আবার অনেকদিন পর হরতাল দেখল বাংলাদেশের মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জ়েতার পরে এর আর কোন প্রয়োজন ছিলনা।তবুও বিরোধীদলের শরীরে হরতালের নেশা নিশপিশ করে, জনগণকে একটু কষ্ট না দিলে, কর্মীরা পুলিশের লাঠির বাড়ি না খেলে, এদেশে রাজনীতির আর কোন মজাই নেই।ম্যাডামের নাতনীরা বিলেতে পড়েন, সেখানে বিরোধী দলের হরতালের মাদকাসক্তি নেই।আমজনতার নাতিরা ম্যাডামের হরতালে স্কুলে যেতে না পারলে ম্যাডামেরি লাভ, একসময় তারা বাপমাকে কাঁদিয়ে ম্যাডামের বুকের বল হয়ে যাবে।
ম্যাডামের ছেলে বিলেতে থাকেন, ডাক্তার দেখাতে যেতে হরতালের বাধা নেই।আমজনতার ছেলেরা ডাক্তারের কাছে যেতে না পারলে ম্যাডামের কী।হরতাল ডেকে ম্যাডাম খিঁচুড়ি ভুনা গোশ খেতে খেতে নাতনীর সংগে লং ডিস্টেন্স কলে রূপকথার গল্প শোনাতে পারেন।হরতালে রোজ এনে রোজ খাওয়া রিক্সাচালকের মা নাতনী অনাহারিনীদের প্রবোধ দিতে চুলায় পাথর জাল দিতে থাকেন। ক্ষমতাসীন রাণীমাতা আসবেন এরকম দুরাশায়, কিন্তু রূপকথা কেবল সত্যি হয় রাজপ্রাসাদে, বস্তিতে রাজারা আসে কেবল ভোটের আগে।
হরতালে পুলিশের চুমু খেতে বড় নেতারা রাজপথে যায়, যাত্রার বিবেকের মত পকেটে লালরং নিয়ে, টিভি ক্যামেরায় সেটা রক্তের মত দেখাবে, টিভি পর্দায় ম্যাটাডোরের ষাঁড়ের লড়াই দেখে ম্যাডাম একজন বীর মন্ত্রী বাছাই করবেন ২০১৪র জন্য, তোমাকে খুঁজছে বাংলাদেশ,জরদগব জুরীরা যারা বয়েসের কারণে ষাঁড়ের লড়াই থেকে অবসর নিয়েছেন, তারা ম্যাডামের সাথে বসে দার্জিলিং চা খেতে খেতে নম্বর দেন ২০১৪র তরুণ মন্ত্রীদের।
হরতাল প্রতিহত করতে আপা কাউকে আর পেলেন না, কারণ তাদের টেন্ডার বানিজ্যে গায়ে চর্বি জমেছে,অনেকেই রাজাকার বংশে আত্মীয়তা করেছে, ফলে শরীর টানলেও মন টানে না,যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ডাকা হরতালে বাধা দিতে। তারপরেও পশ্চিমা মানবাধিকারের সারমেয় দৃষ্টি রাজপথে, ৭১এর তিরিশ লাখ জীবনের দাম নেই, জাঢ্য খুনীদের মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়।
বিজনেস লিডাররা চিকেন ব্রোস্ট চিবাতে চিবাতে হরতালের বিপক্ষে সুশীল সমাজীয় বয়ান দেন বারোয়ারী টিভি চ্যানেলে, অথচ শ্রমিকের পাঁচ হাজার টাকা মজুরী নির্ধারণে নির্বাক হয়ে থাকেন।
পুলিশ জানে আজ সে যে শার্দুলটির লেজে পা দিচ্ছে সে ২০১৪ তে রাষ্ট্রমন্ত্রী হবে।
সুতরাং বাংলাদেশের আমজনতার জীবন থেকে একটি কর্মদিবস ছিনতাই করে নিলো বিএনপি।আওয়ামীলীগ জনগণকে কাজে যাবার নিরাপত্তা দিতে পারলো না।অর্থনীতিবিদেরা দিবস অর্থনীতির ক্ষতির অংকটি কষে দিলে ক্যানিবাল বিজনেস লিডাররা আমজনতার দিনের মজুরীটি কেটে রাখবেন।
উপার্জনহীন বিনোদন ছুটি অনাহার, আক্ষেপ, আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তার হরতাল হয়ে গণতন্ত্রের অলংকার পরিয়ে দিলো রাণীমাতা ম্যাডামের গলায়, টিভি নিউজে আপার গলায় কোন অলঙ্কার না দেখে ম্যাডাম ফিস ফিস করে বলেন দু হাজার তেরো…।
মন্তব্য
উপরের অংশটি পড়ে মনে পড়ল, সাদেক হোসেন খোকাকে যখন রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগের এক নেতা ( কে বলেছিলেন মনে নেই।) বলেছিলেন- এগুলো গরুর রক্ত।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে সেই নেতার বক্তব্যের ভার্সনটি এবার আপনি যাত্রা পালার রক্ত হিসেবে চালু করছেন।
মির্জা আব্বাসের বাড়িতে ঢুকে রেব যে তান্ডব চালিয়েছে তা টেলিভিশনে দেখেছেন বস ? একজন বৃদ্ধার হাতের ফাক গলে রেব এক তরুণকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করছে, এমন অমানবিক দৃশ্য টিভিতে দেখে আমি হতভম্ব। নাকি বাসায় বসে থেকে লোকজন পুলিশের চুমু খাওয়ার আগ্রহে ফ্রিজে গরুর রক্ত কিংবা ডিব্বায় যাত্রার রঙ নিয়ে বসেছিল?
পুলিশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শাহবাগে যে বড় বড় লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা হামলে পড়েছে, তারপর দৌড়ে গিয়ে হাসপাতালে আশ্রয় নেয়া নেতাকর্মীদের উপর আবার মারপিট করেছে, এটাও কি ছাত্রলীগের চুম্বন খাওয়ার লোভ শুধু ?
আপনার লেখাটি হতাশ করেছে।
এভাবে হয় না মাসকাওয়াথ ভাই, এরকম পাশবিক মানসিকতাকে জায়েজ করানো এসব যাত্রাপালার রঙ মাখানোর গল্প দিয়ে আসলেই হয় না।
মি জেবতিক আপনি মেধাবী লেখক তাই লিখছি। চল্লিশের পরে নিজেকে জাস্টিফাই করে লাভ নেই। প্রসঙ্গে যাই। ম্যাডাম চট্টগ্রাম বিজয় থেকে জনরায়ের শক্তি দেখেছেন। এখন বুখারি শরিফের পাশাপাশি রামায়ন বা সচলায়তন পড়া দরকার। হরতাল এখন অপ্রাসঙ্গিক। আনি ভাইয়ের বয়স পঁয়তাল্লিশ। এখন নোয়াখালী গিয়ে কম্যুনিটি রেডিওতে দেশপ্রেম দেখাতে পারেন। আর আপাকে তিনটা বছর কাজ করতে দেয়া দরকার। তারপর ই-ভোটিং এ দেখা যাবে। আমি আমজনতা এইটুকুই বুঝি। আমাকে ক্ষমা করবেন যদি কিছু ভুল বলে থাকি। ভালো থাকবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
বস, কথাকে যদি ব্যক্তিগত ভাবে নেন, তাহলে দুঃখিত। চল্লিশ পেরুলেই চালশে, এরকম কথা তো বলিনি। পার্সোনালি নিয়ে নিলে তো কমেন্ট করার কিছু থাকে না, আপনি চাইলে আমার আগের এবং এই কমেন্টটি মুছে ফেলতে পারেন, আমার আপত্তি নেই।
খালেদা জিয়ার হরতাল নিয়ে দ্বিমত নাই, এটা একটা অপ্রয়োজনীয় হরতাল। বিএনপির কিছুই ইদানীং আমার ভালো লাগে না, এমনকি চট্টগ্রামে হায়ার করা প্লেয়ার দিয়ে নির্বাচনী রেস জিতে আসাটাও। কিন্তু কথা সেটা নিয়ে নয়।
হরতাল অপ্রয়োজনীয় এ কারনে পুলিশ-রেব-ছাত্রলীগের নির্যতন জায়েজ হয়ে যায়, এমনটাও ভাবি না। আপা ৩ বছর নয়, পুরো ৫ বছরই উনার মেয়াদ পালন করুন, গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থা রেখে এমনটাই আমারও কামনা।
তাই বলে মিছিলে এবং ঘরে বাড়িতে হামলার ঘটনাটিও আমার চোখ এড়িয়ে যায় না, এজন্যই কথা বলা।
আপনি ব্যক্তিগত ভাবে নিলে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
'মেধাবী লেখক' হিসেবে নয়, আমজনতা হিসেবেও অহেতুক নির্যাতনকে আমি জায়েজ মনে করি না, একে জাস্টিফাই করার কোনো চেষ্টাও নেই না।
কালের কণ্ঠের ২৮ জুন, ২০১০ থেকে একটি খবর উদ্ধৃত করছি। কালের কণ্ঠের খবরগুলোর পার্মালিঙ্ক নেই বলে আর লিঙ্ক দিলাম না।
অন্য দলের নেতাদের মালিকানাধীন কলকারখানায় কি কাউকে ঢুকতে দিয়েছে বিএনপির কর্মীরা ? নাকি তাদেরকে হরতাল পালনে বাধ্য করা হয়েছে।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এখন কার রাজনৈতিক লেখাই হজম করা কঠিন, আর পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক লেখা গলাধঃকরণ করা হয়ত বাঙালির পক্ষে অসম্ভব। হতাশ হলাম ভাই। দুর্বল যুক্তি'র ব্যবহার দেখে আরও খারাপ লাগল।
শাফি।
শাফি ভাই আপনার বিরক্তির ক্লেদ আমাকে বিব্রত করেছে। বাঙ্গালীর পক্ষে একটা জনরায় দিলেন দেখলাম। আমার যুক্তি দুর্বল আমি কী আর কীই বা করতে পারি, আমি লাস্টবেঞ্চি আপনাদের বৃক্ষের শাখায় ফুল ফোটাতে পারবো না। আসছে বই মেলায় দুই শালিকের দেশ নামে একটা বই আসবে।এটা তারি মুখবন্ধ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
আমি জনাব আরিফ জেবতিক এর সাথে সহমত। অন্যায় সব সময়ই অন্যায়।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় সে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সমদহে।
-রবিঠাকুর
অন্যায় সব সময়ই অন্যায়।
-সাহাদাত উদরাজী (সূত্র, জনাব আরিফ জেবতিক )
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
আসলে হরতালকে বিচারের মানদন্ডে তোলার আগে এর সন্ধি-বিচ্ছেদ না করার কারনেই এতোকাল এর সুফলবঞ্চিত ছিলেন রাজনীতির ম্যাডাম আর লীডাররা--- এমনটি কিন্তু ঠিক না। গ্রাম্য প্রবচণ হলো- যে গাড়ে(গাঁড়ে?) তাল.. সে পায় বাল; তার ছেলেরা খায় ছাল; স্বভাবতই নাতিরা খায় তাল। কিন্তু আমাদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রক এই সুবিধাভোগী নেতা-নেত্রীগণ হরতালকে হরেক রঙ্গের তালে পরিনত করে হরেক রকমের সুবিধা বা ক্ষমতা পাচ্ছেন আর প্রয়োগ করছেন বহুকাল থেকেই। আর জনগণ অপশন হিসেবে পাচ্ছেন যাদের সরকারী আর বিরোধীদলীয় ভুমিকায় তাঁরা জনগণকে শুধু বলছেন, নিস তো মাগুর-চ্যাঙ ই নে', না নিস তো মাগুর চ্যাঙই নে।
দেশটা এলজিইডির টেন্ডার সিডিউল-এর মাধ্্যমে পাওয়ার কোন উপায় থাকলেও কি ম্যাডামরা নিকো(নেগোসিয়েশণ) না করে এমন করতেন?
আমাদের উত্তোরণের কোন কোন আশাই কি বাস্তবায়ণ হবেনা ? মাসকাওয়াথ ভাই কিছু বলবেন?
যেভাবে এমটিভি আদলে আমরা নাগরিক বকরা হলাম।
উত্তরণের দিশা আমাদের সুবিধাবাদি জেনারেশনে নেই। তিরিশের নীচে যারা, তারা থ্রী ইডিয়েটস, ভাইরাসের অচলায়তন ভেংগেই তো আজকের সচলায়তন। ব্লগ এন্ড বিয়ন্ড। বাসে ট্রেনে চা খানায় বসলে টের পাওয়া যায়, নিউজ টকশোতে কিছু নেই, ভাইরাসের রেড কার্পেট, বদলে যাচ্ছে চারপাশ, মোবাইলে, আন্তর্জালে, ব্লগে, ইউটিউবে, গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখন বিশ্বগ্রামের ব্লগনাগরিক। নৈরাশ্য কেবল নিষ্ক্রিয় প্রতিক্রিয়াশীলদের মনে। কারণ তারা বাসে উঠতেও ভয় পায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
নতুন মন্তব্য করুন