট্রেলিয়ায় আর আমি মালেশিয়ায়। ইমেইলে যোগাযোগ হয় মাঝেমাঝে। একদিন মেইল করে জিজ্ঞস করতে হবে সেই বালতিটা এখন কই। ১৯৮৮ তে সোল অলিম্পিক দেখে এককালে স্বপ্ন দেখতাম অলিস্পিকে দৌড়াবার। সন্ধ্যায় সবাই বাড়ি ফিরে গেলে পাড়ার একটা রাস্তায় রেগুলারলি দৌড়ে সেজন্য বেশ প্র্যকটিসও করতাম। আহা!

পাড়ায় খুব মজার কিছু দিনের মধ্যে ছিল শবেবরাত আর ঈদের আগের রাত। শবেবরাতে তারাবাতি জ্বালাতে ভাল লাগত খুব। একটা প্যাকেট যদি আব্বা কিনে দিত, মনে হত না জানি কি পেয়ে গেছি। ঈদের আগের রাতে পুরো পাড়া নিচে নেমে পড়তাম আর পরের দিনের জন্য সে কি উত্তেজনা! ঈদের দিন বরং মনটা খারাপ হয়ে যেত, দিনটা শেষ হয়ে গেল ভেবে। একবার কুরবানির ঈদের সময় কেনা ছাগলটার সাথে খুব ভাব হয়ে গেল দু'দিনেই। আমার কোনকালেই কোন পোষা কিছু ছিল না। মাথায় সাদা ডোরাদেয়া কাল এই ছাগলটা যেন পুরো পোষ মেনে গেল কেমন করে! আমি সামনে না থাকলে ডাকাডাকি শুরু করে দিত, কাছে থাকলে দড়ি বাঁধার প্রয়োজন হত না, আমার হাত মুখের সামনে পেলে চেটে দিত। ছোটবেলার খুব খারাপ একটা দিনের একটা ছিল তাই আমার এই ছাগলটার কুরবানির দিনটা। এরপর থেকে আমাদের বাসায় আর কোন ঈদে ছাগল কেনা হয়নি।

ছেলেবেলার একটা ভীষণ ভয়ের দিন ছিল রেজাল্টের দিন। প্রথম তিনজনের মধ্যে না থাকলে পড়ার ব্যাপারে ভীষণ কড়া আমার বাবা আমাকে কি করবে - এই ভাবনাটা খুবই ভয়াবহ ছিল। কপালজোরে বাল্যকালে রেজাল্টের দিনগুলো খুব বেশি খারাপ কাটেনি। আর রেজাল্ট ভাল মানেই আম্মার সাথে নিউ মার্কেট। তারপর একগাদা নতুন গল্পের বই। ঢাকা বুক কর্পোরেশান, জিনাত বুক হাউজ, বুক বিউটি, ইউনিভার্সিটি বুক ডিপো ঘুরে ঘুরে বই খুঁজে বেড়ানোর সেই আনন্দ আর কোথাও পাইনি। ছেলেবেলায় প্রিয় বই ছিল দেব সাহিত্য কুটিরের যেকোন বই আর বড়বোনের ফেলুদা কালেকশান। ছোটকালে স্কুলে প্রাইজ পাওয়া বইগুলো পেয়েই আম্মার হাতে তুলে দেয়া – আমার ঠিক মনে না পড়লেও, আমার ছেলেবেলা সংক্রান্ত আমার মায়ের খুব প্রিয় স্মৃতির একটি। ছেলেবেলার খেলনা বলতে ছিল ইটালি থেকে আব্বার নিয়ে আসা ‘বেটিনা’ নামের একটা পুতুল, টেডি নামের একটা টেডি বেয়ার (আমার বড়মামা যেটাকে ‘বেটানা’ ডেকে আমাকে খুব ক্ষ্যাপাতো) আর রাজ্যের সেইসব গল্পের বই। শীত তাড়াতে বেটিনার জন্য একটা সোয়েটার আম্মা আগেই বানিয়ে দিয়েছিল। তাই টেডির জন্য আমি নিজেই একটা মাফলার বানাই ক্লাস থ্রিতে থাকতে। আমার উলের সেলাইয়ের সেই শুরু আর সমাপ্তি। প্রতি বছর অধীর অপেক্ষায় থাকতাম মহররমের মেলা, বৈশাখী মেলা আর বই মেলার জন্য। শহীদ মিনার সাদাপাড়ার পাশেই হওয়ায় একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটা কাটত অন্যরকম উত্তেজনায়।

ক্নাস থ্রি-ফোরের দিকে আমার বাবা আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আবার অফিসে ফিরে যেতেন আমাকেসহ। দুপুরে লাঞ্চের সময় একবারে বাসায় ফেরা হত। মাঝখানের সময়টায় আমার বাবার অফিসের একজন টাইপিস্টের সাথে আমার অনেক সময় কেটেছে। ওনার কাছেই আমার প্রথম টাইপিঙে হাতেখড়ি। কোন এক অজ্ঞাত কারণে অত ছোট আমাকে খুব যত্ন করে উনি টাইপ করা শেখাতেন। ওনার পাশে বসে হয়তো আমি বাংলা টেক্সট বই খুলে কোন একটা কবিতা টাইপ করতাম। পরে বদলি হয়ে অন্য ডিপার্টমেন্টে চলে যাবার পরে ওনাকে আর দেখিনি। ওনার কথা আমার খুব মনে পড়ে এখনো। কারো কাছ থেকে কোন কারণ ছাড়াই ভালবাসা পাবার শুরু বোধ হয় সেটাই।

১৯৮৮ তে লালপাড়া ছেড়ে আসার পরে এক স্কুলে পড়তাম বলে সবার সাথে যোগাযোগ থাকলেও সাদাপাড়ার কয়েকজনের সাথে অনেক বেশি ভাব হয়ে গেল। তাদের একজন ফেরদৌস, আমার কিশোর বয়সে সকালে স্কুলে যাওয়া থেকে বিকালে সাইকেল চালানোর সার্বক্ষণিক সাথী। আমার দু'বছরের ছোট তানিয়া আর চার বছরের ছোট বিন্তিও সাদাপাড়ায় পাওয়া খুব প্রিয় বন্ধু, যাদের সাথে বহুদিন পরে পরে কথা হলেও এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় না যে কোন গ্যাপ ছিল মাঝে। আমার খাতাপত্র আর নোটস্ কোন বছরই তানিয়ার জন্য জমিয়ে রাখতে ভুল হত না। আমরা একেকজন একেক বয়সী হওয়ায় বাল্যকাল ছেড়ে বয়ঃসন্ধির মজার সময়টায় পাওয়া জীবন সংক্রান্ত দুর্লভ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোও উত্তরাধিকারসূত্রে সবার মাঝে পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে দিতেও আমাদের কার্পণ্য ছিল না। সেটা জীবনের আরেকটা মজার অধ্যায়। তাই বাল্যকালের বড় অংশ লালপাড়ায় কাটলেও তারপরে জীবনের বেশির ভাগ সময় সাদাপাড়ায় কেটেছে বলে ওটাই আমার মনে দাগ কেটে আছে বেশি। তবে বৃষ্টি হলেই লালপাড়া যখন ডুবে যেত, আমি আর আম্মা যখন বারান্দায় বসে কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ছুঁড়ে দেখতাম কারটা বেশি দূরে যায় - সাদাপাড়ায় এসে সেটা খুব মিস করতাম। রীতিমত রাগই হত কেন সাদাপাড়া এত উঁচু ভেবে। অবশ্য সাদাপাড়ার বাড়ির বারান্দাটা খুব সুন্দর ছিল। সামনেই বুয়েটের মাঠটা বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুকুরের মত যখন মনে হত - তখনো খুব ভাল লাগত। ক্লাস ফাইভে ছায়ানটে ভর্তি হয়ে আরেকটা নতুন জগতের দরজা খুলে গিয়েছিল। সেটাও বেশ মজার ছিল। মিশি পাড়া আর স্কুল ছাড়িয়ে আমার ছায়ানটেরও সঙ্গী। এখন ক্যানাডায়, এই লেখাটা লেখার ফাঁকে-ফাঁকে ওর সাথে চ্যাটে গত অগাস্টে ঘটে যাওয়া ওর বিয়ের গল্প শুনছি।

লালপাড়া, সাদাপাড়া, স্কুল, ছায়ানট - সবখানেই দুর্দান্ত কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম। আমার ভাল বন্ধুভাগ্য সেই ছেলেবেলা থেকেই আমাকে এখন পর্যন্ত পিছু ছাড়েনি। ছেলেবেলার অনেকের সাথেই এখনো যোগাযোগ আছে। স্কুলের বাল্যকাল থেকে শেষ পর্যন্ত বেস্টফ্রেন্ড ছিল সাইকি। এখন অ্যামেরিকায়। স্কুল ছাড়িয়ে কলেজ, আন্ডারগ্র্যাড, মাস্টার্স – সব লেভেলে অসাধারণ কিছু বন্ধু পেলেও আমার কাছে সাইকি সবসময়ই অন্যরকম স্পেশাল। আমার সব বন্ধুদের সাথে প্রিয় বন্ধুদের তালিকায় সবসময় ছিল আমার মা, দুইবোন আর অপু, এখনো আছে।

ছেলেবেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে একটা ছিল ক্লাস টুতে ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে পড়ে গিয়ে সামনের দুইটা দাঁতভাঙাসহ ঠোঁট কেটে ফেলা (এরপরে ঐ ভাঙা দাঁত দিয়ে আরো দুইবার ঠোঁট কেটেছি, আমি আক্ষরিক অর্থেই ঠোঁটকাটা মেয়ে)। সেবার ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া না দেয়া নিয়ে একটা সংকট দেখা দিয়েছিল। খুব অদ্ভুতভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেবারই আমি প্রথমবারের মত প্রথম হয়েছিলাম। মনে পড়ে, সেসময় কে কত ব্যাথা পেয়েছে, কার জখম কতটা সিভিয়ার ছিল - সেটা নিয়ে ব্র্যাগ করার একটা টেন্ডেন্সি ছিল সবার মধ্যে। আমার মনে হালকা একটা দুঃখও ছিল, ঠোঁট কেটে দাঁত না ভেঙে কেন হাত-পা ভাঙলাম না বা মাথা ফাটালাম না - সেটা ভেবে খুবই আফসোস হত।

স্কুলে ক্লাস ফোরের দিকে আমাদের ক্লাসের সেরা আর্টিস্ট অপু 'হাসি' নামের একটা এক পাতার পত্রিকা বের করত। সেটায় লেখা দেয়ার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহের সীমা ছিল না। অপুর দেখাদেখি জাবের বের করেছিল 'অট্টহাসি' নামের আরেকটা পত্রিকা। রাজা বিষয়ক আমার লেখা অতি অখাদ্য একটা কবিতা এই দুই পত্রিকাতেই একযোগে ছাপা হয়েছিল ভাবতেই আমার এখন অট্টহাসি পাচ্ছে। আমার বড়বোন সেসময় বরিশাল মেডিকেল কলেজে পড়ে। আমি হাসির প্রতি সংখ্যা ওকে লেখা চিঠির সাথে পোস্ট করে দিতাম আর আপি (আমার বড়বোন) সেগুলো গভীর আগ্রহের সাথে জমিয়ে রাখত। বরিশাল থেকে ছুটিতে আসলেই আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসত সবসময়। সেসবের মধ্যে খুব ইন্টারেস্টিং ছিল স্টেপলারের মত একটা সেলাই করার মেশিন। আমার দুই বোনই ছোটকাল থেকে আমার যেকোন কাজে উৎসাহ দিয়ে গেছে, সে যত উদ্ভটই হোক না কেন। তার মধ্যে একটা ঘটনা এখনো মনে পড়লে হাসি পায়। আমি ছোটকাল থেকেই বিশিষ্ট মশা-মারিয়ে হিসেবে পপুলার ছিলাম বাসায়। মশা দেয়ালে বসলেই গিয়ে বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলতাম। আমার পড়ার টেবিলের পাশের দেয়ালে তাই বেশ বড় একটা মশাচিত্র হয়ে গিয়েছিল। বরিশাল থেকে আপির পাঠানো চিঠির সাথে একবার একটা চিরকুটও পেলাম। সেটায় আপি তিনটা মশা মেরে স্কচটেপ দিয়ে আটকে পাঠিয়েছে। আমি আমার দেয়ালের মশাচিত্রের সাথে ওই চিরকুটটাও আটকে রেখেছিলাম এই উদ্ভট হবি যতদিন ছিল ততদিন। (প্রসঙ্গত উল্লেখ করি, গত জুন মাসে আমি যখন দেশে গেলাম আর আমার অ্যামেরিকাপ্রবাসী মেজবোনের সাথে চার বছর পরে দেখা হল, ছেলেবেলার কথা মনে করে ঘুমানোর আগে ও রেগুলার বেসিসে আমাকে দিয়ে মশা মারিয়েছে।)

নাহ্! আমার ছেলেবেলা নিয়ে লেখার আগে ভাবছিলাম কি লিখব। ভেবেছিলাম, ছেলেবেলা তো মহা বোরিং ছিল, কবে হুট করে কই চলে গেছে টেরই পাইনি। সব মাস্তি তো করেছি কৈশোরে দুষ্টুমিতে হাতেখড়ির পর থেকে। কিন্তু এখন দেখছি হঠাৎ করে কোথ্থেকে যেন রাজ্যের খুঁটিনাটি মনে পড়ে যাচ্ছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব ভেবে না পেয়ে অনেক কিছুই লিখে ফেললাম অসংলগ্নভাবে। যদি এক কথায় বলতে হয়, তবে বলব, আমার ছেলেবেলাটা চমৎকার ছিল, যেটা নিয়ে এসেছিল আরো চমৎকার একটা কৈশোর, পরবর্তীতে যেটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আরো সুন্দর একটা যৌবনের। ছেলেবেলাটা তাই কখনোই পুরোপুরি ছেড়ে যায় না বোধ হয়। সেই জন্যেই এত বুড়ো হয়েও মনে হয় প্রায়ই শুনি 'তুই কি আর বড় হবি না?'। নাহ্! ছেলেবেলা যতটা দূরে ফেলে এসেছি ভেবেছিলাম, আসলে দেখছি ততটা দূরে নয়।


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

মাশীদ আপু এইটা কি হইলো ?

আপনার নতুন লেখা ভেবে কত আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসলাম, একটু পড়ার পরই বুঝলাম, এইটা তো অলরেডী ছাপিয়েছেন ছেলেবেলা ই-বুকে।

পাঠক হিসেবে এহেন প্রতারণার বিচার চাই আমি সবার কাছে। দেঁতো হাসি
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অমিত আহমেদ এর ছবি

ছবি দেন!


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ছেলেবেলাটা তাই কখনোই পুরোপুরি ছেড়ে যায় না বোধ হয়।

একদম ঠিক কথা। ...ঠোঁট কাটা মাশীদ আপু, একদমে পড়ে গেলাম, অসম্ভব এক ভাললাগা নিয়ে। ...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

ছেলেবেলা এই ভাবে লিখতে হয় নাকি। মাশীদ তোর লেখা পইড়া ডরাইলাম। আমি এত ভালো লিখতারুমনা


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ছেলেবেলা না মেয়েবেলা...?

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মাশীদ এর ছবি

হুম...শব্দটা তো এতদিন ইউনিসেক্সই জানতাম!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

নজমুল আলবাব এর ছবি

কি চমৎকার লেখার হাত তোর আর কত ফাঁকিবাজি করিস! পড়তে পড়তে জমে গিয়েছিলাম। দারুন লিখেছিস।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মাশীদ এর ছবি

সবজান্তা, পড়ার আগে যদি নাই জানলি এটা আগের লেখা তাহলে তোর নামকরণের সার্থকতা কি?

অমিত, ছেলেবেলার ছবি সব ঢাকায়।

বিপ্লব ভাই, পিয়াল ভাই আর অপু ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ অনেক বেশি ভাল কমেন্ট আর পড়বার জন্য।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।