সোভিয়েত পতনের মাধ্যমে বামবিশ্বের পতন ঘটেছে এমন একটা বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে আমরা বসে আছি। সোভিয়েত পতন, পূর্ব ইউরোপে বামবিশ্বের ভাঙ্গন বার্লিন প্রাচীরের ভেঙ্গে পড়া,এইসব চিত্রকলা বামপন্থার কফিনে কতিপয় শেষ পেরেক হিসেবে উদযাপিত। তার মানে কী এই যে পুঁজিবাদ ই সর্বশ্রেষ্ঠ মতবাদ হিসেবে তার চরম উৎকর্ষের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এর উত্তর সম্ভবত চিরন্তন; রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
আমরা শীতলযুদ্ধ বলে বহু ব্যবহারের প্রায় জীর্ণ একটি শব্দবন্ধের সঙ্গে খুব পরিচিত। যে যুদ্ধ ভিয়েতনাম বা ইরাকযুদ্ধের মত উত্তপ্ত নয় অথচ যুদ্ধ, তাই কি শীতলযুদ্ধ! এই যুদ্ধ কী ধরণের যুদ্ধ সম্ভবত পরিপক্ক বুদ্ধিজীবীরা সেটা সংজ্ঞা, পাদটীকা ইত্যাদিসহ প্রায় দুর্বোধ্য অ্যাকাডেমিক গবেষণায় বহুবার লিখে গেছেন। কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে তেমন খোলাসা হয়নি, সম্ভবত অ্যাকাডেমিক পেপারের স্টেরিওটাইপ সম্পর্কে অণীহার কারণে।
তবে বামবিশ্বের ধ্বংসস্তুপের মাঝ দিয়ে একজন প্রায় নির্বোধ টুরিস্টের মত ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে মনে হয়েছে, বাম বিশ্ব সম্পর্কে কৈশোরের রোমান্টিকতা থেকে যা জেনেছি, কিংবা মিডিয়ার আমদর্শক হিসেবে যা দেখেছি তার পুরোটাই একটা সৃষ্ট বাস্তবতা। বাস্তবতা থেকে এর দুরত্ব সম্ভবত নিজেকে বাছুর বামপন্থী কিংবা এমটিভির রিয়ালিটি শো’র ছাগল হিসেবে উদঘাটনের সমান্তরাল।
কম্যুনিস্ট মানেই ধর্মহীন, নাস্তিক এ রকম একটা ঢালাও ধারণা কোত্থেকে পেয়েছিলাম জানিনা। সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপের বামব্লক, পূর্ব জার্মানী এসব জায়গায় খৃষ্টধর্মের অর্থোডক্স ধারার ঐতিহ্য স্পষ্ট। নাস্তিকের সংখ্যা যে কোন সমাজের সংশয়বাদীদের সংখ্যার মতই। কম্যুনিজমের সঙ্গে নাস্তিকতার প্রতিশব্দগত সম্পর্ক তৈরীর কোন প্রমাণ বামবিশ্বের ধ্বংসস্তুপে খুঁজে পাওয়া গেল না।
আয়রন কার্টেন বা লৌহপর্দার ছিন্ন অংশগুলো খুঁজতে গিয়ে আবারো ঐ একই ব্যাপার। বাইরের বিশ্ব থেকে বাম বিশ্ব নিজেকে আলাদা করে রেখেছিল লৌহ পর্দা দিয়ে, ঢেকে রেখেছিল তাদের যাপিত জীবন; অর্থ্যাৎ এখন ইরান সম্পর্কে, কিছু দিন আগে ইরাক সম্পর্কে (ওয়াশিংটন যাকে অপছন্দ করবে) অথবা ২৪/৭ কিউবা সম্পর্কে যে রকম একটা সৃষ্ট বাস্তবতা পুঁজিবাদী বিশ্বের মিডিয়া আমাদের মধ্যে তৈরী করতে থাকে।
বামবিশ্বের ভাঙ্গনের পরে পুঁজিবাদের শো-রুম, ফ্যাশান হাউজ, সেক্সশপ (পেরেন্টাল গাইডেন্স প্রার্থনীয়), কফিশপ অথবা ম্যাকডোনাল্ডস্ দেখে যারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল; তারা এখন বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাগ্রস্থ পুঁজিগণতন্ত্রের স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে আহাজারি করছে। এ অনেকটা গ্রামের ছোট্ট সুন্দর জীবন ছেড়ে ঢাকায় এসে ছিনতাইকারীর হাতে অপদস্থ হয়ে প্রাণ নিয়ে গ্রামে ফেরার উপক্রম।
এখন কথিত শীতল যুদ্ধটিকে ছাপোষা (বুর্জোয়া) বুদ্ধিজীবীদের মত পুঁজিবাদ বনাম বামবাদ এ রকম বিমূর্ত না রেখে , ওয়াশিংটন বনাম মস্কো মিডিয়া যুদ্ধ বললেই তো মিটে যায়। বাগদাদ পতনে পদাতিক বিছানায় শুয়ে যে সাংবাদিকতা, মস্কো পতনে ওয়াশিংটনের নিউজ রুমে বসে সাংবাদিকতা অনেকটা হলুদ সাংবাদিকতা। কতকষ্টে আছে সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষেরা, তার অনুসারী পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো আর পূর্ব জার্মানীতে অবরুদ্ধ মানুষ, অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং তদীয় গণতন্ত্র বলয়ের মানুষেরা যেন ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘুড়ি উৎসবে বাক-বাকুম বাক-বাকুম করছে। মিডিয়া সৃষ্ট এই রিয়্যালিটি অনেকটা মাদকাসক্তির মত যেখানে কল্পনা এবং বাস্তব মিলে মিশে একাকার। বারাক ওবামার সময়েই একজন কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ওপরে স্বেতাঙ্গ পুলিশ সার্জেন্টকে যেভাবে চড়াও হতে দেখা গেলে, ওবামা সেটাকে পুলিশের বোকামী বলতেই মিডিয়া তার ওপর যেভাবে চড়াও হলো, মিডিয়া সৃষ্ট রিয়্যালিটি ওবামার জনপ্রিয়তার দূর্গে যেভাবে ধস নামিয়ে দিলো কারণ মতামত জরিপও এখন মিডিয়ার মনোপলি। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ধারণা করা যাচ্ছে শীতল যুদ্ধে ওয়াশিংটন কেমন কামান দেগেছিল মস্কোর প্রতি।
ওয়াশিংটন মিডিয়া যখন তখন কিউবার অবরুদ্ধ জীবনের ছবি আঁকতে কিউবা থেকে ভাগ্যান্বেষণে পালিয়ে আসা দু’জন আর কিউবার বাসিন্দা দুজনের আলোছায়াযুক্ত সাক্ষাতকার দিয়ে প্রমাণ করে দেবে "দ্যাখো কী নিষ্ঠুর বামপন্থা"! অথচ কিউবায় সরজমিন তদন্তে চোখে পড়বে একটা স্থিতিশীল মধ্যবিত্ত জীবন, শিক্ষা চিকিৎসার বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা। পাবে ডিসকোতে আড্ডারও কমতি নেই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেমন অল্পে তুষ্ট অথচ শিক্ষিত, বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী এখনো দুই কামরার ছোট অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, সুযোগ পেলেই ধুতির কোচাটা পকেটে গুঁজে ট্রামে উঠে পড়েন। ঢাকা দিল্লী কিংবা ইসলামাবাদের গণতন্ত্রীদের মত সাইরেন আতংক তৈরী করে ভোটারদের ট্রাফিক জ্যামে অবরুদ্ধ রাখেন না। তার মানে এই নয় যে বাপন্থাই স্বর্গের ঠিকানা। যে কোন পন্থার গোড়ার কথা হলো তা জনমানুষের কল্যাণে কতটুকু কাজে আসছে। যেমন ওয়াশিংটন আশ্রিত ইলেক্ট্রনিক কিংবা সাইবার উঞ্চযুদ্ধে গণতন্ত্র সম্পর্কে এমন কিছু ইউটোপিয়া রচনা করে, যেন গণতন্ত্র মানেই জান্নাতুল ফেরদাউস।
আমরা জানি ক্যাটারিনা আহত( ঘূর্ণিঝড়, বলিউডের ক্যাটরিনা কাইফ নয়) মার্কিন মুল্লুকে কী দুর্দশায় মানুষের জীবন কেটেছে। অথচ বাংলাদেশ এর চেয়ে বেশী দক্ষতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলা করে থাকে। আর গণতান্ত্রিক আদর্শের মোড়কে এগিয়ে যাওয়া পূঁজিবাদ যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জনমানুষের কোন সম্পর্ক রচনা করে না। পাঁচ হাজার সম্পদশালী মানুষ অর্থ লগ্নি করে কয়েকশ সাংসদ তৈরী করে কোটি কোটি মানুষকে শাসন করার জন্য; সেটাতো কতিপয়তন্ত্র।
বুদ্ধিজীবীরা টকশোতে বলেন ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ কী সেই প্রক্রিয়া, পাঁচ বছর পর পর আমজনতাকে কিছু ক্যাচওয়ার্ড বা ভোট শিকারী শব্দমালা বা টাকা পয়সা শাড়ী লুঙ্গি টিন (জনমানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে অর্জিত সম্পদের পুনর্বিনিয়োগ বা রিসাইক্লিং) ভোট দিতে নিয়ে যাওয়া। ভোটের পরেই শুরু হয় গণতন্ত্রের রেসের ঘোড়া সাংসদদের ওপরে লগ্নি করা টাকার কয়েকগুন তুলে আনা।
মহাক্রান্ত গণতান্ত্রিক বিশ্বের ক্রেডিটকার্ডের শিহরণে আপ্লুত কর্পোরেট ম্যানেজাররা যখন দুবাই বিমানবন্দরে গাড়ী ফেলে দিকবিদিক উড়াল পলায়নে ব্যস্ত; তখন প্রমাণিত হয় কফিশপে টাই পরে বসে থাকা গণতন্ত্র কপচানো স্বচ্ছল কর্পোরেট সৈনিকেরাও আসলে শ্রমিক। তাদের যে কোন সময় হায়ার এবং ফায়ার করা সম্ভব। আসল মুনাফার অংশীদার গণতন্ত্রের ক্যাপসুল কারখানার কাছাকাছি ওঁৎপেতে বসে থাকা পাঁচ হাজার বড় জোর পাঁচ লাখ ব্যবসায়ী। এই ক্ষমতা-ব্যবসায়ীরাই অর্থনীতি এবং বিশ্বজনমানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা। কাজেই বারাক ওবামাকে আবার গ্রোথ উইদ ইক্যুইটি কিংবা ইক্যুয়ালিজমের কথা বলতে হচ্ছে। কার্লমার্কস "দাস ক্যাপিটালে" যে কথা লিখে গেছেন, চে গুয়েভারা তার জীবন কাব্যে যে মানবিক কবিতার কবি। সেটাকে বামপন্থার তকমা না লাগিয়ে মানবিক পন্থা বলাই ভালো। বার্ধক্য বিছানায় শুয়ে ফিদেল ক্যাস্ত্রো যখন বাঁচবার স্বপ্ন দেখেন, চীন যখন পূঁজিবাদী বিশ্বের ঘোড়দৌঁড়ে টিকে থাকতে দলীয় গণতন্ত্র আর সাম্যবাদের মিশেলে বিশ্ব অর্থনীতির দুরন্ত সহিস হয়ে এগিয়ে থাকে; তখন বুঝতেই হবে গণতন্ত্রই শেষ কথা নয়- যেমন ছিল না বামতন্ত্র। যে ব্যবস্থায় মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকে , বাচ্চা স্কুলে যায়, চিকিৎসা পায়, একটু মানবিক সম্মান থাকে সে রকম অধরা কিছুই আমরা হণ্যে হয়ে খুঁজছি।
মন্তব্য
সুপাঠ্য লেখার জন্য ধন্যবাদ।
--
বামবিশ্বের ভাঙ্গনের পরে পুঁজিবাদের শো-রুম, ফ্যাশান হাউজ, সেক্সশপ (পেরেন্টাল গাইডেন্স প্রার্থনীয়), কফিশপ অথবা ম্যাকডোনাল্ডস্ দেখে যারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল; তারা এখন বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাগ্রস্থ পুঁজিগণতন্ত্রের স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে আহাজারি করছে।
তাই কি? আমার তো মনে হয় এদের মধ্যেই কেউ কেউ এখন পুঁজিবাদের উজ্জ্বলতম উদাহরন। এখানে ইউক্রেনের সাথে পোল্যন্ডের বা আরো ছোট মাপে মলদোভিয়ার সাথে লাতভিয়ার যথাক্রমে বাম ও ডান প্রীতি ও তার ফলাফলের তুলনা চলে।
--
লেখার শেষে এসে মনে হচ্ছে এখানে গণতন্ত্র আর পুঁজিবাদকে একীভুত করে ভাবা হয়েছে। তাহলে মধ্যপ্রাচ্য বা চীন নিয়ে আপনার অবস্থান কি? ধারনা হিসাবে বাম, ডান এর দুটোকেই এতটাই উদাত্ত হিসাবে জাহির করা সম্ভব যে শেষমেশ কোনটারই কোন অকাট্য ঋনাত্বক দিক অবশিষ্ট থাকে না। এখানে আমি এদের তত্বীয় ধারনার কথা বলছি। অন্যদিকে এদের প্রয়োগ আর বোধ করি প্রয়োগকর্তার নিয়তের হাত ধরেই কিন্তু দুদিকের যত ঋনাত্বক বাস্তবতা প্রকাশ পায়। তা না হলে দাগের বামে থেকেও চীন এখন সবচাইতে বড় পুঁজিবাদী, আর এতকাল দাগের ডানদিকটায় তর্জন গর্জন করে আজকে এসে এংলোস্যাক্সনেরা সমাজতন্ত্রের বই খুলে বসবে কেন?
কিউবার মধ্যবিত্ত কিভাবে বসবাস করছে তা Yoani Sánchez -এর ব্লগ পড়লে বোঝা যায়। শুধুমাত্র ব্লগিং করা এবং জনগনকে ব্লগিং-এ উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাকে স্বরাষ্ট্র-মন্ত্রানলায়ের হুমকি/ধামকির শিকার হতে হয়।
http://www.desdecuba.com/generationy/?p=353
http://www.desdecuba.com/generationy/
কোন তথ্যসূত্র পাওয়া যাবে কি?
কোন তথ্যসূত্র পাওয়া যাবে কি?
এটা দেখতে পারেন
"বারাক ওবামার সময়েই একজন কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ওপরে স্বেতাঙ্গ পুলিশ সার্জেন্টকে যেভাবে চড়াও হতে দেখা গেলে, ওবামা সেটাকে পুলিশের বোকামী বলতেই মিডিয়া তার ওপর যেভাবে চড়াও হলো,"
পুরো ঘটনা শুনে আমার মনে হয় নি যে এখানে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সার্জেন্ট ভুল কিছু করেছে, সে তার দ্বায়িত্ব যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করেছে। বরং সম্পূর্ণ ঘটনা না জেনেই আগ বাড়িয়ে একটা মন্তব্য করা ছিল ওবামার একটা ভুল পদক্ষেপ, যেখানে তার মন্তব্যগুলা হয় যথেষ্ট সুচিন্তিত।
পূজিবাদের আজকের অবস্থায় আসতে কত বছর সময় লেগেছে?
কেউ জানলে দয়া কইরা একটু আওয়াজ দিয়েন।
সমাজতন্ত্র কাগজ কলমের প্যাচ ভাইঙ্গা বাস্তবায়ীত হইয়া আবার ব্যার্থও প্রমানিত হইছে কয় বছরে? সমাজতন্ত্রতো মানুষ সত্যিকার অর্থে এখনো প্রয়োগ করার সুযোগই পেলনা (দুই একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া)।
আপনাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় এই বিষয় গুলো বিবেচনা কইরা কন, এখনো পৃথিবীতে মানুষ অনাহারে থাকে কেন?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার জানামতে এটা তো কমিউনিজমের দর্শনগত ভিত্তির সাথে সম্পর্কিত। মেটেরিয়ালিজমের যেখানে শুরু এই নাস্তিকতার সাথে বসবাসও সেখান থেকেই। দর্শনগত দিক থেকে ডায়ালেকটিক মেটেরিয়ালিসমই কি সমাজতন্ত্রের মূল ভিত্তি নয়? সাম্যবাদের মানবীয় দিকটির জয়গান করতে গিয়ে এর দর্শনগত ভিত্তিটিকে হালকা করে ফেলাটা হয়ত আপনার উদ্দেশ্য নয়।
একটা সহজ উদাহরন দেয়া হয় সমাজতন্ত্র আর পুঁজিতন্ত্রের পার্থক্য নির্দেশ করতে গিয়ে। সেটা হচ্ছে মৌমাছির সম্প্রদায়ের সাথে তুলনা। সেখানে মৌমাছিরা ব্যক্তিগত ভাবে কোন গুরুত্ববহন করেনা। এরা সবাই তাদের চাকের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যায়। ব্যাক্তির চেয়ে তাদের চাকের গুরুত্ব যে অনেক বেশি সেরকমটাই সমাজতন্ত্রের চিন্তার ধরন। কিন্তু পুঁজিতন্ত্রের ধারনাটা বরং ব্যক্তিকে উপরে তুলে ধরে। সেখানে সে তার নিজের পছন্দমত চলবে। এখানে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে ছাড় দিতে হবে না। এই পরের ভাবনা টাকে ব্যক্তি জীবনের উৎকর্ষের জন্য দরকারি মনে হয় আমার কাছে, যদিও মার্কসিয় ধারনায় হিউমেন পোটেনশিয়াল এক্সপ্লোর করার জন্য কমিউনিজমের দরকার বলে ধারনা করা হয়েছে।
কোথাও পড়েছিলাম "Equality under unequal condition is inequality". ব্যপারটা হয়ত এরকম যে ব্যক্তির মটিভেশনের জন্য কাজের পুরষ্কারের সুযোগ না থাকলে স্পৃহা কম থাকার দরুন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কারুর উন্নয়নের জন্যই তা মঙ্গলজনক নয়।
বাম ঘরানার ছাত্রনেতাদের পড়াশুনা আর ছাত্রাবস্থায় তাদের আদর্শ দেখে মাঝে মাঝে মনে হতো এসবে জড়ালে মন্দ হতোনা। কিন্তু এক আদর্শকে গ্রহণ করতে গিয়ে আস্তিকতাকে বিসর্জন দেয়া সম্ভব ছিলনা।
৩ নং মন্তব্য-এর প্রতিউত্তরে : ক্যাটরিনা পরবর্তী অনিয়ম নিয়ে কোন সন্দেহ নাই কিন্তু সেটার সাথে বাংলাদেশের সাইক্লোনের মোকাবেলা অনেকটা আপেলের সাথে কমলার তুলনা। বাংলাদেশে কোন শ্রেণীর নাগরিক সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকায় বসবাস করেন এবং কতটুকু সাহায্য পেলে আমাদের মিডিয়া সন্তুষ্ট থাকে?
আমার এই সিরিজটি (ইউটোপিয়, বৈজ্ঞানিক ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র – দ্বিতীয় কিস্তি) পড়ে দেখতে পারেন তাহলে আপনার অনেক জবাবই পাবেন। আর মূল জবাব এর মাঝেই জনাব রিয়াজ দিয়েছেন।
আমারও মনে হয়েছে লেখক গণতন্ত্র আর পুঁজিবাদ কে গুলিয়ে ফেলেছেন। এটার জন্য লেখক যতটা না দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ি মার্ক্স নিজে। কারন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে সর্বহারাদের শাসন সম্ভব নয়। যে কারনে তিনি বিপ্লবে বিশ্বাসী ছিলেন, ভোটের যুদ্ধে নয়। সোস্যাল ডেমক্রেসি মার্ক্স এর সময়ও ছিল কিন্তু তিনি সে পথে যাননি।
ক্লান্ত হলাম লেখাটা পড়তে গিয়ে, অর্ধেক পড়েছি।
নতুন মন্তব্য করুন