প্রতিদিন জীবনের উৎসব সচলায়তনে

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: শনি, ০৩/০৭/২০১০ - ৩:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধর্ম সম্পর্কে আমার একটা অনুসন্ধিতসু মন তৈরি হয়েছে, বছর পাঁচেক রাত জেগে রেডিওর খবর তৈরির সময়।দেশে দেশে ধর্ম যুদ্ধ আর লাশের অংক কষতে হতো মাইক্রোফোনের সামনে যাবার আগে।ডয়চেভেলেতে কলকাতার সাংবাদিক সঞ্জীব বর্মন বলতো নিউজরুমতো নয়, লাশকাটা ঘর।তেলাভিভের যুদ্ধ পর্যবেক্ষক বা কাবুল কিংবা পেশওয়ার অথবা রাজশাহি প্রতিনিধির সংগে টেলিসাক্ষাতকার শুনে বলতো যুদ্ধক্ষেত্রের সংলাপ।কলকাতার টিভি সাংবাদিক সুপ্রিয় হিন্দু জংগীবাদের আশঙ্কার কথা অনএয়ারে বলত ইসলামি জংগীবাদের প্রতিতুলনায়।দক্ষিণ এশীয় বিভাগের প্রধান ড। ফিডেমান শ্লেন্ডার নব্যনাতসী ততপরতা নিয়ে কমেন্টার দিয়ে যেতেন।

বাংলা বিভাগের প্রধান আবদুল্লাহ আল ফারূক মানববাদীই বলি তাকে।শুরু করলেন সংলাপ, গোলকের নানা প্রান্ত থেকে নানা ধর্মের চিন্তাবিদদের নিয়ে সভ্যতার সংলাপ।ওলটপালট হয়ে যেতে থাকল আমাদের ধর্মীয় আত্মপরিচয়, আমরা ছুটির দিনে দল বেঁধে গুলজাবীনের মিলাদে, সুলতানা আপার ঈদে, সুবির দা শান্তাদির পূজোয়, গোবেল গ্রোসের ক্রিসমাস দাওয়াত, ড। শ্লেন্ডারের চার্চ পিয়ানো কনসার্টে, অথবা রুহুল্লার আফঘান রাতজাগা সংগীত আসরে।

জংগীবাদ এবং ইসলামোফোবিয়া দুটোই আমাদের ভাবাতো পেশায় এবং জীবনে।হিন্দি বিভাগের সাংবাদিকেরা ছিলেন কড়াবাম, পূর্ব বার্লিন রেডিও থেকে আসা উজ্জলদা-মহেশ ঝা।উর্দু বিভাগে দুএকজন রক্ষণশীল, বাংলা বিভাগে একজন যারা লাদেন এবং বাংলা ভাই সমানুভূতির মুখপাত্র। অনুষ্ঠানে তারা জাওয়াহিরি বা সাঈদির কন্ঠ বাজাতে পছন্দ করতেন। সেক্যুলার বাংলা-হিন্দী-উর্দু বিভাগীয় প্রধান,ফারুক ভাই, যাদবজী কিংবা এজাজ ভাই, যারা কবিতা পড়েন, গান শোনেন বা ক্যালিওগ্রাফি করেন তাদের একটা অনভিপ্রেত মাথাব্যথা হয়ে উঠেছিলো এরা।

এটা ছিলো তাদের ঈর্ষা, অক্ষমতা ঢাকার লড়াই, পিছিয়ে পড়া মানূষের ক্যানিবালিজম।আমরা ধর্মকে সংস্কৃতি বা জীবন চর্যা হিসেবে দেখি, সুপ্রিয়র পূজো, আমার ঈদ, ডাফনে ব্লুমের স্ক্রিসমাসের দাওয়াতগুলোতে দাবিয়ে খেতো এবং মজা পেতো নাস্তিক সঞ্জিব, ইন্টারনেট অবশ্য ধর্মের মত ওর কাছে।

পশ্চিম থেকে ফিরে ঢাকায় রেজা, রানা, দেবাশিস, কাঁকন, টনি মাইকেল, মুরশেদ ভাই সেই একি সর্বধর্ম বা ধর্মহীন চক্র,কলকাতায় চঞ্চল বা টুসির বৃত্ত, দিল্লীর সুনন্দা রাও বা করাচির ফয়সল নাদিম, কাবুলে রুহুল্লার বন্ধুরা, থ্রি ইডিয়েটস ছবিটা দেখার পর মনে হল আমির খান তার জেনারেশনকে একটা সিগন্যাল দিল, অল ইজ ওয়েল।জীবনটা একটা রেস নয়, রেসে নামলে চমতকার শব্দটা বলাতকারের মত শোনায়।ভাইরাসের অচলায়তন থেকে জীবন এখন রেস এবং জাতপাতের উর্ধে, প্রতিদিন জীবনের উৎসব সচলায়তনে। এখানে আমরা গল্প করি, গান গাই, ঝগড়া করি, দেশ,মুক্তিযুদ্ধ,বঙ্গবন্ধুকে আড্ডার রক্তে মিশিয়ে দিই, যুদ্ধাপরাধী, ধর্ম ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক যৌনকর্মীরা এই আড্ডায় ময়ূর পুচ্ছ পরে এলে দুষ্টু ছেলেরা পরচুলো খুলে দেয়।

আসলে পশ্চিমের বা পূবের মানুষের সংগে পার্থক্য দক্ষিণ এশিয়ার কিংবা মিল বোধহয় একজায়গায়, পাশাপাশি খুব ভাল, আবার খুব খারাপ মানুষের বসবাস, জগতের নিয়মি বোধহয় এই। বাঁচিয়ে দিলো বিলগেটস, লী কিংবা সঞ্জিবের ইন্টারনেট হাতেখড়ি, এখন হাত বাড়ালেই বন্ধু, পাশের বাসায় যুদ্ধাপরাধী, ধর্ম ব্যবসায়ী, গম্ভীর সচিব, প্লাস্টিক কর্পোরেট সমাজ, মাস্তান রাজনীতিবিদ, ঋণখেলাপী, ঘুষখোর, নীতিহীন ভাইরাস থাকলেই বা আমার কী, আমার আছে সচলায়তন।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।যুদ্ধাপরাধী, ধর্ম ব্যবসায়ী, গম্ভীর সচিব, প্লাস্টিক কর্পোরেট সমাজ, মাস্তান রাজনীতিবিদ, ঋণখেলাপী, ঘুষখোর, নীতিহীন ভাইরাসরা যে কোন মুহূর্তে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ছিন্ন করতে পারে।


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

শেষটা ঠিক স্পষ্ট হল না। বা ধর্ম সম্বন্ধে অনুসন্ধিৎসা থেকে যেভাবে সচলায়তন চলে এল আলোচনায়, সেটাও খানিকটা জোর করে মনে হল। অবশ্য ব্লগরব্লগরে যে সব প্রাঞ্জল করে লিখতেই হবে এমন কোনো কথাও নেই।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

সহমত ব্লগরব্লগরের আবার সীমানা বা উপসং হার কী, সচলায়তন ব্লগ এবং জাতপাতের বা ইঁদুর দৌড়ের উর্ধে চিন্তার অচলায়্তন ভেংগে বেরিয়ে আসা মানুষের জীবন বোধ। নিয়মিত লিখছি তাই উপসং হার এখনি নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বেশ দারুণ একটা ঝটকায় ফিরে গেলাম সেই দিনগুলোতে।

কেবল রুহুল্লার সাথেই মাঝে সাঝে দেখা হয়ে যায়। বাস থেকে নেমে কিংবা বাসে ওঠার অল্প সময়ের প্রতীক্ষাতে। ওর পরিবার এসেছে শুনলাম। আসবে যখন বলেছিলো, সেই শেষবার কথা হয়েছিলো। শেষ দেখলাম বোধ'য় সপ্তা দুয়েক আগে। আমার বাস ছেড়ে দেয়ার পর। সেই চিরাচরিত কেতাদুরস্ত, হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ৬১০ ধরবে বলে।

মান্নুকে মনে আছে আপনার? ও একদিন জানালো আমাদের গওহরও বিয়ে করেছে। আমাকে জানায় নি। একদিন ফোন করেছিলো, ও এ ব্যাপারে কিছু বলে নি, আমিও কিছু জিজ্ঞেস করি নি।

ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে যে দুয়েকবার দেখা হয়, তিনি ট্রেন ধরার তাড়ায় থাকেন। তা'ও এক দণ্ড নিজেকে থামিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করেন, ডয়চেভেলে'তে যেতে বলেন। আমার যাওয়া হয় না। যেমনটা যাওয়া হয় নি এতোদিনেও ভিনোদ'এর শিভা'য়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

তুমি আর কাশ্মীরের গওহর দুজনেই শীভা লাউঞ্জের নায়ক, তোমরা দুজনে সমবয়েসী। একে অপরের বিয়েতে কেউ কাউকে ডাকবে না সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু ফারুক ভাই, সুপ্রিয়, সঞ্জীব, উজ্জলদা তোমার খুব কাছের মানুষ। মন খারাপের কিছু নেই, একদিন আমিও এসে আড্ডা দিয়ে যাবো শীভায় বা নাখখ্রিস্টেন হৈহুল্লোড়ে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।