‘দিন বদলের সনদ’ যদি নেহায়েতই ছেলে ভোলানো বিজ্ঞাপনের কপি না হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারকে ক্রসফায়ার কিংবা এনকাউন্টারের মত আদিম শব্দগুলোকে প্রত্যাখান করতে হবে। অপরাধ দমনে এই আদিম কিংবা মধ্যযুগীয় বর্বরতা একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতাগুলোতে যখন জনমানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেন কিংবা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন, তখন তিনি অনুধাবন করতে পারেন একজন জনপ্রিয় নেতার কণ্ঠ থেকে থেকে উচ্চারিত শব্দবন্ধ বিজ্ঞাপনের মডেলদের কন্ঠে উচ্চারিত শব্দমালার মত শেখানো বুলি নয়। বরং তা আস্থা এবং প্রত্যাশা জাগানিয়া। বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড বহাল থাকার অর্থ একটি সরকার আইনী প্রক্রিয়ায় অপরাধ দমনে ব্যর্থ। ‘জনপ্রিয়’ মহাজোট সরকার কি গেস্টাপো বা পুলিশী সরকার হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হতে চাইবে?
বেশ কিছু খোঁড়া যুক্তি বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের সপক্ষে বহাল । পুলিশ চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের অপরাধ প্রমাণে সক্ষম নয়। ফলে অপরাধীরা আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে বেরিয়ে যায়। তাই ‘এলিট ফোর্স’ অপরাধীকে ধরে একটি খোলা জায়গায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে মৃত্যদেহের পাশে একটি রিভলবার রেখে ছবি তুলে সংবাদ সম্মেলন করে অপরাধ সাংবাদিকদের জানিয়ে দিলেই হলো যে বন্দুক যুদ্ধে ঐ শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পত্রিকার পৃষ্ঠায় কথিত ক্রসফায়ার অধুনা এনকাউন্টারে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসীর লাশের ছবি দেখে তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকা কিংবা দেশবাসী প্রাণভরে দোয়া করে এলিটফোর্সকে। যেন ইশ্বরের হাত বাংলাদেশ মানচিত্রে নেমে এসে ‘বরিষে ধরা মাঝে শান্তির বাণী’।
মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন একটি বিশেষ ঋতুতে ক্ষ্যাপা কুকুর লৌহশলাকার চিমটি দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে সমাজকে নিরাপদ করার যে কানুন প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে, ক্ষ্যাপা অপরাধী দমনের ক্ষেত্রে ঐ ‘সারমেয় নিধন মডেল’ অনুসরণের জন্য ক্ষমতা কাঠামোর উর্বর মস্তিষ্ক নীতি নির্ধারকরা ঠিক কি ধরনের প্রশংসা প্রত্যাশা করছেন তা আমার জানা নেই। তবে বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় শীর্ষ ক্ষমতা কাঠামোকে বলতে শুনেছি এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনবে।
মাঝে কতগুলো বছর চলে গেল, কথিত ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টারের ফলে যে কাউন্টলেস বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তাতে সমাজের অপরাধ প্রবণতা কমেছে এমন দাবী কোন উম্মাদ সমাজ বিজ্ঞানী অথবা ক্ষমতা কাঠামো করবেন বলে মনে হয় না। বরং এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত বাংলাদেশের সরকারগুলো আইনী প্রক্রিয়ায় অপরাধ দমনে ব্যর্থ হয়েছে। আরো প্রমাণিত এরা শীর্ষ সন্ত্রাসী নয় বরং মধ্যসন্ত্রাসী যাদের ক্রসফায়ার উপেক্ষা করার মত ক্ষমতা নেই। অর্থ্যাৎ এরা ছিঁচকে সন্ত্রাসী, কিংবা রাজনৈতিক মেরুতে এদের অবস্থান প্রান্তিক। কেননা এই ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের গডফাদারেরা পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ফুলের মালা গলায় দিয়ে ঘুরছেন, অথবা নিরাপদ দুরত্বে ফুলের মালার স্বপ্ন নিয়ে সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় লবি করছেন। ক্রসফায়ারে নিহত ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের মৃত্যুতে তাদের শূন্যপদগুলোও খালি নেই। কারণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত গডফাদারেরা তাদের ক্রাইম ফ্যাক্টরীতে অবিরাম ছানাপোনা উৎপাদনে সক্ষম।
ক্রসফায়ারে ছিঁচকে সন্ত্রাসী মেরে যে সব এলিট শিকারীরা পদক জিতেছেন তারা এখন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত গডফাদারদের প্রটোকল করছেন এবং বেকায়দায় লুকিয়ে থাকা গডফাদারদের খুঁজে বের করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে লাজুক ভঙ্গীতে চোর পুলিশ কিংবা টম এন্ড জেরী খেলছেন।
অথচ বাংলাদেশ প্রজন্মের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, দক্ষতা এবং আন্তরিকতা রয়েছে। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তাদের দক্ষতা সম্পর্কে আমার প্রত্যক্ষ ধারণা রয়েছে। প্রচলিত আইনী প্রক্রিয়ায় তারা অপরাধ প্রমাণ ও দমনে সক্ষম।
তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন তাদেরকে এই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কুকুর নিধন মডেলের অংশ হতে হচ্ছে?
একটি সংখ্যা গরিষ্ঠ সরকার কেন তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছে না?
ব্যর্থ বিএনপি-জামাত সরকারের ক্রসফায়ারের লিগ্যাসী যদি মহাজোট সরকারকেও বহন করে নিয়ে যেতে হয় তাহলে দিন বদলের সনদটি উপহাসের পাত্র হয়ে পড়বে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ক্রমশঃ প্রতিদিনই হাস্যকর শোনাবে।
বিচারবহির্ভুত হত্যাককাণ্ডের পরিবর্তে কিভাবে আইনী প্রক্রিয়ায় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌল অক্ষুণ্ণ রেখে সমাজের অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করা যায় সে সম্পর্কে লিখে সময় এবং শক্তিক্ষয় করতে চাই না। কারণ এসব পরামর্শ দেবার যথেষ্ট সংখ্যক আওয়ামীলীগ পন্থী মেধাবী বুদ্ধিজীবী রয়েছেন যারা অ্যাসাইনমেন্ট এবং প্রেষণা খুঁজছেন। একজন সাধারণ নাগরিক বা আমজনতা হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে একটি আধুনিক গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে দেখতে চাই। জানিনা সেটা কবে সম্ভব হবে।
মন্তব্য
যুক্ত খ গুলো আসলোনা। 'ক্ষমতা' হয়ে গেছে 'মতা'
টপিকে
মডারেটদেরকে অনুরোধ করলে কেউ হয়তো 'ক্ষ' গুলো বসিয়ে দিতে পারেন ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
লেখক তো পুরা সচল। উনি নিজেই করতে পারেন, মডারেটর করবেন কেন ভাই?
ধন্যবাদ প্রকৃতিপ্রেমিক। কনভার্ট করার সময়ে সৃষ্ট সমস্যা দূর করা হলো।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
মসনদে বসে সবাই বলে- এখনই তোমার বন্ধ করোনা বন্দুক...
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
অনেকদিন পরে সচলায়তনে লিখলেন। ভালো আছেন, মাসকাওয়াথ ভাই?
পোস্টের বক্তব্য ও দাবির সাথে একমত ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
সহমত!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
নতুন মন্তব্য করুন