অভ্র বনাম বিজয়

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: বুধ, ১৯/০৫/২০১০ - ৮:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেশ কিছুদিন ধরে অভ্র বনাম বিজয় এই নিয়ে অনলাইন বিতর্ক চলছে।এই বিতর্ক আদালত অবধি গড়িয়েছে। যদিও এই অমোঘ সত্য জানতে চন্দ্র গবেষক হওয়া প্রয়োজন হয়না; যে অভ্র অনলাইনে বাংলা ভাষাকে মুক্ত করে দিয়েছে, কোন আদালত তাকে ঠেকাবে! বিজয়ের গৌরব ভেবেছিলাম যাদুঘরে জমা আছে—সে যাদুঘর থেকে নেমে আদালত, মিডিয়া পাড়া আর শাসক কাঠামোতে দেন দরবার করছে অভ্রকে ক্রস ফায়ারে দেয়ার অভিলাষে।
বিজয় সফট ওয়ারটিকে তার নির্মাতা সেই রাইট ভ্রাতাদের প্রথম খেলনা বিমান অথবা গ্রাহাম বেল সাহেবের প্রথম খেলনা ফোনের পর্যায়ে রেখে সভা সেমিনার নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে প্রায় ভুলেই গেলেন বিজয়ের কথা।যখন মনে পড়ল, ততদিনে সে প্রতিবন্ধি হয়ে গেছে অবহেলায়। অন্যদিকে অভ্র বেড়ে উঠেছে আলোর অজান্তে।অফিস আদালতে বিজয় নিয়ে ভোগান্তি যখন চরমে, অভ্র তখন সবকিছু সহজ করে দিল।মেহেদি আর তার বন্ধুরা থ্রী ইডিয়টসের মত নড়িয়ে দিল ভাইরাসের অহংকারের ভিত।বিজয়ের তাসের ঘর খোলাম কুচির মত উড়ে গেল।
যে সফট ওয়ার বিনাপয়সায় পাওয়া যায়, বাংলা লেখাকে সহজ করে দেয়, তরুণদের জন্য সেটা ডিজিটাল ডিভাইডের বিপরীতে তার ভাষার অধিকার।সেখানে বিজয় বর্গীদের মত আচরণ করে বাংলা ভাষার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।আদালত এখানে অপ্রাসঙ্গিক। বিজয়ের চোখে অভ্র সফট ওয়ার সন্ত্রাসী, জনমানুষের চোখে অভ্র সফট ওয়ার মুক্তিযোদ্ধা।
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম অভ্র বিজয়ের কী বোর্ড লে আউট অনুসরণ করেছে।কিন্তু অভ্র না এলে আজ আমাদের খাবি খেতে হতো আদিম বিজয় নিয়ে।অনলাইনে বাংলা চর্চা থমকে যেতো। অভ্র এখানে জন অধিকারের প্রতীক। অভ্রের কাছে মেধার প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে বিজয় এখন তার লে আউটের কঙ্কাল নিয়ে আদালতে, বিজয়ের প্রেতাত্মা যদি আইনের সুযোগে জিতে যায়, কাল থেকে কি বিজয় বিক্রি শুরু হবে।
মাঝখান থেকে বিজয়পিতা তারুণ্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি শাসক বা বাংলাদেশের সামরিক শাসকদের মত ওদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন।অতীতে সেটা সম্ভব হয়েছে কারণ সনাতন মিডিয়া মেধা হত্যার খবর হত্যা করেছে।অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলে অভ্র হত্যা ষড়যন্ত্র রয়ে যেত অজানা।অভ্র-বিজয় লড়াইএ প্রথাগত মিডিয়া সেই ভূমিকা ধরে রাখলেও অনলাইন মিডিয়া লড়ে চলেছে অভ্র কিংবা বাংলা ভাষার জন্য।ভেঙে দিয়েছে মিডিয়ার মনোপলি।ফলে সত্য লুকিয়ে রাখার কোন জারিজুরি আর কাজে আসছে না।
অভ্রের শক্তি তার দেশপ্রেম, ভাষার প্রতি ভালবাসা,নির্বাচন কমিশনে অভ্র কাজ করেছে বিনা পয়সায়, সে পুরস্কার চায়নি, ডিজিটাল বাংলাদেশ টেন্ডারে বিজয়দের মত সুফল কুড়াতেও যায়নি। অভ্র চেয়েছে লন্ডন বা তেতুলিয়ায় বসে একজন তরুণ যেন তার ভাবনাগুলোকে মুক্তি দিতে পারে বাংলায়।তাই অভ্রের এই কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ঘটনাটা যেন দেশপ্রেমের এসিড টেস্ট।বিজয় পিতা হয়ত জানেন না অভ্রর শরীরটাকে হয়ত কারাগারে পাঠানো যাবে, কিন্তু তার আত্মাটা রয়ে যাবে মুক্ত, সে প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষীদের কীবোর্ডে ঝড় ওঠাবে, আর তাতেই পতন ঘটবে আধ মরাদের বাস্তিল দূর্গের।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি
মুস্তাফিজ এর ছবি

পতন ঘটবে আধ মরাদের বাস্তিল দূর্গের

অপেক্ষায় আছি

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বিজয় পিতা নিজের ক্ষমতার শো-ডাউন করছেন কেবল। এই ক্ষমতার বর্ম খুলে ফেললে তাকে কেউ পুছেও দেখবে না। এতোদিন তাকে যা-ও অন্তত আমরা কম্প্যুটারে বাংলা'র পথিকৃত বলে জানতাম, সেই ধারণা তিনি ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছেন ইতোমধ্যেই।

তিনি অনলাইন মিডিয়াকে খুব সম্ভবত গোণায় ধরেন নি। হয়তো ভেবেছিলেন, তুষার জাতীয় কিছু খোদা বখশ্ মৃধা সদৃশ সর্বাভিজ্ঞ মুখ আর গুটি কয়েক পত্রিকার রিপোর্টার পকেটে পুরতে পারলেই কেল্লা ফতে!

অভ্র'র শরীরকে আদালতে দাঁড় করানো মানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটা বিশাল বাংলা কম্যুনিটিকে আদালতে দাঁড় করানো। এটা যে কতো বড় বুমেরাং হতে পারে নিজের জন্য, বিজয় পিতা খুব সম্ভবত এখনও সেটা উপলব্ধি করে উঠতে পারেন নাই। ঠিক যেমনটা তিনি পারেন নাই, অনলাইন মিডিয়া'র শক্তি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

নৈতিক দিকটা তুলে ধরায় অনেক ধন্যবাদ মাসকাওয়াথ ভাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ অভ্র আন্দোলনের অতন্দ্র কী বোর্ডে ঝড় তোলার দায়ে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আজকেই পত্রিকায় দেখলাম ১৫দিনের মধ্যে ৫টা মন্ত্রণালয়ে ইউনিকোড বাংলা ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে

সরকারের মধ্যে একচেটিয়া ব্যবসাটাও বোধহয় কাগু হারাতে বসেছেন

লীন এর ছবি

ভাষা হোক উন্মুক্ত
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আসলে যুগে যুগে দেশে দেশে সফটওয়্যার মুক্তির এই ব্যাপারটা বারবার পুনরাবৃত্ত হয়েছে, হচ্ছে। অতি সাম্প্রতিক একটা উদাহরন দেই। মাইক্রোসফট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাপে পড়ে অফিস ২০০৭ থেকে নতুন ওপেন ফাইল ফরমেটের, ডকএক্সের প্রচলন করেছে। কারণ ডক ফরমেটে তৈরী ফাইল অন্য প্রোগ্রামে খোলা যেত না (ওপেন অফিসে খোলা গেলেও ফরম্যাটে সমস্যা হত)। টেকনিলজী কুক্ষিগত করণ থেকে সরে আসতে মাইক্রোসফট বাধ্য হয়েছে। আর এখন তারা হেরে যেতে শুরু করেছে গুগল ডক্সের কাছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শৈশব এর ছবি

পত্রিকার নিউজ এর লিঙ্কটা একটু জানাবেন প্লিজ

লীন এর ছবি

প্রথম আলোতে ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচ মন্ত্রণালয়ে ইউনি কোডে বাংলা চালু হবে শিরোনামে লেখাটি আছে।
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

রণদীপম বসু এর ছবি

এখন আমরা দেশের সব সরকারি বেসরকারি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইউনিকোড ভিক্তিক বাংলা ব্যবহার চালু করার দাবি জানাই। প্রকাশনা শিল্প তো আরো জরুরি। সংশ্লিষ্টজনেরা নিশ্চয়ই তা গুরুত্বসহকারে ভাববেন এবং উদ্যোগী হবেন।
এতে করে রাষ্ট্রের বিরাট একটা সময় ও অর্থের সাশ্রয় তো হবেই, তথ্য আদান-প্রদানেও দারুণ গতিশীলতা আসবে বলে মনে করি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

হীরক রাজার দেশের কথা মনে পড়ছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিজয়-অভ্র বিতর্কে অভ্রের সপক্ষে আমাদের যাদের নীতিগত অবস্থান ,তাদের কাছে এই লেখাটার মূল্য কিন্তু অনেক ,আরো পষ্টাপষ্টি করে বললে অনেকটা টনিকের মতই হয়তো । টেকি ব্যাপার স্যাপার আমাদের অনেকের কাছেই খানিকটা বিটকেলে মনে পারে ,সেই প্রেক্ষিত বিচারেও এমন একটি লেখার আবেদনটা আরো বেশি জোরালো মনে হচ্ছে।

অদ্রোহ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌অনলাইন মিডিয়ার মতো প্রিন্ট মিডিয়াও যদি সোচ্চার হতো, তাহলে জব্বারের দশা আরো কাহিল হয়ে যেতো। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়া এখনো জব্বারকে ঘিরে আছে।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

লীন এর ছবি

একমত। তবে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রথম জবাবটি পাবেন এখানে
"ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে ‘অভ্র’ বাংলাভাষীদের জনপ্রিয় সফটওয়্যার" শিরোনামে সাপ্তাহিক ২০০০ প্রতিবেদন।
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

মামুন হক এর ছবি

ভাষা উন্মুক্ত হবেই! আমরা সর্বশক্তিতে রুখবো ভাষা বেনিয়ার নির্লজ্জ সর্বগ্রাসী লোভ।

রানা মেহের এর ছবি

মাসকাওয়াথ আহসান
আপনি কি এই লেখাটা কোন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যাবস্থা করতে পারবেন?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ছাপবে না। আমার বন্ধুরা ছাপাতে চাইলে সম্পাদক বলবেন, প্লিজ ওকে অন্য কিছু লিখতে বলো। আর অনলাইন মাধ্যম ছাপার চেয়ে বেশী কেজো। নীরব পাঠকের কী কোন ভূমিকা আছে অভ্র লড়াইএ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেক দিন পরে একটি মাসকাওয়াথীয় লেখা। অসাধারণ!!!

ঐ লেখাটার শিরোনাম কি ছিলো মাসকাওয়াথ ভাই? 'গাছ মানুষ, বাঘ মানুষ'? রানা মেহেরের প্রশ্নের উত্তরে আপনার কমেন্ট পড়ে মনে পড়ে গেল।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

বাঘ মানুষ গাছ মানুষ আকাশ মানুষ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সৌরভ [অতিথি] এর ছবি

বিজয় ও অভ্র কে অনুরোধ করছি,বাংলা ভাষা কে সকল মাধ্যমে জয়ী করতে হবে নিজেদের নয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।