নৈরাশ্যের প্রতিবিপ্লব অথবা শিক্ষা বিপ্লব

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: রবি, ০৮/১১/২০০৯ - ৭:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের এই সামাজিক রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পেছনে কারণ খুঁজতে গেলে এত অসংখ্য কারণ এসে পড়বে যে এই লেখার জাল ছুঁড়ে দিয়ে তা গুটিয়ে আনা কঠিন হবে। তাই একটি কারণ খুঁজে নিলে আমার জন্য সুবিধা হয়।

শিক্ষানীতি আধুনিকীরণ বা যুগোপযোগী করে তোলার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী তার সৎ প্রচেষ্টা জারী রেখেছেন। কিন্তু শিক্ষা-ব্যবস্থার মান উন্নয়ন কি কেবল অবকাঠামোর বা উপরি কাঠামোর ব্যাপার! কোন্ শিক্ষা ব্যবস্থা একটি সৎ পেশাদারী প্রজন্ম উপহার দিতে পারবে! শিক্ষা মানে তো কেবল প্রশিক্ষন আর সার্টিফিকেট অর্জন নয়।

শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকা দরকার যা ‘সততা’র মত একটি বিমূর্ত বিষয়কে প্রশিক্ষণের অন্তর্ভূক্ত করবে।

একটি শিক্ষা ব্যবস্থাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রশাসন, পুলিশ এবং অন্যান্য পেশাদার গোষ্ঠী উৎপাদন করে। ব্যবস্থাপনায় দক্ষ এবং সৎ কর্মী উৎপাদনে শিক্ষা ব্যবস্তার ব্যর্থতা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের গতিপ্রকৃতিই নির্ধারণ করেছে।

শিক্ষকতা পেশাটিকে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব অমনোযোগ বশতঃ প্রায় হত্যা করেছে সেটা শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনাগ্রহের কারণ হয়েছে। শিক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধিকে শিক্ষানীতির অন্যতম শীর্ষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে, সেটা ভাল উদ্যোগ। শিক্ষকদের যদি একটা সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা দেয়া যায়; আর্থিক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক ষণ্ডা-পাণ্ডাদের রোষাণল থেকে বাঁচার নিরাপত্তা। দুটোই রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে। শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইলে শিক্ষা ব্যবস্থার নবায়নের প্রাথমিক শর্ত পূরণ হয়ে যায়।

ভাল শিক্ষক( প্রশিক্ষিত এবং সৎ) ভালো অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ আর শিক্ষার পরিবেশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে খুব আটপৌরে ভাষায় মানুষ গড়ার কারখানার সঙ্গে তুলনা করা হয়। শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর এই সহজ বাক্যটি কেবল বাণীচিরন্তণীতে ছাপার অক্ষরে রয়ে গেল।

অথচ শিক্ষকতার পেশাটিকে আমরা খুবই অবহেলা করে অনাকর্ষণীয় একটি পেশায় পরিণত করলাম। ভারত বিভাগের পরে (সাতচল্লিশ পরবর্তী সময়) হিন্দু শিক্ষকদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হলো। পাকিস্তান রাষ্ট্রটির সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের শিকার হলো হিন্দু সম্প্রদায়। যে শিক্ষক প্রজন্ম পূর্ববঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরী করেছিলেন আন্তরিকতার সাথে তাদের ঠেলে দেয়া হলো অনিশ্চিয়তার পথে। তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যারা স্কুলে পড়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই ভাল বাংলা বা ইংরেজি শিক্ষা কিংবা শিক্ষার ভিত্তি তৈরীর পেছনে একজন দুজন নিস্বার্থ শিক্ষকের অবদান রয়েছে। এটা তাদের মুখ থেকেই শোনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা শিক্ষকদের ঠেলে দেয় একটি প্রান্তিক অবস্থানে। বৃটিশ আমলে বা পাকিস্তান আমলে শিক্ষকরা রাজার হালে বসবাস করতেন; ব্যাপারটা এ রকম নয়। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকেরা ছিলেন ছোট ছোট সমাজের দার্শনিক রাজার মত। উপার্জন এবং দ্রব্যমূল্যের মধ্যে একটা সংহতি থাকায় তাকে প্রাইভেট টিউশনির কথা ভাবতে হতো না। ছাত্ররা শিক্ষকের বাড়ি গিয়েও অনেক সময় নিঃস্বার্থ শিক্ষা অর্জন করতো। আনন্দের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার বিষয়টি রুপকথার মত শোনালেও আমাদের দেশের শিক্ষকেরা অনেকেই এখনো তাদের ছাত্রদের মুখে মুখে জীবন্ত কিংবদন্তী হয়ে রয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াতেই সামরিক শাসনের ল্যাবিরিন্তে ঢুকে পড়ে। ফলে সামরিক বাজেট মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ভুঁইফোড় পরিচালনা পর্ষদের দাপট মূখ্য হয়ে পড়ে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু শিক্ষকদের সম্মানজনক অবস্থানটিও নড়বড়ে হয়ে শিক্ষকতা সেবার পেশা অথচ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় এই পেশার প্রতি এক বাস্তবসম্মত নেতি তৈরী করে ফেলেছে এরি মাঝে। ফলে মেধাবী ও ভাগ্যবান শিক্ষকেরা পিএইচডি করতে গিয়ে আর ফেরে না। যাদের আর কোন উপায় নেই তারা কষ্টে সৃষ্টে মেনে নিয়েছেন এক উপায়হীন শিক্ষকতার জীবন।

অর্থাৎ স্থানীয় সাংসদ, তার পুত্র বা রাজনৈতিক দুবৃত্তরা এখন যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যে কোন শিক্ষককে লাঞ্চিত করতে পারে। পত্রিকায় রিপোর্ট আসলেও ও ব্যাপারে দায়িত্ব নেবার কেউ নেই। কারণ থানার দারোগার কাছে একজন শিক্ষকের মর্যাদা বা সম্মান আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সে শক্তির পূজারী। তাকে চাকরী করে টিকে থাকতে গেলে এবং নিজের দুর্নীতি চালিয়ে যেতে হলে রাজনৈতিক দৃবৃত্তদের তোষণ করেই চলতে হবে।

এ রকম একটি সামাজিক বাস্তবতায় বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে কজন শিক্ষক আছেন বা থাকতে পারেন যারা প্রথম পছন্দ হিসেবে শিক্ষকতাকে বেঁছে নিয়েছেন।

প্রশাসন ক্যাডারে ক্ষমতা আছে। শুল্ক বা রাজস্ব ক্যাডারে বাড়তি সুযোগ আছে। পুলিশ ক্যাডারে আরো কিছু আছে। সমাজ এ রকম একটি মনোভঙ্গী শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে দিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পর্যায়ে কিছু ভালো শিক্ষক এখনো রয়েছেন। স্কুল পর্যায়ে খুব কঠিন ভালো শিক্ষক পাওয়া। অর্থাৎ অনন্যোপায় না হলে কেউ আর শিক্ষকতা করতে চাচ্ছেন না। তাই সময় ফুরিয়ে যাবার পরেও শিক্ষার মানকে নিম্নগামিতার হাত থেকে বাঁচাতে গেলে শিক্ষকতার পেশাটিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার সাবসিডি দিতে হবে। যাতে করে শিক্ষকরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন ছোট ছোট সমাজের দার্শনিক রাজা হয়ে উঠতে।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনো আমার শিক্ষকদের বেশী সফল মনে হয় সমাজের অন্য যে কোন পেশার মানুষের চেয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা গাড়ি, রিক্সা কিংবা পায়ে হেটে যেতে দেখা সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বা আরেফিন সিদ্দিক ন্যারকে পতাকা উড়িয়ে যাওয়া মন্ত্রী বা মার্সিডিজ হাঁকিয়ে যাওয়া লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর চেয়ে সব সময় বেশী সফল মনে হয়।

এই মনে হওয়াটা একটা প্রায় আউটডেটেড ভাবনা নাকি সমসাময়িক প্রজন্ম শিক্ষকদের এখনো নিজেদের রোল মডেল ভাবে? এই প্রশ্নের আন্তরিক উত্তরটা জানা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির নির্বোধ ও বিবেচনাহীন দূষণ, দুর্নীতিগ্রস্থ ক্ষমতা কাঠামো সততার শিক্ষাহীন শিক্ষা ও সামাজিক মনস্তত্ব যে নৈরাশ্যের বাতাবরণ তৈরী করেছে, সেখানে আবার একটু আউটডেটেড ভাবনার কাছে ফিরে না গেলে সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে, অথবা এরিমাঝে হয়ে পড়েছে। শিক্ষা আর শিক্ষককে সামনে না নিয়ে আসতে পারলে সৎ অসৎ পথে অর্থ উপার্জনের ইঁদুর দৌড়টাই সমাজের একমাত্র বিনোদনের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

প্রান্তিক মানুষেরা সাক্ষীগোপাল হয়ে রাষ্ট্রের নানা হয়রানির শিকার হতে থাকবে। অনেকে ভাগ্য ফেরাতে শেষ সম্বল বিক্রী করে অবৈধভাবে অভিবাসী হতে চেষ্টা করবে। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ কেউ কেউ নির্লিপ্তভাবে নির্ঝন্ঝাট জীবন যাপন করতে বৈধভাবে অভিবাসী হতে চেষ্টা করতে থাকবে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন দেশগুলোর মানুষ যেভাবে নানা সময়ে অভিবাসী হয়েছে। একদল ব্যবসায়ী যে দল ক্ষমতায় থাকবে সে দলের সাথে তাল মিলিয়ে অবৈধ সম্পদ লুন্ঠন করতে থাকবে। এ রকম এক এলোমেলো রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার আর কোন বিকল্প নেই।

শিক্ষকরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে, শিক্ষা ব্যবস্থা তার সমসাময়িক পেশাদারিত্ব অর্জন করলে অন্ততঃ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘সুস্থ্যতা’ ফিরে আসবে। তা না হলে প্রতিদিন সমাজ জীবন অসুস্থ হতে থাকবে। একটি প্রজন্ম সত্য-সুন্দর-সম্পর্ক-মঙ্গল-দেশপ্রেম এইসব বিষয়কে বোকামী কিংবা বিলাসিতা বলে কৌতুক করতে করতে অসুস্থ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে।

প্রতিদিনের জীবনের লড়াই তার পাশাপাশি রাজনৈতিক সার্কাস; সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা পৌনপুনিক ক্লান্তি এনে দিয়েছে এরিমাঝে। সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে স্বপ্নহীনতার দিকে ঠেলে দিয়ে বাস্তবতায় বিশীর্ণ এক সামাজিক কারাগারে এ এক উপায়হীন জীবন।

হতাশা ও নৈরাশ্য ব্যক্তিগত বিষয় হলে তার কিছু সৃজনশীল সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সামষ্টিক হতাশা সমাজকে কখনো না কখনো বিপ্লবী করে তোলে। ইতিহাসে বড় বড় প্রমাণ থাকলেও সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে ভুলে যাই। শিক্ষামন্ত্রী চাইলে একটি শিক্ষা বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সামাজিক ও সামষ্টিক নৈরাজ্যের প্রতিবিপ্লবকে প্রতিহত করতে পারেন। বছর চারেকের মধ্যে সেটা করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন মনোযোগ।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি চুড়ান্ত আদর্শ কিছু নয়। কিন্তু বর্তমান যে ভজঘট অন্ততঃ তার থেকে কিছুটা ভালো ভিশন তো এর মধ্যে আছে। শিক্ষামন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়ে আমারো ও কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু এক ব্যক্তি শিক্ষামন্ত্রী কিংবা ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতাই কি যথেষ্ট? আমার আশংকা হচ্ছে এই শিক্ষানীতিকে ঘিরেই আমিনী নিজামীরা সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করবে, ডেভিল গার্ডিয়ান হিসেবে বিএনপি তো আছেই।

মাসকাওয়াথ ভাই, আপনার কি মনে হয়না- সরকারের আরেকটু সময় নেয়া দরকার ছিলো? অন্ততঃ প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষকদের সাথে শিক্ষানীতি বিষয়ে সরকারের আলোচনা করা দরকার ছিলোনা? চুড়ান্ত পর্যায়ের বাস্তবায়ন তো এঁদেরই করতে হবে?

শিক্ষকদের বেতন ভাতা এবং উপার্জনের বৈষম্য নিয়ে সরকারকে অবশ্যই বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পেশার মানুষদের রোগীদের জিম্মি করার সুযোগ নেই কিংবা রাস্তায় নেমে গাড়ী ভাংচুর করবেনা বলে তাদের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়িত হবেনা- এই দিন বদল হোক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

মন্ত্রী ভালমানুষ। উনি থাকতে থাকতে যতটুকু হয় আর কি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনো আমার শিক্ষকদের বেশী সফল মনে হয় সমাজের অন্য যে কোন পেশার মানুষের চেয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা গাড়ি, রিক্সা কিংবা পায়ে হেটে যেতে দেখা সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বা আরেফিন সিদ্দিক ন্যারকে পতাকা উড়িয়ে যাওয়া মন্ত্রী বা মার্সিডিজ হাঁকিয়ে যাওয়া লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর চেয়ে সব সময় বেশী সফল মনে হয়।

এই মনে হওয়াটা একটা প্রায় আউটডেটেড ভাবনা নাকি সমসাময়িক প্রজন্ম শিক্ষকদের এখনো নিজেদের রোল মডেল ভাবে? এই প্রশ্নের আন্তরিক উত্তরটা জানা প্রয়োজন।

বিষয়টা মনে হয় আমাদের জাতীয় চরিত্রের সাথে মানানসই। আমরা নিজেরা সব সুযোগ সুবিধা চাই, একই সাথে আশাকরি বাকীরা সবাই সৎ ও সজ্জন থাকবে।

আমি নিজে প্রয়োজন হলেই ট্রাফিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাই , ইচ্ছেমতো সিগনান অমান্য করি, কিন্তু অন্য সময় এই আমিই গালি দিয়ে বলি, শালার ভাইরা একজনও ট্রাফিক আইন মানে না বলেই ঢাকা শহরে এতো যানজট।

আমরা শিক্ষকদেরকে সম্মান করি , এটা রোল মডেল হিসেবেই হয়তো বা , হয়তোবা নিজেদের মাঝের অপরাধবোধ ঢাকতেই সম্মান টম্মান দেখিয়ে একটা প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

যারা নিয়ম মানে আর নিরাপরাধ তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

"এই মনে হওয়াটা একটা প্রায় আউটডেটেড ভাবনা নাকি সমসাময়িক প্রজন্ম শিক্ষকদের এখনো নিজেদের রোল মডেল ভাবে? এই প্রশ্নের আন্তরিক উত্তরটা জানা প্রয়োজন।"
---- মাসকাওয়াথ ভাই আমার শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের চেয়ে সফল কোনো মানুষ আমি দেখি নাই এই জীবনে। জাফর স্যার ছাড়া অন্য কারও মত আসলে আমি হতে চাই না।এবং আমার কাছে মনে হয় আমাদের প্রজন্মের একটা বড় অংশ এই রকম চিন্তা করে।
কিন্তু সমস্যা হল--বর্তমান অবস্থায় জাফর স্যারের মত কোথাও বিক্রী না হয়ে (প্রাইভেট ইউনি, রাজনীতি--আরও কত জায়গা আছে !) মাথা উচুঁ করে শিক্ষকতা করার জন্য তাঁর মতই অসাধারণ হতে হয়। এ কারণেই তাঁর প্রিয় ছাত্ররাও ডিপার্টমেন্ট থেকে ছুটি নিয়ে পি এইচ ডি করতে গেলেও দেশে ফিরে আবার ডিপার্টমেন্টে জয়েন করার সাহস করতে পারে না(সামান্য ব্যতিক্রম যে নাই তা কিন্তু না)।

আমার স্ত্রী ডিপার্টমেন্টে স্যারের সহকর্মী ছিল। কিছুদিন আগে কানাডাতে মাস্টার্স করতে আসার আগে যে দুই বছর ও ডিপার্টমেন্টে ছিল--তখন সপ্তাহে গড়ে ওঁর ৩৬ ঘন্টা ক্লাস লোড থাকত। তো সদ্যই ব্যাচেলর পাশ করে ডিপার্টমেন্টে জয়েন করা একজনের জন্য সপ্তাহে ৩৬ ঘন্টা ক্লাস নেয়া আসলে অতিমানবীয় কাজ ; প্রতিটি বিষয়ই যখন পড়ানোর জন্য নতুন করে পড়তে হয়। কিন্তু ডিপার্টমেন্টে নতুন জয়েন করা প্রত্যেককে এই পুলসিরাত পাড়ি দিতে হয়। পুরনোদের জন্য অবস্থাটা যে একটু ভাল এটা আবার মনে করবেন না যেন-- খোদ জাফর স্যারকেই প্রায় নিয়মিতই সপ্তাহে ৩৪ ঘন্টা ক্লাস নিতে হয় । আর বেতন কত জানেন? একদিন জাফর স্যারের রুমে বসেই আমরা হিসেব করে দেখেছিলাম-- আনিকা (আমার স্ত্রীর নাম) যে বেতন পেত সিলেট শহরে কোন রিক্সাওয়ালা যদি ঠিক করে পরিশ্রম করে তাহলে তার চেয়ে বেশি কামাই করে ফেলতে পারে (ভুল বুঝবেন না আবার আমি কিন্তু মোটেই রিক্নাওয়ালাদের ছোট করার জন্য এই তুলনাটা করছি না--সত্ভাবে করা প্রতিটা কাজই যে গুরুত্বপূর্ণ এইটা আমি জানি )।

কিন্তু তাই বলে যখন দেখি কোন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের (যাঁরা নির্দ্বিধায় বাংলাদেশের সেরা) বিদেশে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দেন--আমি খুবই মন খারাপ করি।

এবারের শিক্ষানীতি যতটুকু পড়েছি আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে । আর আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে বর্তমান সরকার এর সাথে জাফর স্যারের মত মানুষকে যুক্ত করেছে বলে--এটাকে আমার সরকারের সততা আর আন্তরিকতার পরিচায়ক বলেই মনে হয়েছে।
আর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে নিজামী গংদের লাফালাফি দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে এটা একদম ঠিকঠাক হয়েছে (হা হা)।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আমিও আশাবাদী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটি ভাল লেগেছে, তা জানিয়ে গেলাম।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

জানলাম।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

শামীম এর ছবি

করি শিক্ষকতা ... কিন্তু শিক্ষানীতিটাই পড়া হয়নি (সময় কোথায়? লাইনে এখনও ৪ বান্ডিল পরীক্ষার খাতা আর একটা থিসিসের ড্রাফট আছে! মন খারাপ )... ... আশা করছি অন্যদের অবস্থা আমার মত এ্যাত খারাপ হবে না।

লেখাটি ভাল লেগেছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

একটু সময় বের করতে হবে স্যার।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অনুপম শহীদ [অতিথি] এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগলো!

সম্প্রতি প্রণীত শিক্ষানীতি সম্পূর্ণ বা আদর্শ মনে না হলেও আমার মতে সরকারের বাইরে বসে আমাদের, যে যার জায়গা থেকে, সম্ভব হলে সমষ্টিগত ভাবে, এর বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করা উচিত এবং সরকারের উপর একটা চাপ তৈরি করা উচিত। কারণ স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির চক্র যেরকম ভাবে সংগঠিত হয়ে এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে আমরা যদি বাইরে থেকে চাপ না দেই সরকারের সেই সংগঠিত চক্রের প্রচার-প্রচারণার কাছে নত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা থেকে যাচ্ছে। তাতে এই শিক্ষানীতির যে অংশগুলো জরুরি আমাদের দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তা হয়ত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না! পাবোনা সেই প্রত্যাশিত 'বিপ্লব' বা 'পরিবর্তন'।

ভাল থাকবেন।

অনুপম

সাফি এর ছবি

শিক্ষানীতি নিয়ে আশাবাদী যদি তা বাস্তবায়ন করা যায়। তবে ধর্মশিক্ষার প্রতি কুম্ভীরাশ্রু বর্ষনকারীরা আপ্রাণ চেষ্টা করবে এর বিরুদ্ধচারণ করতে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।