আপনি কেমন আছেন কবি দাউদ হায়দার!

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: শনি, ১৪/০৭/২০০৭ - ৯:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উন্মূল-উদ্বাস্তু অথচ রাজসিক এক কবির সঙ্গে দেখা হয়েছিল বার্লিনে। যে কবির চোখে এখনো ঝলমল করে পাবনা অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরী কিংবা বনমালী ইনস্টিটিউটের স্মৃতি। বাবা মা'র স্নেহ মাখা গৃহের ছবিটা ক্রমশ: ঝাপসা হয়ে এসেছে তার কাছে। শৈশব কৈশোরের নরম ভালবাসার ঘরখানা, পুরনো আমলের নক্সা খোদাই করা খাট- আতাইকূলার ধূনোরীর স্নেহের স্পর্শমাখা তক্তপোশ- বুকশেলফে রাশি রাশি বই, লেখার টেবিলে ময়ের বকুনীর সরপোশে ঢেকে রাখা ঠান্ডা ভাত- সারারাত একটা কবিতার লাইন খুঁজতে খুঁজতে চাতালের দিকে মৎস্য চোখে তাকিয়ে থাকা সময়- যে সব সময়কে এখন চাইলেও তিনি ছুঁয়ে দেখতে পারে না। ঘরে ফেরা তার মানা।

কবিতা লেখার অপরাধে তিনটি দশক তাকে আটকে রাখা হয়েছে স্মৃতির কারাগারে। যে দেশে অজস্র যুদ্ধ অপরাধী দম্ভের পতাকা উড়িয়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে ছাপ্পান্ন হাজার, সেখানে কবিতা লেখার অপরাধে একজন কবি প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরতে পারেন না- বড়জোর প্লেনের জানালা দিয়ে একনজর দেখতে পারেন ফালি ফালি শষ্যক্ষেত, মনের মধ্যে আঁকুপাঁকু করে হয়তো 'ওইখানে পাবনা- ওইখানে ইছামতী'!

দেশের যদি হাত থাকতো, দুহাত বাড়িয়ে তাকে বুকে টেনে নিতো। কিন্তু দেশ তো শাসনের ম্যান্ডেট, ক্ষমতার আস্ফালন, কট্টর প্রতিক্রিয়াশীলতার দোর্দন্ড প্রতাপ, দেশতো ব্লাসফেমী- কবিতা লেখার অপরাধে মাথা কেটে নেবার ফতোয়া।

বাংলাদেশের এই একজন কবিই আছেন যিনি কবিতা লেখার অপরাধে নির্বাসিত।
জার্মানীতে কী নেই- সব আছে।
কিন্তু কোথায় দাউদ হায়দারের ইছামতী নদী! কোট আনকোট দেশ তাকে প্রত্যাখান আর নির্বাসন ছাড়া কিছুই দেয়নি। কিন্তু দেশের জন্য এমন এক তরফা ভালবাসা দাউদ হায়দার ছাড়া আর কারো মধ্যে দেখিনি।
শুধু অন্নদাশংকর রায় কিংবা গুন্টারগ্রাসের ভালোবাসাই হয়তো যথেষ্ট হতো বিদেশে থাকতে চাওয়া কোন খ্যাতিভূক কবির জন্য। কিন্তু দাউদ হায়দারের চাওয়া খুব অল্প। তিনকাটা মাছের ঝোল, আলুভর্তা ভাত, একটু কাগজী লেবু চিপে, কিন্ত মা পাশে বসে আছে। ঐ যে মা, ঐ মায়ের বিরহ একজন মানচিত্রহীন মানুষের জীবনে যতটা বেদনা জ্বেলে দিতে পারে তার সবটুকু আগুনে পুড়ে দাউদ হায়দার গৌতম বুদ্ধের মত বসেছিলেন আমার পাশে। খুব হাসিখুশী, খুব স্নেহপ্রবন, দারুণ গোপ্পি, দু:খ লুকিয়ে রেখে জমিয়ে দিতে পারেন বার্লিনের নাটক পাড়ার যেকোন টেবিল। বঙ্গবন্ধু যাকে দেশে নিরাপত্তা দিতে পারেননি তাকে আর কে বুকে টেনে নেবে।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংবিধানে যুক্ত হওয়া ভাল কথা, তারপর ধর্ম-নিরপেক্ষতা শব্দটা বাদ পড়া অত:পর ইসলাম রাস্ট্রধর্ম হবার জলপাই যুগ সমূহে দাউদ হায়দারের মত উজ্জ্বল কবির দেশে ফেরার কোন সম্ভাবনাই ছিল না।
ছিয়ানব্বুই-এ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো- দেশে ফেরার একটা ক্ষীণ স্বপ্ন তার বুকে এসে ধাক্কা দিয়েছিল।
কিন্তু বার্লিন সফরে এসে 'আপা' যে শীতলতা দেখালেন তাতে এই 'মুরতাদ'কে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য রাজনৈতিকভাবে তাকে প্রস্তুত মনে হয়নি।
সেক্ষেত্রে 'ম্যাডামে'র জমানায় তো প্রশ্নই ওঠেনি, ইসলামী ভোট ব্যাংকে টান পড়বে এই আশংকায়। তারপর বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতায় ঘরে ফেরার কথা ভাবলেও তা হয়ে উঠবে কিনা তিনি জানেন না। তবুওযে তার একুশে বইমেলায় কোন একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু এও তার জানা, একুশে বইমেলা মানেই মেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির পাশে ফুটপাথে একজন হূমায়ুন আজাদ।

জার্মানীতে কল্যান রাস্ট্রের ছায়ায় বসে এসব ভাবনা না ভাবলেই পারেন তিনি। অন্যান্য প্রবাসীদের মত পশ্চিমের সুখে চোখ বুঁজে কাটিয়ে ডিলেই তো হয় বাকিটা সময়। কিন্তু কবি কী তা পারে! জীবনানন্দ দাসের 'আবার আসিব ফিরে'- যে দাউদের নিয়তি হবে তা কি দাউদ জানতেন! অনেক খ্যাতির জন্য মরিয়া অথচ খ্যাতি না পাওয়া স্যুডো বুদ্ধিজীবিকে বলতে শুনেছি 'দাউদ আসলে বিতর্কিত হতে ভালোবাসে'।
কথাটা ভুল। মস্তবড় একটা ভুল ধারণা ঐসব বুদ্ধিজীবিদের।

আমরা যারা প্রতিদিন আপোষ করি, প্রতিষ্ঠানের কাছে সুবিধা নিই, সামাজিক নিরাপত্তার তুলোর মধ্যে আহত পাখির বাচ্চার মত বেঁচে থাকি, তারা কী করে বুঝবো দাউদকে। আমি বুঝতে পারি না, আমরা কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন নামাজ পড়ে কপালে ঘাটি ফেলে দিচ্ছি, কুরআন শরীফ হেফজ করছি, ওমরাহ্ করছি, হজ্জ্ব করছি- সেখানে একজন দাউদ হায়দার বিদ্রোহী হলে, ধর্মকে প্রশ্ন করলে কেন তার শিরচ্ছেদ করতে হবে!

আমরাতো কতজন প্রতিদিন নামাজ পড়ি অথচ জনগণের হক মেরে, সম্পদ লুণ্ঠন করে দুর্নীতির দুষ্টচক্রে নাম লিখিয়েছি। অথচ দাউদ হায়দার তো কেবল কবিতা লেখেন। কবিতা লেখাই যে তার উপাসনা। তিনি একটা কুফরি কবিতা যদি লিখেই থাকেন, ইসলামের রক্ষকরা তাকে 'বাহাযের' আমন্ত্রণ জানাতে পারতেন। যুক্তির যুদ্ধে তাকে পরাজিত না করতে পারলে, দাউদ হায়দারের শিরচ্ছেদ করা হলেও যে তার প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকবে, নতুন প্রশ্ন জন্ম নেবে সেখান থেকে।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার সেমিনারে এসে নোবেল বিজয়ী লেখক গুন্টারগ্রাস যখন তার বক্তৃতার সময় সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন দাউদ হায়দারকে একজন নিরাপোষ সৃজনশীল সহযোদ্ধা বলে তখন বাঙালীদের বুক গর্বে ভরে যায়।

গুন্টারগ্রাস দাউদের চোখে কলকাতাকে দেখেছেন, ঢাকাকে দেখেছেন। কলকাতায় দাউদ গ্রাসের সঙ্গে ছিলেন। ঢাকায় রশীদ হায়দারকে দাউদের শূণ্যতা পূরণ করতে হয়েছে। দাউদ হায়দারের কবিতা নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে দাউদের খ্যাতিকে ইউরোপে বসে টের পাওয়া যায়।
ঢাকায় সাহিত্য সম্পাদকের টেবিলে বসে সেটা আঁচ করা যায় কিনা আমি জানি না।
বাংলাদেশ দাউদকে একটা সবুজ পাসপোর্ট দিতে কার্পণ্য করলেও তিনি বাংলাদেশকে ভালবাসা দিতে এতটুকু কৃপণতা করেন না। আন্তর্জতিক মহলে তিনি কিন্তু বাংলাদেশী লেখক বলেই পরিচিত। ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় কিংবা লাইপজিগে বিশ্বের নানান দেশের কবি লেখকদের আড্ডায় বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে তাকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখেছি।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাস কিংবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধের কথা তাকে বড় গলায় বলতে শুনেছি।

দাউদ হায়দারের আক্ষেপ, 'অনুবাদের অভাব কিংবা দুর্বলতার কারণে বিশ্বসাহিত্যে আমরা জায়গা করে নিতে পারলাম না'। পরীক্ষায় পাশ করার মতো ইংরেজী কিংবা বঙ্গীয় ইংরেজী দিয়ে বাংলা সাহিত্যের শক্তিকে বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের অনুবাদকেরা। অথচ তুর্কী লেখক ওরহান পামুক, ইয়েসের কামাল, পর্তুগীজ লেখক হোসে সামারাগো, হাঙ্গেরীয় লেখক ইমরে কের্তেজ অথবা আলবেনীয় লেখক ইসমাইল কাদের ভাল অনুবাদের কল্যাণে সমসাময়িক বিশ্বসাহিত্যে আলোচিত। আমাদের কবি আল-মাহমুদের কথা কেউ জানতে পারলেন না।

দাউদ পাওলো কোহেলের কথা বারবার বলছিলেন। অনুবাদ সাহিত্য যেখানে বেস্ট সেলার হয়। অরুন্ধতী রায়, অমিত চৌধুরী, অমিতাভ ঘোষ কিংবা মনিকা আলীই সরাসরি ইংরেজীতে লেখার কারণে যতটা পরিচিতি পেয়েছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর অনুবাদ ভারতেই ততটা পরিচিতি পায়নি।
সেখানে মহাশ্বেতা দেবীর কিংবদন্তীও তো যোগ্যতার তুলনায় কম উদঘাটিত। দুই বাংলায় অনুবাদের সংকট দাউদকে ভীষণ পীড়া দেয়।

২১এ ফেব্রুয়ারী 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে'র মর্যাদা পাওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক পরিসরে তেমন পরিচিতি না পাবার প্রসঙ্গটা আসতেই তিনি তিঁতিবিরক্ত হয়ে উঠলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অর্জনকে বিএনপি সরকার হয়তো আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন বলে মনে করে। সব কিছুতেই যদি তীব্র রাজনীতিকরণ হয় তাহলে সামনে এগোনোর পথগুলো ক্রমশ: বন্ধ হয়ে আসে।
নজরুলকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে যদি রবীন্দ্রনাথকে পশ্চিম বঙ্গের কবি ভাবা হয় তাহলে বাংলা সাহিত্যের পরিসর কতটা সংকীর্ণ হয়ে আসে মনে করিয়ে দিলেন দাউদ। আর দূতাবাস গুলোর অক্ষমতার কথাতো বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের যেকোন বড় অর্জনকে বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরার মত কূটনৈতিক প্রচারনা কৌশল বা নিদেনপক্ষে 'ইংরেজী জ্ঞান' কূটনৈতিকদের নেই সেটা হয়তো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ অথবা কূটনীতি বাছাই প্রক্রিয়ার ত্রুটি। দূতাবাসের কথা ছাড়েন। দেশের বাইরে প্রতিটি বাংলাদেশীই তো একজন রাস্ট্রদূত। তারা কী করছে! দাউদ হায়দার মনে করিয়ে দিলেন, লন্ডন থেকে প্রচারিত সিলটী ভাষায় প্রচারিত টিভি অনুষ্ঠানের কথা। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। দাউদ হায়দার ভীষণ ব্যথিত হন যখন দেখেন দ্বিতীয় প্রজন্মের বাঙালীরা বাংলা শেখেনি। এই ভাষাটাকি তাহলে হারিয়ে যাবে উত্তর প্রজন্মের অবহেলায়!

কবি দাউদ হায়দারের সঙ্গে দেখা হওয়া, কথা বলা, বার্লিনে নাৎসী নিধনযজ্ঞের স্মৃতিঘন গ্যাসচেম্বারের পাশ দিয়ে হাঁটা, হলোকস্ট স্মৃতিসৌধ চত্বরে খানিক দাঁড়িয়ে থাকা, চেকপয়েন্ট-চার্লিতে একটু থমকে যাওয়া, ভেঙে পড়া বার্লিন প্রাচীরের স্মৃতিরেখা অনুসরণ করে অবিরাম গল্প করা, ইতস্তত: এইসব কিছুতেই সাক্ষাৎকার হয়ে ওঠেনি।
রেকর্ডার, নোটবুক- ঐসব সাংবাদিক মুন্সীয়ানায় কী আড্ডা হয়- জম্পেশ গল্প হয়!

শুনে গিয়েছিলাম দাউদ নাস্তিক, ক্ষ্যাপাটে, দুর্বিনীত, বেহিসেবী। দাউদ হায়দারের কবি-খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিতরা আমাকে একটা বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে দিয়েছিলেন রীতিমত।
হয়তো আমার বোধবুদ্ধি শানিত নয় দেখেই আমি কেবল একজন কবিকেই দেখলাম। কফি খেতে খেতে, বাসে ঘুরতে ঘুরতে এক ঐকান্তিক পথিকের দেখা পেলাম। পথকে দাউদ ভীষণ ভালবাসেন। বার্লিনের পথে পথে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো বাঁক ঘুরলেই দেখতে পাবেন পাবনা অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরী কিংবা বনমালী ইনস্টিটিউট- এই আশায়।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেক দিন পর পড়ার সুযোগ দিলেন।
একটু নিয়মিত হওয়া যায় না, গুরু!

হাসিব এর ছবি

আ.সা.শি.র দাবির সাথে আমিও গলা মেলালাম


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

সৌরভ এর ছবি

কষ্ট আর দুঃখের সহানুভূতি ছাড়া কবি দাউদ হায়দার এর জন্য আর কিছুই কি দেবার নেই?
বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায়, বিভিন্ন উপলক্ষে বেরুনো সংখ্যাগুলোতে আসে তার কবিতা, নির্বাসনবাস থেকে।

এইসব ক্ষমতাবান মিডিয়ায়ও আমি খুব কমই লক্ষ্য করেছি দাউদ হায়দারের ফেরা র জন্যে কোন লেখা বা আকুতি। কেনো?
মানুষ কি তবে মানুষের অন্ধকার শক্তিকেই ভয় করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অরূপ এর ছবি

নভেরাকে নিয়ে কেউ যদি একটু লিখতো মন খারাপ
মাসকাওয়াথ আহসানকে ধন্যবাদ এবং ক্ষোভ।
ক্ষোভটা না লেখার জন্য.. বড় ফাঁকিবাজ আপনি
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সেই ২০০৩ থেকে ভাবছি একবার বার্লিনে গিয়ে ঢু মারবো...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসিব এর ছবি

প্ল্যান ফাইনাল করো । হাজির হইয়া যামু সময়মতো ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

১৯৭৪ সালে দৈনিক সংবাদ-এর রবিবাসরীয় সাময়িকীতে (তখনো সাপ্তাহিক ছুটি রোববার) দাউদ হায়দারের একটি কবিতা প্রকাশিত হয় কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায় শিরোনামে। অভিযোগ তোলা হয়, কবিতাটিতে মহানবীকে অপমান করা হয়েছে। সুযোগটি নেয় তখনো বহুলাংশে আত্মগোপনকারী ধর্মব্যবসায়ীরা, যেমনটা ঘটেছিলো মধ্য-নব্বইতে তসলিমাকে নিয়ে। এক পর্যায়ে দাউদের জীবনসংশয় দেখে দেয়। কথিত আছে, আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতুত্ব ধর্মান্ধদের মোকাবেলা করার পরিবর্তে দাউদকে দেশ থেকে চলে যেতে সহায়তা দেয়। সেই থেকে দাউদের আর দেশে ফেরা হয়নি।

বিজ্ঞাপন মনে হলে দুঃখিত, তবু জানিয়ে রাখি, আমার চুপকথা : উপন্যাসের খসড়া-র ১১ নম্বর পর্বে বিষয়টি কিছুটা এসেছে। হাসান মোরশেদ এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত লিখতে বলেছিলেন। মাসকাওয়াথ আহসান খুব সুন্দরভাবে এখনকার দাউদকে তুলে ধরেছেন। আমি আগামীতে ওই কবিতা প্রকাশ এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করার আশা রাখি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হাসিব এর ছবি

চলুক


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হিমু এর ছবি

ভালো লাগলো। অরূপের সাথে সহক্ষোভ পোষণ করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নজমুল আলবাব এর ছবি

পত্রিকাগুলোর বিশেষ সংখ্যায় যখন তাকে পাই, কিযে ভালো লাগে। আর রাগ হয়।

হাসিব এর ছবি

সবার পড়ার জন্য দাউদ হায়দারের একটি লেখার অনুবাদের লিংক দেয়া হলো ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মূল কবিতাটি আমার জানা কোথাও কারো সম্ধানে নেই, এমনকি দাউদ হায়দারের কাছেও না। একটা অনুবাদ আছে দাউদের Songs of Despair বইতে। বইটি দুষ্প্রাপ্য হওয়ার সম্ভাবনা বিস্তর।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

জন্ম আমার আজন্ম পাপ কাব্যগ্রন্থটি তো ঢাকায় পাওয়া যায়।

মুহাম্মদ জুবায়ের হয়তো ঠিক ঠাক বলতে পারবেন কোন কবিতার জন্য দাউদের এই নির্বাসন। শুধু লোকমুখে শুনে আমার ধারণা হয়েছিল জন্ম আমার আজন্ম পাপ কবিতাটিই এজন্য দায়ী।
তবে কবিতাটিতে আযান ও মুহাম্মদ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক উপমা ছাড়া আর কিছু নেই।

মাসকাওয়াথ এখন ঢাকায় নিশ্চয়ই। লেখাটা খুব ভালো লাগলো। আরো একটু আমাদেরকে বেশি বেশি পড়ার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করছি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরো বিস্তারিত জানতে আগ্রহী ।
আরো বেশী তথ্য । এই মানুষটাকে নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ লিখলোনা কোনোদিন ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান এর ছবি

খুব ভাল লাগল, একটু বিস্তারিত জানাবেন প্লিজ। ওনার সম্বন্ধে জানি না খুব একটা, পারলে কবিতাটাও পোষ্ট করবেন।

আরোও একটু নিয়মিত লিখবেন, ধন্যবাদ।

--------------------------
আমার রুজি রোজগার

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

দাউদ হায়দারের জন্য সহমর্মিতা!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংবিধানে যুক্ত হওয়া ভাল কথা, তারপর ধর্ম-নিরপেক্ষতা শব্দটা বাদ পড়া অত:পর ইসলাম রাস্ট্রধর্ম হবার জলপাই যুগ সমূহে দাউদ হায়দারের মত উজ্জ্বল কবির দেশে ফেরার কোন সম্ভাবনাই ছিল না।

কিছুদিন আগে আবারো ধর্মের অজুহাতে তার লেখাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ হলো সাপ্তাহিক ২০০০ এর ঈদ সংখ্যা। কিছু কী বদলায় মাসকাওয়াথ ভাই?


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নামগোত্রহীন এর ছবি

একটা কবিতার একটা লাইন এখনো মনে আছে! সম্ভবত শিরোনামটিও এটিই ছিলো..
‘তোমার দূরত্ব নিত্য আমার ক্রৌঞ্চের দিনে অব্যর্থ নিষাদ...’
কবি দাউদ হায়দারের লেখা! অসাধারণ!!
ধন্যবাদ মাসকাওয়াথ, সেই কৈশোর স্মৃতিটি মনে পড়লো আপনার লেখাটি পড়ে...

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রতিক্রিয়াশীলরা সবসময়েই সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থউদ্ধার তরান্বিত করার জন্যে। আমার একজন সিনিয়র বন্ধু মি. অশোক অধিকারী ওই সময়ে রাজশাহী ভার্সিটিতে পড়তেন। দাউদ মহানবী (সাঃ) কে কটাক্ষ করে সেই কবিতাটা লেখার পর রাজশাহী আন্তঃজেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে, অশোকদা তখন ওখানে থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তার শোনামতে প্রধান বক্তার বক্তব্য ছিলো-

দাহুদ, মামুর ব্যাঠা, কাকে লাইড়তে কাকে লাইড়েছিস, পাছতে পারিসনি মামুর ব্যাঠা। তুই হজরত মুহাম্মাদকে লাইড়েছিস, তুই দ্বীনের লবিকে লাইড়েছিস। তোর খাল খিচ্যা লিবেক মামুর ব্যাঠা।

কোনও মটর শ্রমিক দাউদ হায়দার পড়েন এতোটা আশা করি না। (ব্যাতিক্রম অবশ্য শ্রমিক নামধারী শিক্ষিত অশ্রমিক নেতারা)। অথচ দেখেন স্বার্থান্বেষী চক্র ঠিকই সাধারণ মানুষকে মবিলাইজ করেছে। ওই শ্রমিকদের যদি জিজ্ঞাসা করা যেতো যে এতো আপত্তি যে কবিতা নিয়ে তার দুটো লাইন আবৃত্তি করেন। আমি নিঃসন্দে যে তারা হেগে দিতো।

রাতঃস্মরণীয়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।