সারা পৃথিবীতেই আইফেল টাওয়ার বিক্রির জোচ্চুরিকলা সক্রিয়।ফ্রড এবং ফ্রয়েড হাত ধরাধরি করে স্ট্রবেরি বা আমজনতাকে বাকরা বা বোকা বানিয়ে চলেছে।ওশান বা ওয়ান ইলেভেনের হাইটেক জোচ্চুরি শিল্প আমাদের বিনোদনের অংশ।কতিপয় চালাক মানুষের আমজনতাকে কলা প্রজাতন্ত্রের অধরা কল্পনার আসক্তির মধ্যে ফেলে রাখার ইতিহাসই সম্ভবত সভ্যতার ইতিহাস।
চোখের সামনে লাদেন টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয়, বুশ বাগদাদকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়, আমরা সবাই কফি আনানের অসহায় আক্ষেপের দর্শন ক্লাসের ছাত্র হয়ে রইলাম।
ঈশ্বরদী থেকে রাতের ট্রেনে চেপে ভোরবেলা কমলাপুর নামলে বা বাউফল থেকে রাতের লঞ্চে করে সকালে সদর ঘাটে নামলে চালাকেরা বোকাদের পারলে কাপড় খুলে নেয়, এটা মাদ্রিদের ট্রাম স্টেশনেও ঘটে,সম্ভবত এইসব কারণে গান্ধীজি এমন কাপড় পরতেন যাতে কেউ খুলে নেবার আগ্রহ বোধ না করে।নেহেরু-জিন্নাহ সুট পরে লন্ডনে গিয়ে সদরঘাট ট্রাজেডির দেখা পেয়েছেন। গান্ধীজির পোশাকে হতাশ হয়ে বৃটিশ ফ্রড এবং ফ্রয়েডেরা তাকে হাফ নেকেড বলে গালি দিয়েছে। গালিতে কী এসে যায়, সে তো ব্লগেও দেয়া হয় আকসার।
৮৭ সালে রাজশাহীর পাঠ চুকিয়ে কমলাপুরে নেমেছিলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্য পড়ার জন্য।ছোট নানা বলে দিয়েছিলেন ফ্রড এবং ফ্রয়েডদের কথা।তাই তাদের সার্কাসগুলো খুব মজা করে দেখেছি,মজা করে লিখেছি, ভবিষ্যতেও লিখবো।এসময়ের পাঠকদের জন্য বা নিজের জন্য।উত্তরাধুনিক লেখক বা সমালোচকদের খুশী করতে গেলে গাধাটাকে পানিতে ফেলে দিতে হবে, বাপ-বেটা দুজনেই হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে।তাই ছিদ্রান্বেষী সমালোচকদের পানিতে ফেলে দেওয়াই নিরাপদ।
৮৮ সালে যারা টিএসসিতে বসে রবি ঠাকুরের আলখাল্লা খুলে নিতো বা ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে জীবনানন্দ দাসকে ভাবালুতাগ্রস্ত বলে বুলি করত, তারা ঢাকার শিল্পসাহিত্যের আইফেল টাওয়ারটি বেচে দিতে চেয়েছিল।
এখন তারা কোথায়, আজকে যে মুখে মারে বিশ্ব চুপচাপ হয়ে যাবে কাল সে।কবিতা, গল্প, শিল্প সমালোচনা, ফিল্ম-নাটক, দেশপ্রেম সবকিছু যারা তাদের ফ্রড এবং ফ্রয়েডীয় রাজত্বের অংশ ভাবতো, তাদের আর দেখা পাইনা।কিংবা এসব ট্র্যাশ দেখার সময় পাইনা।অনলাইন মিডিয়ার এত অপশনের মাঝে কে আর শিল্প সাহিত্যের কলতলায় ঝগড়া দেখতে যাবে।
ব্লগে এতো অনায়াসে এতসব ভালো লেখা আসছে, সাহিত্যপাতা বা জাতীয় দৈনিকের আমলাতন্ত্রের যুগে সম্ভবত এইসব প্রচেষ্টাকে সম্পাদকের পিকদানিতে ফেলা হয়েছিল।কিছু ভালো লেখা লিটল ম্যাগাজিনে ছিল,তবে লিটল ম্যাগ ছাপাটাও ছিলো এক কষ্টকর ব্যাপার।সেসব অতীত।এখন ভালোলাগার ফসল দেখে খুশী হবার সময়।
প্রথম বা শেষ আলো প্রসঙ্গে কিছু বলা দরকার।আজকের কাগজ বা ভোরের কাগজে লিটল ম্যাগ আন্দোলন থেকে যারা এসেছিলেন, তারা প্রথম আলোতে গিয়ে আনন্দবাজারের অভীক সরকার এবং তদীয় কুচুটে পরগাছাদের মত হয়ে যাবেন, এটা আশংকা করেছিলাম,কারণ গরীব বিপ্লবীর গাড়ী হলে গায়ে চর্বি বাড়লে,এলিট রিমলেস চশমায় বিজ্ঞাপন মডেলের মতো দেখালে ঈশ্বরদীর কবি হাসান চিশতিকে গ্রাম থেকে সচিবালয়ে আসা অসহায় ক্লায়েন্ট মনে হয়, সিলেট থেকে আসা ব্লগারকে সময় দেয়া সময়ের অপচয় মনে হয়।জিন্স-টিশার্ট-তাতে অ আ ক খ লেখা থাকলেই ট্রেন্ডি হ ওয়া যায় না।আধুনিক হতে গেলে প্রথমে মানুষ হতে হয়।প্রত্যেক মানুষের গুরুত্ব থাকে তা সে অখ্যাত কবি-ব্লগার-চিত্রকর বা যে কোন মানুষ।এই যে বাংলা ছবির মত জাতে উঠলেই গ্রামের গরীব আত্মীয়কে গেট থেকে বিদায় করে দেবার যে জীনগত বা চর্চিত বিকৃতি লালন করছি আমরা এর মধ্যেই আমাদের মলকীট মৃত্যুর আয়োজন সম্পন্ন হয়।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার,ধানমন্ডিতে আপার্টমেন্ট, স্টারপ্লাস মেকাপের বউ অথবা খেলনা জীবন,গরীব মানুষ তো আর স্টারপ্লাস মেকাপ নিতে পারেনা, তাই এই নব্য এলিটরা তাদেরকে আর নিজেদের কমেডি নাটকে কাস্ট করে না।তাতে অসুবিধা নেই, কবি চিশতির এখন নিজস্ব ব্লগ আছে তবুও জনান্তিকে একা।প্রথম থেকে শেষ আলো সব মিডিয়ার মনোপলি ভেংগে পড়ছে।
এখন মঙ্গলপান্ডে বা সূর্যসেনের মত মধুর প্রতিশোধ নেবার সময়।নিজেদের অক্ষমতা লুকাতে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্যালেন্ট গণহত্যায় সক্রিয় হয়েছে তারা নাতসী বা একাত্তুরের ঘাতক দালালদের মতই ঘৃণ্য।এদের জন্য ভার্চুয়াল আদালতই যথেষ্ট।
সুতরাং কোন কর্পোরেট মিডিয়া যদি মনে করে বারো লাখ টাকা খরচ করে টেক্সট বইএ ইতিহাস লেখাবে, যেটা গত চল্লিশ বছর ধরে সম্ভব হয়েছে কারণ ঢাকা তখন ছিলো বিচ্ছিন্ন গ্রাম,তখন রাজনীতিবিদ-জেনারেল-সম্পাদক-নাট্যনির্মাতা-বিজ্ঞাপন-নারীব্যবসায়ী-এনজিওরাজা স্পন্সর করেছেন টেক্সট বা যাপিত জীবনের ইতিহাস,শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক জোট কিংবা বায়তুল মোকাররমে জিহাদ সংস্কৃতি জোট একি রকম প্রতিক্রিয়াশীলতার নাটক করে জনমানুষের আবেগসঞ্জাত ব্যবসা করেছেন।সরদার ফজলুল করিমদের আগুণ নেভানো হয়েছে কর্পোরেট উত্তরীয় পরানো সাঁঝে।ফ্রড এবং ফ্রয়েডের সম্মিলিত জোটের রাজনীতি-সংস্কৃতিমনস্কতার অভিনয় এখন ইউটিউবের যুগে অশ্লীল থ্রী নট থ্রী যাত্রার মতই হাস্যকর।
মুক্তিযুদ্ধ এবং বংগবন্ধুকে আওয়ামীলীগের দেশপ্রেম ব্যবসার ফ্রড এবং ফ্রয়েডের বাইরে নিয়ে এসে চর্চার জন্য প্রস্তুত সময়। বিএনপির কলতলার ঘোষক বিতর্ক-ধর্ম কিংবা গোরখোদকদের খাম্বা ব্যবসার রুয়ান্ডাও আর আজকের ঢাকা নয়।সি আই এ বৈঠকের ফ্রি ওয়াইন, র বৈঠকের ফ্রি লুচি-রসগোল্লা বা আইএস আই বৈঠকের ফ্রি ম্যাংগোজুস খাবার ইউফোরিয়া অন্তত থ্রীইডিয়েটসদের আর টানেনা।আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ব্যর্থ হলেও ফ্রড এবং ফ্রয়েডের বাইরে যাদের বয়েস তিরিশের নীচে, যারা ঢাকায়, সারা দেশে এবং বাংলাভাষী পৃথিবীতে ভার্চুয়াল মুক্তির মিছিলে সওয়ার তারা এবিচার করবেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কাগু বা প্রথম আলোর আনন্দবাজারীয় হেজিমনির গজদন্তের মিনার নড়িয়ে দেবার শক্তি যাদের তর্জনিতে তাদের শক্তিকে হেসে উড়িয়ে দেয়ার বোকামিটা ফ্রড এবং ফ্রয়েডেরা করবেই। কারণ তাদের মলকীট মৃত্যুর অবিচ্যুয়ারী লেখার বা শেষকৃত্য আয়োজনের প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ,সচলায়তনের প্রথম পৃষ্ঠায় সোমবার পোস্ট করা লেখাটা এখনও রয়ে গেছে। নিয়ম মানলে এলেখাটা পোষ্ট করা ঠিক হচ্ছেনা। আজ না হয় একটা নিয়ম ভাংগার নিয়মের দিকে গেলাম, কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবিটিও মুস্তাফিজ ভাইয়ের আর্কাইভ থেকে চুরি করা। মডারেটরদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।মুছে দিলেও আমাদের সম্পর্কের সুষমা অক্ষুণ্ণ থাকবে আশা করি।
মন্তব্য
এসব নিয়ে আলাদা পোস্ট আশা করছি।
আপনার ব্যবহার করা ছবিটা ২০০৫ এর ফেব্রুয়ারিতে আমার তোলা। কাঞ্চনজঙ্ঘার।
...........................
Every Picture Tells a Story
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আসবে সেখানে, আইফেল টাওয়ারের ছবি দিতে পারতাম পরে ভাবলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা,কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
এখন মুক্তির দিন। আনিসুল হককে এখন আর ঢাকায় আসার দরকার হবে না কবি হবার জন্য!
--- থাবা বাবা!
আনিসুল হকেরা এখন কেবল কবি হতেই ঢাকায় আসবেন, সাহিত্য সম্পাদকের শব ব্যবচ্ছেদ এর ঝুঁকি থাকবেনা, টেলিফিল্মের দৌড় জানা থাকবে, এলিটদের কোন চমক থাকবেনা, হলিউড-বলিউড বা গোলকের তাবত বিনোদন ইউটিউবে দেখা থাকলে, মেরিল প্রথম আলো রেডকার্পেট পুতুল খেলা মনে হবে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলবেন, এটা গাঁইয়া শোনালেও বলবেন, আমি এই গজদন্তের শহরকে কবিতা শোনাতে এসেছি। যদি সময় না থাকে ইউটিউবে আমার পোয়েট্রি চ্যানেলটা ক্লিক করবেন পুরবাসী। আমার ভাষা ভালো কিন্তু উদ্দেশ্য দাঁত বের করে ফেলে, কারণ মুখ বুঁজে ব্লগিং করা যায়, হয়ত কবিতা লেখা যায়না। গম্ভীর এলিট আত্মবিশ্বাসে মুক্তি' শব্দটা সারকাসটিক দ্যোতনা পায়, আমেরিকান সিটকম আদলে।হয়ত কবি হতে আসা কথাটাকে হাস্যকর মনে হয় সেরকম শহরে বসে যেখানে লিবার্টি ইজ আ স্ট্যাচু।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
আমার কথাটা আমি বিদ্রুপার্থে লিখিনি... আপনি সম্ভবত সেভাবেই নিয়ে ফেলেছেন! সে জন্য আমি দুঃখিত।
আমি আপনার মূল লেখার সাথে একমত হতে গিয়েই আনিসুল হকের প্রসঙ্গটা টেনেছিলাম, সম্ভবত আপনারই আগের কোন লিখাতে আনিসুল হকের কবি হতে ঢাকায় আসার কথা পড়েছিলাম, তাই!
আমার মূল বক্তব্যটা ছিল এখন কবি হতে বা লেখক হতে ঢাকায়(অথবা কেন্দ্রে) আসাটা আবশ্যক নয়। পরিধিতে থেকেও সেটা সম্ভব। আপনার লেখার সমর্থনেই আমি বলতে চাইছিলাম যে এখন আমাদের ছাপাখানায় ছাপানো ভূতের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না, একটা পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে দিন গোনার দরকার নেই! সাহিত্যের তথাকথিত ধারক ও বাহকদের সার্টিফিকেট লাগবে না আমার সাহিত্যচর্চার জন্য। এখন মাধ্যম অনেক মুক্ত...(যদিও আমাদের সরকার-রাজ লাগাম নিয়ে বসে আছেন আমাদের মাথার ওপর)! তাই বলেছিলাম কেউ যদি কবি হিসেবে খানিকটা পাঠকানুকূল্য চায় তাকে ঢাকায়(অথবা কেন্দ্রে) না এলেও চলবে, যার যার যায়গায় বসেও সেটা লাভ করা এখন সম্ভব... আর ভবিষ্যতে সেটা বাড়তেই থাকবে!
তবে এটাও ঠিক একটা প্রতিভা কেন্দ্রে না এলে সেটার সঠিক মর্যাদা দেয়া যায় না... তবে সেটার সীমানাও আমরা ভেঙ্গে ফেলতে সমর্থ হবো!
আমার লেভেল অব ইন্টেলেকচুয়ালিটি হয়তো আপনার সমপর্যায়ের না... আপনার বক্তব্যের ধারে কাছে দিয়েও যাইনি... তবে আমার বক্তব্য তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছি!
আমি মর্মাহত আপনার ইতিবাচকতা বুঝতে না পারায়। বিস্ময়বোধক চিহ্নটি সম্ভবত যোগাযোগে বাধা হয়েছে, সে বাধা এখন আর নেই। ভালো থাকবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
ইশ কত সুন্দর করে লিখেছেন। আমার প্রোফাইলে স্টার দেয়ার সুবিধা থাকলে ৫ স্টার দিতাম। "লিবার্টি ইজ আ স্ট্যাচু" কথাটা দারুণ, অনেক দেশই এই ভাইরাসে এফেক্টেড, আমাদের বাংলাদেশ সহ। তবু ভালবাসি বাংলা আর আমার দেশ বাংলাদেশ।
শাফি।
(আমার মন্তব্যটা আমারই কাছে ভ্যাজর ভ্যাজর লাগছে।)
এটা লাতিন আমেরিকার এক কবি ন্যুইইয়র্কে কবি হতে বা কবিতা পড়তে এসে বলেছিলেন,কলকাতার কবি সুবোধ সরকার নামটা বলেছিলেন, আমি ভুলে গেছি।স্টার-স্ট্যান্ডের বাছুর প্রেম কলেজ পর্যন্ত ছিলো, তার পর ঐকান্তিক তারাহীন হবার আনন্দটা বুঝে গেছি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারকে দেখে। আমি কখনো সাহিত্যসম্পাদক ছিলাম না, তাই ভ্যাজর ভ্যাজর মনে হয়নি, মনে হয়েছে সাবলীল আড্ডায় করা মন্তব্য।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
মাসকাওয়াথ, আমি আপনার ভক্ত ছিলাম। ছিলাম বলেছি মাঝে তা টলে গিয়েছিল বলে। এ লেখায় আমার কাছে আপনার পূণর্জন্ম হয়েছে।
এইকারণে ভক্ত শব্দটি আমাদের অভিধানে আর না রাখাই ভালো,কারণ তা যে কোন সময় টলে যেতে পারে। এই নবজন্ম ঝুঁকিপূর্ণ একি কারণে।তার চেয়ে পাঠক বা ব্লগবন্ধু হিসেবে প্রতিটি লেখা থেকে উপসং হার না টেনে এটিকে একটি ভাবনার ভ্রমণ হিসেবে দেখতে পারি। ভালো থাকবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
নতুন মন্তব্য করুন